Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
গোগোল বলে চললো "এই অঞ্চলে বর্তমানে এম্বাসেডর গাড়ি একজনেরই আছে এবং তার রঙটাও আমার জানা, তাই পুরো ব্যাপারটাই আমার অদ্ভুত এবং সন্দেহজনক মনে হলো। ডাক্তার আঙ্কেলকে বললাম ওই গাড়িটাকে ফলো করতে। প্রথমে উনি কিছুটা ইতস্ততঃ করলেও পরে রাজি হয়ে গেলেন। অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা বড়বাজার মার্কেট পেরিয়ে  গঙ্গানগর রেলস্টেশনের পাশের ফুটব্রিজের তলা দিয়ে গিয়ে হাইওয়ের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। আমরাও পিছন পিছন যেতে লাগলাম। হাইওয়েতে গাড়িটা পৌঁছতেই ডাক্তার আঙ্কেল এর হাত থেকে স্টিয়ারিংটা আমি নিয়ে নিলাম, কারণ এবার ওদের গাড়িটাকে ধরতে না পারলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলাম। অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা পেট্রোলপাম্পকে ডানদিকে আর ধনজ্ঞী ভাইয়ের গ্যারেজটা বাঁ'দিকে রেখে বাঁশবাগানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি গাড়ির গতিবেগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে অ্যাম্বাসেডর গাড়িটাকে অতিক্রম করে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ করে আমাদের গাড়ি সামনে চলে আসায় কোনোরকমে ব্রেক কষে ওদের গাড়ির অভিমুখ অন্যদিকে ঘোরাতে গিয়ে সামনে থাকা একটি বটগাছে সজোরে ধাক্কা মারে অ্যাম্বাসেডরটা। ওদের গাড়ির ভেতর থেকে সম্মিলিত চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। এমত অবস্থায় ওদের গাড়ির ভেতরের আরোহীরা কিছুটা হলেও অবিন্যস্ত এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় আছে এটা বুঝতে পেরে আমি আর সুবীর তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে ওদের গাড়িটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি।"


কালুকে ইশারায় ডেকে, ওর হাতে থাকা বোতল থেকে এক ঢোক জল খেয়ে নিয়ে গোগোল পুনরায় বলতে শুরু করলো "আমি আর সুবীর গাড়ির পিছনের দু'দিকের দরজাটা খুলি। পিছনের সিটে শিউলিকে কোলে নিয়ে বসেছিলো স্বপনকাকু আর তার পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলো টগর। অঝোরধারায় কেঁদে যাচ্ছিলো টগর। দু'জনের চোখেই ছিলো আশঙ্কা এবং মৃত্যুভয়। শিউলি অচৈতন্য অবস্থায় স্বপনকাকুর কোলে এড়িয়ে পড়েছিল। ওদের দু'জনের দুইপাশে ঠাসাঠাসি করে বসেছিলো একজন করে সশস্ত্র দুষ্কৃতী। হঠাৎ করে গাড়িটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে সম্ভবত ওদের হাত থেকে ak-47 রাইফেল দুটো মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো। অতর্কিতে আমাদের দেখে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ওরা দু'জন বসা অবস্থাতেই নিচে ঝুঁকে নিজেদের অস্ত্রদুটো তুলতে যাবে সেই মুহূর্তে আমি আর সুবীর ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি তারপর টেনে হিঁচড়ে দুই দুস্কৃতিকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসি। সুবীর আমাকে বলে তুমি ড্রাইভার আর তার পাশে বসে থাকা লোকটাকে সামলাও, আমি এদের দু'জনকে দেখে নিচ্ছি। ওর কথা মতো আমি ততক্ষণাৎ ড্রাইভারের দিকের দরজাটা খুলি, আমাকে দেখতে পেয়েই ড্রাইভার সিটে বসে থাকা এক শীর্ণকায় বয়স্ক ব্যক্তি লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে বাঁশবাগানের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপর ড্রাইভারের পাশের সিটে চোখ যেতেই আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। ওখানে কোনো পুরুষমানুষ ছিলো না, ওখানে বসেছিলেন একজন নারী। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন .. ওখানে একজন মহিলা বসেছিলেন। যাকে ওখানে ওই অবস্থায় দেখবো আমি কোনোদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আমার দিকে রিভলবার তাক করে ছিলো মিস্টার কামরাজের মেয়ে রনিতা .. রনিতা দিদি।"

কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে সবার দিকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো গোগোল "আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হাতে রিভলবার ধরা অবস্থাতেই গাড়ি থেকে নেমে আমার আরো কাছে এগিয়ে এসে উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে রনিতা দিদি বললো 'সত্যিই তোমার জবাব নেই। এত সন্তর্পণে কাজটা করলাম, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। অথচ তুমি ঠিক সময় পৌঁছে গেলে! ঠিক আছে যখন পৌঁছে গেছো তখন আমার হাতেই মৃত্যুবরণ করতে হবে তোমাকে। খুব অবাক হচ্ছো তাই না আমাকে এখানে দেখে? ভাবছো এখানে আমি এই বদমাইশগুলোর সঙ্গে টগর আর তার পরিবারকে কেনো ধরে এনেছি! আমার স্বার্থটা কি .. তাই তো? দ্বিতীয় দিন অপমানিত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়ে তোমাদের বস্তি থেকে চলে আসার পর আমি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলাম। কারণ আমি বুঝে গেছিলাম হিয়ার প্রতি তোমার ভালোবাসা আর তোমার প্রতি হিয়ার ভালোবাসা এতটাই পবিত্র এবং দৃঢ় .. তার ফাঁক দিয়ে শুধু আমি কেনো, কারোর পক্ষেই ঢোকা সম্ভবপর নয়। তাই মনে মনে চাইছিলাম যেন-তেন প্রকারে তোমার জীবন থেকে হিয়াকে সরিয়ে দিতে। আমি সর্বদা নজর রাখতাম ওর গতিবিধির উপর। কিন্তু ওর ক্ষতি আমি কিছুতেই করতে পারছিলাম না। কারণ ওকে যে সবসময় শুধুমাত্র তুমি আগলে রেখেছিলে তা নয়, আরেকজনেরও সর্বক্ষণ নজর ছিলো ওর গতিবিধির উপর .. তিনি হলেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত। যদিও তিনি আমাকে চেনেন না বা আমি যে মিস্টার কামরাজের মেয়ে, আমার এই অস্তিত্ব সম্পর্কে উনার কোনো ধারনা নেই। যাইহোক, এই দু'জনের নজর এড়িয়ে আমি কিছুতেই হিয়ার কোনো ক্ষতি করতে পারছিলাম না। আর কোনো উপায় না দেখে বাবাকে সব কথা খুলে বললাম। আমার বাবাকে তো তুমি ভালো করেই চেনো একদম ছোটবেলা থেকেই। মানুষের উপকার না করতে পারুক, সর্বদা অপকার করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে .. এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ঠিক হলো ষড়যন্ত্র করে টগরকে তুলে এনে প্রথমে তার ইজ্জত নষ্ট করে তারপর নৃশংসভাবে হত্যা করে সমস্ত দায় তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মরবে। প্রথমতঃ পুলিশ তোমাকে অ্যারেস্ট করলে, তোমাকে সরানো যাবে ওই রেলপাড়ের বস্তি থেকে। ফলে রেলপাড়ের বস্তিটা আমার বাবার আর সামন্ত আঙ্কেলের হবে। দ্বিতীয়তঃ হিয়ার জীবন থেকে তোমাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া যাবে। এর ফলে হিয়াকে নিজের করে নেওয়ার অফিশিয়ালি লাইসেন্স পেয়ে যাবে ইন্সপেক্টর সন্দীপ। তৃতীয়তঃ আমার রাস্তা পরিষ্কার হবে। সবকিছু মিটে যাওয়ার পর, বস্তি দখল হয়ে যাওয়ার পর, ওই বস্তির সমস্ত লোককে ওখান থেকে উৎখাত করার পর .. আমি জেলে গিয়ে তোমাকে এই শর্তে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো যে আমাকে বিয়ে করতে হবে তোমায়। তখন নিজেকে মুক্ত করার জন্য আমার শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া তোমার পক্ষে আর কোনো উপায় থাকবে না। আর তারপর? তোমাকে বিয়ে করে আমার শরীর এবং মনের ভালোবাসা দিয়ে এমন ভরিয়ে দেবো যে তুমি হিয়াকে ভুলে যেতে বাধ্য হবে। তবে এই মেয়েটাকে আই মিন টগরকে আমরা এখানে একাই আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনাক্রমে ওর বাবা আর বোন এসে জুটেছে ওর সঙ্গে। আর ওর সর্বনাশ করে ওকে খুন করার জন্য আমার বাবাকে নতুন করে কোনো লোক ভাড়া করতে হয়নি। স্বয়ং ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত আসছে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে। এই পৃথিবীতে যদি তোমাকে সব থেকে বেশি কেউ ঘৃণা করে, তাহলে সে হলো তোমার বন্ধু সন্দীপ, আর তার একমাত্র কারণ হলো হিয়া। তাই তোমার অনুরাগী বা তোমাকে ভালোবাসে এইরকম কোনো মানুষকে ও এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না, যাতে তুমি কষ্ট পাও। সেই জন্যই তো ও টগরের এইরকম পরিণতি নিজের হাতেই করতে চায়। টগর যে তোমায় মনে মনে ভালবাসে, তাই ওর বাঁচার কোনো অধিকার নেই এই পৃথিবীতে .. সেটা সন্দীপ মনে করে। বাবা সমস্ত প্ল্যান করলেও তিনি জানেন না আমি এখানে এসেছি। আসলে নিজের চোখে টগরের এই পরিণতি‌ অর্থাৎ তোমার পরাজয়ের এইরকম একটা সুখকর দৃশ্য দেখার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইনি আমি। কিন্তু না, তোমার তো তর সইলো না .. তুমি এখানে এসে উপস্থিত হয়ে আমাদের সমস্ত প্ল্যান নষ্ট করে দিলে। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে .. আমি যখন তোমাকে পাবোই না তখন আর কাউকেই পেতে দেবো না। আমার হাতে মরার জন্য প্রস্তুত হও।' কথাগুলো বলে রনিতা দিদি যখন আমার দিকে রিভলবার তাক করে ফায়ার করতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে ঐরকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত টগর মাটি থেকে একটা মাঝারি সাইজের গ্রানাইট পাথর তুলে সর্বশক্তি দিয়ে সেটা ছুঁড়ে মারলো রনিতা দিদির হাত লক্ষ্য করে।"  

কথা বলতে বলতে গোগোল লক্ষ্য করলো হিয়া আর সুজাতা তার দুই কাঁধ ধরে দুইপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদিকে সন্দীপ গাড়িতে হেলান দিয়ে অবাক হয়ে তার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। তার মুখে একটা চাপা আশঙ্কার ছাপ স্পষ্ট। গোগোল আবার শুরু করলো "পাথরটা রনিতা দিদির হাতে লাগতেই রিভলভারটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেলো মাটিতে। ও ওটা তুলতে যাওয়ার আগেই আমি তড়িৎগতিতে বন্দুকটা মাটি থেকে তুলে নিতেই রনিতা দিদি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি চর, কিল, ঘুঁষি মারতে লাগলো আমাকে। সুবীর ততক্ষণে ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরাশায়ী করে ফেলেছিল। রাত ক্রমশ গভীর হয়ে আসছে, তারপর শুনলাম সন্দীপ বাবুর আসার কথা ওখানে। তাই বিপদ বাড়ার আগে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের পালাতে হবে। এমত অবস্থায় রনিতা দিদিকে ঠেকাতে নিরুপায় হয়েই একটা থাপ্পড় মারলাম ওর গালে। ভেবেছিলাম এর ফলে ও হয়তো শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমার হাতের পাঁচ আঙুলের জোর বোধহয় রনিতা দিদি সেই মুহূর্তে সহ্য করতে পারেনি। দেখলাম মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে।  ডক্টর আঙ্কেলকে বললাম একবার পরীক্ষা করে দেখতে রনিতা দিদির অবস্থা। আঙ্কেল বললেন হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে গেছে, এছাড়া ভয়ের কিছু নেই। সেইসময় ওই বাঁশবাগানে এমন নিশ্চিদ্র অন্ধকারের সৃষ্টি হয়েছিল যে আমরা কেউ কাউকে সামনে থেকে দেখেও চিনতে পারছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল যেন একটা কালো রঙের অবয়ব সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ইচ্ছে ছিলো রনিতা দিদিকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসার। কিন্তু শিউলির অবস্থা তখন অত্যন্ত সংকটজনক থাকার জন্য তাকে ডাক্তার আঙ্কেলের গাড়ির মাঝখানের সিটে শুইয়ে দিতে হয়েছিলো। এদিকে রনিতা দিদিকেও যদি শুইয়ে আনতে হয় তাহলে গাড়িতে আর কারোরই জায়গা হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ওকে ওই কালো রঙের এম্বাসেডরে তুলে দিয়ে ওর চোখে মুখে কিছুটা জল ছিটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ডাক্তার আঙ্কেল বললো ওর জ্ঞান এসে গেছে, এবার ও নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি চলে যেতে পারবে, তাছাড়া ওর বাবার দু'জন শাগরেদ আছেই, তারাই ওকে সাহায্য করবে। তারপর সেখান থেকে ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ডাক্তার আঙ্কেল বললেন গঙ্গানগর বড়বাজার মার্কেটের কাছে উনি খুব সম্প্রতি একটা বাড়িভাড়া নিয়েছেন .. সেখানেই যেতে বললেন আমাদের।"

★★★★

এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো গোগোলের কথাগুলো শুনছিল সুজাতা, হিয়া, পঙ্কজবাবু থেকে শুরু করে এখানে উপস্থিত রেলপাড়ের বস্তির সবাই। খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো তো নয়, বলা ভালো হায়নার মতো গর্জন করে উঠে প্রথম নিস্তব্ধতা ভাঙলো সন্দীপ "মিথ্যে মিথ্যে .. এতক্ষণ ধরে যে লম্বা ভাষণ দিলো আপনাদের সবার হিরো মিস্টার অনির্বাণ, পুরোটাই ডাহা মিথ্যে। নিজেকে বাঁচাতে এখন নতুন করে গল্প বানাচ্ছে। ও যে কথাগুলো বললো তার কোনো প্রমাণ আছে ওর কাছে? আর এখানে যে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা বলা হলো -- তাদের মধ্যে একজন সুবীর, যে ওর নিজের লোক .. ও তো ওর গুরুর জন্য মিথ্যে সাক্ষী দেবেই। আরেকজন হলেন ডক্টর দাশগুপ্ত। খবর নিয়ে জেনেছি এই ভদ্রলোক ওর মামণি অর্থাৎ সুজাতার প্রাক্তন ভাতার .. তাই উনার পক্ষেও মিথ্যে সাক্ষী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। আর এই বুড়োভাম স্বপনবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ওর মেয়ের মৃত্যুর শোকে। তাই এখন ভুলভাল বকছে, ওকে দিয়ে আমরা পরে আসল কথাটা কথা বলিয়ে নেবো।"

"এখানে আসার পর থেকেই এই মালটা কিন্তু আমাদের বস্তির গর্ব আমাদের সকলের প্রিয় সুজাতা দিদির সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করে আসছে। আমরা কিন্তু কেউ এটা আর সহ্য করতে পারছি না। গুরু তুমি একবার আদেশ করো মেরে এই লোকটার মুখ ফাটিয়ে দিই এক্ষুনি .." রাগে গরগর করতে করতে কথাগুলো বললো সুবীর।

"এখনো সময় আসেনি বন্ধু, আগে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ প্রমাণ করি, তারপর তো অন্যের অপরাধের হিসেব করবো সুদে-আসলে। একটু আগে আমার কথাগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য যে প্রমাণ চাওয়া হয়েছিলো সেই বিষয়ে বলি .. কালকের সমস্ত ঘটনা আমাদের অজান্তেই নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে রেখেছিলেন ডক্টর আঙ্কেল .. সো কাইন্ড অফ ইউ ডক্টর আঙ্কেল অ্যান্ড লাভ ইউ। এটা যে তুমি কি ভালো কাজ করেছো, তা তুমি নিজেও জানো না। আর এই সমস্ত প্রমাণ এখানে আসার আগে আমি গোস্বামী আঙ্কেল অর্থাৎ সিনিয়র ইন্সপেক্টর মিস্টার গোস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। তিনি এখন অন দ্য ওয়ে, এক্ষুনি এসে পৌঁছবেন এখানে। আর কারোর কিছু বলার আছে এই বিষয়ে?" গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো গোগোল। 

"এবার দয়া করে সবাই চুপ করো, আমাকে কিছু বলতে দাও। আমি এই কথাগুলো বলতেই আজ সুজাতার কাছে ওর বাড়ি এসেছিলাম। তোমার নিশ্চয়ই মনে থাকবে সুজাতা, আমি তোমাকে বলেছিলাম - আমি এখানে থেকেই আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। তার উপর কাল রাতের ঘটনার পরে .. এইটুকু বলতেই দেখলাম রাজু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দিলো তোমার ছেলে গোগোলকে নাকি পুলিশ অ্যারেস্ট করতে এসেছে। তারপর তো এখানে আসার পর থেকে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে। আমি যে কিছু বলবো সেটার সুযোগই পাচ্ছিনা। হ্যাঁ সমস্ত ঘটনা আমি নিজের সজ্ঞানে রেকর্ডিং করেছি এবং সেটা পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শিউলিকে পরীক্ষা করে দেখলাম ওর পেটের ব্যাথাটা গ্যাস্ট্রিক পেইন ছাড়া আর কিছুই নয়। একটা ইনজেকশন এবং একটা ওরাল মেডিসিন দেওয়ার পর ওর পেটের ব্যথা অনেকটাই কমে গেলো। তারপর ওকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিলাম .. ও ঘুমিয়ে পড়লো। তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছিলো, স্বপনবাবুকে নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে বললাম। উনি যাওয়ার সময় টগরকে নিয়ে যেতে চাইলে নিজের ডিসপেনসারির বেডে যেখানে টগর একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো .. সেখানে এসে দেখলাম ও অকাতরে ঘুমোচ্ছে। আসলে কাল রাত থেকে এতটা অমানুষিক ধকল এবং পরিশ্রম গেছে ওর মন এবং শরীরের উপর দিয়ে তাই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মেয়েটা। আমি বললাম আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান, আমি সকালের দিকে আপনার দুই মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো। তারপর তো এখানে এসে দেখি এই অবস্থা। ওই ইন্সপেক্টর ছোকরাটা এতক্ষণ ধরে যার মৃত্যুর বানানো গল্প সবাইকে শোনাচ্ছিলো সে তো আমার গাড়িতেই বসে আছে। ওর বোন শিউলি অবশ্য এখনো ঘুমোচ্ছে .. বড়ই দুর্বল এখনো বেচারা। আয় মা টগর, তুই নেমে আয় গাড়ি থেকে। তুই নেমে এসে নিজেকে সবার সামনে প্রকাশ করে প্রমাণ কর, যে তুই বেঁচে আছিস।" কথাগুলো বলে কয়েক পা এগিয়ে তার গাড়ির দিকে গিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে দিলেন ডক্টর দাশগুপ্ত। গাড়ি থেকে নামলো টগর .. তার চোখে মুখে তখনো রাতের সেই আতঙ্কের ছাপ।

"এ..এটা কি করে সম্ভব? কি..কিন্তু টগরের লাশটা .. ও..ওটা তো মিথ্যে নয়। ওকে তো আমি নিজে হাতে .." আনমনে কথাগুলো বলে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো সন্দীপ।

★★★★

"এতক্ষণ ধরে আমি ভাবছিলাম আপনি বোধহয় টগরের মৃত্যুর খবরের মতোই একটা মেয়ের রেপ হওয়া এবং তাকে দগ্ধ করে মেরে ফেলার একটা কাল্পনিক গল্প বলছেন। কিন্তু এখন আপনি নিজের মুখে সবার সামনে স্বীকার করলেন যে আপনি নিজে হাতে কাজটা করেছেন! তারমানে আপনি সত্যিই কোন মেয়েকে ;., করে তারপর তাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যা করেছেন? হায় ভগবান, আমি যেটা ভাবছি তোমরা সবাই কি সেটাই ভাবছো? ওইরকম নিশ্চিদ্র অন্ধকারে যেখানে সামনের পরিচিত মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না, সেখানে জীবনে কোনোদিন তাকে না দেখা বা তার অস্তিত্ব সম্পর্কে না জানা রনিতা দিদিকে কি তুমি টগর ভেবে? হে ঈশ্বর .. এটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো প্রলয় ঘটবে। আপনি ভাবতে পারছেন ইন্সপেক্টর সাহেব আপনি কি করেছেন? আপনি কামরাজের মেয়েকে ;., করে খুন করেছেন এবং সেটা সবার সামনে স্বীকার করেছেন। তবে আপনার স্বীকার করা বা না করাতে কিছু যায় আসে না। ডক্টর আঙ্কেলের রেকর্ড করা ভিডিওতে রনিতা দিদির কথাগুলো শুনলেই বোঝা যাবে কালকের ঘটনার মাস্টার প্ল্যান কার ছিলো। বিশ্বাস করুন আমি ভেবেছিলাম আমার মামণির উপর করা আপনার প্রত্যেকটি নোংরা মন্তব্যের জবাব আমি সুদে আসলে উসুল করবো আপনার থেকে। আপনার শরীরের একটা হাড় আজ আস্ত রাখতাম না আমি। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে এই কথাটা শোনার পর আমার মাথা কাজ করছে না। কামরাজ নিশ্চয়ই এতক্ষণে খবর পেয়ে গিয়েছে। জানিনা কি অপেক্ষা করে আছে এরপর .." কথাগুলো বলে নিজের মাথায় হাত দিয়ে ক্লাবের সিঁড়িটার উপর বসে পড়লো গোগোল।

"তুমি কোনো অ্যাকশন না নিতেই পারো গুরু। কিন্তু সুজাতা দিদি তো শুধু তোমার একার নয়, উনি আমাদের সকলের .. উনি এই রেলপাড়ের বস্তির গর্ব। সুজাতা দিদির সম্পর্কে, হিয়ার সম্পর্কে, আমাদের ডাক্তারবাবু সম্পর্কে নোংরা কথা তো আমরা কেউ সহ্য করবো না। কামরাজ এসে কি করবে না করবে সেটা উনার ব্যাপার, তার জন্য আমরা চুপ করে বসে থাকবো কেনো? আমরা তো কোনো দোষ করিনি। শাস্তি চাই ওই জানোয়ার সন্দীপের এবং এই মুহূর্তে, এখানেই। বন্ধুগণ তোমরা কি এখনো নীরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে থাকবে?" সুবীরের কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই কাঞ্চন, রাজু, কালু, মধু এবং সবশেষে সুবীর ঝাঁপিয়ে পড়লো মাটিতে বসে থাকা সন্দীপের উপর। 

মুহূর্তের মধ্যে সন্দীপের পুলিশ ইউনিফর্ম শতচ্ছিন্ন অবস্থায় আলাদা করে দেওয়া হলো তার শরীর থেকে। শুধুমাত্র নিম্নাঙ্গের এবং উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস পরিহিত সন্দীপের উপর শুরু হলো অবিরত কিল, চড়, ঘুঁষি আর লাথির বর্ষণ। ক্রমাগত এইরকম আক্রমণে যখন তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হলো, সেইসময় সেখানে পুলিশ ফোর্স নিয়ে উপস্থিত হলেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী। তার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সন্দীপের উপর থেকে আক্রমণকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।

ঠিক সেই মুহূর্তে সকলের চেনা সিলভার কালারের Audi গাড়িটা এসে থামলো সেখানে। গাড়িটা থামতেই দরজা খুলে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে এলো মিস্টার কামরাজ। প্রথমেই তার চোখ গেলো সুজাতার দিকে। কয়েক পা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো "আচ্ছা আমার মেয়েটা কি আপনাদের বাড়িতে এসেছে? ও যা জেদি মেয়ে .. ও যখন একবার বলেছে আপনার বাড়ির বউ হবে তখন সেটা কেউ আটকাতে পারবে না .. আপনি দেখে নেবেন। আরে বাবা আমি তো মেনে নিয়েছি, তাহলে আপনাদের আপত্তিটা কোথায় বলুন তো? আমি তো সমস্ত পুরনো শত্রুতা ভুলে অনির্বাণকে আমার জামাই হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছি। কি মুশকিল, কিছু তো বলুন! এইরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ওই দেখো, বোকার মতো কাঁদছে! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি কথা দিচ্ছি .. যদি আমার মেয়ের বিয়ে আপনার ছেলের সঙ্গে দেন, তাহলে আমি এই বস্তির দিকে ফিরেও তাকাবো না। এবার খুশি তো?"

সুজাতার কাছ থেকে কোনোরকম উত্তর না পেয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার কাছে গেলো কামরাজ "দেখো তুমি আমার মেয়ের থেকেও ছোট .. কিন্তু আগের দিন আমি দেখছিলাম তুমি ভীষণ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলো। সেদিন কিছু বলিনি, তবে আজ বলছি। আমার মেয়ে যখন একবার পছন্দ করেছে অনির্বাণকে, তখন ও কিন্তু ওকে বিয়ে করেই ছাড়বে। তুমি শুধু শুধু এর মধ্যে ঢুকছো কেন আমি তো বুঝতে পারছি না। তুমি বরং ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর সঙ্গে সুখে স্বাচ্ছন্দে সংসার করো। তোমাদের বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ধুমধাম করে দেবো। তাহলে তো আর কোনো আপত্তি নেই তোমার? আচ্ছা আমার মেয়েকে কি তুমি দেখেছো? কাল রাতে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি বলে বেরোনোর পর সেই যে গেলো এখনো বাড়ি ফেরেনি। আরে? একি .. তুমিও এভাবে কাঁদছো কেনো সুজাতার মতো? কিছু হয়েছে নাকি? আমি তো তোমাকে বকিনি .. আমি তো শুধু বলেছি তোমার বিয়েটা অনির্বাণের সঙ্গে হবে না। সেই জন্য কাঁদছো?"

হিয়ার কাছ থেকেও কোনো উত্তর না পেয়ে ক্লাবের সিঁড়ির উপর মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা গোগোলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কামরাজ "কি ব্যাপার আমি এখানে এসে এতক্ষণ ধরে সবাইকে জিজ্ঞেস করছি আমার মেয়ের কথা। কেউ কিছু বলছে না, অথচ সবাই কাঁদছে কেনো? ওওওও .. এইবার আমি আসল কথাটা বুঝতে পেরেছি। রনিতা মনে হয় তোমাকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েই ফেলেছে, তাই না? হতেই হবে .. ওইরকম একজন সুন্দরী অ্যাট্রাক্টিভ মেয়েকে রিফিউজ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার উপর রাজকন্যা এবং রাজত্ব দুটোই একসঙ্গে পাওয়ার লোভ কি কেউ সামলাতে পারে? আচ্ছা ঠিক আছে, সরি সরি এই কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো আমার। আমি জানি তুমি ভীষণ সৎ চরিত্রের একজন মানুষ এবং অর্থের উপর তোমার কোনো লোভ নেই। এবার তো বলো আমার মেয়েটা কোথায়! ও কি সত্যিই এখানে আসেনি? কিন্তু আমি তো ওর প্রত্যেকটি বান্ধবীর বাড়িতে ফোন করে খবর নিয়েছি, ও তো কারোর বাড়িতেই যায়নি। ওই দেখো চুপ করে বোকার মত বসে আছে .. আরে বলবে তো আমার মেয়েটা কোথায়! যত খারাপ মানুষই হই না কেনো, আমি তো ওর বাবা .. টেনশন হয় না আমার?"

ততক্ষণে পুলিশ সন্দীপকে রেসকিউ করে নিয়েছে সুবীর এবং তার বন্ধু-বান্ধবদের হাত থেকে। চোখের তলায় গভীর ক্ষতচিহ্ন, ঠোঁটের কোণায় জমাটবাঁধা রক্ত, আর কালশিটে পড়ে যাওয়া সমগ্র মুখমণ্ডল নিয়ে অন্তর্বাস পরিহিত সন্দীপ কোনরকমে ইন্সপেক্টর গোস্বামীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কামরাজের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর গোগোল তার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের ডানহাতটা উঠিয়ে সন্দীপের দিকে ইশারা করে কম্পিত কন্ঠে বললো "ও জানে আপনার মেয়ের খবর .."

তৎক্ষণাৎ সন্দীপের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠলো কামরাজ, "এ কি? এইরকম অবস্থা কে করলো ওর? তাও আবার পুলিশ ফোর্সের সামনে? আর আমার মেয়ের খবর ও জানবে কি করে? আমার যে মেয়ে আছে, সেটা তো ও জানেই না।"

কামরাজের গলার আওয়াজ শুনে এবং তার রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে শরীরের ভেতরে একটা অজানা কাঁপুনি হতে শুরু করলো সন্দীপের। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নিজের মাথায় হাজারো ভাবনা কিলবিল করতে লাগলো তার। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করার কোনো উপায় দেখতে পেলো না সে। তৎক্ষণাৎ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্সপেক্টর গোস্বামীর বেল্টের সঙ্গে আটকানো বন্দুকের খাপ থেকে সার্ভিস রিভলভারটা তড়িৎগতিতে বের করে নিলো সন্দীপ। তারপর কাউকে কোনো রিয়্যাকশনের সুযোগ না দিয়ে চোখের পলক পড়ার আগেই নিজের মাথায় রিভলবারটা ঠেকিয়ে গুলি করলো। 

মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে ছিটকে পড়লো সন্দীপ। প্রথমে কি ঘটেছে সেটা বুঝতে না পেরে, সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ইন্সপেক্টর গোস্বামী মাটিতে বসে সন্দীপের দেহ পরীক্ষা করে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মাথা থেকে টুপিটা খুলে নিয়ে ঘাড় নেড়ে বললেন "হি ইজ নো মোর .."

(ক্রমশ)


ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 15 users Like Bumba_1's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 23-12-2022, 08:55 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)