Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ_প্রেম
#24
|৯|
~
চোখের ভারি পল্লবগুলো মেলে ধরতে কষ্ট হচ্ছে। শরীরটা যেন অবশ লাগছে। হাত পা নাড়াতে পারছে না। মাথায় চিন চিন ব্যথা করছে। চোখগুলো যখন খুব কষ্টে একটু মেলল, রাইমার কাছে তখন মনে হলো চারপাশটা যেন সাদা ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ। কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে। শরীরটা ভার হয়ে আছে। কষ্ট করে আস্তে আস্তে তাকানোর চেষ্টা করলো রাইমা। প্রথমেই বুঝে উঠতে পারলো না সে কোথায় আছে। আবছা চোখের দৃষ্টি পাশে অরিকের উপর পড়তেই তার মস্তিষ্ক যেন জেগে উঠল। একটু নড়ল। ব্রু কুঁচকাল। নিজেকে অরিকের গাড়িতে আবিষ্কার করে চমকে গেল সে। গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছিল না। তাও কষ্ট করে সে বলে উঠল,

'আ-আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?'

রাইমার কন্ঠ শুনে অরিক তার দিকে তাকাল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

'যাক জ্ঞান ফিরেছে তাহলে।'

রাইমা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বুঝে উঠতে পারছে না কিছু। পেছনে তাকিয়ে দেখল নিরবও আছে। এবার সে অনেকটা অস্থির হয়ে উঠল। ক্ষিপ্ত কন্ঠে দম নিয়ে বললো,

'আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা? আবার আমার সাথে কি করতে চাইছেন? গাড়ি থামান বলছি। প্লীজ, গাড়ি থামান। আমি আপনাদের সাথে কোথাও যাব না। গাড়ি থামান..'

রাইমা অনেক বেশি অস্থির হয়ে উঠল। গাড়ির দরজা ধরে টানাটানি করতে লাগল। অরিক এক হাতে তাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে বললো,

'শান্ত হোন রাইমা। আমরা আপনাকে নিয়ে আপনার বাসায় যাচ্ছি। অন্য কোথাও আমরা যাচ্ছি না। দেখুন এটা আপনার বাসার রাস্তা।'

রাইমা এবার খেয়াল করলো। হ্যাঁ, এই রাস্তাটা পরিচিত তার। তাও সে ঠিক শান্ত হতে পারলো না। নিজের হাত থেকে এক ঝটকায় অরিকের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বললো,

'তারমানে এতক্ষণ আমি আপনাদের কাছে ছিলাম। কই আমার তো কিছু মনে পড়ছে না। আমার তো মনে আছে আমি আমার বাগানে ছিলাম হঠাৎ..হঠাৎ তখন কেউ একজন পেছন থেকে আমার মুখে কিছু একটা চেপে ধরে। আর তারপরই আস্তে আস্তে আমার শরীর অবশ হয়ে যায়। তার মানে এসব আপনার কাজ? আমাকে অজ্ঞান করে আবার আপনারা আমার সাথে খারাপ কিছু করেছেন। কেন? কেন আপনারা আমার সাথে এমন করছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনাদের? কেন করছেন আমার সাথে এমন?'

রাইমা কাঁদতে আরাম্ভ করে। অরিক আর না পেরে গাড়িটা রাস্তার এক পাশে দাঁড় করায়। গাড়ি থেমে যেতে দেখে রাইমা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যেতে চায়। কিন্তু অরিকের জন্য পারে না। অরিক রাইমার দুই বাহু চেপে ধরে তাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর সে রাইমার চোখের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে,

'আমাদের ভুল বুঝছেন রাইমা। আপনার সাথে খারাপ কিছু হয়নি। বিশ্বাস করুন, আপনি এখন একদম ঠিক আছেন। আর হ্যাঁ এটা সত্যি যে, এসব কিছু নিরব করেছিল। ও চেয়েছিল আপনার সাথে যেন আমার বিয়েটা না হয়। আমার বন্ধু তাই আমাকে বাঁচাতে এসব করেছে। কিন্তু আমার বুঝানোর পর ও বুঝেছে। ওর কোনো দোষ নেই রাইমা। যা দোষ সব আমার। আমি আপনাকে রেপ করেছি। আপনাকে মানসিক কষ্ট দিয়েছি। তার জন্য শাস্তি দিতে হলে আমাকে দিবেন। কিন্তু প্লীজ ওকে ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য ও ফেঁসেছে। সেদিন ও আমাকে অনেক বাঁধা দিয়েছিল, কিন্তু আমি শুনিনি। সব দোষ আমার রাইমা। প্লীজ, আপনি ওর উপর আমার দায়ভার চাপাবেন না। ও সত্যিই নির্দোষ।'

কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কাঁপছিল অরিকের। সে তখন রাইমাকে ছেড়ে দিয়ে তার সিটে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজলো। রাইমা নিষ্প্রভ তাকিয়ে রইল তার দিকে। পেছনে নিরবও স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। সে বুঝতে পারছে তার বন্ধু এখন তার ভুলের জন্য অনেক বেশি পস্তাচ্ছে। কিন্তু, সময় থাকতে তো আর সে বুঝল না। 
.
পিনপতন নিরবতা কাটিয়ে অরিকের নির্লিপ্ত কন্ঠটা বেজে উঠল। সে ঘাড় কাত করে রাইমার দিকে তাকাল। ক্ষীণ সুরে বললো,

'আমি জানি না রাইমা আপনি আমাকে কেন বিয়ে করতে চাইছেন? তবে এইটুকু জানি এই বিয়েটা আর পাঁচটা বিয়ের মতো স্বাভাবিক না। বিয়ের পরও হয়তো আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন না। হয়তো স্বামী হিসেবে মেনেই নিবেন না কোনো দিন। (একটু থেমে) আমার ভুলের জন্য আমি এখন ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত। আমি জানি আপনি সেটা বিশ্বাস করবেন না। আজকে আমি আপনার মা বাবাকে দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আমি কত বড়ো ভুল করেছি। ঐ মানুষগুলো আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। রাইমা...রাইমা এখন আমার মনে হচ্ছে আমার লাইফের সবথেকে খারাপ সময় আজকের দিনটা। আমি এতদিন আপনাকে সহ্য করতে পারতাম না কিন্তু আজ আপনাকে না পেয়ে আমার নিজেরই খুব অস্থির লাগছিল। বার বার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমার জন্য আপনি কষ্ট পেয়েছেন, আপনার পুরো পরিবার কষ্ট পেয়েছে। আমি আমার অন্যায় স্বীকার করে নিচ্ছি। আপনি বলেছিলেন, আমাকে এত সহজে পুলিশে দিবেন না। খুব কষ্ট দিবেন আমায়। আমি আপনার সেই কষ্ট মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। আপনার যা ইচ্ছে আমার সাথে তাই করতে পারেন। যত শাস্তি দেওয়ার দিতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে শুধু একটাই চাওয়া, এসবের মধ্যে নিরবকে আনবেন না। আর বাড়িতে গিয়ে প্লীজ কাউকে বলবেন না যে নিরব আপনাকে কিডন্যাপ করেছিল। এটা আপনার কাছে আমার অনুরোধ, প্লীজ রাইমা!'

অরিকের চোখগুলো ছলছল করছে। রাইমা তার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল। সে কিছু বুঝতে পারছে না সে কি বলবে? কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সেটা এই মুহুর্তে তার মাথায় কাজ করছে না। কি করবে সে ক্ষমা করে দিবে? ক্ষমা করা যায় এদের? যদি আবার একই কাজ করে বসে। যদি ভুলে যায় এসব? তখন, তখন কি করবে সে?

 রাইমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে। সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে। ক্লান্ত কন্ঠে বলে,

'আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন প্লীজ!'

অরিক আর কিছু বললো না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবার তাদের গন্তব্যের পথে রওনা দিল। 
.
.
রাইমাকে ধরে আস্তে আস্তে বাসার ভেতর নিয়ে গেল অরিক। তাকে দেখা মাত্রই বাড়ির সবাই ছুটে এল তার কাছে। তার মা বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে নিল। চোখে মুখে তার অনেক চুমু খেল। যেন তারা আবার তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। রাইমার মা এখনও কেঁদে চলছে। রাইমা তাই তার মায়ের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো,

'আমি তো এসে গেছি মা, তাহলে এখনো কেন কাঁদছো?'

তার কথায় তার মা কোনো জবাব দিলেন না। মেয়েকে কেবল বুকে জড়িয়ে ধরে রইলেন। 
.

পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর পরই রাইমাকে সবাই প্রশ্ন করতে লাগল, সে কোথায় ছিল? কেন বাইরে গিয়েছিল? আর অরিক তাকে কোথায় পেয়েছে? আর কত কত প্রশ্ন। অরিকের মেজাজ বিগড়ে গেল সবার এত এত প্রশ্ন শুনে। সে রেগে গিয়ে বললো,

'ও কোনো ছেলের হাত ধরে পালায়নি যে আপনারা ওকে এসব প্রশ্ন করবেন। ওকে কি..'

অরিক কথাটা শেষ করার আগেই রাইমা মাঝপথে বলে উঠে,

'আমাকে কারা যেন কিডন্যাপ করেছিল বাবা। কিন্তু আমি তাদের কাউকে চিনি না। হয়তো কেউ এই বিয়েটা ভাঙতে চেয়েছিল। তাই সেই ব্যক্তি আমাকে কিডন্যাপ করার পর আবার অরিককে ফোন করে আমার নামে অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলে। কিন্তু উনি এসব বিশ্বাস না করে উল্টো সেই নাম্বারের লোকেশন ট্র্যাক করে আমার কাছ অবধি পৌঁছে যান। তারপর উনি ওদের পুলিশের ভয় টয় দেখিয়ে আমাকে ওদের কাছ থেকে নিয়ে আসতে সফল হোন। আমার তখনও জ্ঞান ছিল না। মাঝ রাস্তায় জ্ঞান ফেরার পর উনি আমাকে সবকিছু বলেন।'

এতসব মিথ্যে বলে রাইমা নিশ্চুপ হয়ে যায়। তার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে এক নাগাড়ে এত মিথ্যে বলে ফেলেছে, তাও আবার এই মানুষগুলো জন্য। অরিক নিরব দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল রাইমার কথা শুনে। এদিকে সবাই আবার অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়ল এসব কথা শুনে। রাইমার বাবা অরিককে জিগ্যেস করলো,

'বাবা, ঐ লোকটা কে ছিল? ও কেন আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে, কিছু বলেছে তোমাকে?'

অরিক ইতস্তত কন্ঠে বললো,

'না আংকেল, আসলে ওর সাথে এত কথা আমরা বলেনি। আমি আর নিরব গিয়েছিলাম। গিয়েই আমাদের মধ্যে ছোট খাটো মারামারি লেগে গিয়েছিল। কিন্তু ও একা থাকায় আর পারেনি আর কি। তাই পালিয়ে যায়। আমরা তখন রাইমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়াই আর ওর কথা মনে ছিল না।'

রাইমা বাঁকা চোখে অরিকের দিকে তাকায়। অরিক অপ্রস্তুত হয় পড়ে তাতে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আর রাইমা তখন মনে মনে বলে,

'একটু সুযোগ দিয়েছি বলে নিজেকে এখন হিরো বানিয়ে ফেলছে।'
.
.
এত এত ঝামেলা শেষে এবার কিছুটা শান্ত হলো সবাই। দুই পরিবারের মধ্যে আবারও কথোপকথন হলো। এবং তারা আবারও হাসিমুখে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু রাইমা হঠাৎ বলে উঠল,

'আমার অরিকের সাথে কিছু কথা বলার আছে। তারপর আমরা এই ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।'
.
.
[+] 6 users Like Yourpriya's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ_প্রেম - by Yourpriya - 07-01-2023, 06:34 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)