Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ_প্রেম
#17
|৭|
~
একটু আড়াল হয়ে অরিক কাউকে একটা কল লাগাল। কলটা রিসিভ হতেই সে বললো,

'মেয়েটাকে কোথায় রেখেছিস?'

ওপাশের ব্যক্তিটি তখন অবাক কন্ঠে জবাব দিল,

'ভাই, আমরা তো এখনও ঐ মেয়েকে কিডন্যাপ করতে পারেনি। বাড়ির পেছন দিকটায় আমরা আছি। সুযোগ বুঝে কাজটা হয়ে যাবে। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।'

টনক নড়ল অরিকের। তার লোকেরা যদি রাইমাকে কিডন্যাপ না করে থাকে তাহলে ঐ মেয়ে কোথায় গেল? অরিক চিন্তিত গলায় বললো,

'আচ্ছা এক কাজ কর, তোরা আপাতত এখান থেকে চলে যা। প্রয়োজন পড়লে আবার ডাকব তোদের।'

'ঠিক আছে ভাই।'

কলটা কাটল অরিক। এবার চিন্তার কালো মেঘ তার মনেও হানা দিল। সে বাড়ির ভেতর গিয়ে খেয়াল করলো সবার চোখ মুখ থমথমে। যেন কেউই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। অরিক শুকনো ঢোক গিলল। রাইমার বাবা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন রুমের এক কোণে। যাকে এটা ওটা বলে ভরসা দিচ্ছে তার ছোট ভাই'রা। অরিক গিয়ে সেখানে বসলো। মৃদু সুরে জিগ্যেস করলো,

'রাইমা ঠিক কখন থেকে নিখোঁজ হয়েছে? আপনারা কিছু জানেন?'

সেখানে থাকা রাইমার ছোট মামা জবাবে বললো,

'প্রায় ঘন্টা দেড় এক আগে। মেয়েটা বাইরে ছিল, আসলে মন খারাপ ছিল তো তাই তার বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এতটুকু পর্যন্ত ওর কাজিনরা দেখেছে। তারপর হঠাৎ করে আমার মেয়ে ওকে রেডি করানোর জন্য ডাকতে এসে দেখে বাগানের কোথাও ও নেই। ইনফ্যাক্ট পুরো বাড়ির কোত্থাও নেই। ফোনটা তার রুমে পড়ে আছে। এই যে দুই ঘন্টা হতে চললো তাও তো ওর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।'

'ওর কোনো ফ্রেন্ড বাসায় খবর নিয়েছেন? যদি ওদের কারোর বাসায় যেয়ে থাকে।'

'চেনা পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে কোথাও নেই।'

অরিকের মুখটা চুপসে গেল। অবচেতন হয়ে পড়ে থাকা রাইমার বাবার মুখ থেকে এবার কিছু আওয়াজ বেরুল। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,

'আ-আমার মেয়েটাকে সবাই খারাপ বলছে। বলছে যে ও নাকি কোন ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি তো চিনি আমার মেয়েকে, আমার মেয়ে কখনো এমন কোনো কাজ করতে পারে না যেটাতে তার মা বাবার অসম্মান হবে। নিশ্চয়ই আমার মেয়ের সাথে কোনো অন্যায় হয়েছে। না হলে আমার মেয়ে কখনোই এমনটা করতে পারে না।'

এই বলে তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। অরিক বিধ্বস্ত নয়নে চেয়ে রইল মানুষটার দিকে। মেয়েকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে  যেন পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছে তার। একটু আগেও রাইমার নিখোঁজ হওয়ার খবরটা শুনে ভীষণ খুশি হলেও এখন তার আর ভালো লাগছে না। অন্য সবার মতো তার মনও দুশ্চিন্তায় ভরে গেল। কোথায় গেল মেয়েটা? এমনটা তো নয় যে তাকে বিয়ে করবে বলে পালিয়ে গিয়েছে, সেই তো চেয়েছে বিয়েটা করার জন্য, তাহলে? এখানে কি তৃতীয় কারোর হাত আছে? অরিক ভাবতে থাকে। 

রাইমার বাবা এবার ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেন। যার জন্য উনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। সবাই মিলে হাজার বুঝালে তিনি বুঝছেন না। বারবার উঠে বাইরে চলে যেতে চাইছেন, মেয়ে নাকি নিজেই খুঁজে বের করবেন। কিন্তু এখন বাইরে গেলেই তার শরীরের আরো অবনতি ঘটবে, তাই বাকিরা তাকে আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু উনি শুনবেনই না। এসব দেখে অরিক উনার পাশে বসে উনার হাতদুটো জড়িয়ে ধরলো। রাইমার বাবা ভেজা চোখগুলো অরিকের মুখের উপর গিয়ে স্থির হলো। অরিক চাপা নিশ্বাস ফেলল। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বললো,

'এত অস্থির হবেন না আংকেল। রাইমা ঠিক চলে আসবে। আমরা এতগুলো মানুষ আছি, সবাই মিলে খুঁজব ওকে। আপনি বলেছেন না, আপনার মেয়ে কোনো ভুল করতে পারে না; আমিও সেটাই বিশ্বাস করি। রাইমা কোনো ভুল করেনি তাই ওর সাথেও কোনো ভুল হবে না। শুধু আপনি একটু ধৈর্য্য ধরুন প্লীজ।'

অরিকের কথা শুনে এবার কিছুটা হলেও তিনি শান্ত হলেন। জবাব দিলেন না কোনো, দেয়ালটায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলেন কেবল। 
.

অরিকদের সাথে তাদের কিছু আত্মীয় এসেছিল। তারা এখন এই নিয়ে খুব কানাঘুষা করছে। যার অধিকাংশ কথায় রাইমার বাবার কানে যাচ্ছে। বাকি সবাইও সেসব শুনছে কিন্তু বলতে পারছে না কিছু। কিন্তু এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার অরিক রেগে গেল যখন সে তার এক আত্মীয়ের মুখে শুনল যে,

'আরে আজ কালকার মেয়ে না, এদের আবার বিয়ে টিয়ে নিয়ে এত চিন্তা আছে নাকি? এরা তো বিয়ের আগেই পোয়াতি হয়ে বসে থাকে। দেখ গিয়ে অ্যা ও নিশ্চয়ই এই কাজ করে বসেছে তাই এখন আর পথ না পেয়ে পালিয়েছে।'

অরিক চেঁচিয়ে উঠল। বললো,

'বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। এখানে থেকে ফালতু কথা না বলে চুপচাপ চলে যান। যদি বিয়ে হয়, তবে আপনার বাসায় একটা বিরিয়ানির প্যাকেট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এখন আপনি আসতে পারেন।'

মহিলাটি বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। অপমানে গা জ্বলে উঠল তার। অরিক এখনও দাঁতে দাঁত চেপে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলাটি ফুসতে ফুসতে অরিকের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

'শেষ পর্যন্ত আবার একটা ঘর পালানো মেয়েকে ছেলের বউ করোনা যেন! হু'

ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন তিনি। অরিক তখন বললো,

'বাকি যারা উনার কথার সাথে তাল মেলাচ্ছিলেন উনারাও চলে যেতে পারেন। এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে না যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রং দেখবেন।'

কিছু মানুষ সত্যি সত্যিই বেরিয়ে গেল। আর এখন কেবল অরিকের পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনই রয়েছে।

অরিক তখন তার মায়ের কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখে নিরব কল করছে। কলটা কেটে দেয়ে সে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আবার কল চলে আসে। অরিক এবার বিরক্ত হয়ে বাইরে গেল তারপর তার কলটা রিসিভ করলো। সে কিছু বলার আগেই নিরব বলে উঠল,

'কি রে দোস্ত, কেমন এনজয় করছিস? বউ ছাড়া বিয়ে!'

অরিক বুঝে উঠতে পারল না ঠিক। কপাল কুঁচকে বললো,

'মানে?'

'মানে হলো তোর বউ তো নেই সেখানে...সে তো এখন আমার কাছে।'

'হুয়াট!'

জোরে চেঁচিয়ে উঠে অরিক। নিরব হাসতে হাসতে বলে,

'আরে আস্তে। এবার বল কেমন দিলাম? শেষ পর্যন্ত বিয়েটা আটকাতে পারলাম তো? এবার বল এই মেয়ের সাথে কি করা যায়? এই কয়দিন যা জ্বালিয়েছে না। ভাবছি আমার কাছে একটা মারাত্মক ড্রাগের ডোস আছে সেটাই পুষ করবো ওর শরীরে। আমি জানি ও সেটার রিয়েকশন সহ্য করতে পারবে না। হয় মরবে নয়তো আধমরা হয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। ভালো হবে না বল? আমাদের আর তখন কোনো টেনশন থাকবে না।'

'খবরদার নিরব, এসব কিচ্ছু করবি না তুই। আমার ব্যাপার আমি বুঝে নিতাম। তুই কোন সাহসে আমাকে কিছু না বলে ওকে কিডন্যাপ করলি? ওর গায়ে যেন এইটুকুও আঁচড় না লাগে। কোথায় আছিস বল আমি এক্ষুণি আসছি।'

নিরব হাসতে হাসতে বলে,

'বাহ, প্রেম তো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে দেখছি।'

শক্ত গলায় অরিক বলে উঠে,

'বাজে কথা না বলে জলদি ঠিকানা দে।'

নিরব ঠিকানাটা দিতেই অরিক কাউকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
.
.
চলবে..
[+] 5 users Like Yourpriya's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ_প্রেম - by Yourpriya - 30-12-2022, 04:20 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)