Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ_প্রেম
#5
|৪|
~
রাইমা মিষ্টি হাসল অরিকদের দেখে। তবে সেই মিষ্টি হাসিটাও ক্যাকটাসের কাটার মত গিয়ে বিঁধল অরিক আর নিরবের বুকে। দুজনেই গম্ভীর গম্ভীর চোখ মুখ নিয়ে সেদিকে গেল। অরিকের বোন নিরা রাইমাকে পেয়ে খুব খুশি। আর লিমা সোবহানও খুশি হলেন ভীষণ। রাইমা আর তার মা'র সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সকলে ভেতরে গেলেন। অরিক আর নিরব পেছন পেছন হাঁটছে। পা যেন চলছে না তাদের। নিরব বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে কোনোরকমে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু অরিকের জন্য পারছে না। 

তারা একটা বড়ো শাড়ির শো রুমে ঢুকে। একে একে শাড়ি দেখতে থাকে সকলে। তখনও অরিক আর নিরব অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। সেসময় নিরা তাদের কাছে আসে। বলে,

'এই ভাইয়া, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ঐদিকে এসো, ভাবির জন্য শাড়ি পছন্দ করে দিবে।'

অরিক কড়া গলায় জবাব দিল,

'আমি কেন পছন্দ করবো? যার জন্য শাড়ি কিনবে সে তো নিজেই এসেছে। তাকে গিয়ে জিগ্যেস কর। আমাকে এসবের মধ্যে একদম টানবি না।'

নিরা বিরক্ত কন্ঠে বললো,

'উফফ ভাইয়া, তুমি এমন কেন বলতো? একটু তো রোমান্টিক হতে পারো। নিজের হবু বউকে একটু শাড়ি বেছে দিলে কি হয়? এই নিরব ভাইয়া আপনি বলেন না কিছু!'

নিরব বোকা বোকা হেসে নিরার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

'হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও তো সেটাই বলছিলাম। এই দোস্ত যা তো, ভাবিকে একটু হেল্প কর।'

অরিক দাঁত কিড়মিড়িয়ে নিরবের দিকে তাকাল। যেন এক্ষুণি তাকে আস্ত চিবিয়ে ফেলবে। নিরব ভয়ে ছোট্ট ঢোক গিলে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। নিরা অরিকের হাত টেনে বলে,

'চল না ভাইয়া।'

সেসময় আবার অরিকের মাও তাকে ডেকে উঠে। এবার আর ছাড়া পাবে না সে। মা যখন ডাকছে তখন যেতেই হবে, নয়তো সকলের সামনে এসেই ঝাড়ি দেওয়া শুরু করবে। অরিক বিরক্ত ভঙিতে এগিয়ে গেল সেদিকে। নিরা তাকে নিয়ে দাঁড় করালো রাইমার পাশে। এতে যেন তার আরো গা জ্বলে উঠল। দুহাত পকেটে পুরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লিমা সোবহান তখন একটা লাল কাতান শাড়ি দেখিয়ে বললো,

'বাবা, দেখতো এই শাড়ি টা কেমন?'

অরিক পাত্তা না দিয়ে বললো,

'মা, আমি শাড়ির ব্যাপারে অত কিছু বুঝি নাকি? তুমি আছো, এই যে আন্টি আছেন, তোমরা দেখ না। আমাকে কেন এসবের মাঝে টানছো?'

স্বাভাবিক ভাবেই এই কথাটা রাইমার মায়ের কাছে ভালো লাগে না। মন খচখচ করে উঠল তার। ছেলের কি তবে এই বিয়েতে মত নেই? নাহলে সে এত বিরক্ত কেন? রাইমা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে অবাক দৃষ্টিতে অরিককে দেখছে। সেও টের পায় তার মায়ের মনে হয়তো সন্দেহ জেগেছে। তাই সে দাঁতে দাঁত চেপে অরিককে ফিসফিসিয়ে বলে,

'এই যে মি. ভালো ভাবে কথা বলুন। আপনার কথা শুনে যদি আমার মায়ের মনে কোনোপ্রকার সন্দেহ জাগে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনার ইচ্ছে থাকুক আর না থাকুক হাসি মুখে মেনে নিন সবটা।'

রাইমার থ্রেড শুনে রাগে ধপধপ করতে থাকে অরিকের মস্তিষ্ক। এইটুকুনি একটা মেয়ে তাকে এইভাবে থ্রেড দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে...

রাগ টা দমিয়ে নিল। জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে নিল। অস্বস্তিতে মাথা চুলকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,

'না মানে আম্মু এই শাড়িটা অত একটা ভাল লাগছে না। তুমি ঐ ডার্ক রেড কালার টা দেখ।'

তার কথা মতো দোকানদার সেই শাড়িটা নামিয়ে দিল। অরিক সেটা ঘেটে ঘেটে দেখে বললো,

'বাহ, এটা বেশ সুন্দর। রাইমাকে সুন্দর মানাবে।'

অরিকের কথা শুনে দুই মা'ই মুচকি মুচকি হাসল। নিরাও লাফিয়ে উঠে বললো,

'এই না হলো আমার ভাই! কত সুন্দর বুঝে গেল বউকে কোনটাতে বেশি মানাবে।'

অরিক মেকি হেসে শাড়িটা রেখে দিল। রাইমা তখন শাড়ি টা হাতে নিয়ে বললো,

'কিন্তু আমার এটা পছন্দ হয়নি। আমি আন্টির পছন্দ করা ঐ রেড কাতানটাই নিব।'

এবার অনেক বেশিই বিরক্ত হলো অরিক। যদি নিজের পছন্দেই নিতে হয় তাহলে ঢং করে আর তাকে পছন্দ করতে বলা হলো কেন? সে তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

'সমস্যা নেই। আপনার যেটা পছন্দ আপনি সেটাই নিন।'

তারপর অরিক আর কোনো কথা বললো না। জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কেবল। 
.
অনেক কিছু কেনাকাটা হলো। কিন্তু কথা হলো এর মাঝেই নিরব ভেগে গিয়েছে। এই নিয়ে চরম ক্ষেপে আছে অরিক। ছেলেটাকে একবার হাতে পেলে আর আস্ত রাখবে না। একে তো এই নিয়ে রাগ তার উপর শপিং করতে এসে ঘুরতে ঘুরতে তার অবস্থা খারাপ। রাইমার জন্য রাগ দেখিয়ে কিছু বলতেও পারছে না। মেয়েটা চোখের ইশারা দিতেই যেন অদ্ভুত ভাবে সে চুপ হয়ে যায়। নিজেকে নিজেই থাপড়াতে মন চাচ্ছে তার। একটা ছেলে হয়ে সে এইভাবে একটা মেয়েকে ভয় পাচ্ছে! ভাবতেই রাগে কেঁপে উঠছে সে। 
.
সবশেষে বেরিয়ে আসার সময় রাইমা আর অরিককে একটু আলাদা সময় দেয়া হলো কথা বলার জন্য। সেখানেও অরিক চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল কেবল। রাইমা হাসল। যেন বিদ্রুপ ছড়িয়ে পড়ছে সেই হাসিতে। বললো,

'আহারে, আমার হবু বরটার চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না বুঝি?'

অরিক নাক পাল্লা ফুলিয়ে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে। রাইমা বুঝলো ব্যাপারটা। সে আবারও হাসল। এক কদম এগিয়ে এসে বললো,

'অতিরিক্ত রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়, জানেন তো? আর দেখবেন, আপনার এই অতিরিক্ত রাগ আপনারও ধ্বংস বয়ে আনবে।'

অরিক তাও কিছু বললো না। কেবল দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরল। রাইমা কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেল। রাইমা চলে যেতেই অরিক তার সামনে থাকা দেয়ালটায় সজোরে ঘুষি মারল। দাঁতে দাঁত চেপে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,

'না, এবার এই মেয়ের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।'
.
.

বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল অরিক। মন মেজাজ একেবারে তুঙ্গে উঠে আছে তার। অনেকক্ষণ সে চোখ বুজে শুয়ে রইল। হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা হাতে নিয়ে সে দেখল নিরব কল দিচ্ছে। রাগে যেন ঘি পড়ল এবার। কলটা রিসিভ করেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে লাগল তাকে। বেচারা ভয়ে চুপচাপ সব হজম করে নিল। এক পর্যায়ে অরিকও হয়রান হয়ে দম ফেলল। তখন নিরব ভয়ে ভয়ে বললো,

'দোস্ত, আসলে খুব জরুরি একটা কাজ পড়ে গিয়েছিল তো তাই চলে আসতে হয়েছে। না হলে আমি জীবনেও আসতাম না।'

'চুপ কর শালা। আমাকে এইসব ফালতু কথা বলে বোঝাতে আসবি না।'

অরিকের ধমক শুনে নিরব আবারও চুপসে গেল। তবে নিজের মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললো,

'দোস্ত, আমার মাথায় আরেকটা আইডিয়া এসেছে?'

'তোর বা*লের আইডিয়া তোর কাছেই রাখ।'

'আরে না, একবার শুনেই দেখ না।'

ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও অরিক বললো,

'কি আইডিয়া?'

'শোন, তুই একবার রাইমার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলে দেখ। তুই ওর কাছে ক্ষমা চা, একেবারে আকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইবি। তুই ওকে বুঝিয়ে বলবি যে তোর যা হয়েছে ভুল হয়েছে। বলবি যে তুইও ওকে বিয়ে করতে চাস। অন্য সবার মত একটা স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়তে চাস। এইভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে এটা ওটা বলে তুই ওকে বোঝানোর চেষ্টা করবি। তারপর দেখ ও কি বলে।'

'তোর মনে হয় ঐ মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইলেই ও আমাকে ক্ষমা করে দিবে?'

'আরে তুই চেয়েই দেখ না। মেয়েদের মন গলতে দু মিনিটও লাগে না। তুই শুধু একটু ইমোশনালী কথা বলিস তাহলেই হবে।'

অরিক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে অনিশ্চিত গলায় বললো,

'আচ্ছা ঠিক আছে। ওর সাথে কথা বলে দেখি তাহলে। তবে তাতেও যদি না হয়, তবে আমি এর অন্য ব্যবস্থা নিব। এইভাবে আর একে আমি সহ্য করতে পারবো না।'
.
.
চলবে..
[+] 6 users Like Yourpriya's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ_প্রেম - by Yourpriya - 22-12-2022, 08:17 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)