22-12-2022, 11:18 PM
পর্ব ৫
সাড়ে চারটের পাঁচ মিনিট আগেই নিজের গন্তব্বে পৌঁছে গেল তনিমা। ম্যাকডোনাল্ডসের বাইরে কচি কাঁচাদের ভীড় আর মলেও এই সময় বেশ লোকজন থাকে। এখানকার বেশীর ভাগ মানুষই এই সময়ে এখানে উইন্ডো শপিং করতে আসে, তাই তনিমা নিশ্চিন্ত বোধ করল। ঘড়িতে চারটে পঁয়তিরিশ বাজে, এদিক ওদিক দেখছে তনিমা; সোমেন আসবে তো? না এলে কি করবে সে? কি আর করবে? দশ পনের মিনিট অপেক্ষা করে ফিরে যাবে। কনট প্লেস থেকে আসবে বলছিল, এই সময় যা ট্র্যাফিক, দেরীও হতে পারে।
- হালুম! আপনার পেছনে মানুষখেকো বাঘ।
চমকে উঠে তনিমা পেছন ফিরতেই দেখল সেখানে সোমেন দাঁড়িয়ে, দাঁত বের করে হাসছে।
- সো...সোমেন?
- তনিমা।
সোমেন নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। একটু ইতস্তত করে তনিমা হাতটা ধরল।
- কখন এসেছেন আপনি? তনিমা জিজ্ঞেস করল।
- মিনিট পনেরো হল।
- সেকি? আমিও তো দশ মিনিট এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
- জানি তো।
- জানি মানে? ডাকেননি কেন?
- না মানে দেখছিলাম, আশেপাশে গুন্ডা আছে কি না?
সোমেনর সেই কথায় তনিমা হেসে নিজের হাত ছাড়াল, তারপর একে অপরকে দেখতে লাগল ওরা।
- আমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে একে অপরকে এই ভাবে দেখব? সোমেন জিজ্ঞেস করল।
- না না চলুন...চলুন কোথাও বসি, বলে ম্যাকডোনাল্ডসের দিকে পা বাড়াল তনিমা।
- ওরে বাব্বা, এখানে তো সব বাছুরের দল। দুজনে ভিতরে ঢুকে কোনার একটা টেবল বাছল। সোমেন এক পা এগিয়ে তনিমার জন্য চেয়ারটা টেনে ধরল, আসুন ম্যাডাম।
- থ্যাঙ্ক য়ু। তনিমা বসল, সোমেন সামনের চেয়ারটায় বসে ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল, 'আশে পাশে সব ছাত্র ছাত্রী বুঝি, ম্যাডাম ইশারা করলেই পেটাবে?'
- না এখানে কেউই আমার ছাত্রী নয়। আমাদের কলেজের মেয়ে দু একটা থাকতে পারে, কিন্তু ডিপার্টমেন্টের কেউ নেই, তনিমা হেসে জবাব দিল।
- যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল, সোমেন এদিক ওদিক দেখে বলল, 'এখানে মনে হচ্ছে সেলফ সার্ভিস, ম্যাডাম কি নেবেন, চা না কফি? সাথে কিছু খাবেন কি?'
- উফফ! এই ম্যাডাম ডাকটা আমার একেবারেই পছন্দ না, আর আপনিটাও কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তনিমা বলল।
- বাঃ রে তুমিই তো শুরু করলে আপনি বলে।
- তুমি কি সব সময় মেয়েরা যা করে তাই কর?
- না না সব সময় না, মাঝে মাঝে। বলে এবার দুজনেই হেসে ফেলল। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে সোমেন বলল, 'তনিমা তুমি সত্যিই সুন্দর, ছবির থেকেও অনেক বেশী সুন্দর'
আর সেটা শোনামাত্রই তনিমার গাল লাল হয়ে গেল। তারপর সে বলল, এই রকম ফ্ল্যাটারী তুমি মাঝে মাঝে কর না সব সময়?
- হ্যাঁ এটা আমি সব সময় করে থাকি, গোবেচারা মুখ করে বলল সোমেন।
তনিমার চোখে মুখে হাসি। এবার সোমেন জিজ্ঞেস করল, 'কি হল বললে না, চা নেবে না কফি?'
- কফি, কাপুচিনো।
- সাথে কিছু নেবে? সোমেন উঠে দাঁড়িয়েছে।
- না না, শুধু এক কাপ কফি।
সোমেন কফি আনতে গেল, কাউন্টারে লাইন দিয়েছে, তনিমা ওকে দেখছে। বেশ লম্বা, কালো, একটুও মেদ নেই শরীরে, পেটানো চেহারা, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেমন বলেছিল জুলফিতে পাক ধরেছে, জিনসের প্যান্টের ওপর একটা টুইডের জ্যাকেট পরেছে, গলায় মাফলার। তনিমার চোখে খুবই হ্যান্ডসাম লাগল ওকে। একটু পরেই সোমেন দু কাপ কফি নিয়ে হাজির হল।
'বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমরা দুজনে এ রকম সামনা সামনি বসে কফি খাচ্ছি তাই না', সোমেন বলে উঠল।
- তোমাদের কোম্পানীর মীটিং কেমন হল? তনিমা কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল।
- খুব ভাল। তবে কোম্পানীর মিটিং না, রাইস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের মীটিং, প্রতি বছরই হয়, চাল রপ্তানির ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা আদায় করে আমাদের অ্যাসোসিয়েশন।
তনিমা লজ্জার সাথে স্বীকার করল ওর কোনো ধারনাই ছিল না আমাদের দেশ থেকে এই রকম চাল রপ্তানি হয়। সেই শুনে সোমেন বলল 'এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, আমার ইতিহাস জ্ঞান এর থেকেও খারাপ'
তনিমা লক্ষ্য করল, লোকটার মধ্যে কোনো বারফাট্টাই নেই, নিজের বিষয়টা জানে আর খুব কনফিডেন্টলি কথা বলে। যা জানেনা, খোলা গলায় স্বীকার করে।
সোমেন তনিমার কলেজ সম্বন্ধে জানতে চাইল। তনিমা বলল, ওর পড়াতে খুব একটা ভাল লাগে না, তবে ওদের কলেজটা খুব ভাল, টিচার্সদের অনেক রকম সুবিধা দেয়। ও ভাবছে পি.এইচ.ডি'র জন্য রেজিস্ট্রেশন করবে, পি.এইচ.ডি না করলে চিরকাল লেকচারার হয়েই থাকতে হবে।
সোমেন পড়াশুনার জগত থেকে অনেক দূরে থাকে, কিন্তু তনিমার সামনে বসে ওর কথা শুনতে খুব ভাল লাগছিল। এক দৃষ্টে দেখছিল তনিমাকে, ওর কথা বলার ভঙ্গি, চোখের চাহনি সোমেনের খুবই কামনাদায়ক মনে হল।
তনিমা থামতেই সোমেন জিজ্ঞেস করল, আর এক কাপ কফি নেবে কি? চমকে তনিমা ঘড়ি দেখল, ছটা বাজে। ওরে বাবা এর মধ্যে দেড় ঘন্টা কেটে গেল, শীতকাল, বাইরে অন্ধকার হয়েছে। এখুনি উঠতে ইচ্ছে করছে না, তনিমা দোনোমোনো করছে।
সোমেন খুব শান্ত স্বরে বলল, বাড়ী যাওয়ার তাড়া আছে কি? আমার কাছে গাড়ী আছে, আমি পৌঁছে দেব। তনিমা কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে রইল আর সেটা দেখাদেখি সোমেন আবার বলল, 'ভয় নেই কিডন্যাপ করব না'
সেই শুনে তনিমা হেসে বলল, 'আমিও তো তোমাকে কিডন্যাপ করতে পারি। আফটার অল, এটা আমার এলাকা, এখানে আমরা প্রায়ই আসি'
- আচ্ছা আচ্ছা তা চোখটা বেঁধে ফেলি? বলে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করল সোমেন, তারপর আবার বলল, 'উফফফ আমার যে কতদিনের শখ কিডন্যাপ হওয়ার!' আর সেই দেখে তনিমা হোহো করে হেসে উঠল।
- তবে ম্যাডাম একটা সমস্যা আছে, সোমেন বলল।
- কি?
- আমার তো আগে পিছে কেউ নেই, তাই আমাকে ছাড়াতে কেউ আসবে না।
- কেন তোমার গুরদীপ সিংজী।
- আরে সে তো বুড়ো মানুষ, অমৃতসর থেকে এসে এখানে কি করবে?
কিছুক্ষণের জন্য দুজনেই একটু চুপ থাকল। তারপর সোমেন জিজ্ঞেস করল, 'তনিমা আমাকে কি খুবই খারাপ মানুষ বলে মনে হচ্ছে?'
সোমেনের মুখ থেকে সেই কোথা শোনামাত্রই তনিমা প্রতিবাদ করে বলে উঠল, 'না না ছি ছি তা কেন? আমি কি তাই বলেছি নাকি?'
- আচ্ছা তাহলে একটা কথা বলি?
- হ্যাঁ বল।
- খুব যদি অসুবিধা না থাকে তাহলে চল এক সাথে ডিনার করি?, আর এই প্রস্তাব শোনামাত্রই তনিমার মনটা খুশীতে ঝলমলিয়ে উঠল। ওর একেবারেই ইচ্ছে করছিল না সোমেনকে ছেড়ে যেতে, তাই এবার মিষ্টি হেসে তনিমা বলল,
- বেশী রাত করব না কিন্তু, কাল সকালে ক্লাস আছে আমার।
- না না রাত করব না, ওদিকে আমারও ট্রেন ধরা আছে।
- ওকে, কিন্তু কোথায় ডিনার করবে? এখানেই?
- প্লীজ তনিমা, বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস দিয়ে ডিনার করা যায় না।
- তাহলে...? তাহলে কোথায়?
- আমি গতবার মীটিং করতে তাজ মান সিং এ এসেছিলাম, ওদের মাচান রেস্তোরাঁটা খুব ভাল, যাবে?
- ওটা তো ফাইভ স্টার, খুবই এক্সপেন্সিভ হবে।
তনিমার একটা হাত টেবলের ওপর ছিল। সোমেন তার হাতের ওপরে নিজের হাত রেখে আলতো চাপ দিয়ে বলল, 'কথা দিচ্ছি, পরের বার যখন আমরা এক সাথে ডিনার করব, ফুটপাতে রেড়ীওয়ালার কাছে দাঁড়িয়ে খাব'
আনসাল প্লাজা থেকে বেরতে ওদের প্রায় সাতটা বাজল। সোমেন একটা গাড়ী ভাড়া করেছে, ওরা পার্কিং লটে গাড়ীর কাছে পৌঁছতেই, সোমেন গাড়ীর দরজা খুলে একটা লাল গোলাপের বুকে বের করে ওকে দিয়ে বলল, 'এটা তোমার জন্য তনিমা'
'ওহ! থ্যাঙ্ক য়ু থ্যাঙ্ক য়ু', তনিমা খুব খুশী হয়ে বুকেটা নিয়ে বলল, 'আগে দিলে না কেন? মনে সন্দেহ ছিল কি রকম হবে, তাই না?'
গাড়ীতে বসে সোমেন বলল, 'না আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। আসলে গোবিন্দা আর সঞ্জয় দত্তর একটা ছবিতে দেখেছিলাম সতীশ কৌশিক ফুল হাতে রেস্তোরাঁয় বসে আছে, আর কতগুলো কলেজের মেয়ে এসে তাকে খুব জুতোপেটা করছে। ফুল হাতে মার খেতে কেমন লাগে বল?'
পনের মিনিটের মধ্যে ওরা তাজ মান সিং পৌঁছে গেল। গাড়ী পার্ক করে রেস্তোরাঁর দিকে যাচ্ছে, তনিমা এক পা আগে, সোমেন ওর বাঁ পাশে একটু পেছনে। আনসাল প্লাজাতে দেখা করার আগেই সোমেন বেশ কিছুক্ষন দূরে দাঁড়িয়ে তনিমাকে দেখেছে, ম্যাকডোনাল্ডস থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে যাওয়ার পথে কাছ থেকে দেখেছে, তনিমার ফিগারটা দারুন। লং কোট পরে আছে বলে মাই দুটোর সাইজ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু পাছাটা জম্পেশ। সোমেনের খুব ইচ্ছে করছে তনিমার পাছায় হাত দিতে। কিন্তু ও আগেই ঠিক করেছে, আজ কিছু না, আজ শুধু মনোহরন খেলা, ইংরেজিতে যাকে বলে চার্ম অফেন্সিভ।
নিজের মিষ্টি স্বভাব দিয়ে মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের, বশীভূত করার ক্ষমতা সোমেনের সহজাত। তার ওপরে পালিশ লেগেছে কানপুরে কাজ করার সময়। সেখানকার মিঃ মেহেতা পারিবারিক সুত্রে চালকলের মালিক হলেও স্বভাবে ছিলেন খাঁটি সাহেব। সোমেনকে খুব পছন্দ করতেন, নানান জায়গায় সাথে নিয়ে যেতেন, কোথায় কি বলা উচিত কি করা উচিত, কিভাবে উঠতে বসতে হয়, হাতে ধরে শিখিয়েছেন। সোমেন ওকেই প্রথম দ্যাখে কোনো মহিলা ঘরে এলে উঠে দাঁড়াতে, চেয়ার এগিয়ে দিতে, দরজা খুলে পহলে আপ অথবা আফটার ইয়ু বলতে। খুবই সামান্য ব্যাপার সব, কিন্তু পরবর্তী জীবনে এগুলো সোমেনের খুব কাজে লেগেছ। আজ তনিমার ওপরে নিজের সব চার্ম উজাড় করে দিতে দিতে সোমেনের একবার মনে হল, ও নিজেও বোধহয় এই মহিলার মায়াজালে ধরা পড়ছে। চোখে চোখ রেখে কথা বলা, ঠোঁট ফাঁক করে হাসি, ঘাড় বেঁকিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকানো, সোজা হয়ে বুকটা চিতিয়ে ধরা, তনিমার প্রতিটি ভঙ্গি মনে হল লাখ টাকার, আর ভীষন সেক্সি।
ওদিকে তনিমা সোমেনের প্রতিটি কথা হাঁ করে গিলছে, ওর দ্বিধাহীন ব্যবহারে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে। কোনো রূঢ়তা নেই, গা জোয়ারি নেই, লোক দেখানো নেই, চলনে বলনে স্থিতিশীল, রসিক মানুষটা তনিমাকে মোমের মত গলিয়ে দিচ্ছে।
ধীরে সুস্থে দুজনে ডিনার করল, দুজনেরই মোঘলাই পছন্দ, তনিমা স্বল্পাহারী, সোমেন ভাল খায়। সোমেন একটা ব্লাডি মেরী নিল, তনিমা ফ্রেশ লাইম সোডা। সোমেন ওর কানপুর, দিল্লীর জীবনের গল্প বলল। তনিমা কলেজ জীবনের গল্প করল।
ডিনার শেষে সোমেন তনিমাকে বাড়ী পৌঁছে দিল। গাড়ীতে সারাটা রাস্তা সোমেন তনিমার হাত ধরে রইল, নামবার আগে জিজ্ঞেস করল, 'তনিমা তোমাকে একটা মোবাইল কিনে দিই?'
- না না সেকি, তুমি আমাকে মোবাইল কিনে দেবে কেন? তনিমা প্রতিবাদ করে বলে উঠল।
অবশ্য গাড়ি থেকে নামার সময় সোমেন একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল, 'এতে আমার মোবাইল নাম্বার আছে, মাঝে মাঝে ফোন করবে? আজকের পরে শুধু চ্যাটে কথা বলতে ভাল লাগবে না'
তনিমা কার্ডটা নিয়ে ব্যাগে রাখল। সোমেন তনিমার হাত মুখের কাছে নিয়ে এসে তাতে চুমু খেল।
দুদিন পরে প্রীতির সাথে মার্কেটে গিয়ে একটা মোবাইল ফোন কিনেই ফেলল তনিমা। বলল, 'মার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না, মিঃ অরোরা ফোন এলে ডেকে দেন, কিন্তু রাত বিরেতে বুড়ো মানুষটাকে বিরক্ত করতে আমার অস্বস্তি হয়'
আজকাল এই রকম ছোট খাট মিথ্যা কথা বলতে তনিমার বেশ ভালই লাগে।
ফোনটা অ্যাকটিভেট হতে সময় লাগল আরো চব্বিশ ঘন্টা। সোমবার ওদের দেখা হয়েছিল, শুক্রবার রাতে তনিমা অনলাইন না গিয়ে সোমেনকে ফোন করল নতুন মোবাইল থেকে। প্রথমবার ফোনটা বেজে গেল, কেউ তুলল না। তনিমা আবার ফোন করল, তবে দ্বিতীয় রিঙে সোমেন ফোন তুলে বলল, 'হ্যালো'
- সোমেন! আমি তনিমা!
- কে? তনিমা? সোমেন প্রায় চেঁচিয়ে উঠল।
- হ্যাঁ আমিই, চেঁচাচ্ছ কেন?
- না মানে কার ফোন থেকে কথা বলছ?
- কার ফোন আবার, আমার ফোন।
- ওয়াও তোমার ফোন? কবে কিনলে? কই কাল চ্যাটে কিছু বলনি তো।
- পরশু কিনেছি, আজ অ্যাকটিভেট হল।
- উমমমমমমম তাই বুঝি! তুমি আমার ডার্লিং তনিমা, তবে দাঁড়াও এক মিনিট, তোমার নাম্বারটা সেভ করে নি।
সেইরাতে বিছানায় লেপের তলায় শুয়ে অনেকক্ষন ধরে সোমেনের সাথে কথা বলল তনিমা। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা খুলে দেখল সোমেন মেসেজ পাঠিয়েছে, 'আই লাভ য়ু ডার্লিং'। আর প্রথমবার মেসেজ টাইপ করতে অনেকক্ষন সময় লাগলও, নিজের জবাব ঠিক পাঠাল তনিমাঃ 'আই লাভ য়ু টু'
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তনিমাদের শীতের ছুটি শুরু হলে সে কলকাতা গেল। যাওয়ার আগের দিন অনেক রাত অবধি সোমেনের সাথে ফোন সেক্স করল সে। সেদিন প্রথম তনিমা সোমেনেকে বলল, সত্যি করে উদ্দাম সেক্স করার সুযোগ ওর কোনদিন হয়নি।
অনেকদিন পরে তনিমা বাড়ী এসেছে, প্রথম কয়েকদিন আয় আমার কাছে বস, কি রোগা হয়ে গেছিস, এটা খা ওটা খা করে কাটল। তবে দিদি আর জামাইবাবু যেদিন এলেন সেদিন থেকেই আবার সুর পাল্টে গেল। সবাই মিলে ওকে বোঝাতে লাগল, এরকম ভাবে কেউ জীবন কাটায় নাকি? ডিভোর্সি তো কি হয়েছে? ডিভোর্সিদের বিয়ে হয় না কি? তনিমা দেখতে যা সুন্দর, একবার বললেই লাইন লেগে যাবে।
দিদি বলল, 'তোর জামাইবাবুর অফিসের মিঃ গুপ্তও তো ডিভোর্সি, আবার বিয়ে করবেন বলে পাত্রী খুঁজছেন। তুই যদি রাজী থাকিস তো কথা বলি'
জামাইবাবু একটা বদ রসিকতা করল, 'তনিমার নিশ্চয় কোনো পাঞ্জাবী বয়ফ্রেন্ড হয়েছে'। অবশেষে তিতিবিরক্ত হয়ে তনিমা এবার ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করল, আর ও বলতে বাধ্য হল, 'আমার জীবন, আমি যা ইচ্ছে করব, তোমাদের ভাল না লাগলে আমার সাথে সম্পর্ক রেখো না। তবে সব থেকে তনিমার যেটা খারাপ লাগল তা হল মা বাবাও ওদের তালে তাল মেলালেন। এক মাত্র ছোট ভাইয়ের বৌটা, শিবানী বলল, 'দিদি তোমার যে রকম ভাবে থাকতে ইচ্ছে করে সেই ভাবে থাকবে, এদের কথা একদম শুনবে না'
মোবাইল ফোনটা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্তু ওটাকে বেরই করল না তনিমা। সুইচ অফ করে ব্যাগে রেখে দিল। একদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসটিডি বুথ থেকে সোমেনকে ফোন করল ও। বলল বাড়ীতে অশান্তি হচ্ছে, তাই মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে।
সোমেন বলল ,'কবে ফিরছ তুমি? তোমাকে আমি ভীষন মিস করছি।
তনিমা বলল, 'ওই তিরিশ তারিখ ফিরবে, দু তারিখ সোমবার থেকে আমাদের কলেজ শুরু হচ্ছে'
দিল্লী থেকে ফিরে সোমেন একবার অজনালা গিয়েছিল, দু দিনের জন্য। দিল্লীর মিটিংএ কি হল, ওদের একটা শিপমেন্ট নিয়ে কান্দলা পোর্টে গন্ডগোল হচ্ছে, এইসব ব্যাপারে গুরদীপজীর সাথে কথা বলতে। শর্মাও খুব গন্ডগোল শুরু করেছে, অফিসের কাজে একদম মন নেই। সোমেনের ধারনা লোকটা বাইরেও কাজ করে। ওকে এবার তাড়ানো দরকার। গুরদীপজী সব শুনে বললেন তোমার যা ভাল মনে হয় সেটাই কর, পয়সা ফেললে শর্মার মত অনেক লোক পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় রাতে সুখমনি যথারীতি ওর ঘরে এলো। এবারে অমৃতসর ফিরে সোমেন একদিনও শর্মার বাড়ী যায়নি। ওর ইচ্ছেই হয় নি। অনেকদিন পরে সুখমনিকে পেয়ে সোমেন অনেকক্ষন ধরে চুদল। যাওয়ার সময় সুখমনি বলল, 'আমি তো কবে থেকে বলছি, শর্মাকে তাড়াও। তবে সাবধানে, তাড়াহুড়ো করে কিছু কোরো না, লোকটা মহা বদমাশ'
এই সুখমনিকে সোমেন আজও চিনে উঠতে পারল না। ওর মুখ দেখে কখনই বোঝা যায় না ওর মনে কি চলছে। সব সময় হাসি খুশী, সব সময় ব্যস্ত। এই যে রাতে সোমেনের ঘরে আসে, এটা যেন ওর আর হাজারটা কাজের মধ্যে একটা, হাসিমুখে করে যায়। দিনের বেলায় ওকে দেখলে কে বলবে যে এই মহিলাই রাতে সোমেনের ঘরে এসে উদ্দাম চোদনলীলায় মাতে। গত দশ বছরে সুখমনি অমৃতসরে ওদের অফিসে গিয়েছে হাতে গুনে দু তিন বার, তাও রতনদীপ বেঁচে থাকতে। অথচ অফিসে কি হচ্ছে, ব্যবসার কোথায় কি সমস্যা সব খবর রাখে। গুরদীপজী যে বহুর ওপরে খুব নির্ভরশীল সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, তবু সোমেনের মনে হয় সুখমনি অনেক কিছুই জানে যা গুরদীপজীও জানেন না। আগেও একবার শর্মাকে তাড়াতে বলেছিল, আজ আবার সাবধানে এগোতে বলল। কেন? গত বছর দুয়েকে সোমেন অনেক দায়িত্ব শর্মার হাতে ছেড়েছে, সত্যি কথা হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, কাজের এত চাপ, এত জায়গায় দৌড়তে হয়, অফিসে বসবার সময়ই পায় না, তাছাড়া পুনমের ব্যাপারটাও ছিল। সোমেন ঠিক করল, এবার সুতো গোটাতে হবে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সোমেনকে গুজরাত যেতে হল, কান্দলা পোর্টে ওদের শিপমেন্ট নিয়ে জট ছাড়াতে। তনিমার মোবাইল বন্ধ। তাই ওকে একটা ই মেইল লিখে নিজের গন্তব্বের দিকে রওনা দিল সোমেনঃ
'তনু সোনা বিশেষ কাজে কান্দলা যেতে হচ্ছে, ফিরব জানুয়ারীর পাঁচ ছয় তারিখ। হ্যাপী নিউ ইয়ার....লাভ ইয়ু...'