25-12-2022, 09:27 AM
পর্ব-০৫ শেষ পর্ব
পেছনে তাকিয়ে দেখি রাদিফ।
ওকে দেখে মেজাজটা একদম বিগড়ে গেলো।
---- এই ফাজিল পোলা,এভাবে কেউ চিল্লায়।আমার সাধের ফোনটা গেলো।
রাদিফ আমার ফোনটা তুলে নিয়ে বলল
---- কিছু হয়নাই দেখ।তুই এতরাতে ছাদে কী করিস।যদি পেত্নী ধরে নিয়ে যেত।
---- তুই কী দেখেছিস পেত্নীকে কখনো পেত্নী ধরে।ভূত হলে অবশ্য ঠিক ছিল।
নিবির ভাইয়ের এমন ফোড়নকাটা কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।এই লোক এখানে কী করে।
---- একদম ঠিক বলেছো, নিবির ভাইয়া।
---- এই পোলা, আমাকে তোর পেত্নী মনে হয়।মানলাম নিবির ভাইয়ার চোখ খারাপ তাই কি তোরও চোখ খারাপ।
---- কী বললি তুই, আফরা।আমার চোখ খারাপ।
---- অবশ্যই।না হলে কেউ হীরে রেখে কাঁচ নিয়ে পরে থাকে।
---- কী বললি তুই।
----না কিছুনা।আমি নিচে যাচ্ছি,রাদিফ।তোরা থাক।
---- তোকে যেতে বলেছি আমি?
রাদিফ তুই যা আফরার সাথে আমার কথা আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় চোখগুলো ছোটোছোটো করে তার দিকে তাকালাম। আমাকে আবার ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাতো।"
---- কিছু বলবেন ভাইয়া।
---- এতরাতে একা একা ছাদে বসে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলি মনে হয়।
---- আমার আর বয়ফ্রেন্ড কই হলো।এই দুবছর আপনার পিছনে যদি ঘুরে টাইমপাস না করতাম তাহলে এতদিনে হাজার খানেক বয়ফ্রেন্ড জুটে যেতো আমার।
" নিবির ভাইয়ার মুখ দেখেই বোঝা গেল সে আমার এমন জবাব আশা করেনি।"
---- তা আমার ওপর যে এত ভালোবাসা ছিল তা কি বাতাসে উবে গেলো।
---- উবে যায়নি তো ভাইয়া শুধু নিজের আত্মসম্মান জাগ্রত হয়ে গেছে।
---- তাই নাকি।
---- হুম।আমি নিচে যাচ্ছি ভাইয়া।
---- নিহান কে,আফরা।
" নিবির ভাইয়ার কথা শুনে মাথাটা যেন ঘুরতে শুরু করেছে।বারবার কেন এই নামটা আমার সামনে আসে। এই কালো অতীতটাকে আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই এই জিনিসটা আমার সামনে চলে আসে।"
---- আমি কিছু জানতে চাইলাম, আফরা।
নিবির ভাইয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারছিনা।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।শরীরটাও অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছি আমি।
---- তোর কী শরীর খারাপ লাগছে, আফরা।তোর,,
নিবির ভাইয়ার পরবর্তী কথা শোনার আগেই তার বুকে লুটিয়ে পড়লাম।
------------
চোখ খুলেই দেখি সকাল হয়ে গেছে।
এটা অবশ্য নরমাল।যখনই আমার এ সমস্যা হয় তখন আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। আমার
ব্রেনকে এমনসময় শান্ত করার একটাই উপায় হলো লম্বা ঘুম। লাস্ট দু বছরে এমনটা অনেক বার হয়েছে।
মাথাটা এখনো প্রচন্ড ধরে আছে।
একটু পরেই আম্মু আর মামা রুমে এলো।
মামা আমার মাথায় হাত রেখে বলল-
---- কাল কী হয়েছিল, মামনি।আমি জানি নিবির নিহানের কথা জানতে চেয়েছিল।তাই বলে তুই এত দুর্বল হলে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে, মামনি।সবকিছু ভুলতে হবে তোকে।
---- আমি পারিনা গো,মামা।কিছুতেই ঐ রাতটাকে ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আফিয়া তুই খাবার নিয়ে আয়।মামনি তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি আজ তোকে খায়িয়ে দিবো।
---- আচ্ছা।
মামা আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।একটু পরে নাকি নানীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।কিন্তু আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন নিবির ভাইয়া নিহানের ব্যাপারে কী করে জানলো।কোনো ভাবে কী আরাব ভাইয়া বলেছে।কিন্তু আরাব ভাইয়া বললে তো সবটাই বলতো।
ঘরে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম তাই বাইরে গেলাম।রাদিফ এসে বলল-
---- এই আফরা, নদীরধারে যাবি অনেক কাশফুল হয়েছে ওখানে।
রাদিফের কথাশুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।এখানকার নদীটা খুব সুন্দর।যদিও ৪-৫ বছর আগে এসেছিলাম এখানে।সবাই কাশফুলের সাথে এতএত ছবি পোস্ট করেছে।আমি একটাও ছবি দিতে পারিনি বলে মন খারাপ হয়েছিল।এবার অনেক ছবি তুলব। আর এফবিতে পোস্ট করব।ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
--------------
বিকেলে আমি আরাব ভাইয়া,নিবির ভাইয়া, রাদিফ আর রাদিফের এক কাজিন তাহা মিলে ওখানে গেলাম।
বেশ সুন্দর জায়গাটা।অনেক ছবি তুললাম সবাই মিলে।আমি একটা কাশফুল ছেড়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।একটা ডাল ধরে টানতেই বেশ খানিকটা হাত ছিলে গেলো।
তখন নিবির ভাইয়া এসে কয়েকটা ফুল ছিড়ে আমার হাতে দিলো।আর বলল
---- এখনো একটা ফুল ছেড়ার শক্তি হয়নি তুই আবার আমায় বিয়ে করতে চাস।বিয়ের পর আমার ভারটা সামলাবি কী করে।
কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।তার কথাটা বুঝতে খানিকক্ষন সময় লাগল আমার।বোঝা মাত্র আমার চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেলো।
খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে চলে এলাম।
---------
সন্ধ্যেবেলা সবাই মিলে নানার ঘরে বসে ছিলাম।নানার নাকি খুব জরুরী কোনো কথা আছে।
---- দেখো আমি বুঝতেই পারছি আমি আর বেশিদিন বাচবোনা।আর আফরা হলো এ বংশের একমাত্র মেয়ে।আর আমি চাইনা ও বাইরে কোথাও যাক।(নানী)
---- তুমি ঠিক কী বলতে চাচ্ছো, মা।(মামা)
---- আমি জানি আফরার বয়সটা কম, তবুও আমি চাই আরাব আর আফরার বিয়ে দিতে।
নানীর কথা শোনামাত্র আমার আর আরাব ভাইয়ার মাথায় আকাশ ভেঙো পড়ল।আরাব ভাইয়া বলল
---- এটা সম্ভব না, নানী।আমি আফরাকে সবসময় নিজের বোনের মতো দেখছি।
---- আমি কিছু জানতে চাইনা।আমার কথাই শেষ কথা।
বাকিদের কথা শোনার আগেই ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কেন জানি নানীর এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।যদি নানী আরাব ভাইয়ার জায়গায় নিবির ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইত তাহলে কী খুব ক্ষতি হতো।আচ্ছা নিবির ভাইয়া কী খুশি হয়েছে এ খবরে?
সেই যে রুমে এসেছি,এখনো বের হইনি।কেঁদে কেঁদে একদম চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।রাত প্রায় বারোটা বাজে।সবাই খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে।
আমি ঠিক করেছি আজ কিছুতেই বের হবোনা।খানিকপর নিবির ভাইয়ার গলা পেলাম
---- আফরা, দরজাটা খোল।না খেয়ে থেকে কী বোঝাতে চাইছিস তুই।আরাবকে বিয়ে করবিনা সরাসরি বললেই তো পারিস।এত নাটক করার কী আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় খুব কষ্ট পেলাম।সবটাই উনার নাটক মনে হচ্ছে।উনি কী জানেনা আমার মনে কী আছে।কেন বোঝেননা উনি সেটা নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।"
পরদিন সকালে আমি ভাইয়ার সাথে ঢাকা ফিরে এলাম।ওখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যেতাম।পুরো রাস্তা চুপ করে ছিলাম।ভাইয়াও কোনো প্রশ্ন করেনি। সে তো সবটাই জানে।
--------------
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে ছাদে বসে ছিলাম।রাহাকে সেই কখন ফোন করছি এখনও আসছেনা।
মা ফোন করেছিল।তারা নাকি রওনা দিয়েছে।আব্বু আর নিবির ভাইয়া নাকি মানা করে দিয়েছে।তারা এখনই আমার বিয়ে দিতে চাই না। আর আমার মতের বিরুদ্ধে তো একদম না এ নিয়ে নাকি আব্বুর সাথে নানার ছোটোখাটো একটা ঝামেলাও হয়েছে।
আব্বুর ব্যাপারটা তো বুঝলাম কিন্তু নিবির ভাইয়া এমন কেন করল।
---- কী ভাবসিস, আফরা।
---- তুই, ইডিয়েট এত দেরি করে এলি কেন।
---- একটুই তো দেরি করছি।তুই কী বলবি বলছিলি।
"রাহাকে সবকিছু খুলে বললাম।"
---- আফরা,আমার মনে হয় তোর এভাবে নিবির ভাইয়ার পেছনে পরে থাকা উচিত না।উনি তোকে এত অপমান করে।
---- কী করবো বলতো।নিহানকে ভুলে থাকার একমাত্র উপায় তো নিবির ভাই।
---- নিহানকে মনে রাখা নিতান্তই তোর বোকামি।
---- কী করব বল।কোনো ভাবেই তো ঐ বেইমানকে আমি ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আন্টিরা কখন আসবে।
---- রাত হবে।
কিছু সময় থেকে রাহা চলে গেলো।সন্ধ্যা নেমে গেছে বলে আমিও নিচে নেমে এলাম।
এসে দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসডকল।আমি কল ব্যাক করলাম কিন্তু প্রথমবার রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।ওপাশের লোকের কথা শুনেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো।
আমি বুঝি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেললাম।
------------
দেড় ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে আছি।
নানী বাড়ি থেকে আসার সময় আব্বু-আম্মুর গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে।দুজনের অবস্থাই খুব খারাপ।
অপারেশন থিয়েটারে আছে তারা।ভাইয়াও ভেতরে আছে।
কিছুক্ষন পড়ে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো।
তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে গেলাম।
ডাক্তার বলল- ওরা নাকি দুজনের কাউকেই বাচাতে পারেনি।
কথাটা আমার কানে প্রবেশ মাত্রই আমার পুরো শরীর কেপে উঠল।আমার পুরো দুনিয়াটাই যেন থেমে গেল।
"আব্বু" বলে একটা চিৎকার দিয়েই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।
বাবা- মাকে ছেড়ে বেচে থাকার মতো কঠিন কাজ দুনিয়াতে হয়ত আর নেই।আর এই কঠিন কাজটাই যে আমাকে করতে হবে।
আমার সামনেই আব্বু-আম্মুর কাফনে মোড়ানো লাশ রাখা।বাড়ি ভর্তি মানুষ কিন্তু দিনশেষে তো তারা সবাই চলে যাবে।আমরাও একা হয়ে যাবো।
ছোট ছোট ব্যাপারে কঁদে ভাসিয়ে ফেলা এই আমি আজ একটুও কাঁদতে পারছিনা।খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে"বাবা-মা তোমরা ফিরে আসোনা"।কিন্তু আমি পারছিনা।নিজেকে বড্ড অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে।
আব্বু- আম্মুর দাফন শেষ হয়েছে ঘন্টা দু'য়েক।বাকিরা সবাই চলে গেছে।শুধু আমাদের পরিবারের কিছু লোক রয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পরে খালামনি ও আংকেল আমার কাছে এলো।আংকেল মামাকে গিয়ে বলল
---- আবির তো বড় হয়ে গেছে ভাইজান। কিন্তু আফরা ও তো এখনো ছোটো।ওর দায়িত্ব কে নিবে।আবিরের বউ এলে তো ও বেশিদিন এখানে টিকতে পারবেনা।
উনি কিছুক্ষন থেমে আবার ও বললেল
---- দেখেন ভাইজান,নিবির যে আফরাকে পছন্দ করেনা সেটা তো সবাই জানে।তাই আফরা যে আপনাদের বাড়ি থাকতে পারবেনা সেটা আমি জানি।তাহলে নিশ্চয় ওর দায়িত্ব আমাদের ঘারে এসেই পড়বে।আমি কিন্তু ওসব ঝামেলা নিতে পারবোনা।
আংকেলের কথা শেষ হতেই ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল
---- কাউকে নিতে হবেনা আফরার দায়িত্ব।যতদিন আমি আছি ততদিন ওকে নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে।
আংকেল বেশ অপমানিত হলেন ভাইয়ার কথায়। নানীও মুখ বুঝে সব শুনছে।ওখানে আর একমুহুর্ত না থেকে ঘরে চলে গেলা।গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।
নিজের আপন মানুষগুলোকেও আমার বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে।সবারই এখন আমাকে বোঝা মনে হচ্ছে।একদিন হয়ত ভাইয়ারও আমাকে বোঝা মনে হবে।
বাইরে থেকে সবাই দরজা খুলতে বলছে।
---- তোমরা প্লিজ যাও এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
--------------
আব্বু- আম্মুকে ছাড়া পুরো একদিন কেটে গেছে।তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছু মুখে তুলিনি আমি।
---- একটু তো খেয়ে নে, মা।এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি।
---- আমি খাবনা, মামি। তুমি খাবারটা রেখে এসো।
মামিকে কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।আমি একদমই ক্ষুদা সহ্য করতে পারিনা।কিন্তু আজ একদমই খেতে ইচ্ছে করছেনা।শরীরটাও বড্ড দুর্বল লাগছে।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই কেউ আমায় ধরে ফেলল।
চোখ খুলে দেখলাম মামি আর নিবির ভাইয়া বসে আছে।ভাইয়া হয়ত কোথাও গেছে।
আমাকে উঠতে দেখেই নিবির ভাইয়া মামিকে খাবার আনতে বলল।মামিও খাবার আনতে চলে গেলো।নিবির ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল
----এভাবে না খেয়ে থাকলেই কী তোর বাবা,মা ফিরে আসবে।না খেয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কী, আফরা। তোর জন্য আবির ও না খেয়ে আছে ।
---- আচ্ছা ভাইয়া খুব কী ক্ষতি হতো যদি বাবা মা আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত।
---- আফরা! তারা যখন তোকে সাথে নেয়নি তখন নিশ্চয় তারা চায় তুই এই দুনিয়ায় থাক। তোকে বাচতে হবে আফরা, আবিরের জন্য বাচতে হবে, নিজের জন্য বাচতে হবে, আমাদের জন্য বাচতে হবে।
একটু পরে মামি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো। আমিও খেয়ে নিলাম।নয়ত আমার জন্য ভাইয়াও না খেয়ে থাকবে।
বিকেলে আমাদের কিছু প্রতিবেশী এলো বাড়িতে।তারা এসেই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।
---- শোনো নিবিরের মা তোমরা বরং আফরার বিয়ে দিয়ে দাও।তাছাড়া কে নেবে ওর দায়িত্ব।
অন্য একজন বলে উঠল
---- তাছাড়া তোমার ঘরেও তো জোয়ান একটা ছেলে আসে।আফরা তো ছোট,বলা যায়না যদি তারা কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
উনার কথা শুনেই কেদে দিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া বাড়িতে ঢুকছিল।হয়ত সে সব কিছুই শুনেছে।
নিবির ভাইয়া উনাদের সামনে গিয়ে বলল
---- আফরাকে নিয়ে এতটা ভাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।কিন্তু ওকে নিয়ে যদি আপনারাই সব ভেবে ফেলেন তাহলে আমরা কী করব বলেন। আমাদের জন্য কিছু রাখেন।
আর শোন আফরা একদম মানুষের এসব উল্টোপাল্টা কথায় কান দিবি না।
তখনই আরেকজন বলে উঠল
---- সবই বুঝলাম গো নিবিরের মা।শেষ পর্যন্ত এই ঝামেলা তোমাদের ঘাড়েই জুটবে।তোমার ছেলের তো ভাব খারাপ।
আর কোনো কথা শোনার আগেই রুমে চলে গেলাম। ওখানে একপাতা ঘুমের ঔষধ ছিল। সেটা থেকে অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে নিলাম। জানি আমি অনেক বড় পাপ করছি কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিনা।আমি কারো ওপর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাইনা।
---------------
চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম । তখনই ভাইয়া ঠাস করে একটা চড় মারল আমায়।
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম ঘটনাটায়। জীবনে প্রথম ভাইয়া আমার গায়ে হাত তুলল।
একটু পরেই ভাইয়া আমার দুইগালে হাত রেখে বলল
---- মেরে ফেলবি আমায়, বনু।কেন এমন করলি।তুই জানিস না তোর কিছু হলে আমি বাচবোনা।কেন লোকের কথায় নিজেকে শেষ করবি তুই।তুই নিজের যোগ্যতায় দেখিয়ে দিবি যে তুই আমাদের বোঝা না অহংকার।
--------------
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।এখন আমি যথেস্ট নরমাল।
পড়াশোনায় ও বেশ মনোযোগ দিয়েছি।আম্মুর খুব শখ ছিল আমি ঢাবিতে পড়ব।সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছি।সামনেই এডমিশন টেস্ট।
নিবির ভাইয়াও এব্যাপারে খুব সাহায্য করে আমায়। একদিন উনি আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করেননি।
অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। তাই আজ ঠিক করলাম মামাদের বাড়িতে যাবো।
সকালে হাসপাতালে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমায় মামা বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।
ভিতরেই এসে দেখলাম নিবির ভাইয়া আর কথা আপু একসাথে বসে কী যেন করছে। তাদেরকে একসাথে দেখেই পুরোনো ক্ষতটা যেন জেগে উঠল। কিন্তু আমি সে সবকে পাত্তা দিলাম না।
নিবির ভাইয়া যেন আমাকে দেখেও দেখলনা।আমিও কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।কিন্তু মামিকে কোথাও পেলাম না। তাই নিবির ভাইয়াকেই গিয়ে জিঙ্গেস করলাম
---- ভাইয়া, মামি কই।
---- আম্মু তো মামার বাসায় গেছে।
---- ওহ। তাহলে বরং আমি যায়।
---- এখনই যাবি।
---- হুম। থেকেই কী করব।
----আচ্ছা যা।
আমিও বেরিয়ে এলাম। নিবির ভাইয়া একবার জিঙ্গেস ও করল না যে একা যেতে পারব কিনা।অবশ্য করবেই কেন।কথা আপু সাথে থাকলে তো তার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না।
বাসায় গিয়ে এখন একা বোর হওয়া ছাড়া কোনে কাজ নেই।নিবির ভাইয়াদের বাসার কাছাকাছি একটা ছোটোখাটো একটা লেক আছে।তাই ভাবলাম ওখান থেকে ঘুরে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ।একা একা লেকের পাড়ে হাটছি।এখন সকাল ১১ টা বাজে।এখন অফিস টাইম বলে খুব একটা ভিড় নেই।এখন মানুষ নেই বললেই চলে।কিন্তু বিকেল বেলা অনেক ভিড় থাকে। বাবার সাথে আগে অনেকবার এসেছি।
কিছু সময় পরে আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো
" একা একা থাকতে বুঝি খুব ভালো লাগে শুভ্রপরী"।
মেসেজটা ঐ প্রহরই পাঠিয়েছে।আজকাল আর এগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করেনা।সব আবেগ গুলো যেন সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে।
হঠাৎই আজানের শব্দ কানে এলো।কখন যে এত সময় কেটে গেছে বুঝিনি।তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম নিবির ভাইয়া এদিকেই আসছে।উনার চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
উনি আমার কাছে এসেই বেশ জোরে একটা চড় মারল।আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
উনি আমাকে তুলে আমার হাত ধরে বললেন
---- তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আফরা।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে এখানে আসবি বলে আসতে পারলি না।তুই বেড়োনোর আধ ঘন্টা পর যখন আরশিকে ফোন করে জানতে পারলাম তুই বাড়ি যাসনি তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানিস।দুঘন্টা কত খুজেছি তোকে।ফোনটাও তো ধরিসনি।
আসলেই তখন আমার ভাইয়াকে বলে আসা উচিত ছিল।আর তখন মেসেজের জন্য ফোনটাও সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।কিন্তু আমায় নিয়ে উনার এত চিন্তা কেন?
---- চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।আর সরি, এমন বিহেব করার জন্য।
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
তখনই ভাইয়া এমন একটা কথা বলল যেটা শুনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাইয়া বলল
---- আমায় বিয়ে করবি,আফরা।
এসব কী বলছ তুমি নিবির ভাইয়া।
---- আমি ঠিকই বলছি।আগে তুই রোজ আমাকে বিরক্ত করতি,আমিও বিরক্ত হতাম।কিন্তু ইদানিং তোর ঐ বিরক্তি গুলোকে বড্ড মিস করি।
---- তুমি তো কথা আপুকে ভালোবাসো, তাইনা।
---- জানিনা।আমি কথার সাথে থাকলেও আমার মন বারবার শুধু তোকেই খোঁজে।তুই জানিস,যখন প্রহর আমাকে বলেছিল ও তোকে ভালোবাসে তখন এক মুহূর্তেরর জন্য মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলবো।
---- আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।
---- তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা,আফরা।
---- ভালোবাসতাম হয়ত এখনো বাসি।কিন্তু আপনার প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা আপনার করা অপমান অবহেলার নিচে চাপা পরে গেছে।
---- আফরা!
---- দেখুন নিবির ভাইয়া একটা সময় আমি আপনার জন্য পাগলামি করছি,রাতের পর রাত কেঁদে কাটিয়েছি ঠিকই । কিন্তু এখন এসব পাগলামি আমায় মানায় না।
আমি এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি এখন আমার পুরো ফোকাসটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর দিতে চাই।
---- কিন্তু আফরা,,,
---- আপনি কী আমায় বাড়ি দিয়ে আসবেন নাকি আমি একাই যাবো।
---- না, চল আমি দিয়ে আসছি।
--------------
সেদিন এভাবে নিবির ভাইয়াকে রিজেক্ট করে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তবুও নিজের পড়াশোনায় যথেষ্ট ফোকাস করেছি।
আজ এডমিশন টেস্ট।ভাইয়ার সাথে এসেছি কেন্দ্রে।চারিদিকে এত মানুষ দেখে সত্যি খুব ভয় হচ্ছে।এত সব ট্যালেন্টটেড মানুষের মাঝে কী নিজের জায়গাটা করে নিতে পারব।
অবশেষে পরীক্ষাটা দিয়েই দিলাম।একদম ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে পরীক্ষাটা।
হলে ঢোকার আগে নিবির ভাইয়া ফোন দিলেও ফোনটা ধরিনি।
আজ এডমিশনের রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে প্রচন্ড টেনশনে আছি।বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।
আর ভাইয়া নেটে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।অনেকজনের পরে অবশেষে লিস্টে আমার নামটা পাওয়া গেলো।
লিস্টে নিজের নামটা দেখা মাত্রই আনন্দে কেঁদে দিলাম।এবার হয়ত আমি আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব।
------------
আজ ভার্সিটি তে প্রথম দিন।ভাইয়া আমায় রেখে গেছে।
দিনটা বেশ ভালোই কাটল।অনেক জনের সাথে বেশ ভালোই পরিচিত হয়েছি।
ক্লাশ শেষে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম নিবির ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া আর কথা আপু যথেষ্ট ক্লোজ হয়ে বসেছিল।ওদেরকে দেখেই বোঝা যায় তাদের সম্পর্কটা কী।
বেশ কিছুদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছি।এই কয়দিন নিবির ভাইয়া অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ইগনোর করেছি।
যদি সে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে এখনও কথা আপুর সাথে এতটা ক্লোজ থাকতোনা।
খুব চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারিনি।কারন সে যে আমার প্রথম প্রেম।
মাঝে অবশ্য প্রহর অনেকবার তার মনের কথা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না।
এই কয়দিন একদমই মামা বাড়ি যায়নি।খালামণিরাও আর যোগাযোগ করেনি তবে আরাব ভাইয়া আর রাদিফের সাথে প্রায়ই কথা হয়।
মাঝে মাঝে আরশি আর রাহা এসে আমার সাথে থাকে।তবুও যে দিনশেষে বাবা - মায়ের শূন্যতাটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি।
আজ যদি তারা থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবনটাই অন্যরকম হতো।
-----------
আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
নিবির ভাইয়া তো এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।তাই অন্য সবার মতো তার ওপরও অনেক কাজের দায়িত্ব পড়েছে।আমি আর রাহা দুজনেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।
আজ রাহার কথায় একটা নীল শাড়ি পড়েছি।অবশ্য দুজনেই একরকম শাড়ি পরেছি।
স্টেজের সামনে বসায় নিবির ভাইয়ার চোখে খুব সহজেই পরেছি।ভাইয়া বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।সেটা আমি দেখেছি।তবুও এমন একটা ভান ধরে আছি যেন আমি ভাইয়াকে চিনি না ।
ভার্সিটিতে নিবির ভাইয়া সবার ক্রাশ বয়। সবাই তার পিছনে লেগে থাকে।আর নিবির ভাইয়াকে আমার এভাবে ইগনোর করাটা আমার নতুন বন্ধুদের ঠিক হজম হচ্ছেনা।
---- আচ্ছা, নিবির ভাইয়ার জন্য যেখানে সবাই পাগল সেখানে তুই উনাকে এভাবে ইগনোর করিস কেন।?(দিয়া)
---- হ্যা, তাই তো। এমন করিস কেন, আফরা।(মাহি)
---- আরে তোরা জানিস না আমার সবসময় আনকমন জিনিস পছন্দ। আর নিবির ভাইয়াকে তো সবাই পছন্দ করে আমি নাহয় অন্য কাউকে পছন্দ করলাম।
আমার এমন উত্তরে যেন ওরা একটুও খুশি হয়নি।দিয়া আবারো বলল
---- জানিস নিবির ভাইয়া আর কথা আপু নাকি একে অপরকে ভালোবাসে।তারা নাকি সামনে মাসেই বিয়ে করবে।
দিয়ার এমন কথা শুনে বুকের বা পাশে একটা চিনচিন ব্যাথ্যা অনুভব করলাম।ওখানে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না।রাহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির জন্য।
মাঝে কেটে গেছে সাতদিন।আজ আরাব ভাইয়ার বিয়ে।মেয়ে অবশ্য ভাইয়ারই পছন্দ করা।আমাদের দাওয়াত করা হলেও আমরা যাবোনা ঠিক করেছি।আমাদের দাওয়াত দেওয়ার আসল কারন অবশ্য তারা কতটা যোগ্য মেয়ে পেয়েছে সেটা দেখানো।সেদিন আব্বুর 'না' টা আজও মেনে নিতে পারেনি আংকেল।
ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে গেছে যেন এসব নিয়ে একদম না ভাবি।তবুও শত ভাবনার মাঝে বারবার একজনের কথাই মনে পড়ে " নিহান"।
আমার কিশোরী বয়সের আবেগ।ছোটো ছিলাম কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ছিলাম।তখন সবটাই আবেগ দিয়ে ভাবতাম।
সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি আমি।তখম নিহানের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত আমার।কিন্তু সেটা শুধুই একপ্রকার মোহ ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যায়।কিন্তু নিহান আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার পিছনেই পড়ে থাকত।ভাবত আমি হয়ত রূপের অহংকারে তাকে ইগনোর করছি।
তাই সে আমার রূপ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল।একদিন সন্ধ্যেবেলা কোচিং শেষে ফেরার পথে নিহান আর ওর বন্ধুরা আমার পথ আটকায়।
নিহান আমার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।কিন্তু সৌভাগ্য বশত কিছুটা এসিড আমার হাতে আর বাকিটা মাটিতে পরেছিল।
চোখের সামনে নিজের ঝলসে যাওয়া চামড়া দেখে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম।দীর্ঘদিন সাফার করেছিলাম।অনেকগুলো সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল।
বাবারা নিহানের নামে মামলা করেছিল।ওকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
ঐ ঘটনার পর নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে নিয়েছিলাম।তখন আমরা চট্টগ্রাম থাকতাম।তাই এব্যাপারে নিবির ভাইয়া কিছু জানেনা।পরে অবশ্য আমার জন্যই সবাই ঢাকা শিফট করেছিল।
অনেকদিন পরে শুনেছিলাম নিহানের জামিন হয়ে গেছে।তার কিছুদিন পরেই ও সুইসাইড করেছিল।কিন্তু কোন তা এখনো অজানা।
আমি এতদিন ভাবতাম হয়ত নিহানই আমার প্রথম প্রেম ছিল।কিন্তু পরে বুঝেছি যে ও আমার মোহ ছিল আর নিবির ভাইয়া ছিল আমার প্রথম প্রেম।
নিহানকে যে আমি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছি তা না।আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে আমার।কী অসহ্য ছিল সে যন্ত্রনা।সেদিনের সবকিছু হয়ত আমি সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আজ যদি নিবির ভাইয়া আমায় কোনো কষ্ট দেয় তাহলে সেটা আমি সামলাবো কী করে।
নিহান সুইসাইড করার আগে আমার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিল।যেটা আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম।
ওখানে ও বলেছিল যে আমার ওপর করা অন্যায় নাকি ওকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে।তাই সে আর সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।
এখনো মাঝেমাঝে নিহানের মৃত্যর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।
--------------
আজ ভার্সিটি শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজ ভাইয়া নিতে আসবে না।আর আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তাই খানিকটা রাস্তা হেঁটেই এগিয়ে গেলাম।
ওখানেই দেখলাম কথা আপু আর নিবির ভাইয়া একসাথে হাত ধরে হাঁটছে।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
আমাকে দেখেই নিবির ভাইয়া কথা আপুর হাত ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- আমাকে যখন কথার সাথে দেখে এতটাই খারাপ লাগছে তাহলে সেদিন না করে দিলি কেন?
নাকি তুই কখনো আমায় ভালোই বাসিসনি।আমি কী শুধুই তোর মোহ ছিলাম।
---- না,,,,আপনি আমার মোহ ছিলেন না। আপনি আমার ভালোবাসা ছিলেন আমার প্রথম প্রেম ছিলেন।কিন্তু আমি শুধুই আপনার মোহ ছিলাম।ক্ষণিকের মোহ।যা কিছু সময়ের জন্য আমার প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল।কিন্তু তা তো স্থায়ী ছিলনা।কখনো হতো না।
বরং আপনাকে বিয়ে করলে নিজেকে পস্তাতে হতো।
আমার কথাগুলো শুনেই নিবির ভাইয়া মাথা নামিয়ে নিলেন।আমার কথাগুলো যে ভুলনা সেটা উনি বুঝেছেন।
নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।খানিকক্ষণ পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নিলাম।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি ছেলে ও মেয়ে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে এরা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এই বৃষ্টিফোটাকে সাক্ষী করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাইলাম যেন,এদের প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পায়।
(সমাপ্ত)




পেছনে তাকিয়ে দেখি রাদিফ।
ওকে দেখে মেজাজটা একদম বিগড়ে গেলো।
---- এই ফাজিল পোলা,এভাবে কেউ চিল্লায়।আমার সাধের ফোনটা গেলো।
রাদিফ আমার ফোনটা তুলে নিয়ে বলল
---- কিছু হয়নাই দেখ।তুই এতরাতে ছাদে কী করিস।যদি পেত্নী ধরে নিয়ে যেত।
---- তুই কী দেখেছিস পেত্নীকে কখনো পেত্নী ধরে।ভূত হলে অবশ্য ঠিক ছিল।
নিবির ভাইয়ের এমন ফোড়নকাটা কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।এই লোক এখানে কী করে।
---- একদম ঠিক বলেছো, নিবির ভাইয়া।
---- এই পোলা, আমাকে তোর পেত্নী মনে হয়।মানলাম নিবির ভাইয়ার চোখ খারাপ তাই কি তোরও চোখ খারাপ।
---- কী বললি তুই, আফরা।আমার চোখ খারাপ।
---- অবশ্যই।না হলে কেউ হীরে রেখে কাঁচ নিয়ে পরে থাকে।
---- কী বললি তুই।
----না কিছুনা।আমি নিচে যাচ্ছি,রাদিফ।তোরা থাক।
---- তোকে যেতে বলেছি আমি?
রাদিফ তুই যা আফরার সাথে আমার কথা আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় চোখগুলো ছোটোছোটো করে তার দিকে তাকালাম। আমাকে আবার ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাতো।"
---- কিছু বলবেন ভাইয়া।
---- এতরাতে একা একা ছাদে বসে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলি মনে হয়।
---- আমার আর বয়ফ্রেন্ড কই হলো।এই দুবছর আপনার পিছনে যদি ঘুরে টাইমপাস না করতাম তাহলে এতদিনে হাজার খানেক বয়ফ্রেন্ড জুটে যেতো আমার।
" নিবির ভাইয়ার মুখ দেখেই বোঝা গেল সে আমার এমন জবাব আশা করেনি।"
---- তা আমার ওপর যে এত ভালোবাসা ছিল তা কি বাতাসে উবে গেলো।
---- উবে যায়নি তো ভাইয়া শুধু নিজের আত্মসম্মান জাগ্রত হয়ে গেছে।
---- তাই নাকি।
---- হুম।আমি নিচে যাচ্ছি ভাইয়া।
---- নিহান কে,আফরা।
" নিবির ভাইয়ার কথা শুনে মাথাটা যেন ঘুরতে শুরু করেছে।বারবার কেন এই নামটা আমার সামনে আসে। এই কালো অতীতটাকে আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই এই জিনিসটা আমার সামনে চলে আসে।"
---- আমি কিছু জানতে চাইলাম, আফরা।
নিবির ভাইয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারছিনা।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।শরীরটাও অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছি আমি।
---- তোর কী শরীর খারাপ লাগছে, আফরা।তোর,,
নিবির ভাইয়ার পরবর্তী কথা শোনার আগেই তার বুকে লুটিয়ে পড়লাম।
------------
চোখ খুলেই দেখি সকাল হয়ে গেছে।
এটা অবশ্য নরমাল।যখনই আমার এ সমস্যা হয় তখন আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। আমার
ব্রেনকে এমনসময় শান্ত করার একটাই উপায় হলো লম্বা ঘুম। লাস্ট দু বছরে এমনটা অনেক বার হয়েছে।
মাথাটা এখনো প্রচন্ড ধরে আছে।
একটু পরেই আম্মু আর মামা রুমে এলো।
মামা আমার মাথায় হাত রেখে বলল-
---- কাল কী হয়েছিল, মামনি।আমি জানি নিবির নিহানের কথা জানতে চেয়েছিল।তাই বলে তুই এত দুর্বল হলে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে, মামনি।সবকিছু ভুলতে হবে তোকে।
---- আমি পারিনা গো,মামা।কিছুতেই ঐ রাতটাকে ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আফিয়া তুই খাবার নিয়ে আয়।মামনি তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি আজ তোকে খায়িয়ে দিবো।
---- আচ্ছা।
মামা আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।একটু পরে নাকি নানীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।কিন্তু আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন নিবির ভাইয়া নিহানের ব্যাপারে কী করে জানলো।কোনো ভাবে কী আরাব ভাইয়া বলেছে।কিন্তু আরাব ভাইয়া বললে তো সবটাই বলতো।
ঘরে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম তাই বাইরে গেলাম।রাদিফ এসে বলল-
---- এই আফরা, নদীরধারে যাবি অনেক কাশফুল হয়েছে ওখানে।
রাদিফের কথাশুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।এখানকার নদীটা খুব সুন্দর।যদিও ৪-৫ বছর আগে এসেছিলাম এখানে।সবাই কাশফুলের সাথে এতএত ছবি পোস্ট করেছে।আমি একটাও ছবি দিতে পারিনি বলে মন খারাপ হয়েছিল।এবার অনেক ছবি তুলব। আর এফবিতে পোস্ট করব।ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
--------------
বিকেলে আমি আরাব ভাইয়া,নিবির ভাইয়া, রাদিফ আর রাদিফের এক কাজিন তাহা মিলে ওখানে গেলাম।
বেশ সুন্দর জায়গাটা।অনেক ছবি তুললাম সবাই মিলে।আমি একটা কাশফুল ছেড়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।একটা ডাল ধরে টানতেই বেশ খানিকটা হাত ছিলে গেলো।
তখন নিবির ভাইয়া এসে কয়েকটা ফুল ছিড়ে আমার হাতে দিলো।আর বলল
---- এখনো একটা ফুল ছেড়ার শক্তি হয়নি তুই আবার আমায় বিয়ে করতে চাস।বিয়ের পর আমার ভারটা সামলাবি কী করে।
কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।তার কথাটা বুঝতে খানিকক্ষন সময় লাগল আমার।বোঝা মাত্র আমার চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেলো।
খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে চলে এলাম।
---------
সন্ধ্যেবেলা সবাই মিলে নানার ঘরে বসে ছিলাম।নানার নাকি খুব জরুরী কোনো কথা আছে।
---- দেখো আমি বুঝতেই পারছি আমি আর বেশিদিন বাচবোনা।আর আফরা হলো এ বংশের একমাত্র মেয়ে।আর আমি চাইনা ও বাইরে কোথাও যাক।(নানী)
---- তুমি ঠিক কী বলতে চাচ্ছো, মা।(মামা)
---- আমি জানি আফরার বয়সটা কম, তবুও আমি চাই আরাব আর আফরার বিয়ে দিতে।
নানীর কথা শোনামাত্র আমার আর আরাব ভাইয়ার মাথায় আকাশ ভেঙো পড়ল।আরাব ভাইয়া বলল
---- এটা সম্ভব না, নানী।আমি আফরাকে সবসময় নিজের বোনের মতো দেখছি।
---- আমি কিছু জানতে চাইনা।আমার কথাই শেষ কথা।
বাকিদের কথা শোনার আগেই ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কেন জানি নানীর এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।যদি নানী আরাব ভাইয়ার জায়গায় নিবির ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইত তাহলে কী খুব ক্ষতি হতো।আচ্ছা নিবির ভাইয়া কী খুশি হয়েছে এ খবরে?
সেই যে রুমে এসেছি,এখনো বের হইনি।কেঁদে কেঁদে একদম চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।রাত প্রায় বারোটা বাজে।সবাই খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে।
আমি ঠিক করেছি আজ কিছুতেই বের হবোনা।খানিকপর নিবির ভাইয়ার গলা পেলাম
---- আফরা, দরজাটা খোল।না খেয়ে থেকে কী বোঝাতে চাইছিস তুই।আরাবকে বিয়ে করবিনা সরাসরি বললেই তো পারিস।এত নাটক করার কী আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় খুব কষ্ট পেলাম।সবটাই উনার নাটক মনে হচ্ছে।উনি কী জানেনা আমার মনে কী আছে।কেন বোঝেননা উনি সেটা নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।"
পরদিন সকালে আমি ভাইয়ার সাথে ঢাকা ফিরে এলাম।ওখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যেতাম।পুরো রাস্তা চুপ করে ছিলাম।ভাইয়াও কোনো প্রশ্ন করেনি। সে তো সবটাই জানে।
--------------
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে ছাদে বসে ছিলাম।রাহাকে সেই কখন ফোন করছি এখনও আসছেনা।
মা ফোন করেছিল।তারা নাকি রওনা দিয়েছে।আব্বু আর নিবির ভাইয়া নাকি মানা করে দিয়েছে।তারা এখনই আমার বিয়ে দিতে চাই না। আর আমার মতের বিরুদ্ধে তো একদম না এ নিয়ে নাকি আব্বুর সাথে নানার ছোটোখাটো একটা ঝামেলাও হয়েছে।
আব্বুর ব্যাপারটা তো বুঝলাম কিন্তু নিবির ভাইয়া এমন কেন করল।
---- কী ভাবসিস, আফরা।
---- তুই, ইডিয়েট এত দেরি করে এলি কেন।
---- একটুই তো দেরি করছি।তুই কী বলবি বলছিলি।
"রাহাকে সবকিছু খুলে বললাম।"
---- আফরা,আমার মনে হয় তোর এভাবে নিবির ভাইয়ার পেছনে পরে থাকা উচিত না।উনি তোকে এত অপমান করে।
---- কী করবো বলতো।নিহানকে ভুলে থাকার একমাত্র উপায় তো নিবির ভাই।
---- নিহানকে মনে রাখা নিতান্তই তোর বোকামি।
---- কী করব বল।কোনো ভাবেই তো ঐ বেইমানকে আমি ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আন্টিরা কখন আসবে।
---- রাত হবে।
কিছু সময় থেকে রাহা চলে গেলো।সন্ধ্যা নেমে গেছে বলে আমিও নিচে নেমে এলাম।
এসে দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসডকল।আমি কল ব্যাক করলাম কিন্তু প্রথমবার রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।ওপাশের লোকের কথা শুনেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো।
আমি বুঝি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেললাম।
------------
দেড় ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে আছি।
নানী বাড়ি থেকে আসার সময় আব্বু-আম্মুর গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে।দুজনের অবস্থাই খুব খারাপ।
অপারেশন থিয়েটারে আছে তারা।ভাইয়াও ভেতরে আছে।
কিছুক্ষন পড়ে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো।
তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে গেলাম।
ডাক্তার বলল- ওরা নাকি দুজনের কাউকেই বাচাতে পারেনি।
কথাটা আমার কানে প্রবেশ মাত্রই আমার পুরো শরীর কেপে উঠল।আমার পুরো দুনিয়াটাই যেন থেমে গেল।
"আব্বু" বলে একটা চিৎকার দিয়েই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।
বাবা- মাকে ছেড়ে বেচে থাকার মতো কঠিন কাজ দুনিয়াতে হয়ত আর নেই।আর এই কঠিন কাজটাই যে আমাকে করতে হবে।
আমার সামনেই আব্বু-আম্মুর কাফনে মোড়ানো লাশ রাখা।বাড়ি ভর্তি মানুষ কিন্তু দিনশেষে তো তারা সবাই চলে যাবে।আমরাও একা হয়ে যাবো।
ছোট ছোট ব্যাপারে কঁদে ভাসিয়ে ফেলা এই আমি আজ একটুও কাঁদতে পারছিনা।খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে"বাবা-মা তোমরা ফিরে আসোনা"।কিন্তু আমি পারছিনা।নিজেকে বড্ড অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে।
আব্বু- আম্মুর দাফন শেষ হয়েছে ঘন্টা দু'য়েক।বাকিরা সবাই চলে গেছে।শুধু আমাদের পরিবারের কিছু লোক রয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পরে খালামনি ও আংকেল আমার কাছে এলো।আংকেল মামাকে গিয়ে বলল
---- আবির তো বড় হয়ে গেছে ভাইজান। কিন্তু আফরা ও তো এখনো ছোটো।ওর দায়িত্ব কে নিবে।আবিরের বউ এলে তো ও বেশিদিন এখানে টিকতে পারবেনা।
উনি কিছুক্ষন থেমে আবার ও বললেল
---- দেখেন ভাইজান,নিবির যে আফরাকে পছন্দ করেনা সেটা তো সবাই জানে।তাই আফরা যে আপনাদের বাড়ি থাকতে পারবেনা সেটা আমি জানি।তাহলে নিশ্চয় ওর দায়িত্ব আমাদের ঘারে এসেই পড়বে।আমি কিন্তু ওসব ঝামেলা নিতে পারবোনা।
আংকেলের কথা শেষ হতেই ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল
---- কাউকে নিতে হবেনা আফরার দায়িত্ব।যতদিন আমি আছি ততদিন ওকে নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে।
আংকেল বেশ অপমানিত হলেন ভাইয়ার কথায়। নানীও মুখ বুঝে সব শুনছে।ওখানে আর একমুহুর্ত না থেকে ঘরে চলে গেলা।গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।
নিজের আপন মানুষগুলোকেও আমার বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে।সবারই এখন আমাকে বোঝা মনে হচ্ছে।একদিন হয়ত ভাইয়ারও আমাকে বোঝা মনে হবে।
বাইরে থেকে সবাই দরজা খুলতে বলছে।
---- তোমরা প্লিজ যাও এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
--------------
আব্বু- আম্মুকে ছাড়া পুরো একদিন কেটে গেছে।তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছু মুখে তুলিনি আমি।
---- একটু তো খেয়ে নে, মা।এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি।
---- আমি খাবনা, মামি। তুমি খাবারটা রেখে এসো।
মামিকে কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।আমি একদমই ক্ষুদা সহ্য করতে পারিনা।কিন্তু আজ একদমই খেতে ইচ্ছে করছেনা।শরীরটাও বড্ড দুর্বল লাগছে।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই কেউ আমায় ধরে ফেলল।
চোখ খুলে দেখলাম মামি আর নিবির ভাইয়া বসে আছে।ভাইয়া হয়ত কোথাও গেছে।
আমাকে উঠতে দেখেই নিবির ভাইয়া মামিকে খাবার আনতে বলল।মামিও খাবার আনতে চলে গেলো।নিবির ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল
----এভাবে না খেয়ে থাকলেই কী তোর বাবা,মা ফিরে আসবে।না খেয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কী, আফরা। তোর জন্য আবির ও না খেয়ে আছে ।
---- আচ্ছা ভাইয়া খুব কী ক্ষতি হতো যদি বাবা মা আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত।
---- আফরা! তারা যখন তোকে সাথে নেয়নি তখন নিশ্চয় তারা চায় তুই এই দুনিয়ায় থাক। তোকে বাচতে হবে আফরা, আবিরের জন্য বাচতে হবে, নিজের জন্য বাচতে হবে, আমাদের জন্য বাচতে হবে।
একটু পরে মামি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো। আমিও খেয়ে নিলাম।নয়ত আমার জন্য ভাইয়াও না খেয়ে থাকবে।
বিকেলে আমাদের কিছু প্রতিবেশী এলো বাড়িতে।তারা এসেই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।
---- শোনো নিবিরের মা তোমরা বরং আফরার বিয়ে দিয়ে দাও।তাছাড়া কে নেবে ওর দায়িত্ব।
অন্য একজন বলে উঠল
---- তাছাড়া তোমার ঘরেও তো জোয়ান একটা ছেলে আসে।আফরা তো ছোট,বলা যায়না যদি তারা কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
উনার কথা শুনেই কেদে দিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া বাড়িতে ঢুকছিল।হয়ত সে সব কিছুই শুনেছে।
নিবির ভাইয়া উনাদের সামনে গিয়ে বলল
---- আফরাকে নিয়ে এতটা ভাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।কিন্তু ওকে নিয়ে যদি আপনারাই সব ভেবে ফেলেন তাহলে আমরা কী করব বলেন। আমাদের জন্য কিছু রাখেন।
আর শোন আফরা একদম মানুষের এসব উল্টোপাল্টা কথায় কান দিবি না।
তখনই আরেকজন বলে উঠল
---- সবই বুঝলাম গো নিবিরের মা।শেষ পর্যন্ত এই ঝামেলা তোমাদের ঘাড়েই জুটবে।তোমার ছেলের তো ভাব খারাপ।
আর কোনো কথা শোনার আগেই রুমে চলে গেলাম। ওখানে একপাতা ঘুমের ঔষধ ছিল। সেটা থেকে অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে নিলাম। জানি আমি অনেক বড় পাপ করছি কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিনা।আমি কারো ওপর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাইনা।
---------------
চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম । তখনই ভাইয়া ঠাস করে একটা চড় মারল আমায়।
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম ঘটনাটায়। জীবনে প্রথম ভাইয়া আমার গায়ে হাত তুলল।
একটু পরেই ভাইয়া আমার দুইগালে হাত রেখে বলল
---- মেরে ফেলবি আমায়, বনু।কেন এমন করলি।তুই জানিস না তোর কিছু হলে আমি বাচবোনা।কেন লোকের কথায় নিজেকে শেষ করবি তুই।তুই নিজের যোগ্যতায় দেখিয়ে দিবি যে তুই আমাদের বোঝা না অহংকার।
--------------
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।এখন আমি যথেস্ট নরমাল।
পড়াশোনায় ও বেশ মনোযোগ দিয়েছি।আম্মুর খুব শখ ছিল আমি ঢাবিতে পড়ব।সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছি।সামনেই এডমিশন টেস্ট।
নিবির ভাইয়াও এব্যাপারে খুব সাহায্য করে আমায়। একদিন উনি আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করেননি।
অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। তাই আজ ঠিক করলাম মামাদের বাড়িতে যাবো।
সকালে হাসপাতালে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমায় মামা বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।
ভিতরেই এসে দেখলাম নিবির ভাইয়া আর কথা আপু একসাথে বসে কী যেন করছে। তাদেরকে একসাথে দেখেই পুরোনো ক্ষতটা যেন জেগে উঠল। কিন্তু আমি সে সবকে পাত্তা দিলাম না।
নিবির ভাইয়া যেন আমাকে দেখেও দেখলনা।আমিও কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।কিন্তু মামিকে কোথাও পেলাম না। তাই নিবির ভাইয়াকেই গিয়ে জিঙ্গেস করলাম
---- ভাইয়া, মামি কই।
---- আম্মু তো মামার বাসায় গেছে।
---- ওহ। তাহলে বরং আমি যায়।
---- এখনই যাবি।
---- হুম। থেকেই কী করব।
----আচ্ছা যা।
আমিও বেরিয়ে এলাম। নিবির ভাইয়া একবার জিঙ্গেস ও করল না যে একা যেতে পারব কিনা।অবশ্য করবেই কেন।কথা আপু সাথে থাকলে তো তার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না।
বাসায় গিয়ে এখন একা বোর হওয়া ছাড়া কোনে কাজ নেই।নিবির ভাইয়াদের বাসার কাছাকাছি একটা ছোটোখাটো একটা লেক আছে।তাই ভাবলাম ওখান থেকে ঘুরে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ।একা একা লেকের পাড়ে হাটছি।এখন সকাল ১১ টা বাজে।এখন অফিস টাইম বলে খুব একটা ভিড় নেই।এখন মানুষ নেই বললেই চলে।কিন্তু বিকেল বেলা অনেক ভিড় থাকে। বাবার সাথে আগে অনেকবার এসেছি।
কিছু সময় পরে আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো
" একা একা থাকতে বুঝি খুব ভালো লাগে শুভ্রপরী"।
মেসেজটা ঐ প্রহরই পাঠিয়েছে।আজকাল আর এগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করেনা।সব আবেগ গুলো যেন সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে।
হঠাৎই আজানের শব্দ কানে এলো।কখন যে এত সময় কেটে গেছে বুঝিনি।তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম নিবির ভাইয়া এদিকেই আসছে।উনার চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
উনি আমার কাছে এসেই বেশ জোরে একটা চড় মারল।আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
উনি আমাকে তুলে আমার হাত ধরে বললেন
---- তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আফরা।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে এখানে আসবি বলে আসতে পারলি না।তুই বেড়োনোর আধ ঘন্টা পর যখন আরশিকে ফোন করে জানতে পারলাম তুই বাড়ি যাসনি তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানিস।দুঘন্টা কত খুজেছি তোকে।ফোনটাও তো ধরিসনি।
আসলেই তখন আমার ভাইয়াকে বলে আসা উচিত ছিল।আর তখন মেসেজের জন্য ফোনটাও সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।কিন্তু আমায় নিয়ে উনার এত চিন্তা কেন?
---- চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।আর সরি, এমন বিহেব করার জন্য।
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
তখনই ভাইয়া এমন একটা কথা বলল যেটা শুনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাইয়া বলল
---- আমায় বিয়ে করবি,আফরা।
এসব কী বলছ তুমি নিবির ভাইয়া।
---- আমি ঠিকই বলছি।আগে তুই রোজ আমাকে বিরক্ত করতি,আমিও বিরক্ত হতাম।কিন্তু ইদানিং তোর ঐ বিরক্তি গুলোকে বড্ড মিস করি।
---- তুমি তো কথা আপুকে ভালোবাসো, তাইনা।
---- জানিনা।আমি কথার সাথে থাকলেও আমার মন বারবার শুধু তোকেই খোঁজে।তুই জানিস,যখন প্রহর আমাকে বলেছিল ও তোকে ভালোবাসে তখন এক মুহূর্তেরর জন্য মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলবো।
---- আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।
---- তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা,আফরা।
---- ভালোবাসতাম হয়ত এখনো বাসি।কিন্তু আপনার প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা আপনার করা অপমান অবহেলার নিচে চাপা পরে গেছে।
---- আফরা!
---- দেখুন নিবির ভাইয়া একটা সময় আমি আপনার জন্য পাগলামি করছি,রাতের পর রাত কেঁদে কাটিয়েছি ঠিকই । কিন্তু এখন এসব পাগলামি আমায় মানায় না।
আমি এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি এখন আমার পুরো ফোকাসটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর দিতে চাই।
---- কিন্তু আফরা,,,
---- আপনি কী আমায় বাড়ি দিয়ে আসবেন নাকি আমি একাই যাবো।
---- না, চল আমি দিয়ে আসছি।
--------------
সেদিন এভাবে নিবির ভাইয়াকে রিজেক্ট করে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তবুও নিজের পড়াশোনায় যথেষ্ট ফোকাস করেছি।
আজ এডমিশন টেস্ট।ভাইয়ার সাথে এসেছি কেন্দ্রে।চারিদিকে এত মানুষ দেখে সত্যি খুব ভয় হচ্ছে।এত সব ট্যালেন্টটেড মানুষের মাঝে কী নিজের জায়গাটা করে নিতে পারব।
অবশেষে পরীক্ষাটা দিয়েই দিলাম।একদম ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে পরীক্ষাটা।
হলে ঢোকার আগে নিবির ভাইয়া ফোন দিলেও ফোনটা ধরিনি।
আজ এডমিশনের রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে প্রচন্ড টেনশনে আছি।বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।
আর ভাইয়া নেটে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।অনেকজনের পরে অবশেষে লিস্টে আমার নামটা পাওয়া গেলো।
লিস্টে নিজের নামটা দেখা মাত্রই আনন্দে কেঁদে দিলাম।এবার হয়ত আমি আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব।
------------
আজ ভার্সিটি তে প্রথম দিন।ভাইয়া আমায় রেখে গেছে।
দিনটা বেশ ভালোই কাটল।অনেক জনের সাথে বেশ ভালোই পরিচিত হয়েছি।
ক্লাশ শেষে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম নিবির ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া আর কথা আপু যথেষ্ট ক্লোজ হয়ে বসেছিল।ওদেরকে দেখেই বোঝা যায় তাদের সম্পর্কটা কী।
বেশ কিছুদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছি।এই কয়দিন নিবির ভাইয়া অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ইগনোর করেছি।
যদি সে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে এখনও কথা আপুর সাথে এতটা ক্লোজ থাকতোনা।
খুব চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারিনি।কারন সে যে আমার প্রথম প্রেম।
মাঝে অবশ্য প্রহর অনেকবার তার মনের কথা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না।
এই কয়দিন একদমই মামা বাড়ি যায়নি।খালামণিরাও আর যোগাযোগ করেনি তবে আরাব ভাইয়া আর রাদিফের সাথে প্রায়ই কথা হয়।
মাঝে মাঝে আরশি আর রাহা এসে আমার সাথে থাকে।তবুও যে দিনশেষে বাবা - মায়ের শূন্যতাটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি।
আজ যদি তারা থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবনটাই অন্যরকম হতো।
-----------
আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
নিবির ভাইয়া তো এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।তাই অন্য সবার মতো তার ওপরও অনেক কাজের দায়িত্ব পড়েছে।আমি আর রাহা দুজনেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।
আজ রাহার কথায় একটা নীল শাড়ি পড়েছি।অবশ্য দুজনেই একরকম শাড়ি পরেছি।
স্টেজের সামনে বসায় নিবির ভাইয়ার চোখে খুব সহজেই পরেছি।ভাইয়া বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।সেটা আমি দেখেছি।তবুও এমন একটা ভান ধরে আছি যেন আমি ভাইয়াকে চিনি না ।
ভার্সিটিতে নিবির ভাইয়া সবার ক্রাশ বয়। সবাই তার পিছনে লেগে থাকে।আর নিবির ভাইয়াকে আমার এভাবে ইগনোর করাটা আমার নতুন বন্ধুদের ঠিক হজম হচ্ছেনা।
---- আচ্ছা, নিবির ভাইয়ার জন্য যেখানে সবাই পাগল সেখানে তুই উনাকে এভাবে ইগনোর করিস কেন।?(দিয়া)
---- হ্যা, তাই তো। এমন করিস কেন, আফরা।(মাহি)
---- আরে তোরা জানিস না আমার সবসময় আনকমন জিনিস পছন্দ। আর নিবির ভাইয়াকে তো সবাই পছন্দ করে আমি নাহয় অন্য কাউকে পছন্দ করলাম।
আমার এমন উত্তরে যেন ওরা একটুও খুশি হয়নি।দিয়া আবারো বলল
---- জানিস নিবির ভাইয়া আর কথা আপু নাকি একে অপরকে ভালোবাসে।তারা নাকি সামনে মাসেই বিয়ে করবে।
দিয়ার এমন কথা শুনে বুকের বা পাশে একটা চিনচিন ব্যাথ্যা অনুভব করলাম।ওখানে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না।রাহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির জন্য।
মাঝে কেটে গেছে সাতদিন।আজ আরাব ভাইয়ার বিয়ে।মেয়ে অবশ্য ভাইয়ারই পছন্দ করা।আমাদের দাওয়াত করা হলেও আমরা যাবোনা ঠিক করেছি।আমাদের দাওয়াত দেওয়ার আসল কারন অবশ্য তারা কতটা যোগ্য মেয়ে পেয়েছে সেটা দেখানো।সেদিন আব্বুর 'না' টা আজও মেনে নিতে পারেনি আংকেল।
ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে গেছে যেন এসব নিয়ে একদম না ভাবি।তবুও শত ভাবনার মাঝে বারবার একজনের কথাই মনে পড়ে " নিহান"।
আমার কিশোরী বয়সের আবেগ।ছোটো ছিলাম কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ছিলাম।তখন সবটাই আবেগ দিয়ে ভাবতাম।
সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি আমি।তখম নিহানের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত আমার।কিন্তু সেটা শুধুই একপ্রকার মোহ ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যায়।কিন্তু নিহান আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার পিছনেই পড়ে থাকত।ভাবত আমি হয়ত রূপের অহংকারে তাকে ইগনোর করছি।
তাই সে আমার রূপ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল।একদিন সন্ধ্যেবেলা কোচিং শেষে ফেরার পথে নিহান আর ওর বন্ধুরা আমার পথ আটকায়।
নিহান আমার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।কিন্তু সৌভাগ্য বশত কিছুটা এসিড আমার হাতে আর বাকিটা মাটিতে পরেছিল।
চোখের সামনে নিজের ঝলসে যাওয়া চামড়া দেখে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম।দীর্ঘদিন সাফার করেছিলাম।অনেকগুলো সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল।
বাবারা নিহানের নামে মামলা করেছিল।ওকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
ঐ ঘটনার পর নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে নিয়েছিলাম।তখন আমরা চট্টগ্রাম থাকতাম।তাই এব্যাপারে নিবির ভাইয়া কিছু জানেনা।পরে অবশ্য আমার জন্যই সবাই ঢাকা শিফট করেছিল।
অনেকদিন পরে শুনেছিলাম নিহানের জামিন হয়ে গেছে।তার কিছুদিন পরেই ও সুইসাইড করেছিল।কিন্তু কোন তা এখনো অজানা।
আমি এতদিন ভাবতাম হয়ত নিহানই আমার প্রথম প্রেম ছিল।কিন্তু পরে বুঝেছি যে ও আমার মোহ ছিল আর নিবির ভাইয়া ছিল আমার প্রথম প্রেম।
নিহানকে যে আমি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছি তা না।আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে আমার।কী অসহ্য ছিল সে যন্ত্রনা।সেদিনের সবকিছু হয়ত আমি সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আজ যদি নিবির ভাইয়া আমায় কোনো কষ্ট দেয় তাহলে সেটা আমি সামলাবো কী করে।
নিহান সুইসাইড করার আগে আমার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিল।যেটা আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম।
ওখানে ও বলেছিল যে আমার ওপর করা অন্যায় নাকি ওকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে।তাই সে আর সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।
এখনো মাঝেমাঝে নিহানের মৃত্যর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।
--------------
আজ ভার্সিটি শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজ ভাইয়া নিতে আসবে না।আর আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তাই খানিকটা রাস্তা হেঁটেই এগিয়ে গেলাম।
ওখানেই দেখলাম কথা আপু আর নিবির ভাইয়া একসাথে হাত ধরে হাঁটছে।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
আমাকে দেখেই নিবির ভাইয়া কথা আপুর হাত ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- আমাকে যখন কথার সাথে দেখে এতটাই খারাপ লাগছে তাহলে সেদিন না করে দিলি কেন?
নাকি তুই কখনো আমায় ভালোই বাসিসনি।আমি কী শুধুই তোর মোহ ছিলাম।
---- না,,,,আপনি আমার মোহ ছিলেন না। আপনি আমার ভালোবাসা ছিলেন আমার প্রথম প্রেম ছিলেন।কিন্তু আমি শুধুই আপনার মোহ ছিলাম।ক্ষণিকের মোহ।যা কিছু সময়ের জন্য আমার প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল।কিন্তু তা তো স্থায়ী ছিলনা।কখনো হতো না।
বরং আপনাকে বিয়ে করলে নিজেকে পস্তাতে হতো।
আমার কথাগুলো শুনেই নিবির ভাইয়া মাথা নামিয়ে নিলেন।আমার কথাগুলো যে ভুলনা সেটা উনি বুঝেছেন।
নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।খানিকক্ষণ পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নিলাম।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি ছেলে ও মেয়ে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে এরা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এই বৃষ্টিফোটাকে সাক্ষী করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাইলাম যেন,এদের প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পায়।
(সমাপ্ত)