Thread Rating:
  • 1 Vote(s) - 5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#3
|পর্ব-৩|

রীতি চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় এসে দাড়ালো।প্রতিদিনকার মতো চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতার মাঝে ডুব দিচ্ছে।
সাদিব বাম হাতে চুলে ব্রাশ করতে করতে ডান হাতে গাছে পানি দিচ্ছে।
একমনে যেভাবে পানি দিচ্ছে যেনো সেও রীতির মতো প্রকৃতিতে ডুব দিয়েছে।
রীতি সকাল সকাল সাদিবকে গাছের পরিচর্যা করতে দেখে অবাক হলো।প্রতিদিন এই সময় মালি গাছে পানি দেয় সাদিবকে কখনো দেখেনি পানি দিতে।
রীতি চায়ের কাপ রেখে দিলো।তারপর বই খোলে বসলো।
হুমায়ুন আহমেদের "অপেক্ষা"।
রীতি অস্ফুটস্বরে বললো,
-----" অপেক্ষা!"
অপেক্ষার মতো কষ্টকর শব্দ এ দুনিয়ায় দুটো নেই।
তারপর নিজের মনে হেসে উঠলো।
নিচের দিকে চোখ দিলো।সাদিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কপালের ঘাম মুছছে।
হটাৎ সাদিবের চোখ তিনতলার বারান্দায় আটকে গেলো।ঠিক বারান্দায় নয় বারান্দায় চশমার আড়ালে অস্পষ্ট এক জোড়া মায়াবী চোখের মাঝে।
রীতির সাদিবের সাথে চোখাচোখি হতেই রীতি চোখ সরিয়ে নিলো।ওর বুক ঢিপঢিপ করছে।এভাবে ধরা খাবে বুঝতে পারেনি।রীতি তাড়াতাড়ি বারান্দা ত্যাগ করে রুমে চলে গেলো।
সাদিব তখনও বিস্ময় নিয়ে বারান্দায় চেয়ে আছে।

সাদিব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিচে চলে আসে।মালি যখন পানি দিতে যাবে তখনই সাদিব বললো,
----"মামা,আজ থেকে আমি রোজ সকালে গাছে পানি দেবো।আপনি বাগান পরিস্কার অন্যসব কাজ করবেন।"

সাদিবের কথা শুনে তিনি টাস্কি খেলেন।হটাৎ কি এমন হলো যে গাছে পানি দেওয়ার দায়িত্ব নিজে নিয়ে চাইছে।
-----"বাবা,কি হয়েছে কোনো সমস্যা?আমি তো ঠিকঠাক পানি দেই।কোনো অযত্ন করিনা।"

সাদিব আশ্বস্ত করে বললো,
-----"আরে না মামা।কোনো সমস্যা নেই।আমি এমনিতেই পানি দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছি।ভালো লাগছে তাই।"

তারপর সাদিব গাছে পানি দেওয়ার কাজে লেগে গেলো।রীতিকে হটাৎ ওর দিকে চেয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়েছে কিছুটা।তবে বেশি ভাবতে কিংবা ঘাটতে যায়নি বিষয়টি। 

রীতি রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলো।বাবা নাস্তা করছে।রিমন কলেজে চলে গেছে।
রীতির বাবা রীতিকে দেখে বললো,
-----"কি কেমন লাগছে এখানে?কোনো সমস্যা হচ্ছে?"

-----"না বাবা খুব ভালো লাগছে।না মানে ভালোই লাগছে।কোনো সমস্যা হচ্ছে না।(সবটাই সাদিবের জন্য।ওর জন্য আমার মন এখানে টিকে গেছে।)"

-----"আচ্ছা কোনো সমস্যা হলে জানাবি।আর সবার সাথে মেশার চেষ্টা কর ভালো লাগবে।তোর মা বললো পাশের ফ্ল্যাটের একটা মেয়ে এসেছিলো নাম দিয়া।মেয়েটা নাকি চটপটে তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছিলো।ওর সাথে বন্ধুত্ব করে নিস ভালো লাগবে।সময় কেটে যাবে।"

রীতি পরটা ছিড়তে ছিড়তে বললো,
-----"হ্যা বাবা,ওর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।মেয়েটা খুব মিশুক।"

.

বিকেলে দিয়া ১৬-১৭ বছরের একটা মেয়েকে নিয়ে হাজির।রীতি মেয়েটাকে চিনতে পারছেনা।হয়তো এই বিল্ডিংয়ের অন্য কোনো ফ্ল্যাটের কেউ হবে।
রীতি দুজনকে বসতে দিলো।তারপর দিয়াকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কে এই মেয়ে।

-----"রীতি আপু,ওর নাম সাবিহা বাড়িওয়ালা আংকেলের ছোট মেয়ে।ওই যে সেদিন দেখালাম সাদিব ভাইয়া তার ছোট বোন।"

রীতির ক্রাশের ছোট বোনও মাশাল্লাহ।রীতি ওকে দেখে খুব খুশি হয়েছে।রান্নাঘর থেকে হালকা নাস্তা পানি এনে দিলো।ওর কেন জানি মনে হচ্ছে সাবিহার সাথে ভাব জমাতে হবে।খুব করে ভাব।

রীতি সাবিহার সাথে আলাপচারিতা শুরু করলো।
-----"সাবিহা কিসে পড়ো তুমি?"

-----"আপু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।"

-----"এখানে নতুন আসায় চিনতে পারিনি।কিছু মনে করোনা।মাঝেমধ্যে এসো ভালো লাগবে আমার।"

-----"হ্যা আপু অবশ্যই আসবো।দিয়া আপুর কাছে আপনার কথা শুনে মিট করতে চলে এলাম।দিয়া আপু আপনার খুব প্রসংশা করেছিলো তাই দেখার লোভ সামলাতে পারিনি।"

-----"ভালো করেছো।এরপর থেকে যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবে।আমি বাড়িতে না থাকলেও সমস্যা নেই।আমার মায়ের সাথে তোমার ভালো সময় কাটবে।"

দিয়া তখনই বললো,
-----"আর ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার।আন্টির রান্না খুব ভালো।মুখে লেগে থাকার মতো।"
রীতি আর সাবিহার চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।

সাবিহা বললো,
-----"চলো আপু ছাদে যাই।অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয়না।"

রীতি বললো,
-----"আমি রোজ যাই।ছাদে গোধূলি বেলায় বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।তাই রোজ নিয়ম করে যাই।চলো।"

রীতি ছাদের রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে। আজকে ওর সাথে বই নেই।ও ঠিক করেছে আজ ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাবে।
বিকেল পড়ে গেছে।গোধূলি আকাশে আবীর ছড়িয়ে পড়েছে।রক্তিম আকাশ বেশ লাগছে।কিছুক্ষণ পর দূর আকাশ হতে সন্ধ্যা নামবে।সব ঝাপসা করে দিবে।পাখিরা নিড়ে ফিরতে ব্যাস্ত হয়ে যাবে।পুরো দুনিয়া অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।রোজকার নিয়ম।কি সাংঘাতিক নিয়ম।

রাতে সাবিহা ওর মায়ের সঙ্গে রীতিকে নিয়ে অনেক কথা বলছে।সাদিব পাশে বসে বসে ফোন ঘাটছে আর মাঝেমধ্যে কান পেতে সাবিহার কথা শুনছে।
তারপর বিরক্তি নিয়ে সাবিহাকে বললো,
-----"তুই সারাজীবন অন্যের প্রসংশা করে যাবি কারণ নিজে প্রসংশা পাওয়ার মতো কিচ্ছু করিস নি।যা অন্যের প্রসংশা না করে পড়তে যা।"

সাবিহা ভেংচি কেটে বললো,
-----"মা তোমার ছেলের হিংসা হচ্ছে।"

সাদিবের মা বললো,
-----"আমার ছেলের হিংসা কেনো হবে?আমার সোনার টুকরো ছেলে।পুরো মহল্লায় এমন একটা ছেলে নেই।"

সাবিহা উঠে দাড়িয়ে বললো,
----"হ্যা যত খারাপ তো আমি।খুশি হয়েছে ভাইয়া? প্রসংশা পাওয়ার জন্যই তো এমন করছিলে এতোক্ষণ।"

সাবিহা বিরবির করতে করতে নিজের ঘরে গেলো।
সাদিবের বড় বোন মারিয়া ওকে দেখে মায়ের কাছে এসে বললো,
----"ওর আবার কি হলো?কাকে বকছে?"

সাদিব মুচকি হেসে বললো,
-----"কাকে আবার?আমাকে।মা আমার প্রসংশা করেছে ওর লেগে গেছে।আমার ভাগ্নে কই?"

অভি দৌড়ে সাদিবের কোলে বসে বললো,
-----"এই তো অভি চলে এসেছে।মামা যেখানে ভাগ্নে সেখানে।"

-----"ইয়েস! অভি বাবু।মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নেই সেখানে।"

মারিয়া হেসে বললো,
-----"তোদের দুটোকে নিয়ে আর পারিনা।বাসায় চলে গেলে অভি মামার জন্য কেদে চোখ ভাসিয়ে ফেলবে।"

-----"অভিকে রেখে তোকে বিদায় করে দেবো।"

মারিয়া চোখ বড়বড় করে বললো,
-----"বোনের চেয়ে ভাগ্নে বেশি হয়ে গেলো? "

-----"অভি আমার জানের জান।কলিজার টুকরো।"

সাদিব অভির গাল টেনে দিলো।

রীতি ছাদে জামাকাপড় আনতে যাচ্ছে।সিড়ি ঘরের দরজার সামনে দাড়াতেই সাদিবকে দেখে।
ওর বরাবর কানে হেডফোন গুঁজে দাড়িয়ে আছে।নজর নিজের ফোনের দিকে।সাদিব গান শুনছে আর ফেসবুকিং করছে মনোযোগ দিয়ে।
রীতি আর ভেতরে যাওয়ার সাহস করলোনা।সেদিন চোখাচোখির যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আর সাদিবের সামনে পড়ে লজ্জায় মিশে যেতে চায়না।
তাই উল্টো হাটা দিলো।খুব দ্রুত সিড়ি পাড় করছে।দ্রুত সিড়ি পাড় করতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।ছিটকে পড়ে যেতে নেয় দেয়ালের দিকে।রীতি নিজেকে বাচানোর জন্য দুহাতে দেয়াল ধরে দেয়ালের সাথে বাড়ি খাওয়া আটকাতে পারলেও ওর চোখের চশমাটা ছিটকে পড়ে যায় মেঝেতে।রীতির দুহাতের তালু জ্বলে যাচ্ছে।
রীতি চশমার দিকে নজর দেয়।চশমার ফ্রেমের কাচ ভেঙে পড়ে আছে।রীতি দুহাত ডলতে ডলতে চশমার দিকে অসহায় ভাবে চেয়ে আছে।এই চশমার মাসের মধ্যে ১০বার না ভাংলে শান্তি হয়না।মায়ের কাছে এর জন্য আবারো বকা খেতে হবে।কিছু করার নেই সবই কপাল।
রীতি কারো পায়ের শব্দে উপরের দিকে তাকালো।সাদিব নামছে।সাদিবকে দেখা মাত্রই রীতি নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

-----"যেখানে আছো সেখানেই দাড়াও।"

রীতি সাদিবের কঠিন কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে গেলো।
সাদিব রীতির সামনে গিয়ে দাড়ালো।রীতির মুখ কেমন থমথমে হয়ে আছে।রীতি একবার মাথা তুলে সাদিবের দিকে তাকালো।সাদিব অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছে।
সাদিবের কাছে রীতিকে কেমন অন্যরকম লাগছে।সাদিবের কেন জানি মনে হচ্ছে এ অন্য রীতিকে দেখছে।কারণ উদঘাটন করতে সাদিবের অনেক সময় লেগে গেলো।রীতির চোখে আজ চশমা নেই।চশমা ছাড়া রীতিকে অন্যরকম লাগছে।
সাদিব মেঝেতে ভাংগা চশমা দেখতে পেলো।
সাদিব ভাংগা চশমা হাতে তুলে নিয়ে বললো,
-----"কি চশমা ভেঙে গেছে?"

রীতি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো।
সাদিব বললো,
-----"বেশ হয়েছে।একদম ঠিক হয়েছে।"

সাদিবের এমন কথা শুনে রীতির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।চশমা ভাংগার জন্য মায়ের বকুনিঝকুনি খেতে হবে।আর ও হাসছে।ওর ক্রাশবয় ওর অবস্থা দেখে হাসছে।রীতি মনে মনে গালি দিচ্ছে সাদিবকে ওর জন্যই তো সব হলো আর ও হাসছে।
রীতি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

-----"কোথায় যাচ্ছো?"

রীতি রাগী ফেস করে বললো,
-----"ঘরে যাচ্ছি আবার কোথায় যাবো?"

সাদিব মনে পড়ার ভংগীতে বললো,
-----"ও হ্যা মনে পড়েছে দোতলার দুই নম্বর ফ্ল্যাটে।কিন্তু দোতলায় তো দু নম্বর ফ্ল্যাট নেই।কারণ পুরোটাই আমরা থাকি তাহলে তুমি কোথায় থাকো?"

রীতির সাদিবের কথা মাথায় কিছুই ঢুকছেনা কি বলছে।সাদিবরা দোতলায় থাকে সেটা তো ও জানেইনা।
-----"মানে?"

-----"ইউ নো ব্যাটার।তুমি সেদিন বলেছো দোতলার দুই নম্বর ফ্ল্যাটের নতুন ভাড়াটিয়া তোমরা।"

-----"আপনি ভুল শুনেছেন।আমি তা কেনো বলবো?আপনার শোনার ভুল ছিলো।আমরা তিনতলায় থাকি।"(তোতলাতে তোতলাতে)

রীতি আর কথা না বাড়িয়ে সাদিবকে কোনো রুপ পরোয়া না করে তাড়াতাড়ি চলে এলো।যেনো পালিয়ে বাচে।
ও জানতো নাকি সাদিব দোতলায় থাকে।মিথ্যা বলেছিলো আর ধরাও  খেলো।
সাদিব পেছনে থেকে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
সে হাসির শব্দ রীতির কানে আসছে।রীতি যতই নিচের দিকে যাচ্ছে মুগ্ধ করা সেই হাসির শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে।
রীতি সাদিবের সাথে সাথে নিজেকেও গালাগাল করলো।
"যতটা ভালো ভেবেছিলাম ততটা ভালো নয়।ব্যাটা মিনকা শয়তান।এইজন্য সেদিন দোতলা বলার পর মিটমিট করে হাসছিলো।আমি কি বোকা? আমি বুঝিনি সেদিন তার সেই হাসির মানে।ব্যাটা ইতর।এর উপর আমি ক্রাশ খেয়েছি?আজ ওর জন্য আমার চশমা ভেঙে গেলো।এখন একটা দিন আমার চশমা ছাড়া থাকতে হবে।"

চলবে......
Like Reply


Messages In This Thread
RE: #গোধূলি_বেলায়_প্রেম - by Yourpriya - 21-12-2022, 06:48 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)