21-12-2022, 01:02 PM
|পর্ব-২|
আজকে রীতির ভার্সিটিতে ক্লাস নেই।বসে বসে শান্তিমতো টিভি দেখছে।কারণ ওর গুনধর ভাই আসেপাশে নেই রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করার জন্য।
তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।রীতির মা কিচেন থেকে রীতিকে ডেকে বললো দেখতে কে এসেছে।রীতি টিভি অফ করে ওড়না নিয়ে দরজা খোলতে চলে গেলো।
দরজা খোলে দেখলো একটা ফর্সা করে মেয়ে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।রীতি পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো।মেয়েটা অপরিচিত।তাই জিজ্ঞেস করলো,
-----"কাকে চাই?"
-----"আপু আমি আপনাদের পাশের ফ্ল্যাটের।তাই ভাবলাম পরিচিত হয়ে যাই।আসলে এতোদিন আমি মামা বাড়ি ছিলাম তাই আসতে পারিনি।বাড়িতে এসে জানতে পারলাম পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটে এসেছে।আর আমার সমবয়সী কিংবা বড় হবে এমন একটা মেয়ে আছে।তাই চলে এলাম বন্ধুত্ব করতে।জানেন তো আগে যারা ছিলো এখানে তাদের একটা মেয়ে ছিলো ১৬বছরের আমার সাথে খুব ভাব ছিলো।চলে যাওয়ার পর অনেক কেদেছি।"
রীতি মেয়েটার কথা শুনে বুঝতে পারছে মেয়েটা খুবই চঞ্চল আর প্রচুর কথা বলে।
-----"আপু ভেতরে আসবো?"
রীতি তখনো দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা বাইরে দাড়িয়েই বকবক করে যাচ্ছে।রীতি মুচকি হেসে দরজা থেকে সরে বললো,
-----"হ্যা,অবশ্যই আসুন।"
ভেতরে নিয়ে মেয়েটাকে বসতে দিলো।
তারপর কিচেনের কাছে গিয়ে মাকে বললো,
-----"মা পাশের ফ্ল্যাট থেকে কেউ এসেছে।এসো।"
-----"বসতে দে।বসে কথা বল।আমি আসছি।"
রীতি পাশে গিয়ে বসে বললো,
-----"মা আসছে।আসলে একটু কাজ করছিলো।"
মেয়েটা একটুও অস্বস্তিবোধ করছেনা।চট করে জিজ্ঞেস করলো,
-----"আপু আমার নাম দিয়া।আপনার নাম কি?"
রীতি মুচকি হেসে বললো,
-----"আমার নাম রীতি।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।আসলে আমি একটু কম কথা বলি।চুপচাপ আছি বলে কিছু মনে করবেন না।"
মেয়েটা আরেকটু কাছে এসে বসে বললো,
-----"আমাকে তুমি করে বলবেন তুই বললেও সমস্যা নেই।আমি আপনার ছোট।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।তাই প্লিজ।"
রীতি হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-----"আচ্ছা তবে আমাকেও আপনি বলোনা তুমি করেই বলো।আপনি ডাকটা আমার ভালো লাগে না।"
রীতির মা রান্নাঘর থেকে চলে এসেছে।দিয়া রীতির মায়ের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিয়েছে।যেনো কতকালের পরিচিত মেয়েটা খুব চটপটে।
রীতির মা একের পর এক খাবার এনে দিচ্ছেন।রান্না করা আর সেই রান্না পরিবেশন করা তার অন্যতম শখ।আর কেউ যদি সেই রান্না খেয়ে প্রসংশা করে তবে তো কথাই নেই।
রীতি খেয়াল করলো মেয়েটা শুধু কথাই প্রচুর বলে না খায়ও প্রচুর।
খাচ্ছে আর প্রসংশা করছে।এই মেয়ে রীতির জন্য না আসলেও খাওয়ার জন্য প্রতিদিন আসবে সেটা শিওর।
রীতি টুকটাক কথা বলে দিয়াকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো রুম দেখাতে।দিয়া রুম ঘুরে ঘুরে দেখে বললো,
-----"আপু তুমি নিশ্চয়ই খুব পড়ুয়া?"
-----"হ্যা বলতে পারো।"
-----"আমি সেটা তোমাকে দেখেই বুঝেছি।আর রুম দেখে কনফার্ম হলাম।চশমা পড়া মেয়েরা খুব পড়ুয়া হয়।তুমি দেখছি গল্প,উপন্যাস,কবিতাও পড়ো।"
----"তুমি চাইলে মাঝেমধ্যে নিয়ে পড়তে পারো।"
----"আমি নিজের বই ই পড়িনা।তবে পড়লে অবশ্যই নিবো।"
দিয়া বারান্দার দিকে গেলো।রীতিও পেছনে পেছনে গেলো।
দিয়া রীতির টপের গাছগুলো দেখছে।সেখানে কিছু গোলাপ আর বেলি ফুল ফুটেছে।নিচে থেকে শব্দ আসছে।রীতি নিচের দিকে উকি দিলো।
নিচে রিমন,ওর বয়সী আরো দুটো ছেলে,একটা ৪বছর বয়সী বাচ্চা ছেলে আর সাদিব ক্রিকেট খেলছে।আর চিল্লাচিল্লি করছে।
দিয়া পাশে গিয়ে দাড়ালো।
দিয়া একটা ছেলেকে দেখিয়ে বললো,
-----"ও আমার ভাই,দিহান।ক্লাস এইটে পড়ে।"
রীতির মাথায় চট করে উদয় হলো দিয়া তো এখানকার সবাইকে চিনে।অনেক বছর যাবত আছে।তাহলে নিশ্চয়ই ওই ছেলেটাকে চিনবে।
তাই কৌশলে জানার চেষ্টা করছে।
----"ওটা আমার ভাই রিমন।বাকিদের চিনি না।"
-----"ওই যে লাল টিশার্ট পড়া ছেলেটা ওর নাম রকি।কালো শার্ট হিমেল,আর পিচ্ছিটা সাদিব ভাইয়ের বড় বোন মারিয়া আপুর ছেলে অভি।"
-----"আর সাদিব ভাইটা কে?"
-----"বাড়িওয়ালার ছেলে।ওই যে বড় ছেলেটা ওটাই সাদিব ভাই।"
বাড়িওয়ালার ছেলে এটা শুনে রীতির ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলো।শেষে বাড়িওয়ালার ছেলেকে দেখে ফিদা হয়েছে।
.
.
রীতি কানে হেডফোন গুঁজে নিলো।কেননা ছাদের ওপাশ থেকে হটাৎ খুব শব্দ আসছে।মনে হচ্ছে কয়েকজন মিলে আড্ডায় মেতে উঠেছে।
রীতি "তোমাকে"বইটায় গভীরভাবে ডুবে আছে কিন্তু চেচামেচির কারণে ব্যাঘাত ঘটেছে।তাই কানে হেডফোন গুঁজে নিলো তাতে কিছুটা হলেও রোধ হবে।
সাদিব নিজের ভাগিনাকে কোলে নিয়ে বিল্ডিংয়ের অন্য ছেলেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সবাই চলে যাওয়ার পরেও সাদিব রয়ে গেলো ভাগিনার জন্য।
রীতি হেডফোন খোলে রেখেছে।
কিছুক্ষণ পরে গিটারের সুর ভেসে আসলো।রীতি কান খাড়া করে শুনছে।
সেদিন রাতেও শুনেছিলো।এই বিল্ডিংয়ে কেউ আছে যে গিটার বাজাতে পছন্দ করে।
তারপর কি মনে করে কানে আবারো হেডফোন গুঁজে নিলো।
সাদিব আপন মনে গিটার বাজাচ্ছে।আর ওর ভাগ্নে অভি একা একা এদিক সেদিক দৌড়ে খেলছে।হটাৎ রীতিকে ছাদের ওপাশে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর সাদিবের কাছে গিয়ে বললো,
-----"মামা এদিকে এসো,,।দেখো কে বসে আছে।"
সাদিব গিটার থামিয়ে দিয়ে বললো,
-----"কে আছে মামা?"
-----"চশমা পড়া।"
সাদিব গিটার রেখে অভির হাত ধরে ছাদের কোনার দিকে গেলো।
একটা মেয়ে একটা টুলের উপরে বসে বই পড়ছে।কানে আবার হেডফোন গুজা।অচেনা লাগছে মেয়েটাকে।এর আগে দেখেনি।এই বিল্ডিংয়ের সবাইকে ও চিনে।
সাদিব সামনে গিয়ে দাড়ালো।কিন্তু রীতি বইয়ের মধ্যে এমন ভাবে ডুবে আছে কে ওর সামনে সেটা খেয়াল করে নি।
সাদিব চুটকি বাজিয়ে বললো,
-----"এই চাশমিশ!"
রীতির তখন চোখে পড়লো সামনে থাকা মানুষটাকে।সাদিবকে দেখে ওর চোখ ছানাবড়া।বুক ঢিপঢিপ করছে।ওর ক্রাশ বয় ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে।তাও নিজ থেকে কথা বলছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।কিভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা।
রীতি কান থেকে হেডফোন খোলে নিলো দ্রুত।
তারপর কাচুমাচু করে বললো,
-----"জ্বি...।"
সাদিব ভ্রু কুচকে বললো,
-----"কানে হেডফোন গুঁজে পড়া দেখানো হচ্ছে? ফাকিবাজ মেয়ে।"
রীতি ফোন দেখিয়ে বললো,
----"ফোনে কোনো সং অন করা নেই।আমি ফাকিবাজি করছিনা আর না পড়া দেখাচ্ছি।"
সাদিব সবটা দেখলো।কিন্তু রীতি এমন কেনো করেছে সেটা ওর জানার ইচ্ছে হলো।
-----"তাহলে কানে হেডফোন কেনো?"
-----"আসলে কেউ গিটার বাজাচ্ছিলো।আমার ডিস্টার্ব হচ্ছিলো তাই।"
সাদিব মনে মনে ইনসাল্ট ফিল করলো।কেউ ওর গিটারের সাউন্ডকে ডিস্টার্ব মনে করছে।
-----"কি বললে?আমার গিটারের সুর তোমাকে ডিস্টার্ব করছিলো? "
রীতি চোখ বড়বড় করে নিলো সাদিবের কথা শুনে।সাদিব গিটার বাজাচ্ছিলো আর ও সেটাকে ডিস্টার্ব বলছে।রীতি চোখমুখ কুচকে বললো,
-----"সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি বাজাচ্ছিলেন।"
সাদিব অবাক হয়ে বললো,
----"তুমি যদি জানতে আমি বাজাচ্ছিলাম তাহলে ডিস্টার্ব ফিল করতে না?"
-----"না আসলে তা নয়।"
রীতি দাড়িয়ে গেলো আর ওর কোলের উপর থেকে ঠাস করে বই পড়ে গেলো নিচে।ওর কোলের উপর যে বই ছিলো সেটাই ভুলে গিয়েছিলো ভাগ্যিস ফোনটা হাতে ছিলো।নয়তো ফোনের মানচিত্র পাল্টে যেতো।
রীতি নিচু হয়ে বইটা তুলতে পারছেনা কারণ ওর চুলের খোপাটা ঢিলে মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এখুনি খোলে যাবে।রীতির দুই হাত বন্দী।ফোন আর হেডফোন টুলের উপরে রাখতে যাবে তখনই চুল খোলে গেলো।ওর কোমড় অবধি লম্বা চুল ছড়িয়ে পড়লো পিঠ,কোমড়ে।রীতি দুঃখে চোখ বন্ধ করে নিলো।সাদিব রীতির কান্ড দেখছে।
রীতি ফোন আর হেডফোন রেখে তাড়াতাড়ি চুল খোপা করে নিলো।
তারপর বই তুলে সরি বললো।সাদিব রীতির পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো।
-----"নাম কি?কয় তলায় থাকো?"
রীতি আমতা আমতা করে বললো,
-----"রীতি।দুতলার ২নাম্বার ফ্ল্যাটের নতুন ভাড়াটিয়া।"
-----"রিমন তোমার ভাই?"
রীতি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
সাদিব মুচকি হেসে চলে গেলো।ও রীতিকে আর অপ্রস্তুত করতে চায়না।মেয়েটা অস্বস্তি ফিল করছে বুঝতে পারছে।
সাদিব যেতেই রীতি নিজেকে মনে মনে হাজারো গালি দিচ্ছে।প্রথমবার ক্রাশের এতো সামনে,প্রথম কথা হচ্ছে ওদের।কিন্তু নিজেকে গোছালো হিসেবে নয় অগোছালো ভাবে উপস্থিত করেছে।এখুনি এসব হওয়ার ছিলো? ছিহ!নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে।ছেলেটা কি ভাববে ওকে।নিশ্চয়ই ক্ষেত ভাববে।
.
.
রীতি ক্যাম্পাসে ওর বান্ধবী রাইসার সাথে গল্প করছে।
রাইসা হুট করে উচ্ছাসিত হয়ে বললো,
-----"রীতি দেখ....!!"
রীতি রাইসার ইশারা করা আংগুল বরাবর দেখে লাফিয়ে উঠলো।
----"ইনি এখানে?হাও দিস পসিবল? "
রাইসা অবাক হয়ে বললো,
-----"মানে কি?উনি সেই মামা যিনি ফুচকা বিক্রি করেন।এতোদিন উনি আসেনি তাতে তোর জান বের হয়ে যাচ্ছিলো আর এখন উচ্ছাস প্রকাশ না করে এমন বিহেব করছিস?"
রীতি ভালো করে চেয়ে দেখলো হ্যা সেই ফুচকা বিক্রি করা মামা এসেছে।আর তার পাশে সাদিব কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।রীতি সাদিবকে দেখে লাফিয়ে উঠেছিলো ফুচকাওয়ালাকে দেখেই নি।চোখেই পড়েনি।
-----"আসলে রাইসা,আমি ওই ছেলেকে দেখছিলাম ফুচকাওয়ালা মামাকে না।"
রাইসা অবাক হয়ে বললো,
-----"রীতি তুই ঠিক আছিস তো?শরীর ভালো? আমার বান্ধবী কি বলছে ও ছেলে দেখছে?"
রীতি রাগী ফেস করে বললো,
-----"মার খাবি?মেরে ভর্তা বানিয়ে দেবো।ওই ছেলেটাকে আমি চিনি।"
-----"কে ছেলেটা?"
-----"বাড়িওয়ালার ছেলে।"
-----"তো?"
-----"তো কি কিছুই না।"
-----"কিছু তো অবশ্যই আছে।নয়তো এভাবে লাফিয়ে উঠতি না।এই বল না বল না প্লিজ প্লিজ।"
রাইসার জোরাজোরিতে রীতি ছাদের ঘটনা বললো।
----"উনাকে আমাদের ভার্সিটিতে দেখে অবাক হয়েছি এই যা আর কিছু না।"
----"বেইবি এখানে একা তুমি না আরো অনেকেই পড়ে।বুঝেছো?"
-----"হ্যা বুঝেছি।(কিন্তু কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট সেটাই তো জানিনা।)"
.
সাদিব এই দুপুর বেলা রোদের মধ্যে বাগানের মাটি খুড়ে গাছ লাগাতে ব্যস্ত।ঘামে গা যেনো নেয়ে উঠেছে।কপালে মাটি লেগে আছে।
শাওয়ার নিয়ে রীতি বারান্দায় চুল ঝাড়ছে।নিচের দিকে চোখ যেতেই রীতি দেখে যে ওর বারান্দা বরাবর সাদিব কোনো একটা গাছ লাগাচ্ছে কিন্তু কি গাছ সেটা উপর থেকে বুঝা যাচ্ছেনা।
রীতি চমশা নিয়ে এলো তাতেও বুঝতে পারছেনা কিন্তু এই মুহুর্তে ওর জানা চাই এটা কি গাছ।
তাই রিমনকে ডাকলো।
রিমন বারান্দায় আসতেই রীতি জিজ্ঞেস করলো,
-----"কি গাছ লাগাচ্ছে রে?দেখ তো।"
রিমন না দেখেই বললো,
----"বেলী ফুল গাছ"
রীতি ভ্রু কুচকে বললো,
----"ওই না দেখেই বলছিস?"
-----"আপু দেখেছি ওটা বেলি গাছ।নিচে গিয়ে দেখতে পারো বিশ্বাস না হলে।"
----"আমি তো দেখতে পারছিনা।তুই কি করে দেখছিস?"
----"কারণ আমি তোমার মতো কানা নই।হুহ।"
রিমন বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো। কিন্তু রীতির মনে প্রশ্ন রয়েই গেলো।রিমন কিছু লুকাচ্ছে।।
তারপর রীতি নিচে দেখছে।
"যতই ভাবি এই ছেলের প্রেমে পড়বোনা কিন্তু এই ছেলে একের পর এক যা করছে তাতে প্রেমে পড়তে বাধ্য হচ্ছি।উফফ,ভিষণ ভাবে প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।"
চলবে.....