20-12-2022, 08:44 PM
পর্ব- সাত
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে আকাশ জুড়ে, অমাবশ্যার মরা চাঁদের লালচে রঙ নিকষ কালো আধারে আত্মায় ভয় ধরিয়ে দেয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তারাগুলো জ্বলছে আর নিভছে। বাগানের পাশে বড় গাছটার নিচেই অন্ধকারের আধিপত্যটা চোখে পড়ার মতই। তবে পাশেই কড়ি ফুল গাছের আড়ালে থাকা জোনাকিপোকা গুলোর জ্বলজ্বল আলোতে মন রঙিন হতে বিশেষ দেরি করে না। ঝিঁঝি পোকার ডাকে মনের ভেতরেও গুনগুন সুর তোলা শুরু হতে থাকে ধিকিধিকি করে। রুমের দক্ষিণ দিকের ছোট্ট বারান্দায় কৌশিক এতোক্ষণ রেলিং এর উপর ভর দিয়ে ঝুঁকে দাড়িয়ে ছিল আর জোনাকির খেলা দেখছিল। হঠাৎ ঘরে ঢোকে ড্রয়ার থেকে কি যেন একটা খুঁজে নিয়ে আসে, আর বারান্দায় থাকা রকিং চেয়ারটায় বসে নিজেকে দোলাতে থাকে। মাউতারগানে ঠোঁটের স্পর্শ আর শ্বাসের খেলায় মন জোড়ানো সুরের মূর্ছনা তুলতে থাকে এক এক করে। দু চোখ বন্ধ করে সুরের ভুবনে ডুব দিয়েছে কৌশিক, আজ অনেকদিন পর তার শ্বাসে সুরের ঢেউ উঠেছে। সেটা বাড়ির আরেক সদস্যের কান এড়ানোর সুযোগ পায় না। করুণ সুরখানা কানে বাজতেই হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে নিজের ছেলের ঘরে এসে হাঁপাতে থাকে মমতা দেবী। নিজের গর্ভে বড় করা নাড়ী ছেড়া ধনের প্রতিটা নিঃশ্বাস তার জানা। আজ এতো দিন পর ছেলের কন্ঠে সুরের খেলা তার মনেও যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে, ছেলে যে তার হয় আনন্দে না হয় বিষাদেই সুরের মূর্ছনা তুলতে বসে। তবে আজকাল যে আনন্দ তাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে সেটা তো মমতা দেবীর অজানা নয়। তাই হয়তো ভীষণ কু ডাক ডাকছে মনটা, কি হলো তার প্রাণ ধনের আবারও কোন বাজে সংবাদ অপেক্ষা করছে নাতো। নাকি ছেলের মনটা কোন কারণে বিষাদময় হয়ে গেছে। মমতা দেবীর তর সইছে না কিন্তু ছেলেকে মাঝপথে থামাতেও পারছে না, সুতরাং অপেক্ষা শেষের রাগ বেজে উঠার।
পেছনে মা দাঁড়িয়ে আছে সেটা কৌশিক অনেক আগেই টের পেয়েছে, অন্য সবকিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব কিন্তু মায়ের গায়ের গন্ধটা সে কখনোই ভুলতে পারবে না। ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি খেলতে থাকে সেই সাথে মাউতারগানেও ভিন্ন সুরের খেলা শুরু হয়। সেখানে এখন বিষাদের সুর নয় ফাগুনের হাওয়ার মতই উচ্ছল আনন্দের ধারা বইছে। মায়ের মনের আকাশ জুড়ে উড়ে চলা শঙ্কার মেঘ এতো সহসাই সরে যাবার নয় তবে সেখানে একটু হলেও আলোর দেখা দিয়েছে। রাগের শেষটা টানতেই মমতা দেবীর মাতৃস্নেহের হাতের স্পর্শ পায় কৌশিকে পিঠ, পেছন ফেরে তাকাতেই মায়ের আতঙ্কিত মুখ খানা দেখে ছোট্ট করে একটা হাসি দেয়। ছেলে কে হাসতে দেখে বিষ্ময় ভরা চোখ গুলো খানিকটা কুঞ্চিত হয়,
বাবু কি হয়েছে তোর, ঠিক আছিস তো?
মা যে কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে আছে সেটা কৌশিকের বুঝতে অসুবিধা হয় না। মা কে নিজের সামনের দিকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে,
ওহহ মা তুমি এতো ভীতু কেন গো, (হু হু করে হাসতে থাকে) আমার কিচ্ছু হয় নি আমি ঠিক আছি।
ছেলের চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠে,
মায়ের জ্বালা কি সেটা তুই বুঝবি না। আমার যে কি অবস্থা হয় সেটা শুধুই আমি জানি।
জানি তো মা, আমার তুমি ছাড়া কে আছে বলো? আর এমন করে তোমাকে ভয় পাওয়াবো না। একটু চা করে দিবে?
এ নিয়ে কতোবার এই কথা দিলি সেটা মনে থাকে তোর?( ছেলের পিঠে হালকা করে একটা চড় দিয়ে) চা করাই আছে আমি নিয়ে আসছি।(মমতা দেবী কৌশিক কের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে চলে যায়)
কানে এয়ারফোনে গান শুনছিলো মাধুরী, মাঝে গান বদলানোর সময় একটা অদ্ভুত সুর কানে এসে বাজে। প্রথমে ভেবেছিল বাঁশি হবে হয়তো, তবে খানিক বাদে বুঝতে পারে এটা বাঁশির আওয়াজ না। তবে কিসের আওয়াজ আর বাজাচ্ছেই বা কে আগে তো কখনো এমন আওয়াজ সে এখানে শুনে নি। ঘর থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আওয়াজের উৎস টা খুঁজার চেষ্টা করে, মনে হয় বিপরীতের জংলা বাড়িটার দিক থেকে আসছে। কে বাজাচ্ছে সেটা জানার জন্য মন কেমন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে, দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে আসে। কিন্তু একি বাড়ির বাইরে আসার পর তো আওয়াজ টা আর শুনতে পারছে না, এগিয়ে যায় বাড়িটার দিকে খুঁজে দেখতে। কিন্তু না কাউকে তো দেখতে পাচ্ছে না। তবে কে বাজাচ্ছিল ওমন করুণ সুরে। একবার ভাবে বাড়িটার দারোয়ান নিখিল কে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু কি ভেবে যেন আবার বাসায় চলে আসে।
লক্ষ্মী জ্বর থেকে সেরে উঠেছে তাই আজ থেকে আবার কাজে যেতে হবে। কাজ না করলে মা ছেলের দুজনের পেটে খাবার পড়বে না দুবেলা ঠিকমতো। আজ ও এসেছে জল নেয়ার জন্য, পেছন পেছন পচুই আসছে মায়ের আঁচল ধরে টানতে টানতে। লক্ষ্মীর চোখ দুটি যেন কাউকে খোঁজে চলেছে অনবরত৷ হঠাৎ করেই সেই মানুষ টাকে নজরে পড়তেই একরাশ লজ্জায় চোখ দুটি নামিয়ে নেয় সে। নিখিল আগে থেকেই এক কোনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো লক্ষ্মীর। অন্যদিন হলে হয়তো দুজনেই ঝগড়া করার ছুতো খুঁজতো কিন্তু গত কয়েকদিনে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। যে মানুষ দুটো একে অন্যকে সহ্য করতে পারতো না তাদেরই আজ একটু কথা বলার জন্য অজুহাত খুঁজতে ব্যস্ত হতে হচ্ছে। লক্ষ্মী তার নজর উপরের দিকে নিতে পারছে না, তবে আড় চোখে নিখিলের অবস্থান সম্পর্কে নিজের মন কে অবগত রাখছে৷ এক একে লাইনের সবাই জল নিয়ে গেছে এবার লক্ষ্মীর পালা তবে সে তো সেদিকে কোন খেয়ালই নেই, হাতে রাখা কলসি নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে সেখানেই। ওকে নড়তে না দেখে মালা দিদা এগিয়ে যায়,
কিরে লক্কি জল নিবি না? তর মন কই আইজকা? (গায়ে ধাক্কা দিয়ে লক্ষ্মীকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনে)
ধাক্কা খেয়ে সম্বিত ফেরে লক্ষ্মীর, নিজের ভুল মানে পাগলামি টা বুঝতে পেরে আঁচল টেনে মুখ ঢাকে। পচুইয়ের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যায় জল নেবার জন্য। মালা দিদা একবার বাঁকা চোখে নিখিলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটো কুঁচকে নিয়ে লক্ষ্মীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠে,
ঐ বেডা মাইনসে তর খুঁজ করে কেরে? ঘটনা কিতা?
কিসের ঘটনা? আমি ক্যামনে জানবাম হে আমার খুঁজ করে কেল্লাইগ্গা৷ আমার জল ভরা শেষ আমি যাইগা।(লক্ষ্মী আড় চোখে একবার নিখিলের দিকে তাকিয়েই হনহন করে নিজের বাড়ির দিকে চলে যেতে থাকে)
নিখিল দূর থেকে দেখছিলো ওদের মাঝে কিছু একটা নিয়ে আলাপ চারিতা হচ্ছে তবে কি নিয়ে আলাপ হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। তবে যাবার আগে লক্ষ্মীর ওমন চাহনি দেখে বুঝতে পারে মালা দিদা বিশেষ কোন সুখকর কথা বলে নি ওকে। তাই হয়তো ওমন বড় বড় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে হন হন করে চলে গেলো। নিখিলও ওখানে আর দাঁড়িয়ে থাকে না, এমনিতে বাড়িতে এখন কাজ বেড়েছে৷ নতুন মালিক রা আসার আগে শুধু এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু এখন বাড়ির ভেতরের কাজেরও দেখাশোনা করতে হচ্ছে। তবে বাড়ির কর্ত্রী খুবই ভালো মনের মানুষ সবসময় হেসে হেসেই কথা বলে ওর সাথে।
আলেয়া বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাস ধরার জন্য বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবার আগে একবার দোকান হয়ে যাবে তাই মোড়ে গিয়ে আবার রাস্তাটা বদলে নেয়। সকাল সকাল দোকানে একটু ভিড় থাকে বশির চাচার। অনেকেই চা নাস্তা খাবার জন্য বসে আছে, বিশেষ করে বুড়োদের দলটা পত্রিকা হাতে নিয়ে সকালের আবহাওয়া গরম করে তুলেছে। আলেয়া দোকানে ঢুকেই দেখে তার আব্বার দম ফেলার সময় নেই, দোকানের ছেলেটাও সমান তালে হাত চালিয়ে যাচ্ছে।
আব্বা ওষুধ খাইছো?
মেয়ের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয় বশির চাচা,
না মানে.....
তুমি কি আমার কথা হুনবা না? পরে বিছনায় পড়লে কিন্তু আমারে ডাইকো না কইয়া দিলাম।
হে হে হে হে বশির তোমার জন্য আলেয়াই ঠিক, ওরে ছাড়া তো তুমি কারও কথা শুনো না।( হেমেন্দ্র মুখের সামনে থেকে পত্রিকা সরিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠে)
হেমেন দা তুমি আর উসকাইও না, মাইয়াডা আমারে খালি ধমকায়।(বশির চাচা আলেয়ার হাত থেকে ঔষধ নিতে নিতে বলে উঠে)
দুফুরে টাইম মত ভাত খাইয়া লইও, আমি কলেজে গেলাম।
আলেয়া দোকান থেকে বেড়িয়ে একবার ঘড়িটা দেখেই পায়ের গতি বাড়ায় বাসস্ট্যান্ডের দিকে। মিনিট দশেকের মাঝেই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যায়, বাস টাও ছেড়ে দিবে কিন্তু আলেয়া উঠছে না। তার উৎসাহী চোখ জোড়া মানুষের ভিড়ে পরিচিত কোন মুখের খোঁজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই কেউ একজন তার পাশে এসে দাঁড়ালো,
আমার খোঁজ করছিলে নাকি?
হঠাৎ করেই কানের সামনে পুরুষ কন্ঠে চমকে উঠে আলেয়া, পাশ ফিরে তাকাতেই চেনা মুখটা দেখে একটা স্ফীত হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কিনারায়)
না মানে আমি আবার আপনাকে খুঁজতে যাবো কেন। আমি যাই কলেজের দেরি হয়ে যাবে, বাসও ছেড়ে দিবে এখন।
আলেয়া পা চালিয়ে বাসে উঠে পড়ে, বাসের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। সুমনও আলেয়ার পেছন পেছন বাসে উঠে পড়ে, দুজনের চোখে মুখে হালকা দুষ্টু মিষ্টি হাসি খেলা করে যাচ্ছে।
অনির্বাণের পরিক্ষার রুটিন বের হয়েছে, সামনের মাস থেকে বোর্ড এক্সাম শুরু হবে। এতোদিন যতই প্রস্তুতি নিয়ে থাকুক না কেন এক্সামের ডেট আসার পর অন্তরাত্মায় একটু খানি ধুকপুকানি শুরু হওয়াটা পরিক্ষার্থী মাত্রই আবশ্যক। কলেজ থেকে বেড়িয়ে ভেবেছিল রুমা কে একটা কল করবে, কিন্তু সেদিনের ঐ ঘটনার পর থেকে অনির্বাণ যেন আগের মত মন খুলে কথা বলতে পারছে না। এমন না যে একদমই কথা হয় নি তবে যেটুকু হয়েছে সেটা মোবাইলে সামনাসামনি নয়। দুজনেই দুজনকে খানিকটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে হয়তো। তবে অনির্বাণের মোবাইলে কথা বলার সময়ও কেমন একটা আড়ষ্টতা কাজ করে। ওর মনে মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে সেদিনের পর থেকে। মনে হয় ঐ ঘটনা টা ঘটিয়ে নিজের ভালোবাসার মাঝে একটা অবিশ্বাসের দেয়াল দাড় করিয়ে দিয়েছে সে।
মোবাইলটা বের করে রুমার নাম্বার টা ডায়াল করতে গিয়েও করতে পারছে না। বারবার নামটাতে টাচ করছে আর কলটা ঢুকার আগেই আবার কেটে দিচ্ছে। কি বলবে কিভাবে বলবে সেটাই যেন ভেবে পাচ্ছে না, হঠাৎ করেই যেন দুজনার মাঝে একটা বিশাল দূরত্ব তৈরী হয়ে গেছে৷ শরীরের সাময়িক দুরন্তপনার জন্য মনের সংযোগে যে এমন ভাবে ভাঙন ধরাবে সেটা যদি অনির্বাণ আগে বুঝতে পারতো তবে এমন একটা হঠকারি কাজ কখনো করার চেষ্টাও করতো না। আনমনা অনির্বাণ রাস্তাটা পার হয়ে উল্টো দিকে কফি শপের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ করেই পকেটের মোবাইলটা ভাইব্রেশনে বাজতে থাকতে, মোবাইলটা বের করে রুমার নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে খানিকটা যে বিস্মিত হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। রিসিভ করে কানে ধরে,
কোথায় আছো এখন?
এইতো কলেজ থেকে বের হলাম।
আজ তো এক্সামের রুটিন দিয়েছে।
হুম, সেটার জন্যই এসেছিলাম। তুমি কোথায়?
এখন আবার কোথায় থাকবো কলেজেই আছি, এখনের ক্লাস টা ক্যানসেল হয়েছে। বাসায় যাবে কখন?
এইতো একটা কফি খেয়ে এখনি চলে যাবো।
আচ্ছা বেশি দেরি করো না, আর বাকি কয়েকটা দিন সব কিছু বাদ দিয়ে যেগুলো পড়েছো সেগুলো তে চোখ বুলিয়ে নাও ভালো করে। আর কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলো কিন্তু।
আচ্ছা ঠিক আছে।
এখন রাখি তাহলে, বাসায় গিয়ে মেসেজ করে দিও।
ওকে (কিছুটা সময় নিঃশব্দে কেটে যায়, তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠে) লাভ ইউ।
(অনির্বাণ ভেবেছিল প্রতিত্তোরে কিছুই হয়তো শুনবে না কিন্তু সব কিছু ভুল প্রমান করে রুমাও বলে উঠে) লাভ ইউ টু।
অনির্বাণের মনের আকাশে উড়ে চলা কিছু কালো মেঘ আর দুরাশার ভেলা গুলো পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে যেতে লাগলো। যেটুকু ভয় জেগে ছিল মনে সেটুকুই আজ যেন ভালোবাসার শক্তি হয়ে আশার দেখাচ্ছে উত্তর আকাশে। খানিকের তাড়নায় ব্যাকুল শরীর কত কি করার চেষ্টাই না করে কিন্তু মন, মন যদি সঠিক পথেই শক্ত বাঁধ হয়ে থাকে তবে সেখানে যতো জলোচ্ছ্বাসও আসুক না কেন সেটা পেড়োতে পারবে না। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে অনির্বাণের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক টা ধীরে ধীরে স্পষ্টত হতে থাকে।
কলেজ শেষে শুভ গেটের কাছেই টং দোকানটার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে, মাধুরী আগেই মেসেজ করে জানিয়েছিল ও যেন অপেক্ষা করে। শুভ ভেবেছিল একটা সিগারেট ধরাবে, টং দোকান থেকে নিয়েও ছিল কিন্তু মাধুরী কে আসতে দেখে সেটা রেখে দেয়। ওর হাতে সিগারেট টা দেখলেই মাধুরীও জেদ দেখাবে সিগারেটের জন্য। ওর অভ্যাস টা ফেরানোর জন্য নিজের পিপাসাটাকেও মরতে দিতে রাজি শুভ। মাধুরী এগিয়ে এসে স্কুটির চাবিটা শুভ দিকে ছুড়ে দেয়,
স্কুটি টা নিয়ে আসো গিয়ে, আমি এখানেই দাঁড়াচ্ছি।
দাঁড়াও ভালো কথা টং থেকে কিছু যেন না নেয়া হয়।
আরে বাবা কিচ্ছু নেব না, চিন্তা করো না।
তোমাকে ভরসা নেই ( দোকানে মাধুরী কে সিগারেট দিতে না করে স্কুটির দিকে যেতে থাকে)
পেছন পেছন মাধুরী তেড়ে আসে শুভ কে মারার জন্য, শুভও দৌড়াতে শুরু করে ওর হাত থেকে বাঁচার জন্য। কিছুটা দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠে মাধুরী, হাঁটুতে হাত রেখে বাঁকা হয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে থাকে। শুভ স্কুটির কাছে গিয়ে পেছন ফেরে মাধুরীর কাহিল অবস্থা দেখে ভেংচি কাটে। মাধুরী রাগে কটমট করতে করতে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে হাতের সামনে একবার পাই তখন বুঝাবো মজা টা।
ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বেজে চলেছে, বাড়িতে একা মানুষের এই এক সমস্যা। হাতটা খালি না হওয়া পর্যন্ত ফোনটাো ধরতে পারছে না। শেষমেশ হাত ধুয়ে আঁচলে মুছে নিতে নিতে রান্নাঘর ছেড়ে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। ফোনটা এখন আর বাজছে না, রিসিভার টা তুলে রিডায়াল করে। ও পাশে একটা গম্ভীর পুরুষ কন্ঠ,
মিসেস রায় বলছেন?
হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?
আমি ডাঃ অভিরূপ বিশ্বাস বলছি স্কয়ার হসপিটাল থেকে।
ওহহহ! স্যরি মিঃ বিশ্বাস৷ একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোনটা রিসিভ করতে পারি নি। তা আপনি রিপোর্ট গুলো দেখেছিলেন কি? কি বুঝলেন?
সেটাই বলার জন্য ফোন করলাম, আপনার সময় হলে পরশু দেখা করতে পারবেন? সরাসরি কথা বললেই বেটার হবে মনে করি।
ওকে মিঃ বিশ্বাস আমি আসবো।
ওকে, রাখছি তাহলে।
ওকে পরশু দেখা হবে।
স্কুটিটা শুভর বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়, মাধুরী হাত বাড়িয়ে বাসার চাবিটা চায় শুভর কাছে। কেন চাবিটা চাচ্ছে সেটা বুঝতেই মিচকি একটা হাসি হেসে উঠে মাধুরীর দিকে তাকিয়ে। মাধুরী রাগী চোখে তাকিয়ে হাত থেকে ছু মেরে চাবিটা নিয়ে দৌড়ে উপরে উঠে যায়। শুভ স্কুটিটা পার্কিং-এ রেখে সিঁড়ি ধরে উঠতে গিয়েও কি মনে করে আবার নিচে নেমে আসে আর রাস্তা পার হয়ে ওদিকটা চলে যায়।
খুশ মনে অনির্বাণ বাড়ি ফিরে আসে, গত কয়েকদিন ধরে যে ক্লেদ টা মনে জমে ছিল আজ কিছুটা হলেও সেটা পরিষ্কার হয়েছে৷ রুমার কলটা পাবার পর থেকে মাথা থেকে পরীক্ষা নিয়ে যে টেনশন টা ছিল সেটাও উধাও হয়ে গেছে। মনে বল পাচ্ছে এবার যাই হোক এবার পরীক্ষায় সে ভালো করবেই। হঠাৎ মনে হয় রুমা বলেছিল বাসায় পৌঁছেই ওকে জানিয়ে দিতে। তাই ঝটপট মোবাইলটা বের করে ওকে মেসেজ করে জানিয়ে দেয়। রুমাও যেন হাতেই মোবাইলটা নিয়ে বসে ছিল, সাথে সাথেই বিপরীত দিক থেকেও মেসেজ আসে।
শুভ ফার্মেসি থেকে কন্ডোমের প্যাকেট কিনে বাসায় ফেরার পথে কনফেকশনারি থেকে ওদের দুজনের জন্য চিকেন রোল আর চকলেট পেস্ট্রি কিনে নেয়। রুমে এসে দেখে মাধুরী কম্পিউটারে সামনে বসে কিছু একটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে তবে হঠাৎ সাউন্ড সিস্টেম টা বেজে উঠতেই বুঝতে পারলো ও মিউজিক প্লে করেছে। শুভর হাতে প্যাকেট দেখেই মাধুরী জিজ্ঞেস করে,
কি এনেছো ওটাতে?
আর কি হতে পারে! তোমার পছন্দের চিকেন রোল আর চকলেট পেস্ট্রি এনেছি।
কথাটা শোনামাত্রই চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে এসে শুভ কে জড়িয়ে ধরে মাধুরী,
লাভ ইউ সো মাচ।
আচ্ছা বুঝেছি ছাড়ো এখন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
শুভ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মাধুরী প্লেট সাজিয়ে বসে আছে। যদিও এটা প্লেটে সাজানোর কোন দরকার ছিল না তবুও মাধুরীর যেহেতু মন চেয়ে তাই সেটাতে কোন বাঁধা দেয় না শুভ। পেস্ট্রি খাওয়ার সময় শুভ খেয়াল করে মাধুরীর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা চকলেট ক্রিম টা আলোতে চিকচিক করছে। শুভর লোভতুর মনে প্রেমিকার ঠোঁট থেকে লেগে থাকা উচ্ছিষ্ট কণা টুকু লেহন করার অতৃপ্ত বাসনা জেগে উঠে। অতৃপ্ত বললাম এই কারণেই যতই প্রিয়তমার অধর খানা নিজের বাসনায় মজে থাকা জিভে লেহন করা হোক না কেন মন কখনো তৃপ্ত হয় না। হাঁটুতে ভর দিয়ে শুভ ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মাধুরীর দিকে। কিছুক্ষণ মাধুরী অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে একটু একটু করে পেছাতে থাকে, তবে বেশি সময় দরকার হয় না বুঝতে প্রিয়তম ওর কাছে কি চাইছে। মাধুরী থেমে যায় সেখানেই প্রেমিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছোট্ট হাসি উপহারের সাথে সাথে দু চোখ বুজে নেয়।
আচ্ছা চুমো খাওয়ার সময় চোখ বন্ধ হয়ে যায় কেন? এটা কি জাগতিক কোন নিয়ম নাকি শুধুমাত্র শারীরিক কোন প্রতিক্রিয়া মাত্র। এগিয়ে আসা শুভ হাত বাড়িয়ে ঠোঁটের কিনারায় লেগে থাকা ক্রীমটা আঙুলে ডগায় তুলে নিয়ে নিজের মুখে পুড়ে নেয়। প্রেমিকের স্পর্শ পেতেই মাধুরীর শরীরটা কেঁপে উঠে। এ স্পর্শ যতই পরিচিত হোক না কেন তবুও কেন জানি প্রতিবারই নতুন হয়ে ধরা দেয় মসৃন ত্বকে। খানিকটা ক্রীম এখনো ঠোঁটের কাছেই লেপ্টে আছে, এবার শুভর নজর যায় ঐদিকে। হালকা করে স্পর্শ করায় নিজের তপ্ত জিভের, লেহন করে নেয় অবশিষ্ট অমৃতখানা। প্রেয়সী ঠোঁটের কাছে সবকিছুই নাকি অমৃতের মতই সে বিষ হলেও কোন ফারাক হয় না। কিনারা ছেড়ে ঠোঁটের দখল নিতে বিশেষ কোন পন্থা অবলম্বন করতে হয় না শুভর। নরম কমলার কোয়ার মত ঠোঁট দুটি নিজের মুখের ভেতরে পুড়ে নিয়ে সবটুকু স্বাদ আস্বাদন করার জন্য৷
ঈষৎ ফাঁক করে রাখা চোখ দুটিও গরম নিঃশ্বাস নিজের মুখের কাছে পড়তেই আপনাতেই বন্ধ হয়ে যায়৷ এখন সময় শুধু প্রিয়তমের উষ্ণ স্পর্শ উপভোগ করার। কিন্তু হঠাৎ মাধুরীর ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হয়ে উঠে, শ্বাসের গতি বাড়তে থাকে মুখমন্ডলে একটা অস্বস্তি স্পষ্ট করে ফুটে উঠতে থাকে। যখন কেবল প্রিয়তমের আলিঙ্গন বিভোর হয়ে থাকার কথা তখন কেন চোখের সামনে অন্যের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে থাকা পিত বর্ণের সেই চোখ দুটোই ভেসে উঠলো কে জানে৷ মাধুরী ভয় পেয়ে আতকে উঠে দু চোখ খুলে নেয়৷
মাধুরী হঠাৎ ওমন করে রিয়্যাক্ট করতে দেখে শুভ নিজের ঠোঁট গুলোকে আলগা করে নেয়,
কি হয়েছে! (শুভ নিজেও কিছুটা ভয় পেয়ে যায়)
খানিকটা সময় চুপ থেকে নিজেকে সামলে নেয় মাধুরী,
না কিছু হয়নি তো, ঐ তুমি ওমন করে কিস করছিলে যে আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না তাই আর কি।
ওহহ! সরি সরি আমি একদম বুঝতে পারে নি।
ঠিক আছে আমার সাথে এতো ফর্মালিটি দেখাতে হবে না। কিস টা কিন্তু শেষ হয় নি এখনো ( মাধুরী নিজেকে স্বাভাবিক করার সাথে সাথে শুভর কাছেও ব্যাপারটা আড়াল করে নেয়)
মাধুরী এবার নিজেই এগিয়ে যায় শুভর দিকে, ওর কোলের উপর বসে দুহাত মাথাটা ধরে ঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। এবার আর পুরোপুরি চোখ বন্ধ করার সাহস পায় না সে, আবার যদি সেই চোখ গুলো ভেসে উঠে সেই ভয়ে। শুভও প্রেয়সীর ডাকে সাড়া দিতে থাকে, চঞ্চল ঠোঁটের খেলার সাথে নিসপিস করতে থাকা হাত দুটোও চষে বেড়াতে থাকে প্রেয়সীর শরীর জুড়ে। দুজনেই দুজনার শরীরের পরিধেয় বস্ত্র এক এক করে খসিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠে। উজ্জ্বল লাল রঙের ব্রায়ের আগলে আটকে থাকা নরম ফুলা মাংসপিন্ড গুলো মোহনীয় সৌন্দর্যের সগৌরবে ফোটে উঠেছে মাধুরীর বুকের উপর। চুম্বকের মত সেগুলোর দিকে আকর্ষিত হতে থাকা শুভ এগিয়ে যায় বহুদিনের তৃষ্ণার্ত চাতকের মত। বক্ষ বিভাজিকার মাঝে নিজের নাক ডুবিয়ে দেয় খানিকটা ঘ্রান নিয়ে নিজেকে মাতাল করে নেবার প্রচেষ্টায়। জিভের ছোঁয়াতে শুকিয়ে যাওয়া ঘামের লবণাক্ত স্বাদ টা ছাড়িয়ে ভিন্ন এক অনুভূতি খেলা করতে থাকে কামভাব জেগে উঠা মস্তিষ্কে। নিজের নাক টা ডলতে থাকে খোলা বুকে আর ছোট্ট ছোট্ট চুমুতে রক্তিম করে তুলে মাধুরীর ফর্সা বুক। ধীরে ধীরে বুক দুটো মুক্ত করে নেয় ব্রায়ের খাপ থেকে, হালকা গোলাপী আভায় ফুটে উঠার অপেক্ষায় থাকা দুধের বোটা গুলো মুক্ত হয়েই তার জ্যোতি প্রকাশ করতে থাকে। একটাতে শুভর আঙুল খেলা করতে থাকে তো আরেকটা নিজের মুখের ভেতর পুড়ে নেবার অপেক্ষা,
সাবধান! কামড়ের দাগ যেন না পড়ে৷ আগের বার কিন্তু দাগ পড়ে গিয়েছিল। (শুভর অগ্রসর হওয়া মাথাটা আটকে দিয়ে শাসিয়ে উঠে মাধুরী)
তোমাকে বলতে হবে না, আমার এমনিতেই মনে থাকবে মাই সুইটহার্ট।