20-12-2022, 04:15 PM
আমি কলেজে যাওয়া বাদ দিলাম, দিদির কাছে যাওয়াও বাদ দিলাম। দিদি আমাদের বাড়িতে এসে বলল, ‘বৃত্তি না দেস ক্লাশের ফাইনালটা দিস’। আমার কাছে ক্লাশের ফাইনাল দেয়া না দেয়া সমান মনে হল। তবুও ফাইনাল দিলাম। রেজাল্ট বের হল। গল্প/উপন্যাস, সিনেমা/নাটকের মত ক্লাশে ফার্স্ট হলাম না। কোনো মতে পাস করলাম। রেজাল্ট নিয়ে কলেজ থেকে সেই যে আসলাম আর কোনোদিন কলেজে যাওয়া হলনা।
উপবৃত্তির টাকা বন্ধ হয়ে গেল। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল তাই এলাকাতে গরীব দেখে ক্লাশ ৫-৬ এর কয়েকটা ছাত্র/ছাত্রীকে পড়ানো শুরু করলাম। মাসে ৪/৫ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছিল হঠাত করে আমার স্টুডেন্ট অর্ধেকে নেমে আসল। আমি কিছুই মনে করলাম না। এমনটা হতেই পারে।
একদিন মিন্টু নামে ক্লাশ ৬ এর এক ছাত্র বলল মিতালী দিদি আর মামুন স্যার তার বা-বাবাকে বলেছিল মিন্টুকে যেন আমার কাছে না পড়ায়।
আমি মিন্টুকে বললাম ‘তুই কেন পড়িস’?
মিন্টু- ‘আমি আব্বা মারে কইছি আপনার কাছে পরমু আর আপনার কাছে না পড়লে অন্য কারো কাছে প্রাইভেট পড়মু না’।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম ‘তা আমার কাছেই পড়বি কেন’?
মিন্টু- ‘আপনার কাছে পড়ার পর আমি অঙ্ক আগের চাইতে ভালো পারি’ এর পর মিন্টু তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলতে লাগল ‘আর আপনি আমাগো যে কদবেল মাখানো, বড়ই মাখানো খাওয়ান, আচার খেতে দেন ওইগুলাও খুব ভালো লাগে। মিন্টুর এই কথার সাথে সাথে অন্যান্য ছাত্র/ছাত্রীরা সবাই বলে উঠল ‘হাঁ ম্যাডাম ভালো লাগে’।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ‘তোমাদের আর কি ভালো লাগে’?
সবাই বলল ম্যাডাম আপনি আমাদের যে ছোট ছোট গল্প শুনান ঐ গুলাও খুব ভালো লাগে’।
ঐদিন আর বেশি পড়াশুনা হলোনা, ওদের সাথে গল্প করেই কাটালাম। ছেলে মেয়ে গুলো চলে গেলে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। দার্শনিকদের মত ভাবতে লাগলাম। বাচ্চাদের মন থাকে মাটির মত নরম, এদেরকে যেভাবে খুশি তৈরি করা যায়। কিভাবে তৈরি করা হবে তা নির্ভর করে কে তৈরি করছে তার উপর। কোনো বাচ্চা যদি আমার মত কম বয়সেই মামুন স্যার আর মিতালী দির খপ্পড়ে পরে যায় তাহলে তার ভবিষ্যত কি হবে তা ভেবে আমার চোখ দিয়ে জল বের হয়ে গেল। আমি একা একা অনেকক্ষণ কাদলাম। অথচ মামুন স্যার এবং কেষ্টা দা দুইজনে মিলেও আমাকে ঐদিন কাদাতে পারেনি।
পরদিন আমি বাচ্চাদের কলেজ চলাকালীন সময়ে আমার কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে গেলাম। গিয়ে তাদের বাবা-মা দের বললাম মামুন স্যার আর মিতালী দিদি যেহেতু নিষেধ করেছে আমার কাছে তাদের বাচ্চাদের না পড়ানর জন্য, তাদের উচিৎ হবেনা তাদের বাচ্চাদের আমার কাছে আর পড়ানো। কেননা এতে করে কলেজে তাদের বাচ্চাদের সমস্যা হতে পারে। দেখা গেল পরীক্ষায় খাতায় নম্বর কম দিয়ে দিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর পর আরো ৩/৪ টি ছাত্র ছাত্রী আসা বন্ধ করে দিল। ২/১ টি বাড়ল। এভাবেই পরবর্তী ৩-৪ বৎসর চলতে থাকল আমার প্রাইভেট টিউটর জীবন। এর মধ্যেই আমার বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকল। ছেলেপক্ষ আমাকে গরু দেখার মতই দেখতে থাকল। বিয়ে হওয়া না হওয়াটা আমার মন খারাপ হওয়ার বিষয় না আমার মন খারাপ হত ‘মেয়ে হয়ে জন্মানোর অভিশাপের কথা চিন্তা করলে। কয়েকজন অপরিচিত লোকের সামনে সেজে-গুজে যাওয়া, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হেটে দেখানো, চুল দেখানো, হাতের আঙুল দেখানো, হাতের লেখা দেখানো! এই গুলার স্বীকার যে সব মেয়ে হয়েছে শুধু তারাই বুঝবে কত মজা! কত সুন্দর অনুভুতি।
মুন্নি সাহা যদি একটি কোরবানির গরুকে হাটে বসে জজ্ঞাসা করে ‘আপনার অনুভূতি কি? তার চাইতে একটি ‘কনে দেখা’ মেয়ের অনুভূতি আরো অনেক অনেক খারাপ হবে!
উপবৃত্তির টাকা বন্ধ হয়ে গেল। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল তাই এলাকাতে গরীব দেখে ক্লাশ ৫-৬ এর কয়েকটা ছাত্র/ছাত্রীকে পড়ানো শুরু করলাম। মাসে ৪/৫ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছিল হঠাত করে আমার স্টুডেন্ট অর্ধেকে নেমে আসল। আমি কিছুই মনে করলাম না। এমনটা হতেই পারে।
একদিন মিন্টু নামে ক্লাশ ৬ এর এক ছাত্র বলল মিতালী দিদি আর মামুন স্যার তার বা-বাবাকে বলেছিল মিন্টুকে যেন আমার কাছে না পড়ায়।
আমি মিন্টুকে বললাম ‘তুই কেন পড়িস’?
মিন্টু- ‘আমি আব্বা মারে কইছি আপনার কাছে পরমু আর আপনার কাছে না পড়লে অন্য কারো কাছে প্রাইভেট পড়মু না’।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম ‘তা আমার কাছেই পড়বি কেন’?
মিন্টু- ‘আপনার কাছে পড়ার পর আমি অঙ্ক আগের চাইতে ভালো পারি’ এর পর মিন্টু তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলতে লাগল ‘আর আপনি আমাগো যে কদবেল মাখানো, বড়ই মাখানো খাওয়ান, আচার খেতে দেন ওইগুলাও খুব ভালো লাগে। মিন্টুর এই কথার সাথে সাথে অন্যান্য ছাত্র/ছাত্রীরা সবাই বলে উঠল ‘হাঁ ম্যাডাম ভালো লাগে’।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ‘তোমাদের আর কি ভালো লাগে’?
সবাই বলল ম্যাডাম আপনি আমাদের যে ছোট ছোট গল্প শুনান ঐ গুলাও খুব ভালো লাগে’।
ঐদিন আর বেশি পড়াশুনা হলোনা, ওদের সাথে গল্প করেই কাটালাম। ছেলে মেয়ে গুলো চলে গেলে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। দার্শনিকদের মত ভাবতে লাগলাম। বাচ্চাদের মন থাকে মাটির মত নরম, এদেরকে যেভাবে খুশি তৈরি করা যায়। কিভাবে তৈরি করা হবে তা নির্ভর করে কে তৈরি করছে তার উপর। কোনো বাচ্চা যদি আমার মত কম বয়সেই মামুন স্যার আর মিতালী দির খপ্পড়ে পরে যায় তাহলে তার ভবিষ্যত কি হবে তা ভেবে আমার চোখ দিয়ে জল বের হয়ে গেল। আমি একা একা অনেকক্ষণ কাদলাম। অথচ মামুন স্যার এবং কেষ্টা দা দুইজনে মিলেও আমাকে ঐদিন কাদাতে পারেনি।
পরদিন আমি বাচ্চাদের কলেজ চলাকালীন সময়ে আমার কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে গেলাম। গিয়ে তাদের বাবা-মা দের বললাম মামুন স্যার আর মিতালী দিদি যেহেতু নিষেধ করেছে আমার কাছে তাদের বাচ্চাদের না পড়ানর জন্য, তাদের উচিৎ হবেনা তাদের বাচ্চাদের আমার কাছে আর পড়ানো। কেননা এতে করে কলেজে তাদের বাচ্চাদের সমস্যা হতে পারে। দেখা গেল পরীক্ষায় খাতায় নম্বর কম দিয়ে দিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর পর আরো ৩/৪ টি ছাত্র ছাত্রী আসা বন্ধ করে দিল। ২/১ টি বাড়ল। এভাবেই পরবর্তী ৩-৪ বৎসর চলতে থাকল আমার প্রাইভেট টিউটর জীবন। এর মধ্যেই আমার বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকল। ছেলেপক্ষ আমাকে গরু দেখার মতই দেখতে থাকল। বিয়ে হওয়া না হওয়াটা আমার মন খারাপ হওয়ার বিষয় না আমার মন খারাপ হত ‘মেয়ে হয়ে জন্মানোর অভিশাপের কথা চিন্তা করলে। কয়েকজন অপরিচিত লোকের সামনে সেজে-গুজে যাওয়া, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হেটে দেখানো, চুল দেখানো, হাতের আঙুল দেখানো, হাতের লেখা দেখানো! এই গুলার স্বীকার যে সব মেয়ে হয়েছে শুধু তারাই বুঝবে কত মজা! কত সুন্দর অনুভুতি।
মুন্নি সাহা যদি একটি কোরবানির গরুকে হাটে বসে জজ্ঞাসা করে ‘আপনার অনুভূতি কি? তার চাইতে একটি ‘কনে দেখা’ মেয়ের অনুভূতি আরো অনেক অনেক খারাপ হবে!