Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
(16-12-2022, 09:06 PM)Bumba_1 Wrote:
বলা নেই কওয়া নেই .. আগের থেকে কোনো টিজার দেওয়া নেই .. কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করা নেই .. হঠাৎ করেই যদি আপডেট এসে যায়, সেটাকেই বোধহয় চমক বলে। আর এইরকম চমক দিতে এবং পেতে দুটোই ভালো লাগে। কি .. তাই তো পাঠকবন্ধুরা? বলেছিলাম রবিবারের আগে আপডেট দেবো .. দিয়ে দিলাম। আগামী দু'দিন একটি বিশেষ কার্যে ভীষণরকম ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই কয়েকদিন পর থেকে আবার পরবর্তী আপডেটগুলো আসতে থাকবে। ভালো থাকবেন সবাই ..



[Image: Polish-20221216-200118226.jpg]

(৯)

সকাল থেকেই ডান চোখের পাতাটা কাঁপছিল সুজাতার। আবার কি কোনো অশুভ ইঙ্গিত বহন করে আনতে চলেছে .. এটা ভেবেই ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল তার। গোগোলটার দেখা নেই .. কোথায় যে গেলো ছেলেটা! কাকে যেন একটা ফোন করার পর কাল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে গেলো ছেলেটা, যাওয়ার সময় বলে গেলো "দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছি .. ফিরতে রাত হবে .." তারপর কখন যে ফিরেছে, নাকি আদৌ ফেরেনি তা সুজাতার জানা নেই। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেও তাকে আর দেখেনি সে। কোথায় আর যাবে .. স্টেশনের পশ্চিমদিকে হাইওয়ের ধারে লালু আলমের ডেরায় ওর কাজের জায়গাতেই গেছে হয়তো। প্রতিমুহূর্তে প্রত্যেকটি কাজেই অসতর্ক হয়ে ভুল করে ফেলেছিল সে। চারিদিকটা কিরকম যেন গুমট হয়ে আছে .. ঝড় আসার অপেক্ষায়।

কোনরকমে ঘরের কাজ সেরে মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে একাকী সুজাতা বসে থাকে নিজের মননের আঁধারে মগ্ন হয়ে, দেখে চুনকাম করা দেয়ালে আঁকা দুঃখের নিভৃত ফুল। কখনো নিজের মনকেই প্রবোধ দেয় রাত্রিদিনের এই অনিশ্চয়তা বুঝি কাটতে চলেছে, আবার পরক্ষণেই ভয় হয় নতুন অশনি সংকেতের। প্রাণধারণের কত অমাবস্যা, কত না পূর্ণিমা। বৈশাখের দীপ্ত দিন, শ্রাবণের সন্ধ্যা .. সুনিবিড় জীবনের এই রূপান্তর। আবর্তিত ইতিহাস ব্যক্তি সমাজের চেতনায় সোনার রোদ্দুর দিয়ে বোনে প্রত্যহ স্বপ্নের পাড় বিমুগ্ধ খেলায়।

আত্মদানের স্মৃতি আর সম্প্রীতির নিবিড় মেলবন্ধনে মানুষে মানুষে পড়ে আশ্চর্য সংলাপ। জীবনের মতো ব্যপ্ত একটি সিম্ফনি ঝড়ায় ঝরনার জল। যখন নিরুদ্ধ হতাশায় জীবনকে মনে হয় একমুঠো বালি আর আকাশের চাঁদ প্রতিভাত হয় ভিক্ষুকের ভাঙা পাত্রে, ঠিক তখনই স্বপ্নের দীপ জ্বলে ওঠে মননে তার। ভুভুক্ষায় ঝরে চকিতে স্বর্গের কান্তিবিগলিত দ্রাক্ষার মদিরা। বাড়ির সামনে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ঘোর কাটে সুজাতার।

'আবার বুঝি ওই কামরাজ এলো তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে! উফ্ আর ভালো লাগেনা .. কবে যে এই পাপ বিদায় হবে ভগবান জানে। আগেরদিন যেভাবে অপমানিত হয়ে ওরা এখান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তার শোধ নিতেই কি এলো আবার!' - এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সদর দরজা খুলেই কয়েক পা পিছিয়ে এলো সুজাতা। দরজার বাইরে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মিউনিসিপাল হসপিটালের প্রাক্তন সুপারিনটেনডেন্ট ডক্টর প্রতাপ দাশগুপ্ত। ততক্ষণে তার হৃদস্পন্দনের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। হাঁপাতে হাঁপাতে ডাইনিং টেবিলের পাশে রাখার চেয়ারটিতে বসে পড়লো সে।

একেকটা রাত বড় অবসাদে কাটে আজকাল সুজাতার। পাশ ফিরে দেখে চিলেকোঠা ছাদ। এপাশ ওপাশ করে রাত কেটে যায়, মনে মনে খেলা মন খেলতে চায় অবলীলায়, কিন্তু .. উপায় তো নেই! অতঃপর 'এসব তার জন্য নয়' - এই ভেবে দেয় বালি বাঁধ। ভালোবাসা যেন কত অপরাধ! সেই অপরাধে সে আজ নিজের কাছেই অপরাধী। চোখ মেলে দেখে ভোর হলো নাকি! মনে মনে কত যে নাম না জানা অসমাপ্ত কবিতা লিখেছে এতদিনে! কত গান ঝরে পড়ে পাখনায়, কত কথা বুকে লুকিয়েছে সুখে। বলি বলি করে আর বলা হয়নি। ভোর হলেই বা কি এসে যায়, মনে মনে খেলা মন অবলীলায় খেলতে চায়। কি যে একা লাগে, মনে হয় কত বড় রাত! সব আছে তবু কি যে অবসাদ! সব কিছুর মানে অন্তর জানে। নিরুপায় হয়ে আবার চোখদুটো জোর করে বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

এই সব কিছুর মূলে তার চলে যাওয়া। সে জানে কিছুই করার ছিলো না .. পুরোটাই সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবুও তো সে থেকে যেতে পারতো .. ভালোবাসা মানুষকে তো কত কিছুই করতে বাধ্য করে। ‌তবে অত বড় ক্যারিয়ার বলে কথা! যদি আবার তাকে কখনো খুব কাছে পায়, তাহলে সে এইসব নাম না জানা অসমাপ্ত কবিতা আর গান শোনাবে তাকে। হয়তো সেদিন সেগুলো সমাপ্তির পথ দেখবে। সেই সব কথা, ফুল তরু লতা .. স্বপ্নের পায়ে শেকল পরাবে। তার থেকে কথা আদায় করবে, যেন আজীবন সে তার সঙ্গে থাকে। চোখ মেলে যাকে কল্পনায় দেখে প্রতি রাতে, হাত দিয়ে তাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে তাকে।

আজ সুজাতা বড় অভিমানী। বোকা চাঁদটাও অভিমান করে মেঘের আড়ালে অস্ফুট হাসে .. তাই বলে কি সে মেঘের সঙ্গ পরিত্যাগ করে! কক্ষনো নয়। আজ সুজাতা বড় অভিমানী। বিনিদ্র রজনীতে করুণ চোখে যে তারাদের সে দেখতো .. তাদের কি এক নিমেষে ভুলে যাবে! কক্ষনো নয়। আজ সুজাতা বড় অভিমানী। মোমের আলো যেনো রাগ করে 'এই নিভলাম' বলে নিভু নিভু করে .. তাই বলে কি সে অভিমানী হয়ে রেখে যাবে তার ম্লান হাসি নিজের অধরে! কক্ষনো নয়। আজ সুজাতা বড় অভিমানী। কান্নাও আজ অভিমান করে চোখ দিয়ে ঝরে পরে না .. তাই বলে কি অভিমানী হয়ে সে নিভাবে বাতি অষ্টম প্রহরে! কক্ষনো নয়। আজ সুজাতা বড়  অভিমানী। শুধু একা বারান্দা নয়, সবাই ছেড়ে চলে গেলেও, সেই শুধু করেনি অভিনয়। কিছুক্ষণ ওই ভাবেই চেয়ারের উপর বসে থেকে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে এক ছুটে ডক্টর দাশগুপ্তর বুকের উপর আছড়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সুজাতা বলে চললো "কেন চলে গিয়েছিলে আমাকে ছেড়ে প্রতাপ? তোমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম বলে? এতটা নিষ্ঠুর তুমি? শুধু নিজের কথাই ভাবো, তাই না? একবারও মনে পড়লো না তোমার উল্টোদিকের মানুষটার কথা? খুব খারাপ তুমি, খুব স্বার্থপর .. তুমি ফিরে যাও প্রতাপ। চলে তো যাবেই, তাহলে আমাকে আবার কষ্ট দিতে কেন এলে?"

"ভুল করেছিলাম সুজাতা .. আমি ভুল করেছিলাম। তবে বিশ্বাস করো আজও আমি তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি .. হয়তো বা তার থেকে আরো অনেক অনেক বেশি। তোমার উপর রাগ বা অভিমান করে আমি চলে যাইনি। হ্যাঁ সরকারিভাবে আমার বদলি হয়ে গিয়েছিল ঠিকই, তবুও তো আমি এখানে থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু পারিনি জানো .. ওরা আমাকে থাকতে দেয়নি। সব বলবো তোমাকে পরে। এর মাঝে আমার জীবনে অনেককিছু ঘটে গিয়েছে .. অনেক পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ রোগভোগের পর আমার স্ত্রী গত হয়েছেন। তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ভালবাসলেও, পরকীয়াকে তুমি ঘৃণা করো। তাই আমার সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওনি। তাই বলে এটা ভেবোনা যে আমার স্ত্রী চলে গেছে বলে আমি সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে এখানে ছুটে এসেছি। তা নয় .. আমি আর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না .. তাই এসেছি। আমি সরকারি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি সুজাতা .. তুমি আমাকে পুনরায় প্রত্যাখ্যান করতেই পারো। কিন্তু তবুও আমি এখানে থেকেই আমার বাকি জীবনটা .. তার উপর কাল রাতের ঘটনার পরে .."

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ডক্টর দাশগুপ্ত, সেই মুহূর্তে রাজু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো "সুজাতা দিদি শিগগিরই ক্লাবের সামনে চলো। পুলিশ এসেছে গোগোলকে অ্যারেস্ট করবে বলছে .. তুমি তাড়াতাড়ি এসো, আমি গেলাম .. সবাই আছে ওখানে।" রাজু চলে যাওয়ার পর ওইদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রেলপাড়ের ক্লাবের অভিমুখে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেরিয়ে গেলো সুজাতা, তাকে অনুসরণ করলেন ডক্টর দাশগুপ্ত।

★★★★

মধ্যাহ্নের মধ্যগগনে জ্বলন্ত সূর্য পূর্ব আকাশে। চলছে কেবল সময়ের ঘড়ি আঁচড় কাটছে মনে। মেঘ ও রৌদ্রের মৌন খেলায় দেহে পড়েছে ছায়া। মাটির বুকের দৃষ্টি যেতেই অজানা এক আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে বুকটা। বাঁচার শক্তি সঞ্চার করে লোকালয়ে নিরবতা
হারানো স্মৃতি জাগিয়ে তোলে জীবনের সকল অভিজ্ঞতা। কষ্টে ভরা ভঙ্গুর হৃদয় কোনো যুক্তি ছাড়াই মুক্তি চায় বাস্তবতার আপোষহীন লড়াই। পাওয়ার কোঠা শূন্যের দখল, বৃক্ষের মতো নির্বোধ। বাতাসে নিশ্চুপ অশনি সংকেত, চারিদিকে শুধুই বিপদ।

ক্লাবের সামনে লোকে লোকারণ্য .. রেলপাড়ের বস্তির বাসিন্দাদের ভিড় প্রায় উপচে পড়েছে। "দেখি সরো, আমাকে যেতে দাও .." এই বলে ভিড় ঠেলে একদম সামনে গিয়ে সুজাতা দেখলো তিনজন পুলিশ কনস্টেবল পিঠে রাইফেল নিয়ে ভাবলেশহীন মুখ করে ক্লাবের সিঁড়িটার উপর বসে রয়েছে। আর পুলিশ জিপের উপর এক পা রেখে আরেক পা মাটিতে নামিয়ে ক্লাবের সেক্রেটারি পঙ্কজবাবুর সঙ্গে কথা বলছে সন্দীপ। রাজু তো খবর দিয়েই এসেছে তাকে। সুবীর, কাঞ্চন, কালু সবাই রয়েছে .. অথচ গোগোলকে কোথাও দেখতে পেলো না তার মামণি।

সুজাতাকে দেখতে পেয়েই গাড়ি থেকে নেমে তার সামনে এসে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে হেসে সন্দীপ বলে উঠলো "কি ব্যাপার ম্যাডাম .. আপনি একা কেন? আপনার ওই সঙ্গী, মানে যার সঙ্গে আপনি থাকেন আর কি .. সে কোথায়?"

"ভদ্রভাবে কথা বলুন ইন্সপেক্টর, এসব আপনি কি বলছেন?" প্রতিবাদ করে উঠলো সুজাতা।

"জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শাট .. যা বলছি একদম ঠিক বলছি .. বের করুন আপনার নাগরটিকে। কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ওকে? আমি এখানে ইয়ার্কি করতে আসিনি। অ্যারেস্ট করতে এসেছি এই রেলপাড়ের বস্তির বেতাজ বাদশা অনির্বাণকে। কোমরে দড়ি পরিয়ে হিড় হিড় করে টানতে টানতে আজ সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাবো ওকে .. দেখি কে আটকায়।" চিৎকার করে কথাগুলো বললো সন্দীপ।

"এসব কি বলছে এই লোকটা .. কি বলছে এসব? তোমরা শুনছো , শুনছো তোমরা? এরপরেও চুপ করে থাকবে সবাই?" ডুকরে কেঁদে উঠে মাটিতে বসে পড়লো সুজাতা। ঠিক সেই মুহূর্তে সন্দীপের গালে একটা থাপ্পর এসে পড়লো। আচমকা এরকম একটা পরিস্থিতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।

"ছিঃ ছিঃ! এতটা নোংরা আপনি সন্দীপ বাবু? নিজের কানে যদি কথাগুলো না শুনতাম তাহলে হয়তো কোনোদিন বিশ্বাস করতেই পারতাম না, যে আপনার মত একজন সো কল্ড শিক্ষিত মানুষের মুখ দিয়ে এই ধরনের রাবিশ কথাবার্তা বের হয়। আপনি কার সম্বন্ধে কি বলছেন? আপনি জানেন মামণিকে এখানে সবাই দেবীর মতো পুজো করে! আর আপনার বন্ধু, সরি আপনাকে এখন ওর বন্ধু বলতেও ঘেন্না করছে আমার। যাইহোক, আপনি যাকে জড়িয়ে মামণির সম্পর্কে কথাগুলো বললেন, তার সঙ্গে এনার কি সম্পর্ক সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। তবুও নিজের বিকৃত মনের পরিচয় দিয়ে আপনি আজ যে কথাগুলো বললেন .. তার জন্য আপনাকে জীবনেও ক্ষমা করবো না আমি।" উত্তেজিত হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলো বললো হিয়া।

"এত বড় সাহস .. আমার গায়ে হাত তুলেছো তুমি!" এই বলে হিয়ার দিকে সন্দীপ কয়েক পা এগোতেই তার সামনে এসে দাঁড়ালো সুবীর আর কালু। "একদম বাড়াবাড়ি করবেন না ইন্সপেক্টর সাহেব, সুজাতা দিদিকে যেমন আমরা দেবীর মতো ভক্তি করি। ঠিক তেমনই হিয়াকে আমরা এখানে সবাই খুব স্নেহ করি এবং মাথায় করে রাখি। ও একজনের আমানত .. ওর গায়ে যদি একটাও আঁচড়ও লাগে, হাত কেটে নেবো আপনার। এই মুহূর্তে এখানে রাম উপস্থিত না থাকতে পারে, কিন্তু সীতাকে রক্ষা করার জন্য তার দেওর লক্ষণ আছে।" গর্জে উঠলো সুবীর।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে বর্তমানে নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করলো সন্দীপ। যে কাজটা সে করতে এসেছে সেটাই আগে করা প্রয়োজন। এখন অন্য ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। হিয়ার প্রতি আজকের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ সে পরে অনেক পাবে। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে গা জ্বালানি একটা হাসি হেসে এখানে উপস্থিত সবাইকে শুনিয়ে কিন্তু হিয়ার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো "খুব পিরিত না তোমার ওই অনির্বাণের জন্য? ওকে ভগবানের মতো বিশ্বাস করো, তাই না? শুধু তুমি কেন, এখানে তো সবাই ওকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস আর ভরসা করে। তা তোমাদের ভগবানের কুকীর্তির কথা জানো? আমি এমনি এমনি এখানে নাটক করতে আসিনি। কাল মধ্যরাতে হাইওয়ের ধারে টগর নামের একটা মেয়েকে রেপ করে মার্ডার করেছে আপনাদের সবার দু চোখের মণি, এই বস্তির বেতাজ বাদশা অনির্বাণ। ওই মেয়েটা তো মনে হয় এখানকারই বাসিন্দা। আমাদের কাছে খবর ছিলো অনেকদিন থেকেই মেয়েটির উপর নোংরা নজর ছিলো অনির্বাণের। যাই হোক, যে ঘটনা ঘটে গেছে অর্থাৎ যে মরে গেছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না। তবে আপনারা চিন্তা করবেন না .. অপরাধী ঠিক শাস্তি পাবে। তাইতো ওকে অ্যারেস্ট করতে এখানে এসেছি। আমি জানি ও এখানেই লুকিয়ে আছে। আপনারা চাইলে বের করে দিতে পারেন, তা না হলে আমাকে পুরো পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে হবে এই রেলপাড়ের বস্তি। তাতে যদি কারোর বাড়ি ভাঙচুর হয় সেই দায় কিন্তু আমার নয়।"

★★★★

কথাগুলো শোনার পর হিয়া ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো সুজাতার পাশেই। তারপর সুজাতার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো "ও কোথায়?" হিয়ার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে কয়েকমুহূর্ত তাকিয়ে থেকে গোগোলের মামণি অস্ফুটে বলে উঠলো "কাল রাতে কোথায় যেন একটা বেরিয়ে গেলো। তারপর থেকে তো ওকে আর .. কি বলছে এই পুলিশটা .. আ..আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না .."

"টগর কোথায় এখন?" কাঞ্চনের দিকে তাকিয়ে এবার প্রশ্ন করলো হিয়া। "ও..ওদের বা..বাড়িতে তো তালা ঝুলছে, কেউ তো নেই। কি হচ্ছে এখানে, কি বলছে সবাই .. আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।" এইটুকু বলে মাথা নিচু করে ফেললো কাঞ্চন।

এই মুহূর্তে সবকিছু অবিশ্বাসে ঘেরা মনে হচ্ছে তার এই সাদাকালো নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। মাঝে মাঝে নিজেকেই বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে তার। ভয় হচ্ছে নিজের অন্তরের সাথে কথা বলতে। এমনকি মনে মনে কোনো কিছু ভাবতেও একটা ভীতি গ্রাস করছে তাকে। তার কেন জানিনা মনে হচ্ছে চারপাশে সব বিশ্বাসঘাতকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার মাঝে নিজেকে অতিমাত্রায় অসহায় মনে হচ্ছে তার। মন খুলে কিছু বলার অবকাশ যে আর নেই। নিজের মনকে শক্ত করার উপায়ও যে আর নেই। এইরকম যে একটা অসহায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, কোনোদিন সে কল্পনাও করতে পারেনি। 'কেন এমন হলো? সে তো শুধু একজনকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছিলো। এত বড় প্রবঞ্চনা সে সহ্য করতে পারবে তো? মানুষ কেন এমন হয়? বিশ্বাসের মূল্য কেন এত কম মানুষের কাছে? তবে কি সে সত্যি সত্যি অমানুষে পরিণত হয়েছে? সন্দীপ বাবু কি তাহলে ঠিক কথাই বলছেন?' হাত-পা কিরকম যেন অবশ হয়ে আসছিলো হিয়ার।

ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের রয়্যাল এনফিল্ড বাইক করে সেখানে উপস্থিত হলো গোগোল।

(ক্রমশ)



ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

এত ছোটো এবং একটা আপডেটে পোষায় না দাদা হ তাড়াতাড়ি পরের আপডেট দাও।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Monen2000 - 16-12-2022, 09:33 PM



Users browsing this thread: 30 Guest(s)