Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
খুব বেশি জামাকাপড় তাঁর ছিল না শোনা যায়, শুধুমাত্র দুখানা কাপড় ছিল তাঁর একটিকে ধোপাবাড়ি দেওয়া হলে তাঁকে কোনও কারণে কাপড় বদল করতে হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে ধোপা বাড়িতে গিয়েই কাপড় বদলে আসতে হত ! এমন ঘটনা নিজেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন সাহিত্যিক কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একদিন মুক্তারামবাবুতে শিবরামের মেসে গিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটা সভায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের তাঁকে শিবরাম বলেছিলেন, ‘‘আমার এই তক্তাপোশে পা তুলে বসো কারণ এর তলায় কী কী জন্তু জানোয়ার আছে তা আমি জানি না ঘাঁটাইনি কোনও দিন সাপও থাকতে পারে আমি আমার ড্রেসিং রুম থেকে আসছি’’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘সেটা কোথায়?’’ শিবরাম বলেছিলেন, ‘‘ওই যে রাস্তার ওপারে যে লন্ড্রিটা রয়েছে ওইটা আমি ওখানে গিয়ে আমার এই ধুতি আর পাঞ্জাবিটা ছেড়ে দেব আর যেটা কেচে এসেছে সেটা পরে চলে আসব দুটো সেট কোনও ঝামেলা নেই বাক্সপ্যাঁটরা নেই বুঝলে, একেই বলে আপনি আর কোপনি জীবনটাকে হালকা করো রেল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেছ? ট্রাভেল লাইট’’

 
ছোটদের জন্য লিখতেন, নিজের মনটাও ছিল একেবারে শিশুর মতো নিজের খেয়াল খুশির রাজা
খুদে পাঠকরাই ছিল তাঁর বন্ধু বেজায় ভালবাসতেন ছোটদের জীবনে কোনও দিন কারও নিন্দা করেননি, শুনতেও চাইতেন না | কেউ যদি কখনও এসে বলতেন, শিবরামদা আপনার নামে অমুকে খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে শিবরামের উত্তর, ‘‘হতেই পারে না আপনিই ভুল শুনেছেন’’ বলেই তার হাত ধরে নিয়ে যেতেন খাওয়াতে 
 
নিজেকে সাহিত্যিক পরিচয় দিতেও সংকোচ বলতেন, ‘‘ধুর ধুর আমি আবার সাহিত্যিক হলাম কবে? প্রেমেন, অচিন্ত্য, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভুষণ এরা হলেন সাহিত্যিক কত ভাল ভাল লেখেন! তাদের পাশে আমি!’’ নিজের সম্পর্কে বলতেন, ‘‘সার্কাসের ক্লাউন যেমন সব খেলাই সে পারে, কিন্তু পারতে গিয়ে কোথায় যে কী হয়ে যায় খেলাটা হাসিল হয় না হাসির হয়ে ওঠে আর হাসির হলেই তার খেলা হাসিল হয়’’
 
"গায়ের জোর নেই বলে রিকশা টানতে পারি না তার বদলে কলম টানি কলমের ওপর টান আমার এইটুকুই" একটু পেয়ারা সন্দেশ কিংবা রাবড়ি খাওয়ার জেদেই কলম ধরলেও কথা বলে তাঁর কালি সেই কলমের নিপ হাস্যরস আঁকে যার ছোয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনরা তাঁর লেখা কালজয়ী মানতে নারাজ খোদ তিনি বরং তিনি ছোট লেখক ছোটরা তাঁর লেখা পড়বে , এই ছিল তাঁর বাসনা 
 
শেষ বয়সে এসে বুঝতেন শরীরটা ভাল যাচ্ছে না | বলতেন "জিনিসপত্র সব বাঁধা হয়ে গেছে এবার একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব" হঠাৎ একদিন প্রবল জ্বরে দুর্বল হয়ে বাথরুমেই সংজ্ঞা হারান তিনি সারারাত পড়ে ছিলেন সেখানেই পরদিন জানাজানি হলে তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে
 
১৯৮০ সালের ২৮ আগস্ট সকাল হাসপাতালের বেডে আচ্ছন্ন বাড়ি থেকে পালিয়ে নায়ক
 
ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘শিবরামবাবু, এখন কেমন লাগছে শরীর?’’
 
‘‘ফার্স্টক্লাস’’
 
জড়ানো গলায় তখনও একই উত্তর 
 
আর তারপর পেয়ে গেলেন ট্যাক্সি | চলেই গেলেন শিবরাম |
 
জন্মদিবসে বিনম্র প্রণাম | Namaskar
 
সংকলনে অহর্নিশ 
তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 15-12-2022, 11:35 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)