Thread Rating:
  • 38 Vote(s) - 3.24 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL বিজয়ের বিসিএস জয়
#34
উত্তরণ সিরিজ

বিজয়ের বিসিএস জয়
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা 

১৪ই অগ্রহায়ণ, মঙ্গলবার
দ্বিতীয়াংশ

সাইকেলটা নিয়ে ঝটপট বাড়ী হইতে বাহির হইয়া পাড়ার মোড়ে পৌঁছিয়া গিয়াছি এমন সময়, "আরে সূর্য্য যে আজ পশ্চিমে উঠিয়াছে জানিতাম না তো! এত সকাল সকাল নবাব সাহেব ঘুম থেকে উঠে সাইকেলে হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন বুঝি!" মুখ ঘুরাইয়া দেখি, হাতে একটী ফাইল সাথে মুখে কৌতূকের হাসি লইয়া চকোত্তিদের বাসার মেয়ে চন্দ্রানী দাঁড়াইয়া আছে। এই মেয়েটা! এর কোন কাজ নাই, শুধু আমার পিছনে লাগা! সাতসকালেই ম্যুডটা খচিয়া গেল। "শোন বুঁচি ফালতু বকিস না। আমি হাওয়া খাইব নাকি হাওড়া যাইব সেটা আমার ব্যাপার। আর তুই এত সকালে মোড়ে কিজন্য আসিয়াছিস?" চন্দ্রানী ধমক দিয়া বলিল, "তোমায় না কত্তোবার বলিয়াছি বিজুদা অমন রাস্তাঘাটে আমায় বুঁচি বলে ডাকিবে না! আমি মোটেও বুঁচি নই, আমার নাম চন্দ্রানী, চন্দ্রানী চক্রবর্ত্তী।" আমি মুখ বেঁকাইয়া বলিলাম, "তাহা হইলে চাঁদু বলিয়া ডাকি।" চন্দ্রানী কাঁদকাঁদ মুখে, "খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু বিজুদা! কেন এমন সব যাচ্ছেতাই নামে ডাক আমাকে।" আমি বলিলাম, "বেশ করি! এত সকালে মোড়ে কী রাজকার্য্য উদ্ধার করিতে আসিয়াছিলি শুনি? ইশকুল নাই? সকাল সকাল দু-দণ্ড পড়িলেও তো কাজে দিত।" চন্দ্রানী মুখ ভেঙ্গাইয়া কহিল, "আহা! চালুনি ডাকিয়া কহে সূঁচ তোর পিছে ছ‍্যাঁদা! আমাকে পড়ার কথা বলতে কী এমন বিদ্যেসাগর এয়েছেন আমার! আর ইশকুল কীসের গো! আমি কি এখনও ইশকুলে পড়ি নাকি!" আমি অবাক হইয়া বলিলাম, "ইশকুলে পড়িস না আর মানে? ইশকুল ছাড়িয়া দিয়াছিস নাকি? বাড়ীর কারণে? নিশ্চয়ই ওই টেকোচাঁদ তোকে পড়াতে চায় না? বিয়ে দেবে! দাঁড়া আজকেই ওই চকোত্তি শালার টাকে যদি না ফুটো করে দিই!" চন্দ্রানী গর্জিয়া উঠিল, "খবরদার! আমার বাবাকে টেকোচাঁদ বলবে তো তোমার একদিন কি আমার একদিন! আমার বাবা মোটেও অমন না। আর, ইশকুলে তো কেউ সারা জীবন পড়িবে না, কাউকে কাউকে ইশকুল শেষে কলেজেও যাইতে হয়! খোঁজ খবর কিছুই তো রাখো না, আমার থার্ড সেমিস্টার শেষ হইতে চলিল বলে! তা, তুমি কোথায় চলিলে একদম ব্যস্তম্যস্ত হয়ে সাতসকালে?" আমি বিরসবদনে বলিলাম, "গজেনের দোকানে! কিছু হাট আনিতে হইবে, আর তারপর একটু সুনীলের রেশন দোকান যাইব!"
চন্দ্রানী আকাশ হইতে পড়িল যেন, "তুমি আর গজেনের দোকান! রেশন আনিবে! বিজুদা তুমি ঠিক আছো তো? কোন রাত্তিরে খাওয়া দাওয়ার গোলমাল বা মাথায় কোন জোরে আঘাত লাগা এরম কিছু হইয়াছে কি?" আমি এইবার বেশ বিরক্ত হইয়া গেলাম, "কেন আমি এসব কাজ করিতে পারি না?" চন্দ্রানী ফাইলটা বুকে চেপে খিলখিল করে হাসিতে হাসিতে বলিল, "না পার না! তুমি বেলা নয়টা অব্দি নাক ডাকাইয়া ঘুমাইতে পার, তোমার মা বাবার সহিত পায়ে পা তুলিয়া বাড়ী মাথায় করিয়া ঝগড়া করিতে পার, মদ খাইয়া আমার বাড়ির সামনে আসিয়া আমার বাবাকে, 'ওরে টেকু! আয় তোর টাকে হাত বুলাইয়া দিই' বলিয়া বাওয়াল করিতে পার এমনকী আমাদের ইশকুলের পুরোনো হেডমাস্টারের সামনে গিয়া ফস করিয়া বিড়ি ধরাইয়া, 'আহা!মাস্টারমশাই কী শিক্ষা দিয়াছেন!' বলিয়া মুখ ভেঙ্গাইয়া দিতে পার কিন্তু হাট আনা রেশন আনা সাতসকালে ঘুম থেকে উঠিয়া যাওয়া এইসবের কোনটাই পার না!"
আমি রাগিয়া গেলাম, "মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করিস নে তো! বিস্তর বেলা হইয়া গেল, আমি চললুম" বলিয়া সাইকেলে চাপিতে যাইব চন্দ্রানী আবার বাধা দিল, "আরে দাঁড়াও! যাইবেই তো! বলছিলাম কি, আজ সন্ধ্যায় আমার বাসায় একটু আসতে হইবে! সেজেগুজে এসো কিন্তু!" আমি বিস্ময়ের সুরে বলিলাম, "তোর বাসায়! তোর মাথা খারাপ হইয়াছে! টেকোচাঁদ আর তোর ওই মোটা হাতি আমারে নিজেদের বাসায় দেখলে এমন কেত্তন শুরু করিবে না যে তার সামনে খোল কত্তাল ফেল মারিয়া যাইবে। খামোখা সুস্থ শরীর ব্যস্ত করিব কেন রে?"
চন্দ্রানী হাসিয়া বলিল, "কিস্যু বলিবে না! আর শেষবার বলছি বিজুদা আমার মাকে মোটা হাতি বলিবে না, আমার মা মোটেও হাতি নয়!" আমি বলিলাম, "তবে কি হিপোপটেমাস বলিব?" চন্দ্রানী কহিল, "না! কোনটাই বলিবে না। এত বলার বাতিক কেন? চুপচাপ চলিয়া আসিবে বুঝেছো?" অগত্যা, "ঠিক আছে" বলিয়া প্যাডেলে চাপ দিলাম, একবার ঘাড় ঘুরাইয়া দেখিলাম, চন্দ্রানী যায় নাই, তখনও ফাইল হাতে আমার হাসিমুখে আমার যাত্রাপথের দিকে চাহিয়া আছে! জীবনে প্রথমবার মনে হইল, চন্দ্রানীকে কেন যেন একটু অন্যরকম লাগিতেছে, ঠিক যেন ভোরবেলায় শিশির বিন্দু গায়ে ঝরে পড়া একটা শিউলি ফুল! হাসিটা! ওর মুখের ওই হাসিটা ভীষণ, ভীষণ সুন্দর লাগিল! পরমুহূর্তেই মাথা নাড়া দিলুম, " কীসব ভাবিতেছি! বুঁচি কোথাকার!"


(ক্রমশঃ)


বিঃ দ্রঃ আজ বহু চেষ্টা করিয়াও দ্রুত ছুটি পাইলাম না। সেইহেতু বাসায় ফিরিয়া পাণ্ডুলিপি ধরিয়া অক্ষর বিন্যাস বা টাইপ করিতে করিতে বিস্তর সময় লাগিয়া গেল, তাহার পরেও ইহার বেশী টাইপ করিতে পারিলাম না। অবশিষ্ট অংশটী আশা করি আগামীকল্য প্রকাশ করিয়া দিতে পারিব। পাণ্ডুলিপিতে লেখায় আছে শুধু টাইপ করিতে যা দেরী, বাঙ্গালা টাইপিং তেমন দ্রুত গতির নহে তাই মার্জ্জনা চাহিতেছি। শেষের ফিনিশিং টাচ ও আর দিবার সময় পাই নাই তাই পুনরায় ক্ষমা চাহিতেছি।
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: উত্তরণ (বিজয়ের বিসিএস জয় ।। নূতন আপডেট) । একটী মহাবীর্য্য সৃষ্টি - by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা - 14-12-2022, 10:17 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)