13-12-2022, 10:26 AM
মণি দাদু
স্টেশন যখন গাড়িটা থামল তখন রাত একটা হবে. একটা বুড়ো লোককে দেখলাম স্টেশন এক ধরে দাড়িয়ে ছিল. আমাদের নামতে দেখে আমাদের কাছে এল. বাবা লোকটাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল -“রবি কাকু!”. বুড়োটা ঢুকতে ঢুকতে এলো আর বলল – “সুনীল বাবা তাড়াতড়ি চলো” এবং সূটকেসট হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল. আমরা ওর পিছন পিছন যেতে লাগলাম.
বাবা বলল – “ট্রেন অনেক দেরি করেছে আজ!”.
রবি বলল-“সবসময় করে” এবং মার বুকে বোনকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল – “খুকি ঘুমাচ্ছে!”.
মা মুচকি হেসে বলল-“ভাগ্যিস ঘুমাচ্ছে…জেগে থাকলে কেঁদে কেঁদে মাথা খারাপ করে দেয়..”.আমরা ঘোড়ার গাড়িতে চেপে টগবগ করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম.গাড়ির ঝাকুনিতে বোনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং কাঁদতে লাগল. বাবা – “অফ….আবার জেগে গেছে…ওকে থামাও বনানী”.আমি বললাম-‘আমি কোলে নি”. মা মুচকি হেসে বলল “না সোনা…এই গাড়ির ঝাকুনিতে তোমার হাত থেকে পরে যাবে. “মা বোনের কান্না থামানোর চেস্টা করল কিন্তু বোন কেঁদেই চলল. শেষে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-“বুবাই…তুমি একটু ওদিকে তাকাও…তোমার বোনকে একটু দুধ খাওয়াব….”.আমি বিরক্ত হয়ে মুখটা ওদিকে করলাম. মা ব্লাউসটা কিছুটা খুলে নিজের ডানদিকের দূদুটা বেড় করল এবং বোনকে দুধ খাওয়াতে লাগল.
কিছুক্ষনের মধ্যে ঘোড়ার গাড়িটা একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো. দেখে মনে হল এক পুরনো আমলের রাজবাড়ী. বাঙালী দালান…এক পুরনো জমিদার বাড়ির ছাপ রয়েছে.রবি-“সুনীল বাবু আমরা এসে গেছি…”.মা বাড়ির চারপাসে অন্ধকার দেখে জিজ্ঞেস করল-“এই বাড়িতে কেয়ু থাকে কী…এতো অন্ধকার”.রবি-“কে থাকবে…সুনীল বাবু আপনি তো সব জানেনি….মাধব বাবু…অর্থাৎ আপনার পিতা কোনদিনও এই বাড়িতে থাকেনি…যারা থাকে হচ্ছে মণি বাবু…আমি..কান্তা ওর কান্তার মা..”.মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-“কান্তা..”…রবি বলল-“কান্তা আমার মেয়ে”… বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগল …”কান্তা ও কান্তার মা … দেখো কে এসেছে ….”. একজন মধ্য বয়স্ক মহিলো আরেকজন ১৮-১৯ বছরের মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো. আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করল-“কে এরা”.রবি-“অরে চিনতে পারছও না … সুনীল বাবুও তার বৌ ছেলে মেয়েকে নিয়ে এখানে থাকতে এসেছে …”কান্তা বলল — “আরে মাধব বাবর ছেলে সুনীল…মণি বাবু দেখলে খুব খূশি হবে…”.মা আবার বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল – “আচ্ছা মণি বাবুটা কে”.
বাবা বলল – “চলো ভেতরে গিয়ে সব বলছি”. আমরা মালপত্র নিয়ে একটা ঘরে উঠলাম. ঘর নয়, হলঘর. আমাদের বিছানা বানাছিল. আমি শুয়ে পড়লাম.আমার পাশে কাঁথায় বোন শুয়ে ছিল.মা ম্যাক্সী পরে চুল আছরাতে আছরাতে বলল – “মণি বাবুটা কে বললে না তো?”
বাবা – “হা মণি বাবু হচ্ছে …তোমার শশুরের দাদা”.
মা – “কোনো দিনও তো ওর কথা আমায় জানাওনি…”.
বাবা বলল – “আমার দাদু নাকি মণিবাবুর মাকে **** করেছিল… এবং তার প্রথম ছেলেকে খুন করেছিল..”.মা মুখ ঘুরিয়ে বলল-“মানে”…
বাবা – “মানে…যা তুমি বুঝবে….তারপর নাকি দাদু ওখান থেকে পালিয়ে শহরে চলে যায় নিজের বৌকে নিয়ে…তারপর আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই…এই পরিবারের সাথে”.
মা -“আর এখন…তুমি নির্লজ্জের মতো এই বাড়িতে থাকতে এসেছো…”.
বাবা – “না হলে কে থাকবে…আমি তো একমাত্র বংশধর এই বাড়ির….”.
মা – “মণিবাবুর কোন ছেলে মেয়ে নেই”.
বাবা – “বাবার মুখে শুনেছি…মণি বাবু খুব হিংস্র…এক প্রকারের উন্মাদ বলতে পার”.
মা – “এই রবি কাকুর পরিবার ওনার দেখাশোনা করে”.
বাবা -“হুঁ….”
পরের দিন বেলায় উঠে পুরো বাড়িটার আসে পাসে ঘুরলাম. বাড়িখানার আসে পাশে বাগান আর পিছনে একটা পুকুর. বাড়ির নীচে দুচারটে ঘর দেখে মনে হল একসময় এখানে প্রচুর লোকজন আসত …. গান বাজনা হত. ঘুরতে ঘুরতে একটা গুদাম ঘরে গেলাম সেখানে অনেক আঁকা ছবি. সবকটা ছবি প্রায় এক মহিলারই ছবি. মহিলাটা দেখে মনে হল কোনো কবির কল্পনা. টানা চোখ, গোলাপী ঠোট . একটা ছবিতে দেখলাম একটা বাচ্চা ছেলের সাথে বসে আছে ওই মহিলাটা.
হঠাৎ বাবার গলার আওয়াজ পেলাম. আমাকে ডাকছে. বাবার কাছে যেতে বাবা বলল-“চল মণি দাদুর সাথে দেখা করে আসি”. রবি আমাদের কে ছাদের ঘরে নিয়ে গেলো. সেই ঘরে তালা লাগানো ছিল.তালা খুলতে খুলতে রবি বলল-“বুঝতেই পারছেন পাগলামোর জন্য সর্বদা ঘর বন্ধ রাখতে হয়” ঘরের দরজা খুলতে দেখলাম ঘরটা অন্ধকার…ঘরের সব জানলা বন্ধ…এবং ওই অন্ধকারের ভেতর থেকে একপুরুস মানুষের গোঙ্গাণির আওয়াজ আসছে..রবি কাকু ঘরের ভেতরে ঢুকল এবং গিয়ে জানলাটা খুলল. দেখলাম একটা খাটের ডাঁসায় চেন দিয়ে বেধে রাখা রয়েছে এক বয়স্ক লোককে….পালোয়ানের মতো চেহারা লোকটির. রবি কাকুর দিকে তাকিয়ে বলল – “তুমি কাকে আমার ঘরে ঢুকিয়েছ….”.
রবি- “বাবু এদের চিনতে পারছেন না…এ হচ্ছে মাধব বাবুর ছেলে সুনীল বাবুআর উনি হচ্ছে ওনার স্ত্রী” আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল-“আর এ হচ্ছে ওনার ছেলে….একটা মিস্টি মেয়েও আচ্ছে এদের”.
বাবা গিয়ে প্রণাম করল কিন্তু মণি দাদুর চোখ সর্বদা মার দিকে ছিল. মা গিয়ে যখন প্রণাম করল…মার চুলের উপর হাত বোলাতে বোলাতে মার গাল খানা চেপে ধরলো.
মণি – “তোমার নাম কী”.
মা মণিবাবুর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলল – “বনানী”. মার মুখ চোখ লাল ছিল…এবং সে তখনাত ঘর থেকে চলে গেলো.বাবা ইঙ্গিত করে বোঝালো প্রণাম করতে. আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম. আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল – “নাম কী”. লোকটার চোখের তাকানোর থেকে কথা বলা পর্যন্তও নোংরা নোংরা লাগছিল.
আমি বললাম-“আদিত্য”.
মণি-“বয়েস কত”.
আমি বললাম -“দস”.
মণি দাদু বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল – “কখন এলে তোমরা”.
বাবা – “এই কাল রাত্রে … আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন বলে ডিস্টার্ব করিনি”.
বিকলে মা বাবাকে বলতে শুনলাম – “তোমার মণি কাকুর তাকানো …ভাব ভঙ্গি খুব নোংরা”.
বাবা – “আমার বসের থেকে ভালো … যে ভাবে তোমার পিছনে পড়েছিল … চাকরীটা ছাড়তে হল …. আর এখন কোনো উপায় নেই … এখানেই থাকতে হবে … মণি কাকু হচ্ছে ট্যাকসাল …. আগে এই সম্পাতি ওর হাত থেকে লিখিয়ে নিতে হবে … তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে…”.
মা বলল – “কিন্তু এরকম আচরণ আমি সহ্য করব না…”
বাবা – ” একটা জিনিস বুঝছ না কেনো … মণিকাকু মেন্টালী রিটার্ডেড … এই সব জিনিস পাত্তা দিতে নেই”. মাথা নেড়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল.
রাত্রে শোবার জন্য আমাকে একটা আলাদা ঘর দেওয়া হল. শহরে আমি আলাদা শুতাম. ঘরটা সুন্দর হলেও খুব সুন্দর ছিল. একটা জানলা দিয়ে বাড়ির পিছনের পুকুরটা দেখা যেত. কিন্তু এই সুন্দর ঘরটা নিস্তব্ধতায় ভূতুরে ভূতুরে লাগছিল.
হঠাৎ মনে হল একটা সাদা ছায়া ঘরের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে চলে গেলো. দেখে আমার বুক কেঁপে উঠল. মনে হল ছায়াটা ক্রমস আমার কাছে এগিয়ে আসছে. তারপর যা দেখলাম তাতে গলা শুকিয়ে গেলো. সকালে গুদাম ঘরে যে ছেলেটার ছবি দেখেছিলাম সেই ছেলেটা আমার সামনে দাড়িয়ে আচ্ছে.
আমি ভয় পেয়ে আস্তে করে বলে উঠলাম – “কে তুমি?”.