Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20221202-172311778.jpg]

(৮)

সব শব্দ ঘুমিয়ে পড়ার পর, নিঃশব্দরা ঘুমন্ত ঘুমে জেগে ওঠে! এই অমোঘ নিঃসঙ্গ নিঃশব্দ শিশির ভেজা চোখের পাতায় ভীষণভাবে অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে, যখন প্রেম এসে তাকে এক সমুদ্র ছোঁয়া দিয়ে যায়! হিয়া তার প্রেমকে অহর্নিশ এভাবেই চলতে দেখতে চায়। এই প্রেম তার জীবনধর্মী চেতনায় প্রাণিত শক্তি সঞ্চার করে। কিছু একটা পুড়ে ছাই হবার পর সেখান থেকেই জন্ম নেয় নতুন ভালোবাসা। যা কিনা তাকে নিয়ে সমস্ত সময় আদ্যোপান্ত ভাবে খেলা করে। জীবনবোধের গোপন সূত্রই হলো প্রেম। এই বোধই কোনো কিছু সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে। এরই প্রত্যন্তে ডুবে যায় অপ্রমেয় ভালোবাসা, যাকে হিয়া অতি নিজের সবকিছু উজাড় করে ভালোবাসে।

"কি গো .. কি করছো এখন? আমার অ্যালারামের ঘড়ি .. তোমার দায়িত্ব ছিলো না আমার ঘুম ভাঙানোর? ফোন করোনি কেনো? খুব রাগ করেছি কিন্তু আমি .." গোগোলের মোবাইলে ফোন করে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো বললো হিয়া।

"সরি সরি এক্সট্রিমলি সরি .. কাল হঠাৎ করেই একটা কাজ এসে পড়েছিল, সেটা মিটিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেকটাই রাত হয়ে গিয়েছিল, তাই আজ সকালে উঠতে একটু .. আমি তোমাকে ফোন করতেই যাচ্ছিলাম .. তার আগেই তুমি করে দিলে .." হিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার ভঙ্গিতে উত্তর করলো গোগোল।

"ওসব আমি কিছু জানি না .. আমি এখন ভীষণ রেগে আছি। অন্যায় করেছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে .. এখন আমার একটা, দুটো, তিনটে .. না না, লটস এন্ড লটস এন্ড লটস অফ হামি চাই .. তারপর ওখানে গিয়ে বাকিটা দেখে নিচ্ছি। চলো চলো শুরু হয়ে যাও .." আদুরে গলায় বললো হিয়া।

হিয়াকে ওভার ফোন তার দাবি মতো উপর্যুপরি চুম্বন প্রদান করার পর গোগোল জিজ্ঞাসা করলো "অ্যালারামটা আবার কি গো? আমার নতুন নামকরণ নাকি?"

"আরে বকুরাম .. ওটা অ্যালার্ম ..  অ্যালার্ম ক্লক .. আমি আদর করে অ্যালারাম বলেছি .. কিচ্ছু বোঝেনা লাটসাহেব .. এই মানুষটাকে নিয়ে যে আমি কি করি!!" খিলখিল করে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো হিয়া।

"আচ্ছা বুঝলাম .. ঠিক আছে শোনো না, এখন রাখছি। একটু কাজ আছে, বেরোতে হবে। বিকেলের দিকে তো দেখা হচ্ছেই .. তখন কথা হবে। লাভ ইউ .. বাই .." এই বলে গোগোল ফোনটা রেখে দেওয়ার আগে "ধুর ভাল্লাগেনা .. একটা আনরোমান্টিক খারুস লোক আমার কপালে জুটেছে।" হিয়ার মুখে এইরূপ দুষ্টু-মিষ্টি ভর্ৎসনা সহ্য করতে হলো তাকে।

★★★★

লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা শুধুমাত্র তোমার জন্য .. তোমাকে ভালোবাসি বলে। প্রথম দেখায় য‌দি কা‌ছে পাওয়া যায়, তাহলে আমি তো সবসময় তোমার কাছেই রয়েছি। কাছে থাকতে গেলে বুঝি শারীরিকভাবে থাকতে হয়? মনটাই তো আসল। তোমার সু‌মিষ্ট হা‌সি মাখা ঠোঁট, অপলক চাহনি। ভালো না বেসে কি থাকা যায়! আমার স্বপ্নগুলো বারবার আটকে যায় তোমার রঙিন স্বপ্নের চিলেকোঠায়। মন খারাপের বাতায়নে জানলা খোলা রেখো, পালিয়ে যাবার ইচ্ছে হলেই আমায় কাছে ডেকো। তোমার জন্য এক ফালি চাঁদ .. জ্যোৎস্নামাখা রাত, তোমার জন্য একগুচ্ছ গোলাপ .. হলুদ কিংবা লাল। তুমিই তো আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী। তেষ্টা পেলে প্রেমের জোয়ার আনবে ডেকে এই শুষ্ক বুকে। তুমিই তো প্রেমের ফুল ফোটাবে পাথর শিলায়, মিষ্টি প্রেমের রঙ ছড়াবে শিরায় শিরায়। তোমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দেবো সব বাধা, তোমার চোখে চোখ রেখে ভুলে যাই সব ব্যথা। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুচে যায় অস্থিরতা, তোমার প্রাণে প্রাণ কাটিয়ে দেবো বাকি জীবনটা।

"গুরু .. ওরা এসে গেছে। সেদিনকার মত আজকেও  ওই মেমসাহেব এসেছে ওর বাবার সঙ্গে। আজ কিন্তু বস্তিতে তোমার মামণি, মানে আমাদের সুজাতা দিদি আছে। খণ্ডযুদ্ধ না বেঁধে যায় .. তুমি শিগগিরই চলো।" রূপকথার রঙিন কল্পনার জগতে গোগোলের অবাধ পদচারণায় বাধাসৃষ্টি করলো কাঞ্চনের এই উক্তি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলপাড়ের ক্লাবের সামনে উপস্থিত হলো গোগোল .. তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। সে মনে মনে ভাবছিলো এখনো তার মামণির গলার আওয়াজ পাচ্ছে না কেনো সে! কিন্তু ওখানে পৌঁছে যা দেখলো, তাতে নিজের দুই চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো গোগোলের। সে স্পষ্ট দেখতে পেলো রনিতা দিদি তার মামণির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। অতঃপর সুজাতা আর থুতনি ধরে আদর করে বললো "ঠিক আছে হয়েছে হয়েছে .. সুখে থাকো মেয়ে, ভালো থাকো। যাক দেখে ভালো লাগছে তোমার বাপের মতো কু'শিক্ষা পাওনি তুমি।"

সুজাতার মুখে এইরূপ উক্তি শুনে শশব্যস্ত হয়ে কামরাজ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে রনিতা বলে উঠলো "ওসব পুরনো কথা ছাড়ুন তো। আমি কিন্তু আজ বস্তির ব্যাপারে কথা বলতে আসিনি, এখানকার লোকজনদের ধমকাতে চমকাতেও আসিনি। আমি এসেছি সম্পূর্ণ একটা অন্য কারণে। এই বস্তিটা আমার বাবার পছন্দ সেটা উনি ছলে-বলে-কৌশলে হস্তগত ঠিকই করবেন .. ওই ব্যাপার নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না। কিন্তু এখানে এসে আমার যে আরো একটা জিনিস খুব পছন্দ হয়ে গেছে! সেই জন্যই তো আপনাকে প্রণাম করলাম, আপনার আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। শুভ কাজে এগোনোর আগে বড়দের আশীর্বাদের দরকার হয়।"

"তোমার প্রথম কথার উত্তরে বলি .. বস্তিবাসীদের ধমকানো চমকানো তো দূরের কথা, এখানকার আবাসিকদের উপর চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ আমি গেলে দেবো, তার জন্য আমার ছেলের এখানে আসার দরকার পড়বে না। তোমার বাবাকে বলো তিনি যত পারেন ছল করে যান, বল প্রয়োগ করুন, একের পর এক কৌশল করতে থাকুন .. কিন্তু এই বস্তি তার দখলে কোনোদিনও আসবে না। তবে তোমার দ্বিতীয় কথার মাধামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না .. এখানে আর কি পছন্দ হয়েছে তোমার? কিসের জন্য আশীর্বাদের কথা বলছো?" দৃঢ় কন্ঠে কথাগুলো বললো সুজাতা।

"দেখুন .. আমি জানিনা কথাটা কিভাবে বলবো। ইনফ্যাক্ট কথাটা বলতেই আমার ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। আমাদের মতো এরকম একটা উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির সঙ্গে রেলপাড়ের বস্তি নিবাসী একটা সাব-স্ট্যান্ডার্ড পরিবারের যে বৈবাহিক সম্পর্ক হতে পারে এটাই আমার স্বপ্নের অতীত। কিন্তু কিছু করার নেই .. আমার মেয়ের জেদের সামনে শেষমেষ হার মানতে হলো আমাকে। অ্যাকচুয়ালি আমার মেয়ের অনিতা অনির্বাণ মানে আপনার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছে .. ওকে বিয়ে করতে চায়। সেই প্রপোজালটা দিতেই আজ আমাদের এখানে আসা। কি সকাল সকাল লটারি লেগে গেলো তো? হাতে চাঁদ পাওয়ার মত একটা খবর আপনাকে দিলাম, তাই না? ঠিক আছে তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বিয়ের দিনটা আজকেই পাকা করে ফেলতে হবে। আর হ্যাঁ এরপরে আমার আর কোনো জোর জবরদস্তি করার দরকার হবে না। এই খবরটা শোনার পর আপনার ছেলে নিজে থেকে এই বস্তিটা তুলে দেবে আমার হাতে। কি তাই তো?" কামরাজের মুখে কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে বাবা আর মেয়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো সুজাতা। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে সুবীরের দিকে তাকিয়ে বললো "ওকে ডাক .."

সুজাতার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার পাশে এসে দাঁড়ালো গোগোল। এরপর কামরাজ আর তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে অথচ খুব স্বাভাবিকভাবে বললো "আচ্ছা আপনারা কি পাগল, নাকি এটা আবার নতুন কোনো চাল? আপনাদের কি করে মনে হলো যে এইরকম একটা অবান্তর এবং অদ্ভুত প্রস্তাবে আমার মা বা আমি রাজি হবো?"

"এইভাবে বলছ কেনো সোনা? আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কিছুতেই তোমার থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পারিনি। আর যদি তোমার কথা ধরি .. তাহলে এটা তো তোমার কাছে একটা গোল্ডেন অপরচুনিটি হওয়া উচিত। একসঙ্গে এরকম একজন সুন্দরী রাজকন্যা এবং তার সঙ্গে রাজ্য .. স্বপ্নেও ভেবেছিলে কোনোদিন এই দুটো একসঙ্গে পাবে?" গোগোলের আরো কাছে এগিয়ে এসে তার দুটো হাত ধরে কথাগুলো বললো রনিতা।

ততক্ষণে রেলপাড়ের বস্তির প্রায় অনেকেই উপস্থিত হয়েছে সেখানে। কালু থেকে শুরু করে রাজু, কাঞ্চন থেকে শুরু করে সুবীর, নমিতা মাসি থেকে শুরু করে পঙ্কজ কাকু .. সবার দৃষ্টি সুজাতা আর গোগোলের দিকে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো গোগোল আর তার মামণির। হঠাৎ করেই সৃষ্টি হওয়া এইরকম পরিস্থিতিতে তারা কি বলবে বা করবে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

গোগোলকে চুপ করে থাকতে দেখে, রনিতা আবার বলে উঠলো "বলো অনির্বাণ .. স্পিক আউট আমার মতো এরকম একজন রাজকন্যা আর রাজ্য দুটো এক সঙ্গে পাবে কোনোদিন ভেবেছিলে?"

"উঁহু উঁহু .. জীবনেও ভাবেনি .. কল্পনাতেও আনেনি কোনোদিন এইরকম ভাবনা .. এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। কি করে ভাববে বলুন মেমসাহেব .. একজন বয়সে বড় তার ওপর আবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মহিলাকে বিয়ে করার স্বপ্ন কেউ দেখে?" রনিতার হাতদুটো গোগোলের হাত থেকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে উক্তি করলো হিয়া।

হঠাৎ করেই ওখানে হিয়ার আগমনে জড়ভরতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ওখানকার সকলের মধ্যেই যেন পুনরায় প্রাণ সঞ্চার হলো .. বিশেষ করে গোগোলের। তৎক্ষণাৎ রনিতার থেকে তফাতে গিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এসে দাঁড়ালো গোগোল।

"এই তুমি আগের দিনেও এসেছিলে না? কি প্রবলেম তোমার? ঠিক করে কথা বলো আমার সঙ্গে .. তা না হলে .." ঝাঁঝিয়ে ওঠে কথাগুলো বললো রনিতা।

"শুধু আগের দিন কেনো .. যতবার আপনি এখানে বেহায়াপনা করতে আসবেন ততবার আমি এসে হাজির হবো। ঢলানি মেয়েমানুষ কোথাকার .. আগেরদিন এত অপমান করলাম, তাও শিক্ষা হয়নি দেখছি। আমি তো শুনেছি আপনি একটা ডিফেক্টিভ মাল .. তাই বর এসে বাপের বাড়ি বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার ওপর এটাও শুনেছি আপনার চরিত্রের ঠিক নেই .. অল্পবয়সী হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ছুকছুক করে ওঠে ভেতরটা, তাই না? কিন্তু এখানে ওইসব সুবিধা হবে না বাপু। আপনার মতো এরকম ডিফেক্টিভ, ডিভোর্সি, বয়স্ক মেয়েকে কেন বিয়ে করবে আমার গোগোল দাদা? তাছাড়া একটা কথা কান খুলে শুনে নিন আপনারা দু'জনেই। যাকে এতক্ষণ ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন তাকে আমি ভালোবাসি এবং খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। তাই দ্বিতীয় দিন এই ধরনের কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।" গর্জে উঠলো হিয়া।

হিয়ার কথায় ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে রনিতা বললো "এই অপমান আমি আর সহ্য করতে পারছি না .. প্লিজ ডু সামথিং ড্যাডি .. হয় আজকে এখান থেকে তুমি পজিটিভ আনসার নিয়ে যাবে, আদারওয়াইজ আমার মরা মুখ দেখবে .. এই কথা বলে দিলাম।"

"দেখুন .. আপনাদের সবার কাছে আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি। আমি কিন্তু আজ এখানে কোনো ঝামেলা করতে বা ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমি এসেছিলাম আমার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে। কিন্তু আপনারা সবাই দেখছেন তো .. আমার মেয়েটা কিভাবে অপমানিত হয়ে কাঁদছে। এটাই কি ওর প্রাপ্য ছিলো? এখানে উপস্থিত আপনাদের অনেকের বাড়িতেই তো মেয়ে আছে .. নিজের মেয়েকে একবার আমার মেয়ের জায়গায় বসিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন আমার মনের অবস্থা। আর এই মেয়েটা যে এতক্ষণ ধরে অপমান করলো আমার মেয়েকে .. সে তো গঙ্গানগর পিএসে নতুন জয়েন করা ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর বাগদত্তা। আজ বাদে কাল ওদের বিয়ে হয়ে যাবে। সে এত বড় বড় কথা বলে কি করে? আপনারাই বিচার করুন .. আমি ঠিক না ভুল।" রনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কম্পিত কন্ঠে কথাগুলো বললো কামরাজ।

★★★★

মিনিট পাঁচেক নিস্তব্ধতার পর প্রথম মুখ খুললেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং রেলেপাড়ের বস্তির সবথেকে শিক্ষিত ও বিচক্ষণ ব্যক্তি পঙ্কজ বাবু , "এখানে অনেকেই আছেন যারা সরল প্রকৃতির মানুষ বা অনেক পরে এখানে এসেছেন। তারা হয়তো আপনার এই কুম্ভীরাশ্রু দেখে বা আপনার বক্তব্য শুনে বিপথে চালিত হতে পারেন। তার আগে আমি কয়েকটা কথা বলে নিতে চাই। আমি এখানকার পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে একজন। এখানে সুজাতা যখন একটা ছোট্ট ছেলের হাত ধরে থাকতে এলো, তখন ভেবেছিলাম এটা ওর নিজের সন্তান। তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু শুনলাম, সবকিছু জানলাম ওদের সম্পর্কে। ওদের এখানে যিনি নিয়ে এসেছিলেন .. মিস্টার চক্রবর্তী, যিনি আজ আর এই পৃথিবীতে নেই .. তিনি আমার বিশেষ পরিচিত ছিলেন .. উনার কাছ থেকেই পুরোটা শুনেছি। তারপর তো নিজের চোখেই দেখেছি একজন সামান্যা নারীর অসামান্যা হয়ে ওঠার লড়াই। প্রথমে এক কামরার ঘরে ভাড়া ছিলো ওরা। তারপর আমার বাড়ির পাশে মিত্তিরদের এক চিলতে জমিটা কিনে সেখানে একটা ছোট্ট অথচ সুন্দর একতলা বাড়ি বানালো। ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তুললো। সুজাতা আজ আমাদের এই রেলপাড়ের বস্তির গর্ব আর গোগোল আমাদের ভবিষ্যৎ , আমাদের ভরসা। আমরা মাথায় করে রেখেছি ওদের এই বস্তিতে। একটা কথা কান খুলে শুনে নিন .. আজ যদি আপনার প্রস্তাবে সুজাতা বা তার ছেলে রাজি হতো, তাহলে এই বস্তিতে ওদের স্থান হতো না। সর্বপ্রথম আমিই বিরুদ্ধাচারণ করতাম ওদের। আর আপনি হিয়ার কথা বলছেন? জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ এ তো বিধাতা ঠিক করে রেখেছে আগে থেকেই। সেক্ষেত্রে কে কার বাগদত্তা বা কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে সেটা না হয় ভবিষ্যৎ বলবে। এইটুকুই আমার বলার ছিলো .. আশা করি আমার বক্তব্য আপনাদের সকলকে খুব ভালোভাবে বোঝাতে পেরেছি।"

পঙ্কজ বাবুর কথা শেষ হওয়া মাত্রই দৌড়ে এসে তাকে একটা প্রণাম করলো সুজাতা, তারপর হিয়াকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। "আচ্ছা এই কথাগুলোই তারমানে সমস্ত বস্তিবাসীর কথা হিসেবে ধরে নেবো? নাকি আপনাদের কারোর অন্য কিছু বলার আছে? আপনারা নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারেন।" একটা শেষ চেষ্টা করলো কামরাজ।

"আর কারোর কিছু বলার নেই .. অনেক ফুটেজ খেয়েছেন .. এবার ফুটুন‌ তো এখান থেকে আপনারা দু'জন। ভালো করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন .. এই মুখটা বিক্রি হয় না। আমার মা-বাবার হত্যাকারীদের সঙ্গে আমি কোনোরকম সওদা করতে রাজি নই। তাদের এবং তাদের পরিবারকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি এবং চিরকাল ঘৃণা করে যাবো। নেহাত আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় মামণির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তা না হলে আজকে এই কথাগুলো শোনার পর আপনার লাশ ফেলে দিতাম এখানেই। কোনো মায়ের লাল আমার কিচ্ছু করতে পারতো না। আপনাকে জোর হাত করে অনুরোধ করছি আমার ভেতরের সেই দানবটাকে আর জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন না .. এই মুহূর্তে চলে যান এখান থেকে।" চাপা গলায় গর্জন করে উঠলো গোগোল।

"এত বড় অপমান করলে তো তুমি আজ আমাকে? এর ফল কিন্তু তোমাকে ভোগ করতেই হবে। এটা ফাঁকা আওয়াজ নয় .. ইয়েস আই মিন ইট। আমার মেয়েকে আজ যতটা কষ্ট দিলে তুমি, তার থেকে একশো গুণ কষ্ট ফিরিয়ে দেবো তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে, তার সঙ্গে এই সমগ্র বস্তিবাসীকে। তুমি ভাবতেও পারছো না কোন অজানা বিপদ আসতে চলেছে তোমার সামনে। ছারখার করে দেবো সবকিছু ছারখার করে দেবো।" কথাগুলো বলে নিজের মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো কামরাজ।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে গোগোলের দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রনিতা। সেই দৃষ্টিতে ছিলো না কোনো ক্ষোভ, ছিলো না কোনো বিদ্বেষ .. নীল নয়নার পাপড়িঘেরা সেই দৃষ্টিতে ছিলো কয়েক মুঠো পড়ন্ত ভোর। যার রৌদ্রছোঁয়া দুই চোখের প্ল্যাটফর্ম ঘেঁষে ছিলো হয়তো কোনো নয়নতলী-শহর। আকাশ থেকে ঝড়ে পড়া রৌদ্রের বৃষ্টি বিষম-অঝোর।
[+] 8 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 12-12-2022, 09:05 PM



Users browsing this thread: 63 Guest(s)