Thread Rating:
  • 37 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL বিজয়ের বিসিএস জয়
#8
Rainbow 
উত্তরণ সিরিজ


বিজয়ের বিসিএস জয় 
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা

 

১৪ই অগ্রহায়ণ, মঙ্গলবার


প্রথমাংশ
  
 সূর্যোদয় আমার সমগ্র জীবনে বারকয়েক দেখিয়াছি, প্রতিবারই ঢুলুঢুলু চোখে বিস্তর বিরক্তির সহিত বিছানা ছাড়িয়াছি, ঐ যে বলিয়াছিলাম আমার মন কায়ক্লেশ একেবারে সহ্য করিতে পারে না, রাত্তিরে মধ্যরাত্রি অবধি টিভির পর্দায় চোখ আটকাইয়া সকালে নয়টা অবধি কোলবালিশ চাপিয়া নাক ডাকাইয়া দিই। সকালে ব্রাশ করিতে করিতে মায়ের গঞ্জনা শুনি, বাবার আনন্দবাজার সম্মুখে লহিয়াও নিরানন্দ মুখে গোমড়া বদনে বসিয়া থাকা দেখিতে দেখিতে সুড়ুক সুড়ুক শব্দে চায়ের কাপে চুমুক মারি! 
বাবার সহিত শেষ ভাল ভাবে কবে কথা হইয়াছিল? সেই যেইবার ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ডার্বি হইল বোধহয় সেই দিন। ইস্টবেঙ্গলকে হারাইয়া দুইজনে চিংড়ির মালাইকারি খাইয়াছিলাম, তাহার পূর্ব্বেও আর হয় নাই আর তাহার পরেও আর হয় নাই। আমিও মাথা ঘামাই নাই, বাবাও আগ্রহ রাখে নাই।
চা খাওয়া হইলে বিড়ি লহিয়া প্রাতঃক্রিয়া হেতু বাথরুমে ছুটি! বাহির হইয়া কিছু গলাধঃকরণ করিয়া বাসা হইতে বাহির হইয়া যাই আড্ডা মারিতে, বাটীতে থাকিলে বিস্তর সমস্যা হয়, সারাদিন মায়ের গজগজানি শুনিতে হইবে "অমুকের ছেলে এই করল সেই করল! হেথায় মস্ত চাকুরী পাইল! অমুক ব্যাবসা করিয়া কলকেতায় মস্ত ফ্ল্যাট কিনিয়া লইল! তোর যে কবে কী হইবে!" মাথার ছাতামাথা এক করিয়া দেয় বুড়ি বকে বকে! আর তা না হইলে, "এই দোকান হইতে হাট আনিয়া দাও রে, অমুক মিস্তিরিকে ডাকিয়া দাও রে, জলের কল কাজ করিতেছে না!" সত্য বলিতে এত ঝামেলা আমার পোষায় না বাপু! খামোখা বাবা যখন অবসরের পর ঘরেই আছে তখন সকল কার্য্য তাহাকেই করিতে বল! বয়েস হইয়াছে, ঘরে পড়িয়া সারাদিন রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কী বলিয়াছে, গুলাম আলীর গজল শুনিতে শুনিতে সেই সকল পড়িয়া ফালতু সময় নষ্ট করে! বিস্তর পয়সার খরচ, বই তো আর ফিরি'তে কেহ বিলায় না, রীতিমতো গাঁটের কড়ি খরচা করিয়া কিনিতে হয়, উপরন্তু ঘর বোঝাই! দুইটা আলমারী শুধু বইয়েই ভরা! ষাটে আসিয়া লোকে আস্থা চ্যানেলেই ট্যেম পাস করে তাহাতে খরচের বালাই নাই। ওই পয়সা রাখিয়া দিলে ভবিষ্যতে আমার কাজে আসিবে। নিজের তো বৃদ্ধকাল আসিয়াছে ছেলের তো পুরো সংসার জীবন পড়িয়া আছে সেইটা ভাবিবে না! অহেতুক ফালতু বই-পত্তর কিনিয়া গাদা গাদা টাকার খরচ করিয়া দিবে! আমারে দেখ, পেপার অব্দি ছুঁই না, টিভিতে যখন সকল খবর পাইয়া যাই, অহেতুক পেপারের খরচা! ওই টাকায় এক কিলো মুর্গা মাংস আনিয়া বেশ জ্যুৎ করিয়া খাওন যায়! বেকার ছেলে হইবার আরেকটী ভাল দিক আছে, বিবাহের সমস্যা নাই। খুব শখ উঠিলে দু-পাঁচশ খরচা করিলেই ঘন্টাখানেকের জন্য নারী পাইতে সমস্যা নাই, আর হাতে টাকা না থাকিলে, দরজা বন্ধ করিয়া টিভিতে একটি নীল ছবি চালাইয়া দাও, কাম চরমে উঠিয়া গেলে বাথরুমে গিয়া হাতের কাজ সারিয়া লও একদম যাকে বলে সিম্পিল ব্যাপার আর কী! হে হে! বিদেশী মেয়েগুলো সেই জিনিস! উঃ কেন যে ইংরাজ হইলাম না!

আজ কিন্তু একটু অন্যরকম হইয়া গেল সকল কিছু, গতকাল রাত্তিরে শুইতে যাইবার সময় কী মনে হইল অ্যালার্ম ঘড়িখানি আনিয়া উহাতে ভোর পাঁচটায় দম দিলাম। কেন জানি মনে হইল সকালে উঠিতে হইবে! রাত্তিরে আমার মনে আছে ঠিক দশটার সময় শুইতে গিয়াছিলাম। দম দিবার সময় কেহ যেন মাথার মধ্যে বলিতেছিল, আর্লি ট্যু বেড অ্যাণ্ড আর্লি ট্যু রাইজ! সেই কোন ইশকুলে পড়িবার সময় শুনিয়াছিলাম কে জানিত এই বয়সে আসিয়া সেই দুই লাইন মাথায় স্ট্রাইক মারিবে। 
"যে ব্যাক্তি সূর্য্যের আগে উঠে আর পৃথিবী ঘুমাইতে যাইবার পরে নিদ্রায় যায় তাহাকে কখনও হীন ভাবিও না সে সকল অসাধ্য সাধন করিতে পারে!" কে বলিয়াছিল? বাবা বোধহয়, মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পর! বুড়া কখনও কখনও কিঞ্চিৎ ভাল ভাল কথাও কহে!

রাত্তিরে বড় চমৎকার ঘুমাইয়াছিলাম। কোন স্বপ্ন দেখি নাই, শান্তির ঘুম ঘুমাইয়াছি। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গিল, শরীরখানা বেশ ঝরঝরে লাগিতেছিল। সহসা স্মরণে আসিল অ্যালার্ম বাজে নাই! তবে কী দেরী হইল উঠিতে? ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর, বালিশের তলা হইতে হাতড়াইয়া টর্চ জ্বালাইয়া দেখিলাম ঘড়ির কাঁটা খাঁটি ভোর চারিটার ঘর দেখাইতেছে। দম ভোর পাঁচটায় দিয়া আছে, অর্থাৎ এক ঘন্টা পূর্ব্বেই উঠিয়া গিয়াছি। অন্য সময় হইলে শুইয়া পড়িতাম আজ আর ইচ্ছা হইল না, ভাবিলাম লোকে বলে সূর্যোদয় দেখিতে দারুন লাগে, আজ একবার দেখি! ঝটপট শয্যা ছাড়িয়া ব্রাশ করিয়া লহিলাম, কী মনে হইল নিজ হাতেই রান্নাঘরে গিয়া চা বানাইলাম, চা খাইবামাত্র প্রকৃতি ডাক দিল, প্রাতঃক্রিয়াদি করিয়া আসিয়া দেখিলাম সাড়ে চারিটা বাজিয়া গিয়াছে। আস্তে আস্তে ছাতে উঠিলাম, পুব আকাশ সবে রঙিন হইতেছে, পাখিসকল কিচিরমিচির করা শুরু করিয়া দিয়াছে, এমন দৃশ্য অপূর্ব। কী মনে হইল, করজোড়ে উদিত সূর্য্যের পানে চাহিয়া ছোটবেলায় শেখা মন্ত্রখানি আউড়াইতে লাগিলাম, 

ঔঁ জবাকুসুম, সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ 
খন্তারিং সর্ব পাপঘ্ন প্রণতোহস্মি দিবাকরম্। এহি সূর্য সহস্রাংশু তেজরাশি জগৎপথে অনুকম্পায় মাং ভক্তায় গৃহাং অর্ঘ্যং দিবা করম্। 
এস অর্ঘ্যং কর্ম্মদায়িনী নমঃ ঐং শ্রীং সূর্যায় নমঃ।

বাবার বোধহয় মর্নিং ওয়াকে যাইবার সময় হইয়াছিল। ছাতের কার্নিশে আমাকে বসিয়া দেখিতে থাকিয়া জিজ্ঞেস করিল, "কে রে? কে ওইখানে?" আমি জবাব দিলেম, "বাবা আমি! বিজয়!" বাবা একটু অবাক হইয়া প্রশ্ন করিল, "কী ব্যাপার এত সকালে? ঘুমাস নাই?" উত্তর দিলাম, "ঘুমাইয়াছি ওই সূর্যোদয় দেখিতেছিলাম।" বাবা জবাব শুনিয়া আর কিছু না বলিয়া বাহির হইয়া গেল।

একটু বেলা হইবার পরে ছাত হইতে নামিতেই দেখিলাম হরিপদ আনন্দবাজার দিতে আসিতেছে। আমি ডাকিয়া বলিলাম, "হরিপদ দা, টাইমস আছে?" হরিপদ জবাব দিল "আছে।" আমি বলিলাম, "তাহা হইলে একটা দিয়া যাও আর ইহার পর হইতে সপ্তাহে একটী টাইমস দিয়া যাইবে!" হরিপদ মাথা হেলাইয়া বলিল, "তাহা হইলে রবিবার রবিবার দিয়া যাইব।" বাবা আনন্দবাজার দেখিতে দেখিতে আড়চোখে আমার দিকে বার দুয়েক দেখিল কিছু বলিল না, আমিও চুপচাপ টাইমস খানি বগলে দাবিয়া ভিতরঘরে চলিয়া গেলাম।

বাবার জন্য মা চা বানাইতেছিল, আমিও আমার জন্য কেটলিতে জল দিতে বলিলাম। টাইমসের পাতা উল্টাইতেছি, মাথায় কিছুই ঢুকিতেছে না এত কঠিন ভাষা! তবুও জোর করিয়াই পড়িবার চেষ্টা করিতেছি, একখানি প্রতিবেদন লহিয়া বসিয়াছি, হাতে কলম নিয়া, যেইখানে বুঝিতে পারিব না দাগাইয়া দিব পরে সংসদের লাল কাভারের মোটা যে ডিকশনারী রহিয়াছে উহা দেখিয়া মানেগুলি খাতায় লিখিয়া লইব তাহার পর মুখস্ত করিয়া লইব এই পরিকল্পনা করিয়াছি। দেখা গেল রিডিং পড়িতেই কালঘাম ছুটিয়া যাইতেছে, শব্দের মর্ম্ম বুঝা তো ঢের ঢের দূর। তবুও হাল ছাড়িলাম না। প্রতিবেদনের নব্বই শতাংশ জুড়িয়া কেবল দাগিয়া গেছি। হায় রে! আমার ইংরাজি ভয়াবহ! তবুও দাঁতে দাঁত চাপিয়া প্রতিবেদনখানি শেষ করিয়া আনিয়াছি এমন সময় মা চা লইয়া আসিল। বিস্কুট সহযোগে কাপখানি দিতে দিতে বাবাকে বলিল, "আজ একবার গজেনের দোকান যাইতে হইবে, চিনি ফুরাইয়া গিয়াছে আরও জিনিস কিছু আছে।" বাবার উত্তরের আগেই কেন জানি আমি বলিয়া উঠিলাম, "বাবা থাকুক আমি যাইতেছি!" বাবা পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে গাঁক গাঁক করিয়া বলিল, "না! তোমাকে অত উপকার করিবার দরকার নাই, শেষে ভুলভাল কিছু আনবি তখন আবার সমস্যা। আমাকেই ফের ছুটিতে হইবে।" অন্যসময় হইলে আমি বুড়াকে এমন ব্যাভারের জন্য চেল্লাইয়া দুকথা শুনাইয়া দিতাম! কিন্তু, আজ কেন জানি একটুও রাগ হইল না! শান্তভাবেই বলিলাম, "আরে! ফর্দ্দ থাকিবে তো! ভুল হইবে কেন! তাছাড়া, আমি একটু নিখিলদার বাড়ীতে যাইব, গজেনের দোকান তো ঐ পথেই পড়িবে, আনিয়া দিব।" মা একটু আমতা আমতা করিয়া বলিল, "কিন্তু এত মাল একসাথে?" আমি  বলিলাম, "আরে সাইকেলে যাইব তো! দাও দাও থলিগুলা দাও, আর ফর্দ্দটা লহিয়া আস।" মা বলিল, "এই মাসের রেশনটাও আনিতে হইত, আটা শেষের মুখে।" আমি বলিলাম, "বেশ তো, সুনীলের রেশন দোকান তো? এগারোটার দিকে ভীড় কম থাকে, লাইন দিবার প্রয়োজন থাকিবে না, তখন আনিয়া দিব তুমি রেশনকার্ডটাও সঙ্গে দিয়া দাও একসাথে সব নিয়ে ফিরিব।" বলিয়া আমি ভিতরঘরে তৈয়ার হইতে গেলাম, যাইতে যাইতে শুনিলাম, মা বলিতেছে, "কী ব্যাপার বলো তো, খোকন আজ বড় অন্যরকম ব্যবহার করিতেছে!" বাবার উত্তর পাইলাম, "হুঁ! দুইটা বিষয় হইতে পারে, এক, মাথার ভরে উল্টিয়া পড়িয়া গিয়াছে আর তা না হইলে আমাদের জ্বালাইতে নূতন নাটক শুরু করিয়াছে!"




(ক্রমশঃ)
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: উত্তরণ (বিজয়ের বিসিএস জয় ।। পর্ব্ব ১) । একটী মহাবীর্য্য সৃষ্টি - by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা - 10-12-2022, 02:48 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)