Thread Rating:
  • 37 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL বিজয়ের বিসিএস জয়
#1
Rainbow 
বিজয়ের বিসিএস জয়
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা

উৎসর্গঃ বাঙ্গালার সেই সকল বেকার যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যে, যাহারা এখনও লড়িতেছে দাঁতে দাঁত চাপিয়া, হার না মানিয়া সেই সমস্ত অসীম লড়াইয়ের যোদ্ধাদের প্রতি এই অধম লেখকের সামান্য নিবেদন 

পর্ব্বঃ ১

১৩ই অগ্রহায়ণ, সোমবার

   
ডায়েরি আমি লিখি নে। লিখি নে দুইটী কারণে, প্রথমতঃ, আমার এই নিস্তরঙ্গ জীবনের প্ৰতিটী দিবসই একরঙ্গা, একঘেয়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক কাহিনীতে পড়িয়াছিলাম, আকাশ কখনো পুরাতন হয় না। দুই-একবার গগন পানে চাহিয়া দেখিয়াছি কথাটী মিথ্যা নহে। কিন্তু, আমার এই জীবন আকাশ তো নহে, না তাহার মধ্যে বিশালতা আছে আর না নূতন রঙ। যদি কিছু আছে তো তাহা হইল নিকষ অন্ধকার। ঘোর তমসাচ্ছন্ন সেই অন্ধকার! তাহার না আদি আছে না অন্ত। সুখ দুঃখ নাকি নিরবধি চক্রাকারে আবর্ত্তিত হইতেছে! কই, আমি তো তাহা দেখি না, আমি দেখি শুধুই দুঃখ! সুখ ছিল একদা সত্য কিন্তু যবে হইতে দুঃখ আসিয়াছে, সে আর যায় নাই তাই বোধকরি সুখ ও আর আসে নাই! প্রথম যখন এই অন্ধকার আসিল, তখন এত মাথা ঘামাই নাই, উহা এত ঘনীভূতও তখন হয় নাই কিন্তু আস্তে আস্তে সেই অন্ধকার চাপিয়া বসিল, আষ্টেপৃষ্ঠে আমারে জড়াইয়া ধরিল! দমবন্ধ হইয়া আসিল, হাঁসফাঁস করিতে লাগিলাম, প্রাণপণে তাহার করালগ্রাস হইতে মুক্তির চেষ্টা করিলাম কিন্তু সকলই বৃথা, সে অন্ধকার যেন আমারে গ্রাস করিয়া আমাতেই মিলিয়া গেল। এখন আমি ওই অন্ধকারকেই স্বীকার করিয়া লহিতেছি। আমার এই জনমে এই দুঃখ যাইবে বলিয়া তো মনে হয় না!

দ্বিতীয়তঃ আমার অলসতা! যে কোন কার্য্য করিবার প্রাক্কালেই আমি হাঁফাইয়া যাই! "কাজটা শুরু তো কর! তাহার পরে হাঁফাবি!" মনকে যতই বুঝায় সে বুঝে না উল্টা আমাকেই আমার মন বুঝায়, "যখন হাঁফাইতেই হইবে তখন কার্য্য করিবার আগেই হাঁফায় লই, পরে হাঁফাইলে বিস্তর সময়ের ফালতু খরচ হইবে!" বেশীরভাগ কালে, দেখা গিয়াছে হাঁফানোই হইয়াছে শুধু, কার্য্য আর হয় নাই!

তবুও, আজ লিখিতেছি! এই কারণে নহে যে লিখিতে ইচ্ছা করিতেছে! লিখিতেছি কারণ পরিস্থিতি আমাকে লিখিবার আজ্ঞা দিয়াছে।
আমার বাবা আমাকে বড়ই ভালোবাসে, আমার মা ও। তাহাদের যাহা সাধ্য সেই অনুযায়ী তাঁহারা আমাকে মানুষ করিয়াছে বা বলা ভাল করিবার চেষ্টা করিয়াছে, আমি মানুষ হইতে পারি নাই তাহা আলাদা বিষয়! তাহারা আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করিয়াছে আমি কেলাস্ ফাঁকি দিয়া ডাংগুলি খেলিয়াছি, প্রাইভেটে পড়িতে পাঠাইয়াছে আমি বন্ধুদের সাথে রকে বসিয়া আড্ডা মারিয়াছি। কালেজে লোকে স্নাতক হইতে যায় আমি প্রেম করিতে গিয়াছি, সস্তার হোটেলে লাল নীল সংসারের স্বপ্ন বুনিয়াছি আর তাহার পর যখন সেই প্রেম মুখে লাথি দিয়া পিছনের জানালা গলিয়া পলাইয়া গিয়াছে তখন কাঁদিয়াছি নীরবে আঁধারে বসিয়া। সেই প্রেমের বিরহ ভুলিতে সিগারেট ধরিয়াছি, বিরহ ভুলি নাই তবে নেশা হইয়া গিয়াছে। অর্থাভাবে সেই সিগারেট ছাড়িয়া এখন বিড়ি টানিতে হয় কিন্তু টানিতে ছাড়ি নাই! মাঝে মাঝে পিছন ফিরিয়া নিজের ফেলিয়া আসা পথখানি দেখিলে মনে হয় জগদীশ্বর আমার মস্তকে শুধু গোময়ের হাঁড়ি বসাইয়া দিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, সংসারের যাবতীয় অপদার্থতার শিরোমণিও করিয়াছেন!

তবু আমি বাঁচিয়া আছি! বাঁচিয়া আছি বলা অনুচিৎ হইবে বলা ভাল মরিয়া যাই নাই। বাঁচিয়া থাকা আর মরিয়া না যাওয়ার মধ্যে যোজন তফাৎ আছে। একবার, আমার বন্ধু তারাপদর বাটীতে গিয়াছিলাম, যাইয়া দেখি তাহার পিতামহ চেয়ারে বসিয়া টাইমস্ পড়িতেছে। আমি বেশ অবাক হইয়া তারাপদকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোর দাদু তো ভালই ইংরাজি পড়িতে পারে! তারাপদ হাসিয়া বলিল, তা পারিবে না, আমার ঠাকুরদা সেই আমলের দুবার ম্যাট্রিক ফেল! আমি ফ্যালফ্যাল করিয়া ভাবিলাম আমি কালেজ অব্দি গিয়াও ঠিকঠাক বাংলা রিডিং পড়িতে পারিনে, চারিখানা শব্দ লিখিলে তাহার তিনটাতে বানান ভুল থাকে আর ইহার ঠাকুরদা ম্যাট্রিকে দু-দুবার ফেল করিয়াও ইংরাজি পেপার পড়িতেছে! 
সেই অবধি আমি বুঝিয়াছি, আমি কোন কম্মের নই! আমি হইলাম সেই আগাছা যাহার থাকা না থাকায় সংসারের কিস্যু যায় আসে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি মরিলে, আমার মা বাপ ছাড়া আর কেহ কাঁদিবে না আর তিনদিন, মাত্তর তিনদিন লাগিবে সবার আমাকে ভুলিয়া যাইতে! তবুও, আমার কষ্ট হয় নাই। পকেট হইতে একটা বিড়ি বাহির করিয়া সুখ টান দিয়া সকল মন খারাপ ধুঁয়ার সহিত বিসর্জ্জন দিয়া দিই। 

বাপ- মায়ে আমার নাম রাখিয়াছিল বিজয়, যাহার জন্মাবধি কেবল পরাজয়ে জীবন ভরা, যে কস্মিনকালেও জয় কী বস্তু তাহা জানে নাই তাহার নাম দিয়াছে বিজয়! ইহা তো সেই কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হইল।

কিন্তু, আজ কেন জানি দিনটা বড় অন্য। দিন দুই আগে সময় কাটিতে ছিল না দেখিয়া, বাসার প্রাচীন কাঠের আলমারী খানি খুলিয়া পুরাতন কাগজ পত্তর ঘাঁটিতে ছিলাম। বেশ কয়েকটা খাতা চোখে পড়িল। উহাদের পাতা বিবর্ণ হলুদ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই পাতায় মুক্তার মত ঝকঝকে হাতের লেখায় আমার বাবার বেশ কয়েকটা দিনলিপি লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। আজ দুই দিন ধরিয়া উহাই পড়িতেছিলাম। 

আমার পিতার বিসিএস হইবার বড্ড শখ ছিল কিন্তু হইতে পারে নাই, মেধার অভাব ছিল না, কিন্তু পয়সা কড়ির বিস্তর অভাব ছিল। তাহার পরেও চেষ্টা করিয়াছিল কিন্তু হইতে পারে নাই! আমি যখন জন্মাইয়াছিলাম আমার বাবার বড় ইচ্ছা হইয়াছিল আমি যেন বিসিএস হই! অদ্ভুত লাগিতেছে ভাবিতে যে বাবা আমাকে কোনদিন তাহার এই স্বপ্নের কথা বলে নাই। কেন বলে নাই জানি না, হয়তো ভাবিয়াছিল তাহার সন্তান এক মস্ত লোক হইবে কিন্তু পরে যখন বুঝিল, আমি নিতান্তই গাধা যাহাকে শত পিটিলেও ঘোড়া হইবে না তখন বোধকরি আর নিজের স্বপ্নের কথা বলা সঙ্গত বোধ করে নাই। 

ভাবিতেছি, চুপে চুপে একবার এই গাধা ঘোড়া হইবার চেষ্টা করিলে কেমন হয়। বুড়ো বুড়িকে কষ্ট আর হতাশা ছাড়া কিছুই তো দিলেম না শেষ বয়েসে যদি একটু আনন্দ দিতে পারি! তাই, এই ডায়েরি লেখা, কোন একদিন যদি সত্য সত্যই বাপ মায়ের মনে একবিন্দু খুশী আনিতে পারি তবে, পিছন ফিরিয়া এই দিনগুলি দেখিব ফিরিয়া। এই অন্ধকারকে শেষবার চেষ্টা করি ধ্বংস করার, অপদার্থ হইতে পদার্থ হইবার অন্তিম চেষ্টা করা যাউক।

আগামীকাল প্রভাতেই একবার নিখিলদার বাটীতে যাইব, সে বৎসর খানেক ধরিয়া সরকারী চাকুরীর চেষ্টা করিতেছে, হয়তো এই পথের হদিস তাহা হইতে পাইলেও পাইতে পারি। আজ আর লিখিব না, ঘুম আসিতেছে বড্ড, অনেকদিন পর, আজ বড্ড ঘুমাইতে ইচ্ছা করিতেছে, মন বলিতেছে একখানা নিশ্চিন্তের ঘুম দিতে, এই প্রথম সে আমাকে বাধা দেয় নাই, এই প্রথম সে আমাকে কোন কার্য্য করিবার আজ্ঞা দিয়াছে!
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
বিজয়ের বিসিএস জয় - by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা - 09-12-2022, 08:23 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)