08-12-2022, 09:01 PM
পর্ব- ছয়
বাসায় ফিরে আসার পরও মাধুরী যতবারই চোখ বুজেছে ততোবারই সেই ভয়ংকর রকমের মায়াবী পিত বর্ণের চোখ দুটো ওর সামনে ভেসে উঠেছে। পুরো মুখমন্ডলে শুধু ঐ চোখ জোড়াই তো দেখা যাচ্ছিলো তাতেই এতো আকর্ষণ এতো মায়া তার সাথে ওমন করে অবগাহনের ডাক তার এই ছোট্ট জীবনে আগে কখনো উপলব্ধি করে নি মাধুরী৷ ওর হাতটা ধরে যখন ঐ জলের পাত্রে ডুবিয়ে রেখেছিল তখন ঐ লম্বাচওড়া অদ্ভুত অচেনা মানুষটাকে অনেকটা ঝুঁকতে হয়েছিল ওর সামনে। মনে হয় উচ্চতায় ছয় ফুট ছাড়িয়ে যাবে সে হিসেবে মাধুরীকে ওনার পাশে ছোট্ট খুকির মত লাগছিলো৷ প্রথমেই যখন হাতটা ধরলো তখন তো ওর মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিল এমন অজানা অচেনা একটা মানুষের সাহস হয় কি করে ওর হাত ধরার। তাই মাধুরী চেষ্টা করে এক ঝটকায় হাতটা টেনে নিয়ে দু একটা কথা শুনিয়ে দেবার কিন্তু কিছুর বলার আগেই ঐ আগন্তুক লোকটা ওমন ভাবে ওর দিকে ফিরে তাকালো, যা কিছু বলার জন্য ঠোঁটের ডগা অব্দি এসেছিল সেগুলো সেখানেই আত্মাহুতি দিয়ে দিলো কোন এক সম্মোহনের বশবর্তী হয়ে অবলীলায়। ওমন যন্ত্রণায় আবহে ছলছল চোখ দুটি দেখে মাধুরীর মনে হচ্ছিলো আগুনের ছ্যাঁকা টা ওর হাতে নয় ঐ সামনের অপরিচিত মানুষটার হৃদয়ে লেগেছে। ওমন করে একজনের যন্ত্রণায় অন্য কাউকে কাতর হতে আগে কখনো দেখা হয় নি ওর, তাই হয়তো ঐ অচেনা আগন্তুকের নিরাময়ের পরশেই নিজের যন্ত্রনাটা ভুলে গিয়েছিল।
মাধুরী নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারে এসব অবুঝ চিন্তা ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে দেবার জন্য। কে না কে ঠিকমত চেনেই না তেমন একটা মানুষকে নিয়ে কত কি ভেবে চলেছে। না এসব আজগুবি জিনিস নিয়ে আর ভাবা যাবে না নিজের মন কে ব্যস্ত করে দিতে পড়ার টেবিলে চলে যায় সে। সত্যিই মানুষ কত অদ্ভুত প্রাণী কখন কোথায় কিসের মায়ায় পড়ে যায় কেউ বলতে পারে না। আর সেই মায়া থেকে উত্তরনে কত কি করে চলে সত্যিই কি সব মায়া থেকে পালিয়ে বেড়ানো যায়?
তুলসীতলায় উলুধ্বনি দিতে দিতে সন্ধ্যা বাতি ধরিয়ে সারা বাড়িতে ধুপ ধুনা দেখিয়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকে প্রদীপটা জ্বালিয়ে নেয় রুমা। উলুধ্বনি আর শাখের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ছোট্ট ঘরখানার দেয়ালে। ঘরে এসে জামা টা পাল্টে আবার আগের জামা টা পড়তে শুরু করে। গত কয়েকদিন ধরে একটা নতুন অভ্যাস হয়ে গেছে রুমার, যতবার কাপড় পাল্টায় ততোবারই আয়নায় নিজের বস্ত্র বিহীন শরীরটা নিজের চোখের সামনে তুলে ধরে। আসলে এমনটা শুরু হয়েছে সেদিন অনির্বাণ দের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই। সেদিন অনির্বাণ এমন করে ওর দেহের আনাচে কানাচে স্পর্শ গুলো এমন এক অনুভূতি জাগিয়ে দিয়ে গেছে সেটা যেন সারাদিন ওর সমস্ত দেহ জুড়ে দৌড়ে বেড়ায়। আগেও তো কতবার কত বাহানায় অনির্বাণের অবাধ্য হাত ওর শরীর জুড়ে চষে বেড়িয়েছি তখন তো এমন হয় নি, তবে কেন এবার রুমার শরীরের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে৷ কয়েকদিন পেড়িয়ে গেলো তবুও ওর কাছে মনে হয় প্রতিটা স্পর্শ এখনো তাজা হয়ে আছে ওর মোলায়েম ত্বকের প্রতিটা লোমকূপে। এখনো যেন চোখ বন্ধ করলে সেগুলো অনুভব করতে পারে, ওর প্রিয়তমের ভালোবাসার আবেশে মেশানো উষ্ণ ছোঁয়া গুলো। সঙ্গে সঙ্গেই শরীর জুড়ে শিহরণ জেগে উঠে প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগের থেকেও বেশি স্পর্শ কাতর হয়ে উঠেছে কোন এক শারীরিক জৈব বিক্রিয়ায়।
রুমা ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে নিজেকে দেখতে দেখতে হঠাৎ দৃষ্টি টা নিজের সুউচ্চ ভারী বুকের কাছে নিবদ্ধ করে। শারীরিক প্রতিক্রিয়াতেই একটা হাত উঠে আসে বুকের কাছে, আলতো করে হাত বুলায় নিজের উন্মুক্ত দুধের উপর। একটা আঙুল চলে যায় দুধের বোটার কাছে, স্পর্শ মাত্রই সারা দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায় রুমার। অদ্ভুত এক ভালোলাগা খেলতে শুরু করে তার দেহের ভেতর বাহিরে, স্বাভাবিক ভাবেই আবার রিপুর তাড়নয় থাকা আঙুল গুলো খেলতে শুরু করে নিজের বুকের উপর ফুটে উঠা সৌন্দর্য গুলো নিয়ে। প্রতিটা ছোঁয়ার সাথে সাথে শরীরে যে শিরশিরানি জেগে উঠছে রুমা সেটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে। এর আগে এমন খেলায় সে মেতে উঠেনি কখনো কিন্তু সেদিন তার উন্মুক্ত বুকে অনির্বাণের উষ্ণ নিঃশ্বাস আর ভিজে জিভের ছোঁয়াতে যে অপার্থিব সুখের দেখা পেয়েছিল আজকাল সে নেশা তার মস্তিষ্কের চেপে বসেছে৷ ইদানীং যেন মনে হয় শরীরটা বড্ড বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে হালকা ছোঁয়াতেও জেগে উঠতে চায়, ভেতরটা আনচান করতে থাকে সেদিনের ঘটনা প্রবাহ টা আবার নতুন করে শুরু করতে।
দু হাতে নিজের দুধের সাথে নতুন খেলায় মেতে উঠা রুমা যেন এখন আর এই জগতে নেই। নিজের শরীরে ভেতরে ক্রমশ বাড়তে থাকা উত্তেজনার ফাঁদে পা দিয়ে হাতের জোড় বাড়াতে থাকে, এতোদিন অনির্বাণের মর্দনে যে সুখে মন আনচান করতো আজও সেই সুখটা জাগতে শুরু করেছে। আজকের এই স্বমোহন খেলায় অনির্বাণ নেই তবুও যেন ও সবটা জুড়েই আছে। চোখ বন্ধ করে নিজ প্রেমিকের ভূতপূর্বে প্রতিটা স্পর্শ, প্রতিটা আলিঙ্গন প্রিয়র কাছে পাওয়া চুম্বন কিংবা সারা দেহ জুড়ে চষে বেড়ানো হাতের আঙুলের ছোঁয়া গুলো নতুন করে কল্পনায় সাজিয়ে রুমা নিজেই আজ সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে থাকার মত শক্তি পাচ্ছে না পা গুলো কেন জানি ওর সাথে সায় দিচ্ছে না। রুমা নিজের উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকায় অস্থির হয়ে ওঠা দেহখানা বিছানা অব্দি টেনে নিয়েই একটা কোলবালিশ জাপটে ধরে এলিয়ে দেয়। কোলবালিশটা দুপায়ের মাঝে রেখে বস্ত্রহীন বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। কোলবালিশটাই যেন আজ ওর প্রেমিক হয়েই দু'বাহুর মাঝে ধরা দিয়েছে। উদোম বুকের সাথে চেপে ধরা বালিশটা অলীক সুখের উচ্চ শিখরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে৷ ভারী হয়ে আসা শ্বাসের গতি বাড়তে থাকে সাথে যেন খানিকটা আফসোসের মিশ্রণ ঘটেছে তার সাথে, রুমার মন শরীর দুটোই যেন কারও অনুপস্থিতি খুব করে অনুভব করছে। ইচ্ছে করছে সে মানুষটাকে কাছে পেলে এখন যেনো নিংড়ে নিজের সবটা দিয়ে দিতো তাকে৷ অস্থির হয়ে থাকা দেহটার সাথে কোলবালিশের ঘর্ষণে শরীরের ভেতরের তাপটা আরও বাড়তে থাকে, হাত পা গুলো নিসপিস করতে থাকে নিজেকে বালিশের সাথে চেপে ধরতে৷ ইশ! বালিশটার যদি প্রাণ থাকতো....
দিদি ওই দিদি কি করছিস তুই! সেই কখন থেকে মা তোকে ডাকছে, দরজায় সপাটে চালিয়ে যাওয়া কারও হাতের আঘাতের শব্দ কানে এসে পৌঁছায় রুমার।
মূহুর্তে যেন চারপাশের সবকিছু কেমন স্থবির হয়ে পড়েছে, কোলবালিশটা ওর আগল থেকে বেড়িয়ে গেছে। বিছানার উপর কাম ভাবে তড়পাতে থাকা ওর শরীরটা নিস্তব্ধ হয়ে গেলেও ভেতরের চলমান রক্তের গতির ধুকপুকানি টা ওকে স্বাভাবিক হতে কিছু সময় নিবে। গলায় খানিকটা জোর এনে কোনমতে বলে উঠে,
হয়েছে টা কি, এতো চেঁচাচ্ছিস কেন? যা মাকে বল আমি আসছি।
কল্পনার জগত থেকে হঠাৎ করেই বাস্তবতার ভূপৃষ্ঠে ধপাস করে পড়ে যাওয়ার ধকল টা সইয়ে রুমা জামাকাপড় পড়ে নিয়ে ধীর পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
মাত্রই টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরলো আলেয়া, ঘরে ঢুকতে যাবার আগেও কি মনে করে একবার পেছন ফেরে কিছু যেন খুঁজে চলে ওর চঞ্চল চোখ দুটি। নিরাশ হয় তবে ঠোঁটের কোনে হাসির উদ্রেক হয় এমন পাগলামির জন্য। আজ সারাটা দিন যেন একটা ঘোরের মাঝে কাটিয়েছে সে। সকাল বেলা সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে ভালোলাগার কথাটা জানার পর যে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল মন জুড়ে বেলা গড়িয়ে সেটাই যখন সুমনের মুখ থেকে ভালোবাসি হয়ে ঝড়ে পড়লো তখন বুঝি আলেয়ার হৃদয়ে নয়া অনুভূতির জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছিলো সব কিছু। ঘরে ঢুকেই জামাকাপড় বদলে নিয়ে হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য কলপাড়ে চলে যায়৷ হাতে মুখে সাবান দিতে দিতে আলেয়া অন্তরাত্মা নতুন সুরে গুনগুন করে উঠে নিজের অজান্তেই। এমন করে বদলে যাওয়া নিজেকে ভাবতেই একরাশ লজ্জায় ঘিরে ধরে ওকে, আজ এমন কি হলো যে নিজেকেই নিজের কাছে কেমন নতুন লাগতে শুরু করেছে। ঘরে ঢুকে গামছায় হাত মুখ মুছে সেটা খেলার ছলে আলনার দিকে ছুড়ে দেয়, ইশশশ! একটুকুর জন্য মিস হয়ে গেল গামছাটা মাটিতে পড়ে গেল সেটাকে কুড়িয়ে নিয়ে আলনায় রেখে দিলো সযত্নে। ভিন্ন এক উচ্ছাস আর উদ্দীপনা দেখা দিয়ে আলেয়ার মাঝে, স্বাভাবিক কাজ গুলো আজ কেন জানি বিশেষ হয়ে উঠে মনে আড়ালে হঠাৎ করেই উঁকি দেয়া বিশেষ অনুভূতিতে। ছটফটানি মন নিয়ে নিজেকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে সকালের ঘটনা গুলো আবার আপন মনে ভাবতে থাকে। সেই কথা গুলো ভাবতে গেলেই অদ্ভুত এক অনুভূতি ঘিরে ধরে আলেয়াকে, শ্বাসের গতি বাড়তে থাকে সেই সাথে বুকের ভেতরের ধুকপুকানি৷ তার প্রভাবেই ওড়নার আচ্ছাদন বিহীন পিনোন্নত খাড়া বুকটা বেশ দ্রুত উঠানামা করছে। কল্পনার জগতে ভাসতে থাকা আলেয়া নিজের এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক হয়, যে বিষয়ে কখনো ভাবে নি সেসবেই আজ কেমন করে মজে আছে সেটা চিন্তা করতেই দুহাতে নিজেই নিজের উচ্ছসিত মুখটা আড়াল করে ধরে। তবে মনে মনে ভাবছে আজ কেন টিউশন শেষে বারবার পিছনে ফিরে ঐ মানুষটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল?
দুদিন আগেও তো মনে ভয় ধরে ছিল নানা আশঙ্কায় ভেতরের দুশ্চিন্তা টা বেড়েই চলেছিল। আর কিছু দিন গেলে হয়তো শেষমেশ আব্বাকে ব্যাপারটা জানাতেই হতো। তবে আজ সকালে কে ওকে অমন অদ্ভুত ভাবে ফলো করতো আর কেন করতো সেটা জানতে পারার পরেই কেমন একটা ভালোলাগা বলয় তৈরী করে রেখেছে ওর চারপাশে। এমন করে আগে কখনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় নি আলেয়া কে আর ভাববেই বা কেন! আগে কখনো তো কেউ ওকে ভালোবাসি কথাটাও বলে নি। টিউশন থেকে ফেরার পথে আজ মন চাইছিলো সেই পায়ের শব্দটা আবার শোনতে কিন্তু কই আজ তো শব্দটা পেলো না। তাই তো খানিক দাঁড়িয়ে অপেক্ষাও করেছে সে হঠাৎ করেই নিজের প্রিয় জনের তালিকায় যুক্ত হয়ে যাওয়া মানুষটার জন্য। তবে তাকে নিরাশ হতে হয়েছে সেই মানুষটি আজ আর তার পিছু পিছু আসে নি। তাতে কিছুটা খারাপ লেগেছে আলেয়ার হঠাৎ করেই প্রেমের বাতাসে শীতল হয়ে উঠা আনকোরা মন। হঠাৎ করেই আলেয়ার ছোট্ট মোবাইলের নোটিফিকেশনের শব্দটা কানে আসে। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে
"সরি, একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তাই আজ আর আসতে পারিনি। I love you"
আলেয়ার অবচেতন মন বুঝতে পারে মেসেজ টা কার কাছ থেকে এসেছে কিন্তু প্রশ্ন হলো নাম্বার পেলো কোথায়? তবে সেসব প্রশ্ন কিংবা তার উত্তর ছাপিয়ে একটা অজানা ভালোলাগার বলয় ঘিরে ধরা আলেয়া মন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে অজানা কারণে।
আজ আর তেমন কোন নাস্তা করা হয়ে উঠে না কৌশিক আর তার মা মমতার। বাড়ির সামনে দাঁড় করানো বড় ট্রাকে একে একে সব মালামাল তোলা হয়ে গেছে, আজই ওরা নতুন বাড়িতে চলে যাবে। কৌশিক চেয়েছিল মাকে পৌঁছে দিয়ে তারপর কলেজে যেতে কিন্তু মমতা দেবী বারণ করলেন। শুধু শুধু এতোটা রাস্তা গিয়ে আবার ফিরে আসার দরকার নেই, আর নিজেদের গাড়ি আছে ড্রাইভার আছে তাহলে আর সমস্যা কি। তবে এতো বড় বাড়িটা তো আর ফাঁকা যাবে না তাই গাড়ি আর ড্রাইভার রা সেই সাথে বাড়ির বাকি কাজের লোক গুলে এখানেই থাকবে। কৌশিকে ইচ্ছে ওখানে গিয়ে খুব সাধারণ ভাবেই থাকার তাই বেশিরভাগ জিনিসপত্রই এখানে রেখে যাচ্ছে শুধু সাথে করে নিজের পছন্দের বাইকটা নিয়ে যাবে, আজ অনেকদিন পর বাইকটা গ্যারেজ থেকে বের করে এনেছে। মাকে প্রণাম করে কৌশিক বেড়িয়ে পড়ে কলেজের জন্য আর এদিকে মমতা দেবীও শেষবারের মত বাড়িটায় চোখ বুলাতে গিয়ে ছলছল করে উঠে। এতো দিনে সাজিয়ে তোলা বাড়িটা ছেড়ে যেতে মনটা কেঁদে উঠছে কিন্তু যেতে তো হবেই, চোখের কোনে জমা হওয়া অশ্রু কণা মুছে নিতে নিতে গাড়িতে উঠে বসে। পার্স ব্যাগে রাখা ফোনটা কখন থেকে বেজে চলেছে, পার্স খুলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কৌশিকের বাবা ফোন করেছে রিসিভ করে কানের কাছে এগিয়ে নেয়। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে...
নিখিল আজও সকাল সকাল লক্ষ্মীর বাড়িতে এসেছে, আসার সময় হোটেল থেকে লক্ষ্মী আর পচুইয়ের জন্য সাথে করে রুটি নিয়ে এসেছে। বারান্দায় পচুই কে দেখে জিজ্ঞেস করে ওর মা কোথায়, পচুই হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয় ওর মা ঘরেই আছে৷ কাল ঔষধ খাবার পর জ্বর কিছুটা কমেছিল এখন কি অবস্থা কে জানে। সকালে লাইনে দাড়িয়ে আজ লক্ষ্মীদের জন্যও জল নিয়েছিল সেই জলের কলসী টা নিচে নামিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করে,
কিরে খাইছস কিছু?
না মায়ে রান্ধে নাই, অর্ধ-উলঙ্গ পচুই ক্ষুধার কাতরতা লুকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
আয় ঘরে আয় আমি নাস্তা লইয়া আইছি, পচুইয়ে ছোট্ট হাতটা ধরে দরজার দিকে এগিয়ে যায়৷
দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায় কিন্তু চোখের সামনে এমন এক দৃশ্য দেখে হতবাক আর স্থবির হয়ে যাওয়া নিখিলের আর ঘরে ঢোকা হয় না। ওর ছানাবড়া হওয়া চোখ গুলো দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। জ্বর টা কমে যাওয়ায় বিছানা ছেড়ে উঠেছিল লক্ষ্মী আর চোখে মুখে জল ছিটা দেয়ার পর ভেবেছিল কাপড় টা পাল্টে নিবে। কিন্তু এমন সময় নিখিল চলে আসবে সেটা তো জানা ছিল না। মাত্রই লক্ষ্মী নিজের ব্লাউজটা নিজের গা থেকে খুলে নিয়েছিল সাথে সাথেই উদোল বুকের ভারী মাংসপিণ্ডদ্বয় আচ্ছাদন থেকে মুক্ত হয়েই নিজেদের বিশাল অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময়েই দরজাটা খুলে যেতেই দেখতে পায় নিখিল সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সেকেন্ডের জন্য দুজনেই যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল কিন্তু সেটার ঘোর টা কাটতেই নিজের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া শাড়ির আঁচল টা টেনে নিজের বুকের অহংকার দুটো ঢেকে নিয়ে পেছন ফিরে দাড়ায়৷ লক্ষ্মী কে পেছন ফিরতে দেখেই নিখিলও বাস্তবে ফিরে আসে, তবে এখনো ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ সামনে দাঁড়ানো লক্ষ্মীর মসৃন খোলা পিঠে৷ হঠাৎ মনে হয় পচুই ওর সাথেই আছে তাই দরজা টা টেনে দিয়ে বারান্দার একপাশে এসে দাড়ায়। চোখ বন্ধ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে নিখিলের ভেতর থেকে, একটু আগে স্বচক্ষে দেখা লক্ষ্মীর ভারী বুকটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। না চাইতেও পুরুষ শরীরে একটা মোচড় অনুভব করে, হাত পায়ের শিরা গুলোতে কেমন টানটান অনুভব। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসা একটা শীতল স্রোত নিজের নিম্নাঙ্গের দিকে ধাবিত হতে থাকে। হঠাৎ করে বুঝতে পারে উত্তেজনার কাছে কাবু হয়ে ওর বাড়া একটু একটু করে জাগতে শুরু করেছে।
দরজা খোলার শব্দে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে লক্ষ্মী শাড়ি পাল্টে বেড়িয়ে এসেছে। ওর চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই দুজনের নজর লুকিয়ে ফেলে। নিখিলের হয়েছে আরেক সমস্যা চাইলেও এদিকে ঘুরতে পারছে না, শেষমেশ নিজের উত্থিত বাড়াটাকে দুপায়ের মাঝে কোন রকমে চেপে ধরে এগিয়ে যায় লক্ষ্মীর দিকে। হাতে থাকা নাস্তা টা এগিয়ে দিয়ে,
খাইয়া ল ছ্যাড়াডারে লইয়া, আর মনে কইরা ওষুধ খাইস কিন্তু। আমারে আইজ্জকা ওহনি যাইতে হবো গা, আইজকা বাড়ির নতুন মালিকরা আইতাছে। না থাকলে ঝামেলা হইবো...
মাথা নিচু করেই হাত বাড়িয়ে নিখিলের হাত থেকে নাস্তা টা নিয়ে নেয়,
আমিই তো রানবাম ওহন নাস্তা আনলেন কে।
ওহনের টা খাইয়া নে, শইল ভাল লাগলে পরে রাইন্ধা লইস। লাগলে ফোন দেইস, আমি ওহন যাই...
আইচ্ছা, লক্ষ্মী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
নিখিল বেড়িয়ে গেলেও ওর যাবার পথটার দিকে তাকিয়ে খানিক আগের আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া অস্বস্তিকর ঘটনাটা মনে পড়তেই লজ্জায় শ্যামলা মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
মাধুরী দের ক্লাস শুরু হয়েছে গেছে মাত্রই ওদের লেকচারার কৌশিক রায় ক্লাসে এসে রোল কল করতে শুরু করেছে। মাধুরীর নামটা ডাকতেই দাঁড়িয়ে নিজের উপস্থিতি জানায়। ওর কেন জানি মনে হলো স্যার যেন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল এক নজরে৷ কেমন একটা অদ্ভুত অস্বস্তি অনুভবে সে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে বসে পড়ে। না এই অস্বস্তি খারাপ লাগার নয় সেটাতে যেন কারো সাথে চোখাচোখি হয়ে যাবার স্বাভাবিক লাজুক প্রতিক্রিয়া মিশে আছে। তবে মাধুরীর মাথার মাঝে কিছু অন্য একটা ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ করেই মনে হলো স্যারের চোখ দুটো কেমন চেনা চেনা লাগছে, স্যারের চোখ গুলোও ঐ বাড়িটার দেয়ালে আর্ট করা লোকটার মত পিত বর্ণের। পরক্ষণেই নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করে তাতে কি হয়ে এমন চোখের মানুষ কত আছে পৃথিবীতে, তাই বলে ঐ আর্টিস্ট এর সাথে স্যারকে গুলিয়ে ফেলা নিছক পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যাগ থেকে নোটবুক বের করে নেয় আজকের ক্লাসের টপিক গুলো নোট করে নেবার জন্য৷
তবে ওর আশে পাশের কয়েকটা মেয়ের জন্য ক্লাসে মনোযোগ দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ওরা ক্লাসের টপিক বুঝার চেষ্টা করবে কখন ওদের সবগুলোই ব্যস্ত নতুন স্যার কে নিয়ে আলোচনা করতে। মাধুরী বুঝেই পায় না উনাকে নিয়ে এতো ক্রাশ খাওয়ার কি আছে, হ্যাঁ এটা স্বীকার করতে হয় যে উনি দেখতে সুদর্শন স্টাইলেও মর্ডান হাঁটা চড়ার মাঝে অন্যরকম একটা ভাব আছে তাই বলে উনার উপর ক্রাশ খাওয়া প্রেমে পড়ে যাওয়াটা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না ওর কাছে। পেছন থেকে একজন বলছে আজ নাকি স্যার বাইকে করে কলেজে এসেছে, যখন কলেজের ভেতরে ঢুকছিল সবাই নাকি হা করে তাকিয়ে ছিল স্যারের দিকে, দেখে মনে হচ্ছিলো কলেজের স্যার নয় কোন বলিউড সুপারস্টার এসেছে। উফফ! এরা কি শুরু করেছে আর টেকা যাচ্ছে না ওদের জ্বালায়, পেছন ফেরে ওদের চুপ থাকার জন্য হালকা ঝাঁজ দেখিয়ে ধমকে উঠে মাধুরী।
ক্লাস করানোর সময় বারবার বা দিকে সারিতে বসা মেয়েদের গলার স্বরে বিরক্ত হচ্ছিলো কৌশিক, ক্লাস চলাকালীন পড়ার টপিক ছাড়া অন্য কোন বিষয়ের আলোচনা একদম সহ্য হয় না ওর। ক্লাসের সময় পড়াশোনা নিয়ে কথা হবে আর বাড়তি বিষয়ের জন্য ঢের সময় আছে তখন সেগুলো নিয়ে মজে থাক কোন সমস্যা নেই। অফ টাইমে চাইলে সে নিজেও ওদের সাথে খোশগল্পে যোগ দিতে রাজি কিন্তু ক্লাস চলাকালীন মোটেও না। এর আগে এক দুবার সাবধান করে দিয়েছিল মেয়ে গুলোকে কিন্তু ওরা তো কথা শোনার নয়। আরেকবার আর কৌশিক নিজের ধৈর্য ধরে রাখতে পারে না, খানিকটা মেজাজ হারিয়েই চিৎকার করে উঠে,
বেঞ্চ নাম্বার টু থ্রি ফোর গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস।
হঠাৎ ওর কড়া ঝাঁজের আওয়াজে পুরো ক্লাসের পিলে চমকে উঠে, একদম সুনসান নীরবতা নেমে আসে। কৌশিকে চোখে মুখে ওর রাগের বহিঃপ্রকাশ টা স্পষ্ট করে টের পাওয়া যাচ্ছে। এমন একটা হ্যান্ডসাম মানুষ রেগে গেলে কতটা ভয়ানক দেখতে হয় সেটাও আজ অনেকের জানা হয়ে গেল। মাধুরীও কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে বসেছিল নিজের জায়গায়, ওর পাশের একজন দাঁড়িয়ে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাওয়া চেষ্টা করে কিন্তু স্যার আবার ধমকে উঠে,
আই সে গেট আউট ওর আই উইল লিভ নাউ।
মাধুরী ভাবে সে তো কিছু করে নি তাহলে তাকেও কেন চলে যেতে বলছে। নাকি স্যার সেদিনের ওভাবে হঠাৎ করে ধাক্কা লাগা আর ওর আচরণের প্রতিশোধ নিচ্ছে? ওর জন্যই কি তখন ওমন করে তাকিয়ে ছিল। মাধুরীর মনে পড়ে সেদিনও তো প্রথম ক্লাসে একটু দেরি হয়ে যাবার কারণে ওকে ক্লাসে ঢুকতে দেয় নি৷ স্যারের প্রতি রাগ টা বাড়তে থাকে মাধুরীর, ঐ একটা ভুলের জন্য এমন করে বারবার প্রতিশোধ নিচ্ছেন কেন? নাকি তার হাতে সেই পাওয়ার আছে সেই জন্যই সেটার ব্যবহার করছে। এমন ক্ষমতা অপব্যবহার যারা করে তাদের কে মাধুরী মন থেকে ঘৃণা করে। মিথ্যে সবাই ওনাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করে সত্যি বলতে উনি একটা অসহ্য রকমের মানুষ। রাগে ফুসফুস করতে করতে মাধুরীও বাকিদের মত ব্যাগ গুছিয়ে বেঞ্চ ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। অন্য সময় হলে নিজের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করতো কিন্তু এখন স্যারের প্রতি যে রাগ টা ফুসে উঠেছে সেটার জন্য কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় লেকচার টেবিলের সামনে দাঁড়ানো স্যারের দিকে একবার ঘৃণা ভরা চোখ নিয়ে ফিরে তাকায়, মাধুরী দেখতে পেল স্যারের রাগান্বিত চোখ গুলো যেন ওকে ঝলসে দিচ্ছে। বাকিদের সাথে মাধুরী প্রায় বেড়িয়েই গিয়েছিল তখন হঠাৎ একটা গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে থমকে দাড়ায়। পেছন ফিরে তাকাতেই স্যার বলে উঠলো,
হেই ইউ, মাধুরী তুমি কোথায় যাচ্ছো? ইউ ক্যান স্টে ইন দ্যা ক্লাস।
মাধুরী যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না, স্যার ওর নাম ধরে ডাক দিলো তাও আবার ক্লাসে আসতে বলছে। এটাও কি করে সম্ভব এই বদ মানুষটার দ্বারা। মাধুরীকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌশিক আবার বলে উঠে,
হারি আপ এন্ড টেক ইউর সীট।
মাধুরী গট হট করে ক্লাসে ঢুকে নিজের সীটের দিকে এগিয়ে যাবার সময় কি মনে করে একটু থমকে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,
থ্যাংক ইউ স্যার।
শ্রী দেবীর এখন অখন্ড অবসর সময়, দু মেয়ে খেয়ে দেয়ে কলেজ কলেজে চলে গেলে হাতের কাজ গুলো সেরে নিয়ে বাড়ির সামনে গড়ে তোলা ছোট্ট বাগানটার কাছে চলে আসে। এখন এই সময় টুকু সে তার নিজের মত করে বাগানের গাছ গুলোর সাথেই কাটায়। গাছের গোড়ার আগাছা গুলো পরিষ্কার করার সময় গুনগুন করে নিজ মনে গান গাইতে থাকে সে। গাছের গোড়ায় জল দেয়া, ডাল ছেটে দেয়া, ঝড়ে পড়া পাতা গুলো ঝাঁট দিয়ে একত্রে করা এসবই শ্রী দেবী নৈমিত্তিক কাজ৷ ওহ! আসল কথাটাই তো বলা হয় নি, শ্রী দেবী হলো এই গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র মাধুরীর মা। তবে কোন এক অদৃশ্য কারণে মা মেয়ের মাঝে বন্ডিং কেন জানি আগের মত নেই৷
হঠাৎ করেই শ্রী দেবী খেয়াল করে রাস্তার ও পাশে জংলা বাড়িটার কাছে একটা বড় ট্রাক দাড়ানো আর তার পেছনেই আরেকটা দামি ছোট সাদা গাড়ি এসে থামলো৷ বাড়িটা এখন আর জংলা বাড়ির বলার মত অবস্থায় নেই৷ রঙের পরশে ঝা তকতকে হয়ে উঠেছে, কিছু একটা ভাবতে ভাবতে শ্রী দেবী এক দু পা করে বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়। সাদা গাড়িটার কাছে পৌঁছাতেই ভেতর থেকে একজন মহিলা বেড়িয়ে আসে আর সামনে শ্রী দেবী কে দেখে হাত জোড় করে বলে উঠে,
নমস্কার দিদি, আমি মমতা রায়। আপনাদের পাড়ায় নতুন এই বাড়িটাতে উঠছি।
হাতের ইশারায় বাড়িটা দেখায়।
শ্রী দেবীও সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে,
নমষ্কার দিদি আমি শ্রীতমা, ঐটা আমাদের বাড়ি(হাতের ইশারায় নিজেদের বাড়িটা দেখিয়ে দেয়)। ভালই হলো একজন নতুন প্রতিবেশী পেলাম।
তা তো বটেই, আমিও প্রথমদিনই কথা বলার মত একজন কে পেয়ে গেলাম। চলুন আমার সাথে আপনিই আমার নতুন বাড়িতে প্রথম গেস্ট৷
কথাটা বলেই মমতা দেবী হা হা করে হেসে উঠেন সাথে শ্রী দেবীও সঙ্গ দিতে হেসে উঠেন। মমতা দেবী আর শ্রী দেবী পাশাপাশি হাটতে হাটতে বাড়ির গেটের কাছে এসে হাজির হয়, সাথে সাথেই বাড়ির পাহারাদার নিখিল এসে গেট খুলে দেয়। মমতা দেবী পেছন ফিরে সঙ্গে আসা লোকদের জিনিসপত্র বাড়ির ভেতরে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয় আর শ্রী দেবীকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা নজরে পড়তেই থমকে দাঁড়ায়, এগিয়ে যায় বাড়ির নামফলকের দিকে যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে
"অতিথি"