08-12-2022, 12:59 PM
(This post was last modified: 20-09-2023, 12:29 PM by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অচিন্ত্য কথাঃ মহাযুদ্ধের অন্তিমে অচিন্ত্য
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা
উৎসর্গঃ পরম সুহৃদ বাবানকে
প্রারম্ভ
রামকিঙ্কর ও সুহাসিনীর মননে একটাই দুঃখ ছিল বিবাহের এক দশক অতিক্রান্ত হইবার পরও তাঁহাদের কোন সন্তান হয় নাই। বহু সাধু সন্ন্যাসী সঙ্গম করিয়াও তাঁহারা বাৎসল্য প্রীতি হইতে বঞ্চিতই রহিয়া ছিলেন। শেষকালে, যখন তাঁহারা সব আশা ছাড়িয়া দিয়াছিলেন তখনই একদিন সুহাসিনী শেষ নিশীথে নিদ্রাকালে স্বপ্নে দৈবাদেশ পাইলেন যে মহাকুম্ভের মন্দিরে তিন সোমবার উপবাস করিয়া ত্রিপ্রহর প্রার্থনা করিলেই তিনি সন্তান সম্ভবা হইবেন! প্রত্যুষে নিদ্রাভগ্ন হইবার পর সুহাসিনী স্বপ্নখানি লইয়া মনে মনে বিস্তর ভাবিলেন। তাঁহার দুই একবার মনোমধ্যে এই চিন্তাও আসিল যে স্বামী সম্মুখে গিয়া এ বিষয়ে আলোচনা করিবেন কিন্তু পরে আঁচিয়া বুঝিলেন শূণ্য আশার পুনঃসঞ্চারণ যদি ঘটে রামকিঙ্কর আরও ভাঙ্গিয়া পড়িবেন। সব দিক ভাবিয়া চিন্তিয়া সুহাসিনী স্বয়ংকে নিবৃত্ত করিলেন ও কাহাকেও কিছু না বলিয়া নীরবে স্বপ্ননির্দ্দেশিত ব্রত পালন করিতে থাকিলেন। রামকিঙ্কর যে স্ত্রীর সহসা সোমবার পালন খেয়াল করেন নাই তাহা নহে, কিন্তু সন্তানহীনা নারীর যাতনা তিনি বিলক্ষণ বুঝেন। পিতা হইবার সাধ তাঁহার যে নাই তাহা তো নহে, কিন্তু জীবনবৃত্তির কার্য্য পালনে তিনি আপনাকে শশব্যস্ত রাখিয়া সে যাতনা ভুলিয়া রহিয়াছেন, মন্দভাগ্যা সুহাসিনীর পক্ষে তাহা কার্যতঃ অসম্ভব তাই যাহাতে সে নিজেকে নিবিষ্ট করিয়া মাতৃত্বের পরম সুখ হইতে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখ ভুলিতে পারে তাহাই করুক ভাবিয়া রামকিঙ্করও নীরব রহিলেন। তৃতীয় সোমবারে মহাকুম্ভের নিকট সজল চক্ষে প্রার্থনা করিতে করিতেই সহসা সুহাসিনী জ্ঞান হারাইয়া ভূতলে পতিত হইয়া গেলেন। পণ্ডিত রামকিঙ্কর ও তাঁহার স্ত্রীকে সেই স্থানের সকলেই চিনিত, সুতরাং মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত পূণ্যপ্রার্থীরা তৎক্ষণাৎ সুহাসিনী দেবীকে রামকিঙ্করের গৃহে লইয়া গেলেন। রামকিঙ্কর, তখন জীবিকাকার্য্য লহিয়া ব্যস্ত ছিলেন, খবর পাইবামাত্র পরমদ্রুতিতে গৃহে আসিয়াই সুহাসিনীকে অচেতন দেখিয়া সম্পূর্ণভাবে ভাঙ্গিয়া পড়িলেন। নিঃসন্তানের গ্লানি যদিবা তিনি সহিতে পারিতেন আপন জীবনসঙ্গিনীকে হারাইয়া তিনি কীভাবে বাঁচিবেন!
অনতিদূরেই এক মহাবৈদ্যর গৃহ ছিল, সুচিকিৎসক এই প্রৌঢ় রামকিঙ্করকে বিশেষ স্নেহ করিতেন। লোকমুখে সুহাসিনীর খবর পাইয়া তিনি ত্বরিত গতিতে রামকিঙ্করের বাটীতে আসিলেন। মুমূর্ষু রামকিঙ্কর মহাবৈদ্যকে দেখিয়া যেন ধড়ে প্রাণ পাইলেন। তাঁহার হস্ত ধরিয়া বারম্বার মিনতি করিতে লাগিলেন সুহাসিনীর চিকিৎসা করিবার নিমিত্ত। বৃদ্ধ চিকিৎসক রামকিঙ্করকে আশ্বস্ত করিয়া অন্তঃপুরে গেলেন সুহাসিনীর নিকট। এবং, কীয়ৎকাল পরেই তিনি সহাস্য বদনে বাহির হইয়া আসিলেন। রামকিঙ্কর খাটিয়াতে ম্রিয়মান হইয়া বসিয়া ছিলেন, পাড়া পড়শীরা তাঁহাকে সান্ত্বনা দিতেছিল; মহাবৈদ্য রামকিঙ্করের নিকট আসিয়া তাঁহাকে আপন হৃদিমাঝে জড়াইয়া ধরিলেন। আপ্লুত কন্ঠে কহিলেন, "অশ্রু নিবারণ কর অনুজ, সুহাসিনীর কোন ক্ষতি হয় নাই। রামকিঙ্কর! তুমি! তুমি পিতা হইতে চলিয়াছ! পরমেশ্বরের অসীম কৃপায় সুহাসিনী গর্ভবতী হইয়াছে!" রামকিঙ্কর প্রথমে বুঝিতে পারিলেন না কী শুনিলেন, তাঁহার বৃহস্পতি স্বল্পকালের জন্য স্থানচ্যুত হইল তাই তিনি ফ্যালফ্যাল করিয়া মূকের ন্যায় চাহিয়া রহিলেন পরক্ষণেই কথাটির মর্ম্মার্থ অনুভব করিয়া আনন্দে আত্মহারা হইলেন, উঠানপ্রাঙ্গণে সকলের সামনেই ধেই ধেই করিয়া নৃত্য করিতে লাগিলেন। পাড়া প্রতিবেশীবৃন্দও সকল বিষয় বুঝিয়া সে আনন্দে হৃষ্টচিত্তে যোগ দিল। যে প্রাঙ্গণ কিছুকাল আগে মুহূর্ত শোকের করালছায়ায় গ্রস্ত ছিল এখন তাহা পরমানন্দের পূণ্যভূমিতে পরিবর্ত্তিত হইল। কিছুকাল পরে, সকল সুধীজনেরে বিদায় দিয়া রামকিঙ্কর সুহাসিনীর নিকট অন্তঃপুরে গেলেন। অন্তঃপুরে শয্যায় শায়িত সুহাসিনী স্বামীর আগমণ ধ্বনি পাইয়া উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়া বসিলেন। রামকিঙ্কর শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত হইয়া গদগদ চিত্তে সুহাসিনীর হাত ধরিয়া কতই যে কথা বলিলেন তাঁহার ইয়ত্তা নাই। স্বামীর এমন বাল্যরূপ দেখিয়া সুহাসিনীর খুশীর সীমা রহিল না। এতকাল এই দম্পতি কেবল কষ্টতেই কালাতিপাত করিয়াছিল অদ্য তাঁহাদের জীবনে এই প্রথম এত আলোয় ভরা দিন আসিয়াছে। সন্তান আগমণ বার্ত্তায় আপ্লুত দুই নরনারীর মনে যেন ঘোর প্রাব্বৃটের বর্ষণ হইতেছিল। তাঁহারা কখনও কাঁদিতেছিলেন কখনও বা হাসিতে ছিলেন! ভাবাবেগে ভাটা আসিলে পরে রামকিঙ্কর জিজ্ঞাসিলেন সুহাসিনীকে তখন সুহাসিনী তাঁহাকে স্বপ্নাদেশের সব কথা খুলিয়া বলিলেন। রামকিঙ্কর সকল কথা শুনিয়া নিস্তব্ধ হইয়া ক্ষণকাল বসিয়া রহিলেন তাঁহার পর ধীর গতিতে বাহির হইয়া ঠাকুরঘরে গেলেন, মহাকুম্ভের মূর্ত্তি সম্মুখে গিয়া করজোড়ে আছড়াইয়া পড়িলেন, সহস্র-সহস্রবার তিনি দেবতাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করিলেন।
ইহার পর যথাসময়ে সুহাসিনী এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান প্রসব করিলেন। যে অঙ্গণ প্রাঙ্গণ একদা নিস্তব্ধতায় ভরা ছিল আজ তাহা নবজাতকের কান্নায় ভরিয়া উঠিল। রামকিঙ্কর এখন আর কার্য্যে মনোনিবেশ করিতে পারেন না, সর্ব্বদা আপন সদ্যোজাত পুত্রের মুখখানি দেখিবার জন্য তিনি ছটপট করেন। ঘুমন্ত শিশুর মুখপানে রাত্তিরে জাগিয়া জাগিয়া চাহিয়া থাকেন। সুহাসিনী স্বামীর এমন বাৎসল্য দেখিয়া দেখিয়া মৃদুমৃদু হাসিতে থাকেন। ঘুমন্ত শিশু সন্তানকে পার্শ্বে রাখিয়া রামকিঙ্কর চতুর্বেদ, বেদাঙ্গ, সংহিতা উপনিষদ প্রভৃতি পাঠ করেন। তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁহার পুত্র দেবজ, সুতরাং পিতা হিসাবে অল্প বয়সেই তাঁহাকে সুশিক্ষা প্রদান করা তাঁহার কর্ত্তব্য।
ইহার পর দেখিতে দেখিতে নামকরণের দিন আসিয়া গেল। রামকিঙ্করের বাসার গুরুদেব বাচস্পতি আচার্য্য মহাশয় পূর্ব্বেই একবার নবজাতককে দেখিয়া গিয়াছেন। সেইবারই নবজাতকের মুখ অবলোকন করিবা মাত্র তিনি কহিয়াছিলেন, "এ শিশু সাধারণ নহে! দৈবযোগের সকল লক্ষণ দেখিতেছি!" রামকিঙ্কর গুরুদেবের পদধূলি লইয়া তাঁহাকে সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত করিলেন। এমন কী একদা খোদ মহাবৈদ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সুহাসিনীকে যে বাঁজা বলিয়াছিলেন তাহাও জ্ঞাত করিলেন যদিও মহাবৈদ্য সুহাসিনীর এই দোষের কথা কেবল রামকিঙ্করকেই বলিয়াছিলেন এবং রামকিঙ্কর পত্নীমনে আঘাত না দিবার জন্য সুহাসিনীকে এ বিষয়ে কিছুমাত্র জ্ঞাত করান নাই তাহাও বাচস্পতির নিকটে ব্যক্ত করিলেন। মহাবৈদ্য স্বয়ংও তদ্ স্থলে উপস্থিত ছিলেন, তিনি রামকিঙ্করের বক্তব্য সমর্থন করিলেন। সকল শুনিয়া বাচস্পতি মহাশয় আহ্লাদিত হইয়া রামকিঙ্কর ও সুহাসিনীকে প্রাণ ভরিয়া আশীর্বাদ করিয়াছিলেন এবং বারম্বার কহিয়াছিলেন নবজাতককে মহাকুম্ভ সম্পর্কিত কোন নাম দিতে।
রামকিঙ্কর ও সুহাসিনী বহু ভাবিয়া একখানি নাম ঠিক করিলেন, যেহেতু স্বয়ং কুম্ভ তাহাদের মাঝে এই শিশুকে প্রেরণ করিয়াছেন তাই ইহার নাম কুম্ভকার রাখিবেন বলিয়া স্থির হইল।
নামকরণের প্রাতেঃ হোমাহুতি যজ্ঞ প্রভৃতি সমাপ্ত হইবার পর পুরোহিত পিতাকে সন্তান ক্রোড়ে লহিয়া নাম প্রদান ও সেই নামের অর্থ ও কারণ সম্পর্কে বলিবার জন্য আদেশ দিলেন। রামকিঙ্কর মনে মনে নামখানি স্মরণ করিয়া নবজাতককে আপন বক্ষমাঝে তুলিতেই হঠাৎ করিয়া যেন স্বয়ংহারা হইয়া গেলেন। সকল কিছু ভুলিয়া রামকিঙ্কর ঘোষণা করিলেন, "দীর্ঘদিবস অপেক্ষার পরও যখন আমাদিগের পিতা মাতা হওয়ার সৌভাগ্য হইলো না তখন আমরা সকল আশা ছাড়িয়া দিয়াছিলাম। এই সন্তান যে ভূমিষ্ঠ হইবে ইহা আমাদিগের সকল চিন্তার অতীত ছিল। যেহেতু এই সন্তান সকলের সকল চিন্তাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করিয়া ধরাধামে আসিয়াছে তাই অদ্য হইতে আমি, শ্রী রামকিঙ্কর বিদ্যাবর্ত, এই শিশুর পিতা, আমার সন্তানকে নাম দিলাম অচিন্ত্য!"
সুহাসিনী সহ প্রত্যেকেই হতবাক হইয়া গেলেন। এই নাম তো দিবার কথা ছিল না তাহা হইলে এমন নামকরণের কারণ কী! বাচস্পতি মহাশয়ের মুখে সামান্য ক্রোধের উন্মেষ ঘটিল। তিনি কিছু বলিতে গিয়াও থামিয়া গেলেন। রামকিঙ্কর নিজ হইতে বলিলেন, "আমার কেন জানি মনে হইল এই নামই উহার জন্য যথার্থ হইবে!"
কীয়ৎকাল পরে আর সকল কার্য্যাদি হইতে লাগিল। বাচস্পতি মহাশয় মধ্যিখানে উঠিয়া গেলেন, জানাইলেন তাঁহার কার্য্য আছে যাইতে হইবে। রামকিঙ্কর যেহেতু যজ্ঞকার্য্যে ব্যস্ত রহিয়াছেন তাই মহাবৈদ্য বাচস্পতি মহাশয়কে লহিয়া খেয়াপার হেতু নদীতটে লহিয়া গেলেন। যাইবার পথে মহাবৈদ্য আপন কৌতূহল সম্বরণ করিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসিলেন, "নামকরণের কালে হঠাৎ মনে হইল আপনি বিচলিত হইয়াছিলেন। কোন ত্রুটি হইয়াছে?" বাচস্পতি মহাশয় ক্ষণিক থামিলেন, তাঁহার পর কহিলেন, "আপনি সুহাসিনীকে স্বয়ং নিরীক্ষণ করিয়া বাঁজা বিধান দিয়াছিলেন। ভাবিয়া কহেন তো ঠিক কীরূপে এক বাঁজা মাতৃগর্ভা হয়?" মহাবৈদ্য হাসিয়া বলিলেন, "কোনরূপেই হয় না যদি না স্বয়ং পরমেশ্বর করুণা করেন তো!" আচার্য্য বলিলেন, "যথার্থ বলিয়াছেন, সাধারণ বুদ্ধিতে যাঁহার উত্তর পাওয়া যায় না তাহাই আমাদিগে বারম্বার স্মরণ করাইয়া দেয়, এক মহাশক্তি এই জগৎ কার্য্য পরিচালনা করিতেছেন। তিনিই অলৌকিক। তিনিই ব্রহ্ম।"
একটু নীরব রহিয়া পুনরায় কহিলেন, "দেবাংশ লহিয়া যখন কোন শিশুর জন্ম হয় তখন বুঝিতে হইবে সেই শিশুর এই বসুধায় কিছু বিশেষ কার্য্য নিমিত্তে জন্ম হইয়াছে। এই কারণেই ইহাদের মধ্যে কিছু বিশেষ গুণাবলিও দেখিতে পাওয়া যায় যাহা সাধারণের মধ্যে কস্মিনকালেও পাওয়া যায় না। তাই, যে দেবের কৃপায় তাহার জন্ম হইল তাহার নামেই উক্ত শিশুর নাম দিতে হয়। কিন্তু, যদি তা না করা হয় তবে উক্ত দেব ওই শিশু হইতে সম্পূর্ণ মুখ ফিরাইয়া লইবেন।"
মহাবৈদ্য, এমন গূঢ় কথা জানিয়া যারপরনাই বিস্মিত হইলেন। তাঁহার ওষ্ঠ স্বল্পকাল স্থির রহিল। ঈষৎ ভাবিয়া বলিলেন, "নামটি পাল্টাইয়া দিলেই তো আর এই ঝঞ্ঝাট থাকিবে না!" বাচস্পতি মহাশয় হাসিয়া বলিলেন, "নাম কোন বস্ত্র নহে যে পছন্দ না হইলে পাল্টাইয়া লওয়া যাইবে। সকল নিয়ম পালন করিবার পর পিতা বা মাতা কর্তৃক যে নাম প্রদত্ত হয় ওই নামই চিত্রগুপ্তের খাতায় উঠিয়া যায়। তাহার পর যতই নাম পরিবর্ত্তন হউক তাহা কেবল এই ধরাতেই হইবে, দৈবগ্রন্থে উহার কোনরূপ পরিবর্ত্তন আসিবে না। সাধারণের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না, তাহা লহিয়া কেউ মাথাও ঘামায় না কিন্তু দৈবের কৃপায় জনিত শিশুর ক্ষেত্রে এই নিয়ম ভয়াবহ। সাধারণের ন্যায় সে জন্ম লহে নাই, তাহার আগমণ বিশেষ কারণের নিমিত্ত। অর্থাৎ, তাহার জন্ম লইবার কথা ছিল না, সে জন্মিয়াছে কেবল অজ্ঞাত কোন শক্তির নির্দ্দেশে। সুতরাং, যাহার জন্ম লইবার কথাই নহে সে যখন জন্ম লইয়াছে তখন তাহার অস্তিত্বে যাহাদের ক্ষতি হইবে সেই সকল অপশক্তি তাহাকে মিটাইবার চেষ্টা করিবে। আর যখন যে দেব তাহাকে কোন দূরহ কার্য্যের সমাধা নিমিত্ত ধরিত্রীতে প্রেরণ করিয়া ছিলেন তিনিই মুখ ফিরাইয়া লহিয়াছেন তখন সেই শিশুর অনিষ্ট করিবার শক্তিসকলের নিকট আর কোনও বাধাই রহিল না।" মহাবৈদ্য কাঁপিয়া উঠিলেন, "তাহার অর্থ?" বাচস্পতি মহাশয়, ধীমকন্ঠে উত্তর করিলেন, "অকালমৃত্যু!"
বৃদ্ধ মহাবৈদ্য থরথর করিয়া কম্পিত হইতে হইতে কহিলেন, "রামকিঙ্কর ইহা সহ্য করিতে পারিবে না! কোনমূল্যেই পারিবেনা! সে স্বয়ং আপন শিশুর মৃত্যুর কারণ হইবে ইহা ওই দম্পতির কেহই সহিতে পারিবে না! গুমরাইয়া গুমরাইয়া উভয়েই মরিয়া যাইবে! হে আর্য্য! কোন উপায় নাই?" বাচস্পতি মহাশয় নিরুত্তরে নদীদিগন্তে চাহিয়া রহিলেন। নদীবক্ষে একটী বড় ঢেউ আসিল। বোধকরি, বিধাতা কোথাও হাসিলেন।
(ক্রমশঃ)