Poll: চটি গল্প এর পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের গল্প কি চলবে।
You do not have permission to vote in this poll.
Yes
77.78%
7 77.78%
No
22.22%
2 22.22%
Total 9 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
থ্রিলার গল্প -সাজু ভাই - সিরিজ - (গল্প: সাজু ভাই) (সমাপ্ত গল্প)
#10
  
 

পর্ব-০৪




ভয়ে থরথর করে কাঁপছি, অন্ধকারের মধ্যে চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। নিজের নিশ্বাসের শব্দ নিজের কানে পৌঁছে যাচ্ছে, ঘরের মধ্যে দেয়াল ঘড়ির কাঁটার শব্দটাও ভয়ংকর লাগছে। মনে মনে ভাবলাম যে এক লাফ দিয়ে উঠে দরজা বন্ধ করে দেবো কিন্তু হাতপা নড়াতে পারি না। কেমন বিপদের মধ্যে পরলাম? 

বহুকষ্টে বিছানা থেকে উঠে বসলাম, মশারী উঁচু করে ধরে বের হলাম। খাট থেকে নেমে নিঃশব্দে পা টিপে টিপে দরজার কাছে গেলাম। আস্তে করে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে ধুম করে ছিটকিনি ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। মনের মধ্যে থেকে কিছুটা ভয় কেটে গেছে কিছু আতঙ্ক তো রয়ে গেছে। 

ফারজানা গেল কোথায়? সে কি আমাকে হত্যা করতে এসেছে? ব্যাপারটা এই মুহূর্তে দারোগার সঙ্গে বলতে পারলে ভালো হতো। তাছাড়া সকাল থেকে ফারজানার বিষয় মাথার মধ্যে আসে নাই, যদি আসতো তাহলে অবশ্যই বলতাম।  

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইলাম, বিছানায় শুয়ে ঘুমের মধ্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ একবার যদি ঘুম আসতো তাহলে এমন ভয়ঙ্কর রাত্রি থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু অপেক্ষার রাত কখনো সহজে অতিবাহিত হতে চায় না। 

দরজায় ঠকঠক হচ্ছে, আমি আরেকবার ভয়ে যেন চুপসে গিয়ে বিছানার সঙ্গে মিশে গেছি। কে এসেছে? ফারজানা নাকি? যে আসে অসুক আমি দরজা না খুলে চুপচাপ বসে রবো, মোবাইল বের করে বাবার নাম্বারে কল দিলাম। যেহেতু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ভয়ে, তাই কল দিলে অন্তত সে বা মা যদি আসে। 

কিন্তু রিসিভ করলো না, এদিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কে যেন শব্দ করে যাচ্ছে। একটু পরে খুব আস্তে করে কেউ ডাকছে "রুহি দরজা খুলে দাও"

আমি চুপচাপ বসে আছি, গাল বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে দরজা খুলে মা-বাবার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারলে ভালো হতো। এতটা ভয়ে আমি কখনো পরিনি, মনে হচ্ছে আমারও সময় ফুরিয়ে গেছে। কাল সকল বেলা হয়তো মসজিদের ইমাম আমার শোক সংবাদ ঘোষণা করবে। 

এবারে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ডাকছে। আপনাদের কাছে আমার রুমের কিছু বর্ননা করা দরকার। যেহেতু গ্রামের বাড়ি তাই আমার রুমটা হচ্ছে ঘরের দক্ষিণ দিকে। একটা দরজা দিয়ে ভিতরের রুমে যাওয়া যায়, আরেকটা দরজা দিয়ে সরাসরি বাহিরে বের হওয়া যায়। একটা জানালা আছে দক্ষিণের বাতাসের আশায়, এখন সেই জানালার পাশে শব্দ হচ্ছে। 

- রুহি আমি ফারজানা, দরজা বন্ধ করে দিয়েছ কেন? দরজা খুলে দাও, খুব ভয় করছে। 

- আমি চুপচাপ। 

- তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ? প্লিজ তাড়াতাড়ি করো, বাহিরে গা ছমছম করছে। 

- আমি এবার আস্তে করে বললাম, তুমি বাহিরে কেন গিয়েছ? তুমি নিশ্চয়ই এই খুনগুলাে করছো তাই না ফারজানা? তোমাকে আমরা সবাই গরীব বলে অবহেলা করতাম আর তুমি তার জন্য আজ এভাবে প্রতিশোধ নিতে এসেছ। 

- ছিহ, কি বলছো রুহি? দেখো আমি নিরাপদের জন্য তোমাদের বাসায় এসেছি কিন্তু এখন এই বাইরে দাঁড়িয়ে খুব ভয় করছে। আমি মোবাইলে কথা বলার জন্য বাহিরে বের হইছিলাম, প্লিজ রুহি বিশ্বাস করো আমাকে। 

- মোবাইলে কি ঘরের মধ্যে বসে কথা বলা যায় না তাই না? না না না, আমি কিছুতেই দরজা খুলবো না, তুমি খুব খারাপ মেয়ে। 

- এমন করে অবিশ্বাস করো না রুহি, তোমাকে যে কীভাবে বিশ্বাস করাবো। হায় আল্লাহ। 

- তুমি বাহিরে মরে গেলেও আমি দরজা খুলতে পারবো না, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তুমি আমাকে দিয়ে দরজা খোলাবে। তারপর ভিতরে ঢুকে খুন করবে আমাকে, আমি খুলবো না দরজা। 

- আচ্ছা তোমাকে খুন করতে চাইলে আমি তো আগেই করতে পারতাম তাহলে বাহিরে বের হওয়া লাগে কেন? 

- নিশ্চয়ই অস্ত্র আনতে গিয়েছ, কারণ তখন তো বাবার সঙ্গে অস্ত্র আনতে পারো নাই। 

- এসব কি বলছো রুহি?

- ঠিকই বলছি, তোমাকে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না। 

- ঠিক আছে তাহলে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। 

- - - -

বাহিরে এখন নিঃশব্দ, চলে গেছে নাকি? আচ্ছা সে এখন কোথায় যাবে? আর ফারজানা নিজেই কি এতকিছু করছে? 

নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে হাজার প্রশ্ন জমা হচ্ছে মাথার মধ্যে, গভীর রাতে নিজের মৃত্যু খুব নিকটে দেখতে পেলে কতটা ভয় লাগে সেটা বুঝতে এখন পারছি। এমন জীবন ও মানুষের থাকে? যে জীবন এ এখন প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক সেই জীবন কেউ কি কামনা করে? 

ভয়ে আর আতঙ্কে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না, সকাল বেলা দরজা ধাক্কা এবং মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভেন্টিলেটরের আধভাঙ্গা ফাঁকা দিয়ে বাহিরের আলো ঘরভর্তি হয়ে গেছে। পরক্ষণেই বাহিরে খুব মানুষের চেচামেচি শুনতে পাচ্ছি, আরে এত মানুষের আওয়াজ কেন? 

তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেখি মা, ফুফু, আর প্রতিবেশী ৭/৮ জন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কেন দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পারছি না, কিন্তু মায়ের কথা শুনে স্তব্ধ হলাম। 

- রুহি তুই ঠিক আছো? 

- আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললাম, হ্যাঁ মা ঠিক আছি। সময় বুঝে দরজা বন্ধ করেছিলাম নাহলে ফারজানা আমাকে মেরে ফেলতো। 

মা হাত দিয়ে আমাকে সরিয়ে তার মুখের সামনে ধরে বললোঃ-

- ফারজানা মেরে ফেলতো মানে কি? 

- মা জানো? গতকাল রাতে ফারজানা দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে গেছে তারপর নিশ্চয়ই সে কিছু করতেছিল। 

- কি বলছিস তুই? ফারজানা রাতে কীভাবে বের হয়ে গেল? তুই জানিস ফারজানার লাশ পাওয়া গেছে আমাদের বাগানে? 

আমি মুখে হাত দিয়ে চোখ দুটো বিশাল বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। ফারজানা রাতে খুন হয়েছে নাকি? তারমানে আমার জন্য মারা গেল? আমি যদি ঘরের দরজা খুলে ভিতরে আনতাম তাহলে সে বেঁচে থাকতো? 

- মা বললো, সকাল বেলা ওর লাশ দেখেই তো গ্রামের মধ্যে হইহট্টগোল হয়ে যাচ্ছে। তোকে তো অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি কিন্তু তোর কানে ডাক পৌঁছে নাই মনে হয়। 

আমি দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে গিয়ে দেখি ফারজানা শুয়ে আছে। গলার ওড়না দিয়ে ফাস দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে, যে মেয়ে গতকাল রাতে আমার সঙ্গে ঘুমাতে চাইল সেই মেয়ে এখন কবরের জন্য তৈরী হচ্ছে। 

এরমধ্যে গ্রামের অসংখ্য মানুষ এসে হাজির হয়ে গেছে, আমি রাতে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছি তাই হয়তো সকালে ভাঙ্গে নাই। দারোগা সাহেব নিজেও দাঁড়িয়ে আছে পায়ের কাছে, ফারজানার বাবা বিমর্ষ মুখে বসে আছে আর ওর মা কান্না করে করে অজ্ঞান হচ্ছে। মহিলারা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সবাই আমার দিকে কি এক কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রইল। অপরিচিত দুজন মানুষকে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর অপরজন ফারজানার লাশটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। 

এমন সময় দুজন কনস্টেবল একটা ভ্যানগাড়ি নিয়ে এলো এবং ফারজানা প্রাণহীন দেহটা ধরে উঠিয়ে নিল। চতুর্থ শিকার হয়ে গেল ফারজানা, তবে তার পিছনে আমার নিজেরও এখন অনেক দোষ মনে হচ্ছে। 

লাশ নিয়ে যাবার পরে আস্তে আস্তে ভিড় কমে গেল, দারোগা সাহেব আমাকে উদ্দেশ্য করে সেই অপরিচিত দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। 
যে লোকটা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে সেই লোকটা সাজু ভাই এবং লাশ মনোযোগ দিয়ে দেখা লোকটা হচ্ছে গোয়েন্দা হাসান। 

আমরা বাড়ির মধ্যে এসে বসলাম, বাবা মা এবং আরো অনেকেই আছে। হাসান সাহেব আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন;-

- আমি সকাল থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে করে ফারজানার থাকার কথা ছিল আপনার রুমের মধ্যে। কিন্তু সেটা নাহয়ে আপনাকে পাওয়া গেল রুমের মধ্যে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে আছেন, আর ফারজানাকে পাওয়া গেল বাগানের মধ্যে প্রকৃতির মাঝে ঘুমিয়ে আছে। আপনারা দুজনেই ঘুমিয়ে ছিলেন, কিন্তু আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেছে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? 

- আমি ভিত হয়ে গেলাম, তারপর ঢোঁক গিলে বললাম, আমরা দুজনে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে দেখি ফারজানা বিছানার মধ্যে নেই। দরজা খোলা ছিল আর তাকে কোথাও দেখা গেল না, আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ ভেবেছিলাম ফারজানা আমাকে খুন করবে। তাই তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিলাম। 

- এটা কোন কথা? সেই মেয়ে আপনাকে পরে কি আর ডাকে নাই? 

- হ্যাঁ ডেকেছিল কিন্তু আমি দরজা খুলিনি। 

- কেন? 

- ওই যে ভেবেছিলাম ও খুন করতে চায়, কিন্তু এখন তো দেখি ফারজানা নিজেই খুন হয়েছে। 

- কিন্তু আমি অন্যকিছু ধারণা করছি। 

- মানে? 

- ফারজানাকে আপনি খুন করেছেন? 

- মানে...? 

দারোগা সাহেবসহ উপস্থিত সবাই নড়চড়ে গেল, সবাই এখন নতুন কিছু কৌতূহল দেখতে পাচ্ছে। সাজু ভাই নির্বিঘ্নে বসে আছে, দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম:-

- স্যার উনি এসব কি বলছেন? 

- হাসান সাহেব বললো, দারোগা সাহেবের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই মিস রুহি। আমি ঠিক যেভাবে প্রশ্ন করি সেভাবে জবাব দিবেন প্লিজ, আপনার দিকে এখন সম্পুর্ণ সন্দেহ যাচ্ছে। 

- বাবা বললো, কিন্তু স্যার কেন? আমার মেয়ে নিজেই জীবনের ভয় কান্না করছে আর আপনি সেখানে উল্টো তাকে দোষ দিচ্ছেন? 

- জ্বি আঙ্কেল, আপনি বিবেচনা করুন, দুজনেই একসাথে রাতে রুমের মধ্যে ছিল কিন্তু সকাল বেলা একজনের লাশ পাওয়া গেল। আর এদিকে আপনার মেয়ে দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল রুমের মধ্যে। 

- তাই বলে... 

- আঙ্কেল, মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে বা সবাই এটাই বলবে যে আপনার মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে বের হয়েছে। এবং সুযোগ বুঝে পিছন থেকে ওড়না দিয়ে শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলেছে। 

- আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, চুপ করুন। এসব বাজে কথা বলবেন না দয়া করে, আমি কেন খুন করতে যাবো? আমি তো নিজেই মৃত্যুর ভয়ে প্রহর গুনে যাচ্ছি। ( কথা গুলো বলতে গিয়ে আমার কণ্ঠরোধ হয়ে গেল, কান্না বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। এদিকে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।) 

- হাসান সাহেব বললো, উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? আমি তো সরাসরি আপনাকেই দোষারোপ করি নাই কিন্তু সন্দেহের তালিকায় এক নম্বরে স্থান দিলাম। 

- বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি, ফারজানা তো বারবার দরজা খুলতে বলছিল কিন্তু আমি তাকে খুনি ভেবেছিলাম। 

- আপনার সঙ্গে এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, ফারজানার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে আমি বাকি কথা বলবো। কারণ আমার মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন জমেছে, তাই সেই জবাবগুলো পাওয়া গেলে রহস্যের উন্মোচন হবে আশা করি। তাই আপাতত আপনি বাড়িতে থাকুন তবে আমি যেকোনো সময় আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো। 

- দারোগা বললেন, রুহি তুমি কোন কিছু গোপন করার চেষ্টা করবে না তাহলে কিন্তু আমাদের খুব হয়রানি হবে। যা কিছু জানা আছে এবং পরবর্তী সময়ে জানবে, সেগুলো আমাদের বলবে। 

- ঠিক আছে স্যার, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কিছু করি নাই, আমার এতটা সাহস নেই। 

এমন সময় ঘরের মধ্যে এসে পারুল আপা প্রবেশ করলেন, * পরিহিত তবে বোঝা যাচ্ছে বাজারে গেছিলেন। তিনি সাজু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো;-

- অনেক কষ্ট করে আপনাদের জন্য লোকটার ঠিকানা বের করেছি। 

- সাজু ভাই বললেন, কোই দেখি? 

- দারোগা বললেন, কিসের ঠিকানা? 

- সাজু ভাই বললো, আপনাকে তো গতকাল রাতে বললাম যে আমাদের বাইকের ইঞ্জিনের মধ্যে কি একটা শব্দ হচ্ছে। তাই তাকে সকাল বেলা আমি বলেছিলাম যে গ্রামের মধ্যে ভালো বাইক ঠিক করতে পারা কেউ আছে নাকি? কিন্তু উনি যে এত কষ্ট করে মেকানিজের কার্ড যোগাড় করবে সেটা জানতাম না। 

পারুল আপা তার ভেনিটি ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিলেন সাজু ভাইয়ের হাতে। তখন তার ব্যাগ থেকে কি যেন পরে গেল, হাসান সাহেব সেটা হাতে নিয়ে বললো:-

- "দ্রুতগামী" বাসে করেই তো আপনাদের এই এলাকায় আসা যায়, তাই না? 

- দারোগা বললেন, জ্বি হ্যাঁ। 

- আমি সাজুকে বলেছিলাম যে ঢাকায় বাইক রেখে তারপর "দ্রুতগামী পরিবহন" বাসে করে চলে যাই। কিন্তু সাজু বললো " বাইক নিয়ে চলো তাহলে বিভিন্ন যায়গা যেতে সুবিধা হবে। "

হঠাৎ করে আলোচনা ঘুরে গেল, একটু পরে তারা সবাই উঠে দাঁড়াল। উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আস্তে আস্তে দারোগা সাহেব বেরিয়ে গেল। যাবার সময় সাজু ভাই আমাকে বললো " ভালো থেকো তুমি, এমন পরিস্থিতিতে তোমার সঙ্গে দেখা হলো তাই তেমন কিছু বলতে পারি নাই। "

- - - - 

সারাদিন অমনি করে কেটে গেছে, আর কেউ আসে নাই সারাদিন। মা-বাবা আরও বেশি চিন্তার মধ্যে পরে গেল, আমিও ভয়ানক চিন্তা করছি। শেষ পর্যন্ত কিনা আমাকেই খুনের অপবাদ দিয়ে গেল তারা? 

মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে গা ছমছম করা শুরু করেছে, বাবা বাসায় আছে। আমি মা-বাবার সঙ্গে বসে ছিলাম, ফারজানার লাশ দাফন করা হয়েছে আসরের দিকে। 

সম্মুখে আবারও সেই অন্ধকার রাত্রি। তাই রাতের খাবার খেয়ে মা আমার সঙ্গে ঘুমাতে এসেছেন, আতঙ্কিত মনে কিছুক্ষণ আফসোস আর হাহুতাশ করে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করতে লাগলাম। 

শেষ রাতের দিকে হঠাত করে মায়ের নড়াচড়া অনুভব করছি এবং ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি মা বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছে, এবং যখন দেখলাম ভিতরের দরজা না খুলে ঘরের বাহিরে যাবার দরজা খুলছে তখন আমি বললাম, 

- কোই যাও মা? 

- তুই জেগে ওঠেছিস? চিন্তা করিস না, তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠেছি। তোর জন্য এতো বিপদ ঘুরছে তাই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে চাই। 

- তাহলে বাহিরে কেন? 

- অজু করতে যাই কলপাড়ে। 

- ঘরের মধ্যে তো বাথরুম আছে তাহলে বাহিরে কেন মা? 

- গতকাল বিকেলে মটর নষ্ট হয়ে গেছে, উপরের টাংকিতে পানি নেই। সন্ধ্যা বেলা একবার মনে করেছিলাম এক বালতি পানি এনে রাখবো কিন্তু পরে ভুলে গেছি। তুই চিন্তা করিস না আমি অজু করেই আসবো, ঘুমা তুই। 

মা বেরিয়ে গেল, কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে মায়ের কোন হদিস পাচ্ছি না। কলপাড়ে গিয়ে কল চাপার শব্দ শোনা যাচ্ছে না, তাহলে মা কোই? 

আমার শরীর আবারও ছমছমে হয়ে গেল, আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। মিনিট পাঁচেক চুপ করে বসে থেকে বিছানা থেকে নামলাম, তারপর দরজার কাছে গিয়ে মা মা বলে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু মায়ের কোন সাড়া পাওয়া গেল না, আমি অনেকটা ভয়ে দরজা থেকে পিছনে ফিরে বিছানায় যেতে লাগলাম। 

কিন্তু হঠাৎ কারো নিঃশব্দে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল দরজার সামনে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কারো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে, আমি মা বলে ডাক দিলাম কিন্তু জবাব এলো না। আর তখন সে সামনে এগিয়ে এলো আর আমি ভয়ে ভয়ে উল্টো করে পিছনে পিছনে হাঁটছি। একটু পরে অনুভব করলাম লোকটা তার হাতে একটা রুমাল দিয়ে আমার নাক-মুখ চেপে ধরছে। কোন এক ঘ্রাণে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মাথা যেন ঘুরছে সম্পুর্ণ পৃথিবী নিয়ে। আমি কি মারা যাচ্ছি নাকি অজ্ঞান হচ্ছি? 

.
.
.

চলবে... 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: থ্রিলার গল্প -সাজু ভাই - সিরিজ - (গল্প: সাজু ভাই) - by Bangla Golpo - 04-12-2022, 09:41 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)