29-05-2019, 09:32 PM
তারপরে ওর সাথে কিছুক্ষণ গল্প–গুজব করে, বিয়ের কার্ডটা দিয়ে আমি আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে মোবাইলে অজিতের আত্মকথা পড়তে লাগলাম। পরিষ্কার গোটা গোটা হাতের লেখা এবং আইফোনের ক্যামেরা বলে আমার পড়তে খুব একটা অসুবিধা হল না। এমন রসালো কাহিনী যে আমি বাড়ি গিয়ে অনেক রাত অবধি পড়ে সেই ডায়েরি শেষ করলাম। সেই ডায়েরিরই কিছু পাতা এখন আপনাদের সামনে আমি সংক্ষেপে তুলে ধরলাম–
৯ই থেকে ২৪শে বৈশাখঃ
বিয়ের জন্য আমাদের বাড়ি থেকে সুলতাকে আশীর্বাদ করার পর্ব শেষ হয়ে গেলে আমি অফিসে গিয়ে শুনি আমাদের সংস্থাটি একটা বড়ো আমেরিকান কোম্পানি কিনে নিয়েছে আর সেই উপলক্ষে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যে বেলায় কাছেই একটা নামী হোটেলে আয়জিত পার্টিতে কোম্পানির সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কয়েকজন কলিগ আমাকে খুব করে অনুরোধ করলো, বিকালে পার্টিতে আমার ভাবী বউকে নিয়ে আসতে। সবাই এমন ভাবে নিবেদন করল যে আমি তাদের আর্জি ফেলতে পারলাম না। আমি জানি সুলতা এমনই একটু লাজুক প্রকৃতির, সাধারণত কোন পার্টি বা অনুষ্ঠানে যেতে চায় না।
তবুও অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে সন্ধ্যে বেলায় পার্টিতে নিয়ে এলাম। সেদিনের পার্টিতে হাল্কা নীল রঙের শাড়ী পরিহিত প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা, সুঠাম, বাঙালী মেয়েদের তুলনায় যথেষ্ট ফর্সা, সরল এবং খুবই মিষ্টি মুখশ্রীযুক্ত সুলতাকে দেখে সবার চোখ একেবারে ধাঁধিয়ে গেছিল।
আমাদের বর্তমান হেড বস একজন আমেরিকান নিগ্রো, নাম জন, নিজে এগিয়ে এসে সুলতার সাথে পরিচয় করলেন এবং মনে হল বস আমার বউকে দেখে মোহিত হয়ে গেছেন। কারণ উনি অবধি সুলতার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত পুঙ্খানুপঙ্খভাবে দেখতে ছাড়লেন না। যদিও বা উনার এহেন চাহুনি আমাকে কিছুটা লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিল এবং উনি যেভাবে সুলতার গায়ে ঢলে ঢলে কথা বলছিল তাতে সুলতাও কিছুটা বিব্রত হল।
পার্টি শেষ হওয়ার পর ওকে নিয়ে যখন আমি বাড়ি ফিরছিলাম তখন ও তো প্রায় লজ্জায় কেঁদেই দিচ্ছিল। আমার কাঁধে মাথা রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতে নালিশ করছিল
– “তোমাদের অফিসের লোকগুলো কিরকম অভদ্রের মত আমাকে দেখছিল! ওদের সাথে তুমি কাজ কর কিভাবে?”
– “আসলে সবাই মদ খেয়ে ছিল তো, তাই ওরকম আচরণ করছিল। তোমাকে পার্টিতে নিয়ে আসাটা আমারই ভুল। আসলে সবাই যেভাবে আমাকে ধরল…”
– “আর ওই কালো নিগ্রোটা তো অসভ্যের মত আমাকে টাচ করার চেষ্টা করছিল। বিদেশীদের কোন কালচার নেই!”
– “আরে উনি তো আমাদের মেইন বস!”
– “এরকম লোক বস হলে আর সেই অফিসে মেয়েরা কাজ করতে পারবে না।”
– “অফিসের মেয়েগুলোও সেরকম! ওদের কোন লজ্জা–শরম নেই, টাকার জন্য যখন যার সাথে পারে থেকে যায়।”
আমার কথা শুনে সামনে বসে থাকা ট্যাক্সি ড্রাইভার মিচকি হেসে বলল
– “আর বলবেন না বাবু! যা দিনকাল পড়েছে! ট্যাক্সির মধ্যেও মেয়েরা তাদের বসের সাথে এমন আচরণ করে…”
গল্প করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুলতার বাড়ি এসে গেল। ওকে ওদের বাড়িতে নামিয়ে আমি আমার নতুন ফ্লাটে চলে গেলাম। পরদিন অফিসে গিয়ে শুনি আমার প্রোমোশন হয়েছে। হেড বস, জন আমার কাজের রেকর্ড দেখে এতো খুশি হয়েছেন যে উনার সুপারিশেই আমার প্রমোশনটা হয়ে গেল। কিন্তু আমি তো বুঝলাম আসলে আমার বউয়ের রূপের জন্যই আমি এই প্রোমোশনটা পেয়েছি।
কারণ এই প্রোমোশনটা আমি অনেকদিন ধরেই পাব পাব করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বসের আসল উদ্দেশ্যটাও জেনে গেলাম– আমার এই প্রোমোশন উপলক্ষ্যে উনি আবার একটি পার্টির আয়োজন করেছেন এবং সেখানে আমাকে সস্ত্রীক আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হল। কিন্তু ওই ভুল আমি আর দুইবার করছি না। সুলতার শরীর ভালো নেই অজুহাত দেখিয়ে ওকে ছাড়াই আমি পার্টিতে গেলাম।
২৬শে বৈশাখ থেকে ২০ই জৈষ্ঠঃ
প্রোমোশনের পর মাইনে যৎসামান্য বাড়লেও, কাজের চাপ কিন্তু দ্বিগুন বেড়ে গেল। অফিসে কোন ফুরসৎ পাচ্ছিনা। এদিকে আবার আমার বিয়ে এসে গেল, কিন্তু ওদিকে আমার ছুটি মঞ্জুর হচ্ছে না। তার উপর সেদিন সুলতাকে নিয়ে যায়নি বলে অফিসের সকলেই আমার উপর একটু ক্ষেপে রয়েছে। কিন্তু চাকরির জন্য বিয়ে তো আর ফেলে রাখা যায় না? তাই শেষমেশ অফিসের কাউকে না জানিয়েই তিনদিন ছুটি করে বিয়ে করতে গেলাম। বাড়িতে বিশাল ব্যস্ততা। আনন্দ–ফুর্তির মধ্যে দিয়ে নির্বিঘ্নে বিয়ে মিটে গেল।
কিন্তু পরদিন বৌভাতের জন্য অফিসের সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ আমি জানতে পারলাম পরপর চারদিন কাউকে না জানিয়ে ছুটি করার জন্য, নতুন কোম্পানি যাদেরকে ছাটাই করবে বলে ঠিক হয়েছে, সেই তালিকায় আমার নামও রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি আমার ইমিডিয়েট বস কুমারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি লিস্ট থেকে আমার নাম উঠিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু তিনি বললেন
– “অজিত, আমি কিছুই করতে পারব না, এই অর্ডার অনেক উপরের থেকে আসছে। তোমার নাম তুলে নেওয়ার জন্য আমি উনাদেরকে অনেক করে অনুরোধ করেছি। কিন্তু উনারা আমার কথা কিছুই শুনলেন না।”
আমি বুক ভাঙা ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং সুলতাকে সব খুলে বলি। ও সব শুনে আমায় বলল আর একবার কুমারকে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে অনুরোধ করার জন্য। আমি চিরদিন কলেজ–কলেজের ফার্স্ট বয় ছিলাম বলে কোনোদিন কাউকে কোন কাজের জন্য তেল মাখায় নি। তবুও চাকরির জন্য পরেরদিন আমার বউভাত সত্ত্বেও আমি আবার অফিসে গেলাম এবং কুমারকে হাত জোর করে আমার নাম লিস্ট থেকে তুলে দেবার জন্য অনুরোধ করি।
আমার কাতর আর্জি শুনে কুমার বললেন, তিনি আমাদের নতুন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, জনকে বলে দেখছে এই ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা? এই বলে তিনি কিছুক্ষণ পরে জনের কেবিনে ঢুকলেন এবং দশ মিনিট পরে বেরিয়ে এসে আমাকে জনের সাথে কথা বলানোর জন্য উনার কেবিনে নিয়ে গেলান। জন আমাকে জানালেন, উনি কেবলমাত্র একটি শর্তেই আমার নাম ওই সাস্পেনশন লিস্ট থেকে কেটে দিতে পারেন। আবার কাজ ফিরে পাওয়ার আনন্দে আমি সাগ্রহে শর্তটা জানতে চাইলাম, কিন্তু বজ্রাঘাতের মতো সেই শর্ত আমাকে আঘাত হানল।
টলতে টলতে আমি কেবিন থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। মনে হচ্ছিল এখুনি রাস্তায় আমার স্ট্রোক হবে। বাড়িতে তখন উৎসবের পরিবেশ, সবাই যে যার মত আনন্দ করছে। আমিও কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না, কিন্তু ফুলশয্যার রাতে যখন সুলতার মুখোমুখি হলাম ও অতি আগ্রহের সঙ্গে ও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো
– “দেখা করেছ বসের সাথে?”
– “হ্যাঁ!”
– “চাকরির ব্যাপারে কি বলল?”
– “নতুন কোম্পানির হেড বস বলল, আমাকে চাকরি ফেরত দিতে পারে, কিন্তু চাকরি ফেরত পাবার জন্য আমাকেও কিছু দিতে হবে!”
– “কি দিতে হবে? টাকা পয়সা? কত টাকা দিতে হবে?”
– “টাকা নয় অন্য কিছু”
– “অন্য কিছু! কি?”
আমি কি বলবো! তবুও অনেক কষ্টে ওকে বললাম
– “ও তোমাকে চায়! ও তোমাকে এক রাতের জন্য বিছানায় সঙ্গী হিসাবে চায়”
ও চুপ করে খাটে বসে পড়ল। ফুলশয্যার সব উন্মাদনা দমকা হাওয়ায় দপ করে নিভে গেল। এরপর থেকে লজ্জায় আমরা দুজনে পরস্পরের দিকে ঠিকমত তাকাতে পারলাম না এবং এই নোংরা বিষয়ে আমাদের মধ্যে আর কোন কথাও হল না। পরের দিন থেকে আমি নতুন চাকরির খোঁজা শুরু করে দিলাম।
কিন্তু আমার পাশের সব সার্টিফিকেট প্রায় পাচ–ছয় বছর আগেকার এবং আগের কোম্পানি আমাকে ছাটাই করে দিয়েছে বলে সেখানের অভিজ্ঞতার কাগজপত্রও আমি নতুন কোম্পানিতে দেখাতে পারছি না। প্রায় এক–সপ্তাহ শেষ হওয়ার পরেও আমি কোন নতুন চাকরি জোটাতে পারলাম না।
এর মধ্যে আবার ফ্ল্যাটের জন্য নেওয়া বিশাল লোনের ইনস্টলমেন্টের তারিখও এগিয়ে আসতে থাকে। বিয়েতে প্রায় সব টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের এমন অবস্থা যে বাজার করারও টাকাটা পর্যন্ত নেই।
৯ই থেকে ২৪শে বৈশাখঃ
বিয়ের জন্য আমাদের বাড়ি থেকে সুলতাকে আশীর্বাদ করার পর্ব শেষ হয়ে গেলে আমি অফিসে গিয়ে শুনি আমাদের সংস্থাটি একটা বড়ো আমেরিকান কোম্পানি কিনে নিয়েছে আর সেই উপলক্ষে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যে বেলায় কাছেই একটা নামী হোটেলে আয়জিত পার্টিতে কোম্পানির সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কয়েকজন কলিগ আমাকে খুব করে অনুরোধ করলো, বিকালে পার্টিতে আমার ভাবী বউকে নিয়ে আসতে। সবাই এমন ভাবে নিবেদন করল যে আমি তাদের আর্জি ফেলতে পারলাম না। আমি জানি সুলতা এমনই একটু লাজুক প্রকৃতির, সাধারণত কোন পার্টি বা অনুষ্ঠানে যেতে চায় না।
তবুও অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে সন্ধ্যে বেলায় পার্টিতে নিয়ে এলাম। সেদিনের পার্টিতে হাল্কা নীল রঙের শাড়ী পরিহিত প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা, সুঠাম, বাঙালী মেয়েদের তুলনায় যথেষ্ট ফর্সা, সরল এবং খুবই মিষ্টি মুখশ্রীযুক্ত সুলতাকে দেখে সবার চোখ একেবারে ধাঁধিয়ে গেছিল।
আমাদের বর্তমান হেড বস একজন আমেরিকান নিগ্রো, নাম জন, নিজে এগিয়ে এসে সুলতার সাথে পরিচয় করলেন এবং মনে হল বস আমার বউকে দেখে মোহিত হয়ে গেছেন। কারণ উনি অবধি সুলতার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত পুঙ্খানুপঙ্খভাবে দেখতে ছাড়লেন না। যদিও বা উনার এহেন চাহুনি আমাকে কিছুটা লজ্জার মধ্যেই ফেলে দিল এবং উনি যেভাবে সুলতার গায়ে ঢলে ঢলে কথা বলছিল তাতে সুলতাও কিছুটা বিব্রত হল।
পার্টি শেষ হওয়ার পর ওকে নিয়ে যখন আমি বাড়ি ফিরছিলাম তখন ও তো প্রায় লজ্জায় কেঁদেই দিচ্ছিল। আমার কাঁধে মাথা রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতে নালিশ করছিল
– “তোমাদের অফিসের লোকগুলো কিরকম অভদ্রের মত আমাকে দেখছিল! ওদের সাথে তুমি কাজ কর কিভাবে?”
– “আসলে সবাই মদ খেয়ে ছিল তো, তাই ওরকম আচরণ করছিল। তোমাকে পার্টিতে নিয়ে আসাটা আমারই ভুল। আসলে সবাই যেভাবে আমাকে ধরল…”
– “আর ওই কালো নিগ্রোটা তো অসভ্যের মত আমাকে টাচ করার চেষ্টা করছিল। বিদেশীদের কোন কালচার নেই!”
– “আরে উনি তো আমাদের মেইন বস!”
– “এরকম লোক বস হলে আর সেই অফিসে মেয়েরা কাজ করতে পারবে না।”
– “অফিসের মেয়েগুলোও সেরকম! ওদের কোন লজ্জা–শরম নেই, টাকার জন্য যখন যার সাথে পারে থেকে যায়।”
আমার কথা শুনে সামনে বসে থাকা ট্যাক্সি ড্রাইভার মিচকি হেসে বলল
– “আর বলবেন না বাবু! যা দিনকাল পড়েছে! ট্যাক্সির মধ্যেও মেয়েরা তাদের বসের সাথে এমন আচরণ করে…”
গল্প করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুলতার বাড়ি এসে গেল। ওকে ওদের বাড়িতে নামিয়ে আমি আমার নতুন ফ্লাটে চলে গেলাম। পরদিন অফিসে গিয়ে শুনি আমার প্রোমোশন হয়েছে। হেড বস, জন আমার কাজের রেকর্ড দেখে এতো খুশি হয়েছেন যে উনার সুপারিশেই আমার প্রমোশনটা হয়ে গেল। কিন্তু আমি তো বুঝলাম আসলে আমার বউয়ের রূপের জন্যই আমি এই প্রোমোশনটা পেয়েছি।
কারণ এই প্রোমোশনটা আমি অনেকদিন ধরেই পাব পাব করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি বসের আসল উদ্দেশ্যটাও জেনে গেলাম– আমার এই প্রোমোশন উপলক্ষ্যে উনি আবার একটি পার্টির আয়োজন করেছেন এবং সেখানে আমাকে সস্ত্রীক আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হল। কিন্তু ওই ভুল আমি আর দুইবার করছি না। সুলতার শরীর ভালো নেই অজুহাত দেখিয়ে ওকে ছাড়াই আমি পার্টিতে গেলাম।
২৬শে বৈশাখ থেকে ২০ই জৈষ্ঠঃ
প্রোমোশনের পর মাইনে যৎসামান্য বাড়লেও, কাজের চাপ কিন্তু দ্বিগুন বেড়ে গেল। অফিসে কোন ফুরসৎ পাচ্ছিনা। এদিকে আবার আমার বিয়ে এসে গেল, কিন্তু ওদিকে আমার ছুটি মঞ্জুর হচ্ছে না। তার উপর সেদিন সুলতাকে নিয়ে যায়নি বলে অফিসের সকলেই আমার উপর একটু ক্ষেপে রয়েছে। কিন্তু চাকরির জন্য বিয়ে তো আর ফেলে রাখা যায় না? তাই শেষমেশ অফিসের কাউকে না জানিয়েই তিনদিন ছুটি করে বিয়ে করতে গেলাম। বাড়িতে বিশাল ব্যস্ততা। আনন্দ–ফুর্তির মধ্যে দিয়ে নির্বিঘ্নে বিয়ে মিটে গেল।
কিন্তু পরদিন বৌভাতের জন্য অফিসের সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ আমি জানতে পারলাম পরপর চারদিন কাউকে না জানিয়ে ছুটি করার জন্য, নতুন কোম্পানি যাদেরকে ছাটাই করবে বলে ঠিক হয়েছে, সেই তালিকায় আমার নামও রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি আমার ইমিডিয়েট বস কুমারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি লিস্ট থেকে আমার নাম উঠিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু তিনি বললেন
– “অজিত, আমি কিছুই করতে পারব না, এই অর্ডার অনেক উপরের থেকে আসছে। তোমার নাম তুলে নেওয়ার জন্য আমি উনাদেরকে অনেক করে অনুরোধ করেছি। কিন্তু উনারা আমার কথা কিছুই শুনলেন না।”
আমি বুক ভাঙা ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং সুলতাকে সব খুলে বলি। ও সব শুনে আমায় বলল আর একবার কুমারকে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে অনুরোধ করার জন্য। আমি চিরদিন কলেজ–কলেজের ফার্স্ট বয় ছিলাম বলে কোনোদিন কাউকে কোন কাজের জন্য তেল মাখায় নি। তবুও চাকরির জন্য পরেরদিন আমার বউভাত সত্ত্বেও আমি আবার অফিসে গেলাম এবং কুমারকে হাত জোর করে আমার নাম লিস্ট থেকে তুলে দেবার জন্য অনুরোধ করি।
আমার কাতর আর্জি শুনে কুমার বললেন, তিনি আমাদের নতুন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, জনকে বলে দেখছে এই ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা? এই বলে তিনি কিছুক্ষণ পরে জনের কেবিনে ঢুকলেন এবং দশ মিনিট পরে বেরিয়ে এসে আমাকে জনের সাথে কথা বলানোর জন্য উনার কেবিনে নিয়ে গেলান। জন আমাকে জানালেন, উনি কেবলমাত্র একটি শর্তেই আমার নাম ওই সাস্পেনশন লিস্ট থেকে কেটে দিতে পারেন। আবার কাজ ফিরে পাওয়ার আনন্দে আমি সাগ্রহে শর্তটা জানতে চাইলাম, কিন্তু বজ্রাঘাতের মতো সেই শর্ত আমাকে আঘাত হানল।
টলতে টলতে আমি কেবিন থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। মনে হচ্ছিল এখুনি রাস্তায় আমার স্ট্রোক হবে। বাড়িতে তখন উৎসবের পরিবেশ, সবাই যে যার মত আনন্দ করছে। আমিও কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না, কিন্তু ফুলশয্যার রাতে যখন সুলতার মুখোমুখি হলাম ও অতি আগ্রহের সঙ্গে ও আমাকে জিজ্ঞাসা করলো
– “দেখা করেছ বসের সাথে?”
– “হ্যাঁ!”
– “চাকরির ব্যাপারে কি বলল?”
– “নতুন কোম্পানির হেড বস বলল, আমাকে চাকরি ফেরত দিতে পারে, কিন্তু চাকরি ফেরত পাবার জন্য আমাকেও কিছু দিতে হবে!”
– “কি দিতে হবে? টাকা পয়সা? কত টাকা দিতে হবে?”
– “টাকা নয় অন্য কিছু”
– “অন্য কিছু! কি?”
আমি কি বলবো! তবুও অনেক কষ্টে ওকে বললাম
– “ও তোমাকে চায়! ও তোমাকে এক রাতের জন্য বিছানায় সঙ্গী হিসাবে চায়”
ও চুপ করে খাটে বসে পড়ল। ফুলশয্যার সব উন্মাদনা দমকা হাওয়ায় দপ করে নিভে গেল। এরপর থেকে লজ্জায় আমরা দুজনে পরস্পরের দিকে ঠিকমত তাকাতে পারলাম না এবং এই নোংরা বিষয়ে আমাদের মধ্যে আর কোন কথাও হল না। পরের দিন থেকে আমি নতুন চাকরির খোঁজা শুরু করে দিলাম।
কিন্তু আমার পাশের সব সার্টিফিকেট প্রায় পাচ–ছয় বছর আগেকার এবং আগের কোম্পানি আমাকে ছাটাই করে দিয়েছে বলে সেখানের অভিজ্ঞতার কাগজপত্রও আমি নতুন কোম্পানিতে দেখাতে পারছি না। প্রায় এক–সপ্তাহ শেষ হওয়ার পরেও আমি কোন নতুন চাকরি জোটাতে পারলাম না।
এর মধ্যে আবার ফ্ল্যাটের জন্য নেওয়া বিশাল লোনের ইনস্টলমেন্টের তারিখও এগিয়ে আসতে থাকে। বিয়েতে প্রায় সব টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের এমন অবস্থা যে বাজার করারও টাকাটা পর্যন্ত নেই।