Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#21
পর্ব-০৬




 

        রিয়া অসুস্থ। রাতে শরীরটা সামান্য গরম এবং হালকা মাথাব্যথা থাকলেও সে সেটাকে গুরুত্ব দেয় নি। ভেবেছিল ক্লান্তির কারণে এমন লাগছে। কিন্তু রাত না যেতেই, জ্বর বাড়তে থাকে, সেই সাথে মাথাব্যথা সহ্যের বাইরে চলে যায়। 

        সকালে শাহেদা বার কয়েকবার রিয়াকে ডেকেও কোনো সারা শব্দ না পেয়ে তার রুমে এসে দেখে রিয়ার এই অবস্থা। সে তাৎক্ষণিক রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নানা কথা শোনাতে থাকে তাকে। কিন্তু যতই হোক নিজের পেটের সন্তান। সে রাগ ঝেড়ে ফেলে তখনি রিয়ার বাবাকে বলে ডাক্তার ডেকে আনে। রিয়াকে দেখে ডাক্তার অবশ্য বলেছে, "ভয়ের কিছু নেই। সামান্য জ্বর। ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি, সময়মত খেলে দুই একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।" 

        ডাক্তারের কথায় অবশ্য শাহেদা পুরোপুরি শান্ত হলো না। সে রিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করাবে এই নিয়ে রিয়ার বাবা মনোয়ার হোসেনের সাথে দুপুর থেকে তর্কাতর্কি করে যাচ্ছে। 

        মনোয়ার এক সময় বিরক্ত হয়ে বলল, "ডাক্তার-তো বলল, মেয়ের কিছু হয়নি। এতো অস্থির হয়ে যাচ্ছো কেনো?"
        "অস্থির হবো না? বিকাল হয়ে গেলো, জ্বর কমার কোনো লক্ষণ নেই।"
        "এতো অস্থির হলে হয়। একটু সময় তো দেওয়া লাগবে।" 
        "হাসপাতালে ভর্তি করলে সমস্যা কি?"
        "কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু...!" 

        মনোয়ার কথা শেষ করলো না। সে জানে শাহেদাকে সে যতই বুঝাক সে শুনবে না। রিয়া তাদের একমাত্র সন্তান। অনেক সাধনার পরে তারা রিয়াকে পেয়েছে। রিয়া অসুস্থ হলে শাহেদা অস্থির হয়ে উঠে। যতক্ষণ রিয়া সুস্থ হবে না, ততক্ষণ তার এই পাগলামি কমবে না। 

        শাহেদা নানা কথা বলে গেলেও মনোয়ার সে সব কথায় উত্তর দিলো না। সে চুপচাপ শুনে গেলো শুধু। শাহেদা একটু শান্ত হলে সে বলল, "টেনশন করো না। এমন করলে হয়।" 

        শাহেদা হঠাৎ কেঁদে দিলো। সে বলল, "তোমার মনে নেই, ছোটবেলায় একবার জ্বর হয়ে মেয়েটা অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছিলো। একমাস লেগেছিলো সুস্থ হতে। তারপর থেকে ওর জ্বর হলে আমার অনেক ভয় হয়। মনে হয়, এই বুঝি খারাপ কিছু হলো।"
        "আহ! আবার কান্না শুরু করলে। এভাবে ভেঙে পড়লে হয়। আমাদের উচিত সবসময় শক্ত থাকা।" এটুকু বলে মনোয়ার খানিকটা এগিয়ে এসে শাহেদা বানুর পাশে বসল। তার হাত দুটো নিজের হাতের ভেতর নিলো। সেই স্পর্শে ভরসা ছিলো। 

        শাহেদা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, "মেয়েটাকে একা একা কোথাও যেতে দিতে ইচ্ছে করে না আমার। এবারও কত বারণ করলাম। কিন্তু এমন ভাবে অনুরোধ করল। শেষমেশ ওকে আর না করতে পারলাম না।"
        "মেয়ে তো আর ছোট নেই। বড় হয়েছে। সামনের বছরই লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে। বিয়ে দিতে হবে। তখন-তো আমাদের মেয়েকে ছাড়াই থাকতে হবে।" 

        মনোয়ারের এই কথায় শাহেদা আরো ভেঙে গেলো। সে বলল, "আমার মেয়েকে আমি কখনো বিয়ে দিবো না। আমার কাছেই রেখে দিবো সারাজীবন।" 
        "আচ্ছা। তাই হবে।" মনোয়ার এটুকু বলে শাহেদার কাঁধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো। সেও চায় না মেয়েকে চোখের আড়াল করতে। কিন্তু সে জানে, তা কখনোই সম্ভব না। শাহেদাও সেকথা জানে। কিন্তু কখনো কখনো মন কিছুতেই বুঝতে চায় না। 

        রিয়ার অসুস্থতার কথা শুনে পর দিন ইরিনা তাকে দেখতে এলো। সে এখন রিয়ার পাশে বসে আছে। এসেই রিয়াকে দেখে সে আঁতকে উঠল। মাত্র দুই দিনের জ্বরে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার। চোখ ডুবে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছি। 

        রিয়াকে জ্বর যতটা না অসুস্থ করেছে, তারচে' বেশি তাকে অসুস্থ করে দিয়েছে তার মনের অসুস্থটা। সেই অসুখের কথা সে কাউকেই কিছু বলতে পারে না। এখন ইরিনাকেও বলবে না। ইরিনা সেদিন যা করলো সেটা তার কাছ থেকে রুদ্রকে আরও খানিকটা দূরে ঢেলে দিয়েছে। অবশ্য সে জানে, ইরিনা তার কথা ভেবেই রুদ্রের সাথে এই নিয়ে তর্কতর্কি করেছে। কিন্তু এর ফল এখন তাকেই ভোগ করতে হচ্ছে। সে আগে চাইলেই যখন তখন রুদ্রকে কল দিতে পারতো, মেসেজ দিতে পারতো, কিন্তু এখন? এখন সে কি করবে। তার এই জ্বরের ঘোরে সে রুদ্রের কথাই সবচে' বেশি ভেবেছে। যতবার রুদ্রের কথা ভেবেছে, ততবার রুদ্রকে বলা তার শেষ কথাগুলো মনে পড়েছে। রুদ্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলেও সে এখন তাকে কল বা মেসেজ দিতে পারবে না। তাকে দেখতে ইচ্ছে করলে, সে তার সামনে যেতে পারবে না। এই কষ্টটা, এই অসুখটা তাকে আরো বেশি অসুস্থ করে দিয়েছে। এই যন্ত্রণা তাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। 

        "তোকে দেখে মনে হচ্ছে, তুই দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। কি অবস্থা করেছিস নিজের।" ইরিনা বলল।
        "দুইদিন ধরে কিছুই খেতে পারছি না। মা সকাল দুপুর রাতে খাওয়া নিয়ে জোর করছে। কিন্তু মুখে কিছু দিলেই আমার বমি আসছে। খাবারের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না।" 
        "ওষুধ খাচ্ছিস ঠিক মত?"
        "না খেয়ে উপায় আছে? তুই তো জানিস আমার মা কেমন। আমি অসুস্থ হলে কতটা অস্থির হয়ে থাকে সারাক্ষণ।" 

        রিয়ার সাথে ইরিনা আরো খানিকটা সময় এটা সেটা নিয়ে গল্প করল। ইরিনা অবশ্য রিয়াকে কঠিন কিছু কথা বলতে এসেছিলো আজকে। কিন্তু রিয়াকে এভাবে দেখে সে আর সে-সব কথা মুখে আনলো না। আগে মেয়েটা সুস্থ হোক। তারপর সময় নিয়ে তাকে বুঝিয়ে কথাগুলো বলা যাবে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে ইরিনা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। 

        নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হলেও রুদ্র প্রথম দুইদিন ক্লাসে গেলো না। সে নিজেকে খানিকটা একা করে রাখলো। সেই ঝামেলার পরে সে কিছুদিন কারোই মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলো না। 

        দুইদিন পর ক্লাসে যেতেই প্রথমে ফাহিমের সাথে দেখা হয়ে গেলো রুদ্রের। সে তাকে দেখেও না দেখার মত করে পাশ কাটিয়ে ক্লাসের শেষের দিকে একটা চেয়ারে বসল। এই মুহূর্তে সে ফাহিমের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখল ফাহিম তার দিকেই হেঁটে আসছে। সে তাৎক্ষণিক তার ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে সেটাতে মনোভাব দেওয়ার চেষ্টা করল। 

        ফাহিম হেঁটে এসে রুদ্রের চেয়ারের সামনে দাঁড়ালো। রুদ্র যে-ভাবে ছিলো সেভাবেই রইল। কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফাহিম বলল, "রুদ্র!"
        "উঁহু!" রুদ্র না তাকিয়ে উত্তর দিলো।
        "সেদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত।"
        রুদ্র এবার বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল, "সমস্যা নেই। "বন্ধুদের মধ্যে সময় অসময় দুই একটা কথা নিয়ে একটু মনমালিন্য হয়েই থাকে। সেটাকে ধরে রাগ করে থাকলে চলে না। আমি আমার কাজের জন্য তোর কাছেও দুঃখিত।"
        "তুই রাগ করে নেই তো?"
        "না, নেই।"
        "আচ্ছা, থ্যাংকস।"
        "ইটস ওকে।" 

        ফাহিম কথা শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এলো। সে হেঁটে নিচে নামার সময় সিঁড়িতে ইরিনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। 

        ফাহিমকে দেখেই ইরিনা বলল, "কোথায় যাচ্ছিস?"
        "লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।"
        "ক্লাস করবি না?"
"হ্যাঁ, করবো। একটা বই নিছিলাম লাইব্রেরি থেকে সেটা দিয়ে আসছি।"
        "আচ্ছা যা তাহলে।" 

        ফাহিম চলে যাচ্ছিল। সেই মুহুর্তে ইরিনা তাকে ডেকে বলল, "ফাহিম, রুদ্র আজকে এসেছে?"
        "হ্যাঁ, ক্লাসে আছে।"
        "রুদ্রের সাথে সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলেছিস। নাকি পরে বলবি?"
        "হ্যাঁ, বলেছি।"
        "কি বলল?"
        "সেই ঘটনার কারণে ও রেগে নেই।"
        "যাক তাহলে ভালো। আচ্ছা যা তুই। তারাতাড়ি আসিস। ক্লাস শুরু হতে সময় বেশি বাকী নেই।"
        "আচ্ছা।" এই বলে ফাহিম চলে গেলো। 

        ইরিনা ভেবেছিল ফাহিম আরো কিছু বলবে তাকে। কিন্তু সে বলেনি। সে গতকাল রাতে ফাহিমকে মেসেজ দিয়ে রুদ্রকে সরি বলতে বলেছে। সে জানে এটা বলাতে ফাহিম তার উপর কিছুটা অখুশি হয়েছে। কিন্তু সে এটাও জানে, দুই একদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, ভালোবাসার মানুষের উপর মানুষ বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। ফাহিম ও পারবে না তার বিশ্বাস। 

        ফাহিম লাইব্রেরিতে না গিয়ে ক্যান্টিনে চলে এলো। এই মুহুর্তে তার ক্লাস করার মত মন মানসিকতা নেই। ইরিনার কাছ থেকে সে এরকম ব্যবহার আশা করেনি। ইরিনা সবসময় তাকে অবহেলা করে। ছোট করে দেখে। এটা তার একটুও পছন্দ না। তবুও সে ভালোবাসে বলে সব মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়। কিন্তু আর না। সে আর কারো কাছে ছোট হবে না। 

        এই মুহুর্তে ফাহিম নানা বিষয় নিয়ে ভাবছে, আর রাগে টগবগিয়ে ফুলছে। তার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই। সে ক্যান্টিনে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না। সেখান থেকে উঠে সোজা তার রুমের দিকে রওনা দিলো। সেই ঘটনার জন্য রুদ্রকে সরি বলতে বলার কারণে ইরিনার প্রতি তার রাগ হচ্ছে না। সে এমনিতেই রুদ্রকে সরি বলত। কিন্তু তার রাগ হচ্ছে অন্য সব কারণে। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে সে ইরিনাকে পছন্দ করে এবং সেকেন্ড ইয়ার থেকে সে ইরিনাকে ভালোবাসে। তাকে ভালোবাসার পর সে এই দুই বছরে কতবার নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করেছে। কিন্তু কখনো ইরিনা সরাসরি তাকে কোনো উত্তর দেয় নি। আবার অপছন্দ করে সেটাও কখনো বলেনি। ইরিনার এই দ্বিধান্বীত থাকাটা ফাহিমের আর পছন্দ হচ্ছে না। কতদিন সে অপেক্ষা করবে। এইবার সে এই দ্বিধাহীন সম্পর্কে একটা সমাপ্তি চায়। সেটা সুন্দর হোক কিংবা অসুন্দর তাতে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এভাবে সে আর থাকতে চায় না। মানুষ একসময় বিরক্ত হয়েই যায়।

        ক্যাম্পাস থেকে ফাহিমের মেসে হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু তার এই মুহুর্তে হাঁটতে ইচ্ছে করছে না বলে একট রিকসা নিলো। সে রিকসায় বসে ইরিনাকে মেসেজ করল, "ডু ইয়উ লাভ মি ওর নট?" মেসেজটা সেন্ড করে সে আরেকটা মেসেজ লিখল, "যদি ভালোবাসিস তাহলে সরাসরি উত্তর দিবি। আর যদি ভালো না বাসিস তাহলে সেটাও সরাসরি বলে দিবি। আমি হ্যাঁ কিংবা না এর মাঝে থাকতে চাই না। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করছে।" এই মেসেজটাও সে সেন্ড করে বেশ কিছুক্ষণ পরে সে আরো একটা মেসেজ লিখল, "যদি আমাকে পছন্দ না করিস তাহলে সেটা সরাসরি বলে দে আমাকে, তোর সামনে আর কখনো আমি ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়াবো না।" 

        দিন চলে গিয়ে রাত হয়ে গেলেও ইরিনার কোনো উত্তর এলো না। ফাহিম ধরেই নিলো ইরিনা তাকে আসলে ভালোই বাসে না। এতদিন সে শুধু আমাকে ব্যবহার করছে। ফাহিমের হঠাৎ রাগটা চলে গেলো। সে আর ইরিনার উপর রেগে নেই। সে এখন মুক্ত। সে আর কোনো দ্বিধাহীন সম্পর্কে নেই। 

        ফাহিমের রাতটা খুব বিচ্ছিরি ভাবে কাটলো। কিছুতেই তার ঘুম হলো না। সবকিছু নিয়ে সে খুব ডিপ্রেশন অনুভব করল। সে আজ থেকে আর ইরিনাকে ভালোবাসবে না। সে যতই নিজেকে এটা বলে বোঝাক তার মনের একটা অংশ কিছুতেই এই সত্যটা মেনে নিতে পারছে না। 

        সকাল হতেই ফাহিম ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে রেডি হলো গ্রামে যাবে বলে। অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয় না। সে ভেবেছিল সেমিস্টার ব্রেকে যে এক সপ্তাহ বন্ধ পেয়েছে সেই এক সপ্তাহ সে গ্রামে থাকবে। সেই কারণে রুদ্র তাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললেও সে সরাসরি না করে দেয়। কিন্তু যখন সে শুনে ইরিনা যাচ্ছে, সে আর নিজেকে বোঝাতে পারে নি। বাড়ি যাওয়া বাদ দিয়ে সে তাদের সাথে চলে যায়। 

        ফাহিম ভোরেই বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেস থেকে বেরিয়ে গেলো। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা। সে সায়দাবাদ থেকে বাসে উঠলো। গ্রামে সে পৌছালো একটার দিক। কিন্তু লন্স থেমে নামার সময় তার ফোন চুরি হয়ে গেলো। সে অন্যমনস্ক ছিলো বলে খেয়াল করেনি। বাসে উঠে যখন সে পকেটে হাত দেয় তখন দেখে পকেটে তার ফোন নেই। তখনি বাস ছেড়ে দিবে। সে একবার ভেবেছিলো, নেমে যাবে। কিন্ত পরক্ষণেই ভাবলো নেমে কোনো লাভ নেই। চোর তার জন্য বসে নেই যে সে গেলে তাকে ফোন ফেরত দিবে। সে পাশের লোকটার কাছ থেকে ফোন নিয়ে তার নিজের নাম্বারে দুইবার কল দিলো কিন্তু তার ফোন বন্ধ। 

        ফোন চুরি হয়ে যাওয়াতে প্রথম কিছুটা সময় তার খারাপ লাগলেও অদ্ভুত ব্যাপার এখন তার খারাপ লাগছে না। এমনিতেই অনেক পুরনো একটা ফোন। সে চাচ্ছিলো নতুন একটা কিনতে কিন্তু কেনা হয়ে উঠছিল না। নতুন ফোন কেনার জন্য সে প্রতি মাসে তার টিউশনির টাকা থেকে কিছু টাকা জমিয়েছে। এছাড়াও আরেকটা কারণে তার খারাপ লাগছে না। সেটা হলো, একটা দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। যত নষ্টের মূল এই ফোন। সে যে কয়দিন গ্রামে থাকবে সেই কয়দিন ফোন ব্যবহার করবে না। একবারে ঢাকা এসে নতুন ফোন নিয়ে সিম উঠাবে। ততদিনে সে একাই থাকতে চায়। একান্ত একা। 

        ফাহিম ঢাকা আসলো ছয়দিন পর। সে ভেবেছিল আরো দুই একদিন গ্রামে থাকবে কিন্তু যখনই তার বাবা রহমত মাস্টার শুনলো তার ক্লাস খোলা সে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দিলো। অবশ্য ফেরার পথে হাজার দশেক টাকা তার হাতে গুজে দিয়ে তাকে একটা ফোন কিনে নিতে বলল। ফাহিম তার বাবাকে বলেছিল, "তার টাকার দরকার নেই। সে টিউশনির টাকা জমিয়েছে।" কিন্তু তার বাবা সেটা শুনলো না। সে তাকে বলল, "এমনিতেই তোকে তেমন কিছু দিতে পারিনা। এছাড়া তুই কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে প্রতি মাসে কিছু হলেও বাসায় টাকা পাঠাস। তাই এই টাকাটা তোর জন্যই জমিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে কিছু একটা কিনে দিবো।" বাবার এই কথার পরে সে আর কোনো কথা বলতে পারলো না। টাকাগুলো সে নিলো। বাসে আসতে আসতে ঠিক করল এবার সে ভালো একটা ফোন নিবে। 

        ফাহিম মেসে আসতেই সবাই তাকে দেখতে তার রুমে চলে এলো। সে খানিকটা অবাক হচ্ছে। কি এমন হয়েছে, যে সবাই তার আসার খবর পেয়ে এভাবে দেখতে আসছে। কিছুক্ষণ পর সবার এরকম উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ জানতে পারলো তার রুমেটের কাছ থেকে। সে বলল, "তোর কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেলি আমাকে জানিয়ে গেলি না। সকালে উঠে দেখি তুই নেই। ভাবলাম হয়তো টিউশনিতে গেছিস। তারপর পরের দিন তোর খোঁজ করতে তোর বন্ধুরা এলো। তোকে ফোনে পাচ্ছে না বলে সরাসরি মেসে এলো তোর খোঁজ নিতে। সবাই-কে তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। আমি তখন রুমে ছিলাম না। আমি এসে শুনেই তোকে কল দেই। তোর ফোন বন্ধ। সবাই-ই তোকে কল দিতে থাকল। কেউ পেলো না। তারপর পরের দিন সকালেও একটা ছেলে তোর খোঁজে এলো। সেদিন বিকাল এবং রাতেও এলো৷ প্রতিদিন কেউ না কেউ তোকে জরুরি ভাবে খুঁজতে আসতে থাকল। তোর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। আমরা তোকে বারবার ফোন করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। অহ, যে ছেলেটা প্রায়ই তোর খোঁজে আসতো আজকে সকালেও এসেছিলো একবার।"

        "কে এসেছিল? নাম বলেছে?"
        "হ্যাঁ, রুদ্র নাম। রুদ্র ছাড়াও তোর ক্লাসের অনেকে তোকে বারবার খুঁজতে এসেছিল। কিন্তু রুদ্র ছেলেটা প্রায় প্রতিদিন আসতো।" 
        "আমি বাড়ি গেছিলাম। আর যাওয়া পথে আমার ফোন চুরি হয়ে যায়। এই কারণে নাম্বার বন্ধ ছিলো।" 
        "আমি একদিন পরেই বুঝেছিলাম। প্রথম লক্ষ করিনি। পরে খেয়াল করলাম তোর ব্যাগ নেই। কাপড়চোপড় নেই। তখন ভাবলাম, তুই হয়তো বাড়ি গেছিস। তবুও কোনো ভাবে তোর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারচেয়ে বড় কথা সবাই তোকে খুঁজতে এভাবে আসছিল। তাই আমি সহ মেসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলাম। সবাই ভাবছিল খারাপ কিছু হলো কি না তোর। যাক তুই সুস্থ আছিস এটাই স্বস্তির।" 

        ফাহিম বুঝে উঠতে পারছে না রুদ্র কেনো তাকে এতোবার খুঁজতে আসবে। কি কারণে? সে তখনো এটাকে অমলে না নিয়ে তার পরনে জামাপ্যান্ট পরিবর্তন করে গোসল সেরে লম্বা একটা ঘুম দিলো। 

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 01-12-2022, 08:27 PM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)