02-12-2022, 03:12 PM
পর্ব ৩
কানু দত্তর থেকে ঠিকানা নিয়ে পরের শনিবারে কেটুমির বাড়িতে হাজির হয়ে গেল তুলসি আর ইরা। কেটুমির বাবার ইমপোর্টেড ঘড়ির বিরাট ব্যবসা। প্রাসাদোপম বাড়ি। আর সেই বাড়িরই দোতলায় হল কেটুমির ডেন। কেটুমির ঘরের ভেতরাটা কিছুটা আলো-আঁধারি। এক কোনে একটা বাঙ্ক বেড। নীচের দিকের বেডের ওপর রাজ্যের জামাকাপড় ছড়ানো। ওপরের বেডটায় বিছানা করা। উল্টো দিকের কোনে দুটো টেবিলের ওপর তিন-চারটে বড় বড় গেমিং কমপিউটার। নানা রকমের আলো ব্লিংক করছে সেগুলোতে। ঘরের চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে দুটো আর্গোনোমিক চেয়ার আর একটা বিনব্যাগ। ঘরের এক পাশে দেওয়ালের গায়ে একটা গোল টেবিল। তাতে একটা কফি মেকার আর দু-তিন ক্যান রেড-বুল এনার্জি ড্রিংক রাখা। এ ছাড়া, ঘরের চার দেওয়ালে চারটে বড় বড় গ্লসি পোস্টার লাগান; ম্যাট্রিক্সের ক্যারি-আন-মস, কিল-বিলের উমা থার্মান, চার্লিস এন্জেল্সের লুসি লিউ আর হ্যাকারদের গুরুদেব, অ্যাননিমাসের হাঁসি হাঁসি গোঁফ ওয়ালা সেই বিখ্যাত মুখোষ।
"আরে কানু-দা যদি বলতেন যে দুজোন ম্যাডাম আসবেন, তাহলে আমি নিজেই অফিসে চলে যেতাম। আপনাদের কষ্ট করে এখানে টেনে আনতাম না" কেটুমি বলে উঠল।
সেই শুনে ইরা বলল, "আর বাবা...সেটা করলে আমাদের এই অসাধরণ হ্যাকর্স ডেনে ঢোকার সৌভাগ্য হত না"
ওইদিকে তুলসির নজর কিন্তু হ্যাকার্স ডেনের থেকে হ্যাকারের দিকে বেশি । নিজের ছেলের থেকে একটু বড় হলেও তার চোখ গিয়ে পড়লো কেটুমির বডির ওপর। খুব একটা লম্বা-চওড়া স্টাড টাইপা না হলেও, একটা ইজি গ্রেস আছে। মুখটা সরল কিন্তু খুবই বুদ্ধিদিপ্ত - ওপেন ইউনিভার্সিটির করেস্পন্ডেন্স কোর্সে ম্যাথেমাটিক্সে থার্ড ইয়ার। কানু দত্ত বলেছে যে সে কমপিউটার পাগল। তার বাবা বুঝিয়েছে যে গ্রাজুয়েশন না করলে এ দেশে কোন ভবিশ্যত নেই, তাই কলেজে গিয়ে সময় নষ্ট না করে, ঘরে বসেই, হোয়াইট্-হ্যাট হ্যাকারের কাজ করার সঙ্গে কলেজের যাবতিয় ক্লাস আর এসাইনমেন্ট করে। বছরে দুবার গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসে। তুলসির নজর অবশ্য কেটুমির হ্যাফ পান্টের তলা দিয়ে বেরিয়ে থাকা ওর ফর্সা পায়ের দিকে। সামান্য একটু লোমে ঢাকা।
"মিস্টার মিত্র আপনি কি এখানে বসে সব কমপিউটারই হ্যাক করতে পারেন?" টেকনিকাল ব্যাপারে খুব কোতুহল থাকাতে সেই প্রশ্ন না করে থাকতে পারল না ইরা।
"হ্যাঁ পারি। মানে মোটামুটি সাধারণগুলো পারি। তবে সি.আই.এ এর মেসিন নিশ্চয়ই পারবো না..." বলে হেসে উঠল কেটু, কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল যেন সে একটু থতমত খেয়ে গেল। বেশ অপ্রস্তুত হয়ে সে বলল, "মা...মানে আমাকে...মিস্টার বলছেন কেন? সবাই তো আমাকে কেটু বলে। মানে আমি একবার চাইনিজ পি.এল্.এ. ৬১৩৯৮ পেনিট্রেট করেছিলাম।"
কেটুর আওড়ানো সেই শেষ বস্তুটা যে কি সেটা ইরা বা তুলসি কেউই ঠিক করে বুঝলো না। তবে ওরা এইটুকু বুঝলো যে ছেলেটা দুজন মহিলার সামনে বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে পড়েছে। বুদ্ধি থাকলেও, সোশাল স্কিল একেবারেই নেই। মেয়েদের সামনে বেশ আড়োষ্ট।
কেটুকে সেই ভাবে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে ইরা ওকে আশ্বস্ত করে বলল, "রিলাক্স...রিলাক্স কেটু, ডোনট প্যানিক্। মিস্টার দত্তর কাছে আমরা তোমার টেকনিকাল স্কিলের সব কথা শুনেছি। তবে এখন তুলসিদিকে তোমায় একটু হেল্প করতে হবে..."
কানু দত্ত আগে হতেই ব্যাপারটা কেটুকে জানিয়েছিল, তুলসি আর ইরা আরও একটু পরিষ্কার করে ওকে সব কিছু বুঝিয়ে দিল। তুলসীর কথা শুনতে শুনতে বেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠল কেটু। কেটু এক মনে সব কথা শুনে, দু একটা প্রশ্ন করল।
সব শুনে কেটু বলল, "আমাদেরকে শুধু সমীর বাবুর হোয়াটসআপ আর ই-মেল হ্যাক করে কিছু খবর, ছবি আর ভিডিও বার করতে হবে, তাই তো?"
"হ্যাঁ আর তাহলেই পাখি খাঁচায় ধরা পড়ে যাবে", ইরা বলে উঠল।
"ঠিক আছে, কিন্তু এই কাজটা করতে আমার তুলসি ম্যাডামের একটু সাহাজ্য লাগবে"
কেটুর মুখে সেই কথা শোনামাত্রই তুলসী নিজের চেয়ার থেকে উঠে বলল, "কিন্তু তুলসি ম্যাডাম যে তোমার কোন সাহাজ্য করতে পারবে না কেটু", এই বলে কেটুর পেছনের গিয়ে দাঁড়াল তুলসী, তারপর আবার বলল, "কিন্তু তুলসি-মাসিকে তুমি যা বলবে তা সে সঙ্গে সঙ্গে করে দেবে।" বলেই কেটুর পিঠে আলতো করে হাত রাখলো তুলসী, মানে না রেখে আর পারলো না ।
তুলসীর সেই ব্যাবহারে এবার লজ্জায় ফিক করে হেঁসে ফেললো কেটু, তারপর বলল, "ঠিক আছে, তুলসি-মাসি। তাহলে শোন । আমি তোমায় দুটো মিম ইমেজ ফাইল পাঠাবো। তুমি একটা হোয়াট্স্আপ করে সমীর বাবুকে পাঠাবে, আর আরএকটা, দু এক দিন পরে, আবার পাঠাবে। যে কোন একটায় ক্লিক বা ট্যাপ করলেই আমার তৈরী একটা ছোট্ট ভাইরাস প্রথমে ফোনে আর তারপর লগইন করা যেকোনো ডিভাইসে মানে ল্যাপটপে বা ট্যাবে চলে যাবে। তারপর সেই ডিভাইসের মেল বা ফোনের মেসেজ সব কিছুই দেখতে পাবো আমরা"
"বাবাহ! এসব এত...এত সহজ?" তুলসী অবাক হয়ে বলে উঠল।
"হ্যাঁ এতই সহজ। আর সেই জন্যই তো অচেনা নাম্বার থেকে কোন ইমেজে বা লিঙ্ক এলে তাতে কখনও ক্লিক করতে নেই। কিন্তু এখানে, তোমার কাছ থেকে সেই রকম কোন মেসেজ পেলে উনি সাসপেক্ট করবেন না। হ্যাকিং এ একেই বলে সোশাল এন্জিনিয়ারিং ।"