29-11-2022, 11:45 AM
ডিনারে আজ অলকার তৈরি স্পেশাল ডেজ়ার্ট, ‘শিঙাড়া কা হালুয়া’। অলকা অবশ্য বলেন ‘পানিফলের পালো’। পালো খেয়ে রানি তো একেবারে আত্মহারা। এমন ‘ইয়াম্মি’ ডেজ়ার্ট সে নাকি জীবনে খায়নি। একটার পর একটা হালুয়ার বরফি চালান করে চলেছে মুখে। অলকা কোনও ক্রমে বাকিদের পাতে দুটো করে তুলে দিলেন। তাতে রানি একটু ভুরু কুঁচকোল ঠিকই, কিন্তু উঠে এসে অলকার গালে একটা চুমুও খেয়ে গেল।
বড় তৃপ্তি নিয়ে আজ শুতে এসেছেন মৃগাঙ্ক। জীবনটাকে এত পরিপূর্ণ রোজ রোজ মনে হয় না। চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় দরজায় দুমদাম আওয়াজ। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল রানি, বগলে তার বালিশ। সোজা এসে অলকাদের বিছানায় উঠতে উঠতে সে বলে, “আমি এখানে শোব। পুকাই খুব ইরিটেট করছে।”
“কেন রে, হলটা কী?” সন্তর্পণে জিগ্যেস করলেন মৃগাঙ্ক।
“পুকাই আমার বাইসনের ছবি বাজে বলেছে!” নাকের পাটা ফুলছে রানির। বিছানায় উঠে গুছিয়ে বসে পড়ে বলে, “তোমরা কে তোমাদের ছেলের কাছে শুতে যাবে বলো!”
গলার স্বরে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। কোনও পরামর্শ শুনতে সে রাজি নয়।
ধড়মড়িয়ে শয্যা ত্যাগ করেন মৃগাঙ্ক, “আ-আমি যাচ্ছি।”
ঘুম আসছে না অলকার। রাত গভীর হলে মানুষের চিন্তাভাবনার ধরনধারণ বদলে যায় বোধহয়, না হলে রানির যে ন্যাকামি, যে আহ্লাদেপনা সারা দিন অসহ্য ঠেকে তাঁর, সে সব কিছুকে এখন অন্য রকম মনে হচ্ছে কেন? নিজে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যে ভাবে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এই মেয়েটা নিঃসঙ্কোচে সেই ভাবে থাকে। এর বেশি কিছু করে কি? বিয়ের পর মৃগাঙ্কর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি তাঁরও কিছু কম হয়নি। রাগ দেখিয়ে খাট থেকে নেমে মেঝেতে চাদর পেতে শুয়েছেন। এর বেশি কিছু করার সাধ্যই ছিল না অলকার। খিদে পেলেও শাশুড়িমাকে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না। এই মেয়েটা অনায়াসে সে সব পারে। তাই কি রানির উপর এত বিরাগ তাঁর?
রানিকে একটা পানিফলের মতো মনে হচ্ছে এখন অলকার। আহ্লাদেপনার বদখত খোলসটার ভিতরে খুব সাদা সরল আর সবাইকে আপন করে নেওয়া একটা মন রানির নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে, না হলে এ সব কি পারা যায়?
শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে রানি ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সাবধানে পাশ ফিরে বৌমার গায়ে একটা হাত রাখলেন অলকা। স্নেহের হাত।
সে হাতের স্পর্শে ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে রানির মনে হল, তার শাশুড়িটি আস্ত একটি ‘পাঁইফল’। ভুরুদুটোকে সব সময় কাঁটার মতো করে রাখলে কী হবে, মিষ্টি একটা শাঁস মাথার ভিতরে কোথাও ঠিক পোরা আছে!
মোনালিসা চন্দ্র
বড় তৃপ্তি নিয়ে আজ শুতে এসেছেন মৃগাঙ্ক। জীবনটাকে এত পরিপূর্ণ রোজ রোজ মনে হয় না। চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় দরজায় দুমদাম আওয়াজ। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল রানি, বগলে তার বালিশ। সোজা এসে অলকাদের বিছানায় উঠতে উঠতে সে বলে, “আমি এখানে শোব। পুকাই খুব ইরিটেট করছে।”
“কেন রে, হলটা কী?” সন্তর্পণে জিগ্যেস করলেন মৃগাঙ্ক।
“পুকাই আমার বাইসনের ছবি বাজে বলেছে!” নাকের পাটা ফুলছে রানির। বিছানায় উঠে গুছিয়ে বসে পড়ে বলে, “তোমরা কে তোমাদের ছেলের কাছে শুতে যাবে বলো!”
গলার স্বরে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। কোনও পরামর্শ শুনতে সে রাজি নয়।
ধড়মড়িয়ে শয্যা ত্যাগ করেন মৃগাঙ্ক, “আ-আমি যাচ্ছি।”
ঘুম আসছে না অলকার। রাত গভীর হলে মানুষের চিন্তাভাবনার ধরনধারণ বদলে যায় বোধহয়, না হলে রানির যে ন্যাকামি, যে আহ্লাদেপনা সারা দিন অসহ্য ঠেকে তাঁর, সে সব কিছুকে এখন অন্য রকম মনে হচ্ছে কেন? নিজে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যে ভাবে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এই মেয়েটা নিঃসঙ্কোচে সেই ভাবে থাকে। এর বেশি কিছু করে কি? বিয়ের পর মৃগাঙ্কর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি তাঁরও কিছু কম হয়নি। রাগ দেখিয়ে খাট থেকে নেমে মেঝেতে চাদর পেতে শুয়েছেন। এর বেশি কিছু করার সাধ্যই ছিল না অলকার। খিদে পেলেও শাশুড়িমাকে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না। এই মেয়েটা অনায়াসে সে সব পারে। তাই কি রানির উপর এত বিরাগ তাঁর?
রানিকে একটা পানিফলের মতো মনে হচ্ছে এখন অলকার। আহ্লাদেপনার বদখত খোলসটার ভিতরে খুব সাদা সরল আর সবাইকে আপন করে নেওয়া একটা মন রানির নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে, না হলে এ সব কি পারা যায়?
শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে রানি ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সাবধানে পাশ ফিরে বৌমার গায়ে একটা হাত রাখলেন অলকা। স্নেহের হাত।
সে হাতের স্পর্শে ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে রানির মনে হল, তার শাশুড়িটি আস্ত একটি ‘পাঁইফল’। ভুরুদুটোকে সব সময় কাঁটার মতো করে রাখলে কী হবে, মিষ্টি একটা শাঁস মাথার ভিতরে কোথাও ঠিক পোরা আছে!
মোনালিসা চন্দ্র