Thread Rating:
  • 42 Vote(s) - 2.74 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
হোগলমারা রহস্য- রতিপতি (সমাপ্ত)
#31
“কুছু বলবেন সাব…?” -গেটম্যানের কপালে ভাঁজ পড়ে গেল।
রুদ্র মুচকি হেসে বলল -“তেমন কিছু না। তোমার নাম কি…?”
“জি হামার নাম রাঘুবীর সিং।”
“কতদিন থেকে এখানে কাজ করছো…?” -রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করল।
“চার সাল হোয়ে গেলো সাব…”
“সকালে কোথায় গেছিলে…?”
“সোকালে নেহি সাব। রাতেই গিয়েছিলাম। হামার ঘর…”
“কেন…? রাতে এখানে থাকো না…?”
“নেহি সাব। রাতকো হামার ডিউটি থাকে না। দশটা হোলেই হামি চলে যাই। আপলোগ আসবেন বোলেই বাবু হামাকে বোলেছিলেন, আপলোগ না আনে তক্ থাকতে। ইসিলিয়ে হামি থেকে গিয়েছিলাম। আপলোগ আসার পোরে হামি চলে গিয়েছিলাম। ওই মহল্লায় হামার ঘর। ঘরমে বিবি হ্যে না সাব…! রাতমে উও আকেলা থাকতে পারে না সাব…”
রুদ্র রঘুবীরের কথাগুলো মন দিয়ে শোনার পর বলল -“তা তুমি তো পাঞ্জাবী। এই অজ পাড়া গাঁয়ে কি করে এলে…?”

“সাব হামি খুব গরীব ঘরের লড়কা। হামি যব খুব ছোট ছিলাম, তব্ হি হামার মা মোরে গেলো। উসকে বাদ হামি যব ষোলা সালের হোলাম, তব্ হামার প্রাজি ভি মোরে গেলো। একটা ছোটা ঘর থাকলেও খানে কো কুছু ছিলো না। ইসি লিয়ে ঘর ছোড়ে দিলাম, কামকাজের তলাশ কোরবার খাতির। একদিন ট্রেনে চেপে গেলাম। ট্রেন রুকলো হাওড়া স্টেশান মে। বহুত লোগ দেখে ডোরে গেলাম। পরের পাট্রিতে ঔর এক ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। উসমে উঠে গেলাম। তারপর বহুত সময় বাদ বহুত ভুখ লাগল, ট্রেন সে উতরে গেলাম। এহি, হামারে আচিনপুর টেশান পর। উওহি হামাকে বাবু দেখে সমঝে গেলেন কি হামি বাঙ্গালি নেহি। কাম কাজ ভি নেহি। তবহি সে বাবু হামাকে এখানে লিয়ে এলেন, চার সাল পেহলে…”

“তা তোমার বাবুরা লোক কেমন..? বাড়ির সবাই ঠিকমত কথা বলে…? তোমার বেতন দেয়…?” -রুদ্রর প্রশ্ন যেন শেষই হতে চায় না।
“সাব, বাবু হামার কাছে হামার রব্…! ওয়াহেগুরুর মেহেরবানিই ছিল কি বাবুর সাথে হামার মুলাকাত হোয়ে ছিল। হামার জিন্দেগি দিয়েও হামি বাবুর কর্জ চুকাতে পারব না। উনি হামাকে খালি নোকরিই দেন নি, হামার শাদী ভী করিয়েছেন, ইসি গাঁও কা এক লড়কির সাথে… ঔর হাঁ, হামাকে উনি তানখা ভী দেন। হাম গরীবের ঘর চোলে যায় উসমে…”
“আর তোমার মালকিন…! উনি কেমন লোক…?”
“সাব, আজ তক্ হামি মেমসাব কো ঠিক সে দেখা নেহি। বহুত হি আদব্ ওয়ালি আছেন উনি ভী। আজ তক্ উনি ভী হামাকে কুছু কোথা শোনান নি…! হামি তো উনাদের চরণে খুদকো নিওছাওয়ার কোরে দিতে পারি…” -রঘুবীরের চোখদুটো ছলছল করে উঠল।

“ঠিক আছে রঘুবীর, আমি এবার আসি…” -বলে রুদ্র সিগারেটে শেষ টানটা মেরে ওটাকে মাটিতে ফেলে জুতোর সোল দিয়ে কচলে নিভিয়ে দিল।
মেইন বিল্ডিং-এর দরজার কাছে তখনও লিসা দাঁড়িয়েই আছে। ওকে দেখে রুদ্র বলল -“তুমি এখনও ভেতরে যাও নি…?”
“আপনার অপেক্ষা করছিলাম বস্…!”

“চলো…” -বলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে রুদ্র ঘড়িতে দেখল, বারোটা বাজতে দশ। রাইরমন বাবু তখনও সেই সোফাতেই বসে আছেন। রুদ্র উনার ডানপাশের সোফাটায় বসে গেল। রুদ্রর পাশেই লিসাও বসে গেলে পরে রুদ্র রাই বাবুকে দিজ্ঞেস করল -“কাল রাতে খাবার সময় যখন বাড়িতে আপনারা কে কে আছেন জানতে চাইলাম তখন আপনি উত্তর দিতে গিয়ে ‘আপাতত’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন… তাহলে কি আপনাদের পরিবারে আরও কেউ আছে…?”

রুদ্রর কথা শুনে রাইবাবু মাথা তুললেন -“আঁ…! হ্যাঁ…! আরও দুজন আছে। তবে তারা এখানে নেই। একজন আমার ছেলে, কিংশুক ঘোষ চৌধুরি, আর অপরজন আমার স্নেহের ভাইঝি, মঞ্জুষা ঘোষ চৌধুরি।”
“মানে শিখাদেবীর মেয়ে…!”
“হ্যাঁ, তবে ওর বাবা মারা যাবার পর ও আমাকেই বাবা মনে করে…” -রাইবাবু বিমর্ষভাবে বলে যাচ্ছিলেন।
রুদ্রর প্রশ্নপর্ব চলতেই থাকল -“কিন্তু তাঁরা এখন কোথায়…?”

“আমার ছেলে, মানে কিংশুক দিল্লিতে থাকে। ওখানেই একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। ওখান মাসে থেকে মাসে মাসে মানি অর্ডার পাঠায়। সেই টাকাতে আর এখানে কিছু চাষজমির সব্জি ফসলে কোনোভাবে আমাদের চলছে। আপনি গোয়েন্দা মানুষ, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন যে আমরা কোন পরিবারে বংশধর। তবে আজ আর সেই দিন নেই…”
“আর মঞ্জুষা…?”

“ও আপনাদের কোলকাতাতেই থাকে, মাস্টার ডিগ্রির ফাইনাল ইয়ার চলছে ওর। ওরও পরীক্ষা চলছে…”
“ও আচ্ছা… তা ওকে জানিয়েছেন…?”
“সাহস পাচ্ছি না মিঃ সান্যাল….! ও শুনলে অজ্ঞান হয়ে যাবে…” -রাই বাবু আবার কাঁদতে লাগলেন।
“কিন্তু জানাতে তে ওকে হবেই। আপনার ছেলেও তো এখানে থাকেন না। তাহলে মুখাগ্নি কে করবেন…?”
“আমি পারব না মিঃ সান্যাল…! আপনিই আমার মোবাইল থেকে ওকে কল করে বলে দিন, প্লীজ়…! এ বোঝা আপনি আমার ঘাড়ে চাপাবেন না।” -রাইরমন বাবু আবার হাই মাউ করে কেঁদে উঠলেন।
রুদ্র রাইরমন বাবুর মোবাইল থেকে মঞ্জুষাকে কল করে সব বলল। শুনে ওপার থেকে মঞ্জুষাও চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বলল -“এ কি হলো ভগবান…! আমার যে এখনও দুটো পরীক্ষা হতে বাকি… আরও তিন দিন তো আমি যেতেও পারব না… মাআআআআ…! তুমি আমাকে একা ছেড়ে দিয়ে কোথায় চলে গেলে মাআআআআ…!”

রুদ্র মঞ্জুষাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল -“দেখুন যা হবার তা তো হয়েই গেছে…! এখন আপনি চলে এলে আপনার ইয়ারটা লস হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাকে পরীক্ষা শেষ করে আসারই পরামর্শ দেব।”
“এছাড়া আমার উপায়ও নেই রুদ্রদা…!” মঞ্জুষার মুখে ‘রুদ্রদা’ শব্দটা শুনতে রুদ্রর মন্দ লাগে না।
রুদ্র রাইরমন বাবুকে মঞ্জুষার কথা গুলো সব ডিটেলসে্ বলল। রাইরমন বাবু আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললেন -“সবই কপাল রে মা, না হলে তোর মা এভাবে আমাদের ছেড়ে কেন চলে যাবে…!”
রুদ্র আবার উনাকে সান্ত্বনা দিয়ে উনার মনটা অন্য দিকে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করল -“আর এই ছবির লোকগুলো কারা…? আপনাদের পূর্ব পুরুষ বুঝি…!”

“হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। চলুন পরিচয় করিয়ে দিই…” -রাইরমন বাবু সোফা ছেড়ে উঠে পূর্ব দিকের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। রুদ্র আর লিসা উনার পেছনে হাঁটতে লাগল। রাই বাবু সিড়ির কাছে প্রথম ছবিটা দেখিয়ে বললেন -“ইনি আমাদের পিতা, শ্রী দেবচরণ ঘোষচৌধুরি, তারপর ইনি আমাদের পিতামহ, জমিদার দেবনারায়ন ঘোষচৌধুরি..” তারপর এদিকের শেষ ছবিটা দেখিয়ে বললেন -“আর ইনি হলেন আমাদের প্রৌপিতামহ জমিদার দেবশরণ ঘোষচৌধুরি। চলুন এবার ওদিকে যাই…” -বলে রাইবাবু নিচে নেমে পশ্চিম দিকের সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলেন।

এদিকে এসে প্রথম ছবিটা দেখিয়ে বললেন -“ইনি হলেন দেবশরনের পিতা জমিদার দেবকমল ঘোষচৌধুরি, পরের জন তাঁর পিতা, জমিদার রাইরমন ঘোষচৌধুরি। আমার নাম উনার নাম অনুসরণ করেই রাখা। আর সর্বশেষে উনি হলেন তার পিতা জমিদার রাইচরণ ঘোষচৌধুরি। ইনি ছিলেন আমাদের বংশের প্রাচীনতম জ্ঞাত পূর্ববংশ। উনার আগের কাউকে আমরা আর চিনিনা, বা কোনো ছবিও নেই। বাবা বলতেন, নবাবী আমলে মুর্শিদাবাদের প্রসিদ্ধ এক বণিকের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নাকি এই রাইচরণ ঘোষচৌধুরি। সেই বনিকের নাকি সীমাহীন সম্পত্তি ছিল…”
“বাব্বাহ্…! আমার অনুমানই তাহলে ঠিক… আপনাদের বাড়িটা ঢোকার সময়েই আমি বুঝে গেছিলাম, এত বড় বাড়ি কোনো সাধারণ পরিবারে হতে পারে না…” -রুদ্র অবাক গলায় বলল
“আমরা এখন সাধারণই মিঃ সান্যাল, বরং অতিসাধারণ। সে জমিদারী আমাদের আর নেই…” -রাই বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন -“দেখেছেন একটা বাজতে চলল, আর এখনও আপনাদের বংশ তালিকা শোনাচ্ছি। এই মালতি, রান্না হয়ে গেছে রে…?”

মালতি পাশের রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল -“হ্যাঁ বাবু হয়ে গেছে।”
রাই বাবু রুদ্রকে বললেন -“যান মিঃ সান্যাল, স্নান করে আসুন, খেয়ে নিতে হবে।”
“হুম্, যাব, কিন্তু বলছিলাম হরিহরদা আর মালতি কি এখানেই থাকে ?”

“হ্যাঁ, ওই রান্না ঘরের পাশের ঘরটায় মালতি আর ওই পশ্চিমের ঠাকুর ঘরের পাশের ঘরে হরি থাকে। হরিটা আমার সাথ ছাড়বে না বলে বিয়েই করল না। এত বোঝালাম ব্যাটা কে, কিন্তু শুনলই না। আর মালতির বিয়ে হলেও ওর স্বামীটা যে কোথায় চলে গেল, কেউ খোঁজই দিতে পারল না। ছেলেটা একটু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। বাপ তো অনেক আগেই মারা গিয়েছিল, ছেলের বিয়ে দিয়ে মা-টাও দেহ রাখল। মেয়েটা একা পড়ে গেল। একদিন আমার কাছে এলো, সব শুনে ভাবলাম, মেয়ে মানুষ, একা থাকবে, কখন কি হয় না হয়, তাই এখানেই থাকার প্রস্তাব দিলাম। ও রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন রান্না করে খাওয়ালো। ওফ্ কি অপূর্ব লাগল খেতে! এদিকে আমার গিন্নি আবার রান্না বান্না করতে একদম পছন্দ করে না। তাই মালতির হাতেই হেঁসেলের ভার দিয়ে দিলাম। সেই থেকে এখানেই আছে।” -রাইরমন বাবু পুরো ইতিহাসের লেকচার দিয়ে দিলেন।

রুদ্ররও মনে পড়ে গেল, কাল রাতের রান্নাটা সত্যিই অসাধারণ লেগেছিল ওরও।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হোগলমারা রহস্য- রতিপতি (সংগৃহীত) - by MNHabib - 29-11-2022, 01:40 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)