24-11-2022, 08:46 PM
(This post was last modified: 24-11-2022, 08:47 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(৬)
সুজাতা হসপিটাল থেকে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরলো। এইসময় বাড়িতে গোগোলের থাকার কথা নয় .. ওর ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। অন্যদিন বাইরে থেকে ফিরে থমথমে মুখে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায় সে। তারপর খেতে বসে সুজাতার বিভিন্ন প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হয়ে রাতের খাবার গলব্ধকরণ করতে করতে, শুধুমাত্র 'হুঁ' 'হ্যাঁ' 'পরে বলছি' .. এই জাতীয় উক্তি করে, একসময় খাওয়া শেষ হলে উঠে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিজের শোওয়ার ঘরে চলে যায়। তবে আজ গোগোলের রোজনামচার কিছুটা পরিবর্তন ঘটলো। সন্ধ্যের কিছু পরেই বাড়ি ফিরে এলো সে। সুজাতা লক্ষ্য করলো বাকি দিনগুলোর মতো বাড়িতে ঢুকে মুখ ব্যাজার করে না থেকে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে হাতমুখ ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে রান্নাঘরের সামনে রাখা মোড়াটার উপর এসে বসলো গোগোল।
- "কি ব্যাপার? আজ অসময়ে বাড়িতে?"
- "যাব্বাবা, নিজের বাড়িতে আসবো তার আবার সময় অসময়ের কি আছে?"
- "আচ্ছা? তাই? এটাকে তুই নিজের বাড়ি বলে মনে করিস নাকি? এটা তো একটা হোটেল। একজন মাইনে করা কাজের লোক আছে না এই হোটেলে! যে জামা কাপড় কেচে দেবে, আয়রন করে দেবে, টাইমে টাইমে মুখে খাবার তুলে দেবে। আর তুই যখন খুশি বেরিয়ে যাবি, যখন খুশি ফিরবি। ইচ্ছে হলে খাবি, না ইচ্ছা হলে খাবি না। সেই জন্যই তো জিজ্ঞাসা করছি, এই অসময়ে বাড়িতে কেনো?
- "এ তো মহা বিপদে পড়ে গেলো দেখছি! দেরি করে ফিরলেও দোষ, তাড়াতাড়ি ফিরলেও দোষ .. হাম যায় তো লেকিন যায়ে কাহা? ভালো কথা, তোমাকে তো মাইনা দেওয়া হয় না, তুমি তো বিনা মাইনাতেই .. হেহে .."
- "একদম ইয়ার্কি করবি না, আমার মেজাজ একেবারেই ভালো নেই। এখন রুটি করছি, গরম চাটু ছুঁড়ে মেরে দেবো কিন্তু।"
- "এইতো সকালে টগরের সাথে কথা বলার পর এত হাসিখুশি মেজাজে বের হলে, এখন আবার মেজাজ খারাপ হলো কেন? হসপিটালে কিছু ঝামেলা হয়েছে নাকি? কোনো ক্রিটিক্যাল কেস?"
- "যার ঘরেই এরকম ক্রিটিকাল কেস আছে, তার আর হসপিটালের দরকার কি? আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর হিয়া এসেছিল?"
- "হ্যাঁ মানে না মানে ..তু..তুমি জানলে কি করে?"
- "থাক, আর তোতলাতে হবে না। ও এসেছিল কেন? আজ হসপিটালে কাবেরীর সঙ্গে কথা হলো। ওর কাছ থেকেই জানতে পারলাম আজ নাকি হিয়াকে ওর আর সন্দীপের বিয়ে ঠিক হয়ে থাকার কথাটা বলার পর হিয়া প্রচন্ড রিয়্যাক্ট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমার তখনই সন্দেহ হয় ও এখানে এসেছিলো, কিন্তু আমি ওকে কিছু বলিনি। এমনিতেই যা কথা শোনাচ্ছিলো, এই কথা বললে না জানি .."
- "কথা শোনাচ্ছিল মানে? কি বলছিলো?"
- "কি আবার বলবে .. সন্দীপের গুনগান গাইছিলো। আর আমার গুণধর এই পুত্রটির গুষ্টির ষষ্ঠীপূজা করে ছেড়ে দিচ্ছিলো। বলছিলো, তুই খারাপ লোকের সঙ্গে মিশে খারাপ কাজকর্ম করিস। তোর স্বপক্ষে কথা বলার কোনো উপায় আছে আমার? শুধু ও কেনো, লোকজন আজকাল যা বলে বেড়াচ্ছে তোর সম্পর্কে, আমার তো কথা বলার কোনো জায়গাই নেই। তবে আমিও আজ দু'কথা শুনিয়ে দিয়েছি কাবেরীকে। অনেক বড় মুখ করে বলেছি ওকে .. আমার গোগোল কোনো খারাপ কাজ করতেই পারে না। কিন্তু তুই যে আমার মুখে চুনকালি দিবি .. সেটা তো আমি খুব ভালো করেই জানি। তবে একটা ব্যাপারেই খটকা লাগছে। বাড়ি ঢোকার মুখে হঠাৎ পঙ্কজ বাবুর সঙ্গে দেখা। সেদিনকে উনি যা বলেছিলেন, মানে তুই নাকি এই বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে, বস্তিটাকে লালু আলমের হাতে তুলে দিবি। কিন্তু আজকে যা বললেন .. সেই কথার সঙ্গে আকাশ-পাতাল পার্থক্য .. উনি বললেন তোর জন্যই নাকি রেলপাড়ের এই বস্তি এখনো সুরক্ষিত আছে। এর তো মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝলাম না .."
- "বলবো বলবো সব বলবো .. আজ যে আমাকে সব কথা খুলে বলতেই হবে। একই রাজনৈতিক দলের লোক হোলেও এলাকার বিধায়ক মানিক সামন্ত আর পার্টি প্রেসিডেন্ট লালু আলম এখন পরস্পরের শত্রু। তার প্রথম কারণ যদি হয় ক্ষমতা দখলের লড়াই, তাহলে দ্বিতীয় কারণ হলো এই বস্তি। গঙ্গানগরের প্রায় অর্ধেকের বেশি বস্তি এবং চওলগুলোকে বেআইনিভাবে অধিগ্রহণ করে সেখানে শপিংমল আর মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানানোর প্রধান কারিগর সামন্ত আর তার ক্রাইম পার্টনার কামরাজের কু'নজর পড়েছে এই বস্তির উপর। এদিকে আলম সাহেবের শ্যেন দৃষ্টিও আছে রেলপাড়ের এই বস্তিতে। তার একমাত্র কারণ হলো এই এলাকার পজিশন। কলেজ-কলেজ-বাজার থেকে শুরু করে হসপিটাল, রেলস্টেশন থেকে শুরু করে হাইওয়ে .. সবকিছু একেবারে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। এলাকার বিধায়ক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট কামরাজের জোড়াফলা আটকাতে লালু আলমের এমন একজন ব্যক্তির দরকার ছিলো, যার এই রেলপাড়ের বস্তির প্রতিটা আনাচ-কানাচ একেবার নখদর্পণে এবং সেই ব্যক্তিকে এখানকার বেশিরভাগ মানুষ অন্তর থেকে ভালবাসে এবং চোখ বন্ধ করে ভরসা করে। সেইরকম মানুষ যে এখানে একমাত্র আমিই আছি, এ কথা আলম সাহেবের অজানা ছিলো না। কিন্তু শুধু ভালোবাসা আর ভরসা থাকলেই তো হয় না, তার সঙ্গে দরকার হয় ক্ষমতার .. যা আসে টাকা আর লোকবল থেকে। আমাদের ম্যান-পাওয়ার আরও সংগঠিত করার জন্য লালু আলম আমাকে টাকা দিচ্ছে আর সেই টাকা দিয়ে আমি এই বস্তির কাঞ্চন, সুবীর, রাজু .. এইরকম আরো অনেককে ব্যবহার করতে পারছি ওই দুই জোড়াফলার বিরুদ্ধে .. ওরা এখন এখানে আসার আগে দু'বার ভাবে। তুমি তো জানো মামণি, তোমার কাছে তো কিছুই অজানা নয়। যে মানুষগুলো আমার শৈশব এবং কৈশোর পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের আমি কি করে ক্ষমা করি বলো তো মামণি? একে একে নিভিছে দেউটি .. হাহাহাহা .. আর মাত্র দু'জন .."
সেই মুহূর্তে গগনভেদী চিৎকার করে উঠলো সুজাতা "না না না আমি কিচ্ছু জানিনা .. আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না .. মাঝে যারা ছিলো তারা কোথায়, কখন, কিভাবে, কার হাতে .. আমি এসব কিচ্ছু জানতে চাই না। আমার পিসির ওই ঘটনাটার ব্যাপারে সবকিছু জানার পরও যখন আমি তোকে আটকাতে পারিনি, উল্টে ছলে-বলে-কৌশলে পুলিশ ইন্সপেক্টর মিস্টার গোস্বামীর থেকে তোকে আড়াল করে গেছি! তখন আমার আর অধিকার নেই কিছু জানার। হয়তো এখানেই একজন অভিভাবিকা হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ আমি। সব আমার দোষ .. যারা আমাকে বিশ্বাস করে, আমাকে ভরসা করে তাদের প্রিয় সন্তানের ভার দিয়েছিলো .. তা আমি পূর্ণ করতে পারিনি। যা হয়ে গেছে তা তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু এখনো সময় আছে ফিরে আসার সোনা মানিক আমার। আমি মুখে যাই বলি না কেনো, বাস্তবে আমি এত কঠিন হতে পারবো না। তোকে নিজের পেটে না ধরলেও আমি তো তোর মামণি! আমার খুব ভয় করছে .. এই প্রতিশোধের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছারখার না হয়ে যায়! আমি আর কিছু হারাতে চাই না।" কথাগুলো বলে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে গোগোলকে জড়িয়ে ধরলো সুজাতা।
রাতে আর বিশেষ কথা হলো না দু'জনের। খেয়েদেয়ে যে যার মতো শুয়ে পড়লো। ক্লান্তিতে বুঝে আসছে দু'চোখ। তবুও স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে না, বলা ভালো ভয় করে আজকাল। ভুল করে যে স্বপ্ন সাজিয়েছিলো মনের আকাশের নিলীমা দিয়ে, তা আজ হয়ে গেছে শুধুই দুঃস্বপ্ন। চাহনিতে যার অজস্র প্রাণের উচ্ছ্বাস, কে জানতো নেমে আসবে ঘুনে ধরা ভার? আয়নার সাথে বন্ধুত্ব ছিল যার, একটিবার ইচ্ছে হয় না আয়না দেখতে আর। রাত তখন ক'টা খেয়াল নেই। তার চারপাশে বেশ কিছু মানুষের কথা শুনতে পেলো গোগোল .. তার সঙ্গে রাস্তায় চলা গাড়ির আওয়াজ। অনেকেই একসঙ্গে কথা বলছে, কিন্তু স্পষ্টভাবে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অথচ মস্তিষ্কের তীব্র সঞ্চালনে গোগোল বুঝতে পারলো আবার আসতে চলেছে সেই বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন .. যেখানে সে নিজের অঙ্গ সঞ্চালন করতে পারবে না, অথচ সবকিছু অনুভব করতে পারবে একদম সুস্পষ্টভাবে।
★★★★
"কিরে, অপূর্ব তুই এখানে? বর্ণালী ম্যাডামের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না, কেমন আছেন উনি?" গঙ্গানগর সুপার মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে গোগোলের এই প্রশ্নে কিছুটা থতমত খেয়ে অপূর্ব উত্তর দিয়েছিলো "মা ভালো আছে। কালকে একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি তো, তাই একটা ছোট টুথপেস্ট, দুটো ব্রাশ, আর সাবান কেনার জন্য এখানে এসেছি। মা বাড়ির জিনিস বাইরে নিয়ে যেতে একদম পছন্দ করে না তো .."
- "তাই? এ তো খুব ভালো কথা, কোথায় যাচ্ছিস?"
- "মায়াবন্দর .. আমাদের গঙ্গানগর থেকে দুটো স্টেশন পরেই। জ্যাকি দাদা বলেছে ওটা নাকি দুর্দান্ত টুরিস্ট স্পট। একসঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র আর জঙ্গল তিনটেই আছে ওখানে।"
- "জ্যাকি দাদা? মানে ওই নেপালি লোকটা? আগে গ্যারেজে কাজ করতো, এখন ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা করেছে। ভালো কথা, ওর বাইকের পেছনে আমি তোকে দু-একবার ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। খুব সাবধান ভাই, ওই জ্যাকি আর ও যেসব এলিমেন্টের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকে, তারা কিন্তু একদম সুবিধার লোক নয়।"
- "আগে কি করতো এখন কি করে, অত কিছু আমি জানিনা .. তবে জ্যাকি দাদা মোটেও খারাপ লোক নয়। এখানে তো ওই একমাত্র আমার বন্ধু, যে আমাকে বোঝে। তাছাড়া ওর যে ওস্তাদ আছে ওসমান চাচা, তিনিও খুব ভালো মানুষ। ওরা দুজনেই তো যাচ্ছে কাল আমাদের সঙ্গে, in fact ওরাই আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, সমস্ত কিছু ফ্রি .. ভালো মানুষ না হলে কখনো কেউ এরকম করে, বলো?"
অপূর্বর কথা শুনে গোগোল বুঝতে পারলো খুব ভালোভাবে তার মগজ ধোলাই করেছে ওই দুর্বৃত্তরা। এখন তাকে কিছু বলতে গেলে বা বোঝাতে গেলে সে তো বুঝবেই না, উল্টে কথাগুলো ওদেরকে জানিয়ে দিলে ওরা সজাগ হয়ে যাবে এবং এতে ফল হবে উল্টো। তৎক্ষণাৎ তার শরীরে একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো এই ভেবে যে নিজের প্রতিশোধ পূর্ণ করার হঠাৎ করেই একটা সুযোগ এসে গিয়েছে তার সামনে। এই চান্সটা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সুযোগ আর সে পাবে না। "তোর ওই নম্বরটাই আছে তো? তোকে পরে ফোন করে নেবো আমি, এখন গেলাম .. হ্যাপি জার্নি ইন অ্যাডভান্স।" এই বলে সেখান থেকে বিদায় নিলো গোগোল।
"আরে কি খবর দিলে গুরু .. সত্যি বলছো? ওই মাল দুটোকে খতম করতে পারলে তো এমনিতেই আমার রাস্তা অনেকটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। মানিক সামন্তর খাস লোক ওই ওসমান আর জ্যাকি। ওই দুটোর জন্যই তো এমএলএর এত বাড়বাড়ন্ত। তুমি চিন্তা করো না, তোমার যাওয়ার সব বন্দোবস্ত আমি করে দেবো। ট্রেনে বা অন্য কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়ার দরকার নেই .. ভবিষ্যতে প্রমাণ থেকে যাবে। ধনঞ্জী ভাইয়ের ট্রাকে তুমি যাবে, অন্য কাউকে আমি বিশ্বাস করি না।" উচ্ছ্বাসিত হয়ে কথাগুলো বলেছিলো লালু আলম।
মায়াবন্দরে দুপুরের দিকেই পৌঁছে গিয়েছিলো গোগোল। ট্রাকটা মায়াবন্দরে লালু আলমের বেনামে থাকা একটা পেট্রলপাম্পের প্রেমিসেসের মধ্যে আর পাঁচটা সাধারণ ট্রাকের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে সেখান থেকে অটো ধরে সী-বিচে পৌঁছায় গোগোল এবং তার সঙ্গী ধনঞ্জী ভাই। ঝাউবনে গা ঢাকা দেওয়া অবস্থায় বিকেলের দিকে অপূর্বকে ফোন করে জেনে নেয় তাদের বাংলোর সঠিক লোকেশন। তারপর অপেক্ষা .. শুধুই অপেক্ষা। "আপ আন্দার নেহি জাওগে স্যারজি?" ধনঞ্জী ভাইয়ের এই প্রশ্নে, গোগোল হেসে উত্তর দিয়েছিল "সব কাজের একটা সঠিক সময় আছে সিংজি .. জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ .."
সন্ধ্যেবেলায় বাংলো থেকে জ্যাকির বেরিয়ে আসা, তারপর সঙ্গে করে আরো দুই অচেনা ব্যক্তিকে নিয়ে বাংলোর ভেতর ঢোকা .. এর কোনো কিছুই চোখ এড়োয়নি গোগোলের। সে তো ওই দুই নারীমাংস লোভী বিকৃতমনস্ক দুর্বৃত্তদের ভালো করেই চেনে .. তাই মনে মনে বুঝতে পেরেছিলো রেলপাড়ের কলেজের একদা তার বাংলা শিক্ষিকা বর্ণালী ম্যাডামের কি অবস্থা ওরা করছে। কিন্তু অপেক্ষা করা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে মাঝরাত, শরীর আর বইছিলো না গোগোলের। ধনঞ্জী ভাই ততক্ষণে গাছের গোড়ায় বসা অবস্থাতেই ঢুলতে আরম্ভ করেছিলো। রাত প্রায় শেষ হতে চললেও তখনও ভোরের আলো ফোটেনি, চারিদিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। গোগোল হঠাৎ লক্ষ্য করলো, বাংলোর দরজা খুলে টলতে টলতে ওই দুই অচেনা ব্যক্তি বেরিয়ে গেলো। দরজার পাল্লাটা বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিতেই ভুলে গেলো মাতাল দুটো। এটাই সুযোগ .. কাজে লাগাতে হবে। "আমি গেলাম সিংজি, তুমি এখানে অপেক্ষা করো আমার জন্য।" ঝিমতে থাকা ধনঞ্জী ভাইয়ের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়লো গোগোল।
খোলা অবস্থায় থাকা বাংলোর মেইন গেট পেরিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো গোগোল। সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা দরজার পাল্লার ভেতর থেকে মৃদু আলোকরশ্মি এসে চোখে পড়াতে, ধীরে পায়ে সেইদিকে এগিয়ে গেল সে, তারপর দরজাটা খুলতেই চমকে উঠে দু'পা পিছিয়ে আসলো। ঘরের ভেতর জিরো পাওয়ারের আলো জ্বললেও চারপাশের আপাত অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়ার ফলে বেডরুমের সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিলো। খাটের উপর সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাশ ফিরে শুয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছিলেন বর্ণালী ম্যাডাম .. চোখে মুখে তার ক্লান্তির ছাপ। গোগোল স্পষ্ট দেখতে পেলো ম্যাডামের মুখোমুখি তার দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে জ্যাকি। নেপালিটা কিছুটা নিচের দিকে নেমে এসে বর্ণালী ম্যাডামের বিশালাকার ঝুলে যাওয়া একটা স্তনের বোঁটা তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেও চুকচুক করে চুষে যাচ্ছে। ওদিকে বিধর্মী ওসমান সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থাতেই নিজের কালো, লোমশ একটা পা ম্যাডামের কোমরের উপর তুলে দিয়ে নিজের একটা হাত নিচে নামিয়ে এনে উনার দুই পায়ের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে। দৃশ্যটা দেখে প্রথমে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো গোগোল। কিন্তু এখন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা মানেই নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসা। তাই ধীরে ধীরে জ্যাকির পাশে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিতে লাগলো গোগোল, যতক্ষণ না তার নিদ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কাটে।
"কে বে? আরাবুল দা, তুমি আবার ফিরে এলে নাকি? এখনো মাগীর শরীরের নেশা কাটেনি?" চোখ কচলাতে কচলাতে আড়মোড়া ভেঙে খাটের উপর উঠে বসে কথাগুলো বললো জ্যাকি। তারপর গোগোলের দিকে তাকিয়ে নিজের খুদে খুদে চোখ দুটো আরো ছোট করে জিজ্ঞাসা করলো "কে তুই? এখানে ঢুকলি কি করে? চুরি করতে এসেছিস নাকি? দেখ ভাই, আমাদের কাছে কিছুই নেই এই মাগীটা ছাড়া। চাইলে একে একবার চুদে নিজেকে শান্ত করতে পারিস।"
"মাদারচোদ .. ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ আমার দিকে, তোর যম এসেছে।" কথাগুলো বলতে বলতে ওই অবস্থাতেই জ্যাকির ঘাড় ধরে বিছানা থেকে উঠিয়ে তাকে মাটিতে দাঁড় করালো গোগোল। "ক..কে কে? দাঁড়া দাঁড়া, ভালো করে দেখতে দে। ও তুই? তুই হেলপাড়ের বস্তির ওই ছেলেটা না? তোর এত বড় সাহস তুই এখানে এসে আমার গায়ে হাত দিয়েছিস? ছাড় বলছি আমাকে, লাগছে কিন্তু আমার?" নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে কথাগুলো বললো জ্যাকি।
"আমার হাত ছাড়ানোর ক্ষমতা নেই আবার হুমকি দিচ্ছে! এইসব ফালতু কথা ছাড় শুয়োরের বাচ্চা। তোর ক্ষমতা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এবার বল তো তোদের প্ল্যানটা কি? ইনি একজন শিক্ষিকা, একে এখানে নিয়ে এসেছিস কেনো তোরা? কি করতে চাস এনার সঙ্গে?" চাপা হুঙ্কার দিয়ে বললো গোগোল।
"তোকে বলতে আমি বাধ্য নই। কিন্তু তবুও আমি বলছি, কেন জানিস? কারন তুই তো জেনে বুঝে সিংহের গুহায় ঢুকেছিস। এখান থেকে তো আর বেঁচে ফিরে যেতে পারবি না। তাই বাইরে গিয়ে কাউকে কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক প্ল্যানিং করে মাগীটাকে এখানে এনেছি আমরা। তারপর আজ দুপুর থেকে তোর ম্যাডামকে ল্যাংটো করে পুরো উল্টেপাল্টে চুদেছে আমার ওস্তাদ। সন্ধ্যেবেলা আমাদের আরো দু'জন পার্টনার এসেছিলো। তারপর চারজনে মিলে গণচোদন দিয়েছি মাগীটাকে। তার সঙ্গে ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। ওটাকে মার্কেটে তো ছাড়বই। তার উপর আরো যে দু'জন পার্টনার এসেছিল, তারা এখন কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে গেছে। ওরা ফিরে এলেই মাগীটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়বো এখান থেকে। এখন এই মায়াবন্দরেই আন্ডারগ্রাউন্ড করা হবে একে। তারপর পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে মাগীটাকে বাইরে কোথাও পাচার করে দেবো।" খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো জ্যাকি।
"তা তো বটেই তা তো বটেই .. এখন বুঝতে পারছি তোমরা কতটা শক্তিশালী। আসলে আমি মোটেও আসতে চাইনি, আমাকে ওর ছেলে ডেকে এনেছে এখানে। ওই যে ড্রেসিং টেবিলের উপর হ্যান্ডিক্যামটা রাখা আছে, ওটা দিয়েই রেকর্ডিং করেছো নাকি? ভেতরের চিপটা আছে তো, নাকি এডিট করা হয়ে গেছে সবকিছু? আর ওর যে ছেলে, মানে অপূর্ব .. ওকে নিয়ে তোমাদের কি প্ল্যান?" গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে জ্যাকির ঘাড়টা ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"এইতো, এবার পথে এসো চাঁদু। হ্যাঁ, ওটা দিয়েই রেকর্ডিং করেছি। এখনো এডিট করা হয়নি, ওর ভিতরেই চিপটা আছে। কিন্তু কেনো? আর ওই হোমোচোদা অপূর্বর কথা বলছিস? ওকে এখান থেকে যাওয়ার আগে খালাস করে দিয়ে যাবো, তার সঙ্গে তোকেও। আমরা না আবার গুলি-টুলি পছন্দ করি না। আমাদের নিজস্ব হাতিয়ার আছে, যেটা ব্যবহার করতেই বেশি ভালোবাসি। দেখবি? এই দ্যাখ, এগুলো দিয়েই তোকে তিলে তিলে মারবো আজকে।" কথাগুলো বলে খাটের নিচ থেকে এক হাতেরও বেশি লম্বা ভীষণ সরু এবং তীক্ষ্ণ একটি শলাকা। আর একটি ধারালো বেশ বড় আকারের চপার বের করে আনলো জ্যাকি।
"আচ্ছা বুঝলাম, তার মানে এইগুলো সবসময় তোদের সঙ্গেই থাকে। তোদের পথের কাঁটাকে তোরা এই ভাবেই সরিয়ে দিস, এমনকি নিজেদের বিকৃত যৌনলালসা চরিতার্থ করার পর সেই নারীও যদি প্রতিবাদে গর্জে ওঠে, তবে তাকেও নির্মমভাবে এই অস্ত্রগুলো দিয়েই হত্যা করিস। আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে হাইওয়ের ধারে বাঁশবাগানের পিছন দিকটায় একটা পরিত্যক্ত গ্যারেজে এইভাবেই এক নারীকে গণ;., করার পর নির্মমভাবে হত্যা করেছিলিস তোরা, তাই তো? যদিও সেই বীরাঙ্গনা নারী তোদের এক দুর্বৃত্ত সঙ্গীকে শেষ করে তবেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।" দাঁতে দাঁত চেপে বজ্রকঠিন গলায় কথাগুলো বললো গোগোল।
"তার মানে, তুই সেই .." গোগোলের কথাগুলো শোনার পর, এর বেশি আর একটাও কথা বের হলো না জ্যাকির মুখ দিয়ে। তার জ্বলন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে হাতগুলো কিরকম যেন শিথিল হয়ে এলো নেপালিটার, মাথাটা ঘুরতে লাগলো বনবন করে।
সেই মুহূর্তে তড়িৎগতিতে জ্যাকির শিথিল হয়ে আসা হাত থেকে ওই দুটো ভয়ঙ্কর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গোগোল বললো "এখানে ঢোকার আগে ভাবছিলাম, তোদের মারবো কিভাবে। আগ্নেয়াস্ত্র অবশ্যই আছে আমার কাছে, কিন্তু ওতে তো শব্দ হবে, লোক জানাজানি হবে, তারপর এই গুলির সূত্র ধরে বন্দুক পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করবে পুলিশ। কিন্তু ঈশ্বর আছেন, তিনি আমার দিকটা ভেবেছেন। তোদের অস্ত্র দিয়েই যদি তোদেরকে মারি, তাহলে মৃত্যুটা হবে বেদনাদায়ক আর ভয়ঙ্কর এবং কোনো প্রমাণ থাকবে না।" কথাগুলো শেষ করার আগেই অত্যন্ত সরু এবং ধারালো শলাকাটা ক্ষিপ্রতিতে জ্যাকির বুকের বাঁ দিকে ঢুকিয়ে দিলো গোগোল। তারপর জ্যাকিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার মুখের উপর নিজের ডান'পা টা সজোরে চেপে ধরে ওই অবস্থাতেই শলাকাটা বুকের ভেতর বারংবার ঢুকিয়ে এবং বের করে খোঁচাতে লাগলো। এর ফলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হওয়ার সঙ্গে ভেতরের মাংসপিণ্ড গুলি বেরিয়ে এলো বাইরে। মুখের উপর পা চেপে ধরে থাকার জন্য "গোঁ গোঁ" শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না জ্যাকির মুখ দিয়ে। কিছুক্ষণ কাটা ছাগলের মতো হাত-পা নাড়ানোর পর যখন ধীরে ধীরে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লো, গোগোল বুঝতে পারলো নেপালিটার শরীরে আর বাধা দেওয়ার ক্ষমতাটুকু অবশিষ্ট নেই এবং গলা দিয়ে আওয়াজ বের করার সামর্থ নেই। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে সে ঢলে পড়বে। "যাওয়ার আগে তোর মৃত্যু কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা অনুভব করে যাওয়াই ভালো .." এই বলে অন্য হাতে থাকা ধারালো চপারটার এক কোপে জ্যাকির অন্ডকোষ সমেত পুরুষাঙ্গটা কেটে নিলো গোগোল। "ওঁককক .." এইরূপ গলা দিয়ে একটা আওয়াজ বের করে ঠিকরে বেরিয়ে আসা দুটো চোখ খুলে রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো জ্যাকি।
সেই মুহূর্তে গোগোলের ঘাড়ের উপর একটা রদ্দা পড়তেই সে ছিটকে পড়ে গেলো ঘরের এক কোণে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে চকিতে উঠে বসে সে দেখলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষাৎ যমদূতের মতো চেহারার ওসমান মন্ডল। "মেরে ফেললি, মেরে ফেললি ওকে? হে আল্লাহ্ , আর কয়েক সেকেন্ড আগে যদি আমার ঘুমটা ভাঙতো তাহলে ওকে আমি বাঁচাতে পারতাম। তোর মা আমার একটা শাগরেদকে মেরেছিল, আজকে তুই আর একটাকে মারলি। জ্যাকি তোকে চিনতে না পারলেও, আমি এক দেখাতেই চিনতে পেরেছি। তখন হাজারবার মানিক বাবুকে বলেছিলাম মা-বাবা যখন দুটোই মরেছে, তখন ওদের ছেলেটাকেও শেষ করে দিই, তাহলে কোনোদিন হয়তো কালসাপ হয়ে আমাদেরকেই কাটতে আসবে .. কিন্তু উনি কিছুতেই পারমিশন দিলেন না। আর দেখো, আজ শালা সেটাই হতে চলেছে। লেকিন এখন আর সেরকম কিছু হবে না। কিঁউ কি তুম গলত আদমি সে পাঙ্গা লে লিয়া বেটা .. তোর মা'কে ভরপুর চোদার পর যেরকম আছড়ে আছড়ে, কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছিলাম! ঠিক সেই ভাবে আজ তোকে মারবো .. তবেই আমার শান্তি।" এই বলে ওসমান মাটিতে পড়ে থাকা চপারটা তুলতে যেতেই, মুহূর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ওসমানের দুই পায়ের মাঝে প্রচন্ড জোরে একটা লাথি মারলো গোগোল। তৎক্ষণাৎ "আঁউউউউউ .. হায় আল্লাহ্" বলে নিজের অন্ডকোষ সমেত পুরুষাঙ্গটা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লো বিধর্মীটা।
"চুপ শালা .. এটা ডায়লগ দেওয়ার সময় নয়। এখানে কাজ করতে হয় মুহূর্তের মধ্যে। এই যুদ্ধে যো জিতা ওহ সিকান্দার, না হলে সবকিছু ফক্কা। তুই আমাকে কি মারবি? এই সময় শুধু তুই কেন, তোর মতো হাজারটা ওসমান মন্ডলে এলেও আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। আমার শরীরে এখন অসুরের শক্তি। বিশ্বাস হচ্ছে না? দেখবি?" এই বলে মাটিতে পড়ে যাওয়া ওসমানের বুকের উপর এক লাফে চেপে বসলো গোগোল। একশো হাতির বল গায়ে থাকা যমদূত ওসমানের পক্ষে অপূর্বকে নিজের উপর থেকে ঠেলে সরানো কিছুতেই সম্ভবপর হচ্ছিল না।