Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#18
পর্ব -০৫


 

        রুদ্র, আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম এবং সাত্যকি, সবাই মন খারাপ করে ঢাকায় ফিরলো। কারোই মন ভাল নেই। ক্লান্ত তারা। আকস্মিক ঝগড়ার কারণে তাদের ট্যুরটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। 

গতকাল সবাই মিলে সিন্ধান্ত নেয় সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার। একদিনের ডে ট্যুর। রাতে কমলাপুর থেকে তারা ট্রেনে উঠবে, সকালে পৌঁছে পরের দিন ঘুরে সেদিনই বিকালে ঢাকায় ব্যাক করবে। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড, ট্রেনে যেতে মোটামুটি ছয় ঘন্টার মত সময় লাগে। অবশ্য বাসে গেলে আরো এক ঘন্টা কম সময়ে পৌছানো যায়। কিন্তু তারা চাচ্ছিল রাতে রওনা দিয়ে সকালে পৌঁছে কোনো এক হোটেলে ঘন্টা দুই রেস্ট নিয়ে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে আবার সেদিনই ঢাকায় ফিরে আসবে। 

        রুদ্র, আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম, সাত্যকি, তারা সকলেই তাদের পরিকল্পনা মত কমলাপুর থেকে রাত ১১টার ট্রেনে উঠল এবং তারা সীতাকুণ্ডে পৌঁছালো পরদিন সকাল ৬ টায়। সীতাকুণ্ড পৌঁছে দুই ঘন্টার জন্য একটা হোটেলে চেক ইন করে সেখানে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। 

        সীতাকুন্ড বাজার থেকে ১২০ টাকা দিয়ে তারা একটা সিএনজি ঠিক করল। সিএনজি তাদের নামিয়ে দিবে পাহাড়ের প্রবেশ ফটকে। সেখান থেকেই তারা ট্রেকিং শুরু করবে। ট্রেকিং শুরু করার আগে পাহাড়ের ফটকের সামনে থাকা একটা দোকান থেকে তারা সবাই বাঁশের কঞ্চি ভাড়ায় নিলো। এক একটা কঞ্চি ২০ টাকা করে নিলো এবং দোকানদার জানালো, নেমে সেগুলো ফেরত দিলে সে তাদের ১০ টাকা ফেরত দিবে। তারা সেই দোকানেই তাদের ভাড়ি ব্যাগগুলো রেখে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে অবশেষে ট্রেকিং শুরু করল। সাধারণত ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে তাদের পাহাড়ের চূড়ায় পৌছাতে। 

        চন্দ্রনাথ পাহাড় এর উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্যে ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁ‌ড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ, কিছু ভাঙ্গা সিঁ‌ড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁ‌ড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ। তাই তারা সকলে বাম দিকের পথ দিয়ে উঠতে থাকলো। 

        প্রায় ১ ঘণ্টা – ১.৫ ঘণ্টা ট্রেকের পর তারা শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির দেখতে পেলো। তারা সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। সকলেই ক্লান্ত। ঘেমে একাকার। কেউ কেউ আর উঠতে চাচ্ছে না। কিন্তু রুদ্র সবাইকে উৎসাহ দিলো। সেই মন্দিরে এক পুরোহিতের সাথে তারা বেশ খানিকটা সময় কথা বলল এবং এই মন্দির সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারল। 

        মূলত প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী * ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন। 

        বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির, যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। তারা সকলেই খুব সর্তকতা সাথে কষ্টকর পথটা পাড়ি দিয়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌছালো, ঠিক সেই মুহুর্তে তাদের সকল কষ্ট নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো আশপাশের সৌন্দর্য দেখে। 

        চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তারা সকলেই দেখতে পেলো একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো সবাই উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে গেলো সকলের চোখ। 

        দুপুরের মধ্যে তারা চন্দ্রনাথ ঘুরে নিচে নেমে এলো। দুপুরের খাবার খেয়ে দুই একজন সিন্ধান্ত দিলো গুলিয়াখালী যাওয়ার। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উলটো দিকে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। মোটামুটি ঘন্টাখানেক সময় লাগে সেখানে পৌঁছাতে। সবাই ক্লান্ত। তারা আর কোথাও যেতে চাচ্ছিলো না কিন্তু শেষমেশ হাতে যেহেতু সময় ছিলো তাই তারা যাওয়ার সিন্ধান্ত নিয়ে নেয়। 

        গুলিয়াখালীতে পৌঁছে সমস্যাটা হয়। গুলিয়াখালীর সৌন্দর্য দেখে সবাই বিমোহিত। সবাই যার যার মত সমুদ্র বিলাস করতে থাকে। ঠিক সেই সময় ইরিনা এসে রুদ্রকে বলল, "রিয়াকে তুই এভাবে আর কতদিন ঘুরাবি?"
        "আমি রিয়াকে ঘুরাচ্ছি, মানে?" রুদ্র বলল। 
        "মানে কি বলতে চাচ্ছি তুই বুঝছিস না?"
        "না, একটু ক্লিয়ার করে বলল!"
        "রিয়া তোকে পছন্দ করে, তুই জানিস।"
        "কেউ পছন্দ করলে তাকে পছন্দ করতে হবে এমন কোনো কথা লিখা আছে কোথাও?"
        "না নেই। কিন্তু রিয়া দেখতে ভালো। ওর ফ্যামিলি ভালো। এছাড়া একটা মেয়ে হয়ে নিজে তোকে পছন্দ করে বলেছে।"
        "হ্যাঁ বলেছে। আমি তো বলছি না ও বলেনি। কিন্তু ওকে আমি শুধু বন্ধু হিসাবে পছন্দ করি। এর বাইরে কিছুই মনে করিনা।"
        "কেনো?"
        "কেনো মানে কি? পছন্দ অপছন্দ সবটাই-তো মনের ব্যাপার। ওকে পছন্দ হয়না। আমি কি করবো?"
        "সমস্যাটা ঠিক কোথায়?"
        "কি সমস্যা? 
        "ওকে পছন্দ না হওয়ার কারণ কি তরু?"
        "এখানে তরুর কথা আসছে কোথা থেকে?" ইরিনা হঠাৎ তরুর প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণে রুদ্রের মেজাজটা হালকা বিগড়ে গেলো।

        "আসবেই তো। ওর জন্যই তুই রিয়াকে এভাবে এভয়েড করছিস। মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস। এছাড়া যাকে তুই কখনো দেখিস নেই, চিনিস না, কই থাকে, কি করে, কিছুই জানিস না, এরকম কারো জন্য রিয়াকে কেনো ঘুরাচ্ছিস?"

        "ঘুরাচ্ছি মানে কি? আবার তুই একই কথা বলছিস। আমি কি ওকে বলেছি আমার পিছে ঘুরতে? আমি ওকে সরাসরি বলেই দিয়েছি, ওকে আমি বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ভবিষ্যতে ভাববো সেরকম কোনো সম্ভাবনাও নেই। তারপরও যদি ও আমাকে পছন্দ করে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমার করার কিছুই নেই।" 

        ইরিনা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। রুদ্রর কথা শেষ হলে সে কিছুটা সময় নিরব থেকে অবশেষে বলল, "তোর করার কিছু নেই বললেই সব সমাধান হয়ে যায় না রুদ্র। প্রথম দিকে তুইও তো রিয়ার সাথে প্রচুর কথা বলতি। ফোনে, মেসেজে। ও যখন তোকে পছন্দ করলো সেই মুহুর্তেই তুই পিছিয়ে গেলি। এখানে তোর কোনো দোষ নেই এটা বললে আমি মানছি না।
শোন, এক হাতে কখনো তালি বাজে না। তুই ভালো করে জানিস।"

        "আমি প্রথমে ওর সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেছি, এখনো সেরকমই করি। কিন্তু যখন ও বলল, ও আমাকে পছন্দ করে আমি চাইনি এই ব্যাপারটাকে আগাতে কিংবা ঘোলাটে করতে। শুধু সেই কারণে আমি ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি। এটা ওর কথা ভেবেই করেছি।" 

        ইরিনা সবটাই বুঝে কিন্তু রিয়া কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। সে রিয়াকে বুঝিয়েছে কিন্তু রিয়ার সেই এক কথা, রুদ্রকে সে পছন্দ করে। রুদ্র জন্য অপেক্ষা করবে। তার বিশ্বাস রুদ্র একদিন ঠিকই তাকে পছন্দ করবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ইরিনা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। রিয়ার কষ্ট সে কি করে মেনে নিবে? রিয়া তার সবচে ভালো বন্ধু। 

        ইরিনা বলল, "রুদ্র, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। তার কথা ভেবে রিয়া মেয়েটাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস?"
        "আমি রিয়াকে কষ্ট দিচ্ছি? তুই ঘুরিয়ে পেচিয়ে সেই একই কথা বলছিস। ভাল লাগছে না। তোর সাথে আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। প্লিজ!"
        "তাহলে কি বলল? তরুর ব্যাপারে তুই কিছু জানিস? শুধু ওই ফালতু কয়টা চিঠি ছাড়া!"
        "ফালতু চিঠি! ইরিনা প্লিজ, তুই তরুকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবি না। তোর মুখ থেকে তরুর নামটাও শুনতে চাচ্ছি না।" রুদ্র এবার রেগে গিয়ে চিৎকার করে ইরিনাকে কথাগুলো বলল। 

        ইরিনাও কিছুটা রেগে গেল। সে চুপ রইল না। সেও রাগী কন্ঠে বলল, "হ্যাঁ ফালতু। ফালতু একটা মেয়ে কোথাকার। যদি তোকে সত্যিই পছন্দ করে, ভালোবাসে তাহলে এভাবে নিজের পরিচয় গোপন করে চিঠি লিখবে কেনো? আসলে কি জানিস, ও তোকে নিয়ে খেলছে। লুকিয়ে তোকে দেখে হাসছে। আর তুই ও বোকা, ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। শুনে রাখ, যেদিন ও তোকে ছুড়ে ফেলে দিবে, ওর খেলা শেষ হবে, চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিবে, সেদিন বুঝবি কেউ ফিরিয়ে দিলে কতটা কষ্ট হয়।" 

        ইরিনার কথাগুলো একদমই পছন্দ হলো না রুদ্রের। সে রুক্ষ কন্ঠে, ইরিনার উপর চিল্লাতে চিল্লাতে বলল, "আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার তুই একটুও নাগ গলাবি না। আমি কিন্তু এটা কিছুতেই টলারেট করবো না।" 

        দূরে থেকে ফাহিম রুদ্রকে এভাবে ইরিনার উপর চিল্লাতে দেখেই ছুটে এলো। সে বলল, "ইরিনার সাথে এভাবে কথা বলবি না, রুদ্র। ভালো হবে না কিন্তু।" 

        ফাহিমের কথায় রুদ্র আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। সে বলল, "কি করবি তুই? হ্যাঁ কি করবি?" 
        "আমি কি করতে পারি তুই সেটা ভাল করেই জানিস।" ফাহিম বলল।

        রুদ্র প্রচন্ড রেগে ফাহিম কে গালি দিয়ে বলল, "হ্যাঁ জানি তুই কি করতে পারিস। সালার চামচা কোথা কার। যখন তোকে বলেছিলান ট্যুরে যাবো তুই সরাসরি আমাদের না করে দিলি। কিন্তু যেই শুনলি ইরিনা আসবে বেহায়ার মত ওর বডিগার্ড হতে চলে আসলি। তোর তো কোনো পার্সোনালিটি নেই।" 

        রুদ্রের কথায় ফাহিম প্রচন্ড অপমানিত বোধ করল। সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে রুদ্রের শার্টের কলার ধরল। ফাহিম যেই রুদ্রকে আঘাত করতে যাবে পাশে থাকা ইরিনা দ্রুত ওকে থামালো। ফাহিমকে টেনে নিয়ে গেলো কিছুটা দূরে। কিন্তু এবার ফাহিমকে মারার জন্য রুদ্রও এগিয়ে গেলো। 

        চিৎকার, চিল্লাচিল্লিতে এতোক্ষণে সবাই সেই জায়গায় জড়ো হয়ে গেছে। আলিফ দৌড়ে এসে রুদ্রকে ধরে থামাল। আর বলল, "রুদ্র কি করছিস এ-সব? বন্ধুদের মধ্যে সামান্য কথা-কাটাকাটি হতেই পারে। তাই বলে মারামারি করবি?" 

        "যে শুরু করেছে তাকে বলল। আমি কি শুরু করেছি। আর সবার সামনে ফাহিম কিছু না জেনে হঠাৎ এসে আমার কলাট ধরবে আর আমি চুপচাপ সেটা দেখে যাবো?" রুদ্র কথাগুলো বলতে বলতে ফাহিমকে মারবেই সেই জন্য আলিফের হাত থেকে মুক্ত হতে আলিফকে কিছুটা জোরে ধাক্কা দিলো। আলিফ সঙ্গে সঙ্গে ছিটে মাটিতে পরে গেলো। 

        সাত্যকি এগিয়ে এসে আলিফকে মাটি থেকে উঠতে সাহায্য করল। সে রুদ্র, ফাহিম এবং ইরিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, "হঠাৎ কি হয়েছে তোদের মধ্যে, যে এভাবে মারামারি করতে হবে?" 

        ইরিনা সংক্ষেপে ঘটনাটা বলে গেলো। ততক্ষণে রুদ্র কিছুটা শান্ত হলো। এদিকে ফাহিমকে ইরিনা বুঝিয়ে শান্ত করল। কিন্তু রিয়া সবটা শুনতেই তার মন খারাপ হলো। তার এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে, তার জন্যই আজ এই ঝগড়ার সূচনা। সে ইরিনাকে বলল, "আমি কি তোকে আমার হয়ে উকালতি করতে বলেছি?" 

        ইরিনা বলল, " না বলিস নেই। কিন্তু...!"

        ইরিনাকে কথা শেষ করতে দিলো না রিয়া। সে বলল, "তাহলে আমার জন্য কেনো তোরা তোদের মধ্যে ঝগড়া করছিস? আমি কখনোই চাই না আমার জন্য তোদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আর যদি সেটা হয় তাহলে সেটা আমাকে অনেক কষ্ট দিবে। আসলে আমার তোদের সাথে আসা উচিত হয়নি। তুই ওভাবে জোর না করলে আমি আসতামই না। আর আমি আজ এখানে না এলে এই ঝগড়াটাও হতো না।"

        "তুই এভাবে কেনো ভাবছিস। তেমন কিছুই হয়নি। আমি শুধু রুদ্রের সাথে কথা বলছিলাম। আমার একটা কথায় রুদ্র কিছুটা রেগে গেলে, ও কিছুটা রাগী কন্ঠে আমাকে ক'টা কথা বলছে। আমি এতে কিছুই মনে করিনি। কিন্তু ফাহিম সবটা না বুঝে এভাবে হঠাৎ রিয়েক্ট করবে কে জানতো।" 

        সবাই ফাহিমের দিকে তাকালো। ফাহিম হঠাৎ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। সে তার নিজের কাজের জন্য লজ্জিত বোধ করছে এখন। সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে সরি বলে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো। কেউ অবশ্য তাকে থামালো না। 

        এদিকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুদ্রের সামনে গিয়ে রিয়া হাত জোর করে বলল, "প্লিজ, ইরিনার কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না। আসলে ভুলটা আমারই। আমার উচিত হয়নি আমার সবকথা ওর সাথে শেয়ার করা। ও সবটা শুনে ভুল বুঝে আজ আপনার সাথে এটা নিয়ে তর্ক করেছে। আমি ওকে আগেই নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু...!" রিয়া কিছুটা সময় থেমে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আবার বলল, " আজ আমি সবার সামনে কথা দিচ্ছি, আমি আপনার সামনে আর কখনো আসবো না। আমি চাইনা, আমার জন্য আপনি বিরক্ত হোন। সবকিছুর জন্য আমি সত্যি লজ্জিত। আমাকে ক্ষমা করবেন।" শেষ পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও রিয়া নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না। তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে এলো। 

        রিয়াকে কাঁদতে দেখে সবার মুখই মলিন হয়ে উঠল। কেউ এটা আশা করেনি। তাৎক্ষণিক এরকম পরিস্থিতিতে কি বলবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। 

        রুদ্র বলল, "আসলে এখানে আমারও ভুল কম না। এভাবে হুট করে রেগে যাওয়া আমার একদমই চিন্তা হয়নি।" কথাগুলো বলে রুদ্র থেমে সবার উদ্দেশ্যে আবার বলল, "সরি!" 

        সাত্যকি আর ইরিনা দুইজন মিলে রিয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। 

        রিয়া কেনো হঠাৎ এভাবে কেঁদে দিলো? রিয়া একদমই এভাবে সবার সামনে কাঁদতে চায় নি। কিন্তু তখন রুদ্রকে কথাগুলো বলার সময় তার বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করেও সে নিজেকে সামলাতে পারে নি। সবার সামনে কেঁদে ফেলার জন্য তার এখন লজ্জা লাগছে। সে কারো মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। তাই ইরিনা আর সাত্যকিকে বলল, "আমি কিছুটা সময় একা থাকতে চাচ্ছি।" 

        সাত্যকি বলল, "রিয়া, তুমি চাইলে ওই পাশ দিয়ে একা হেঁটে আসতে পারো। আশা করি তোমার ভালো লাগবে।" 

        রুদ্র আলিফকে জড়িয়ে ধরে বলল, "সরি দোস্ত।" 
"ধুর পাগল আমাকে কেনো সরি বলছিস। আমি কিছু মনে করিনি। রাগের মাথায় একটু আধটু ভুল সবার-ই হয়।" আলিফ কথাগুলো বলে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। 

        এক মুহুর্তে তাদের ট্যুরটা নষ্ট হয়ে গেলো। কেউ আর অনন্দ করার মুডে নেই। এই মুহুর্তে সবার-ই মন খারাপ। সেই কারণে তারা গুলিয়াখালীতে বেশিক্ষণ থাকলো না। সবাই মোটামুটি স্বাভাবিক হলে সেখান থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ড বাস স্ট্যান্ডে চলে এলো। তাদের ভাগ্য অবশ্য সহয় হলো। দশ মিনিট পরেই একটা বাস পেয়ে গেলো। সেই বাসে ছয়টা টিকেট কেটে সেই সময়ই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সবার চাচ্ছে খুব দ্রুত যার যার বাসায় ফিরে যেতে। 

        অবশেষে ট্যুর থেকে সবাই মন খারাপ করে রাত দশটার দিকে ঢাকায় এসে পৌছাল। আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম, সাত্যকি এবং রুদ্র কারোই মন ভাল নেই৷ বাসের মধ্যে যে যার মত চুপচাপ রইল। বাস থেকে নেমেও প্রয়োজনীয় দুই একটা কথা ছাড়া কেউ কারো সাথে তেমন একটা কথা বলল না। 

        সাত্যকি হলে থাকে এবং ফাহিম ভার্সিটির ওদিকে একটা মেসে থাকে। তাই সে বলল, আমি সাত্যকিকে হলে পৌঁছে দিয়ে চলে যেতে পারবো। এটা বলেই তারা দুইজন চলে গেল। 

        রিয়া আর ইরিনার বাসা একই এলাকাতে। আলিফ চাচ্ছিলো তাদের পৌঁছে দিতে। কিন্তু ইরিনা শুনলো না। 
        "আমরা দুইজনে চলে যেতে পারবো। আমাদের এগিয়ে দেওয়া লাগবে না।" ইরিনা বলল। 
      আলিফ জোর করল না। রুদ্র একটা রিকসা ঠিক করে দিলো। সেটাতে করেই ইরিনা এবং রিয়া চলে গেলো। 

        ইরিনারা চলে গেলে আলিফ বলল, "চল এবার বাসার দিকে যাই।" 
        "এই মুহুর্তে এক কাপ চা'য়ের সাথে একটা সিগারেট লাগবে আমার মাথা ঠিক করতে। মাথা একদমই কাজ করছে না। মেজাজটাও একদম বিগড়ে আছে।"
        আলিফ বলল, "আচ্ছা চল। আগে তোর মেজাজ ঠিক করি। তারপর না হয় বাসায় যাওয়া যাবে।" 

        রুদ্র চা শেষ করে কিছুটা সময় নানা বিষয় নিয়ে আলিফের সাথে আলাপ করে বাসায় এলো রাত এগারোটার পরে। রুদ্রকে দেখে জাহানার খানিকটা অবাক। একদম ছন্নছাড়া অবস্থা। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। জাহানারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলল, "মা, আমি গোসল করে ঘুমাবো। রাতে খেয়ে এসেছি।" শেষের কথাটা মিথ্যে বলল। রুদ্রের এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। তার একটা ঘুম দরকার। দীর্ঘ ঘুম। 

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 23-11-2022, 07:07 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)