Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#17
 পর্ব-০৪

 

        পরীক্ষা শেষ হতেই কোথাও না দাঁড়িয়ে সরাসরি বাসার চলে এলো রুদ্র। আজ বুধবার। আজ রুদ্রের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিষয়টা আজ সকালে পরীক্ষার রুটিন দেখতেই সে খেয়াল করল। পরীক্ষার চাপে সে ভুলেই গিয়েছিলো তরুর চিঠির কথা। গত দুই বুধবারে তরুর কোনো চিঠি আসে নি। বিষয়টা খেয়াল হতেই সে তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিল তার নামে কোনো চিঠি এসে কি না। জাহানারা উত্তরে রুদ্র খুশি হতে পারে নি। তরুর কোনো চিঠিই আসেনি। দুই সপ্তাহ তরুর কোনো চিঠি আসে নি। নিজের অজান্তেই দুইবার বাক্যটা মনে মনে উচ্চারণ করল রুদ্র।

        রুদ্রের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলে সে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। প্রথম পরীক্ষাটা খারাপ হলে সে পড়ালেখায় আরো বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে। এই কারণে কোনো দিকে খেয়াল ছিলো না তার। এমনকি তরুর চিঠির কথাও বেমানান সে ভুলে গেছে। কি করে সে ভুলে গেলো?

        রুদ্র এখন রিকসায় বসে আছে। তার মনে নানা প্রশ্ন। তরুর শেষ চিঠিতে সে লিখেছিল, সে এখন হাসপাতালে। তরু এখন কেমন আছে? এখনও কি হাসপাতালে? কি হয়েছে তরুর? যে মানুষটা দীর্ঘ ছয় মাস ধরে নিয়মিত চিঠি পাঠায় সে হঠাৎ দুই সপ্তাহ কোনো চিঠি পাঠায় নি? তরুর কোনো বিপদ হয়েছে কি? রিকসায় যেতে যেতে রুদ্র এরকম নানা সম্ভাব্য প্রশ্ন ভাবতে লাগল। কিন্তু সে জানে এই সব প্রশ্নের উত্তর সে কিছুতেই জানতে পারবে না। 

        রুদ্র বাসায় এসে তার দাদীকে চিঠি আসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। তার উত্তরে রুদ্র খুশি হতে পারলো না। তবে আজকের দিনটা এখনো বাকী আছে। যে কোনো সময়ই চিঠি আসতে পারে। সে অপেক্ষা করতে থাকলো। 

        রুদ্র স্থির থাকতে পারছে না। এক জায়গা বসে থাকতে পারছে না। তার মন ছটফট করছে। সে এ ঘর থেকে ও ঘর হাঁটা হাঁটি করছে। রুদ্রকে এভাবে অস্থির হতে আলেয়া আগে কখনো দেখেনি। সে জিজ্ঞেস করল, "দাদু, কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এরকম লাগছে কেনো?"

        "একটা জরুরি চিঠি আসার কথা। কিন্তু আসছে না। সেই চিঠিটার অপেক্ষা করছি।" রুদ্র উত্তর দিলো।

        "এতো অস্থির হয়ো না। আসার কথা থাকলে অবশ্যই আসবে। আজ না এলে কাল আসবে। কিন্তু এভাবে অস্থির হলে কি চলবে?"

        "আচ্ছা, দাদী।" এটুকু বলে রুদ্র নিজের ঘরে এসে টেবিলে বসল। সে জানে সে তার দাদীকে বোঝাতে পারবে না কেনো সে এতো অস্থির। চিঠিটা তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তরুর জন্য তার প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। চিঠিটা এলে সে এটুকু শিওর হতে পারবে তরু ভালো আছে। সুস্থ আছে। 

        কলিংবেলের শব্দ শোনা মাত্রই রুদ্র দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। সে ভেবেছিল ডেলিভারির লোক এসেছে। কিন্তু দরজার বাইরে তার বোন মিলি দাঁড়িয়ে আছে। 

        রুদ্রকে দেখেই মিলি "ভাইয়া" বলে তাকে জড়িয়ে ধরল। রুদ্র তাকে ঘরে যেতে বলে সে অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বিকাল গড়িয়ে যতই সন্ধ্যা নেমে আসছে, ততই রুদ্রের প্রত্যাশা কমতে শুরু করল। সে হতাশ গলায় মনে মনে বললো, "না, আজকেও তরুর কোনো চিঠি আসবে না।" এই সামান্য কথাটুকু বলতে তার ভীষণ কষ্ট হলো। তার মনে হলো, একদল কান্না দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে জড় হয়েছে। গলাটা ভাড়ি হয়ে উঠেছে। তার কি কান্না পাচ্ছে? 

        সন্ধ্যার কিছু সময় পরেই সে আলিফকে ফোন দিয়ে চায়ের দোকানে আসতে বলল৷ এই মুহুর্তে সে একা থাকতে চাচ্ছে না। আলিফের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলে ভালো লাগবে এই আশায় তাকে আসতে বলা। 

        রুদ্র যাওয়ার আগে আলিফ এসে হাজির তাদের পরিচিত চায়ের দোকানে। এখানেই বসে তারা সবসময় চা খায়, আড্ডা দেয়। রুদ্র এসে কোনো কথা না বলে দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে সেটা ধরিয়ে দ্রুত টানতে লাগল। রুদ্রকে দেখেই আলিফ বুঝতে পারলো ওর কিছু একটা হয়েছে। সে কিছুটা সময় দিলো রুদ্রকে। হুট করে কিছু জিজ্ঞেস করল না। রুদ্র নিজ থেকেই কথাটা শেয়ার করবে তার সাথে। সেই জন্যই আমাকে এতো জরুরি ভাবে আসতে বলেছে। আলিভ ভাবলো।

        সিগারেটটা রুদ্র একাই শেষ করে ফেলল। আলিফ থাকতে সে কখনো এরকমটা করে না। সিগারেট শেয়ার করবেই তারা। আজকে কি হলো? আলিফ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাকে বোঝার চেষ্টা করতে থাকলো।

        "কি হয়েছে?" আলিফ জিজ্ঞেস করল। 

        রুদ্র আরো কিছুটা সময় নিলো। বলল, "তিন সপ্তাহ তরুর কোনো খোঁজ নেই। ওর কোনো চিঠি আসছে না। ও শেষ চিঠিতে লিখেছিল, ও হাসপাতালে। তারপর ওর আর কোনো চিঠি আসে নি। এদিকে আমার পরীক্ষা শুরু হলো, ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তাই বিষয়টা এতোদিন খেয়াল করি নি।"

        "এতো চিন্তা করছিস না। ও সুস্থ আছে।"
        "কিভাবে বুঝবো?" 

        রুদ্রের এই প্রশ্নের উত্তর আলিফের কাছে যেমন নেই রুদ্রের কাছেও নেই। তরুর সাথে যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম নেই। আলিফ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আলিফকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রই বলল, "আমিও জানি, তরুর বর্তমান অবস্থা জানার কোনো উপায় নেই। তবুও নিজেকে কোনো কিছু বলে বোঝাতে পারছি না, আলিফ। এই ব্যাপারটা মনে পড়লে ভালো লাগে না। তরুর ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ায় চেষ্টা তো কম করলাম না। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমিও কেমন করে যেনো দিনদিন...!" রুদ্র নিজের অনুভূতিটুকু বুঝিয়ে বলতে না পেরে এখানেই থামলো। 

        আলিফ বলল, "চল, এক কাজ করি। আমাদের পরীক্ষা শেষ। বন্ধুবান্ধব মিলে একটা ডে ট্যুর দেই। দেখবি মন মেজাজ ভালো হয়ে যাবে।" 

        আলিফের আইডিয়াটা ভালো লাগল রুদ্রের। সে বলল, "হ্যাঁ, এটা করা যায়। একঘেয়েমি কিছুটা হলেও কেটে যাবে।' 
        "তাহলে সবাইকে বলি, কেমন?" 
        "আচ্ছা।" 

        রুদ্র পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেটটা বের করে সেখান থেকে আরেকটা সিগারেট জ্বালাল। আলিফ বলল, "আজকাল তুই কিন্তু অতিরিক্ত স্মোকিং করছিস। " 
        "কমিয়ে দিবো।" উদাস ভঙ্গিতে বলল রুদ্র। 

        "দোস্ত।" আলিফ খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।
        "হ্যাঁ বল।" রুদ্র বলল। 

        আলিফ চুপচাপ। হাতে থাকা রঙ চায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র ব্যাপারটা লক্ষ করে বলল, "কিছু হয়েছে কি? কিছু বলবি?"

        "আসলে...!" বলে কিছুটা সময় থামলো। "ব্যাপারটা হচ্ছে, গত মাসে সিঁড়িতে হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। পড়ে গিয়ে মেয়েটার কপাল কেটে যায়। তারপর সেদিন আমাদের ছাঁদে দেখা হয়। তারপরও বেশ কিছুদিন ছাঁদে দেখে হয়েছে।" 

        "সমস্যা টা কি সেটা বল!"
        "সমস্যা কিছু না। আবার অনেক কিছু। মেয়েটার কাছে আমি এতোবার ক্ষমা চাইলাম। কথা বলার চেষ্টা করলাম। এই পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা-তো করল না, বরং একবার ভদ্রতার দেখিয়ে কথাও বলল না।" 

        "কি বলিস? মেয়েটা দেখতে কেমন রে?"
        "শ্যামলা। অতো সুন্দর না। কেনো?" 
        "কেনো মানে কি? আমার জানতে হবে না আমার বন্ধু যাকে পছন্দ করেছে সে দেখতে কেমন?"

        "ফাজলামো করবি না। আসলে ব্যাপার তেমন কিছুই না। কিন্তু এতোবার ক্ষমা চাইলাম। কথা বলার চেষ্টা করলাম। মেয়েটার একবার হলেও কি কথা বলা উচিত ছিলো না?"

        "অবশ্যই উচিত ছিলো। আমার বন্ধুকে এভাবে এভয়েড করছে। না, আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না।'
        "তুই কিন্তু আবারও...!"

        আলিফ কে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রুদ্র বলল, "আচ্ছা আমি সরি।" কথাটা বলে রুদ্র কিছুক্ষণ ভাবলো। বলল; এমনটা কি হতে পারে না, মেয়েটা শুনতে পায় না?"

        রুদ্রের কথাটা আলিফ একদম ফেলে দিতে পারলো না। সে বলল, "হতে পারে কিন্তু...!"

        "কিন্তু কি? হতেই পারে। মেয়েটা যদি তোর কথা শুনতে পেতো তাহলে অবশ্যই উত্তর দিতো। যেহেতু শুনতে পায় না সেহেতু সে কথাও বলতে পারে না।"
        "তুই কি বলতে চাচ্ছিস? মেয়েটা বোবা?"
        "রাগছিস কেনো? হতেই পারে। আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বললাম।"

        রুদ্রের কথাগুলো আলিফের পছন্দ হচ্ছে না। আলিফের চোখ মুখ মেঘে ডেকে গেছে। সে চুপচাপ। রুদ্রের চোখে বিষয়টা ধরা পরল। সে বলল, "আলিফ, বিষয়টা নিয়ে তুই আরেকটু ভেবে দেখ। পৃথিবীতে মানুষের নানা রোগ থাকে। বোবা এটাও একটা রোগ। আর সৃষ্টিকর্তার উপরে-তো কারো হাত নেই। আমি বলছি না মেয়েটা জন্মগত ভাবেই এমন, আবার সেটাও হতে পারে। তুই বরং মেয়েটার সাথে আরেকবার কথা বলে দেখ। একটু অন্য ভাবে চেষ্টা কর।" 

        আলিফ বলল, "কি ভাবে?"
        "আবার কখনো ছাঁদে দেখা হলে একটা কাগজ এবং কলম নিয়ে যাস। কাগজে লিখে মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিস।"

        "হ্যা সেটা করা যায় কিন্তু যদি মেয়েটা অপমানিত হয়? মানে বলতে চাচ্ছি, হতেই পারে মেয়েটা রাগ করে হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। যদি মেয়েটার কোনো সমস্যা না থাকে আর আমি এভাবে কথা বলি তাহলে যদি বিষয়টা অন্য ভাবে নেয়। তাহলে কি হবে?"

        "তুই কথাটা মন্দ বলিস নেই। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারিস। প্রেমে একটু রিক্স নিতেই হয় বন্ধু।" 

        "তুই আবারও মজা নিচ্ছিস।" 
        "আরে না না। মজা নিবো কেনো? কিন্তু আমার বন্ধু যে প্রেমে পড়েছে এটা আমি নিশ্চিত।"
        "ধুর, আমি গেলাম।" কথাটা বলেই আলিফ উঠে হাঁটা শুরু করলো।
        "আলিফ, ওই আলিফ কই যাস?" উত্তর না পেয়ে রুদ্র আবার বলল, "আচ্ছা, যা যা, এখন তো বন্ধুকে দেওয়ার মত সময় নেই হাতে। তবে বন্ধু, তোর জন্য শুভ কামনা রইলো।" শেষে কথাটা একটু শব্দ করেই বলল রুদ্র। 

        আলিফদের ছাঁদটা সুন্দর। বিভিন্ন প্রকারের ফুলের টব দিজে সাজানো পুরো ছাঁদ। পূব দিকে বড় একটা টবে বড় সাইজের একটা আম গাছ। তার পাশে একটা লেবু গাছ। সেখানে সে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ সময়। এই মুহুর্তে বিকালের আকাশ দেখা ছাড়া তার করার কিছু নেই। সে অন্যমনস্ক হয়ে আকাশ দেখছে। সেই সাথে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ভাবছে। মূলত সে সিন্ধান্ত হীনতার ভুগছে। রুদ্রে কথাগুলো সে একবারে ফেলে দিতে পারেনি। এদিকে মেয়েটার সাথে কথা বলতেও তার ইচ্ছে করছে। মেয়েটার চোখে মুখে এক ধরনের মায়া আছে। অন্য মেয়েদের চেয়ে ভিন্ন এক ধরণের সৌন্দর্য আছে মেয়েটার মধ্যে। কিন্তু মেয়েটা খানিক অদ্ভুতও বটে। কিন্তু যত কষ্টই হোক সে এই মেয়েটার সাথে একবার হলেও কথা বলতে চায়। তার অজান্তেই মনের ভেতর মেয়েটাকে জানার একটা আগ্রহ ভীষণ ভাবে তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেনো? এই পশ্নের যুতসই কোনো উত্তর আলিফ খুঁজে পায়নি। অবশ্য তার সাথে তার এই রকম ব্যবহার যায় না। সে ও কিছুটা অবাক, তার হঠাৎ এই সামান্য পরিবর্তন দেখে। মেয়েটাকে সে পছন্দ করে এরকমটা না। কিন্তু তার চোখ, কাজল কালো শ্যামলা মুখের মায়ায় আটকে গেছে সে। এটার নাম কি সে জানেনা। সে এর আগেও কয়েকটা রিলেশন করেছে, কিন্তু এই রকম কথা বলার আগ্রহ কিংবা এই অদ্ভুত অনুভূতি কখনোই হয়নি তার। 

        মেয়েটা কখন ছাঁদে এসেছে আলিফ খেয়াল করেনি। মেয়েটার তার ডান দিকে, খানিকটা দূর দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার পরনে কালো রঙের একটা থ্রিপিস, কপালে ছোট্ট কালো টিপ, ডান হাতে পুরনো একটা হাত ঘড়ি। ঘড়িটা দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো। তাদের চোখে চোখ পড়তেই, আলিফ দূর থেকে হাত তুলে হাই দিলো। মেয়েটা ছোট্ট করে হাসি দিয়ে সেটার উত্তর দিলো। আলিফ অবশ্য সেটা আশা করেনি। এই প্রথম মেয়েটা রেসপন্স করলো। তার মনে কিছুটা আশার আলো জাগল। সে খানিকটা কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটা একবার দেখে চোখ সরিয়ে নিলো। তারা নিশ্চুপ ভাবে বেশকিছু দাঁড়িয়ে রইল। কেউ কারো দিকে তাকালো না। কেউ কিছু বলল না। 

        আলিফ অবশেষে তার পকেট থেকে একটা হলুদ রঙের ছোট কাগজটা বের করে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলো। 

        মেয়েটা খানিকটা সময় নিয়ে, কিছু একটা ভেবে কাগজটা নিলো। হাতে নিয়ে কাগজে চোখ বুলালো। সেখানে লেখা, "হাই!" এবং তার পাশে একটা হাসির ইমোজি আঁকা। 

        মেয়েটা কাগজের থেকে চোখ উঠিয়ে আলিফের দিকে তাকাতেই সে দেখলো আলিফের হাতে আরেকটা একই সাইজের গোলাপি রঙের কাগজ। সে সেটা তার দিকে ধরে আছে। মেয়েটা সেটা নিলো। সেখানে লেখা, "কালো ড্রেসে আপনাকে সুন্দর লাগছে।" এই চিরকুটটা পড়ে মেয়েটা অবাক হলো। 

        মেয়েটার কালো ঠোঁটে মৃদু একটা হাসি জ্বলজ্বল করছে। সে আবার আলিফের দিকে তাকালো। আলিফের হাতে আরেকটা লাল রঙের কাগল ছিলো। এবার সে দ্রুত কাগজটা আলিফের হাত থেকে নিয়ে নিলো। সেখানে আলিফ লিখেছে, "নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন? অবাক হওয়ার মত কিছুই নেই। আপনি যদি আকাশী, মেরুন, বেগুনি, হলুদ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের কোনো একটা ড্রেস পরতেন তাহলে সেই রঙের চিরকুটটাই আপনাকে দিতাম।" 

        মেয়েটার চোখেমুখে বিস্ময়। মুখের হাসিটা আরো খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে আলিফের দিকে আবার তাকাতেই তার হাতে আরেকটা রঙিন কাগজ। সে সেটা নিলো। সেখানে লেখা, "আপনার চোখদুটো ভীষণ সুন্দর। সেখানে এক সমুদ্র মায়া।" 

        মেয়েটার চিরকুট পড়া শেষ হতেই আলিফ আরেকটা কাগজ এগিয়ে দিলো। সেখানে লেখা, "মিছেমিছি প্রসংশা করছি প্লিজ এটা ভাববেন না। আমি শুধু সুন্দরের প্রশংসা করেছি মাত্র।" 

        "আপনি কি আমার উপর সেই ঘটনার জন্য এখনো রেগে আছেন?" এই চিরকুট পড়া শেষ করে মেয়েটা মাথা নেড়ে উত্তর দিলো, "না!" 

        "আমি অবশ্য ভেবেছিলাম আপনি রেগে আছেন। সেই ঘটনার পর অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হলাম কি-না তাই!" মেয়েটার হাসিমাখা মুখটাতে কিছুটা মেঘ এসে জড় হলো। আলিফ দেখেই সেটা বুঝলো। 

        "সবকিছুর জন্য আবারো সরি। নতুন করে পরিচয় হতে পারি?" মেয়েটা মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ...!" 

        "আমি আলিফ" এই চিরকুটের সাথে আলিফ তার পকেট থেকে একটা কলম বের করে মেয়েটাকে দিলো। 

        মেয়েটা সেই চিরকুটের উলটো পিঠে লিখল, "আমি নদী।" 

        আলিফ পকেট থেকে আরেকটা কলম বের করে একটা খালি কাগজে লিখলো, "ভীষণ সুন্দর নাম।" 

        মেয়েটা সেই চিরকুটের অন্য পাশে লিখল, "আমাকে বোঝার জন্য ধন্যবাদ।" 

        আলিফ এই লেখাটা পড়ে বুঝলো রুদ্রের কথাই তাহলে ঠিক। মেয়েটা কথা বলতে পারে না। আলিফের মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু সে চেষ্টা করলো নদী যাতে সেটা বুঝতে না পারে। 

        "আমরা বন্ধু হতে পারি?" আলিফ লিখল।
        "অবশ্যই।" নদী লিখল। 

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 23-11-2022, 07:06 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)