23-11-2022, 11:42 AM
অণুগল্প
এই কদিন হলো বেশ জমাটি ঠান্ডা পড়ে গেছে। ভোর রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠতে বেশ কষ্টই হয় সরলের। কিন্তু কিছু করার নেই, ওর কাজটাই এমন, প্রায় রাত থাকতে থাকতেই উঠতে হয়। বাড়ি বাড়ি কাগজ বিলি করার কাজ করে ও। এক্কেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে সাড়ে তিনটের মধ্যে 'পয়েন্টে' পৌঁছতে হয়। তারপর নিজের হিসেবের কাগজ নিয়ে পাড়ায় ঢোকে ও। যদিও, সকাল সাড়ে ছ'টা - সাতটার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যায় ওর। তারপর একবার ওর মালিক, শিবাদার বাড়ি গিয়ে বাকি কাগজপত্তর, বা কারো বাড়ি থেকে টাকাপয়সা দিলে, সেগুলো বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। গিয়ে স্নান খাওয়া সেরে অফিসে যায়। অফিস মানে সেটাও একজনের বাড়িই, ছোটকাদা - এখানের বেশিরভাগ বাড়ির কেবল কানেকশান ছোটকাদার কাছ থেকেই নেওয়া। সেখানের টুকিটাকি কাজ করতে হয় - কারো বাড়িতে লাইনের কোনো সমস্যা হলে দেখে আসা, বা, ওর দ্বারা সেটার সমাধান না হলে ইলেক্ট্রিশিয়ান বিশুদাকে খবর দেওয়া, কেবলের টাকা তোলা, এইসব। আর এর মধ্যেই, দুপুরবেলা আর বাড়ি ফেরে না সরল, ছোটকাদার বাড়িতে বসেই একটু পড়ার বই পড়ে নেয়, নোট দেখে নেয়। কখনও কখনও ঘুমে চোখ জুড়ে আসে…তখন মিনিট পনেরোর জন্য ঘুমিয়ে নিয়ে আবার পড়া শুরু করে দেয়। বারবার বাবার কথা মনে পড়ে "সারাক্ষণ মোবাইল, বন্ধুবান্ধব - এসব ছেড়ে পড়াশোনা কর। এখন সময় খুব খারাপ। চাকরি বাকরির অবস্থাও খারাপ। কী যে হবে…"।
তখন বুঝত না সরল। বাবা চলে যাবার পরে বোঝে। মানে, মানুষ সারাজীবন থাকে না… জন্মালে চলে যেতেই হয়, কিন্তু, বাবা! বাবা চলে যাবার পরে হাড়ে হাড়ে বুঝেছে সরল, যে, বাবা কতখানি ছিলেন! আগে যে নিজেদের নিম্নবিত্ত হওয়া নিয়ে ছোট লাগত, এখন বোঝে ওই মোটা চালের ভাতটুকু জোগাড় করতে গিয়ে বাবাকে কতটা দিশাহারা হতে হয়েছে। আহা রে! বাবাকেও সেই ভোর বেলা থেকেই আগুনের ধারে থাকতে হতো। সকালে কচুরি, আলুর দম, ডিম কষা আর বিকেলে চপ ভাজা হতো বাবা যে দোকানে কাজ করতেন সেখানে। কারিগর হিসেবে বাবার মোটামুটি সুনাম ছিল। ওর বন্ধুরা অনেকেই ওই দোকান থেকেই চপ কিনে খেত। আর পরে ওকে এসে বলত। মাঝেমাঝে অদ্ভুত হীনমন্যতাতেও ভুগত সরল এজন্য। আর এখন - গর্ব হয়। বাবা চলে যাবার পরে একদিন ওই দোকানের মালিক কাকুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, উনি বলছিলেন "কালীদা মারা যাবার পর থেকে আমার খরিদ্দার ও কমে গেছে রে। অনেকেই বলে আগের মতো হচ্ছে না! মানুষটা এত কষ্ট পাচ্ছিল, বলে নি কোনোদিন!"
কান্না চেপে, কোনো মতে ঘাড় নেড়ে চলে এসেছিল সরল।
সত্যি, লাংসে ক্যান্সার হয়েছিল বাবার। চারিদিকে এত হাওয়া… তবু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। রোগা হয়ে গেছিলেন, বলতেন "ভাল তো রোগা হওয়া। আমাদের দোকানের উল্টোদিকেই তো একটা জিম আছে। কত টাকা নেয় জানিস? পনেরোশো টাকা! প্রতি মাসে! এত টাকা দিয়ে লোকে রোগা হতে যায়। আর আমি তো ফ্রিতেই রোগা হচ্ছি! হা হা!" এমনকি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে বলতেন "পাম্প স্টোভে রান্না তো, ওইজন্যই একটু… ও কিছু নয়।"
ওই "ও কিছু নয়" টাই কাল হলো! যখন ধরা পড়ল, ততদিনে রোগটা ছড়িয়ে গেছিল অনেকটাই। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু তার মাসতিনেকের মধ্যেই…
আর, হঠাৎ করেই সরলও 'বড়' হয়ে গেল। এমনিতেই ওদের জমানো কিছু ছিল না সেভাবে। যেটুকু ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেল। তাই, বাধ্য হয়েই কাজ ধরতে হয়েছে সরলকে। মা আগে থেকেই দুই বাড়ি রান্নার কাজ করেন। এইভাবেই চলে যাচ্ছে। তবে এই ভাবে 'চলা' না, সরল ভাল ভাবে বাঁচতে চায়। তাই কষ্ট হলেও পড়াশোনা বজায় রেখেছে। ভাগ্যিস নাইট কলেজে ভর্তি হয়েছিল! তবে, সব ক্লাস করতে পারে না ও। সাড়ে ছ'টা নাগাদ কলেজ গিয়ে ন'টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। দশটার মধ্যে না ঘুমোলে তিনটের সময় উঠে, সাড়ে তিনটের মধ্যে কাগজ আনার পয়েন্টে পৌঁছবে কি করে?
আজও রোজের মতোই কাগজ দিচ্ছিল বাড়ি বাড়ি। রবিবার গুলো একটু অন্যরকম হয়। কলেজ যেতে হয় না। কেবলের অফিস থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করতে পারে। আর দশটার বদলে সাড়ে আটটা - ন'টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।
কাগজ দেওয়া প্রায় শেষ, হঠাৎ হলুদ ফ্ল্যাট বাড়ির জানলা থেকে ওই বাড়ির কাকিমা ডেকে উঠলেন "এই যে ভাই, একবার আসবে?"
টাকা দেবার কথা আছে কি? কিন্তু শিবাদা তো কাগজের বিল পাঠায় নি? তবে অনেক বাড়ি থেকেই বিল না পাঠালেও টাকা দিয়ে দেয়, একদিন দুদিন পরে গিয়ে ও বিল দিয়ে দেয়। তেমনি কিছু হবে হয়ত।
তাড়াতাড়ি করে ঘরের সামনে এলো ও।
"কাকিমা, ডাকছিলেন?"
"হ্যাঁ, তোমার নাম কি গো? মানে, তুমি যখন কাগজ দেওয়া শুরু করো, শিবা বলেছিল বটে, একজন নতুন ছেলে আসবে। কিন্তু নামটা জানা হয়নি।"
"আমার নাম সরল বসাক, কাকিমা। আপনি কি আজ কাগজের টাকা দেবেন?"
"টাকা? না না, আমার মাসপয়লায় দেবার থাকে। তোমাকে দিয়েছিলাম তো এই মাসে।"
"ও হো, স্যরি কাকিমা, আমি ভুলে গেছিলাম।" মাথা চুলকে বলে ওঠে সরল। প্রায় একশোটা বাড়িতে কাগজ দিতে হয়… মনেই ছিল না।
কিন্তু, কাকিমাটা ডাকলেন কেন? একটু অবাক হয়েই তাকাল সরল।
উনি যেন বুঝে গেলেন ওর মনের কথাটা। তাই বললেন "তুমি তো পড়াশোনা করো, তাই না? শিবা বলেছিল। তোমাকে এটা দেবার জন্য ডাকলাম।"
তাকিয়ে দেখে, কাকিমার হাতে একটা চকোলেট!
"চকোলেট! কেন, কাকিমা?"
"শুনেছিলাম তোমার বাবা মারা গেছেন। বেশ আতান্তরে পড়েই কাজ শুরু করেছ। কতই বা বয়েস তোমার! আমার ছেলেটাও তোমার থেকে বড় হবে! ফেসবুকে দেখলাম, কাল 'ইন্টারন্যাশনাল মেনস ডে' ছিল। তাই ভাবলাম, একটা বাচ্চা ছেলে, যে বড় হবার আগেই সংসারের প্রয়োজনে 'বড়' হয়ে গেল, উপার্জনশীল হয়ে গেল, তাকে একটু থ্যাংকইউ বলি। ভাল থেকো, বাবা। বাবা নেই, মা তো আছেন। ওঁকে ভাল রেখো। নিজের যত্ন নিও। আর, পড়াশোনার জন্য কোনোরকম দরকার হলে আমাদের জানিও, কেমন?"
ছোট্ট একটা চকোলেট…কিন্তু… কী বিশাল! একজন মানুষের আশীর্বাদ আর ভালবাসা জুড়ে আছে যে তাতে।
আজকাল আর চোখে জল আসে না সরলের। তাও আজ গলার কাছটা যেন ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে, ওর মতো সাধারণ একজনকেও এভাবে কেউ আশীর্বাদ করতে পারেন?
এবার থেকে ও ও সবার পাশে থাকবে। এখন তো সবাই কেমন পালটে যাচ্ছে। মা বলেন, সবাই কেমন যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটু ভাল ব্যবহার, একটু কথা বলা - এভাবেও যদি পাশে থাকা যায়…
আর অন্যের মন ভাল করে দিতে যে খুব বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না, সদিচ্ছাটুকু ছাড়া, এই তো আজই বুঝে গেল ও…
রাস্তায় বেরিয়ে প্যাডেলে চাপ দিল ও।
ঝকঝকে সোনারঙা দিন আজ। ঠিক ওর কাণায় কাণায় ভরে যাওয়া মনের মতো একটা দিন…
এই কদিন হলো বেশ জমাটি ঠান্ডা পড়ে গেছে। ভোর রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠতে বেশ কষ্টই হয় সরলের। কিন্তু কিছু করার নেই, ওর কাজটাই এমন, প্রায় রাত থাকতে থাকতেই উঠতে হয়। বাড়ি বাড়ি কাগজ বিলি করার কাজ করে ও। এক্কেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে সাড়ে তিনটের মধ্যে 'পয়েন্টে' পৌঁছতে হয়। তারপর নিজের হিসেবের কাগজ নিয়ে পাড়ায় ঢোকে ও। যদিও, সকাল সাড়ে ছ'টা - সাতটার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যায় ওর। তারপর একবার ওর মালিক, শিবাদার বাড়ি গিয়ে বাকি কাগজপত্তর, বা কারো বাড়ি থেকে টাকাপয়সা দিলে, সেগুলো বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। গিয়ে স্নান খাওয়া সেরে অফিসে যায়। অফিস মানে সেটাও একজনের বাড়িই, ছোটকাদা - এখানের বেশিরভাগ বাড়ির কেবল কানেকশান ছোটকাদার কাছ থেকেই নেওয়া। সেখানের টুকিটাকি কাজ করতে হয় - কারো বাড়িতে লাইনের কোনো সমস্যা হলে দেখে আসা, বা, ওর দ্বারা সেটার সমাধান না হলে ইলেক্ট্রিশিয়ান বিশুদাকে খবর দেওয়া, কেবলের টাকা তোলা, এইসব। আর এর মধ্যেই, দুপুরবেলা আর বাড়ি ফেরে না সরল, ছোটকাদার বাড়িতে বসেই একটু পড়ার বই পড়ে নেয়, নোট দেখে নেয়। কখনও কখনও ঘুমে চোখ জুড়ে আসে…তখন মিনিট পনেরোর জন্য ঘুমিয়ে নিয়ে আবার পড়া শুরু করে দেয়। বারবার বাবার কথা মনে পড়ে "সারাক্ষণ মোবাইল, বন্ধুবান্ধব - এসব ছেড়ে পড়াশোনা কর। এখন সময় খুব খারাপ। চাকরি বাকরির অবস্থাও খারাপ। কী যে হবে…"।
তখন বুঝত না সরল। বাবা চলে যাবার পরে বোঝে। মানে, মানুষ সারাজীবন থাকে না… জন্মালে চলে যেতেই হয়, কিন্তু, বাবা! বাবা চলে যাবার পরে হাড়ে হাড়ে বুঝেছে সরল, যে, বাবা কতখানি ছিলেন! আগে যে নিজেদের নিম্নবিত্ত হওয়া নিয়ে ছোট লাগত, এখন বোঝে ওই মোটা চালের ভাতটুকু জোগাড় করতে গিয়ে বাবাকে কতটা দিশাহারা হতে হয়েছে। আহা রে! বাবাকেও সেই ভোর বেলা থেকেই আগুনের ধারে থাকতে হতো। সকালে কচুরি, আলুর দম, ডিম কষা আর বিকেলে চপ ভাজা হতো বাবা যে দোকানে কাজ করতেন সেখানে। কারিগর হিসেবে বাবার মোটামুটি সুনাম ছিল। ওর বন্ধুরা অনেকেই ওই দোকান থেকেই চপ কিনে খেত। আর পরে ওকে এসে বলত। মাঝেমাঝে অদ্ভুত হীনমন্যতাতেও ভুগত সরল এজন্য। আর এখন - গর্ব হয়। বাবা চলে যাবার পরে একদিন ওই দোকানের মালিক কাকুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, উনি বলছিলেন "কালীদা মারা যাবার পর থেকে আমার খরিদ্দার ও কমে গেছে রে। অনেকেই বলে আগের মতো হচ্ছে না! মানুষটা এত কষ্ট পাচ্ছিল, বলে নি কোনোদিন!"
কান্না চেপে, কোনো মতে ঘাড় নেড়ে চলে এসেছিল সরল।
সত্যি, লাংসে ক্যান্সার হয়েছিল বাবার। চারিদিকে এত হাওয়া… তবু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। রোগা হয়ে গেছিলেন, বলতেন "ভাল তো রোগা হওয়া। আমাদের দোকানের উল্টোদিকেই তো একটা জিম আছে। কত টাকা নেয় জানিস? পনেরোশো টাকা! প্রতি মাসে! এত টাকা দিয়ে লোকে রোগা হতে যায়। আর আমি তো ফ্রিতেই রোগা হচ্ছি! হা হা!" এমনকি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে বলতেন "পাম্প স্টোভে রান্না তো, ওইজন্যই একটু… ও কিছু নয়।"
ওই "ও কিছু নয়" টাই কাল হলো! যখন ধরা পড়ল, ততদিনে রোগটা ছড়িয়ে গেছিল অনেকটাই। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু তার মাসতিনেকের মধ্যেই…
আর, হঠাৎ করেই সরলও 'বড়' হয়ে গেল। এমনিতেই ওদের জমানো কিছু ছিল না সেভাবে। যেটুকু ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেল। তাই, বাধ্য হয়েই কাজ ধরতে হয়েছে সরলকে। মা আগে থেকেই দুই বাড়ি রান্নার কাজ করেন। এইভাবেই চলে যাচ্ছে। তবে এই ভাবে 'চলা' না, সরল ভাল ভাবে বাঁচতে চায়। তাই কষ্ট হলেও পড়াশোনা বজায় রেখেছে। ভাগ্যিস নাইট কলেজে ভর্তি হয়েছিল! তবে, সব ক্লাস করতে পারে না ও। সাড়ে ছ'টা নাগাদ কলেজ গিয়ে ন'টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। দশটার মধ্যে না ঘুমোলে তিনটের সময় উঠে, সাড়ে তিনটের মধ্যে কাগজ আনার পয়েন্টে পৌঁছবে কি করে?
আজও রোজের মতোই কাগজ দিচ্ছিল বাড়ি বাড়ি। রবিবার গুলো একটু অন্যরকম হয়। কলেজ যেতে হয় না। কেবলের অফিস থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করতে পারে। আর দশটার বদলে সাড়ে আটটা - ন'টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।
কাগজ দেওয়া প্রায় শেষ, হঠাৎ হলুদ ফ্ল্যাট বাড়ির জানলা থেকে ওই বাড়ির কাকিমা ডেকে উঠলেন "এই যে ভাই, একবার আসবে?"
টাকা দেবার কথা আছে কি? কিন্তু শিবাদা তো কাগজের বিল পাঠায় নি? তবে অনেক বাড়ি থেকেই বিল না পাঠালেও টাকা দিয়ে দেয়, একদিন দুদিন পরে গিয়ে ও বিল দিয়ে দেয়। তেমনি কিছু হবে হয়ত।
তাড়াতাড়ি করে ঘরের সামনে এলো ও।
"কাকিমা, ডাকছিলেন?"
"হ্যাঁ, তোমার নাম কি গো? মানে, তুমি যখন কাগজ দেওয়া শুরু করো, শিবা বলেছিল বটে, একজন নতুন ছেলে আসবে। কিন্তু নামটা জানা হয়নি।"
"আমার নাম সরল বসাক, কাকিমা। আপনি কি আজ কাগজের টাকা দেবেন?"
"টাকা? না না, আমার মাসপয়লায় দেবার থাকে। তোমাকে দিয়েছিলাম তো এই মাসে।"
"ও হো, স্যরি কাকিমা, আমি ভুলে গেছিলাম।" মাথা চুলকে বলে ওঠে সরল। প্রায় একশোটা বাড়িতে কাগজ দিতে হয়… মনেই ছিল না।
কিন্তু, কাকিমাটা ডাকলেন কেন? একটু অবাক হয়েই তাকাল সরল।
উনি যেন বুঝে গেলেন ওর মনের কথাটা। তাই বললেন "তুমি তো পড়াশোনা করো, তাই না? শিবা বলেছিল। তোমাকে এটা দেবার জন্য ডাকলাম।"
তাকিয়ে দেখে, কাকিমার হাতে একটা চকোলেট!
"চকোলেট! কেন, কাকিমা?"
"শুনেছিলাম তোমার বাবা মারা গেছেন। বেশ আতান্তরে পড়েই কাজ শুরু করেছ। কতই বা বয়েস তোমার! আমার ছেলেটাও তোমার থেকে বড় হবে! ফেসবুকে দেখলাম, কাল 'ইন্টারন্যাশনাল মেনস ডে' ছিল। তাই ভাবলাম, একটা বাচ্চা ছেলে, যে বড় হবার আগেই সংসারের প্রয়োজনে 'বড়' হয়ে গেল, উপার্জনশীল হয়ে গেল, তাকে একটু থ্যাংকইউ বলি। ভাল থেকো, বাবা। বাবা নেই, মা তো আছেন। ওঁকে ভাল রেখো। নিজের যত্ন নিও। আর, পড়াশোনার জন্য কোনোরকম দরকার হলে আমাদের জানিও, কেমন?"
ছোট্ট একটা চকোলেট…কিন্তু… কী বিশাল! একজন মানুষের আশীর্বাদ আর ভালবাসা জুড়ে আছে যে তাতে।
আজকাল আর চোখে জল আসে না সরলের। তাও আজ গলার কাছটা যেন ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে, ওর মতো সাধারণ একজনকেও এভাবে কেউ আশীর্বাদ করতে পারেন?
এবার থেকে ও ও সবার পাশে থাকবে। এখন তো সবাই কেমন পালটে যাচ্ছে। মা বলেন, সবাই কেমন যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটু ভাল ব্যবহার, একটু কথা বলা - এভাবেও যদি পাশে থাকা যায়…
আর অন্যের মন ভাল করে দিতে যে খুব বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না, সদিচ্ছাটুকু ছাড়া, এই তো আজই বুঝে গেল ও…
রাস্তায় বেরিয়ে প্যাডেলে চাপ দিল ও।
ঝকঝকে সোনারঙা দিন আজ। ঠিক ওর কাণায় কাণায় ভরে যাওয়া মনের মতো একটা দিন…