Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#11

পর্ব-০৩
 

       রিয়া বসে আছে ক্যান্টিনে। ইরিনার ক্লাস শেষ হলে সরাসরি তার এখানে আসার কথা। রিয়া তার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু ইরিনার আসার কোনো সম্ভাবনাই আপাতত দেখছে না সে। ক্লাস শেষ হওয়ার কথা বারোটায়। এখন একটা বাজে। যেহেতু এতোক্ষণে আসে নি সেহেতু তার আর আসার সম্ভাবনা নেই। তবুও রিয়া বসে আছে। এখানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে। ভালো লাগার কারণ রুদ্র।

       ক্যান্টিনের পূর্ব দিকের শেষ টেবিলে রুদ্র বসে আছে। রিয়া দূর থেকে রুদ্রকে দেখছে। সে চাইলেই কাছে গিয়ে কথা বলতে পারে কিন্তু সেটা সে করছে না। তার মধ্যে জড়তা কাজ করছে। সে এরকম স্বভাবের মানুষ না। সে লাজুক না, ভীতুও না। সে বরং অনেকটা তরল, চটপটে স্বভাবের। কিন্তু এই একটা মানুষের কাছে গেলেও সে শান্ত গভীর নদীর মত হয়ে যায়। কোথা থেকে যে জড়তা আছে, ভয় কাজ করে, বুকের ভেতর ঝড়তুফান হয়, সে নিজেই জানে না।

       প্রথম দিকে অবশ্য এরকমটা ছিলো না। স্বাভাবিক ছিলো সবকিছু। আর পাঁচটা মানুষের মতই, বন্ধুর মতই ভাবতো সে রুদ্রকে। কিন্তু সমস্যা ঘটেছে তখন থেকে যখন রিয়া বুঝতে পারে এই মানুষটাকে সে ভীষণ পছন্দ করে। এটা বোঝার পর থেকেই সে রুদ্রের সামনে গিয়ে আর কখনো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারেনি। ভালোবাসলে কেনো এমন হয়? না-কি একপাক্ষিক ভালোবাসা বলে সে একটু বেশি সর্তক। তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, যদি রুদ্র দূরে চলে যায়? রিয়া শুধু জানে, সে রুদ্রকে পছন্দ করে। খুব পছন্দ করে। এই মানুষটা তার না হলে সে বাঁচবে কি করে?

       একটা মানুষের দিকে কেউ কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে অদ্ভুত ভাবেই সে বুঝতে পারে কেউ তাকে দেখছে। কিন্তু রুদ্র কি সেটা বুঝতে পারে না? রিয়ায় মন খারাপ হয়। রুদ্র তার দিকে একবারও তাকায় না। সে যে এখানে আছে সেটাই হয়তো বুঝতে পারছে না রুদ্র। কিন্তু সে দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র একবারও তার দিকে তাকায় নি বরং সে বুঝতেই পারেনি দূর থেকে তাকে কেউ এভাবে দেখছে। রুদ্র এমন কেনো? কেনো আমাকে বুঝে না? রিয়ার আরো খানিকটা মন খারাপ হয়।

       রুদ্র আজ নীল রঙের একটা শার্ট পরে এসেছে। রিয়ার সাথে যেদিন রুদ্রের প্রথম দেখা হয় সেদিন রুদ্র এই শার্টটাই পরেছিল। সেদিন ছিলো ইরিনার জন্মদিন। ইরিনা আর রিয়া দীর্ঘ দিনের বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। এখন তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে। এসএসসি দুইজনে সাইন্সে থাকলেও এইচএসসিতে ইরিনার রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় সে বিভাগ পরিবর্তন করে ইন্টারে কমার্স নেয়। কিন্তু এতে তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। এখন তারা একই ভার্সিটিতে ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়ছে।

       সেদিন ছিলো ইরিনার জন্মদিন। সে তার ক্লাসের কিছু বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিল। সেই বন্ধুদের মধ্যে রুদ্রও ছিলো। সেদিনই রুদ্রের সাথে রিয়ার পরিচয় হয়। তারপর প্রায় তাদের দেখা হতো। যেহেতু সে ইরিনার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো, অন্য দিকে রুদ্রও ইরিনার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। এই ভাবেই নানা কাজে বা আড্ডায় তাদের দেখা হত। টুকটাক কথাও হত।

       একদিন একটা কাজে ইরিনা তাকে আসতে বলে। ওদিকে রুদ্রকেও আসতে বলেছিল। কিন্তু তাদের দুজনকে আসতে বলে ইরিনার কোনো খোঁজ ছিলো না। সেদিনই প্রথম বারের মত তাদের দীর্ঘ সময় কথা হয়। সেদিন সে বোকার মত একটা প্রশ্ন করেছিল রুদ্রকে। সে হঠাৎ বলেছিল, "আপনার কথাবার্তায় কখনো প্রকাশ পায়না আপনি * !"

       রুদ্র কথাটা শুনে অনেক হেসেছিলো। সে কোনো রকম হাসি থামিয়ে রিয়াকে বলেছিল, "আপনাকে কে বলল আমি * ?"

       রুদ্রকে এভাবে হাসতে দেখে রিয়ার অনেক লজ্জা লাগছিলো। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। কিছুটা সময় নিয়ে সে বলল, "আসলে...!" রিয়া কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।

       রুদ্র বলল, "এই যে আমি হাসি থামিয়েছি। এবার বলুন হঠাৎ আপনার কেনো মনে হলো আমি * ।"

       রিয়া বলল, "ইরিনার বার্ডে পার্টিতে আপনি মাংশ খেলেন না, এছাড়াও আমার গ্রামের পাশের বাসার এক * ছেলের নাম রুদ্র। আপনার নামও রুদ্র, তাই হঠাৎ মনে হলো আপনি হয়তো * । জানিনা, বোকার মত কেনো এটা মনে হলো। এদিকে আপনার কথাবার্তায় কখনোই সেরকম প্রকাশ পায় না। আমি একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম। কৌতুহল থেকে কথাটা বলেছি। সরি, কিছু মনে করবেন না।"

       "উঁহু! আমি কিছু মনে করিনি। আসলে আমার গরুর মাংশে এলার্জি আছে। অল্প খেলে সমস্যা হয়না, কিন্তু বেশি খেলে সমস্যা হয়। সেদিন সকালে বাসায় গরুর মাংশ খেয়েছিলাম। তাই তখন ইচ্ছে করেই খায় নি। আর আমার পুরো নাম ইয়াসিন আকবর রুদ্র। আসলে রুদ্র নামটা বাবা রেখেছে। বাবার এই নামটা পছন্দ ছিলো অনেক। কিন্তু কি কারণে এতো পছন্দ সেটা কখনো সে কাউকে বলেনি।"

       রিয়াকে এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রুদ্র আবার বলল, "একটা মজার ঘটনা শুনবেন?"

       রিয়া বলল, "হ্যাঁ বলেন।"
       "বাসায় আমাকে ইয়াসিন নামেই সবাই ডাকতো। কিন্তু বাবা এটা পছন্দ করতো না। তার ইচ্ছে সবাই যেনো আমাকে রুদ্র বলে ডাকে। একদিন মায়ের সাথে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। মা কিছুতেই আমাকে রুদ্র বলে ডাকবে না। তার এই নামটা পছন্দ না। এদিকে বাবা চায় মা জেনো আমাকে রুদ্র বলেই ডাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে গিয়ে মা বাবাকে বলে, "রুদ্র নামের প্রতি এতো অবেগ কেনো আমি কি বুঝিনা।" বাবা রেগে বলে, "কি বুঝো তুমি? হ্যাঁ, বলো আজ শুনি। প্রতিদিন এই এক কথা ভালো লাগে না।" মা বলে, "তুমি তোমার প্রথম প্রেমিককে ভুলতে পারো না-ই এখনো। তাই-তো তার দেওয়া নামটাই রেখেছ। আমার ছেলেকে আমি কিছুতেই এই নামে ডাকবো না।" সেবার মা রাগ করে আমাকে নিয়ে নানী বাড়ি চলে আসে। এক সপ্তাহ পর বাবা মা'য়ের রাগ ভাঙাতে সক্ষম হয়।

       রুদ্র দীর্ঘ সময় কথা বলে থামে। তারপর সে আবার বলে, "এই এক নাম নিয়ে সেবার যে কি কান্ড ঘটেছিল। আসলে শুধু সেবারই না। বাবার সাথে এই নাম নিয়ে প্রায়ই মা'য়ের ঝগড়া হতো।"

       "আপনার মা-বাবার কি অরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে?"
       "বলতে পারেন।"
       "মানে?"
       "মানে হলো এক পক্ষের দিক থেকে আরেঞ্জ ম্যারেজ, অন্য জনের দিক থেকে লাভ ম্যারেজ।"
       "কার দিক থেকে লাভ ম্যারেজ?"
       "আমার মায়ের দিক থেকে।"
       "আমার মা-বাবা দুইজনে প্রতিবেশী। বাবা যখন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দেবদাস তখন আমার দাদা জোর করে আমার মায়ের সাথে বাবাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার মাকে আমার দাদা ভীষণ পছন্দ করতো, এটা সবার মুখেই শুনেছি। দাদা সবসময় চাইতো আমার মা'কে তার বাড়ির বউ করতে। আসলে আমার দাদা এবং নানা দুইজন বন্ধু ছিলো।"

       "এখনও কি আপনার নাম নিয়ে আপনার বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়? আপনার মা এখন আপনাকে কি নাম ডাকে?" রিয়া প্রশ্ন করলো রুদ্রকে।

       রুদ্রের চেহারা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো। রিয়া বুঝলো তার প্রশ্নের কারণে এটা হয়েছে। রুদ্র বলল, "আমার বাবা মারা যাওয়া পর থেকে মা আমাকে সবসময় রুদ্র বলেই ডেকেছে। ভুলেও ইয়াসিন বলে ডাকেনি।"

       "আই এম সরি।" রিয়া বলল।
       "সরি বলতে হবে না। ইট'স ওকে।"

       রুদ্রের সাথে সেদিন রিয়ার কথোপকথন আর দীর্ঘ হলো না। রুদ্রের মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেছিলো। রিয়া বুঝতে পেরেছিলো বাবার কথা তুলে সে-ই মানুষটার মন খারাপ করে দিয়েছে। সেদিন ইরিনার কাছ থেকে রুদের ফেসবুক আইডি নেয়। তারপর থেকে রিয়া নিজ থেকেই রুদ্রকে মেসেজ দিতো। খোঁজ খবর নিতো। এভাবেই কথা বলতে বলতে হঠাৎ রিয়া মনে হলো সে ভীষণ রকম ভাবে রুদ্রকে পছন্দ করা শুরু করেছে। সে তার এই পছন্দের কথা প্রথমে ইরিনাকে জানায়। ইরিনা জানায় রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্রের কাছ থেকে সেরকম কোনো পজিটিভ ইঙ্গিত পায় নি। বরং তারপর থেকে রুদ্র নানা ভাবে রিয়াকে উপেক্ষা করতে শুরু করে। সে রিয়ার মেসের ঠিকমতো উত্তর দেয় না। ফোন দিলে সবসময় ফোন ধরে না।

       রিয়ার এটা নিয়ে কোনো রাগ কিংবা অভিমান নেই। তাকে পছন্দ করতে হবে এমনও না। কিন্তু রুদ্র যখন তাকে উপেক্ষা করে তখন কিছু সময়ের জন্য তার অনেক খারাপ লাগে। কষ্ট হয়। তবে সেটা সে দ্রুতই ভুলে যায়। সে রুদ্রকে পছন্দ করে ঠিক আছে কিন্তু এটা কি ভালোবাসা নাকি মায়া সে জানেনা। এটা নিয়ে সে তেমন ভাবেও না। ভাবতে গেলেই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। তাই সে চায় সবকিছু সহজ সরল রাখতে। সামনে কি হবে না হবে সে সব নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। এই যে সে দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্রকে দেখছে। তার ভালো লাগছে। এটুকুই তার জন্য যথেষ্ট। সে বেশি কিছুর প্রত্যাশা করে না। কারণ সে বিশ্বাস করে, মানুষ যত বেশি প্রত্যাশা করে তত বেশি হতাশ হয়।

       "তুই এখনো অপেক্ষা করছিস?" ইরিনা তার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলে।

       রিয়া রুদ্রের দিকেই তাকিয়ে ছিল। কিন্তু রুদ্রকে সে এখন দেখতে পাচ্ছে না। রুদ্র যে টেবিলে বসা ছিলো সেখানে এখন অন্য কেউ বসে আছে। পাশেপাশে চোখ বুলালো। কোথাও রুদ্র নেই। পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে সে খেয়ালই করেনি রুদ্র কখন চলে গেছে।

       "কিরে কি হলো তোর?" ইরিনা জিজ্ঞেস করে।
       "কই কিছু না।" রিয়া পাশে তাকিয়ে দেখে ইরিনা বসে আছে। সে আবার বলল, "উঁহু, তুই। কখন এলি?"
       "কখন এলাম মানে? কি ভাবছিস তুই? কোনো দিকেই দেখি খেয়াল নেই তোর?"
       "তেমন কিছু না।"
       "রুদ্রের কথা ভাবছিলি নিশ্চয়ই।"

       ইরিনার এই একটা দোষ। যখন তখন সে রুদ্রকে টেনে আনে তাদের কথার মাঝে। রিয়ার এটা ভালো লাগে না। সে বলল, "থামবি তুই! এটা বল, কই ছিলি এতোক্ষণ? না জানিয়ে কারো সাথে প্রেম টেম করছিস নাকি?" রিয়া প্রসঙ্গ পাল্টাতে কথাগুলো বলে।

       "প্রেম! আমার কপালে প্রেম-টেম নেই রে।"
       "এমন ভাব করছিস যেনো তোকে কেউ পছন্দ করে না।  তোকে কি কম ছেলে পছন্দ করে। প্রায়ই লাভ লেটার পাস। এছাড়া তোর ক্লাসে ওই ছেলেটার নাম কি রে? ও-তো তোকে সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে পছন্দ করে। ওর সাথে ঝুলে যা।"
       "দরকার নেই বাবা। তোর যে হাল দেখতাছি, তাতে আমার প্রেম করার স্বাদ মিটে গেছে।"
       "আমার আবার কি হাল?" রিয়া কিছুটা রেগে জিজ্ঞেস করল। ইরিনা সেটা বুঝতে পেরে এই বিষয়ে কথা আর বাড়ালো না।

       "চল।" ইরিনা বলল।
       "কোথায়।" রিয়া জানতে চাইল।
       "তোর প্রেমিকার কাছে।"
       "আবার এটা নিয়ে মজা করছিস!"
       "সরি বাবা, ভুল হয়েছে। বাসায় যেতে হবে না? ক'টা বাজে খেয়াল আছে?"
       হাতে থাকা ঘড়ির দিকে রিয়া তাকালো। তারপর অবাক হয়ে বলল, "দু'টো বেজে গেছে?"
       "হ্যাঁ, দু'টো বাজে।"

       ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় গেটে রুদ্রের সাথে দেখা হলো তাদের। রুদ্রকে দেখেই ইরিনা জিজ্ঞেস করল, "কিরে আজকাল তোকে ক্লাসে দেখাই যায় না। ক্লাস করিস না কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে? শরীর ভালো?"

       "আসলে কিছুদিন ধরে আপসেট আছি। মন মেজাজও পুরোপুরি ভালো নেই। ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করে না।" রুদ্র বলল।

       ইরিনা বলল, "সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা। এখন এভাবে ক্লাস মিস দেওয়া ঠিক হচ্ছে না তোর।"

       রুদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে বুঝতে পেরেছে। তারপর রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, "কেমন আছো রিয়া?"

       "ভালো আছি।" রিয়া এইটুকু বলেই পালটা কোনো প্রশ্ন করলো না রুদ্রকে।

       রুদ্র এবার ইরিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "বাসায় যাচ্ছিস?"
       "হ্যাঁ!"
       "আচ্ছা যা তাহলে। কাল ক্লাসে দেখা হবে।"
       "আচ্ছা।" বলে ইরিনা আর রিয়া হেঁটে চলে গেলো।

       রুদ্র ক্যাম্পাসেই ছিলো। আজ একটাও ক্লাস করেনি। ইচ্ছে করেই ক্লাসে যায় নি সে। আজকাল কেনো জানি তার হই হুল্লোড় ভালো লাগে না। গত ছয় মাসে সে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার ব্যবহার, পছন্দ অপছন্দ, অন্য মানুষের সাথে কথাবার্তার ধরণ, সবকিছুর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সে নিজেই লক্ষ করতে পারছে। আগে যা ভালো লাগত এখন সেটা ভালো লাগে না। সে আগে যেভাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো এখন সবাই ডাকলেও সে নানা অযুহাত দেখিয়ে যায় না। আগে অল্পতে রেগে যেতো, এখন সে আরো শান্ত।

       রুদ্র তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছে এই ক্যাম্পাসে। সামনেই তার ফাইনাল পরীক্ষা। তারপর ফাইনাল ইয়ারে উঠে যাবে সে। তবুও আজকাল তার কেবল মনে হয় এই তিনটা বছরে হাতে গোনা দুই একজন ছাড়া তার কোনো ভালো বন্ধু হয়নি, যাদের কাছে সে সবকিছু খুলে বলতে পারে। তার বন্ধু নেই তেমন না। বরং তার ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক বড়। তাদের পাঁচ ছয়জনের একটা গ্রুপ আছে। সবসময় একসাথেই থাকে। কিন্তু আজকাল রুদ্র কেমন ছন্নছাড়া। আলাদা এক প্রাণ। তার একা থাকতে ভালো লাগে। সে কখনো ভাবেনি একটা মানুষ তার জীবনে এতোটা প্রভাব ফেলবে। যাকে সে কখনো দেখেনি, যাকে সে চিনে না, যার কোনো ঠিকানা জানেনা, যার আজও কোনো অস্তিত্ব আছে কি-না সে জানেনা, সেরকম একটা মানুষ তার জীবনে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মানুষ খুব অদ্ভুত। মানুষ নিজেকেই সহজে চিনে উঠতে পারে না। মাঝেমধ্যে নিজেকেই অপরিচিত লাগে। মনে হয়, এই আমিটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি।

       রুদ্র নিজেকে নিয়ে নানা কিছু ভাবছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে ফোনে তার মা'র নাম্বার ভেসে উঠতেই সে কিছুটা অবাক হলো। এই সময় তাকে ফোন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সে দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাহানারা বলল, "হ্যালো, রুদ্র। তুই এখন কোথায়?"

       "ক্যাম্পাসে। কোনো সমস্যা হয়েছে, আম্মু?" রুদ্র বলল।

       "তোর দাদী হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাকে ফোন দিয়েছিল কিন্তু ভাল করে কথা বলতে পারেনি। মনে হয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পাঁচটার আগে আমি-তো যেতে পারবো না। তুই দ্রুত বাসায় গিয়ে দেখ তো মানুষটার কি অবস্থা। জরুরি হলে এম্বুলেন্স ফোন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিস। আমি সরাসরি অফিস শেষে ওখানে চলে আসবো।"

       "উঁহু। আমি এখনোই বাসায় যাচ্ছি। তুমি টেনশন করো না।"
       "আচ্ছা, আমাকে জানাস কি অবস্থা।"
       "ওকে আম্মু। জানাবো।" কথাটা বলে ফোন কেটে দিয়ে রুদ্র সরাসরি বাসায় দিকে রওনা করল।

       বাসায় গিয়ে দেখলো তার দাদীর অবস্থা আসলে ভালো না। সে খাটে শুয়ে আছে তার পাশে ছোট্ট মিলি দাঁড়িয়ে আছে। মিলি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছে সেটা রুদ্র তাকে দেখেছি বুঝতে পারলো। সে মিলির কাছে গিয়ে বলল, "আমার বুড়িটা দেখি অনেক সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। আর ভয়ের কিছু নেই। ভাইয়া চলে এসেছে না।"

       মিলি এইটুকু নির্ভরতা পেয়ে ভাইয়ার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, "ভাইয়া, ভাইয়া, দাদী!" কোনো রকম ভাবে এটুকু বলতে পারলো মিলি। আর কিছু বলল কি না বোঝা গেলো না কান্নায় শব্দে।

       রুদ্র এম্বুলেন্স কল করেছিলো। এম্বুলেন্স আসতেই আলেয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। রুদ্র তার মা'কে ফোন করে সবটা জানালো। সে ইচ্ছে করেই মিলিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। এমনিতেই মিলি অনেক ভয় পেয়েছে, তাই রুদ্র চায়নি বারো বছরের একটা মেয়েকে এই অবস্থায় বাসায় একা রেখে আসতে। এমনিতেই এ বাসায় কোনো সমস্যা নেই। মিলি মাঝেমধ্যে একাই থাকে। তারা যখন বছর খানেক আগে এই বাসা ভাড়া নেয় তখন থেকে কিছুদিনের মধ্যেই আশেপাশে সবার সাথে তাদের ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এদিকে মিলিও খুব মিশুক। এই বাড়ির তার বয়সী ছেলে মেয়েদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

       জাহানারা যত দ্রুত সম্ভব অফিস থেকে হাসপাতালে চলে এলো। আলেয়াকে ভর্তি করানো হয়েছে। মাওকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশানের কারণে আলেয়া হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসপাতালে আনতে আরো কিছুক্ষণ বিলম্ব হলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতো বলে ডাক্তার জানিয়েছে। রাতে রুদ্র হাসপাতালে থেকে গেলো। জাহানারা মিলিকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। এবং যাওয়া আগে রুদ্রকে বলে গেলো রাতে সে আরেকবার আসবে।

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 20-11-2022, 01:01 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)