19-11-2022, 09:41 PM
একচত্বারিংশৎ অধ্যায়
স্বপ্নের মতো কেটে গেল রাত।ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেল।চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে দেখল পুতুলদি এসে গেছে।চা খেয়ে স্নানে যাবে।পলি ক্লিনিক বলতে ডাক্তার কম্পাউণ্ডার নার্সের কথা মনে আসে।এর একটাতেও তার সম্ভাবনা নেই।পিয়ন বেয়ারা হলেও হতে পারে।যাইহোক আপাতত চালাবার মতো কিছু একটা হলেই হল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।চায়ে চুমক দিয়ে ভাবে রেজাল্ট বেরোলে ভাল চাকরির জন্য ফাকে ফাকে চেষ্টা করতে হবে।সারা জীবন পিয়নগিরি করে কাটাবে নাকি?রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমি নটার সময় বের হবো।
পুতুলদি চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার রান্নায় মন দিল।পুতুলদি শোনে কথা বলে খুব কম।পুতুলদিকে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ল।
মা অবশ্য মেসে নয় লোকের বাড়ীতে কাজ করতো। চা শেষ করে স্নানে চলে গেল।ভাল করে গামছা দিয়ে সারা শরীর রগড়ে স্নান করে।একটা ধন্দ্ব কিছুতে কাটেনা।পলি ক্লিনিকে কি চাকরি হতে পারে।ঠগবাজের পাল্লায় পড়ল নাতো?ঠগবাজের একটা উদ্দেশ্য থাকে।এ ক্ষেত্রে কিইবা উদ্দেশ্য থাকতে পারে?স্নান সেরে ঘরে এসে বাক্স খুলে সার্টিফিকেট গুলো বের করল।একটা নতুন জামাও বের করে।শ্রাদ্ধের সময় পাওয়া একদিনও পরেনি।
পুতুলদি বলল,খেতে দিয়েছি।
এর মধ্যে সব হয়ে গেল।সুখর ভাল লাগে।রান্না ঘরে আসন পেতে খেতে বসে গেল।খুব ক্ষিধে পেয়েছিল কাল থেকে কিছুই তেমন খাওয়া হয়নি।খেতে খেতে সুখ বলল,তুমি চলে যাও।থালা আমি ধুয়ে রাখব।
পুতুলদি চলে গেল।সুখ নিজেকে বোঝায় কোনো কিছু আশা না করাই ভাল।আশা করলেই হতাশ হতে হয়।চাকরি না হোক একটা অভিজ্ঞতা হবে।খাওয়া দাওয়া সেরে সাজগোজ করে হাত আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।কার্ডটা বের করে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল।অন্যদিনের কথা আলাদা আজ বাসেই যাবে।হেটে ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।ফেরার সময় নাহয় হেটেই ফিরবে।হেটে কলেজ স্ট্রীট অবধি গিয়ে নির্দিষ্ট বাসে চেপে বসল।কাকুর কথা মনে পড়ল।কাকু বলেছিলেন,বিদেশে কোনো কাজকে ছোটো ভাবা হয় না।কোনো রেস্টরেণ্টে যে তোমাকে চা এগিয়ে দিচ্ছে তাকে কোনো ইউনিভার্সিটিতে দেখলে অবাক হয়োনা।বাপের ঘাড়ে বসে বেকার দিনের পর দিন খেতে এদেশে লজ্জা করে না কিন্তু বাজারে সবজি বিক্রী করতে লজ্জা পায়।কত কথা মনে পড়ছে।সুখ কোনো কাজে লজ্জা পায় না।কাজের বদলে পারিশ্রমিক পাবে এতে লজ্জা কিসের?
বাস থেকে নেমে ঠিকানা খুজে খুজে পার্ক এভেনিউয়ের(নাম পরিবর্তিত) নির্দিষ্ট নম্বরে পৌছে কোথাও প্লেজারের নাম গন্ধ পেল না।গেটে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে গেটের ওপাশে বিশাল চত্বর সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে তার পিছনে বিল্ডিং।সুখ সসংকোচে এগিয়ে দারোয়ানকে কার্ড দেখিয়ে কিছু বলার আগে দারোয়ান হাত দিয়ে একটা সিড়ি দেখিয়ে বলল,উপার চলা যাইয়ে।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে দোতলার ল্যাণ্ডিং-এ পৌছে দেখল দরজা বন্ধ।আবার সিড়ি দিয়ে আর উপরে উঠে দেখল করিডোরের দুপাশে ঘরে বেডে পেশেণ্টরা শুয়ে আছে।এতক্ষনে মনে হচ্ছে এটা চিকিৎসালয়।এবার কি করবে সুখ ইতস্তত করে।একজন নার্সকে আসতে দেখে সুখ সব কথা বলতে মহিলা তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিল।সেই ঘরে দুজন মহিলা তার ওজন নিল প্রেশার দেখল তারপর বাধা দেবার আগেই সুচ ফুটিয়ে রক্ত নিয়ে বলল,ওই ঘরে গিয়ে বসুন।
সুখ একটা সোফায় গিয়ে বসল।আরও দু-তিনজন তারই মত বসে আছে।সুখ হতবাক চাকরির জন্য এসেছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলল না,রক্ত নিল কেন?এর সঙ্গে চাকরির কি সম্পর্ক?
পাশে বসা একজন বলল,ভেনেরাল টেস্ট।
ভেনেরাল টেস্ট মানে আমার কোনো যৌন রোগ আছে কিনা তার পরীক্ষা।যৌন রোগ কিভাবে হবে?মনে পড়ল বৈচিমাসীর কথা আর সেই মহিলার কথা।ওদের শরীরে কোনো যৌন রোগ ছিল নাতো?সময় কেটে যাচ্ছে এখান থেকে চলে যাবে কিনা ভাবতে থাকে।কতক্ষন এখানে অপেক্ষা করবে।হঠাৎ নজরে উগ্র সাজের এক মহিলা শর্ট ঝুলের জামা গায়ে হাই হিল পরে হেটে দক্ষিন দিকে চলেছে।চলার তালে তালে পাছার বল দুটো নাচছে।এই মহিলা তো সাধারণ নয়।ওদিকে যাচ্ছেই বা কোথায়? সুখ দেখল শেষ প্রান্তে একটা দরজা খুলে মহিলা ভিতরে মিলিয়ে গেল।ওদিকে আরেকটা সিড়ি আছে নাকি?একজন মহিলা এসে তার পাশের লোকটিকে ডেকে নিয়ে গেল। এই লোকটিও কি তারই মত চাকরির জন্য এসেছে?
একজন মহিলা এসে বলল,আপনি আসুন।
সুখ উঠে তার সঙ্গে একটা ঘরে গেল।একটা লোক টেবিল চেয়ার সাজিয়ে বসে আছে।সেই মহিলা তাকে বসতে বলে চলে গেল।
টেবিলের উলটো দিকের ভদ্রলোক ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বললেন,আপনি সিলেকটেড।শুনুন পনেরো দিন ট্রেনিং হবে।ট্রেনিং পিরিয়ডে পার ডে ভাতা একশো টাকা।নিন এখানে সই করুন।ভদ্রলোক খাতা এগিয়ে দিল।
সুখ স্বাক্ষর করতে ভদ্রলোক তার হাতে একশো টাকা ধরিয়ে দিল।
টাকাটা নিয়ে বলল,আমি তাহলে যেতে পারি?
হ্যা কাল বেলা তিনটে থেকে ট্রেনিং।সময় মত আসবেন।
কোথায় ট্রেনিং হবে?
এখানে আসবেন আমি নিয়ে যাব।
সুখর ধোয়াশা কাটে না।তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।কিন্তু কাজটা কি?মনে হচ্ছে ট্রেনিং দিয়ে কাজ শিখিয়ে নেওয়া হবে।মনে মনে হিসেব করে পনেরো দিনে দেড় হাজার টাকা।একটা দুশ্চিন্তা কাটলো।টাকাটা পকেটে রাখতে গিয়ে সার্টিফিকেটগুলো হাতে ঠেকল।
কেউ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইল না।ট্রেনিং হলে বুঝতে পারবে কোন বিষয়ে শিক্ষা দিতে চায়।ওদিকের সিড়ি দিয়ে নামবে ভেবে সুখ দক্ষিন দিকে এগিয়ে গেল।দরজা খুলে ঢুকতে যাবে একটা ষণ্ডা গোছের লোক এসে বলল,এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
নীচে যাবো।
উত্তর দিকের সিড়ি দেখিয়ে বলল,সিড়ি ওদিকে।
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে এই সিড়ি দিয়ে নামলে আপত্তি কেন?আবার ঘুরে উত্তর দিকে সিড়ির দিকে গেল। লিফট আছে তবু সুখ সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। তিনতলা থেকে দোতলায় নেমে দেখল আসার সময় দরজা বন্ধ ছিল এখন দরজা খুলেছে।সুখর কৌতূহল হল দক্ষিন দিকে সিড়ি দিয়ে নামতে বাধা দিল কেন। ভিতরে গিয়ে দেখল বা-দিকে একটা লম্বা মত ঘরে লোকজন অপেক্ষা করছে।আর ডানদিকে বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বার।অপেক্ষমান লোকজন মনে হয় ডাক্তার দেখাতে এসেছে। একপাশে টেলিফোন অপারেটার দু-কানে ফোন লাগিয়ে অনর্গল বকে যাচ্ছে।
ডাক্তার বাগচী? না এ সপ্তাহে হবে না।আপনি মুখার্জিকে দেখাতে পারেন--তা হলে নেক্সট উইক?...হ্যা নামটা বলুন...সকাল এগারোটা।
কেউ সম্ভবত ডাক্তারের এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট চাইছে।দক্ষিন দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখল দেওয়াল।তিনতলার থেকে দোতলা বেশ ছোট মনে হল। কিছুক্ষন এদিক ওদিক দেখে সিড়ি দিয়ে একতলায় নেমে এল।এদিক ওদিক ঘুরে দেখল অন্য কোনো দিকে সিড়ি নেই।তিনতলার থেকে সিড়ি নীচে নেমে এসেছে ।তাহলে কি সে ভুল দেখল?হুউম... ট্রেনিং-এ তো আসছে রহস্যটা বের করতে হবে।
রাস্তায় এসে বুঝতে পারে অনেক বেলা হয়ে গেছে।বাসে উঠতে ইচ্ছে করল না হাটতে থাকে।
আজকের মত ক্লাস শেষে ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন।কিন্তু কোথায় যাবেন?স্টাফ রুমের একদিকে কয়েকজন কি নিয়ে যেন কথা বলছে।শুক্লাও ওদের মধ্যে আছে।ননদ ভাইওলেণ্ট ছেড়া ছেড়া কিছু শব্দ কানে আসছে।ছুটির ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করছেন দীপশিখা।কলেজ সার্ভিস থেকে বছর কয়েক আগে এসেছে শুক্লা।বিয়ে হয়নি বয়স বেশী নয়। দীপাদির সঙ্গে ওর খুব ভাব।
পার্কের কাছে এসে ফেবারিট কেবিনে ঢুকে সুখ দুটো টোস্ট আর চায়ের ফরমাস করল।পকেটে পয়সা থাকলে ভাবনা-চিন্তাগুলোও বেশ হালকা মেজাজের হয়।
বাসে উঠে জানলা ঘেষে বসল দীপশিখা।এম সি মানে মিতা চ্যাটার্জির ননদ ভাইওলেণ্ট হয়ে গেছে।শ্বশুর বাড়ী হতে বাপের বাড়ী রেখে গেছে শুক্লার কাছে শুনল।যেখানে যা শুনবে দীপাদিকে এসে বলা চাই।দীপশিখা মজা করে বলেছিলেন,চাকরি করছো এবার একটা বিয়ে করে ফেলো।
চারদিকে যা শুনছি বিয়ে করতে ভয় হয়।
যা শুনছো সেটাই সব নয়।চব্বিশ ঘণ্টায় দিন-রাত্রি দুই আছে।
শুনেছো মিসেস চ্যাটার্জির ননদের কথা।ওর হাজব্যাণ্ড নাকি আগের প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ের পরও যোগাযোগ রাখে।
দীপশিখা বিরক্ত হন বলেন,আমি শুনতে চাই না।
মৌলালী আসতেই নেমে পড়লেন দীপশিখা।সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে ল্যাচ ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে চেঞ্জ করে পাখা ফুল স্পীডে দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লেন।মনে হল এই সময় কেউ যদি এককাপ চা এগিয়ে দিত।ফোন বাজছে। এখন আবার কে?ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে চোখ যেতে মৃদু হেসে বললেন,পরীক্ষার খবর কি?
ভাল।মোমো তুমি কেমন আছো?
আর কেমন আছি।ডাক্তার চেঞ্জ করেও কিছু হল না।জানিস শনিবার একটা মজা হয়েছে।কলেজে গিয়ে মনে হল গ্যাস বন্ধ করেছি কি?একবার ভাবলাম বাড়ী ফিরে আসি আবার মনে হল শনিবার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে।ক্লাসে মন দিতে পারছি না।দুশ্চিন্তা মাথায় জমাট বেধে আছে।বাড়ি ফিরে দরজা খুলে পাখা চালায় নি যদি কিছু হয়ে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে নীচু হয়ে রেগুলাটরে হাত দিয়ে দেখলাম বন্ধ।ঊঃস যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
মোমো তোমায় একটা কথা বলবো?
কি কথা?এত ভণিতা করছিস কেন?
তুমি একজন সাইক্রিয়াটিস্টকে দেখাও--।
তুই কি আমাকে পাগল ভেবেছিস--।
মোমো শোনো--।
চুপ কর লঘু গুরু সব ভুলে গেলি?দীপশিখা ফোন কেটে দিলেন।
ঐটুকু মেয়ে যাকে সেদিন জন্মাতে দেখলাম--এদের মুখের কোনো আগল নেই।এখনো তো পাস করেনি--।
দীপশিখা রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিলেন।চায়ের জল ফুটছে দীপশিখার মেজাজ ক্রমশ শান্ত হতে থাকে।মেয়েটাকে এভাবে বলা ঠিক হয় নি।এই হয়েছে মুষ্কিল আজকাল কি যে হয়েছে এমন মাথা গরম হয়ে যায়।
সুখ মেসে ঢুকে দেখল সবাই এসে গেছে।উপেনবাবু বললেন,আজ কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?
ঐ একটু পার্ক এভেনিউয়ের দিকে গেছিলাম।প্লেজারের কথা চেপে গেল।এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। তার মনে নানা রকম প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে।ফ্রক পরা মেয়েটা তারপর সিড়ি দিয়ে নামতে যাওয়ায় বাধা দিল তাতেই সন্দেহটা দৃঢ়ীভুত হয়।
স্বপ্নের মতো কেটে গেল রাত।ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেল।চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে দেখল পুতুলদি এসে গেছে।চা খেয়ে স্নানে যাবে।পলি ক্লিনিক বলতে ডাক্তার কম্পাউণ্ডার নার্সের কথা মনে আসে।এর একটাতেও তার সম্ভাবনা নেই।পিয়ন বেয়ারা হলেও হতে পারে।যাইহোক আপাতত চালাবার মতো কিছু একটা হলেই হল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।চায়ে চুমক দিয়ে ভাবে রেজাল্ট বেরোলে ভাল চাকরির জন্য ফাকে ফাকে চেষ্টা করতে হবে।সারা জীবন পিয়নগিরি করে কাটাবে নাকি?রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমি নটার সময় বের হবো।
পুতুলদি চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার রান্নায় মন দিল।পুতুলদি শোনে কথা বলে খুব কম।পুতুলদিকে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ল।
মা অবশ্য মেসে নয় লোকের বাড়ীতে কাজ করতো। চা শেষ করে স্নানে চলে গেল।ভাল করে গামছা দিয়ে সারা শরীর রগড়ে স্নান করে।একটা ধন্দ্ব কিছুতে কাটেনা।পলি ক্লিনিকে কি চাকরি হতে পারে।ঠগবাজের পাল্লায় পড়ল নাতো?ঠগবাজের একটা উদ্দেশ্য থাকে।এ ক্ষেত্রে কিইবা উদ্দেশ্য থাকতে পারে?স্নান সেরে ঘরে এসে বাক্স খুলে সার্টিফিকেট গুলো বের করল।একটা নতুন জামাও বের করে।শ্রাদ্ধের সময় পাওয়া একদিনও পরেনি।
পুতুলদি বলল,খেতে দিয়েছি।
এর মধ্যে সব হয়ে গেল।সুখর ভাল লাগে।রান্না ঘরে আসন পেতে খেতে বসে গেল।খুব ক্ষিধে পেয়েছিল কাল থেকে কিছুই তেমন খাওয়া হয়নি।খেতে খেতে সুখ বলল,তুমি চলে যাও।থালা আমি ধুয়ে রাখব।
পুতুলদি চলে গেল।সুখ নিজেকে বোঝায় কোনো কিছু আশা না করাই ভাল।আশা করলেই হতাশ হতে হয়।চাকরি না হোক একটা অভিজ্ঞতা হবে।খাওয়া দাওয়া সেরে সাজগোজ করে হাত আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।কার্ডটা বের করে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল।অন্যদিনের কথা আলাদা আজ বাসেই যাবে।হেটে ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।ফেরার সময় নাহয় হেটেই ফিরবে।হেটে কলেজ স্ট্রীট অবধি গিয়ে নির্দিষ্ট বাসে চেপে বসল।কাকুর কথা মনে পড়ল।কাকু বলেছিলেন,বিদেশে কোনো কাজকে ছোটো ভাবা হয় না।কোনো রেস্টরেণ্টে যে তোমাকে চা এগিয়ে দিচ্ছে তাকে কোনো ইউনিভার্সিটিতে দেখলে অবাক হয়োনা।বাপের ঘাড়ে বসে বেকার দিনের পর দিন খেতে এদেশে লজ্জা করে না কিন্তু বাজারে সবজি বিক্রী করতে লজ্জা পায়।কত কথা মনে পড়ছে।সুখ কোনো কাজে লজ্জা পায় না।কাজের বদলে পারিশ্রমিক পাবে এতে লজ্জা কিসের?
বাস থেকে নেমে ঠিকানা খুজে খুজে পার্ক এভেনিউয়ের(নাম পরিবর্তিত) নির্দিষ্ট নম্বরে পৌছে কোথাও প্লেজারের নাম গন্ধ পেল না।গেটে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে গেটের ওপাশে বিশাল চত্বর সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে তার পিছনে বিল্ডিং।সুখ সসংকোচে এগিয়ে দারোয়ানকে কার্ড দেখিয়ে কিছু বলার আগে দারোয়ান হাত দিয়ে একটা সিড়ি দেখিয়ে বলল,উপার চলা যাইয়ে।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে দোতলার ল্যাণ্ডিং-এ পৌছে দেখল দরজা বন্ধ।আবার সিড়ি দিয়ে আর উপরে উঠে দেখল করিডোরের দুপাশে ঘরে বেডে পেশেণ্টরা শুয়ে আছে।এতক্ষনে মনে হচ্ছে এটা চিকিৎসালয়।এবার কি করবে সুখ ইতস্তত করে।একজন নার্সকে আসতে দেখে সুখ সব কথা বলতে মহিলা তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিল।সেই ঘরে দুজন মহিলা তার ওজন নিল প্রেশার দেখল তারপর বাধা দেবার আগেই সুচ ফুটিয়ে রক্ত নিয়ে বলল,ওই ঘরে গিয়ে বসুন।
সুখ একটা সোফায় গিয়ে বসল।আরও দু-তিনজন তারই মত বসে আছে।সুখ হতবাক চাকরির জন্য এসেছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলল না,রক্ত নিল কেন?এর সঙ্গে চাকরির কি সম্পর্ক?
পাশে বসা একজন বলল,ভেনেরাল টেস্ট।
ভেনেরাল টেস্ট মানে আমার কোনো যৌন রোগ আছে কিনা তার পরীক্ষা।যৌন রোগ কিভাবে হবে?মনে পড়ল বৈচিমাসীর কথা আর সেই মহিলার কথা।ওদের শরীরে কোনো যৌন রোগ ছিল নাতো?সময় কেটে যাচ্ছে এখান থেকে চলে যাবে কিনা ভাবতে থাকে।কতক্ষন এখানে অপেক্ষা করবে।হঠাৎ নজরে উগ্র সাজের এক মহিলা শর্ট ঝুলের জামা গায়ে হাই হিল পরে হেটে দক্ষিন দিকে চলেছে।চলার তালে তালে পাছার বল দুটো নাচছে।এই মহিলা তো সাধারণ নয়।ওদিকে যাচ্ছেই বা কোথায়? সুখ দেখল শেষ প্রান্তে একটা দরজা খুলে মহিলা ভিতরে মিলিয়ে গেল।ওদিকে আরেকটা সিড়ি আছে নাকি?একজন মহিলা এসে তার পাশের লোকটিকে ডেকে নিয়ে গেল। এই লোকটিও কি তারই মত চাকরির জন্য এসেছে?
একজন মহিলা এসে বলল,আপনি আসুন।
সুখ উঠে তার সঙ্গে একটা ঘরে গেল।একটা লোক টেবিল চেয়ার সাজিয়ে বসে আছে।সেই মহিলা তাকে বসতে বলে চলে গেল।
টেবিলের উলটো দিকের ভদ্রলোক ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বললেন,আপনি সিলেকটেড।শুনুন পনেরো দিন ট্রেনিং হবে।ট্রেনিং পিরিয়ডে পার ডে ভাতা একশো টাকা।নিন এখানে সই করুন।ভদ্রলোক খাতা এগিয়ে দিল।
সুখ স্বাক্ষর করতে ভদ্রলোক তার হাতে একশো টাকা ধরিয়ে দিল।
টাকাটা নিয়ে বলল,আমি তাহলে যেতে পারি?
হ্যা কাল বেলা তিনটে থেকে ট্রেনিং।সময় মত আসবেন।
কোথায় ট্রেনিং হবে?
এখানে আসবেন আমি নিয়ে যাব।
সুখর ধোয়াশা কাটে না।তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।কিন্তু কাজটা কি?মনে হচ্ছে ট্রেনিং দিয়ে কাজ শিখিয়ে নেওয়া হবে।মনে মনে হিসেব করে পনেরো দিনে দেড় হাজার টাকা।একটা দুশ্চিন্তা কাটলো।টাকাটা পকেটে রাখতে গিয়ে সার্টিফিকেটগুলো হাতে ঠেকল।
কেউ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইল না।ট্রেনিং হলে বুঝতে পারবে কোন বিষয়ে শিক্ষা দিতে চায়।ওদিকের সিড়ি দিয়ে নামবে ভেবে সুখ দক্ষিন দিকে এগিয়ে গেল।দরজা খুলে ঢুকতে যাবে একটা ষণ্ডা গোছের লোক এসে বলল,এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
নীচে যাবো।
উত্তর দিকের সিড়ি দেখিয়ে বলল,সিড়ি ওদিকে।
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে এই সিড়ি দিয়ে নামলে আপত্তি কেন?আবার ঘুরে উত্তর দিকে সিড়ির দিকে গেল। লিফট আছে তবু সুখ সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। তিনতলা থেকে দোতলায় নেমে দেখল আসার সময় দরজা বন্ধ ছিল এখন দরজা খুলেছে।সুখর কৌতূহল হল দক্ষিন দিকে সিড়ি দিয়ে নামতে বাধা দিল কেন। ভিতরে গিয়ে দেখল বা-দিকে একটা লম্বা মত ঘরে লোকজন অপেক্ষা করছে।আর ডানদিকে বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বার।অপেক্ষমান লোকজন মনে হয় ডাক্তার দেখাতে এসেছে। একপাশে টেলিফোন অপারেটার দু-কানে ফোন লাগিয়ে অনর্গল বকে যাচ্ছে।
ডাক্তার বাগচী? না এ সপ্তাহে হবে না।আপনি মুখার্জিকে দেখাতে পারেন--তা হলে নেক্সট উইক?...হ্যা নামটা বলুন...সকাল এগারোটা।
কেউ সম্ভবত ডাক্তারের এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট চাইছে।দক্ষিন দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখল দেওয়াল।তিনতলার থেকে দোতলা বেশ ছোট মনে হল। কিছুক্ষন এদিক ওদিক দেখে সিড়ি দিয়ে একতলায় নেমে এল।এদিক ওদিক ঘুরে দেখল অন্য কোনো দিকে সিড়ি নেই।তিনতলার থেকে সিড়ি নীচে নেমে এসেছে ।তাহলে কি সে ভুল দেখল?হুউম... ট্রেনিং-এ তো আসছে রহস্যটা বের করতে হবে।
রাস্তায় এসে বুঝতে পারে অনেক বেলা হয়ে গেছে।বাসে উঠতে ইচ্ছে করল না হাটতে থাকে।
আজকের মত ক্লাস শেষে ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন।কিন্তু কোথায় যাবেন?স্টাফ রুমের একদিকে কয়েকজন কি নিয়ে যেন কথা বলছে।শুক্লাও ওদের মধ্যে আছে।ননদ ভাইওলেণ্ট ছেড়া ছেড়া কিছু শব্দ কানে আসছে।ছুটির ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করছেন দীপশিখা।কলেজ সার্ভিস থেকে বছর কয়েক আগে এসেছে শুক্লা।বিয়ে হয়নি বয়স বেশী নয়। দীপাদির সঙ্গে ওর খুব ভাব।
পার্কের কাছে এসে ফেবারিট কেবিনে ঢুকে সুখ দুটো টোস্ট আর চায়ের ফরমাস করল।পকেটে পয়সা থাকলে ভাবনা-চিন্তাগুলোও বেশ হালকা মেজাজের হয়।
বাসে উঠে জানলা ঘেষে বসল দীপশিখা।এম সি মানে মিতা চ্যাটার্জির ননদ ভাইওলেণ্ট হয়ে গেছে।শ্বশুর বাড়ী হতে বাপের বাড়ী রেখে গেছে শুক্লার কাছে শুনল।যেখানে যা শুনবে দীপাদিকে এসে বলা চাই।দীপশিখা মজা করে বলেছিলেন,চাকরি করছো এবার একটা বিয়ে করে ফেলো।
চারদিকে যা শুনছি বিয়ে করতে ভয় হয়।
যা শুনছো সেটাই সব নয়।চব্বিশ ঘণ্টায় দিন-রাত্রি দুই আছে।
শুনেছো মিসেস চ্যাটার্জির ননদের কথা।ওর হাজব্যাণ্ড নাকি আগের প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ের পরও যোগাযোগ রাখে।
দীপশিখা বিরক্ত হন বলেন,আমি শুনতে চাই না।
মৌলালী আসতেই নেমে পড়লেন দীপশিখা।সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে ল্যাচ ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে চেঞ্জ করে পাখা ফুল স্পীডে দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লেন।মনে হল এই সময় কেউ যদি এককাপ চা এগিয়ে দিত।ফোন বাজছে। এখন আবার কে?ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে চোখ যেতে মৃদু হেসে বললেন,পরীক্ষার খবর কি?
ভাল।মোমো তুমি কেমন আছো?
আর কেমন আছি।ডাক্তার চেঞ্জ করেও কিছু হল না।জানিস শনিবার একটা মজা হয়েছে।কলেজে গিয়ে মনে হল গ্যাস বন্ধ করেছি কি?একবার ভাবলাম বাড়ী ফিরে আসি আবার মনে হল শনিবার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে।ক্লাসে মন দিতে পারছি না।দুশ্চিন্তা মাথায় জমাট বেধে আছে।বাড়ি ফিরে দরজা খুলে পাখা চালায় নি যদি কিছু হয়ে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে নীচু হয়ে রেগুলাটরে হাত দিয়ে দেখলাম বন্ধ।ঊঃস যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
মোমো তোমায় একটা কথা বলবো?
কি কথা?এত ভণিতা করছিস কেন?
তুমি একজন সাইক্রিয়াটিস্টকে দেখাও--।
তুই কি আমাকে পাগল ভেবেছিস--।
মোমো শোনো--।
চুপ কর লঘু গুরু সব ভুলে গেলি?দীপশিখা ফোন কেটে দিলেন।
ঐটুকু মেয়ে যাকে সেদিন জন্মাতে দেখলাম--এদের মুখের কোনো আগল নেই।এখনো তো পাস করেনি--।
দীপশিখা রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিলেন।চায়ের জল ফুটছে দীপশিখার মেজাজ ক্রমশ শান্ত হতে থাকে।মেয়েটাকে এভাবে বলা ঠিক হয় নি।এই হয়েছে মুষ্কিল আজকাল কি যে হয়েছে এমন মাথা গরম হয়ে যায়।
সুখ মেসে ঢুকে দেখল সবাই এসে গেছে।উপেনবাবু বললেন,আজ কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?
ঐ একটু পার্ক এভেনিউয়ের দিকে গেছিলাম।প্লেজারের কথা চেপে গেল।এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। তার মনে নানা রকম প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে।ফ্রক পরা মেয়েটা তারপর সিড়ি দিয়ে নামতে যাওয়ায় বাধা দিল তাতেই সন্দেহটা দৃঢ়ীভুত হয়।