19-11-2022, 08:52 PM
পর্ব- ৫
মমতা দেবী ছেলেকে খুঁজতে ঘরে এসেছিলেন কিন্তু ঘর তো একদম ফাঁকা। বারান্দা করিডোর টিভিঘর সব খুঁজা হয়ে গেছে কিন্তু কৌশিকের টিকি টারও কোন দেখা নেই। না ছেলে তো তাকে না বলে কোথাও বের হবার কথা না আর এই অসময়ে যাবেই বা কোথায়? না একটা বার ছাঁদটা দেখে আসা দরকার। মমতা দেবী হন্য হয়ে ছোট লাগালেন ছাদের দিকে তবে ভেতর থেকে ছাদের গেট বন্ধ দেখে রণে ভঙ্গ দিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করলেন, না এবার টেনশন হতে শুরু করেছে ছেলে তার কোথায় গেল? তাও আবার তাকে না বলে। টেনশনে মমতা দেবীর হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে কোন রকমে নিজের ঘরে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছেলের নাম্বারে ফোন করে। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ তুলছে না, কপাল ঘামতে শুরু করেছে। মায়ের মনে দুঃশ্চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কৌশিকের কিছু হলো না তো, কপাল জুড়ে ঘাম জমতে শুরু করেছে শ্বাসের উঠা নামায় বুক ধর ফর করছে৷ ছেলের নাম্বারে এক নাগাড়ে কল করে চলেছে, ছটফটানিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে বসার ঘরে চলে এসেছে। হঠাৎ মনে হলো একটা মোবাইলের আওয়াজ আসছে ভালো করে কান পাততেই বুঝতে পারলো শব্দটা স্টোর রুমের দিক থেকেই আসছে। মমতা দেবীর মনে প্রশ্ন উঁকি দেয় কৌশিক স্টোর রুমে কি করছে, বছর খানেক ধরে তো সেটা খোলাই হয় নি ভীতসতন্ত্র পায়ে এগিয়ে যায় স্টোর রুমে দিকে, দরজার নব টা ঘুরাতেই সেটা খুলে যায় সেটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে কাউকেই দেখতে পায় না। তবে ছেলের মোবাইলটা পাশেই একটা ভাঙা টোলের উপর পেয়ে সেটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় কি একটা ভেবে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ফেরে তাকিয়ে খেয়াল করে ছবি আঁকার ক্যানভাস টা আর সেটার স্ট্যান্ডের জায়গা টা খালি পড়ে আছে৷ খানিক আগে যে মায়ের মন ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল সেই মনে হালকা খুশির ঢেউ খেলে গেল। এবার মমতা দেবী নিশ্চিত যে তার ছেলে কোথায় আছে তবে মাকে না জানিয়ে এমন করে ভয় পাইয়ে ভুল তো করেছেই আর সেটার শাস্তি পাঁজি টাকে পেতেই হবে। স্টোর রুমটা লক করে মমতা দেবী বাড়ির পেছনের বাগানের দিকে এগোতে থাকে।
যে দিন তোমায় আমি প্রথম দেখি ,
সেদিন থেকে হৃদয়ের মাঝে তোমার ছবি আঁকি।
কি অপরূপ তুমি ! দেখিনি আগে ,
যত দেখি তোমায় ততই ভালো লাগে ।
ভালো লাগার মাঝেও তুমি ভালো,
তাইতো তোমায় আমি বেসেছি ভালো ।
ভালোবাসায় কোনো বিভেদ মানে না ,
এ মন তোমায় ছাড়া কিছু বোঝে না।
কি অপরূপ ! তোমার দুটি আঁখি ,
অপলক নয়নে শুধুই চেয়ে থাকি ।
চাহনি ভরা হাসি তোমার মায়া ভরা মুখ,
একবার দেখিলে যেন পাই স্বর্গের সুখ ।
দাওনা সাড়া প্রিয়া তুমি আমার জীবনে ,
ছায়া হয়ে থাকবো আমি তোমার জীবনে।
অনেক আশায় বাড়িয়ে দিয়েছি হাতখানা,
রিক্ত হস্তে কভু ফিরিয়ে দিও না ।
তোমার কাছে শুধু আমার একটাই প্রশ্ন ,
আমাকে এইভাবে আজীবন ভালো বাসবে তো?
চুপিসারে পেছন থেকে এগিয়ে এসে কৌশিকের কান টেনে ধরে,
বাঁদর ছেলে একটা আমাকে জ্বালিয়ে মারলো। আমি তাকে পাগলের মত খুঁজে চলেছি আর সে কিনা এখানে অসময়ে বাগানে এসে ছবি আঁকছে আবার সাথে কবিতা আবৃত্তিও করা হচ্ছে।
ডান দিকে খানিকটা হেলে গিয়ে মুখটা কাচুমাচু করে, উফফ মা ছাড়ো এবার আমার লাগছে তো। এতো বড় ছেলের কান ধরে টানতে দেখেছো কখনো কোন মা কে। ক্ষমা চাচ্ছি তো সত্যিই ভুল হয়ে গেছে তোমাকে বলে আসা উচিত ছিল কিন্তু আমি ভাবলাম বাড়িতেই তো আছি তাই...
কৌশিক একটু সরে যেতেই ক্যানভাসে চোখ পড়ে মমতার। সেখানে রঙ তুলির আঁচড়ে যে মানবীর মনোহর চিত্র ফুটে উঠেছে সেটা থেকে চোখ সরাতে পারছে না। আনমনে ছেলের কান ছেড়ে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে যায় ক্যানভাসের দিকে,
কে রে এটা? কোথায় দেখলি? মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর তো, টানা চোখ খাড়া নাক হালকা ভি শেইপের মুখ দেখে মনে হচ্ছে একদম মা দুর্গা। কপালে একটা টিপ পড়িয়ে দিলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে, মেয়েটা সত্যিই কি দেখতে এমন নাকি আমার ছেলের মনে এমন ছবি আঁকা হয়ে গেছে। সত্যি করে বল...
না মা, দেখতেই এমনি হয়তো আরেকটু বেশিই সুন্দর। একবার তাকালে ঐ মুখখানা থেকে চোখ সরানো যায় না। ঐ দিন যে কলেজে গিয়েছিলাম সেখানেই দেখা।
মমতা দেবী উৎসাহ হঠাৎ যেন বেড়ে গেল,
কিরে নাম কি মেয়েটার? কোন ডিপার্টমেন্ট কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট নাকি টিচার স্টাফ? কোথায় থাকে? সব জেনেছিস?
মায়ের অতি উৎসাহের কারণ কৌশিকের জানা, আজ এতো বছর পর ছেলে রঙ তুলি হাতে নিয়েছে তাও আবার এমন একজনের ছবি এঁকেছে মায়ের মন ছেলের জন্য কি চায় সেটা তো একটু হলেও তার জানা। ওর মা তো সবসময় ভগবানের কাছে এটাই চায় তার ছেলেটা যেন একটু হাসি খুশি থাকে,
আরে মা! তুমি পাগল হলে নাকি? মিনিট খানিকের দেখা তাতে নাম জানবো কি করে? বাকি সব তো দূরের কথা, মেয়েটা স্টুডেন্ট তবে কোন ডিপার্টমেন্ট কোন ইয়ারের সেটা তো জানি না।
ধ্যাত তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। অন্তত নামটা তো জানতে পারতি, আচ্ছা তোকে না কলেজ থেকে জানানোর কথা ছিল, কি হলো?
হুম জানিয়েছে, ওরা চায় আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি জয়েন করে ফেলি। আমারও বাসায় বসে বসে ভালো লাগছে না তাই ভাবছি কাল থেকেই জয়েন করে নেব। আচ্ছা মা ঐ বাসার কি খবর? ভাবছিলাম একবার দেখে আসবো গিয়ে
বাইরের কাজ নাকি শেষ ভেতরে কিছু রং করা বাকি আর বাথরুমের ফিটিংস গুলো বদলাবে।
পরশু ছুটির দিন আছে ঐ দিনই যাবো তাহলে, আর ভাবছি বাইরের দেয়ালে কিছু আঁকাআঁকি করবো।
তোর মন চাইলে কর, আমি না করবো নাকি। আমি যাই হাতে কিছু আছে, তোকে ঘরে না পেয়ে তো আমার আত্মায় জল ছিল না কাজ টাজ সব ভুলেই গেছি। পাজি ছেলে একটা...
নরম হাতে আলতো করে কৌশিকের পিঠে গোটা দুয়েক চড় দিয়ে মমতা দেবী ঘরে দিকে চলে যায়।
অনির্বাণ পড়ার টেবিলে বসে আছে কিন্তু মনটা পড়ার টেবিলে নেই, বারবার ঘড়ি দেখছে আর জানালার ফাঁক গলে বাইরের রাস্তায় নজর রাখছে। ও হয়তো কারও অপেক্ষায় বসে আছে তাই তো সেই অপেক্ষার কঠিন যন্ত্রণায় পা দুটো সমানে নাড়িয়ে যাচ্ছে।
লোকে বলে 'সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে', এখানে অনির্বাণের ও হয়তো সেটাই হয়েছে। বয়সটাই এরকম হয়তো তাই কিছু করে দেখানোর একটা স্পৃহা মনে কাজ করে হোক সেটা ভালো বা মন্দ সেটা ভাবার সময় নেই। মন ভাবে কিছু ডেয়ারিং কাজ করে সেটা চারদিকে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ানোর মাঝে আলাদা ক্রেডিট আছে। বিশেষ করে বন্ধু মহলে তাতে হয়তো সস্তা বাহবা পাওয়া যায়। কিন্তু তারা কি সত্যিই বন্ধু? অনির্বাণ কয়েকজনের সাথে চলাফেরা করে যার বেশিরভাগই তার মত ফেল করে কলেজ থেকে ঝড়ে পড়েছে আবার কেউ কেউ কাজে নেমে পড়েছে কিংবা বখাটেপনায় নাম লেখিয়েছে৷ প্রতিদিন সন্ধ্যার আড্ডায় তাদের একেকজন একেক ধরনের গল্পের আসর জমায় সেটাতে সঙ্গ দিতে সিগারেট মদ গাঁজা এসব থাকাটা আনুষাঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায়শই তাদের অনেকেই তাদের কথিত গার্লফ্রেন্ডদের বিভিন্ন বিষয় আড্ডায় টেনে এসে সেটাতে খিল্লি করে। মাঝে মাঝে সেটা সীমা অতিক্রম করে সেক্সুয়াল ব্যাপারে চলে যায় যেমন কার প্রেমিকার বুকের সাইজ কতো পাছার সাইজ কত? আগে কেমন ছিল ওর সাথে প্রেম করার পর থেকে ওর হাতের ক্যালমায় সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে এসব ব্যাপারে বেশি কথা হয়। অনেক সময় গল্পের বিষয় বস্তু বিছানা অব্দি গড়ায়। কে কার প্রেমিকার সাথে কয়বার সেক্স করেছে কোথায় করেছে কোন কোন পজিশনে এসব বলে আর খিস্তিখেউড় তুলতে থাকে। এইসব গল্পেও বাকিরা বাহবা দিতে থাকে কত প্রশংসা করতে থাকে। কিন্তু এই আড্ডায় নিশ্চুপ কেউ বসে থাকলে সেটা অনির্বাণ কারণ ওর তো এসব নিয়ে বলার মত কিছু নেই। ওর আর রুমার মাঝে তো এমন কিছু হয়ে উঠে নি আজ পর্যন্ত তাই কিছু বলারও থাকে। সেই কারণে বাকিরা ওকে নিয়ে মজা করে খিল্লি করে আর একটু একটু করে উসকে দিতে থাকে রুমাকে ভোগ করার জন্য। প্রথম প্রথম অনির্বাণ এসব এড়িয়ে যেত কিন্তু ধীরে ধীরে ওর মাঝেও এই ভূত মাথায় চেপে বসতে শুরু করেছে।
গেটের শব্দ হতেই চেয়ার ছেড়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় অনির্বাণ, দেখতে পায় রুমা এসে গেছে। দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেট খুলে রুমা কে ভেতরে ঢুকিয়ে একবার চারপাশ টা দেখে নেয়। না কেউ রুমা কে বাসায় আসতে দেখে নি। ওকে নিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায় অনির্বাণ তার আগে সদর দরজা ভালো করে বন্ধ করে দেয়। ঘরে ঢোকার সময় রুমার কাছে মনে হয় বাসাটা কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে, অনির্বাণের ঘরে আসার সময়ও কাউকে দেখতে পেলো না। ভাবতে থাকে অনির্বাণ কে জিজ্ঞেস করবে, টেবিলের কাছে এসে চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে। ওর পাশেরই আরেকটা চেয়ারে অনির্বাণ বসে, ওর ভেতরের উশখুশ ভাবটা যতটা পারে সামলে রাখে।
আচ্ছা বাসায় কেউ নেই নাকি? খানিকটা বিরক্তি আর শঙ্কা নিয়েই রুমা প্রশ্নটা করে।
রুমা এমন প্রশ্ন করতে পারে সেটা আগেই ভাবা ছিল কিন্তু উত্তরে কি বলবে সেটা ঠিক করা নেই তাই আমতা আমতা করতে থাকে অনির্বাণ, না মানে হ্যাঁ। ওরা সবাই ঐ বটতলা মন্দিরে গেছে আজ কি জানি পূজা আছে। আমাকেও যেতে বলেছিল কিন্তু ম্যাথের এই চ্যাপ্টার টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে তাই তো থেকে গেলাম।
হুম, বুঝেছি। নাও তাড়াতাড়ি বই খাতা বের করো, তোমাকে ম্যাথের সল্যুশন টা করে দিয়ে আমাকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে।
নিজের তাড়া টা অনির্বাণ কে আগেই জানিয়ে দেয়, সে নিজেও যত তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যেতে পারে ততই ভালো।
অনির্বাণ বই খুলে যে চ্যাপ্টারে সমস্যা সেটা দেখিয়ে দেয়, রুমাও সাথে সাথে খাতায় সেটা সলভ করার পদ্ধতি গুলো এক এক করে ব্যাখ্যা করতে থাকে। রুমা মনোযোগের সাথে একটার পর একটা ম্যাথ প্রবলেম সলভ করে যাচ্ছে আর ওদিকে অনির্বাণের ভেতরের অস্থিরতা ওকে সোজা হয়ে বসে থাকতে দিচ্ছে না। কিভাবে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না, রুমা যদি রাজি না হয় কিংবা বাজে কোন রিয়্যাক্ট করে তবে কি হবে। মনের মাঝে ওকে হারাবার ভয়ও জেগে উঠছে খানিকটা, রুমা কে ও সত্যিই ভালোবাসে কিন্তু মনের ভেতরে যে রিপু বাসা বেঁধেছে সেটার কাছে বারবার অসহায় আত্মসমর্পণ করে যাচ্ছে সে। মনের ভেতরের হয়ে চলা দোলাচলে অসুরের জয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অসংলগ্ন ভাবে অনির্বাণ বার কয়েকবার নিজের হাতটা ছুঁইয়ে দেয় রুমার হাতের সাথে, প্রেমিকের দুষ্টুমি ভেবে সেটা হাসি মুখেই এড়িয়ে যায় রুমা। কিন্তু এই হাসিতেই যে ফাসতে চলেছে সেটা যদি রুমা জানতো।
এভাবে বারবার অনির্বাণের ছুঁয়ে যাওয়াটা রুমার মনোযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে, দুয়েক বার প্রেমিকের প্রতি চোখ রাঙানি দিলেও সেটা তেমন একটা কাজ করছে না। রুমার কাছে অনির্বাণের মতলব ভালো ঠেকছে না ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ম্যাথ গুলো শেষ করে বাড়ি ফিরতে চায়।
নাও ম্যাথ গুলো সলভ করে দিলাম, তুমি আরেকবার দেখে নাও কোন সমস্যা থাকলে বলো দেখিয়ে দিচ্ছি নইলে আমার এখন বাড়ি যেতে হবে।
অনির্বাণ রুমার কথা শুনে কিছুটা ব্যথিত হয়, নিজের চেয়ারটা খানিকটা এগিয়ে নেয় রুমার দিকে।
কেন আমার কাছে একটু বসলে কি তোমার খুব অসুবিধে? নাকি আজকাল আমাকে আর ভালো লাগছে না। হতেই পারে তোমার সাথে এখন হয়তো আমার স্ট্যান্ডার্ড মিলছে না।
অনির্বাণের মুখে এমন কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে রুমা, তুমি এটা কি বললে? আমাকে নিয়ে এমন ভাবনা তোমার মাথায় এলো কি করে? যদি এমনটাই হতো তবে কি আমি তোমার জন্য এত কিছু করতাম।
প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না, আমি ওমন করে বলতে চাই নি। তুমি আমার সাথে একটু সময় কাটাতে চাও না তাই রাগে এটা বলে ফেলেছি। আমারও তো ইচ্ছে করে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে।
অনির্বাণ কোন মতে ব্যাপারটা সামাল দেবার চেষ্টা করে।
তুমি কি চাও আর কি করবো আমি? তুমি তো সবটাই জানো আমার সম্পর্কে। কত কি সামলে চলতে হয় তবুও সময় পেলেই তোমার কাছে ছুটে আসি। আর সেই তুমি এমন করে কথা বললে আমার খুব কষ্ট হয়।
অনির্বাণ বুঝতে পারে ওর কথায় রুমা খুব কষ্ট পেয়েছে। এমন করে বলা টা উচিত হয়নি, তবে এমন সিচুয়েশনে ও রুমার আরও কাছে যেতে পারবে সেটাই বারবার মস্তিষ্কে খেলা করে যাচ্ছে। ও আরেকটু এগিয়ে আসে আর আলতো করে রুমাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
সরি সরি জান আর এমন করে কখনো বলবো না, আমি কান ধরছি এমন আর কখনো হবে না।
অনির্বাণের আবেগী ছোঁয়া তে রুমার মন শান্ত হয়ে আসে, নিজেকে একটু এলিয়ে দেয় প্রেমিকের বুকে। ওর মনে হয়তো কেবলি ভালোবাসার স্নিগ্ধ পরশের শীতলতা শান্ত বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু বিপরীতের মানুষটার মনে তখন কামনার আগুন জ্বলে চলেছে সেই কখন থেকে। প্রেমিকাকে আলিঙ্গনে শান্ত ভাবটা একটু একটু করে অশান্ত হয়ে উঠেছে, অনির্বাণের হাত চঞ্চল হয়ে উঠেছে রুমার পিঠ জুড়ে। সে নিজেকে আরও কাছে এগিয়ে নিয়েছে প্রিয়তমার আর হাতের স্পর্শে শরীর জাগানোর চেষ্টা করতে থাকে।
রুমা শুরুতেই বাঁধা দেয়, এমনিতেই বাড়িতে কেউ নেই। হঠাৎ কেউ চলে এলে আর ওদের এক সাথে দেখলে অনেক রটনা রটবে৷ যেটা কারও জন্যই ভালো হবে না।
উহহ, হয়েছে আর আদর দেখাতে হবে না। আমার এখন বাসায় যেতে হবে। তুমি ম্যাথ গুলো নিজে করার চেষ্টা করো।
প্লিজ জান আরেকটু থাক না আমার কাছে। বেশি না মাত্র দশ মিনিট।
না না, এক মিনিটও না। তোমার মতি গতি ঠিক নেই।
রুমা চেয়ার ছেড়ে উঠতে যায়।
গোমড়ামুখে, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তাই না। তাহলে চলেই যাও, আমি তো শুধু একটা কিস করতে চেয়েছিলাম মাত্র। থাক সেটা আর লাগবে না।
অনির্বাণের বিষন্ন মুখটা রুমার হৃদয়ে আঘাত করে, ও উঠতে গিয়েও চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারে না।
একটাই কিন্তু মনে থাকে যেন।
অনির্বাণের ঠোঁটের কোনে খুশির রেখা ফোটে উঠে। রুমার চেয়ার টা নিজের দিকে টেনে আনে আর নিজের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। প্রেমিকাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রসাধার কোমল ওষ্ঠের দিকে নিজেকে এগিয়ে দেয়। প্রিয়তমের উষ্ণ ছোঁয়ার প্রতীক্ষারত রুমা চোখ দুটো বুজে নিয়ে নিজের কোমল ঠোঁট জোড়া ঈশৎ ফাঁক করে চুম্বনের আহবান জানায়। অপেক্ষার অবসানে অনির্বাণের ঠোঁট জোড়া সচল হয়ে উঠতেই খেলা করতে শুরু করে প্রেয়সীর ওষ্ঠে। জিভের স্পর্শে আগুন জ্বালাতে শুরু দুটো দেহেই। অনির্বাণ রুমার ঠোঁট দুটো যতটা পারে পুড়ে নেয় নিজের মাঝে আর পাগলের মত চুষতে থাকে যেন আজই সব রস নিঙ্গড়ে নিবে প্রেয়সী অধর থেকে৷ রুমাও ধীরে ধীরে সাড়া দিতে থাকে সেই সাথে ভেতরের বাড়তে থাকা উত্তেজনার আভাস টা টের পায় ক্ষণিকের মাঝেই। এরপর হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবে না তাই এখনই থামার সঠিক সময় সেটা ভেবেই নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে অনির্বাণের বাহুবন্ধন থেকে। কিন্তু অনির্বাণ কি আর সহজে ছাড়ার পাত্র নাকি সে আরও চেপে ধরে রুমাকে নিজের সাথে ঠোঁটের চলমান কাজের সাথে হাতও তাদের কাজে নেমে পড়ে। নিজের বুকের কাছে অনির্বাণের হাতের উপস্থিতি টের পেতেই বাঁধা দিতে শুরু করে রুমা, দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরে প্রিয়মতের হাত যেন সেগুলো তার নরম বুকে স্পর্শ দিয়ে ওকে আরও চঞ্চল করতে না পারে। বাঁধা পেয়ে অনির্বাণ খেলার নিয়ম পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয়, আজ ধীরেসুস্থে আগানোর প্রয়াস করে। রুমাকে নিজের আগল থেকে ছেড়ে দেয়, মুক্ত করে দেয় চোষনের তীব্রতায় কাঁপতে থাকা ঠোঁট গুলোকে।
ঠোঁট জোড়া মুক্ত হতেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে রুমা, কপট রাগের ভঙ্গিমায় অনির্বাণের দিকে তাকায়,
এটা বুঝি একটা কিস তাই না!
একটাই তো দিলাম, গুনে দেখো নাই।
শয়তান একটা এমন করে কেউ চুষে? জ্বালা করছে এখনো।
হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁটে লেগে থাকা লালারস মুছে নেয়।
আরেকটা কিস করি দেখবে আর জ্বালা করবে না।
না আর দরকার নেই, এবার তো হলো এখন যাই।
ওহ সোনা এত তাড়া কিসের তোমার, আরেকটু বসো না।
রুমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে।
আরেকটা আবদার রাখবে? এটাই শেষ
আবার কি? তোমার আবদারের তো শেষ নেই। না না আর কোন আবদার আজ চলবে না।
প্লিজ সোনা আমার, আমি না তোমার জান তাহলে আমার একটা আবদার রাখবে না। তুমি আমাকে একদম ভালোবাসো না।
এই হলো তোমার সমস্যা কিছু হলেই ভালোবাসি না এটা মনে হয় তোমার। কি আবদার শুনি তারপর বলবো রাখবো কি রাখবো না।
নাহ আগে বলো তুমি আবদার টা রাখবে, প্লিজ জান আমার।
আচ্ছা, বলো এখন কি আবদার।
নিজের কোলের উপর বসে থাকা রুমার শরীরের আনাচে-কানাচে অনেকক্ষণ ধরেই হাত ছুঁইয়ে দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ এক দুবার দুধের কাছে আলতো করে হাতটা স্পর্শ করিয়ে দিয়েছে আকারে ইঙ্গিতে
তুমি রাগ করবে না তো সেটা আগে বলো।
কি এমন আবদার যে রাগ করবো? আচ্ছা করবো না এবার তো বলো।
হঠাৎ করেই রুমার দুধ দুটো আলতো করে চেপে ধরে,
একটাবার দেখাবে?
রুমার তৎক্ষনাৎ রাগ উঠে যায়, এক ঝটকায় অনির্বাণের হাত সরিয়ে দিয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
মানে কি? তোমার কিন্তু দিন দিন চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে৷ যেটুকু হয়েছে সেটাই অনেক, আর কিছু হবে না। এরপরও যেটা সেটা আগে দুজনে প্রতিষ্ঠিত হই বিয়ে করি তারপর।
আমি কি সেটা না করেছি নাকি? আমিও তোমাকে ভালোবাসি তোমাকেই বিয়ে করতে চাই বলেই তোমার কথা মতো পরীক্ষা দিতে বসেছি। আর তুমি আমার একটা ইচ্ছে রাখবে না? নাকি তুমি বিশ্বাস করে না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকেই বিয়ে করে সারাজীবন।
এখানে বিশ্বাসের প্রশ্ন না, তুমি ব্যাপারটা বুঝতে চাইছো না।
কি ব্যাপার থাকবে? সোনা আমি তো তোমাকেই ভালবাসি, আমি তো সবসময়ই তোমার কথা শুনে চলি। আজকে আমার একটা কথা রাখো না প্লিজ। এক বার দেখাবে শুধু আর কিচ্ছু না। তুমি একটা বার দেখতে দাও তারপর যা বলবে তাই শুনবো আমার দিব্যি।
অনির্বাণের মন গলানো কথায় রুমা নিজ মনের শক্ত অবস্থানে ঠিক থাকতে পারে না। দুবর্ল মন বারবার ওর মিষ্ট কথার দিকেই ছুটে চলে। প্রতিত্তোরে কি বলবে সেটা জানা নেই, কি করবে এখন তাহলে? সত্যিই তো বলেছে ও তো আমাকে ভালোবেসে আমার কথা মতো চলার চেষ্টা করে তবে কি আমারও ওর ইচ্ছে রাখা কি উচিত। একবার দেখতেই তো চেয়ে এর বেশি কিছু তো নয়, কি করবে সেটাই ঠিক করতে পারছে না সে। এসব ভাবার মাঝে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে
একটুখানি কিন্তু.....
অভিযান সঠিক দিকেই এগোচ্ছে দেখে খুশিতে মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে অনির্বাণের।
তুমি যেমনটা বলবে তেমনটাই হবে।
মুখ ফসকে বলে তো দিলো কিন্তু এখন কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না রুমা। চুমো খাওয়ার উত্তেজনাটা খানিক আগে মিইয়ে গেলেও সেটা আবার অনুভব করতে পারছে। নিষিদ্ধ কিছু করার সময় হয়তো উত্তেজনাটা একটু বেশিই কাজ করে। ভেতরে কেমন একটা অদ্ভুত অস্থিরতা আর উন্মাদনা কাজ করছে যেটার প্রভাব চোখে মুখে আর শরীরের হাবভাবে ফুটে উঠেছে। কাঁপা কাঁপা হাতটা এগিয়ে যায় কামিজের শেষ প্রান্তে, অনির্বাণের উচ্ছ্বসিত মুখখানা শরীরের কাঁপন ধরাচ্ছে। কাতরতার ভঙ্গিমায় অনির্বাণের আকুতি রুমার হৃদয় গলিয়ে চলেছে আপন মহিমায়। একটু একটু করে গুটিয়ে যাচ্ছে পড়নের কামিজটা পেটের উপরে উঠতেই সুগভীর নাভিটা উন্মুক্ত হয়ে যায় অনির্বাণের লোভতুর চোখগুলোর সামনে। ওমন নাভিকমলে যে কারও নাভিশ্বাস উঠা যে ভবিতব্য সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই ভবিতব্যের লোভের ফাদে পড়া অনির্বাণ হালকা করে জিভ বুলিয়ে নেয় নিজে শুকিয়ে আসা ঠোঁটে। কামিজ যত উপরের দিকে উঠছে রুমার হাত যেন ততই কম্পিত হয়ে চলেছে, বুকের কাছে এসে সেটাই ভূকম্পের মত মনে হচ্ছে। এতোদূর এসে সবটা আবার ভন্ডুল হয়ে যাবে নাতো সেই চিন্তায় অনির্বাণের মুখে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে হয়তো সেটারই উল্টো মানে ধরে রুমা অগ্রসর হয় নতুন অভিজ্ঞতার দিকে৷ কামিজটা বুক অতিক্রম করে গেছে এখন শুধু সাদা ব্রায়ের আগলেই আটকে আছে রুমার ভারী দুধ দুটো। ব্রায়ের কাপ দুটো উপরের দিকে টেনে নিতেই ঢেউ খেলে উঠে দুধদ্বয়ে। সাথে সাথে উন্মুক্ত হয়ে যায় রুমার বুকের সৌন্দর্য দুটো আর সেগুলোই লোলুপ দৃষ্টিতে ভক্ষন করে যাচ্ছে অনির্বাণ। ফর্সা দুধের মাঝখানে কালো রঙের বৃত্তের মাঝে হালকা বাদামী রঙের একটু এবড়োখেবড়ো বোটা দুটো অনির্বাণ কে পাগলের মত টানছে নিজের দিকে৷ রুমাকে কিছু বুঝার সময় না দিয়েই অনির্বাণ দুধের বোটা নিজের মুখে পুড়ে নেয়। নিজের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গে প্রিয়তমের ভিজে জিভের স্পর্শ পেতেই পুরো শরীর শিউরে উঠে রুমার। একটা শিরশিরানি সমস্ত গা জুড়ে খেলে যেতে থাকে, ধাক্কা টা সামলে যতক্ষণে অনির্বাণ কে বাঁধা দিতে উদ্ধত হলো ততোক্ষণে আগে থেকে কামোত্তেজনার প্রভাবে থাকা শরীর দুর্বল হতে শুরু করেছে। মস্তিষ্ক রুমাকে বাঁধা দিতে বললেও শরীরের কামনার বান ডাকতে শুরু করেছে। অনির্বাণের মুখে আটকে থাকা দুধে খানিকটা যন্ত্রণার সাথে অদ্ভুত রকমের এক অসীম সুখের ছোঁয়া লাগছে মনে, অন্যদিকে আরেক দুধে প্রেমিকের কড়া মর্দনে শরীরের কামনার আগুন ধিকধিক করে বেড়েই চলছে৷ রিপুর ফাদে পড়া রুমার অবচেতন মন আর নিজের মাঝে নেই, শরীরি সুখ টাকে আরও বেশি করে পেতে প্রিয়তমের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আলতো করে হাত বুলাতে থাকে। সুখ যন্ত্রণায় রুমা বারংবার হিসিয়ে উঠছে আর হালকা একটা সীৎকারে ঘরের দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে ভিন্ন একটা সুরের আবহ তৈরী হয়েছে।
অনির্বাণের মাথায় এখন পরবর্তী ধাপের জন্য ঘুটি সাজানো চলছে, নিজের একটা হাত আলতো করে পেটের কাছে বুলাতে থাকে৷ প্রতিবারই ওর ছোঁয়া তে রুমা থরথরিয়ে কেঁপে উঠছে আর নিজেকে অনির্বাণে দিকে এলিয়ে দিচ্ছে। নিচের দিকে এগোতে গিয়ে অনির্বাণের হাতটা আবছা ভাবেই রুমার যোনীবেদীর সাথে ঘসা লেগে যায়। আহহহ করে একটা আওয়াজ বেরিয়ে আসে রুমার মুখ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার মস্তিষ্কও আবার সজাগ হয়ে উঠে। না আর এগোনো ঠিক হবে না... নিজের দুটো হাতের একটাতে অনির্বাণের হাত আটকে দেয় অন্যহাতে নিজের লজ্জাস্থান আড়াল করার চেষ্টা করে।
গেটের কাছে একটা আওয়াজ হয় একটু জোরেশোরেই, মূহুর্তেই ঘরের ভেতরে কাম খেলায় ডুব দিতে যাওয়া প্রাণী দুটির চেহারার রঙ পাল্টে যায়। শরীরের অস্থিরতা কে পাশ কাটিয়ে এখন মনের অস্থিরতা জায়গা দখল নিয়েছে, ভীত হয়ে উঠা মন অজানা আশঙ্কায় আতকে উঠে। রুমা কোনরকমে নিজেকে অনির্বাণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে পড়নের জামা টা ঠিক করতে থাকে।
গতকালই ফেসবুক গ্রুপে জেনেছে আজ নতুন লেকচারার ক্লাস নিবে, তাই যে করেই হোক ক্লাস টা মিস করতে চায় না মাধুরী। কিন্তু আমরা যাহা চাই তাহাই কি সবসময় হয়?? স্কুটি টা স্টার্ট করতে গিয়ে দেখে সেটা স্টার্ট হচ্ছে না, হয়তো কোন প্রবলেম হয়েছে সেটা এখন দেখার টাইম নেই। অনেকদিন পর আজ বাসে করেই কলেজ যেতে হতে সেটা ভেবে মনে অন্যরকম একটা ফিলিংস আসছে, যার কারণে স্কুটি নষ্ট হবার কষ্ট টা আড়ালে পড়ে গেছে৷ বাসটা স্টপেজ ছেড়েই দিয়েছিলো কোন মতে দৌড়ে বাসে উঠে পড়ে মাধুরী। এই বাসে ওর কলেজের আরও অনেকেই আছে ওরা মাধুরী কে বাসে উঠতে দেখে একটু অবাক হয় আবার বান্ধবী কে পেয়ে একটু খুশিও হয়। কিন্তু আজ যেন সব সমস্যা এক সাথে এসে দাড়িয়েছে, প্রচন্ড জ্যাম বেঁধেছে রাস্তায় গাড়িটা যেমন ধুকে ধুকে এগোচ্ছে তাতে সময় মত পৌঁছানো টা আর হয়ে উঠবে না হয়তো।
কৌশিকের আজ কলেজের প্রথম ক্লাস ও ফিজিক্সের ক্লাস নেবার জন্য রুমে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়৷ লম্বাচওড়া দেহ হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট খুঁচা খুঁচা দাড়ি সেই সাথে কাঁধ অব্দি বাবরি চুল বলিষ্ঠ চেহারার একজন কে ক্লাসে ঢুকতে দেখেই অধিকাংশ মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে, এটা তাদের নতুন টিচার নাকি সিনেমার কোন নায়ক সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। লুতুপুতু ভাব করা মেয়ে গুলো তো পারে ওর কোলে গিয়ে উঠে পড়ে। কিন্তু যেই কৌশিকের গুরুগম্ভীর আওয়াজ টা সবার কান অব্দি পৌঁছেছে তৎক্ষণাৎ ক্লাসে শুনশান নীরবতা নেমে আসে। স্টুডেন্ট দের কাছ থেকে জেনে নিয়ে একটা চ্যাপ্টার থেকে ক্লাস শুরু করে, হোয়াইট বোর্ডে কালো মার্কারে বড় করে লিখে নেয় নিউটনীয় বল বিদ্যা।
মাধুরী রা যখন কলেজে এসে পৌঁছেছে ততোক্ষণে ক্লাস লেকচার মিনিট ত্রিশ অতিক্রম করে গেছে। একদল স্টুডেন্ট ক্লাসে ঢোকার অনুমতি চাইলে কৌশিক গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,
ক্লাস অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, এখন এসেও কোন লাভ হবে না। যেটুকু পড়িয়ে ফেলেছি সেটা না দেখে বাকিটা ক্যাচ করতে পারবে না। নেক্সট ক্লাসে সবাইকে ওয়েলকাম।
মাধুরী সবার পেছন দিকে ছিল, ও একবারই মুখটা দেখতে পেয়েছিল কৌশিকের। কেমন একটা চেনা চেনা লাগলো। হঠাৎ মনে পড়ে ঐ দিন ওনার সাথেই মাধুরীর ধাক্কা লেগেছিল। ক্লাসে ঢুকতে না দেয়ায় মাধুরীর মেজাজ স্যারের প্রতি গরম হয়ে যায়, রাগে গটগট করতে করতে মুক্তমঞ্চের দিকে চলে যায়৷ একটু লেট করেছে বলে ক্লাসে ঢুকতে দিলো না কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতে ক্লাসটা এ্যাটেণ্ড করতে দিলে। মাধুরী আর যাই করুক কোন ক্লাস কখনো মিস করতে চায় না কখনো।
বাকি স্টুডেন্টদের মাঝে একজন দেরি করে আসার কারণ জানাতেই কৌশিক সেটা বুঝতে পারে দুঃখ প্রকাশ করে আর জানিয়ে দেয় যারা ক্লাস করতে পারে নি তারা যেন অফ পিরিয়ডে ওর সাথে দেখা করে সম্পূর্ণ ক্লাস টা ওদের জন্য আরেকবার নিবে। মাধুরী আগেই চলে যাওয়ায় ক্লাসের ব্যাপারে আর জানতে পারে না।
কলেজ শেষে সবাই ক্যান্টিনে বসে আছে তবে আজ খাওয়া দাওয়ার চেয়ে মেয়েদের গ্রুপে নতুন লেকচারার কে নিয়েই আলোচনা বেশি। সবাই ওর ড্যাশিং লুক আর পার্সোনালিটি তে মজে আছে। ওর কথা বলার স্টাইল, হাঁটার স্টাইল, চোখের কি চাহনি, ক্লাস নেবার স্টাইল এসব নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। কয়েকটা মেয়ে তো প্রথম দেখাতেই ফিদা হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে আরও কারও সমস্যা না হলেও মাধুরীর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠেছে। ঐ লোকটার জন্য আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস মিস করে গেল, ইচ্ছে করছে সামনে পেলে গলা টিপে দিতে।