Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.04 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: ছাত্রী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প।
#22
১০।
চোখ মেলে ঐশী বুঝতেই পারল না সে কোথায়। তার চারদিকে পরিচিত গন্ধ। পরিচিত অদ্ভুত শব্দ। সে কি এখনো হোটেলের রুমে? এটা হোটেলের রুম নয়। এর সব কিছুই পরিচিত। হোস করে একটা শব্দ হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে শো-শোঁ আওয়াজ। আবার খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতা। আবার হোস করে শব্দ। ঐশী উঠে বসল। রুমে দুদিকের দেয়াল জুড়ে পর্দাঢাকা বিশাল কাঁচের জানালা। পর্দার রঙ হালকা সবুজ। ঘরের দেয়ালের রঙ ধবধবে সাদা, যেন কিছুক্ষণ আগে কেউ এসে চুনকাম করে গিয়েছে। মেঝেতে গাঢ় সবুজ রঙের শ্যাগ কাৰ্পেট। নতুন দূর্বাঘাসের মতো কোমল। পা রাখতে মায়া লাগে। ঘরে আসবাবপত্র তেমন কিছু নেই। এক পাশে ছোট্ট একটা লেখার টেবিল টেবিলের ওপর অদ্ভুত ডিজাইনের একটি টেবিলল্যাম্প। এত সুন্দর হয় মানুষের ঘর: ঐশী উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরাল। ঐশী বুঝতে পারলো সে নিজের রুমেই আছে। অনেকক্ষণ সময় লাগলো তাঁর এই সহজ বোধটা আসতে। কাল রাতে জানোয়ারগুলোর হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা নিজের রুমে এসে পেইন কিলার আর ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো সে। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ঐশীর, কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কাল রাতে না জানি কীরূপে সে বাসায় ফিরেছে! বাবা-মা কিছু টের পায় নি তো? যদি পেয়ে তাকে তাহলে এই মুখ সে দেখাবে কি করে!

ঐশী ভালো ঘুমুতে পারে নি। তিন চার বার ঘুম ভেঙেছে। বিশ্রী বিশ্রী সব স্বপ্ন দেখেছে। একটা স্বপ্ন ছিল ভয়াবহ। তার যেন বিয়ে হচ্ছে। সেজেগুজে বিয়ের আসরে সে বসে আছে, হঠাৎ ভবঘুরে পাগল ধরনের একটা ছেলে দৌড়ে ঢুকল। ছেলেটা সম্পূর্ণ ল্যাংটা। সে বলল,
-          খবরদার কেউ নড়বে না। বোম মেরে উড়িয়ে দেব। আমি এখন এই মেয়েকে আদর করবো।
চারদিকে কান্নাকাটি, হইচই। এর মধ্যে বোমাফাটা শুরু হয়েছে। ল্যাংটা পাগলটার হাত থেকে পালাতে ঐশী দৌড় শুরু করলো। দৌড়ে পালাতে গিয়ে দরজার কাছে হুমড়ি খেয়ে ঐশী পড়ে গেছে। কেউ এসে তাকে তুলল। সেই অদৃশ্য চেহারার মানুষটা বলল,
-          চল পালাই। লেট আস রান। রান বেবি রান।
তারা দুজনই দৌড়াচ্ছে। ঐশীর গাভর্তি ঝলমলে গয়না। গয়না থেকে ঝমঝম শব্দ আসছে। রাতের ভয়ঙ্কর স্বপ্ন সাধারণত দিনে হাস্যকর লাগে। এই স্বপ্নটা লাগছে না। ভোরবেলা দাঁত মাজতে মাজতে ঐশীর মনে হলো– স্বপ্নটার থেকে ভয়াবহ কয়েকটা দিন গেছে তার। কি করবে এখন সে! কিভাবে এই ভয়াবহ জাল থেকে বেরিয়ে আসবে। প্রথম ছিলো রাহাত, তারপর রাহাতের বন্ধু, তার পর ভার্সিটির বুড়ো চ্যান্সেলর, তারপর বুড়ো মাহিদুর, শেষমেশ ড্রাইভার, ম্যানেজার কেউ বাদ নেই তাকে ;., করার। 

ঐশী অনেকক্ষণ সময় নিয়ে দাঁত মাজল। আয়নায় নিজেকে দেখতে-দেখতে পতি ব্রাশ করার আলাদা আনন্দ। তবে আজ আয়নায় নিজেকে দেখতে ভালো লাগছে না। ঘুম না হওয়ায় চোখ লাল হয়ে আছে। চেহারাটাও কেমন শুকনা শুকনা লাগছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে ঐশী ইতস্তত করতে লাগল। সে কি আজকে শুটিং-য়ে যাবে? আজ শুটিঙয়ে গিয়ে কি লাভ হবে! মাথায় কিচ্ছু ঢুকবে না। তারচেয়ে আজ বিশ্রাম নেয়াই ভালো। শুটিং-য়ে যাওয়ামাত্র এই কোলাহলের প্রবল স্রোতের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। আজকে মিশতে ইচ্ছা করবে না। পৃথিবীতে বাস করতে হলে ইচ্ছে না থাকলেও অনেক কিছু করতে হয়।

গুলশানের ছোট্ট কিন্তু বেশ পশ একটি কফিশপে বসে আছে ঐশী। টিপটিপ বৃষ্টি আর ঠান্ডা হাওয়ার মাঝেও দরদর করে ঘামছে সে। শুকিয়ে আসা খড়খড়ে ঠোঁটটা জিহ্বা দিয়ে বার কয়েক ভিজিয়ে নিয়ে কফিশপের দরজার দিকে তাকাল। দৃষ্টি ফিরিয়ে অস্থির চোখে হাতে থাকা ঘড়িটির দিকে তাকাল ঐশী। বামহাতে থাকা ছোট্ট ডায়ালের ঘড়িটি জানান দিচ্ছে এখন শেষ বিকেল। কিছুক্ষণ পরই আসরের আজান পড়বে। ঐশীর অস্থিরতা বাড়তে লাগল। শুভর নাম্বারটা তৃতীয় বারের মতো ডায়াল করল সে। কল রিসিভ হলো না। দুই মিনিটের মাথায় কফিশপের স্বচ্ছ কাঁচের ওপাশে শুভকে দেখা গেল। গায়ে কালো চেইক শার্ট। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছে শার্টের অনেকটা। শুভ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই ঐশীর দিকে এগিয়ে এলো। কাছাকাছি এসে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
-          তোমাকে বড্ড বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।
ঐশী আর পারলো না  শুভর দুইহাত চেপে ধরে, ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে অসহায় স্বরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-          আমাকে বাঁচাও শুভ! আমি খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছি। তুমি ছাড়া কাউকেই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
-          আরে হয়েছেটা কি! এমন পাগলের মতো আচরণ করছ কেন!
 
পরের একঘণ্টা শুভ বিস্ময়ে ক্ষোভে রাগে ফেটে পড়লো। ঐশী নিজের ভয়াবহ দুর্দশার কথা শেয়ার করার সময় আবার যেনো সেই যন্ত্রণা অনুভব করছিলো আর শুভ অবাক বিস্ময়ে শুনছিলো এক ভয়াল গল্প। সব শুনে শুভ বললো,
-          তুমি এতকিছু সহ্য করলে কি ঐশী!
-          আমি নিজেও জানি না শুভ, কি করে পারলাম।
-          আমায় তুমি এখন কি করতে বলো?
-          আমাকে বাঁচাও শুভ। আমি জানিনা আমি কার কাছে যাবো, কোথায় যাবো। আমায় তুমি বাঁচাও। আমি সব কিছু করতে রাজি আছি।
-          তুমি ভালোই করেই বুঝতে পারছো তুমি কি সে ফেঁসে গেছ। তোমার ঐ শিক্ষক রাহাতের হাত থেকে আমি তোমার বাঁচাতে পারবো কিন্তু মাহিদুর রেজা সাগরের হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নেই। লোকটা অনেক প্রভাবশালী।
-          তাহলে কি করবো?
-          পুলিশ কিংবা ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবশালী কেউ মাহিদুর রেজার কিছু করতে পারবে না। লোকটার আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষমতা অনেক বেশি।
-          লোকটাকে খুন করে ফেলি ভাড়াতে খুনি দিয়ে?
-          আরে কি বললো পাগলের মতো! খুনের তদন্ত করতে গিয়ে ওর ড্রাইভার আর ম্যানেজার তোমার সাথে হোটেলে ঘটা ঘটনাটা বলবে তখন পুলিশের দুই যোগ দুই চার করতে সময় লাগবে না।
-          তাহলে?
-          এক মাত্র উপায় হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে যদি কোন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে লোকটাকে হুমকি দেয়া যায় তাহলে মাহিদুর রেজা সাগর তোমাকে মা, মা বলে ডেকে ক্ষমা চেয়ে যাবে আর ভুলেও ভবিষ্যতে কিছু করার সাহস পাবে না।
-          এমন কোন নেতা আছে পরিচিত তোমার।
-          তাতো আছেই। কিন্তু একজন নেতা কেনইবা আমাদের সাহায্য করবে।
-          টাকা চাইলে টাকা দিবো। যত চায়।
-          হা হা হা। তোমার ধারণা আছে এইসব নেতাদের কি পরিমাণ টাকা।
-          তাহলে?
-          আমি নিজেও জানিনা। আমি দেখি একজনের সাথে আলাপ করে। সে কি চায়। তারপর তোমাকে বলি।
-          আমি জানি সে কি চাইবে শুভ। আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।
-          দেখো ঐশী, সব কিছু তোমার বিবেচনায়। তুমি কি রাহাত, মাহিদুর রেজা এদের গ্যাং ধারা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হতে চাও। নাকি একবার কোন নেতার সাথে ফুর্তি করে সব ঝামেলা থেকে বের হয়ে আসতে চাও সেটা তোমার বিবেচনা।
-          আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যেকোনো কিছু করতে রাজি
-          আচ্ছা আমি তোমাকে জানাবো।
 
~ বিঃদ্রঃ পরের পর্বে এই গল্প সমাপ্ত করা হবে।
[+] 2 users Like Orbachin's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: ছাত্রী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প। - by Orbachin - 18-11-2022, 01:28 AM



Users browsing this thread: