17-11-2022, 09:11 PM
(This post was last modified: 17-11-2022, 09:33 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
"শোনো মাসি .. বাবা এই কয়েকটা মুদিখানার জিনিস পাঠিয়ে দিলো .. সেগুলো দিতেই এসেছিলাম। এখন আবার দক্ষিণপাড়ায় যেতে হবে আমাকে .. রিহার্সাল আছে। "শ্যামা" হচ্ছে গো .. আর শ্যামার চরিত্রে কে অভিনয় করছে জানো? আমি গো আমি। তোমাদের দেখতে আসতে হবে কিন্তু .. আমি অবশ্য নেমন্তন্ন করে যাবো পরে। এখন আমার নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই গো, এই নাও ধরো ব্যাগটা। এবার যাই আমি?" এই বলে টগর চলে যেতে গেলে তার হাত ধরে সুজাতা বললো "ওরে ওরে শোন শোন .. যাবি তো, নিশ্চয়ই যাবি। কিন্তু রিহার্সালে দু'দণ্ড দেরি করে গেলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি? তুই শ্যামা করছিস? এই জানিস, আমিও না তোর বয়সে 'শ্যামা' গীতিনাট্যে অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু কার চরিত্রে বলতো? বজ্রসেনের . হাহাহাহা।"
- "সত্যি? কিন্তু তুমি তো শ্যামার চরিত্রে অভিনয় করতে পারতে গো। তোমাকে তো একদম ওইরকমই দেখতে।"
- "না রে .. শ্যামা করার জন্য এমন একজন ছিলো, যাকে কেউ রিপ্লেস করতেই পারতো না। যেরকম তার রূপ, সেরকম তার গুণ, যেরকম তার নাচের ভঙ্গিমা, সেরকম তার গানের গলা .. সব মিলিয়ে সর্বগুণসম্পন্না বলা যায়। কে জানিস? ওই যে দাঁড়িয়ে আছে তোর গোগোল দাদা, ওর মা .. অরুন্ধতী। সম্পর্কে সে আমার দিদি হতো, যদিও আমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড়ো ছিল সে। যাক সে কথা, বলছিলাম এখন তো মাসের শেষ, হাত একদম খালি। তোর বাবা পয়সাকড়ির কথা কিছু বলেনি?"
- "আরে ওসব তুমি ছাড়ো না মাসি। পয়সা-টয়সা এখন দিতে হবে না। তোমার যখন খুশি তখন দিলেই হবে।"
- "সে তো আমি মাস পড়লেই দিয়ে দেবো। কিন্তু তোর বাবা সত্যিই কিছু বলেনি টাকার কথা?"
- "বাবার কথা ছাড়ো তো .. তুমি তো জানোই, এই ব্যাপারে বাবা কত বড় চশমখোর। তবে আমি আসার সময় পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি 'আমি তো ওখানে গিয়ে মানে তোমাদের এখানে এসে টাকা-পয়সার কথা কিছু বলবই না, তুমি যদি পরে কিছু বলো, তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন।' ব্যাস আর কি .. এই পৃথিবীতে স্বপন সাধুখাঁ যদি সব থেকে বেশি কাউকে ভয় পায়, তাহলে সে হলো আমি .. একদম বলতি বন্ধ হয়ে গেছে বুড়োর।"
- "ইশ্ , তার মানে তুই এখানে আসার আগে তোর বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেছিস? সত্যি রে টগর তোকে যত দেখি ততই অবাক হই। কিন্তু সব থেকে অবাক হলাম আজ যখন তুই তোর গোগোল দাদার ব্যাপারে ওইরকম ভাবে কথা বলছিলিস ওই ইন্সপেক্টরের সঙ্গে।"
সুজাতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে গোগোল বললো "টগর রানী, ফরফরানি .. তোর মুখে তো খুব বুলি ফুটেছে আজকাল, ইন্সপেক্টরকে চমকে দিলি একেবারে। যাই হোক, কত টাকা হয়েছে বল .. আমি দিয়ে দিচ্ছি আমার কাছে আছে।"
"এই বাবু, তুই টাকা দিবি মানে? তোর কাছে টাকা কোথা থেকে এলো?" বিস্ময় প্রকাশ করে বললো সুজাতা।
"ওহো .. সব সময় এই ফাটা-রেকর্ড বাজিয়েই চলেছে। এটা কোথা থেকে হলো, এটা কোথা থেকে পেলি, এটা করলি কেনো, এটা কি করে এলো, এটা তো আমি জানিনা .. আরে বাবা একটু আগে যিনি এসেছিলেন, ওই গুণধর ইন্সপেক্টর .. তিনি তো নিজের মুখে বললেন, শোনোনি আমার কর্মক্ষেত্রের কথা? আমি যখন কারোর কাছে একটা কাজ করি, তার মানে সেখান থেকে অবশ্যই টাকা পাই। মাগনাতে কাজ করি না নিশ্চয়ই! তাই বললাম আমার কাছে টাকা আছে, এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে বুঝতে পারছি না? শোনো, তোমাদের মতো ওইসব পাতি চাকরি আমি করি না, যে চাকরিতে মাসের শেষে টাকা ফুরিয়ে যায়। আমার পকেটে সবসময় ইনটাক্ট টাকা থাকে, বুঝলে কিছু?" গড়গড় করে কথাগুলো বলে চললো গোগোল।
"তোর কর্মক্ষেত্রের কথা ইন্সপেক্টরের মুখে তো আমি অবশ্যই শুনেছি, কিন্তু তার সঙ্গে এটাও শুনলাম 'দুষ্কর্মের আস্তানা' এই শব্দটা। এই কথার মানে কি? তুই কার কাছে কি কাজ করিস? বলতেই হবে এখন তোকে।" সুজাতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে জানতে পারলো হসপিটালে একটা এমার্জেন্সি হয়েছে, এই মুহূর্তে তাকে আসতে হবে। টগরের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আদর করে, আর গোগোলের দিকে কটমট করে তাকিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে গেলো সুজাতা।
- "তারপর টগর রানী ফরফরানি .. বল কত টাকা হয়েছে? আমি দিয়ে দিচ্ছি এখনই।"
"এই শোনো আমাকে 'ফরফরানি' বলবে না বলে দিলাম। তাহলে ধরে এমন পিটবো না! মনে আছে তো .. মনে আছে? সেদিনকে এই কথা বলেছিলে বলে কিরকম গুমগুম করে কিল মেরেছিলাম তোমার পিঠে। তোমাকে রেলপাড়ে সবাই যমের মতো ভয় পেতে পারে, কিন্তু আমি পাই না .. বুঝেছো? হিহিহিহি .." গোগোলের কথার উত্তরে প্রথমে কপট রাগ দেখিয়ে পরে খিলখিল করে হেসে উঠে দৌড়ে পালাতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো টগর - "ও মা হিয়া দিদি .. তুমি! কখন এলে?"
- "কেনো? এসে খুব অসুবিধা করে দিলাম বুঝি তোদের দুজনের?"
- "ও মা , ছিঃ ছিঃ তা কেন হবে? তুমি কখন এলে দেখতেই পাইনি, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম।"
- "ভাগ্যিস এলাম, না হলে তো এই দৃশ্য দেখতেই পেতাম না। মা ওদিকে কাজে বেরিয়ে গেছে আর ছেলে বাইরে থেকে মেয়ে নিয়ে এসে বাড়িতে বেলেল্লাপনা করছে।"
"হিয়া .. এইসব কি বলছিস তুই? তোর মুখে এই ভাষা যে আমাকে শুনতে হবে, তা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি কোনোদিন। ছিঃ ছিঃ লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। এখানে কিছুক্ষণ আগে একটা খুব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তাছাড়া টগর একটা কাজে এসেছিলো, আর মামণি তো এতক্ষণ ছিলো, এইমাত্র বেরিয়েছে।" কিছুটা উচ্চকণ্ঠেই কথাগুলো বললো গোগোল।
"থাক, ছেড়ে দাও গোগোল দাদা। হিয়া দিদি এসেছে এতদিন পর, তোমরা ঝগড়া করো না, সব মিটমাট করে নাও .. আমি বরং যাই। আর আমি কিচ্ছু মনে করিনি হিয়া দিদির কথায়।" এই বলে চোখের কোণায় জল এসে যাওয়া টগর চলে যেতে উদ্যত হতেই, তাকে থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো "নাটক করার কোনো দরকার নেই। এখান থেকে এখন এই মুহূর্তে যদি কেউ চলে যায় তাহলে আমি যাবো, তুই নয়। একটু আগে তোদের দু'জনের খুনসুটি দু'জনের আলোচনা, আমি সবকিছু শুনেছি। তোরা দু'জনে এখন কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছিস সেটা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি। তাছাড়া সেদিনকে মানে নবমীর রাতে তো তোর গোগোল দাদা বলেই দিলো তুই ওর 'বিশেষ একজন' .. তাহলে এখন শুধু শুধু ন্যাকামি করছিস কেন? আমি এসেছিলাম মামণির কাছে, তোর গোগোল দাদার কাছে তো আসিনি। এরপর এখানে আসার আগে মামণিকে ফোন করে তবেই আসবো।"
"হিয়া দিদি, হিয়া দিদি .. প্লিজ শোনা, চলে যেও না। একটা সম্পূর্ণ পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে এই সব কিছু ঘটছে, এটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। এই ব্যাপারটাকে শুধু শুধু টেনে নিয়ে গিয়ে সেই বস্তাপচা সিরিয়াল বা বোকা বোকা রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর মতো করে ফেলো না। তুমি তো শিক্ষিতা বুদ্ধিমতী মেয়ে গো .. আমার মতো অশিক্ষিত বোকা মানুষ তো তুমি নও। ওই মানুষটার মুখের কথাটাই ধ্রুব সত্যি হিসেবে ধরে নিলে? যাকে এত ভালোবাসো তার মনের ভেতরের আকুতিগুলো শুনলে না? তোমার সঙ্গে ওই মানুষটিকে দেখে ঈর্ষাতে জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিলো গো আমার গোগোল দাদা। রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে তোমাকেও হয়তো ঈর্ষার আগুনে কিছুটা পোড়াতে চেয়েছিল, তাই হয়তো মুখ ফসকে আমার সম্বন্ধে ওইরকম কিছু বলে ফেলেছে। কিন্তু, বিশ্বাস করো হিয়া দিদি গোগোল দাদার মনে আমার জন্য স্নেহ হয়তো কিঞ্চিত থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু ভালোবাসা? হাহাহাহা .. একটুও নেই। আমার মতো পাগলিকে কে ভালবাসবে গো? তাছাড়া প্রেম-ভালবাসা ওইসব আমি নিজেই কিছু বুঝিনা। তবে, ছোট মুখে একটা বড় কথা বলছি, প্লিজ কিছু মনে করো না। সেদিন তোমার সঙ্গের ওই মানুষটি, মানে আমাদের থানার নতুন ইন্সপেক্টর। সে একটু আগে এখানে এসে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে গেছে গোগোল দাদাকে আর তোমাদের মামণিকে। তোমার ব্যাপারেও সাবধান করতে এসেছিলো। হ্যাঁ গো, আমি সত্যি বলছি। তবে আমি আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিয়েছি, আর সেই কথা শুনে ল্যাজ গুটিয়ে বাবু পালিয়েছে। হিহিহিহি .." বাড়ির বাইরে চলে আসা হিয়ার আর হাতদুটো ধরে দুটি চোখ ততক্ষণে জলে ভরে গিয়ে টলটল করতে থাকলেও মুখে যতটা সম্ভব হাসি এনে মৃদুস্বরে কথাগুলো বললো টগর যাতে গোগোল শুনতে না পায়।
"সন্দীপবাবু এখানে এসেছিলেন? কি বলেছেন ওদেরকে উনি? আর আমার ব্যাপারে সাবধান করতে এসেছিলো মানে? কাকে সাবধান করতে এসেছিলো?" বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চাইলো হিয়া।
- "সত্যি বাবা , তোমার মতো বকুরাম আমি আর দেখিনি জীবনে। যদিও স্পষ্ট করে বলেনি, তবে আকার ইঙ্গিতে এটাই প্রকাশ করেছিলো যাতে গোগোল দাদা আর তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে .. এবার বুঝলে কিছু? তুমি প্লিজ ভেতরে যাও, গোগোল দাদা একদম ভালো নেই গো .. সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে, খাওয়া দাওয়াও করে না। তুমি আবার ভেবো না এইসব আমি নিজে এসে দেখেছি। এগুলো আমি সব মামণি .. সরি সরি আমার তো মামণি নয়, আমার তো মাসি। মানে আমি সুজাতা মাসির কাছ থেকে সব শুনেছি, তাই তোমাকে বললাম। এবার আমার সত্যি সত্যি দেরি হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ পাড়ায় আমার একটা রিহার্সাল আছে। পরে এসে তোমাকে নেমন্তন্ন করে যাবো, আসতে হবে কিন্তু আমার নাচ দেখতে।"
"এই শোন .. তুই এতো কিছু করিস ওদের জন্য আমি মামণির কাছ থেকে অনেক কিছুই শুনেছি তোর ব্যাপারে। তার ওপর আজ আবার সন্দীপ বাবুর সঙ্গে ঝগড়া করেছিস তোর গোগোল দাদাকে খারাপ কথা বলেছে বলে। তোর গোগোল দাদা তোকে ভালবাসে না এই কথা তো বললি, কিন্তু তুই? তুই ভালবাসিস না ওকে? বল .. সত্যি করে বল।" উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞাসা করলো হিয়া।
ভালোবাসা! সে তো জন্মেছে মনে, বসত করেও মনে। ভালোবাসার অলিখিত কাব্য কথা বলে যায় চরণে। আমার সকাল, বিকেল, এমনকি রাত্রিও সঁপে দিয়েছি তাকে। তবে শুধুই অন্তরে, এর কোনো বাহ্যিক প্রকাশ নেই। সব আলসেমি ফেলে তাকে দেখতে ছুটে যাই রেলপাড়ের পশ্চিমের ধুধু প্রান্তরের সেই উচু দিগন্ত থেকে আরো উঁচুতে। একাকী হয়েও একা নই তো আমি .. সে থাকে তো আমার অনুভবে সর্বদা। প্রহর গুনি আবার কবে দেখা হবে তার সঙ্গে এই ভেবে। বৃষ্টি তো আমার কাছে শুধু বৃষ্টি নয়, সে যে ভালোবাসার জলছবি। তাকে ভালোবেসে আমার মতো একজন মূর্খেরও কবিত্ব প্রকাশ পায়। এখানে সেখানে যেখানেই যাই খুঁজি তার ছায়া সারাক্ষণ। না পেয়ে হতাশ হই, কিছুটা দুঃখী, মনে মনে আলাপন। তাকে নিয়ে বিলাসী মনে স্বপ্নের জাল বোনা,শত কাজের মাঝেও হঠাৎ করেই হয়ে যাই আনমনা। কখনো আবার অভিমান মেঘের সমান ভালোবাসার রঙে সৃষ্টি হয়, আবার কখনো নিমেষে উধাও হয়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। স্মৃতির গভীরে হারাই যদি, হেসে উঠি ক্ষণে ক্ষণে। উচ্ছল আমি চঞ্চল আমি ভালোবাসো আছে তাই, তাকে নিয়েই গল্প বাকিটা জীবন, সে ছাড়া যে আর কিছুই নেই। কি সব ছাইপাঁশ বলে ফেললাম। আসলে অশিক্ষিত তো তাই ঠিকঠাক গুছিয়ে কথা বলতে পারি না .. আমি চললাম গো হিয়া দিদি।" হিয়াকে বাড়ির দরজার সামনে একা রেখে ঝড়ের গতিতে সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে গেলো টগর, তার ঝাপসা চোখে ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে লাগলো মেয়েটা .. তারপর ধীরে ধীরে দক্ষিণপাড়ার অভিমুখে যাওয়ার রাস্তায় মিলিয়ে গেলো সে।
সেই দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছুটা ইতস্তত করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো হিয়া। তাকে কথা বলতে হবে গোগোলের সঙ্গে .. অনেক বোঝাপড়া আছে।
মিউনিসিপাল হসপিটালে নিজের কেবিনে মাথা নিচু করে বসেছিলো সুজাতা। অনেকরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু .. তাকে জানতেই হবে গোগোলের রোজগারের উৎস। মাঝের বেশ কয়েকটা বছর বেশ শান্তিতেই কেটেছিল তার। কিন্তু বর্তমানে শুধু পরিবারের নয় কর্মক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন যিনি সুপারিনটেনডেন্ট হয়ে এসেছেন তিনি ডক্টর দাশগুপ্তর থেকে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। শুধু ভিন্ন বললে ভুল হবে, দু'জন একেবারে দুই মেরুর মানুষ বলা চলে। কোরাপশন যেখানে প্রাক্তন সুপারের দরজায় কড়া নাড়তে ভয় পেতো, সেখানে যিনি বর্তমান সুপার তিনি পুরোপুরি দুর্নীতিতে ডুবে আছেন। কানাঘুষো শোনা যায় তার স্ত্রী কাকলি দেবী অত্যন্ত চরিত্রহীনা এক নারী, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের সব থেকে ভয়ঙ্কর এবং প্রভাবশালী দুই দুর্বৃত্ত কামরাজ এবং মানিক সামন্তর অবৈধ সম্পর্ক আছে।
আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে তার কেবিনে এইরকম এক দুপুরেই ঘটে গিয়েছিল সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ডক্টর দাশগুপ্ত যাকে 'প্রতাপ' বলেই সম্মোধন করতো সুজাতা। তিনিই তো এখানে, এই ঘরে একবার মাত্র সুজাতার নগ্নরূপ দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তারপর অনেক সাওয়াল অনেক বাগবিতণ্ডার পর সুজাতা ধীরে ধীরে নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করেছিলো ডক্টর দাশগুপ্তর সামনে। তার কাঁধে একটা হাত রেখে বলেছিলো "আমিও শরীরের মধ্যে ভালোবাসা খুঁজেছি প্রতাপ .. কিছুতেই পাইনি। সে যে কি কষ্ট! শরীরে একটা জৈবিক সুখ অবশ্যই বিদ্যমান, কিন্তু ভালোবাসা না পাওয়ার উপলব্ধির বেদনা যে আরো অনেক, অনেক বেশি তীব্র। তোমার স্ত্রী পক্ষাঘাতে পঙ্গু, তুমি তার কাছ থেকে শারীরিক সুখ পাওনা। তাই তুমি আমার শরীরের মধ্যে ভালোবাসা খুঁজতে চাইছো, তাই তো? তবে নাও .. দেখো খুঁজে পাও কি না! ভালো করে দেখো আমাকে প্রতাপ .. মনে কোনো দ্বিধা রেখো না, যদি এই শরীরটাকে পেলে তোমার ভেতরের সমস্ত মোহ মিটে যায় .." কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আগের মতো এখন একটুও সংকোচ বোধ হচ্ছিলো না সুজাতার। বরং ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে স্বগতক্তি করে সে বলে উঠলো ইশ্ প্রতাপটা কি ভীতু ছিলো .. বলা নেই কওয়া নেই ধপ করে আমাকে প্রণাম করে ফেললো!" তারপরেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সুজাতার ভেতর থেকে।
"কি রে, একা একা বসে হেসে চলেছিস আর আর কি বিড়বিড় করছিস? তবে আমি কিন্তু এখানে কোনো হাসির কথা বলতে বা আলোচনা করতে আসিনি। আমার ডিউটি ওভার, এখন বাড়ি যাবো। তার আগে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা তোকে জানাতে এসেছি, মন দিয়ে শোন কথাগুলো।" চমক ভেঙে সুজাতা তাকিয়ে দেখল তার সামনে কাবেরী দেবী দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছে।
- "বল .. কি বলতে চাস .."
- "দ্যাখ, আমি বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা রহস্য করে কথা বলতে পছন্দ করি না। সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালোবাসি। তোকে বেশ কয়েক বছর আগে বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই .. হিয়া আর আমার দাদার বাল্যবন্ধু শশাঙ্ক বাবুর ছেলে সন্দীপের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছোটবেলা থেকেই। সেই সন্দীপ বর্তমানে গঙ্গানগর পুলিশ স্টেশনে সাব-ইন্সপেক্টর পোস্টে জয়েন করেছে। ভালো ছেলে শিক্ষিত ছেলে, এখন বয়স অল্প। এরপরে আরো প্রমোশন পাবে, প্রচুর উন্নতি হবে ওর। ওদের বাড়ি থেকে তো কোনো অসুবিধাই নেই, ওদের বাবা-মা-ছেলে তিনজনেরই হিয়াকে ভীষণ পছন্দ। কিন্তু আমার মেয়েটা যে এতটা অবাধ্য এবং অসভ্য হয়ে গেছে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আসলে এগুলো হয়েছে বাজে সঙ্গে মিশে। আজ সকালে ওকে যখন পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে গেলাম .. মানে সন্দীপের সঙ্গে ওর বিয়ের ব্যাপারটা। তখন আমাকে কি বলে জানিস? ও নাকি একজন এডাল্ট মেয়ে, ওর অনুমতি না নিয়ে নাকি বিয়ের কথা বলে আমি ভীষণ অন্যায় করেছি। তারপর তেজ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। ফোন করছি ফোন ধরছেনা .. আমি তো চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর একটু আগে ফোন করে জানলাম হিয়া বাড়িতে ফিরেছে, এতক্ষণ কোথায় ছিলো জিজ্ঞাসা করাতে কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো। যাইহোক, আমি তোর কাছে এসেছি তার প্রধান কারণ হলো .. সন্দীপ আমাকে কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে ও নাকি লোকমুখে শুনতে পেয়েছে গোগোল আর হিয়ার মেলামেশার কথা। ওদের দু'জনের এই মেলামেশাটা সন্দীপ একদম মেনে নিতে পারছে না এটা স্পষ্ট করে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। দ্যাখ সুজাতা, তোকে একটা কথা বলি .. আমি তোর সহকর্মী এবং অনেক পুরনো বন্ধু সে কথা ঠিক। কিন্তু স্ট্যাটাস বলে তো একটা ব্যাপার আছে। ধরে নে সন্দীপের সঙ্গে ওর বিয়ের কোনো সম্বন্ধ যদি নাও হতো, তাহলেও তো গোগোলের মতো একটা ছেলের সঙ্গে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিতাম না। কতো কথাই তো শুনতে পাই ওর সম্পর্কে আজকাল .. সন্দীপও বলছিলো অনেক কিছুই। তাই বলি কি .. ছেলেকে সবসময় মাথায় না তুলে, একটু শাসন কর। এবার যদি সন্দীপ বেঁকে বসে, তাহলে কি বিপদ হবে বুঝতে পারছিস তো?"
- "মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ মিসেস কাবেরী দত্ত। আমার স্ট্যাটাস, আমার অর্থনৈতিক অবস্থা, আমার বংশ পরিচয় .. এই সবকিছু নিয়ে তুই যা খুশি বলতে পারিস .. আমি কিচ্ছু মনে করবো না। কিন্তু খবরদার, আমার গোগোল সম্পর্কে আর একটাও বাজে শব্দ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। কত বড় বংশের ছেলে ও তুই জানিস? দু'দিন হলো এখানে এসেছে একটা ছেলে, তার মুখ থেকে তুই কিছু কথা শুনে সেটা যাচাই না করে এত বড় মন্তব্য করলি কি করে? তুই কি গোগোলকে নতুন দেখছিস? তুই জানিস না ও কি করতে পারে আর কি করতে পারে না? কে কি ধারণা করে আছে ওর সম্পর্কে আমি জানিনা। আমি বিশ্বাস করি আমার ছেলে এমন কোনো অনৈতিক কাজ করতে পারে না যাতে মানুষের ক্ষতি হয়। তুই তোর মেয়ের সঙ্গে কার বিয়ে দিবি সেই সম্পর্কে আমার কিচ্ছু বলার নেই, এটা তোদের পারিবারিক ব্যাপার। কিন্তু একটা কথা আমি অবশ্যই বলবো হিয়া আজ যেটা করেছে একদম ঠিক করেছে। তুই তোর মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিস সেই ছোটবেলায় অথচ তাকে জানাচ্ছিস এখন .. তার বিয়ের কয়েকমাস আগে? নাবালিকা অবস্থায় না হোক, ওর যখন আঠারো বছর বয়স হলো, তখনও তো জানাতে পারতিস। এত বড়ো ইনসেন্সিবল কাজ তুই করলি কি করে? আর তোর হবু জামাই সন্দীপ? ও তো ভীষণ মিথ্যাবাদী ছেলে। ও এত কিছু তোকে বললো আর এটা বলেনি যে ও আজ সকালে আমাদের বাড়িতে গিয়ে গোগোলের কথা তো ছেড়েই দিলাম, আমাকে পর্যন্ত চূড়ান্ত অপমান করে এসেছে। তারপর বস্তির লোকেদের ধমকানিতে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হয় তুই রেলপাড়ের সমস্ত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারিস। তোর কথা যা শোনার শুনে নিয়েছি, যা বোঝার বুঝে নিয়েছি, এবার যা করার আমি করবো। এবার তুই আয়, আমাকে রাউন্ডে বেরোতে হবে।"
কথাগুলো শেষ করেই নিজের ছোট্ট কেবিনটা থেকে গটগট করে বেরিয়ে গেলো সুজাতা। সেই দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন কাবেরী দেবী।
- "সত্যি? কিন্তু তুমি তো শ্যামার চরিত্রে অভিনয় করতে পারতে গো। তোমাকে তো একদম ওইরকমই দেখতে।"
- "না রে .. শ্যামা করার জন্য এমন একজন ছিলো, যাকে কেউ রিপ্লেস করতেই পারতো না। যেরকম তার রূপ, সেরকম তার গুণ, যেরকম তার নাচের ভঙ্গিমা, সেরকম তার গানের গলা .. সব মিলিয়ে সর্বগুণসম্পন্না বলা যায়। কে জানিস? ওই যে দাঁড়িয়ে আছে তোর গোগোল দাদা, ওর মা .. অরুন্ধতী। সম্পর্কে সে আমার দিদি হতো, যদিও আমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড়ো ছিল সে। যাক সে কথা, বলছিলাম এখন তো মাসের শেষ, হাত একদম খালি। তোর বাবা পয়সাকড়ির কথা কিছু বলেনি?"
- "আরে ওসব তুমি ছাড়ো না মাসি। পয়সা-টয়সা এখন দিতে হবে না। তোমার যখন খুশি তখন দিলেই হবে।"
- "সে তো আমি মাস পড়লেই দিয়ে দেবো। কিন্তু তোর বাবা সত্যিই কিছু বলেনি টাকার কথা?"
- "বাবার কথা ছাড়ো তো .. তুমি তো জানোই, এই ব্যাপারে বাবা কত বড় চশমখোর। তবে আমি আসার সময় পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি 'আমি তো ওখানে গিয়ে মানে তোমাদের এখানে এসে টাকা-পয়সার কথা কিছু বলবই না, তুমি যদি পরে কিছু বলো, তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন।' ব্যাস আর কি .. এই পৃথিবীতে স্বপন সাধুখাঁ যদি সব থেকে বেশি কাউকে ভয় পায়, তাহলে সে হলো আমি .. একদম বলতি বন্ধ হয়ে গেছে বুড়োর।"
- "ইশ্ , তার মানে তুই এখানে আসার আগে তোর বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেছিস? সত্যি রে টগর তোকে যত দেখি ততই অবাক হই। কিন্তু সব থেকে অবাক হলাম আজ যখন তুই তোর গোগোল দাদার ব্যাপারে ওইরকম ভাবে কথা বলছিলিস ওই ইন্সপেক্টরের সঙ্গে।"
সুজাতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে গোগোল বললো "টগর রানী, ফরফরানি .. তোর মুখে তো খুব বুলি ফুটেছে আজকাল, ইন্সপেক্টরকে চমকে দিলি একেবারে। যাই হোক, কত টাকা হয়েছে বল .. আমি দিয়ে দিচ্ছি আমার কাছে আছে।"
"এই বাবু, তুই টাকা দিবি মানে? তোর কাছে টাকা কোথা থেকে এলো?" বিস্ময় প্রকাশ করে বললো সুজাতা।
"ওহো .. সব সময় এই ফাটা-রেকর্ড বাজিয়েই চলেছে। এটা কোথা থেকে হলো, এটা কোথা থেকে পেলি, এটা করলি কেনো, এটা কি করে এলো, এটা তো আমি জানিনা .. আরে বাবা একটু আগে যিনি এসেছিলেন, ওই গুণধর ইন্সপেক্টর .. তিনি তো নিজের মুখে বললেন, শোনোনি আমার কর্মক্ষেত্রের কথা? আমি যখন কারোর কাছে একটা কাজ করি, তার মানে সেখান থেকে অবশ্যই টাকা পাই। মাগনাতে কাজ করি না নিশ্চয়ই! তাই বললাম আমার কাছে টাকা আছে, এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে বুঝতে পারছি না? শোনো, তোমাদের মতো ওইসব পাতি চাকরি আমি করি না, যে চাকরিতে মাসের শেষে টাকা ফুরিয়ে যায়। আমার পকেটে সবসময় ইনটাক্ট টাকা থাকে, বুঝলে কিছু?" গড়গড় করে কথাগুলো বলে চললো গোগোল।
"তোর কর্মক্ষেত্রের কথা ইন্সপেক্টরের মুখে তো আমি অবশ্যই শুনেছি, কিন্তু তার সঙ্গে এটাও শুনলাম 'দুষ্কর্মের আস্তানা' এই শব্দটা। এই কথার মানে কি? তুই কার কাছে কি কাজ করিস? বলতেই হবে এখন তোকে।" সুজাতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে জানতে পারলো হসপিটালে একটা এমার্জেন্সি হয়েছে, এই মুহূর্তে তাকে আসতে হবে। টগরের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আদর করে, আর গোগোলের দিকে কটমট করে তাকিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে গেলো সুজাতা।
- "তারপর টগর রানী ফরফরানি .. বল কত টাকা হয়েছে? আমি দিয়ে দিচ্ছি এখনই।"
"এই শোনো আমাকে 'ফরফরানি' বলবে না বলে দিলাম। তাহলে ধরে এমন পিটবো না! মনে আছে তো .. মনে আছে? সেদিনকে এই কথা বলেছিলে বলে কিরকম গুমগুম করে কিল মেরেছিলাম তোমার পিঠে। তোমাকে রেলপাড়ে সবাই যমের মতো ভয় পেতে পারে, কিন্তু আমি পাই না .. বুঝেছো? হিহিহিহি .." গোগোলের কথার উত্তরে প্রথমে কপট রাগ দেখিয়ে পরে খিলখিল করে হেসে উঠে দৌড়ে পালাতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো টগর - "ও মা হিয়া দিদি .. তুমি! কখন এলে?"
- "কেনো? এসে খুব অসুবিধা করে দিলাম বুঝি তোদের দুজনের?"
- "ও মা , ছিঃ ছিঃ তা কেন হবে? তুমি কখন এলে দেখতেই পাইনি, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম।"
- "ভাগ্যিস এলাম, না হলে তো এই দৃশ্য দেখতেই পেতাম না। মা ওদিকে কাজে বেরিয়ে গেছে আর ছেলে বাইরে থেকে মেয়ে নিয়ে এসে বাড়িতে বেলেল্লাপনা করছে।"
"হিয়া .. এইসব কি বলছিস তুই? তোর মুখে এই ভাষা যে আমাকে শুনতে হবে, তা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি কোনোদিন। ছিঃ ছিঃ লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। এখানে কিছুক্ষণ আগে একটা খুব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তাছাড়া টগর একটা কাজে এসেছিলো, আর মামণি তো এতক্ষণ ছিলো, এইমাত্র বেরিয়েছে।" কিছুটা উচ্চকণ্ঠেই কথাগুলো বললো গোগোল।
"থাক, ছেড়ে দাও গোগোল দাদা। হিয়া দিদি এসেছে এতদিন পর, তোমরা ঝগড়া করো না, সব মিটমাট করে নাও .. আমি বরং যাই। আর আমি কিচ্ছু মনে করিনি হিয়া দিদির কথায়।" এই বলে চোখের কোণায় জল এসে যাওয়া টগর চলে যেতে উদ্যত হতেই, তাকে থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো "নাটক করার কোনো দরকার নেই। এখান থেকে এখন এই মুহূর্তে যদি কেউ চলে যায় তাহলে আমি যাবো, তুই নয়। একটু আগে তোদের দু'জনের খুনসুটি দু'জনের আলোচনা, আমি সবকিছু শুনেছি। তোরা দু'জনে এখন কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছিস সেটা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি। তাছাড়া সেদিনকে মানে নবমীর রাতে তো তোর গোগোল দাদা বলেই দিলো তুই ওর 'বিশেষ একজন' .. তাহলে এখন শুধু শুধু ন্যাকামি করছিস কেন? আমি এসেছিলাম মামণির কাছে, তোর গোগোল দাদার কাছে তো আসিনি। এরপর এখানে আসার আগে মামণিকে ফোন করে তবেই আসবো।"
"হিয়া দিদি, হিয়া দিদি .. প্লিজ শোনা, চলে যেও না। একটা সম্পূর্ণ পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে এই সব কিছু ঘটছে, এটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। এই ব্যাপারটাকে শুধু শুধু টেনে নিয়ে গিয়ে সেই বস্তাপচা সিরিয়াল বা বোকা বোকা রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর মতো করে ফেলো না। তুমি তো শিক্ষিতা বুদ্ধিমতী মেয়ে গো .. আমার মতো অশিক্ষিত বোকা মানুষ তো তুমি নও। ওই মানুষটার মুখের কথাটাই ধ্রুব সত্যি হিসেবে ধরে নিলে? যাকে এত ভালোবাসো তার মনের ভেতরের আকুতিগুলো শুনলে না? তোমার সঙ্গে ওই মানুষটিকে দেখে ঈর্ষাতে জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিলো গো আমার গোগোল দাদা। রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে তোমাকেও হয়তো ঈর্ষার আগুনে কিছুটা পোড়াতে চেয়েছিল, তাই হয়তো মুখ ফসকে আমার সম্বন্ধে ওইরকম কিছু বলে ফেলেছে। কিন্তু, বিশ্বাস করো হিয়া দিদি গোগোল দাদার মনে আমার জন্য স্নেহ হয়তো কিঞ্চিত থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু ভালোবাসা? হাহাহাহা .. একটুও নেই। আমার মতো পাগলিকে কে ভালবাসবে গো? তাছাড়া প্রেম-ভালবাসা ওইসব আমি নিজেই কিছু বুঝিনা। তবে, ছোট মুখে একটা বড় কথা বলছি, প্লিজ কিছু মনে করো না। সেদিন তোমার সঙ্গের ওই মানুষটি, মানে আমাদের থানার নতুন ইন্সপেক্টর। সে একটু আগে এখানে এসে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে গেছে গোগোল দাদাকে আর তোমাদের মামণিকে। তোমার ব্যাপারেও সাবধান করতে এসেছিলো। হ্যাঁ গো, আমি সত্যি বলছি। তবে আমি আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিয়েছি, আর সেই কথা শুনে ল্যাজ গুটিয়ে বাবু পালিয়েছে। হিহিহিহি .." বাড়ির বাইরে চলে আসা হিয়ার আর হাতদুটো ধরে দুটি চোখ ততক্ষণে জলে ভরে গিয়ে টলটল করতে থাকলেও মুখে যতটা সম্ভব হাসি এনে মৃদুস্বরে কথাগুলো বললো টগর যাতে গোগোল শুনতে না পায়।
"সন্দীপবাবু এখানে এসেছিলেন? কি বলেছেন ওদেরকে উনি? আর আমার ব্যাপারে সাবধান করতে এসেছিলো মানে? কাকে সাবধান করতে এসেছিলো?" বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চাইলো হিয়া।
- "সত্যি বাবা , তোমার মতো বকুরাম আমি আর দেখিনি জীবনে। যদিও স্পষ্ট করে বলেনি, তবে আকার ইঙ্গিতে এটাই প্রকাশ করেছিলো যাতে গোগোল দাদা আর তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে .. এবার বুঝলে কিছু? তুমি প্লিজ ভেতরে যাও, গোগোল দাদা একদম ভালো নেই গো .. সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে, খাওয়া দাওয়াও করে না। তুমি আবার ভেবো না এইসব আমি নিজে এসে দেখেছি। এগুলো আমি সব মামণি .. সরি সরি আমার তো মামণি নয়, আমার তো মাসি। মানে আমি সুজাতা মাসির কাছ থেকে সব শুনেছি, তাই তোমাকে বললাম। এবার আমার সত্যি সত্যি দেরি হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ পাড়ায় আমার একটা রিহার্সাল আছে। পরে এসে তোমাকে নেমন্তন্ন করে যাবো, আসতে হবে কিন্তু আমার নাচ দেখতে।"
"এই শোন .. তুই এতো কিছু করিস ওদের জন্য আমি মামণির কাছ থেকে অনেক কিছুই শুনেছি তোর ব্যাপারে। তার ওপর আজ আবার সন্দীপ বাবুর সঙ্গে ঝগড়া করেছিস তোর গোগোল দাদাকে খারাপ কথা বলেছে বলে। তোর গোগোল দাদা তোকে ভালবাসে না এই কথা তো বললি, কিন্তু তুই? তুই ভালবাসিস না ওকে? বল .. সত্যি করে বল।" উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞাসা করলো হিয়া।
ভালোবাসা! সে তো জন্মেছে মনে, বসত করেও মনে। ভালোবাসার অলিখিত কাব্য কথা বলে যায় চরণে। আমার সকাল, বিকেল, এমনকি রাত্রিও সঁপে দিয়েছি তাকে। তবে শুধুই অন্তরে, এর কোনো বাহ্যিক প্রকাশ নেই। সব আলসেমি ফেলে তাকে দেখতে ছুটে যাই রেলপাড়ের পশ্চিমের ধুধু প্রান্তরের সেই উচু দিগন্ত থেকে আরো উঁচুতে। একাকী হয়েও একা নই তো আমি .. সে থাকে তো আমার অনুভবে সর্বদা। প্রহর গুনি আবার কবে দেখা হবে তার সঙ্গে এই ভেবে। বৃষ্টি তো আমার কাছে শুধু বৃষ্টি নয়, সে যে ভালোবাসার জলছবি। তাকে ভালোবেসে আমার মতো একজন মূর্খেরও কবিত্ব প্রকাশ পায়। এখানে সেখানে যেখানেই যাই খুঁজি তার ছায়া সারাক্ষণ। না পেয়ে হতাশ হই, কিছুটা দুঃখী, মনে মনে আলাপন। তাকে নিয়ে বিলাসী মনে স্বপ্নের জাল বোনা,শত কাজের মাঝেও হঠাৎ করেই হয়ে যাই আনমনা। কখনো আবার অভিমান মেঘের সমান ভালোবাসার রঙে সৃষ্টি হয়, আবার কখনো নিমেষে উধাও হয়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। স্মৃতির গভীরে হারাই যদি, হেসে উঠি ক্ষণে ক্ষণে। উচ্ছল আমি চঞ্চল আমি ভালোবাসো আছে তাই, তাকে নিয়েই গল্প বাকিটা জীবন, সে ছাড়া যে আর কিছুই নেই। কি সব ছাইপাঁশ বলে ফেললাম। আসলে অশিক্ষিত তো তাই ঠিকঠাক গুছিয়ে কথা বলতে পারি না .. আমি চললাম গো হিয়া দিদি।" হিয়াকে বাড়ির দরজার সামনে একা রেখে ঝড়ের গতিতে সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে গেলো টগর, তার ঝাপসা চোখে ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে লাগলো মেয়েটা .. তারপর ধীরে ধীরে দক্ষিণপাড়ার অভিমুখে যাওয়ার রাস্তায় মিলিয়ে গেলো সে।
সেই দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছুটা ইতস্তত করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো হিয়া। তাকে কথা বলতে হবে গোগোলের সঙ্গে .. অনেক বোঝাপড়া আছে।
★★★★
মিউনিসিপাল হসপিটালে নিজের কেবিনে মাথা নিচু করে বসেছিলো সুজাতা। অনেকরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু .. তাকে জানতেই হবে গোগোলের রোজগারের উৎস। মাঝের বেশ কয়েকটা বছর বেশ শান্তিতেই কেটেছিল তার। কিন্তু বর্তমানে শুধু পরিবারের নয় কর্মক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন যিনি সুপারিনটেনডেন্ট হয়ে এসেছেন তিনি ডক্টর দাশগুপ্তর থেকে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। শুধু ভিন্ন বললে ভুল হবে, দু'জন একেবারে দুই মেরুর মানুষ বলা চলে। কোরাপশন যেখানে প্রাক্তন সুপারের দরজায় কড়া নাড়তে ভয় পেতো, সেখানে যিনি বর্তমান সুপার তিনি পুরোপুরি দুর্নীতিতে ডুবে আছেন। কানাঘুষো শোনা যায় তার স্ত্রী কাকলি দেবী অত্যন্ত চরিত্রহীনা এক নারী, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের সব থেকে ভয়ঙ্কর এবং প্রভাবশালী দুই দুর্বৃত্ত কামরাজ এবং মানিক সামন্তর অবৈধ সম্পর্ক আছে।
আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে তার কেবিনে এইরকম এক দুপুরেই ঘটে গিয়েছিল সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ডক্টর দাশগুপ্ত যাকে 'প্রতাপ' বলেই সম্মোধন করতো সুজাতা। তিনিই তো এখানে, এই ঘরে একবার মাত্র সুজাতার নগ্নরূপ দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তারপর অনেক সাওয়াল অনেক বাগবিতণ্ডার পর সুজাতা ধীরে ধীরে নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করেছিলো ডক্টর দাশগুপ্তর সামনে। তার কাঁধে একটা হাত রেখে বলেছিলো "আমিও শরীরের মধ্যে ভালোবাসা খুঁজেছি প্রতাপ .. কিছুতেই পাইনি। সে যে কি কষ্ট! শরীরে একটা জৈবিক সুখ অবশ্যই বিদ্যমান, কিন্তু ভালোবাসা না পাওয়ার উপলব্ধির বেদনা যে আরো অনেক, অনেক বেশি তীব্র। তোমার স্ত্রী পক্ষাঘাতে পঙ্গু, তুমি তার কাছ থেকে শারীরিক সুখ পাওনা। তাই তুমি আমার শরীরের মধ্যে ভালোবাসা খুঁজতে চাইছো, তাই তো? তবে নাও .. দেখো খুঁজে পাও কি না! ভালো করে দেখো আমাকে প্রতাপ .. মনে কোনো দ্বিধা রেখো না, যদি এই শরীরটাকে পেলে তোমার ভেতরের সমস্ত মোহ মিটে যায় .." কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আগের মতো এখন একটুও সংকোচ বোধ হচ্ছিলো না সুজাতার। বরং ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে স্বগতক্তি করে সে বলে উঠলো ইশ্ প্রতাপটা কি ভীতু ছিলো .. বলা নেই কওয়া নেই ধপ করে আমাকে প্রণাম করে ফেললো!" তারপরেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সুজাতার ভেতর থেকে।
"কি রে, একা একা বসে হেসে চলেছিস আর আর কি বিড়বিড় করছিস? তবে আমি কিন্তু এখানে কোনো হাসির কথা বলতে বা আলোচনা করতে আসিনি। আমার ডিউটি ওভার, এখন বাড়ি যাবো। তার আগে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা তোকে জানাতে এসেছি, মন দিয়ে শোন কথাগুলো।" চমক ভেঙে সুজাতা তাকিয়ে দেখল তার সামনে কাবেরী দেবী দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছে।
- "বল .. কি বলতে চাস .."
- "দ্যাখ, আমি বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা রহস্য করে কথা বলতে পছন্দ করি না। সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালোবাসি। তোকে বেশ কয়েক বছর আগে বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই .. হিয়া আর আমার দাদার বাল্যবন্ধু শশাঙ্ক বাবুর ছেলে সন্দীপের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ছোটবেলা থেকেই। সেই সন্দীপ বর্তমানে গঙ্গানগর পুলিশ স্টেশনে সাব-ইন্সপেক্টর পোস্টে জয়েন করেছে। ভালো ছেলে শিক্ষিত ছেলে, এখন বয়স অল্প। এরপরে আরো প্রমোশন পাবে, প্রচুর উন্নতি হবে ওর। ওদের বাড়ি থেকে তো কোনো অসুবিধাই নেই, ওদের বাবা-মা-ছেলে তিনজনেরই হিয়াকে ভীষণ পছন্দ। কিন্তু আমার মেয়েটা যে এতটা অবাধ্য এবং অসভ্য হয়ে গেছে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আসলে এগুলো হয়েছে বাজে সঙ্গে মিশে। আজ সকালে ওকে যখন পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে গেলাম .. মানে সন্দীপের সঙ্গে ওর বিয়ের ব্যাপারটা। তখন আমাকে কি বলে জানিস? ও নাকি একজন এডাল্ট মেয়ে, ওর অনুমতি না নিয়ে নাকি বিয়ের কথা বলে আমি ভীষণ অন্যায় করেছি। তারপর তেজ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। ফোন করছি ফোন ধরছেনা .. আমি তো চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর একটু আগে ফোন করে জানলাম হিয়া বাড়িতে ফিরেছে, এতক্ষণ কোথায় ছিলো জিজ্ঞাসা করাতে কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো। যাইহোক, আমি তোর কাছে এসেছি তার প্রধান কারণ হলো .. সন্দীপ আমাকে কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে ও নাকি লোকমুখে শুনতে পেয়েছে গোগোল আর হিয়ার মেলামেশার কথা। ওদের দু'জনের এই মেলামেশাটা সন্দীপ একদম মেনে নিতে পারছে না এটা স্পষ্ট করে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। দ্যাখ সুজাতা, তোকে একটা কথা বলি .. আমি তোর সহকর্মী এবং অনেক পুরনো বন্ধু সে কথা ঠিক। কিন্তু স্ট্যাটাস বলে তো একটা ব্যাপার আছে। ধরে নে সন্দীপের সঙ্গে ওর বিয়ের কোনো সম্বন্ধ যদি নাও হতো, তাহলেও তো গোগোলের মতো একটা ছেলের সঙ্গে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিতাম না। কতো কথাই তো শুনতে পাই ওর সম্পর্কে আজকাল .. সন্দীপও বলছিলো অনেক কিছুই। তাই বলি কি .. ছেলেকে সবসময় মাথায় না তুলে, একটু শাসন কর। এবার যদি সন্দীপ বেঁকে বসে, তাহলে কি বিপদ হবে বুঝতে পারছিস তো?"
- "মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ মিসেস কাবেরী দত্ত। আমার স্ট্যাটাস, আমার অর্থনৈতিক অবস্থা, আমার বংশ পরিচয় .. এই সবকিছু নিয়ে তুই যা খুশি বলতে পারিস .. আমি কিচ্ছু মনে করবো না। কিন্তু খবরদার, আমার গোগোল সম্পর্কে আর একটাও বাজে শব্দ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। কত বড় বংশের ছেলে ও তুই জানিস? দু'দিন হলো এখানে এসেছে একটা ছেলে, তার মুখ থেকে তুই কিছু কথা শুনে সেটা যাচাই না করে এত বড় মন্তব্য করলি কি করে? তুই কি গোগোলকে নতুন দেখছিস? তুই জানিস না ও কি করতে পারে আর কি করতে পারে না? কে কি ধারণা করে আছে ওর সম্পর্কে আমি জানিনা। আমি বিশ্বাস করি আমার ছেলে এমন কোনো অনৈতিক কাজ করতে পারে না যাতে মানুষের ক্ষতি হয়। তুই তোর মেয়ের সঙ্গে কার বিয়ে দিবি সেই সম্পর্কে আমার কিচ্ছু বলার নেই, এটা তোদের পারিবারিক ব্যাপার। কিন্তু একটা কথা আমি অবশ্যই বলবো হিয়া আজ যেটা করেছে একদম ঠিক করেছে। তুই তোর মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিস সেই ছোটবেলায় অথচ তাকে জানাচ্ছিস এখন .. তার বিয়ের কয়েকমাস আগে? নাবালিকা অবস্থায় না হোক, ওর যখন আঠারো বছর বয়স হলো, তখনও তো জানাতে পারতিস। এত বড়ো ইনসেন্সিবল কাজ তুই করলি কি করে? আর তোর হবু জামাই সন্দীপ? ও তো ভীষণ মিথ্যাবাদী ছেলে। ও এত কিছু তোকে বললো আর এটা বলেনি যে ও আজ সকালে আমাদের বাড়িতে গিয়ে গোগোলের কথা তো ছেড়েই দিলাম, আমাকে পর্যন্ত চূড়ান্ত অপমান করে এসেছে। তারপর বস্তির লোকেদের ধমকানিতে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হয় তুই রেলপাড়ের সমস্ত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারিস। তোর কথা যা শোনার শুনে নিয়েছি, যা বোঝার বুঝে নিয়েছি, এবার যা করার আমি করবো। এবার তুই আয়, আমাকে রাউন্ডে বেরোতে হবে।"
কথাগুলো শেষ করেই নিজের ছোট্ট কেবিনটা থেকে গটগট করে বেরিয়ে গেলো সুজাতা। সেই দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন কাবেরী দেবী।
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন