Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20221113-112724033.jpg]


(৫)

হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো বর্ণালী দেবীর। ধড়ফড় করে উঠে বসলেন তিনি, জল তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। বিছানা থেকে উঠে জল খেয়ে বাথরুমে গেলেন, তারপর পাশের ঘরের পর্দা সরিয়ে উঁকি মেরে দেখলেন তার সন্তান অপূর্ব অকাতরে ঘুমোচ্ছে। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো ভোর চারটে বাজে। এটাই তো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ .. যখন সেই অলৌকিক এবং বীভৎস, অথচ তার ভবিষ্যৎ জীবনের রক্ষা কবজের মতো ঘটেছিল সেই ঘটনাটি।

সেই গোপন কুঠুরিতে দুর্বৃত্তদের দাম্ভিক পদ সঞ্চালন ঘনীভূত হয় প্রতিটা মুহূর্তে গিরগিটির রঙ মেখে। উত্তপ্ত বাতাসে উড়ে বেড়ায় ছাই, কালো ধোঁয়া। সমস্ত অন্ধকার জুড়ে হায়েনার চোখ জ্বলে। নারীমাংস লোভীরদের দীর্ঘ ছায়া জুড়ে অবসন্ন অন্ধকারের তীব্র আক্ষেপ। তাদের বিকৃত চেতনায় তীব্র কষাঘাত করে। তারপর হয়তো রাত শেষ হয়ে এলে হিংস্রতার জঘন্য মুখগুলো আলোকিত অন্ধকারের ভিতর সংগোপনে নিজেকে হারায়। জালনিবদ্ধ নারীটির উথাল মনে তখন বালিয়াড়ি ঝড়, বালিতে সাজানো মরীচিকা। আকাশ ভেঙে সাগরে মেশে, দুয়ারে আগত বিভীষিকা। মনজুড়ে ছিলো স্বপ্ন-মিছিল, বাঁকা পথ ধরে বাইপাস। জীবন আদর্শের মাথা নত করে স্থান পেয়েছিল ভাইরাস। ঠিক তখনই সে এলো মহা সমারোহে, দীপ্তি ছড়িয়ে প্রলয় তার। কাকে নিতে এলো অজানা তখন, হয়তো যার নামে আছে পরোয়ানার ভার। মৃত্যুর ডাক বদ্ধ কুঠুরিতে, ঠিকানায় নেই আপন-পর। ভেদাভেদে গড়া দূরত্ব আজ, সীমানা শুধুই নিজের ঘর। রাত শেষের ভোরের আকাশে হঠাৎ আগুন শিহরণ, বীভৎস ডঙ্কারে কাঁপে নিস্তব্ধতা। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কে যেন চলে যায় চুপি চুপি। মাটিতে রক্তের তাজা গন্ধ। আবিরে ছোঁয়েনি বসন্ত আকাশ, ভীত নিরাশারা ক্লান্ত, স্তব্ধ। খুশির মুখেরা মুখোশে ঢাকা, আজ দুঃখেরা সব মুক, জব্দ।

ভোররাতের দিকে তার নারী শরীরের সমস্ত রস শেষ বিন্দু পর্যন্ত শুষে নিংড়ে নিয়ে, তাকে উল্টেপাল্টে ইচ্ছে মতন ভোগ করে ওই অচেনা দুই দুর্বৃত্তের নিষ্ক্রমণ ঘটার পর যখন সে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় বিধর্মী ওসমান আর জ্যাকির মাঝখানে শুয়ে কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলো, ঠিক তখনই ঘটে গিয়েছিল সেই ভয়ঙ্কর প্রলয়। চাপা আর্তনাদের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে ওই ঘরের ভেতর মেঝেতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় জ্যাকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে, আশঙ্কায় চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারেনি সে। সে দেখতে পেয়েছিলো নেপালিটার চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, বুকের বাঁদিকে হৃদপিন্ডের ঠিক নিচে কোনো একটি ধারালো এবং ছুঁচোলো অস্ত্র দিয়ে বারংবার কোপানোর ফলে সেখানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে রক্ত নির্গত হতে হতে জমাট বেঁধে গিয়েছে আর তার সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে ভেতরের কয়েক টুকরো মাংসপিণ্ড। তলপেটের নিচটায় চোখ যেতেই অতিমাত্রায় শিউরে উঠেছিল সে। জ্যাকির সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তার মৃতদেহের বাঁ-পাশে পড়ে রয়েছে। পরবর্তীতে তার চোখ গিয়েছিল তারই পাশে খাটের উপরে দুই হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা ওসমানের মৃতদেহের দিকে। এমনিতেই কদাকার মুখের অধিকারী দুর্বৃত্তটার দুটো চোখ ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুবলে নেওয়ার ফলে তার সমগ্র মুখমণ্ডল আরো বীভৎসরূপ ধারণ করেছিলো। তলপেটে নাভির দুই দিকে ধারালো শলাকা দিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়া হয়েছিল, আর তলপেটের নিম্নভাগে জ্যাকির মতো তার বিশালাকার পুরুষাঙ্গ যেটি সেই দিন কিছুক্ষণ আগেও অবলীলায় তার যৌনাঙ্গের পুরো দখল নিয়েছিল, সেটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।

এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে সংজ্ঞাহীন হওয়ার আগে সে দেখতে পেয়েছিল সেই ঘরে ঘনিয়ে ওঠা আঁধারের বুক চিরে এক জমাট-বাঁধা ঘন অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সেই চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকার যখন মানুষের অবয়ব নিতে লাগলো, তখন তার দৃষ্টিগোচর হলো এক মূর্তির। ব্যাস তারপর আর তার কিছুই মনে নেই।

★★★★

প্রদীপ জানতো না, সে না কার গর্ভে জন্মেছিল। জানতো না .. কি তার পিতৃপরিচয়! সে তো এটাও জানতো না, যে সে কোনো ধর্ষিতার সন্তান নাকি কোনো অসতী নারীর! কোনো ধারণাই ছিল না কোন যৌনাঙ্গের ঘর্ষণে ক্রোমোজমের বীজ সে! জন্ম দিয়ে তাকে হয়তো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কোনো আস্তাকুঁড়ের পাশে। সভ্যতার উচ্ছিষ্ট হিসেবে সমাজ তাকে দেখেছে দিনের পর দিন। বাঁকা ঠোঁটে হাসির ধিক্কার দিয়েছে 'বেজন্মা' বলে। মাতৃদুগ্ধ আর মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত প্রদীপের কপালে সমাজ লিখে দিয়েছিল 'জারজ' উপাধি। তার জন্যে ছিলো না কোনো ধর্ম, কোনো মানবাধিকার। কোনো বিদ্যামন্দির তাকে গ্রহণ করেনি .. আসলে বোধহয় নাম-গোত্রহীনদের জন্য সমাজ স্বীকৃতি দেয় না এই সবকিছুতে। একেক সময় তার মনে হতো .. সে তো সেই ভ্রূণ, যে কেড়ে নিয়েছে তার সামাজিক স্বীকৃতি। মাঝে কন্ডম সেলে আটকে যদি থাকতো এই জীবন .. জীবনের মায়াজাল যদি না পেতো এই দেহ। সেটাই বোধহয় ভালো হতো। হয়তো এই ভাবেই কোনো ডাস্টবিনের পাশে, বা হয়তো কোনো উঁচু ফ্লাইওভারের ছায়াতলে, কিংবা হয়তো কোনো এক রেল লাইনের ধারে নেশার ঘোরে পড়ে থাকতে থাকতে থাকতে শেষ হয়ে যেতো তার জীবন।

প্রদীপ তার জন্মরহস্য না জানলেও, তার সমগ্র শৈশবকাল থেকে শুরু করে কৈশোরের অন্তিম সময় পর্যন্ত কোনো একজন শকুনের দৃষ্টি ছিলো তার প্রতি। সেই ব্যক্তি জানতো এই ছেলেটি তারই লাম্পট্যের ফল .. তার একমাত্র জারজ সন্তান। একজন লম্পট, দুশ্চরিত্র, সুবিধাবাদী, ঘাতক এবং সর্বোপরি একজন জনপ্রতিনিধি যখন তার সন্তানের খোঁজ পায়, তখন সেই ব্যক্তি তার সন্তানকে জনসমক্ষে স্বীকৃতি দিতে পারেনা সেটা হয়তো ঠিক, কিন্তু তার রক্তের ঋণশোধ করাতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। তাই যৌবনে পা দিতেই আস্তাকুঁড়ের নরক থেকে প্রদীপকে নিজের সাম্রাজ্যে উঠিয়ে নিয়ে আসে মানিক সামন্ত। এবং পরবর্তীতে তার যাবতীয় অসামাজিক এবং নিষিদ্ধ কার্যকলাপের দোসর হয়ে ওঠে প্রদীপ। আসলে রক্ত কথা বলে। হঠাৎ করেই সেই প্রদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর প্রায় সাতদিন অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলো। যে ট্রাকটি প্রদীপকে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছিল, তার হদিস যেহেতু এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তাই মৃত্যুর কারণ অর্থাৎ এটি হত্যা না দুর্ঘটনা সেই সম্পর্কে পুলিশ-বিভাগ এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি, তবে তদন্ত চলছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দাবি তুলে উচ্চ নেতৃত্তের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও সেই অর্থে কোনো ফল না পেয়ে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো হয়ে গিয়েছিল মানিক সামন্ত। "বুড়োদের দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না .. সবকটা অপদার্থ .. এবার নতুনদের দায়িত্ব দেওয়ার সময় এসেছে।" এলাকার বিধায়কের এইরূপ ইচ্ছা প্রকাশে এই কেসের তদন্তভার অভিজ্ঞ মিস্টার গোস্বামীর বদলে দেওয়া হলো গঙ্গানগর পুলিশ-স্টেশনে সবে জয়েন করা এসআই সন্দীপ সেনগুপ্তকে।

★★★★

- "হায় ভগবান, এত বড় হয়ে গেলো, তাও এখনো খাওয়া শিখলো না ছেলেটা। পাগলেও নিজের ভালো বোঝে, তুই আর কবে বুঝবি? আমি তাই ভাবি - যে ছেলে উচ্ছের তরকারি, উচ্ছে ভাজা .. এগুলো মুখে তুলতো না কোনোদিন, সে ইদানিং পরিপাটি করে ওসব খেয়ে নিচ্ছে কি করে! তারমানে আমার মর্নিং শিফ্ট থাকলে, দুপুরে যেদিন আমি বাড়ি থাকি না, তুই সেদিন আজ যা করলি, তাই করিস তো? উচ্ছে দিয়ে তরকারি হলে বাটি থেকে সেটা পাতে না ঢেলে জানলা দিয়ে ফেলে দিস, তাই না? আজ তোকে হাতে-নাতে ধরেছি বলে জানতে পারলাম। ওরে শুধু মাছ, মাংস আর ডিম খেলেই হয় না .. আমাদের শরীরের জন্য ডাল, বিভিন্ন রকমের শাক-সব্জি .. এগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

- "ওইসব তুমি খাও মামণি .. ওগুলো বয়স্কদের খাদ্য। আমাদের মতো ইয়াং জেনারেশন ওইসব ঘাস-পাতা খায় না।"

- "আমি বয়স্ক? এই, আমার কতই বা বয়স হয়েছে রে?  সাঁইত্রিশ আটত্রিশ হবে .. এখনো আমার বিয়ের সম্বন্ধ আসে, জানিস?"

- "আচ্ছা, তাই? আর কতদিন ওই একই জায়গায় তোমার বয়স দাঁড়িয়ে থাকবে শুনি? আপনার বয়স বহুকাল আগেই চল্লিশ পার হইয়া গিয়াছে মা জননী। আর যারা এখনো তোমাকে প্রপোজ করে বা বিয়ের সম্বন্ধ আনে তোমার জন্য, তাদের নির্ঘাত চোখে ন্যাবা হয়েছে।"

- "কিইইইই? এত বড় কথা? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। দেখি কে বাঁচায় আজ তোকে আমার হাত থেকে।"

দু'জনের এইরূপ কথোপকথনের মাঝেই নিজের হাত উঁচিয়ে গোগোলের পেছনে তাড়া করলো সুজাতা। ঘরের দরজা খোলাই ছিলো, সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ির সামনের সান বাঁধানো জায়গাটায় গোল গোল করে ঘুরতে লাগলো গোগোল আর তার পেছনে দৌড়াতে লাগলো সুজাতা। এইরকম ঘটনা ওদের জীবনে প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী। রেলপাড়ের বস্তির বাসিন্দারা মা-ছেলের মেঘ ও রৌদ্রের আস্তরণে ঢাকা এই টক-ঝাল-মিষ্টিতে ভরা খুনসুটি বেশ উপভোগ করে। আবার মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এগিয়ে এসে দু-একটা ফোড়ন কেটে সুজাতার পক্ষপাতিত্ব করে, যতক্ষণ না গোগোল তার মামণির কাছ থেকে গোটা কয়েক চপেটাঘাত হজম করে শেষে রণেভঙ্গ দেয়।

"বাহ্ বেশ বেশ, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলছিস? আজ তোর দুষ্কর্মের আস্তানা, sorry sorry slip of the tongue হয়ে গেছে। আমি বলতে চাইছি তোর কর্মক্ষেত্র, মানে রেললাইনের ওপারের ওই পরিত্যক্ত টাউন হলটায় যাওয়া হয়নি এখনো?" হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ানো একজন পুলিশের উর্দিধারী যুবকের এইরূপ উক্তিতে গোগোল আর সুজাতা দু'জনেই থমকে দাঁড়ালো। তারপর গোগোলের দিকে তাকিয়ে সুজাতা ইশারায় জানতে চাইলো 'কে এই ব্যক্তি? গোগোলের পূর্ব পরিচিত কি না ..'

"আমি দিয়ে দিচ্ছি আমার পরিচয় মাসিমা নাকি কাকিমা নাকি আন্টি .. কি বলে ডাকি বলুন তো আপনাকে? উঁহু এগুলোর কোনটাই চলবে না .. you're looking so young .. আপনাকে ম্যাডাম বলে ডাকি, কেমন? anyways, আমি সন্দীপ .. সন্দীপ সেনগুপ্ত .. গঙ্গানগর পুলিশ স্টেশনে Sub inspector পোস্টে জয়েন করেছি। তবে এছাড়াও কিন্তু আমার আরেকটা পরিচয় আছে। মানে যার সঙ্গে আপনি এতক্ষণ ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছিলেন, সে আমার বাল্যবন্ধু। তবে 'বন্ধু' শব্দটা এখন আর সেই অর্থে ব্যবহার করা যায় কিনা জানিনা, সহপাঠী বলতে পারেন। আমরা একসঙ্গে গুরুকুল বিদ্যামন্দিরে সম্ভবত ক্লাস ফাইভ  পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর ও মানে অনির্বাণ একটা ব্লান্ডার করে ফেললো .. I mean কি সব ড্রাগ নিজের সঙ্গে carry করতে গিয়ে ধরা পড়ে কলেজ থেকে rusticated হয়ে গেলো। তারপর আর কি .. আমি আমার পড়াশোনা কমপ্লিট করলাম, জীবনে success পেলাম, সবই আপনাদের আশীর্বাদে। হেহেহে .." গা জ্বলানি একটা হাসি হেসে একদমে কথাগুলো বললো সন্দীপ।

"আপনি আমাকে কাকিমা, মাসিমা, ম্যাডাম বা নাম ধরে .. যা খুশি সম্বোধন করতে পারেন, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনাকে এর আগে কোনোদিন দেখিনি তাই চিনতে পারিনি প্রথমে। তবে আপনার সম্বন্ধে শুনেছি অনেক কিছুই। শেষের কথাগুলো কিন্তু আপনি অর্ধসত্য বললেন! আপনার মতো একজন সম্মানীয় পুলিশ অফিসারের কাছে এটা বোধহয় কাম্য নয়। আপনার সহপাঠী অনির্বাণের ব্যাগে ড্রাগের প্যাকেট পাওয়া গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা ও নিজে সঙ্গে করে আনেনি। অন্য কেউ একজন ঢুকিয়ে দিয়েছিলো ওর ব্যাগে এবং যে এই কাজটা করেছিলো সে এই ব্যাপারটা পরে কলেজের কোনো এক টিফিন পিরিয়ডে তার কাছে স্বীকার করেছিলো। কি, আমি ঠিক বলছি তো? আসলে আপনি ঠিকই বলেছেন অফিসার, বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ থাকলে গোগোল সম্পর্কে 'বন্ধু' শব্দটা এখন আর ব্যবহার করা যায় না বা উচিৎ নয়। কারণ বন্ধুত্বের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতার কোনো স্থান নেই। যাগ্গে এসব কথা বাদ দিন, আপনার এখানে পদধূলি দেওয়ার কারণটা যদি একটু বলেন, তাহলে খুব ভালো হয়, কারণ আমাকে আবার ডিউটিতে বেরোতে হবে এখনই।" শান্ত অথচ দৃঢ় কন্ঠে সন্দীপের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো সুজাতা।

"ব্রাভো ব্রাভো .. ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই তাহলে spokesperson রেখে দিয়েছিস অনির্বাণ! নবমীর রাতে দেখলাম এই এলাকার কয়েকজন তোর হয়ে কথা বলছিলো, আবার আজ দেখছি তোর সব কথা এই মহিলাই বলে দিচ্ছে। ঠিক আছে, এগুলো তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাই আমার কিছু বলার নেই। শুধু একটা suggestion অবশ্যই দেবো .. সেদিন তোর সঙ্গে যে মেয়েটাকে দেখলাম, মানে তুই যার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলিস, তোর 'স্পেশাল ফ্রেন্ড' বলে পরিচয় করিয়ে দিলি যাকে। ওকে বা ওদের মতো substandard লোকজনকে নিয়েই খুশি থাক না ভাই। বামন হয়ে চাঁদ ধরতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।" প্রথমে কিছুটা ব্যঙ্গ করে তারপর শেষের কথাগুলো কতটা হুমকির সুরে বললো সন্দীপ।

"অফিসার .. আপনি কিন্তু এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকক্ষণ ধরে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন। আপনি আমার মামণির সম্পর্কে এইভাবে কি করে কথা বলতে পারেন? আপনি রেলপাড়ের যে সমস্ত লোকজনকে সাব স্ট্যান্ডার্ড বলছেন, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোনো ধারণা আছে আপনার?" গোগোলের এই কথায় সায় দিয়ে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ওদের কথোপকথন শুনতে থাকা ওদের প্রতিবেশী রেলপাড়ের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ বাবু বলে উঠলেন "গোগোল আমাদের রেলপাড়ের বস্তির গর্ব আর সুজাতা আমাদের সব সময়ের সুখ দুঃখের সঙ্গী। ওদের দুজনের সম্পর্কে এই ধরনের কথাবার্তা আমরা কেউ সহ্য করবো না। অফিসিয়ালি আপনার যদি কিছু কাজ থাকে এখানে, তাহলে সেটা করে এখনই চলে যান। না হলে কিন্তু .." পঙ্কজ বাবুর এই উক্তির পরেই সন্দীপ লক্ষ্য করলো তার পেছনে গোটা কয়েক লোক এসে জমা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়লেও, তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে গলাটা যতটা সম্ভব গম্ভীর করে সন্দীপ বললো "না হলে কিন্তু .. কি? ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে আপনারা? একজন অন-ডিউটি পুলিশ অফিসারকে হেনস্থা করার কি ফল হতে পারে সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনাদের? আর তোকে বলছি শোন অনির্বাণ .. এরই মধ্যে অনেক ইনফরমেশন জোগাড় করেছি তোর সম্পর্কে, ভবিষ্যতে আরও করবো .. সাবধানে থাকিস। একটা কথা ভালো করে মনের ভেতর ঢুকিয়ে নে - তোদের মতো এইসব গুন্ডা লাফাঙ্গাদের বাপ এসে গেছে গঙ্গানগরে। তাই বাপের এলাকায় থাকতে হলে ছেলে ছেলের মত থাকবি।"

"অফিসার .. আপনাদের যত গুন্ডামি যত মাস্তানি সব এই উর্দির আড়ালে থেকে। কোনোদিন এই ইউনিফর্মটা খুলে রেলপাড়ে আসবেন। কোনটা বাপের এলাকা আর কোনটা ছেলের এলাকা .. ফিতে দিয়ে মেপে দেখিয়ে দেবো।" ততোধিক গুরুগম্ভীর গলায় হুঙ্কার দিয়ে উঠলো গোগোল।

গোগোলের এই উক্তিতে যেন আগুনে ঘি পড়লো .. মুখটা বিকৃত করে তার দিকে সন্দীপ এগিয়ে আসতেই, হঠাৎ করে তার সামনে এসে দাঁড়ালো স্বপন সাধুখাঁ'র মেয়ে টগর। সন্দীপকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে সে বলে উঠলো "একদম বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করবেন না স্যার, এর ফল কিন্তু ভয়ঙ্কর হবে। বামন হয়ে চাঁদ ধরার কথায় এবার আপনার এখানে আসার আসল কারণটা বুঝতে পারলাম। যাকে জোর করে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছেন, সেই বন্ধন যাতে শিথিল হয়ে না পড়ে সেই প্রচেষ্টাতেই আপনার এখানে আগমন হয়েছে, তাই না? কিন্তু কি জানেন তো .. পরস্পরের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা বোধহয় বিধাতার পক্ষেও সম্ভব নয়। যাই হোক, এর বেশি আমি আর একটা কথাও বলবো না এই ব্যাপারে। একটু আগে আপনি বলছিলেন না সাকসেসের কথা। আচ্ছা, জীবনের সাফল্য মানে আপনি জানেন? যদি কেউ ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হয়ে নিজের খাবার নিজেই বেড়ে খেতে পারে, সেটাই সাফল্য। যদি কেউ পনেরো বছর বয়সে গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারে, তাহলে সেটাই সাফল্য। যদি কেউ সতেরো বছর বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করতে পারে, সেটাই সাফল্য। যদি কেউ তেইশ বছর বয়সে কোনো সন্ত্রাস ছাড়াই শুধুমাত্র নিজের কর্মগুণে এলাকার বেতাজ বাদশা হয়ে উঠতে পারে, তাহলে সেটাই তার জীবনের সাফল্য। আর আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, আপনার  সহপাঠী গুরুকুল বিদ্যামন্দির থেকে বেরিয়ে আসার পর মুখ্যু হয়ে বসে ছিলো না, রেলপাড়ের সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেছে। গোগোল দা গঙ্গানগর কলেজ থেকে ফিজিওলজি অনার্স নিয়ে ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছিল। এবার আপনি আসতে পারেন।"

"এই অপমান আমি জীবনেও ভুলবো না। ওদিকের ব্যবস্থাটা আগে করে নিই, তারপর তোদের সব কটাকে যতদিন ডেসট্রয় না করে দিতে পারছি, আমার শান্তি নেই।" স্বগতক্তি রূপে বিড়বিড় করতে করতে রেলপাড়ের বস্তি ত্যাগ করলো সন্দীপ।
[+] 11 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 17-11-2022, 09:07 PM



Users browsing this thread: DrStrange, 27 Guest(s)