17-11-2022, 09:47 AM
ময়ূর পুচ্ছে কাক
আমাদের পাড়ায় কালুর নন ভেজ পাকোড়ার ব্যবসা। বছর চারেক আগে একটা টিনের চালার দোকানে কড়াই, স্টোভ নিয়ে ব্যবসার শুরু। আজ তার নিজের দোতলা বাড়ির এক তলায় একটা অংশে টেবিল চেয়ার পাতা ছোট্ট সুন্দর দোকান। ডেইলি সেল প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার। না আমি কোন উদ্যোগ পতির গল্প বলতে বসিনি। বলছি আমাদের আধুনিক বাঙালী সমাজের মানসিকতা আর অন্ধ অহমিকার কথা। কালুর সঙ্গে প্রেম স্বপ্নার। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবার আপত্তি পাকোরা ওলার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। স্বপ্নার বিয়ে হলো কালুর তিনভাগের একভাগের রোজকার করা KFC এর সুট টাই শোভিত কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
হায়রে এই আমাদের দেশ! বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে সাউথ সিটি তে ডেসার্ট মারছি, fb তে পিক দিচ্ছি, সবটাই বিপণনের গেরোয় পড়া হাফ আতেল বাঙালী। কিন্তু চন্দননগরের জলভরা কোনোদিন জাতে উঠতে পারলো না। এরা নিজেরা নিজেদের উৎকর্ষতাকে নিজেরাই বিশ্বাস করে না, খালি ভাবে সাত সমুদ্র তেরো নদী না ছুঁয়ে এলে সর্টিফায়েড নয়, কি ডাক্তার, কি জামাই, কি ওষুধ, কি খাবার!
আসলে বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙছে বিদেশী বেনিয়ারা।
বড় বড় রেস্তোরাঁ এবং হোটেলের খাদ্যতালিকায় সমস্ত খাবারের নাম ইংরেজি কিংবা অন্য কোন বিদেশী ভাষায় লেখা থাকে দেখেছি।দেখা যাক কিছু উদাহরণ-
'রোসেটো আল্জফার্নো'
এটা বস্তুত ভাতে লাল শাক মেখে পরিবেশন করা হয়।
দাম- ৩৭৫ থেকে ৪০০ টাকা প্লেট । বাড়িতে আপনাকে দিলে আপনি কি খাবেন না নাক সিটকবেন! অথচ এসি রেস্তোরায় সোনা মুখ করে খেয়ে আসবেন!
'নাচোজ উইথ সালসা'
খাস্তা নিমকি কাঁচা টমেটোর চাটনির সাথে পরিবেশিত
দাম- ২০০ টাকা ।খাস্তা আর কাঁচা টমেটোর চাটনি শুনলে কেই বা আর ২০০ টাকা দেবে। তা ছাড়া কাঁচা টমেটোর চাটনি সহযোগে খাস্তা খাচ্ছি বলাটাও বেশ লজ্জাজনক!
'সিনোমিনে সুফলে'
সুজির হালুয়া দাম - ১৭৫ টাকা! বাড়িতে মা ঠাকুমার হাতে এই টাকায় ২৫ জনের হয়ে যাবে।
"রাইস সুপ উইথ লেমন গ্রাস" এর নামে ভাতের মাড় ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং কুল স্মার্ট ছেলেগুলো বুক ফুলিয়ে বলে, "I am having rice soup and NACHOS WITH SALSA..!!!" কে আর বলতে পছন্দ করবে খাস্তার সংগে ভাতের মাড় খাচ্ছি রে! হাসিও পায় আবার দুঃখও হয়।
একটা ডিশের নাম, 'ইন্ডিলাচা'
আমাদের যে পরোটার ভেতরে সবজী ভরে মা হাতে ধরিয়ে দিত ছেলেবেলায়, এ সেই জিনিষ! দাম- ২০০ টাকা ।
"ছাতু" বললে লোকে গেঁয়ো ভাবতে পারে এবং হীন দৃষ্টিতে দেখবে হয়ত। কিন্তু ঠেলা ওয়ালার ঘটিতে তৈরি ১০টাকার ছাতুর সরবত যখন আমরা রেস্তোরায় বসে ১৫০ টাকা দিয়ে খাই "গ্রাম জুস উইথ পিপার" আহা ..!! কি স্ট্যান্ডার্ডের খাবার!
কুকারে সেদ্ধ করা ৫ টাকার ভুট্টা, "সুইট কর্ণ" বলে বেমালুম ৬০ টাকায় বিক্রি করছে আর লোকে কিনে খাচ্ছেও !
জাপানিজ রাইস ওয়াইন ওটা একটু সুগন্ধি সহযোগে পরিবেশিত গোদা বাংলায় যাকে বলে হাঁড়িয়া।
চিলড রাইস উইথ গ্রিলড ব্রিঞ্জাল 225 টাকা+ GST. আসলে পান্তা ভাত আর বেগুন পোড়া।
আসলে আমরা অতি আধুনিকরা খাবার নয় খাবারের মোড়কে টাকা চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি। আর এটাই প্রমাণ করে, আমাদের মতন বুদ্ধি ধারী ও আঁতেলরা যতদিন এই ধরাধামে বিচরণ করছে, অন্তত ওই রেস্তোরাঁ আর হোটেলের মালিকরা অনাহারে মরবে না।
Collected .
আমাদের পাড়ায় কালুর নন ভেজ পাকোড়ার ব্যবসা। বছর চারেক আগে একটা টিনের চালার দোকানে কড়াই, স্টোভ নিয়ে ব্যবসার শুরু। আজ তার নিজের দোতলা বাড়ির এক তলায় একটা অংশে টেবিল চেয়ার পাতা ছোট্ট সুন্দর দোকান। ডেইলি সেল প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার। না আমি কোন উদ্যোগ পতির গল্প বলতে বসিনি। বলছি আমাদের আধুনিক বাঙালী সমাজের মানসিকতা আর অন্ধ অহমিকার কথা। কালুর সঙ্গে প্রেম স্বপ্নার। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবার আপত্তি পাকোরা ওলার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। স্বপ্নার বিয়ে হলো কালুর তিনভাগের একভাগের রোজকার করা KFC এর সুট টাই শোভিত কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
হায়রে এই আমাদের দেশ! বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে সাউথ সিটি তে ডেসার্ট মারছি, fb তে পিক দিচ্ছি, সবটাই বিপণনের গেরোয় পড়া হাফ আতেল বাঙালী। কিন্তু চন্দননগরের জলভরা কোনোদিন জাতে উঠতে পারলো না। এরা নিজেরা নিজেদের উৎকর্ষতাকে নিজেরাই বিশ্বাস করে না, খালি ভাবে সাত সমুদ্র তেরো নদী না ছুঁয়ে এলে সর্টিফায়েড নয়, কি ডাক্তার, কি জামাই, কি ওষুধ, কি খাবার!
আসলে বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙছে বিদেশী বেনিয়ারা।
বড় বড় রেস্তোরাঁ এবং হোটেলের খাদ্যতালিকায় সমস্ত খাবারের নাম ইংরেজি কিংবা অন্য কোন বিদেশী ভাষায় লেখা থাকে দেখেছি।দেখা যাক কিছু উদাহরণ-
'রোসেটো আল্জফার্নো'
এটা বস্তুত ভাতে লাল শাক মেখে পরিবেশন করা হয়।
দাম- ৩৭৫ থেকে ৪০০ টাকা প্লেট । বাড়িতে আপনাকে দিলে আপনি কি খাবেন না নাক সিটকবেন! অথচ এসি রেস্তোরায় সোনা মুখ করে খেয়ে আসবেন!
'নাচোজ উইথ সালসা'
খাস্তা নিমকি কাঁচা টমেটোর চাটনির সাথে পরিবেশিত
দাম- ২০০ টাকা ।খাস্তা আর কাঁচা টমেটোর চাটনি শুনলে কেই বা আর ২০০ টাকা দেবে। তা ছাড়া কাঁচা টমেটোর চাটনি সহযোগে খাস্তা খাচ্ছি বলাটাও বেশ লজ্জাজনক!
'সিনোমিনে সুফলে'
সুজির হালুয়া দাম - ১৭৫ টাকা! বাড়িতে মা ঠাকুমার হাতে এই টাকায় ২৫ জনের হয়ে যাবে।
"রাইস সুপ উইথ লেমন গ্রাস" এর নামে ভাতের মাড় ১৫০ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং কুল স্মার্ট ছেলেগুলো বুক ফুলিয়ে বলে, "I am having rice soup and NACHOS WITH SALSA..!!!" কে আর বলতে পছন্দ করবে খাস্তার সংগে ভাতের মাড় খাচ্ছি রে! হাসিও পায় আবার দুঃখও হয়।
একটা ডিশের নাম, 'ইন্ডিলাচা'
আমাদের যে পরোটার ভেতরে সবজী ভরে মা হাতে ধরিয়ে দিত ছেলেবেলায়, এ সেই জিনিষ! দাম- ২০০ টাকা ।
"ছাতু" বললে লোকে গেঁয়ো ভাবতে পারে এবং হীন দৃষ্টিতে দেখবে হয়ত। কিন্তু ঠেলা ওয়ালার ঘটিতে তৈরি ১০টাকার ছাতুর সরবত যখন আমরা রেস্তোরায় বসে ১৫০ টাকা দিয়ে খাই "গ্রাম জুস উইথ পিপার" আহা ..!! কি স্ট্যান্ডার্ডের খাবার!
কুকারে সেদ্ধ করা ৫ টাকার ভুট্টা, "সুইট কর্ণ" বলে বেমালুম ৬০ টাকায় বিক্রি করছে আর লোকে কিনে খাচ্ছেও !
জাপানিজ রাইস ওয়াইন ওটা একটু সুগন্ধি সহযোগে পরিবেশিত গোদা বাংলায় যাকে বলে হাঁড়িয়া।
চিলড রাইস উইথ গ্রিলড ব্রিঞ্জাল 225 টাকা+ GST. আসলে পান্তা ভাত আর বেগুন পোড়া।
আসলে আমরা অতি আধুনিকরা খাবার নয় খাবারের মোড়কে টাকা চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি। আর এটাই প্রমাণ করে, আমাদের মতন বুদ্ধি ধারী ও আঁতেলরা যতদিন এই ধরাধামে বিচরণ করছে, অন্তত ওই রেস্তোরাঁ আর হোটেলের মালিকরা অনাহারে মরবে না।
Collected .