13-11-2022, 01:45 PM
পর্ব ৯
রবিবার অনুরিমা একটি ক্যাফেতে গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে সে অবাক , দেখে সুচরিতার সাথে সুচরিতার প্রাক্তন স্বামী আদিত্য রায়চৌধুরীও হাজির ! অনুরিমা সুচরিতাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো তার প্রাক্তন কেন এখানে ? সুচরিতাও সেই ভাষায় অনুরিমাকে আস্বস্ত করে পরে বিস্তারিতভাবে সব বলার প্রতিশ্রুতি দিলো।
আদিত্য হেসে নিজে থেকে এগিয়ে এসে অনুরিমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অনুরিমাও ভদ্রতার খাতিরে সৌজন্য বিনিময়টা করলো। তিনজনে ক্যাফের একটা কর্নারে বসলো। আদিত্য বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো অনুরিমা কতোটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে তাকে দেখে। তাই সে নিজেই কনভার্সেশনটা স্টার্ট করলো।
"দেখুন আমি বুঝতে পারছি এখানে এসে আমি আপনাকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছি। আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসছেন , আর আমি আউট অফ সিলেবাস চলে এসছি। "
আদিত্যর এই হিউমার্ ভরা কথা শুনে অনুরিমা না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো। আদিত্য ভাবলো যে যাক সে তার কথার স্কিল দিয়ে অনুরিমাকে কমফর্টেবল করতে পাচ্ছে। তারপর অনুরিমা তৎক্ষণাৎ হাসি চেপে নিজেকে সামলে নিলো। এবার সুচরিতা কিছুটা সিরিয়াস হয়ে অনুরিমাকে বললো , "অনু আমি জানি এই কথাটা শুনলে তুই রাগ করবি , তবুও তোকে কথাটা বলবো। তুই নিশ্চই ভাবছিস আমার এক্স আদিত্য কি করছে এখানে ? .... দেখ আদিত্য আমার এক্স হাসব্যান্ড হতে পারে বাট ষ্টীল উই শেয়ার আ গুড বন্ডিং অফ ফ্রেন্ডশিপ। আজও আমি আদিত্যকে প্রায় সবকিছু শেয়ার করি। প্লিজ রাগ করিসনা , আমি আদিত্যকে তোর আর সমীরের ব্যাপারে সবটা বলেছি। "
"ওয়াট !!", অনুরিমা চেয়ার থেকে উঠে পড়লো , "রিতা আমি তোকে বিশ্বাস করে আমার প্রবলেমের কথা শেয়ার করেছিলাম। তুই আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি !"
"কুল ডাউন অনুরিমা। সুচরিতাকে বলা যা , আমাকে বলাও তাই। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন , আমি কাউকে কিচ্ছু বলবোনা। আসলে সুচরিতা জেনুইনলি চায় আপনার সমস্যার সমাধান করতে। ওই তো আপনাকে সেক্সওলজিস্ট রেকমেন্ড করেছিলো। সিমিলারলি ও আমার সাথেও এই ব্যাপার নিয়ে ডিসকাস করেছে , ফর ইওর বেটারমেন্ট। আপনি আগে শান্ত হয়ে বসুন। আমরা তিনজনে মিলে কথা বললে কিছু একটা উপায় নিশ্চই বেড়োবে। "
আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা ভরা কাফের মধ্যে আর কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাইলো না। সে বসলো কিন্তু রক্তচক্ষু দিয়ে সুচরিতার দিকে তাকাচ্ছিলো , যেন এক্ষুনি ওকে গিলে ফেলবে। সুচরিতা আবার অনুরিমাকে শান্ত করার জন্য বললো , "আমি জানি তুই আমার উপর এখন খুব রেগে আছিস , কিন্তু বিশ্বাস কর , আদিত্য ইস ভেরি ট্রাস্টওয়ার্থই ম্যান। ওর সাথে আমার বিয়েটা ওয়ার্ক করেনি ঠিকই , বাট আনডাউটেডলি হি ইস আ হেল্পফুল এন্ড জেনুইন গাই। তাই জন্যই তো ডিভোর্সের পরও আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা রয়েছে। "
অনুরিমা চুপ করেছিলো। ভেবে পাচ্ছিলো না সে কি বলবে। অনুরিমার নিস্তব্ধতা দেখে আদিত্য ঠিক করলো যে সে সেখান থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবে , দুই বান্ধবীকে স্পেস দেওয়ার খাতিরে। অনুরিমা একটু স্বাভাবিক হলে তখন সে জয়েন করবে। তাই সে চেয়ার থেকে উঠে বললো , "তোমরা দুজনে নিজেদের মধ্যে আগে সবকিছু শর্ট আউট করে নাও , আমি ততোক্ষণে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি। এক্সকিউস মি। ", বলে আদিত্য ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আদিত্য চলে যাওয়ার পরই অনুরিমা সুচরিতাকে চার্জ করতে লাগলো , "তুই কেন ওকে সব বললি ? এতোই যদি নিজের এক্স হাসব্যান্ড এর উপর ভরসা , তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়েছিলিস কেন ? "
"লিশন অনু , নাও ইউ বিকাম পার্সনাল। "
"পার্সনাল , রিয়্যালিই ! এটা তুই বলছিস ! যে আমার পার্সোনাল সমস্যা গুলোকে ভরা বাজারের সামনে নিয়ে চলে এসছে। আর কাকে কাকে বলেছিস তুই ? বা বলবি বলে ঠিক করেছিস ? "
"অনু কুল ডাউন , এতো হাইপার হোসনা। "
"শাট আপ ", অনু এতো জোরে বললো যে গোটা ক্যাফের নজর ওদের টেবিলে পড়লো। অনু প্রচন্ড এম্ব্যারেস্ ফীল করলো। সে সঙ্গে সঙ্গে নিজের হ্যান্ডব্যাগ-টা নিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে আদিত্য দাঁড়িয়ে ছিল। সে দেখলো অনু গটমট করে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে। পেছন থেকে আদিত্য ডাকলো , কিন্তু কোনো সাড়া পেলোনা। কি হয়েছে তা সুচরিতার থেকে জানতে সে ক্যাফেতে ঢুকলো। দেখে সুচরিতা মুড অফ করে বসে আছে। সে সুচরিতার কাছ থেকে জানতে পারলো যে তার যাওয়ার পর অনুরিমা সুচরিতার উপর প্রচন্ড রিএক্ট করেছে। তার প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করে যাবে সেটা আদিত্য রায়চৌধুরী বুঝতে পারেনি। আসলে অনুরিমা বসু মল্লিক কে বোঝা যে অতো সহজ কার্য নয়। আর নয়ও বা তাকে কোনো অছিলায় কাছে পাওয়া। সি ইস অনুরিমা বসু মল্লিক , এ ভেরি টাফ গার্ল টু গেট কন্ভিন্সড।
![[Image: 313103832-149788721116346-433753817819220082-n.jpg]](https://i.ibb.co/SmB96nC/313103832-149788721116346-433753817819220082-n.jpg)
![[Image: 313209933-545910644207020-5329580840108587196-n.jpg]](https://i.ibb.co/5TPTKnM/313209933-545910644207020-5329580840108587196-n.jpg)
অনুরিমা প্রচন্ড রেগে ছিল। বাড়িতে এসে সে চুপচাপ নিজের সংসারের কাজ করতে লাগলো। তার সমীরের উপরও খুব বিরক্তি এসে পড়ছিলো। আজ সমীরের জন্যই যতো সমস্যার শুরু। সে কিনা করেছে সমীর ও সমীরের ফ্যামিলিকে খুশি রাখতে। কতো স্যাক্রিফাইসই না করেছে। চাকরি করেনি , মাসের পর মাস বাপের বাড়ি যায়নি শশুর শাশুড়ি কে দেখভাল করার জন্য। বদলে সে কি পেলো ? অপমান ! হ্যাঁ অপমানই তো। কি লজ্জার ব্যাপার , তার স্বামী তাকে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করে দেখতে চায়। ছিঃ ! কাজ করতে করতে অনুরিমা এসব ভাবতে লাগলো। সে আরো ভাবলো যে বুধবার ডক্টর রায়ের সাথে একা দেখা করতে যাবে কিনা , তাও আবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো অদ্ভুত জায়গায়। অদ্ভুতই তো। তার আর ডক্টর রায়ের সাক্ষাতের জন্য জায়গাটা যে বড়োই বেমানান। লোকে সেখানে পরিবার নিয়ে যায় , কপোত কপোতিরা প্রেম করতে যায়। রাজীববাবু কে হয় তার ? স্বল্পদিনের সাক্ষাৎ তবুও এক অজানা অচেনা পরপুরুষই সে।
![[Image: 242383342-262108045915376-2239536482788043814-n.jpg]](https://i.ibb.co/jgyc1C6/242383342-262108045915376-2239536482788043814-n.jpg)
রাজীব বাবুও কি সবকথা সুচরিতাকে বলে ফেলে ?? নাহঃ নাহঃ , সেটা জানতেই হবে। আর সেটা জানার জন্যই আমাকে বুধবার দেখা করতে হবে তার সাথে। আমি আমার জীবনের সমস্যাকে এভাবে সর্বজনীন করতে পারবো না। আমাকে জানতেই হবে রাজীববাবু কতোটা বিশস্ত মানুষ। তাই আমি ওনার সাথে দেখা করবো বুধবার। -- মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো অনুরিমা।
কেটে গেলো দুদিন। এর মধ্যে সুচরিতা অনেকবার তাকে ফোন - ম্যাসেজ করেছিল , যার একটারও উত্তর অনুরিমা দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে সে ফাইনাল ভাবে সমীরকে জিজ্ঞেস করলো , আগামীকাল তার যাওয়া উচিত হবে কিনা ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করতে ? সমীর কোনো বিশ্লেষণে না গিয়ে শুধু হ্যাঁ বললো। অনুরিমা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো , সত্যিই তার যাওয়া উচিত ? পুনরায় জবাব এলো হ্যাঁ। মনে পাথর রেখে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যাওয়ার।
বুধবার সকাল -- অনুরিমার বুক ধড়পড় করতে লাগলো। নার্ভাসনেসে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। সমীর ওর বাবা মা কে বলে রেখেছিলো যে আজ তিন্নি কলেজে যাবেনা , বাড়িতেই থাকবে , কারণ সে ও অনুরিমা আজ এক বিশেষ কাজে বেড়োবে , ফিরতে দেরী হবে। তাই তিন্নি কলেজে গেলে , তাকে আনতে যেতে কেউ যেতে পারবে না। সমীরের বাবার শরীরটা কয়েকদিন ধরে খুব একটা ভালো ছিলোনা , আর মা তো পায়ে ব্যাথা নিয়ে প্রায় শয্যাশাহী। তাই অনুরিমার অনুপস্থিতিতে তিন্নিকে কলেজে পাঠানো সম্ভব নয় একেবারে।
ঠিক ছিলো সমীর অনুরিমা কে ভিক্টোরিয়ার কাছে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সমীরের মাথায় অন্য প্ল্যান ছিল। সে গাড়ির ডিকিতে নিজের আরেক সেট জামা এবং ভাড়া করে আনা কিছু মেক আপের সরঞ্জাম এনে রেখে দিয়েছিলো। পরে কাজে আসবে বলে। সেটা অনুরিমা অগোচরেই। ওদিকে রাজীবও নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে আসছিলো। আজকে কেনো জানিনা সে একটু বেশি সেজেছিলো। অনেকদিন পর আবার কলকাতা ভ্রমণে বেড়োবে বলে নাকি অনুরিমা আসছে বলে ??.... অনুরিমাকে দেখতে যেমন অভিনেত্রী Swikriti Majumder এর মতো , ঠিক তেমন রাজীবকে দেখতে Swikriti এর সহ-অভিনেতা সৌনক রায়ের মতো।
![[Image: Sounok-Roy.png]](https://i.ibb.co/7VtRhTY/Sounok-Roy.png)
আর সমীর ? তার কথা নাহয় এখন বাদই দিলাম। সে তো এখন ছদ্মবেশ ধারণ করবে বলে ঠিক করেছে , নিজের বউয়ের উপর জাসুসি করার জন্য। তাই সে কিরকম দেখতে তা এখন অর্থহীন। কারণ সে এখন আসল রূপ ছেড়ে নকল এক রূপে আসতে চলেছে ।
আর যাকে কেন্দ্র করে এতো কিছু সে অনুরিমাই তাপ-উত্তাপহীন সাদামাটা একটা শাড়ি পড়ে বেড়িয়েছিল। যদিও অনুরিমার মতো সুন্দরী অপসরাকে যাই পড়বে তাতেই মানাবে , কিছু না পড়লে আরো ভালো লাগবে। সেটা তো না জানি কতো রাহাচলতি পুরুষের ফ্যান্টাসি , অনুরিমাকে একবার তার বার্থডে স্যুটে দেখার। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত সেই অবস্থায় আজ পর্যন্ত শুধু একজন পুরুষই তাকে দেখতে সক্ষম হয়েছে , সে হলো সমীর মল্লিক , অনুরিমার স্বামী।
![[Image: 314419229-151020400993178-4031868947110592246-n.jpg]](https://i.ibb.co/8c3M87P/314419229-151020400993178-4031868947110592246-n.jpg)
যাই হোক , সময়মতো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে সমীরের গাড়িটা এসে থামলো। অনুরিমা সমীরের দিকে একবার তাকালো , তারপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সমীর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো , তবে সে অফিস গেলো না। রবীন্দ্রসদনের কাছে একটি পার্কিংয়ে গিয়ে সে গাড়িটা কে দাঁড় করালো। ডিকি থেকে আরেক সেট জামা কাপড় নিয়ে সে কাছের একটি পে এন্ড ইউস টয়লেটে গিয়ে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফেললো। ফের গাড়িতে এসে মোটা কাপড় মাথায় পাগড়ির মতো করে বেঁধে নিলো। চোখে কালো একটা গগোলস পড়লো। আঁঠা দেওয়া ফলস দাঁড়ি গোঁফ মুখে লাগিয়ে নিলো। গাড়ির মিরর গ্লাসে নিজেকে একবার দেখে নিলো। নাহঃ , সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না , ঠিক যেন সর্দারজি লাগছে , হুবহু। ওদিকে অনুরিমা জানে তার স্বামী অফিসের দিকে গমন করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার স্বামীর অভিপ্রায় ছিল তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা। সমীর যে তার কৌতূহল কে কিছুতেই কাবু করতে পারেনি। সে দেখতে চায় অনুরিমা কিভাবে ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করবে , কথা বলবে , সব।
![[Image: Swikriti-at-Victoria.png]](https://i.ibb.co/pnvhy35/Swikriti-at-Victoria.png)
![[Image: Swikriti-at-Victoria-2.png]](https://i.ibb.co/0jfYBp1/Swikriti-at-Victoria-2.png)
অনুরিমা ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো। সেরকমই কথা ছিল। শনিবার রাজীব বলে রেখেছিলো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটে মিট করতে। রাজীবের কাছে অনুরিমার নাম্বার ছিলোনা , আর চাওয়ার সাহসও রাজীব দেখায়নি। ডক্টর রাজীব দূরে এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করে আসছিলো। তাই রাজীবের একটু দেরী হয়েছিলো। আসলে ভিক্টোরিয়ার আসে পাশে তো পুলিশ গাড়ি পার্কিং করতে দেয়না। দেরীতে আসায় রাজীব অনুরিমার কাছে সৌজন্যমূলক ক্ষমা চেয়ে নিলো। অনুরিমা এসব ছোটোখাটো ব্যাপারে মাইন্ড করেনা , তাই সে শুধু ইট'স ওকে বলে ব্যাপারটাকে খ্যান্ত দিলো।
"চলুন তবে , ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা দেখা যাক। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো ", এই বলে রাজীব দুজনের জন্য এন্ট্রি টিকিট কেটে অনুরিমা কে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করলো।
এন্ট্রি গেট দিয়ে ঢুকে ভিক্টোরিয়ার দিকে যেতে যেতে হঠাৎ রাজীব বললো , "একটা কথা বলবো আপনাকে ? কিছু মনে করবেন না তো ?"
"কি ?"
"আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। "
"ওহঃ , থ্যাংক ইউ ডক্টর রায়। "
"আচ্ছা আপনি একটা কথা দিয়েছিলেন আমাকে , মনে আছে ? যেটা আপনি পুরোপুরিভাবে ভুলে গেছেন !"
"কি কথা ?"
"মনে করে দেখুন , গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে , আমাদের প্রথম সিটিংয়ে আমরা একটা প্রমিস শেয়ার করেছিলাম। "
"প্রমিস ?? কি প্রমিস? সরি আমার কিছু মনে পড়ছে না। "
"স্বাভাবিক। আপনার উপর দিয়ে যা চাপ চলছে , এরকম ছোটখাটো ব্যাপার মেমোরি থেকে একেবারে ওমিট হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। "
"আমার উপর দিয়ে চাপ যাচ্ছে সেটা আপনি বুঝছেন ?"
"বুঝছি বলেই তো দেখা করতে এসছি। বন্ধু হতে এসছি। যাতে যা কিছু আপনি আপনার স্বামীকে বা কাউকে বলতে পারছেন না সেটা যেন নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। "
রাজীবের এই কথাটা কেন জানিনা অনুরিমার মন ছুঁয়ে গেলো। খুব ভালো লাগলো তার যখন রাজীব বললো সে তাকে বোঝে। কারণ এই ক'দিনে তার অনেক মনোক্ষুন্ন হয়েছে , নিজের আপনজনদের কাছ থেকে। যাদের সে আপন ভাবতো, বিশ্বাস করতো, তারাই তাকে আপসেট করেছে অনেক বেশি করে , তা সমীর হোক বা সুচরিতা , মন ভেঙেছে সবাই। তাই সে রাজীব কে জিজ্ঞেস করলো , "বন্ধুদের-কেও কি বিশ্বাস করা যায় ? তারাও কি আদেও কথা রাখে ?"
রাজীব বললো , "সবার কথা বলতে পারবো না , তবে আমি শুধু আমার গ্যারেন্টি দিতে পারি। "
"তাই ? আচ্ছা সুচরিতার সাথে আপনার কথা হয় ? "
"কি নিয়ে ?"
"আমার সাংসারিক জীবন নিয়ে ? "
"আমি ওর কাছ থেকে সব ইনপুট নিয়েছি , কিন্তু কোনো আউটপুট দিইনি। নাহলে আমি জানতাম কি করে বলুন যে আপনার জীবনে ছেলে বন্ধুর সংখ্যা নেহাতই এক সিং বিশিষ্ট গন্ডারের মতো , বিলুপ্তপ্রায়। খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। "
রাজীবের এই কথা শুনে অনুরিমা হেসে ফেললো , আর বললো , "ঠিকই বলেছেন। তাছাড়া পুরুষেরা হয়েই গন্ডারের মতো , বিশেষ করে তাদের চামড়া , কিছুতেই কিছু যায় আসেনা। হি হি। "
রাজীব এই প্রথম অনুরিমাকে একটু খোলামেলা ভাবে হাসতে দেখলো, যেটা সত্যি ভালো লাগারই বিষয়।
"বাই দা ওয়ে , আপনি বললেন না তো , কি প্রমিস করেছিলাম আমি ?"
"মনে করে দেখুন প্রথম সিটিংয়ের সময়ে বলেছিলাম আপনাকে যদি বন্ধু বলে মনে করেন তাহলে নো ডক্টর রায় , নো রাজীব বাবু , ওনলি রাজীব। "
"ওহঃ !! তা আগে আপনাকে বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করি, তারপর তো। "
"হুমঃ , তাহলে আমাকে কি করতে হবে আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে হলে ?"
"আপনি শুধু এইটুকু বলুন যে আপনি সুচরিতা কে কি কি বলেছেন ?"
"কিচ্ছু না , নাথিং। আমি আপনাকে আগেও বলেছি , এখনও বলছি। আই এম এ সেক্সওলজিস্ট , হোয়াট ইউ শেয়ার উইথ মি , ইট অলওয়েজ কেপ্ট উইদিন মি। শুরুর দিকে সুচরিতার কাছ থেকে আপনাদের ব্যাপারে অনেক ইনফরমেশন জোগাড় করেছি , জাস্ট ফর মাই ট্রিটমেন্ট পারপাস। কারণ দম্পতিরা অতো ইসিলি সবকথা খুলে বলতে পারেনা। তাই আমাকেই খুঁড়ে খুঁড়ে বার করতে হয় ইনফরমেশন , সেটা পেশেন্ট এর মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু পেশেন্ট এর কথা একজন প্রকৃত সেক্সওলজিস্ট কখনও কারোর কাছে লিক করেনা। "
"বুঝলাম , তবে এরপর থেকে আমাদের ব্যাপারে যাবতীয় যা ইনফরমেশন জানার ফর আওয়ার প্রবলেম পারপাস , তা সব আপনি আমার কাছ থেকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন , কেমন ?"
"ঠিক আছে , তবে একটা শর্তে। আপনার জীবনে আমাকে বন্ধুর স্থানটা দিতে হবে , শুধু রাজীব বলে ডাকতে হবে , রাজি ? "
"আচ্ছা , বেশ। তাই হবে ", অনুরিমা হেসে উত্তর দিলো।
"চলুন তবে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা গিয়ে একটু দেখা যাক। "
"ঠিক আছে। "
এই বলে তারা দুজন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদিকে সমীরও সেইসময়ে রবীন্দ্রসদনের পার্কিং থেকে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্টোরিয়ায় এসে হাজির , ছদ্মবেশে।