11-11-2022, 09:44 PM
অন্তিম পর্ব (পার্ট-২)
রাতে নিজের রুমে ঢুকলো অভয়, পুরো ঘরটা চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে, তার উপরে সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে ফলে পুরো ঘরেই সুগন্ধে ভরপুর, উচ্চ পাওয়ারের লাইট নয়, ছোটো ছোটো প্রদীপের মতো দেখতে লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।এছাড়া সারা ঘরে লাইটিংএর আলো আঁধারির খেলা চলছে, মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আলপনার মতো সাজানো হয়েছে, বিছানাতেও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো আর তার উপরে ঘোমটা টেনে বসে আছে তাথৈ, পরনে সোনালী রঙের জড়ির কাজ করা টকটকে লাল চোলি ও সেম ডিজানের টকটকে লাল লেহেঙ্গা, মাথায় টিকলি, যেটা সিঁথিতে সিঁদুরের উপরে আছে, কানে ঝুমকো, নাকে নোলক, গলায় সোনার চেইন এবং মঙ্গলসূত্র, দুহাতে মেহেন্দি, কবজির অনেকটা উপর পর্যন্ত সেম লাল রঙের চুরি সাথে সোনার বেশ কয়েকটা চুরিও আছে, দুহাতে এবং দুপায়ের নখে কাপড়ের সাথে ম্যাচিং লাল নেলপালিশ, ঠোঁটেও লাল লিপস্টিক, কপালে টিপ, পায়ে নূপুর। অভয় আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল, তাথৈও ঘোমটার ভিতর থেকে দেখছে তার প্রিয়তম পুরুষটিকে, অভয়ের পরনে সিলভার রঙের ডিজাইন করা কালো কুর্তা পাঞ্জাবি, গলায় উত্তরীয়, ক্লিন শেভড গাল এবং ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল একটু ছোটো করে কাটা,।মাঝখান থেকে সিঁথি করে দু সাইডে পিছন দিকে আচড়ানো, অভয় এমনিতেই সুদর্শন কিন্তু আজ তাথৈ যেন চোখ ফেরাতে পারে না সে ঘোমটার ভিতর থেকেই একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে অভয়কে।
অভয় বিছানায় বসে আস্তে করে ঘোমটা তোলে এতক্ষণে তাথৈএর মুখ দৃশ্যমান হয় তার কাছে, অত্যন্ত মোহময়ী লাগছিল তাথৈকে, এতক্ষণ তাথৈ অভয়কে দেখছিল এখন অভয়ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে হারিয়ে যেতে থাকে এতে খুব সম্ভবত তাথৈ একটু লজ্জা পায় সে চোখ নামিয়ে ফেলে বলে "কি দেখছো?"
তোমাকে।
কেন? এত দেখার কি আছে?
তুমিও তো দেখছিলে আমাকে।
বেশ করেছি, আমার বর আমি দেখছিলাম।
তাহলে আমিও বেশ করেছি আমার বউকে আমি দেখছিলাম। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ তারপর অভয় বলে "তোমার মনে আছে তোমার কাছে আমার একটা জিনিস পাওনা বাকি আছে?"
তাথৈ মুখ তুলে তাকায় ওর ভ্রু কুঁচকে গেছে বলে "কি জিনিস?"
কেন মনে নেই? তুমি বলেছিলে তোমার যেদিন ১৮ বছর বয়স হবে সেদিন দেবে।
একটু ভাবতেই তাথৈএর মনে পড়ে যায় কয়েকবছর আগের সেই পুরনো মন্দিরের পিছনের বাগানের বটতলায় এক বিশেষ দিনের কথা, সঙ্গে সঙ্গে সে আবার লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে বলে "তুমিই আসতে দেরী করেছো আমি কি করবো?"
কি করবে মানে? আজ দেবে।
হবে না, তুমি দেরী করে ফেলেছো।
ঠিক তো?
হুমম।
বেশ তাহলে আমিও চললাম।
চললাম মানে কোথায়?
কেন তোমাকে বলেছি তো ববিতা আমাকে ডিনারে ডেকেছিল, মায়ের কথায় দেখা করতে গিয়েছিলাম শুধু এটুকুই মিথ্যা ছিল এটুকু বাদে বাকিটা সত্যি ছিল ,এখনো আমাকে ডাকছে ডিনারে।
তাথৈএর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল সে অভয়ের কুর্তার কলার ধরে বিছানায় টেনে শুইয়ে ওই বুকের উপর চেপে বললো "মিস্টার অভয় রায় চৌধুরী একটা কথা মন দিয়ে শোনো আর মগজে ঢুকিয়ে নাও আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখন তুমি আমার, শুধু আমার অন্য কোনো মেয়ের দিকে যদি তাকিয়েছো তাহলে তোমার জন্য কতটা খারাপ হবে সেটা তুমি ভাবতেও পারছো না"
কি করবে?
দেখতেই পারবে, মা তো বলেই দিয়েছেন ওনার ছেলেকে শোধরানোর দায়িত্ব উনি আমাকে দিয়েছেন।
অ্যাঁ।
আজ্ঞে হ্যাঁ এবার বুঝতে পারছো তো যে আমি পার্মিশন পেয়েই গেছি।
অভয় এবার এক ঝটকায় তাথৈকে বিছানায় শুইয়ে নিজে ওর পাশে কাত হয়ে শুয়ে শরীরের অর্ধেক তাথৈএর উপর তুলে বলে "মিসেস তাথৈ রায় চৌধুরী, আমি এখন সেই পুরনো অভয় নেই যে তোমার হাতও ধরবে না এখন এই অভয় নিজের পাওনা কখনো ছাড়ে না, আমার যেটা পাওনা সেটা তো আমি নেবোই"।
কি চাই তোমার?
অভয় কথা না বলে আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো তাথৈএর দুটো ঠোঁট লক্ষ্য করে নামিয়ে আনে, তাথৈ দুহাতে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে তবে এবার আর তাকে অপেক্ষা করতে হয় না বা কারো ডাকও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, দুজনেই একে অপরকে গাঢ় প্রেমচুম্বনে আবদ্ধ করে।
প্রায় ১২০০ মাইল দূরে অন্য এক শহরের শিব মন্দিরের চাতালে এখন সাধু রাত্রির জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, একজনই প্রধান গুরু বাকিরা তার শিষ্য, রাতে গুরুকে না ঘুমিয়ে একটু দূরে একটা বট গাছের উপরে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার এক শিষ্য জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব, ওখানে কি দেখছেন?"
তুমিও দেখো কি দেখতে পারছো?
শিষ্যটি গাছের দিকে তাকায় আকাশে তখন পূর্ণিমার সম্পূর্ণ উজ্বল চাঁদ দেখা যাচ্ছে যার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, একটু ভালো করে দেখতেই শিষ্যটি দেখতে পেলেন গাছের একদম উপরের দিকে একটা ডালে একটা পাখির বাসা এবং তাতে দুটো পাখি বসে আছে একে অপরের গা ঘেঁষে একে অপরের চঞ্চুতে চঞ্চু লাগিয়ে কখনো গলায় গলা ঘষে আদর প্রকাশ করছে, প্রেম নিবেদন করছে। যদিও শিষ্য ঠিক বুঝতে পারলেন না ওটা কি পাখি? তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গুরুর দিকে তাকালেন, গুরু একটু স্মিত হেসে বললেন "আজ ওদের মিলনের রাত, এত বছরের অপেক্ষা, বিরহ আজ শেষ আজ ওরা চিরতরে একে অপরের কাছে বাধা পড়ে গেছে অবশ্য এটা তো হওয়ারই ছিল, ওদের ভাগ্যই তো ওদের এক সাথে বেধে রেখেছে ওদের তো এক হতেই হতো। শিষ্য বুঝলেন তার গুরু পাখি দেখিয়ে অন্য কারো কথা বলছে কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছে না এতক্ষণে বাকি শিষ্যরাও উঠে পড়েছে তারা গুরুকে ঘিরে বসে পড়েছেন তাদেরই একজন জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব তাহলে তো ওদের জীবন এবার সুখেই কাটবে কারণ আপনিই বলেছিলেন ভালোবাসাই জীবনে সুখের সন্ধান দেয়"।
গুরু আবার স্মিত হাসি দেন, বলেন "সুখ বা দুঃখ কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়, সেটা চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে ঠিক যেমন দিন আর রাত এর বিরাম নেই চলতেই থাকে ঘুরতেই থাকে"।
তার মানে গুরুদেব আবার ওদের জীবনে দুঃখ নেমে আসবে?
জীবনের পরীক্ষা তো চলতেই থাকে, সেই পরীক্ষা থেকে পালানোর উপায় নেই।
বাণিজ্যনগরীর এক অন্ধকার ঘরে, পুরো অন্ধকার নয় একটা নাইটল্যাম্প জ্বলছে ঘরে তাতে ঘরটাকে আরও রহস্যময় মনে হচ্ছে, সোফার উপর এক তরুণী যুবতী বসে আছে বয়স ২৭-২৮, পরনে একটা পরু স্ট্রিপের টপ, আর শর্ট প্যান্ট সোফার সামনে দুটো অ্যালকোহলের বোতল যার একটা পুরো এবং অপরটা অর্ধেক খালি পাশে একটা গ্লাস আর একটা পাত্রে বরফ, আর একটা জলের জগ, টেবিলেই একটা ল্যাপটপ রাখা তাতে স্ক্রিনে এক দম্পতির ছবি, অভয় আর তাথৈএর ছবি, যুবতী গ্লাসে কিছুটা অ্যালকোহল ঢেলে তাতে কিছুটা জল মেশায় তারপর দুটো বরফের টুকরো গ্লাসে দেয় এবার গ্লাসটা হাতে তুলে এক চুমুকে প্রায় শেষ করে ফেলে। এই সময় দরজায় নক হবার শব্দ আসে, যুবতী নেশা জড়ানো গলায় বলে "আসুন"
একটা পুরুষের অবয়ব দেখা যায়, যুবতী বলে "আপনার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল মনে আছে?"
আছে। পুরুষটি গম্ভীরকণ্ঠে বলে।
প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে না?
না।
না? যুবতীটি বিস্ময় প্রকাশ করে।
না।
তাহলে এখানে এসেছেন কেন?
আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে।
কি?
আমার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল এটা ঠিক কারণ সে একটা গর্হিত অপরাধ করেছিল এবং সেখানে সে আত্মহত্যা করে কিন্তু এআরসি আমার সাথে শত্রুতা করেনি, কিন্তু এখন যদি আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করি তাহলে ও আমাকে শেষ করতে দুবার ভাববে না।
আপনি ওকে ভয় পাচ্ছেন?
এই শহরের প্রায় সবাই ওকে যেমন ভয় পায় তেমনি সম্মান করে আবার অনেকে ভালোওবাসে, আপনার সাথে আমার পারিবারিক পরিচয় আছে তাই সাবধান করছি, এআরসির বিরুদ্ধে যাবেন না কারণ ও যদি জানতে পারে তাহলে আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, এআরসি ছাড়ুন আমির যদি জানতে পারে কিংবা আমিরও ছাড়ুন এই শহরের যেকোনো সাধারণ খেটে খাওয়া লোক যদি জানতে পারে যে আপনি এআরসির ক্ষতি করতে চাইছেন তাহলে ওরাই আপনাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে তাই..
বেরিয়ে যান এখান থেকে। হটাৎ যুবতী চিৎকার করে ওঠে, বেরিয়ে যান নাহলে এখন আমি আপনাকে মেরে ফেলবো।
পুরুষটি বেরিয়ে যায়, ঘরে যুবতী একা সে ল্যাপটপের ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, এবার সে স্বগতোক্তি করতে থাকে "ছোটো থেকেই যেটা আমার পছন্দ হয়েছে সেটা আমি নিয়েছি এটাই আমার অভ্যাস, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছিল এআরসি, সেই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম একটা বারে, আমাকে একা পেয়ে যখন কিছু বদমাইশ ছেলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল তখন তুমি আমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলে, তারপর অনেক খুঁজে তোমার সম্বন্ধে জানলাম তোমার অফিসে তোমার পিএ হিসাবে চাকরি নিলাম যাতে সবসময় তোমার কাছে থাকতে পারি তোমার পাশে থাকতে পারি, তারপর থেকে প্রতিদিন চেষ্টা করতাম তোমাকে ইমপ্রেস করার, তোমার মন জয় করার কিন্তু পারিনি, তুমি আমার দিকে নজরই দাওনি তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু আজ তুমি কোথা থেকে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বিয়ে করে নিয়েছো... এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না, তুমি আমার আর যদি তোমাকে আমি নিজের করে না পাই তাহলে তোমাকে অন্য কারো হতেও দেবো না, ওই মেয়েটা তাথৈ ও আমাদের মাঝে এসে ভুল করেছে ওকে সরতে হবে, আর তা নাহলে তোমাকে এই পৃথিবী থেকে সরতে হবে, আমাকে ইগনোর করে তুমি আমাকে অপমান করেছো তার মূল্য তো চোকাতেই হবে মিস্টার এআরসি, হয় তোমাকে নিজের করে নেবো ওই তাথৈকে মেরে আর নাহয় তোমাকে মেরে আমাকে অপমান করার প্রতিশোধ নেবো... প্রতিশোধ।
সমাপ্ত
বিদ্র: এটাই এই গল্পের অন্তিম পর্ব যদি ইচ্ছা হয় তাহলে লাইক এবং রেপু দেবেন, আর যদি না হয় দেবেন না কিন্তু একটা জিনিস আমি চাইবো সেটা হলো রিভিউ আর সেটা সৎভাবে, যেখানে ভুল হয়েছে সেটা বলবেন যেখানে খামতি রয়েছে সেটাও বলবেন, এটুকু আশা তো করতেই পারি, নয়কি?
যাইহোক আপাতত আর লেখার ব্যাপারে কিছু ঠিক করিনি, হয়তো লিখবো হয়তো না, কিন্তু যদি লিখি তাহলে আবার দেখা হবে, ততদিন বিদায়, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
যাইহোক আপাতত আর লেখার ব্যাপারে কিছু ঠিক করিনি, হয়তো লিখবো হয়তো না, কিন্তু যদি লিখি তাহলে আবার দেখা হবে, ততদিন বিদায়, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils