09-11-2022, 10:51 AM
তুমিও_হেঁটে_দেখো_কলকাতা
আমাদের একজন 'রাজা' ছিলেন।
সেই রাজা, যিনি একটা ঝিমিয়ে থাকা সমাজকে জাগানোর চেষ্টা করে গেছিলেন মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। তিনি আমাদের সবার কাছে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, যিনি ছিলেন, তাই আমরা, মেয়েরা - বাঁচতে পেরেছিলাম। নইলে তো...
একটু আগে ভুল লিখেছি।
আমাদের একজন রাজা আছেন। অষ্টাদশ শতকের অন্ধকার সময়ে যিনি নবজাগরণের সাগ্নিক ছিলেন। শুধুমাত্র সতীদাহ প্রথা রদ করেই না, ধর্ম এবং সমাজচিন্তাতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আর তাই, তিনি আছেন আমাদের প্রত্যেকের অস্তিত্বের মধ্যে।
কী যে লিখি আর তাঁর সম্পর্কে! শিক্ষা-সমাজচেতনা- এমনকি আমি যে বিষয়ের ছাত্রী, সেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে আমি নিতান্তই অক্ষম। শুধু এইটুকুই বলি যে, আমি তাঁকে স্মরণ করি বছরভর।
আর সেজন্যই, কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম 'রাজা রামমোহন রায় মিউজিয়াম' থেকে। ৮৫এ, রাজা রামমোহন সরনি, যেটি আদতে মেছুয়াবাজার নামেই অধিক পরিচিত, এবং যেখানে স্বয়ং রাজা থাকতেন, সেখানেই গড়ে উঠেছে এই সংগ্রহশালাটি। এই বাড়িটি 'সিমলা বাড়ি' নামে পরিচিত ছিল একসময়ে।
তিনটি তলা জুড়ে সংগ্রহশালা রয়েছে এখানে। রাজার ব্যবহৃত পোষাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ছাড়াও এখানে সমকালীন বঙ্গসমাজ সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক তথ্য আছে। এছাড়াও তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনাও বর্ণিত আছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে সেইসময়টিকে যেভাবে তুলে আনা হয়েছে অন্যান্য সমকালীন ব্যক্তিত্ব, তখনকার সংবাদপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে, সেই প্রচেষ্টাটিকে। তাই, সাধুবাদ জানাই রামমোহন কলেজকে, যাঁদের উদ্যোগে এই মিউজিয়ামটি তৈরি হয়েছে।
একতলায় রাজার বাগান আছে, যদিও কালের নিয়মে সেখানে আগাছার পরিমাণই বেশি। এই একটি জায়গা আরেকটু পরিচ্ছন্ন হলে ভাল লাগত। এছাড়া, সবটা, সবটুকু অত্যন্ত যথাযথ। বিশেষভাবে উল্লেখ করব কর্মীদের কথা, যাঁরা খুবই হাস্যমুখ এবং তৎপর। তবে যিনি টিকিট কাউন্টারের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন, উনি দুঃখ করে বলছিলেন যে খুব কম মানুষই মিউজিয়াম দেখতে আসেন।
সত্যি বলতে কি, দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। চোখে জল আসছিল... আর একই সঙ্গে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল - স্বয়ং রাজার বাড়িতে, যে ঘরে উনি একসময় থাকতেন, যে বৈঠকখানা ঘরে বসে হয়ত প্রিভি কাউন্সিলের কাছে চিঠি লিখেছিলেন সতীদাহপ্রথা রদ করার জন্য ... সেখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি... একবিংশ শতাব্দীর এক সামান্য মানুষ - এটা ভেবেই আপ্লুত হয়ে গেছিলাম।
একবার ঘুরে আসুন সবাই, প্লিজ। এইসব মহাপুরুষদের বেড়ে ওঠার আঁতুড়ঘর কিন্তু আমাদের কাছে উপাসনাগৃহই একরকমের...
*কিভাবে যাবেন* - মানিকতলা মোড় থেকে পায়ে হাঁটা পথে, মেছুয়াবাজার এলাকাতেই এই সংগ্রহশালা।
*সময়* - মঙ্গল থেকে রবিবার সকাল এগারোটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। সোমবার বন্ধ থাকে।
*প্রবেশমূল্য* - মিউজিয়াম দেখার জন্য কুড়ি টাকা। ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা। মোবাইলে ছবি তোলার জন্যও টাকা দিতে হয়।
*বি.দ্র* -
মানিকতলাতেই রাজার আরেকটি বাড়ি আছে, যেখানে বর্তমানে কলকাতা পুলিশের একটি মিউজিয়াম আছে। সেটিও খুব কাছাকাছি, তাই পারলে একইসঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। আমি আগেই গেছি সেখানে... এবং আবেগাপ্লুত হয়েছি সবকিছু দেখে। এছাড়া, স্বামী বিবেকান্দের বাড়িও হাঁটাপথেই। সেখানেও যেতে পারেন একইদিনে।