Thread Rating:
  • 176 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
[Image: b92f22b1-0130-4075-ad15-161b4d0151b8.png]
"বলো তুমি আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?"


অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছে হাঁসড়ায়। পাহাড়ী বৃষ্টি যেন এক বিপর্যয় ডেকে আনে। এ ক'দিন বাড়ির বাইরে কোথাও বেরোনো হয়নি হেমেন দা বা কাবেরীর। কুন্তীর মনটা মায়ের জন্য ছটফট করলেও ঝড়-বাদলার মধ্যে যেতে দেয়নি কাবেরী।
অথচ কলকাতা রৌদ্রজ্জ্বল। টানা ক'দিন বাড়তি চাপের পর অরুণাভ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। মালতী ডুব দিয়েছে। নিজেই চা করে খেলো সে। পাপান পড়ায় মগ্ন। কাবেরী গতকাল ফোন করেনি। এমনটা তো কক্ষনো করে না। অরুণাভ উঠে গিয়ে রিসিভারটা ঘোরালো। বেশ খানিকক্ষণ রিং হওয়ার পর ও প্রান্তে কাবেরীর গলা শোনা গেল।
--কী ব্যাপার, আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে।
রান্না ঘর থেকে ঘেমে নেয়ে ফিরেছে কাবেরী। কথাটা বলে মুখটা আঁচল দিয়ে মুছে নিল ঝটিকায়।
---ব্যাপার বলতে, তুমি কাল থেকে একবারও ফোন করলে না? ভাবলাম তুমি বোধ হয় জঙ্গলে গিয়ে সবটা ভুলতে বসলে।
---সবটা বলতে?
---সবটা মানে তোমার দুই পুত্তর আর স্বামীটির কথা বলছি ম্যাডাম। হেসে বললে অরুণাভ।
কাবেরীকে অন্যমনস্ক দেখালো। অরুণাভ চক্রবর্তীর সাবলম্বীতায় আঘাতটা টের পেল কাবেরী। যে কাবেরীকে ছাড়া সংসারের একটা কাজ হয় না, সেই কাবেরীই না সকলের অলক্ষ্যে সংসারে ছিল এতদিন তার স্বামীটিও টের পায়নি। আজ অরুণাভর জীবনে তাৎক্ষণিক এই স্ত্রীর অনুপস্থিতি, বেশ লাগছে কাবেরীর।
তবু বড্ড অস্থির লাগছে তার। সেদিনের ঘটনার পর তার নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে বারংবার। জিজ্ঞেস করলে----তাতান-পাপান কী করছে?
---তাতান এখনো ফেরেনি। পাপান পড়ার রুমে। তুমি কী করছ?
---রান্না করছিলাম।
---কেন ওই মেয়েটা আছে না? কি যেন নাম।
---কুন্তী। ওকে নিয়েই তো রান্না ঘরে ছিলাম।
---তোমার মামাতো দাদাটি তো বড্ড পাজি। কোথায় না ক'টা দিন ঘুরে বেড়াবে, তা না, ওখানেও রান্না করে বেড়াচ্ছ।
কাবেরী অরুণাভকে থামিয়ে দিয়ে বলল--কুন্তীই রান্না করত, হেমেন দা জোর করেনি আমাকে রান্না করতে।
--আচ্ছা এই যে রাগ করলে, সে তো জানিরে বাবা, তুমি আর রান্নাঘরটি কখনো বিচ্ছিন্ন থাকে নাকি।
---মালতী রান্না করে গেছে?
---না ডুব দিয়েছে। সকালে নাকি তাতানকে বলেছিল ওর নাকি কোন এক খুড়তুতো শ্বশুর মারা গেছে, গ্রামে গেছে। কাল সকালে ফিরবে।
---তার মানে খাবে কি? ওই বাইরের খাবার?
---না ম্যাডাম। আপনার হুকুম অমান্য করলে চলে। ভাতে ভাত করে নেব। একটা রাত তো।
---তুমি রান্না করবে! এতক্ষণে হাসল কাবেরী।
---কেন? বিয়ের আগে আমি বেশ কয়েক বছর মেসে কাটিয়েছি। হাত পুড়িয়ে কতবার রান্না করে খেতে হয়েছে।
অরুণাভ বহুবার রান্না প্রসঙ্গে এই একই গল্প শুনিয়েছে কাবেরীকে। অথচ সংসারের বাইশ বছরে একটিও দিন কাবেরী দেখেনি তার স্বামীর এই প্রতিভা। তবে আজ অরুণাভ সত্যি সত্যিই রাঁধবে ভাবতে কাবেরীর ব্যাপারখানা বেশ চমকপ্রদ লাগলো।
হেসে বলল---পারবে তো? সত্যি সত্যি আবার হাত পুড়িয়ে ফেলো না। তার চেয়ে বাপু ওই হোম ডেলিভারী ভালো।
তাতানের গলার আওয়াজ শোনা গেল পাশ থেকে। অরুণাভ বললে---এই যে তোমার বড় পুত্তুর ফিরলেন।
সোফার ওপর ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে টি শার্ট খুলতে খুলতে তাতান বললে---কে? মা?
রিসিভারটা বাড়িয়ে দিল অরুণাভ।
---কেমন আছো মা?
তাতান খুব ধীর স্থির প্ৰকৃতির ছেলে। ওর গলার মধ্যেও একটা শান্ত শিশুতোষ ভাব আছে। কলেজে পড়া ছেলেরা সচরাচর এমন হয় না। যদিও দুই ভাইতে ঝগড়া বাধলে এই তাতানের গলা তখন চেনা দায়।
---কি রে, তোর এত দেরী হল।
মায়ের কাছে কিছু লুকোয় না তাতান। বললে---ওই, কলেজ শেষে বন্ধুদের সাথে নন্দনে গিয়েছিলাম, সিনেমা দেখতে।
তাতান! সিনেমা! এ যেন বিস্ময়ের মনে হল কাবেরীর। সবকিছুই কেমন উল্টো হচ্ছে আজকাল। অরুণাভ রান্না করবে, তাতান সিনেমা দেখে ফিরল!
---কি সিনেমা শুনি?
---ও তুমি বুঝবে না। ইংরেজী।
কাবেরী হেসে বললে---ইংরেজী ভাষাটা বুঝি আমি বুঝি না।
---ভাষা বোঝাটা বিষয় নয়। ক্রিস্টোফার নোলানের নাম শুনেছ?
কাবেরী জানে কলেজে পড়া তাতান ইদানিং ইন্টেলেকচুয়াল টাইপের হয়ে যাচ্ছে। অবিকল যৌবনের হেমেন দার মত। বললে---আমি না বুঝি, তোর হেমেন মামা নিঃসন্দেহে বুঝবেন। জিজ্ঞেস করে নেব।
---এটা হেমেন মামাদের যুগের ছবি নয় মা। যাইহোক তুমি কবে বাড়ী আসবে বলো তো, আর ভালো লাগছে না।
---কেন রে এই তো সিনেমা দেখে এলি, মন খারাপ নাকি?
---না না। সামনের মাসেই তো আইআইটির জ্যামের পরীক্ষা। বেশ প্রেসার লাগছে।
---অত পড়িস না তাতান। যা হবে, হবে। বরং ভাইটাকে দেখ। ফিজিক্সটা বলছিল কি একটা আটকে আছে।
---ওই স্কউন্ড্রেলটা, ওর দ্বারা কিস্যু হবে না।
---আঃ তাতান, ভাইকে আবার কটূক্তি করে। তোর বাপি কোথায়?
---রান্না ঘরে।
মনে মনে হাসলো কাবেরী। আজকে অরুণাভ বাবাজীবন জব্দ হবে। ছেলের সাথে কথা বলে ফোনটা রাখলো কাবেরী। হেমেন দা পড়ার টেবিলে বসে খসখস করে কী লিখে যাচ্ছেন।
কাবেরী পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হেমেন রায় চশমার ওপর দিয়ে কাবেরীকে দেখে মৃদু হাসলেন, আড়মোড়া ভেঙে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন---"বলো, তুমি আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো?/ তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে/ পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নী-কিছুই নেই আমার/ তোমার বন্ধুরা/ ওই শব্দের অর্থ আমি কখনোই জানি না/ তোমার দেশ?/ জানি না কোন দ্রাঘিমায় তার অবস্থান/ সৌন্দর্য/ পারতাম বটে তাকে ভালোবাসতে-দেবী তিনি আমার/ কাঞ্চন?/ ঘৃণা করি তাকে, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ঈশ্বরকে/ বলো তবে অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালোবাসো তুমি?/ আমি ভালোবাসি মেঘ...চলিষ্ণু মেঘ.../ উঁচুতে...ওই উঁচুতে.../ আমি ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল।" কলমটা নামিয়ে রেখে বললেন---বল তো কার লেখা?
ঈষৎ হেসে কাবেরী বললে----বুদ্ধদেব বসু।
---ঠিক। তবে মূল কবিতা শার্ল বোদলেয়ারের। অনুবাদক বুদ্ধদেব বসু।
---তা তুমি এতক্ষণ কী লিখলে?
----আমার কাজটা সোজা নয়, আজকাল প্ৰবন্ধ আর নিবন্ধের ফারাক দেখা যায় না। উত্তরবঙ্গের একটা কাগজ পুজোর জন্য লেখা চেয়েছে, নিবন্ধমূলক। বুদ্ধদেব বসুর কাব্যধারা নিয়ে প্ৰবন্ধমূলক একটা লেখা আমার ছিল, অনেকদিন অসমাপ্ত পড়েছিল, আজ একটু সুযোগ আসতেই...।
+++++++
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হেমন্তের অরণ্যে - by Henry - 04-11-2022, 01:01 PM



Users browsing this thread: 134 Guest(s)