02-11-2022, 10:30 PM
(02-11-2022, 07:37 PM)Jupiter10 Wrote:
প্রকৃত পক্ষেই এই লেখা কালজয়ী লেখা। কারণ এই গল্প দশ বছরের অধিক পুরনো লেখা হলেও যে'ই পড়ে সে'ই অভিভূত হয়।আবার পুরনো পাঠকরাও বার বার পড়ে থাকেন।
এখানে প্রত্যেক দ্বিতীয় গল্প কালজয়ীর তকমা দেওয়ার মানুষের অভাব হবে না। সেক্ষেত্রে কালজয়ীর প্রকৃত অর্থ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম অনেক দিন ধরে।
উত্তর পেলাম আমারই এক পুরনো শিক্ষকের কাছে থেকে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কালজয়ী সৃষ্টি কাকে বলা হয়? প্রকৃত কালজয়ী কাকে বলা হয়?
তিনি বলেছিলেন কোন সৃষ্টকে তখনই কালজয়ী বলা হবে যখন মানুষ স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্ট প্রাধান্য পাবে। সৃষ্টি হবে মুখ্য এবং স্রষ্টা হবে গৌণ থেকে গৌণতর। মানুষ সৃষ্টিকে কাছে পেয়ে এতোটাই বিভোর হয়ে যাবেন যে তার মাথায় স্রষ্টার চিন্তাই আসবে না।
তিনি উদাহরণ হয়ে বলেছিলেন। আমাদের হাওড়া ব্রিজও তো কালজয়ী একখানা স্থাপত্য। আমি হেসেছিলাম। তিনি বলেছিলেন কেন? সেও তো কালজয়ী কালান্তরে একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তার ধারণ ক্ষমতা, সৌন্দর্যটা বিলিয়ে চলেছে কোন কাল থেকে। সেকি কালজয়ী নয়? অবশ্যই কালজয়ী।
কিন্তু ভেবে দেখো সৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে অথচ স্রষ্টার খবর কেউ রাখে না।
মনালিসার ছবি দেখলে সবাই বলে দেয় এটা মনালিসার ছবি কিন্তু যিনি এঁকেছেন তাকে কত জন চেনেন?
তুমি জানো তাজমহলের আরকিটেক কে ছিলেন?
অথবা অনেক গান কবিতা আমরা মুখে মুখে শুনি কিন্তু গায়ক অথবা কবির নামই জানি না হয়তো।
এই গল্পও ঠিক সেই রকম। এই লেখা সময়ে সময়ে ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা ভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার আসল লেখক বহু আগে নির্জন আড্ডায় একবারই প্রকাশিত করেছিলেন।
এটাই লেখকের উপলব্ধি।
সুতরাং এই গল্প প্রকৃত অর্থে কালজয়ী।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাহলে আমরা অনেক সময় স্রষ্টাকে প্রাধান্য দিই সেটা কি ভুল?
তিনি বলেছিলেন অবশ্যই না। তিনি আছেন বলেই তার সৃষ্ট আছে। তবে তার সৃষ্টি আগে এবং পরে তিনি। আর যেখানে দেখবে স্রষ্টা বেশি মাতিত হচ্ছে। অনেকেই জানেন না তিনি কি উপলব্ধি করেছেন তাহলে জানবে সেটা পুরোপুরি মিথ্যা।
সৃষ্টি সঠিক হলে প্রচারের প্রয়োজন হয় না। লোককে বলে বেড়াতে হয়না। অমুক লেখক, অমুক গায়ক জানো খুব ভালো। সেই এই লেখে সে ওই লেখে ইত্যাদি।
কালজয়ীর সৃষ্টিকারীর প্রচার লাগে না। কালজয়ী কালে নিজেই লোকের চোখে পড়বে।
অনেক সময় স্রষ্টা নিজের সৃষ্টির উপর আস্থা হারিয়ে নিজেই "ফেউ" লাগিয়ে দেয় লোকের কানে কানে বলার জন্য। নিজের প্রচারের জন্য।
অথবা প্রচারকারী স্রষ্টার অন্ধ ভক্ত। "ভক্তি মানে না যুক্তি"।
অথবা স্রষ্টা একটা প্রতিধ্বনি তন্ত্রের মধ্যে থাকতে চায় যেখানে শুধু নিজের নাম প্রতিধ্বনিত হয়।
সংজ্ঞা সঠিকভাবে দেয়াটা যথেষ্ট কঠিন। যে আসলে কালজয়ী কথাটা কেন এবং কিভাবে?
কেন যেন আমার মনে হয় যে এমন একটা বিষয় যা কিনা কিছুটা বাতিক্রমীভাবে প্রথমবারে উপস্থাপন করা হয় এবং সেটা মানুষের মনে দীর্ঘদিন অবস্থান করে থাকে তাকেই মনে হয় বলা যেতে পারে এক কালজয়ী বিষয় বা উপন্যাস ইত্যাদি।
যেমন ধরুন Sholay চলচিত্রটাকে বলিউডের এক কালজয়ী চলচিত্র বলা হয়ে থাকে যার আবেদন কিনা দর্শকের মন থেকে আজো যায়নি! কিন্তু পরবর্তী চার দশকে তো অসংখ্য বলিউডের চলচিত্র সেই Sholay এর চেয়ে অধিকমাত্রায় বেশি ব্যবসা সফল কিংবা দর্শক চাহিদা পেয়েছে কিন্তু সেই প্রায় পাঁচ দশক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত Sholay কে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে কি? উত্তর - না।
এমন একটা চলচিত্র যার কিনা প্রতিটি চরিত্রকে দর্শক তার মনিকোঠায় ধারণ করে রেখেছে! যা কিনা অন্য কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
এখন কথা হচ্ছে এই "পূজনীয় মা" যা কিনা শ্রীমতি rubysen এর Adorable Woman এর বাংলা ভাবানুবাদ যা কিনা তিনি লিখেছিলেন প্রায় দু দশক আগে, এতে এমন কি রয়েছে যে পাঠক পড়ার পরে আক্ষেপের শেষ থাকেনা যে কেন কি কারণে গল্পটা অসমাপ্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে?
আসলে এতে আছে যেমন এক কাব্যিক ভাষার ব্যবহার যা কিনা পাঠক কে বারবার গল্পটা পড়তে আকৃষ্ট করে আর পাঠক যেন মনের রুপালি পর্দায় দেখতে পায় চোখের সামনেই সবকিছু ঘটে চলেছে বিশেষ করে গ্রাম এবং শহুরে নারীদের উদোম মিলন সমারোহ যার উপরে ভিত্তি করেই গল্পের ধারাটা এগিয়ে চলে, আর সাথে রয়েছে এক লাজুক কিন্তু কামুক স্বভাবের সদ্য কৈশোর পেরেনো যুবকের গোপন অভিলাষ (যা কিনা coming of age এর সহজাত লক্ষণ)
সত্যি বলতে কি কোনোকিছুই যথেষ্ট নয় বর্ণনার ক্ষেত্রে যে কেন এমন একটা গল্পকে পাঠক আজো ভুলতে পারেনি। আমি শুধু আমার নিজের মতামতটা ব্যাখ্যা করলাম এখানে।