02-11-2022, 06:14 PM
পর্ব ০২
লাইব্রেরী থেকে বই এনে প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত বেশ কিছু টপিক কভার করে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে সকালের দিকে ঘুমে ঢলে পরছি মাত্র, ওমনি মাসুদের ফোন। মাসুদ ক্লাস ফাইভের ছাত্রটির নাম। আমি আজ কখন যাব সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাই, এত সকালে এই পিচ্চি ফোন করেছে! মানে কি! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যেন আমার অবাক হবার মাত্রা আরও বেড়ে যায়, একটু আগের ৬টায় থাকা ঘন্টার কাঁটাটা নির্লজ্জ্বের মত ৬কে ছেড়ে দিয়ে যেন এখন ৯এর গলা ধরে ঝুলছে! কুম্ভকর্ন হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো ভেবে নিজের মনেই একটু হেসে মাসুদকে বলে দিলাম, 'এইতো আসছি! এক ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাব।' দ্রুত বিছানা ছাড়লাম। প্রচন্ড আলসেমি হচ্ছিল। তিন তিনটে টিউশনির ভার মাথায় নিয়ে বিছানা থেকে নামা কি চাট্টিখানি কথা!
আমি থাকি মিরপুরে। ছোটবেলা থেকেই এই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নই, ভাড়া থাকি। তবুও এলাকার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষন জন্মে গিয়েছে। যাই হোক, মাসুদের বাসা মিরপুর ১৪তেই, যাওয়া খুব একটা কষ্ট হবেনা। আরও মজার বিষয় হচ্ছে মাসুদের বাসার ওদিকেই তনিমাদের বাসা, তাই এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে আজ। বাসা থেকে বের হয়ে মেইন রোড থেকে লেগুনায় উঠে মিরপুর দশের গোল চত্তরে পৌছতেই দেখি খালি বাহন দাঁড়িয়ে আছে। কোন রকম লেগুনার ভাড়া মিটিয়ে বাহনে উঠেই জানলার পাশে থাকা দুই সিটের একটা বসে পড়লাম। বাস ছাড়তে এরা খুবই দেরি করে! পারলে যেন লোক কিছু ছাদেও তোলে তবে কিছু যাত্রীর রক্তচক্ষু প্রদর্শনের কারণেই হয়ত এমনটা করে সাহস পায়নি এরা! বসে থাকতে থাকতে যখন বিরক্তির সীমা তুঙ্গে তখন চিন্তা করলাম খ্যাতা পুরি এই বাসের, এর চাইতে রিক্সা নিয়েই যাওয়া যাক আজ। যেই ভাবা সেই কাজ, বাস থেকে নেমেই দেখি এক রিক্সা ওয়ালা খুব অলস ভঙ্গিতে হুড তুলে রিক্সার সিটে বসে স্যাডেলে পা রেখে বিড়ি টানছেন! আমি জানতাম তিনি যাবেন না, তবুও বৃথা চেষ্টা করলাম।
আমি - মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - নাহ!
আমি - মামা আমার খুব তাড়া ছিল, এই এখানেই যাবো। ১৫টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিব মামা, চলেন না প্লিজ।
রিক্সাওয়ালা - নাহ! আমি খাইতে যামু...
ধূর বলে প্রচন্ড বিরক্তিতে রিক্সার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি অন্য রিক্সার জন্য! দিনের শুরুটাই ছিল অদ্ভুত, আমি আর এর বেশিই কিই বা আশা করতে পারি! ফাকিং রিক্সাওয়ালা ডুড! - এসব হাবিজাবি ভাবছিলাম, হঠাত এক মেয়ে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল,
মেয়েটা - এই খালি যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - কই যাইবেন?
মেয়েটা - সাড়ে ১৪।
রিক্সাওয়ালা - ২০ টাকা।
মেয়েটা - ১৫ টাকার ভাড়া, গেলে বলেন।
রিক্সাওয়ালা - দুপুর বেলা... রোইদ মেলা আফা...
মেয়েটা - না গেলে নাই, একটা টাকাও বেশি দিতে পারব না!
রিক্সাওয়ালা - উঠেন...
আমি এতক্ষণে অন্যদিকে তাকিয়ে শুনছিলাম! এখন যখন দেখলাম রিক্সাওয়ালা যেতে রাজী তখন মেজাজটা আর সামলে রাখতে পারলাম না।
আমি - ঐ মিয়াঁ, আমি ২০ টাকা দিতে চাইলাম, নামতামও আগে, আপনি কইলেন খাইত যাইবেন। আর এখন মাইয়া মানুষ পাইয়া ১৫ টাকাতেই...
বলতে বলতেই মেয়েটার দিকে আমার চোখ পরে, আমি যেন অনেকটা কুঁচকেই যাই! রিক্সায় তনিমা বসা। উঠে হুড তুলছিল, আমায় আগে দেখেনি। আমতা আমতা করতে থাকি... রিক্সাওয়ালা নির্বিকার...! হঠাত মেয়েটার কন্ঠ যেন কানের পর্দায় এসে বাড়ি খায়...
তনিমা - আরে, রওনক ভাই...
আমি - তু...তুমি? কই যাও?
তনিমা - বাসায় যাইই! আর কই যাবো? আপনি এইখানে কি করেন?
আমি - মাসুদকে পড়াতে যাচ্ছিলাম...
তনিমা - ও ঐ পিচ্চিটা! এরপর কি আমাকে অংক দেখাতে আসবেন নাকি আজকে না?
আমি - না আসব, সমস্যা নেই!
তনিমা - মাসুদদের বাসাতো আমার বাসার আগেই পরে, চলেন আপনাকে নামিয়ে দেই।
আমি - না না থাক...
তনিমা - আরিইই... থাকবে ক্যান! উঠেন বলতেছি...
... বলেই তনিমা একপাশে সরে আমাকে জায়গা করে দেয়। আমি তখন নিরুপায়, আবার মনে মনেও খুশী! খুশীটা সময়মত রিক্সা পাওয়ার যতটা না তার চাইতেও বেশি ঐ রিক্সাওয়ালার রিক্সায় উঠতে পারাটা, তাও আবার ৫টাকা কমে ডাবল ওজন! সাংঘাতিক একটা লুক দিলাম ব্যাটার উপর, এরপর মনে মনে 'মু-হা-হা' হাসি তুলে উঠে পড়লাম রিক্সায়! রিক্সা ছাড়ল।
আমি কখনো, রিক্সায় আমার মা-খালা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে উঠিনি, তাই খুব জড়তা হচ্ছিল। আর তার উপর তনিমা রাসেলের প্রেমিকা, তাই জড়তার মাত্রা যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সেটা বুঝতে পেরেই কিনা, তনিমা আমাকে হাল্কা করার জন্য কথা শুরু করে দিল...
তনিমা - তারপর ভাইয়া... আপনার সাথে আমার কিন্তু কোন যোগাযোগই হয়না বলতে গেলে, খুব অদ্ভুত, তাইনা?
আমি - হ্যাঁ মানে... পড়াশোনায় বুঝলা...
তনিমা - চাপা মারবেন না একদম!! আপনি আমার এক বান্ধবীর সাথেও ফোনে কথা বলেছেন, শশী, মনে পরে? তখন আপনার পড়াশোনা ছিলোনা না?
শশী যে তনিমার বান্ধবী আমি তা অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম। আর জানার পর মেয়েটার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। কেননা, মেয়েটার সাথে আমার কথাবার্তা স্বাভাবিকতা ছাড়িয়েও কিছুটা উগ্রতার, কিছুটা নিষিদ্ধের পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। সেটা সমস্যা নয়, তবে আমি চাইনি তা তনিমা জানুক কেননা তনিমা জানা মানেই রাসেল জানা আর রাসেল জানা মানেই বন্ধুমহলে পচানি খাওয়া...!
আমি - শশী? কই নাহ ... কে এইটা?
তনিমা - আচ্ছা, তাই না? ঐ যে, যে মেয়েটার পিঠের মাঝের তিলে আপনি...
এটুকু বলেই ঠোঁটের কোণায় হাসি মাখিয়ে রিক্সার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়... চাপা হাসিটা বোঝা না গেলেও রিক্সার ঝাকুনির মাঝেও বুঝে নিতে পারি যেন ওর শরীরের স্পর্শ থেকে! এমনিতেই আজ একের পর এক অদ্ভুত সব কাহিনী ঘটে যাচ্ছে আজ, এরপর আবার ও এমন একটা কথা বলল যা শুনে আমি লজ্জায় যেন মিশেই যাচ্ছিলাম তখন। শশী মেয়েটা যে কি না! তাহলে কি ও সব, স-অ-ব বলে দিয়েছে? আমি যেন শুধু ছুতো খুঁজছিলাম রিক্সা থেকে নেমে তনিমার হাত থেকে বাঁচবার। তাহলে হয়তো রাসেলও জানে এগুলো। আমি যে কারণে শশীর অনেক কাছে গিয়েও কোন রকম অঘটন ঘটাই নি, নিজেকে সাদা রাখতে চেয়েছি... সেই সাদা রঙতো দেখছি কবেই ধূসর রঙ ধারণ করে বসে আছে! আমি মাথা নিচু করে চুপ করে থাকি। বাকি পথ আমাদের মাঝে আর কোন কথা হয়না... একসময় ও নীরবতা ভেঙে বলে, ভাইয়া আপনার মাসুদের বাসা কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে! আমি সম্বিৎ ফিরে পাই, নেমে যাই রিক্সা থেকে। ওর দিকে তাকিয়ে বলি যে মাসুদের পড়ানো শেষ হলেই আমি আসছি, ও যেন প্রস্তুত হয়ে থাকে। রাসেল আজ একটা পরীক্ষা নিতে বলেছে ম্যাথের! ও যা উত্তর দেয় শুনে আমি কিছুটা বোবা হয়ে যাই যেন,... অন্তত ক্ষণিকের জন্যতো বটেই...! ও বলে ওঠে...
'পরীক্ষা?! আর কত ভাইয়া... এর চেয়ে আজ বরং শশীকে চেনেন কি না সেটাই জানা যাবে..." বলা শেষেই, রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বলে। তনিমার ঠোঁটে আমি তখনও বাঁকা হাসিটা দেখতে পাই যেন...! অদ্ভুত এক হাসি...!
লাইব্রেরী থেকে বই এনে প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত বেশ কিছু টপিক কভার করে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে সকালের দিকে ঘুমে ঢলে পরছি মাত্র, ওমনি মাসুদের ফোন। মাসুদ ক্লাস ফাইভের ছাত্রটির নাম। আমি আজ কখন যাব সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাই, এত সকালে এই পিচ্চি ফোন করেছে! মানে কি! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যেন আমার অবাক হবার মাত্রা আরও বেড়ে যায়, একটু আগের ৬টায় থাকা ঘন্টার কাঁটাটা নির্লজ্জ্বের মত ৬কে ছেড়ে দিয়ে যেন এখন ৯এর গলা ধরে ঝুলছে! কুম্ভকর্ন হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো ভেবে নিজের মনেই একটু হেসে মাসুদকে বলে দিলাম, 'এইতো আসছি! এক ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাব।' দ্রুত বিছানা ছাড়লাম। প্রচন্ড আলসেমি হচ্ছিল। তিন তিনটে টিউশনির ভার মাথায় নিয়ে বিছানা থেকে নামা কি চাট্টিখানি কথা!
আমি থাকি মিরপুরে। ছোটবেলা থেকেই এই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নই, ভাড়া থাকি। তবুও এলাকার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষন জন্মে গিয়েছে। যাই হোক, মাসুদের বাসা মিরপুর ১৪তেই, যাওয়া খুব একটা কষ্ট হবেনা। আরও মজার বিষয় হচ্ছে মাসুদের বাসার ওদিকেই তনিমাদের বাসা, তাই এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে আজ। বাসা থেকে বের হয়ে মেইন রোড থেকে লেগুনায় উঠে মিরপুর দশের গোল চত্তরে পৌছতেই দেখি খালি বাহন দাঁড়িয়ে আছে। কোন রকম লেগুনার ভাড়া মিটিয়ে বাহনে উঠেই জানলার পাশে থাকা দুই সিটের একটা বসে পড়লাম। বাস ছাড়তে এরা খুবই দেরি করে! পারলে যেন লোক কিছু ছাদেও তোলে তবে কিছু যাত্রীর রক্তচক্ষু প্রদর্শনের কারণেই হয়ত এমনটা করে সাহস পায়নি এরা! বসে থাকতে থাকতে যখন বিরক্তির সীমা তুঙ্গে তখন চিন্তা করলাম খ্যাতা পুরি এই বাসের, এর চাইতে রিক্সা নিয়েই যাওয়া যাক আজ। যেই ভাবা সেই কাজ, বাস থেকে নেমেই দেখি এক রিক্সা ওয়ালা খুব অলস ভঙ্গিতে হুড তুলে রিক্সার সিটে বসে স্যাডেলে পা রেখে বিড়ি টানছেন! আমি জানতাম তিনি যাবেন না, তবুও বৃথা চেষ্টা করলাম।
আমি - মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - নাহ!
আমি - মামা আমার খুব তাড়া ছিল, এই এখানেই যাবো। ১৫টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিব মামা, চলেন না প্লিজ।
রিক্সাওয়ালা - নাহ! আমি খাইতে যামু...
ধূর বলে প্রচন্ড বিরক্তিতে রিক্সার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি অন্য রিক্সার জন্য! দিনের শুরুটাই ছিল অদ্ভুত, আমি আর এর বেশিই কিই বা আশা করতে পারি! ফাকিং রিক্সাওয়ালা ডুড! - এসব হাবিজাবি ভাবছিলাম, হঠাত এক মেয়ে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল,
মেয়েটা - এই খালি যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - কই যাইবেন?
মেয়েটা - সাড়ে ১৪।
রিক্সাওয়ালা - ২০ টাকা।
মেয়েটা - ১৫ টাকার ভাড়া, গেলে বলেন।
রিক্সাওয়ালা - দুপুর বেলা... রোইদ মেলা আফা...
মেয়েটা - না গেলে নাই, একটা টাকাও বেশি দিতে পারব না!
রিক্সাওয়ালা - উঠেন...
আমি এতক্ষণে অন্যদিকে তাকিয়ে শুনছিলাম! এখন যখন দেখলাম রিক্সাওয়ালা যেতে রাজী তখন মেজাজটা আর সামলে রাখতে পারলাম না।
আমি - ঐ মিয়াঁ, আমি ২০ টাকা দিতে চাইলাম, নামতামও আগে, আপনি কইলেন খাইত যাইবেন। আর এখন মাইয়া মানুষ পাইয়া ১৫ টাকাতেই...
বলতে বলতেই মেয়েটার দিকে আমার চোখ পরে, আমি যেন অনেকটা কুঁচকেই যাই! রিক্সায় তনিমা বসা। উঠে হুড তুলছিল, আমায় আগে দেখেনি। আমতা আমতা করতে থাকি... রিক্সাওয়ালা নির্বিকার...! হঠাত মেয়েটার কন্ঠ যেন কানের পর্দায় এসে বাড়ি খায়...
তনিমা - আরে, রওনক ভাই...
আমি - তু...তুমি? কই যাও?
তনিমা - বাসায় যাইই! আর কই যাবো? আপনি এইখানে কি করেন?
আমি - মাসুদকে পড়াতে যাচ্ছিলাম...
তনিমা - ও ঐ পিচ্চিটা! এরপর কি আমাকে অংক দেখাতে আসবেন নাকি আজকে না?
আমি - না আসব, সমস্যা নেই!
তনিমা - মাসুদদের বাসাতো আমার বাসার আগেই পরে, চলেন আপনাকে নামিয়ে দেই।
আমি - না না থাক...
তনিমা - আরিইই... থাকবে ক্যান! উঠেন বলতেছি...
... বলেই তনিমা একপাশে সরে আমাকে জায়গা করে দেয়। আমি তখন নিরুপায়, আবার মনে মনেও খুশী! খুশীটা সময়মত রিক্সা পাওয়ার যতটা না তার চাইতেও বেশি ঐ রিক্সাওয়ালার রিক্সায় উঠতে পারাটা, তাও আবার ৫টাকা কমে ডাবল ওজন! সাংঘাতিক একটা লুক দিলাম ব্যাটার উপর, এরপর মনে মনে 'মু-হা-হা' হাসি তুলে উঠে পড়লাম রিক্সায়! রিক্সা ছাড়ল।
আমি কখনো, রিক্সায় আমার মা-খালা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে উঠিনি, তাই খুব জড়তা হচ্ছিল। আর তার উপর তনিমা রাসেলের প্রেমিকা, তাই জড়তার মাত্রা যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সেটা বুঝতে পেরেই কিনা, তনিমা আমাকে হাল্কা করার জন্য কথা শুরু করে দিল...
তনিমা - তারপর ভাইয়া... আপনার সাথে আমার কিন্তু কোন যোগাযোগই হয়না বলতে গেলে, খুব অদ্ভুত, তাইনা?
আমি - হ্যাঁ মানে... পড়াশোনায় বুঝলা...
তনিমা - চাপা মারবেন না একদম!! আপনি আমার এক বান্ধবীর সাথেও ফোনে কথা বলেছেন, শশী, মনে পরে? তখন আপনার পড়াশোনা ছিলোনা না?
শশী যে তনিমার বান্ধবী আমি তা অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম। আর জানার পর মেয়েটার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। কেননা, মেয়েটার সাথে আমার কথাবার্তা স্বাভাবিকতা ছাড়িয়েও কিছুটা উগ্রতার, কিছুটা নিষিদ্ধের পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। সেটা সমস্যা নয়, তবে আমি চাইনি তা তনিমা জানুক কেননা তনিমা জানা মানেই রাসেল জানা আর রাসেল জানা মানেই বন্ধুমহলে পচানি খাওয়া...!
আমি - শশী? কই নাহ ... কে এইটা?
তনিমা - আচ্ছা, তাই না? ঐ যে, যে মেয়েটার পিঠের মাঝের তিলে আপনি...
এটুকু বলেই ঠোঁটের কোণায় হাসি মাখিয়ে রিক্সার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়... চাপা হাসিটা বোঝা না গেলেও রিক্সার ঝাকুনির মাঝেও বুঝে নিতে পারি যেন ওর শরীরের স্পর্শ থেকে! এমনিতেই আজ একের পর এক অদ্ভুত সব কাহিনী ঘটে যাচ্ছে আজ, এরপর আবার ও এমন একটা কথা বলল যা শুনে আমি লজ্জায় যেন মিশেই যাচ্ছিলাম তখন। শশী মেয়েটা যে কি না! তাহলে কি ও সব, স-অ-ব বলে দিয়েছে? আমি যেন শুধু ছুতো খুঁজছিলাম রিক্সা থেকে নেমে তনিমার হাত থেকে বাঁচবার। তাহলে হয়তো রাসেলও জানে এগুলো। আমি যে কারণে শশীর অনেক কাছে গিয়েও কোন রকম অঘটন ঘটাই নি, নিজেকে সাদা রাখতে চেয়েছি... সেই সাদা রঙতো দেখছি কবেই ধূসর রঙ ধারণ করে বসে আছে! আমি মাথা নিচু করে চুপ করে থাকি। বাকি পথ আমাদের মাঝে আর কোন কথা হয়না... একসময় ও নীরবতা ভেঙে বলে, ভাইয়া আপনার মাসুদের বাসা কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে! আমি সম্বিৎ ফিরে পাই, নেমে যাই রিক্সা থেকে। ওর দিকে তাকিয়ে বলি যে মাসুদের পড়ানো শেষ হলেই আমি আসছি, ও যেন প্রস্তুত হয়ে থাকে। রাসেল আজ একটা পরীক্ষা নিতে বলেছে ম্যাথের! ও যা উত্তর দেয় শুনে আমি কিছুটা বোবা হয়ে যাই যেন,... অন্তত ক্ষণিকের জন্যতো বটেই...! ও বলে ওঠে...
'পরীক্ষা?! আর কত ভাইয়া... এর চেয়ে আজ বরং শশীকে চেনেন কি না সেটাই জানা যাবে..." বলা শেষেই, রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বলে। তনিমার ঠোঁটে আমি তখনও বাঁকা হাসিটা দেখতে পাই যেন...! অদ্ভুত এক হাসি...!