Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller চন্দ্র কথা - তমালের গোয়েন্দাগিরি
#14
সবাই তমালের কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়লো। গার্গী চট্‌পট্ রাতের খাবার এর ব্যবস্থা করে ফেললো… তারপর তার বাবাকে খাইয়ে নিজেরাও খেয়ে নিলো। রাত ১০টা বাজতে না বাজতেই সবাই চলে এলো উঠানে।

তমাল বললো… মাঝ রাতের আগে একটা জিনিস একটু পরীক্ষা করে নিতে চাই। শালিনী জিজ্ঞেস করলো… কী জিনিস বস্?

তমাল বললো… ঘোড়াটা বাঁ দিকে ঘোরে কী না?

গার্গী আর কুহেলি এক সাথে বললো… কিভাবে ঘুরবে? কাল রাতেই তো ভুল করে বাঁ দিকে ঘোরাবার চেষ্টা করেছিলাম?

তমাল মাথা নেড়ে বললো… জানি… তবুও একবার নিশ্চিন্ত হতে চাই। যতদূর বুঝতে পারছি… বিখ্যাত কোনো প্রযুক্তিবিধকে দিয়ে একটা জটিল টেকনোলজী ব্যবহার করা হয়েছে ঘোড়াটার ভিতর।

একবার ডান দিকে ঘরানোর পরে বাঁ দিকের লক্ টা খুলেও যেতে পারে। মনে করে দেখো… সূত্রে বলা আছে ” ডাইনে এবং বাঁয়ে ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাও”। বাকি তিনজনই এবার যুক্তিটা মেনে নিলো। আবার সেই বাঁশটা নিয়ে আসা হলো।

ঘোড়ার পায়ের ফাঁকে সেটা ঢুকিয়ে ৪ জনে দুটো দল এ ভাগ হয়ে বাঁশ এর দুপ্রান্তে বিপরীত মুখী চাপ দিয়ে ঘোরাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু ঘোড়া এক চুলও ঘুরলো না। অনেক রকম ভাবে জোর খাটিয়ে তমাল নিশ্চিত হলো… কোনো মতেই ঘোড়া সম্ভব না।

তারা ফিরে এসে মাটিতে বসে পড়লো। তমাল চিৎ হয়ে শুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো। বাকিরা চুপ করে তাকে চিন্তা করার সুযোগ দিলো। তমালকে গভীর ভাবে চিন্তা করতে দেখে শালিনী ছোট করে একবার তমালের বাঁড়াটা তারপর গার্গী আর কুহেলির দিকে তাকিয়ে নিলো।

তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আপন মনেই দুপাশে মাথা নাড়লো। তমাল তার নিঃশ্বাস ছাড়ার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। তারপর উঠে পরে বললো… চলো।

সবাই তমালের পিছন পিছন সেই গর্তের মুখের কাছে এলো। তারপর তমালের নির্দেশে চারজন মিলে ছোট পাথরটা টেনে সরিয়ে গর্তের মুখটা খুলে ফেললো। গার্গী আর কুহেলিকে বাইরে রেখে দুটো টর্চ নিয়ে তমাল আর শালিনী নেমে গেলো নীচে।

দুজনে সেই কলসি খোদাই করা পাথর তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনেক্ষন ধরে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলো তমাল। সে ধারণা করলো এটা কোনো আলগা পাথর বা টাইল… যেটা বসানো আছে। পকেট থেকে নাইফটা বের করে পাথরটার চারপাশের সিমেন্ট গুলো খুঁচে তোলার চেষ্টা করলো সে।

কিছুক্ষন খোঁচা খুঁচির পরে হতাশ হলো তমাল। তার ভুরু দুটো কুঁচকে গেলো। সে পরে থাকা একটা পাথর টুকরো দিয়ে আঘাত করলো পাথরটার উপরে… শব্দই বলে দিলো, নিরেট পাথর এটা… ফাঁপা নয় পিছনে।

শালিনী বললো… ব্যাপার কী বস্? কোনো সিমেন্ট বা সুরকী তো নেই চারপাশে… তাহলে পাথরটা আটকে আছে কিভাবে দেয়ালে?

তমাল বললো… আমিও ঠিক সেটাই ভাবছি শালী। রহস্যটার পরতে পরতে আরও রহস্য… এত জটিল কেস আগে পেয়েছি বলে তো মনে হয়না।

শালিনীও বললো… না… পাইনি এর আগে। পরাজিত সৈনিক এর মতো বাইরে বেরিয়ে এলো দুজনে। তাদের মুখ দেখেই বুঝে গেলো গার্গী আর কুহেলি… কী হলো? খারাপ কিছু? বললো কুহেলি।

তমাল বললো… খুব খারাপ। সকাল থেকে যেটা ভেবেছিলাম মিললো না সেটা। পাথরটা কে খসাতেই পারলাম না।

গার্গী বললো, খুব শক্ত করে আটকানো বুঝি? ভেঙ্গে ফেললে হয়না?

তমাল বললো… না, নিরেট পাথর… ভাঙ্গাও সম্ভব না। হয়তো আমরা ভুল দিকে চিন্তা করছি… এটা হয়তো সঠিক দিক নয়।

কুহেলি বললো খোলা, ভাঙ্গা, ঠেলে সরানো… কিছুই করা গেলো না?

এত জোরে চমকে উঠে কুহেলির দিকে তাকলো তমাল… যে তার কাঁধের ব্যথাটা টন টন করে উঠলো। সে বললো… কী বললে তুমি? ঠেলে সরানো? ওয়াও ! ইউ আর ব্রিলিয়ান্ট কুহেলি… জাস্ট আমেজিং… না তোমাকে আমার সহকারী বানতেই হবে… আলগোছে… খেলার ছলে এমন সব কথা বলো… যে রহস্যের জটই খুলে যায়। প্রথমে বাংলা ব্যাকারণ এর আ-কার… আর এবার ঠেলে সরানো !

এই রহস্যটার অর্ধেক তুমিই সমাধান করলে কুহেলি…ওটাই হবে… এক মাত্র ঠেলে সরানো যাবে পাথরটাকে… আর কিছুই হতে পারে না… থ্যাঙ্কস, তোমাকে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস… বলেই তার গালে চকাস করে একটা চুমু খেলো তমাল…। চাঁদ এর আলোর নীচে না থাকলে কুহেলির গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে ওঠা সবাই দেখতে পেত।

তমাল বললো সবাই নীচে চলো এবার… আমাদের দুজনে কাজ হবে না… চারজনের শক্তিই লাগবে মনে হচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে সাবধানে নেমে এলো তারা। তারপর পাথরটাতে হাত লাগিয়ে গায়ের সব জোর দিয়ে ঠেলতে শুরু করলো চারজনে।

প্রথমে কিছুই হলোনা… তারপর হঠাৎ নড়ে উঠলো পাথরটা। একটু একটু করে সরে যেতে লাগলো পিছন দিকে। উত্তেজনায় দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা চারজনের। ততোক্ষন পর্যন্ত তারা পাথরটাকে ঠেলতে লাগলো যতক্ষন সেটা পুরোপুরি থেমে না যায়।

একটা ২ফুট/২ফুট চারকোনা গর্ত তৈরী হলো দেয়ালে। ভিতরে টর্চ মারতেই নীচের দিকে আর একটা গর্ত দেখা গেলো। তার ভিতরে একটা ধাতব চাকা দেখা গেলো… অনেকটা গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল এর মতো দেখতে।

তমাল টর্চ দুটো গার্গী আর কুহেলিকে ধরিয়ে দিয়ে শালিনীকে নিয়ে স্টিয়ারিংটা ঘোরাতে চেষ্টা করলো। অনেক দিন পরে থাকার জন্য চাকাটা খুব জমে গেছে। এদিকে ওদিকে ঘুরিয়ে চাপ দিতে দিতে এক সময় একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করলো চাকা।

গার্গী আর কুহেলি নিজেদের কৌতুহলকে সামলে না রাখতে পেরে প্রায় শালিনী আর তমালের ঘাড়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ একটা যান্ত্রিক “ক্লিক” শব্দ করে থেমে গেলো হুইলটা।

শব্দটা কানে যেতেই নিজেদের অজান্তে হই হই করে উঠলো গার্গী আর কুহেলি… যেন মনে হলো… এই মাত্র ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে বিপক্ষ দলের লাস্ট উইকেটটা ফেলে দিলো। তমাল পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বললো… চলো উপরে যাওয়া যাক। আনন্দে প্রায় লাফাতে লাফাতে উপরে উঠে এলো সবাই।

তারপর সবাই মিলে ঘোড়াটাকে বা দিকে ঘরানোর জন্য চাপ দিলো… দিয়েই গেলো… দিয়েই গেলো। তারপর বুঝলো নাড়বে না ঘোড়া। মনে হলো যেন আকাশের চাঁদটা কে কপ্ করে কেউ গিলে ফেলে জগৎটা কে অন্ধকারে ঢেকে দিলো… এমন অবস্থা হলো ওদের মুখের।

এতক্ষণ এর আনন্দ এবার সত্যি সত্যি গভীর হতাশায় তলিয়ে গেলো।এক মাত্র তমাল ছাড়া বাকি তিনজন মাথায় হাত দিয়ে ঘোড়ার পায়ের নীচে বসে পড়লো। সময় বয়ে চলেছে… ১২টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই… এখনই এই জটিল ধাঁধার সমাধান বের করতে না পারলে আবার ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ভিতরে ভিতরে ভীষণ অস্থির হয়ে উঠলো তমাল। পায়চারি করে বেড়াতে লাগলো সে, কখনো মুখ আকাশের দিকে তুলে… কখনো বুকে ঘাড় গুঁজে। মাথার ভিতর ঝড় বয়ে চলেছে তার।

সময় নেই… বেশি সময় নেই হাতে… সমাধান তাকে পেতে হবে… এভাবে হেরে যেতে পারে না তমাল… জিততে তাকে হবেই… কিছুতে হারবে না সে…।! বাকি তিনজন চুপ করে তমালের অস্থিরতা লক্ষ্য করছে… তমালের মাথার ভিতর দুটো লাইন আটকে যাওয়া কলের-গান এর মতো বার বার বেজেই চলেছে…। “উল্টো সোজা দুইই সঠিক… দুটো থেকেই শিক্ষা নাও/ ডাইনে এবং বাঁয়ে ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাও”। থমকে দাঁড়ালো তমাল।

তারপর শালিনীকে জিজ্ঞেস করলো… শালী… হুইলটা কোন দিকে ঘুরিয়েছিলাম আমরা?

শালিনী একটু চুপ করে ভেবে নিয়ে বললো… ডান দিক।

তমাল চেঁচিয়ে উঠলো… “ইয়েসসসস”। তারপর বিচ্ছিরি ৩/৪টে গালাগালি দিলো।

গার্গীর দিকে ফিরে বললো… তোমাদের পূর্বপুরুষদের কী জিলিপির দোকান ছিল নাকি? পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রহস্যটাকে জিলিপি বানিয়ে ছেড়েছে একেবারে… চলো আবার নীচে। আজ জিলিপি খেয়ে হজম করেই ছাড়ব। আবার নেমে এলো তারা মাটির নীচের ঘরটায়।

হুইল এর কাছে গিয়ে আগের মতই শালিনী আর তমাল ঘোরাতে শুরু করলো… তবে এবার উল্টো দিকে। একবার ঘুরে যাওয়া প্যাচ গুলো সহজে ঘুরে চাকা আবার টাইট হলো… তমাল বুঝলো যতটা ঘুরিয়েছিল সেটা আবার উল্টো ঘোরানো হয়ে গেছে, তারা বা দিকে ঘরানোর জন্য চাপ দিলো এবার… এবং হুইল ঘুরতে শুরু করলো… আস্তে আস্তে তমালের মুখটা হাসিতে ঝলমল করে উঠলো, বাঁ দিকে কিছুক্ষণ ঘরানোর পরে আবার “ক্লিক” শব্দটা পাওয়া গেলো।

তমাল বললো… চলো… এবার ঘোড়ার বাপও ঘুরবে বাঁ দিকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তমাল বললো… বুঝলে শালিনী… এই কবিতাটার বিশেষত্ব হচ্ছে প্রত্যেক লাইন এর অর্থ একাধিক বার ভাবতে হবে, দুটো বা তিনটে সূত্র লুকানো প্রত্যেকটা লাইনে। উফফ্ফ ধন্য তুমি চন্দ্রনাথ ! বেঁচে থাকলে তোমাকে ভারত-রত্ন দেবার জন্য সুপারিশ করতাম !

বাঁশ এর উপর ১,২…৩ বলে এক সাথে সবাই মিলে চাপ দিতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে বাঁ দিকে ঘুরতে শুরু করলো ঘোড়া। হই হই করে উঠলো সবাই। ঘড়িতে তখন ১২টা বেজে ৫ মিনিট হয়েছে। ঘোড়াটা এবার আগের মতো ৯০ ডিগ্রী ঘূরলো না।

চাঁদ এর সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট কোন তৈরী করে ঘোরা বন্ধ করলো ঘোড়া।ওরা চারজন একটু পিছিয়ে এসে ছায়াটা লক্ষ্য করলো… আর উত্তেজিত হয়ে উঠলো। এবারে কলসির মতো নয়… ঘোড়ার মাথা আর দুটো ছড়ানো কান মিলে একফালি চাঁদ এর মতো ছায়া তৈরী করেছে। ঠিক মনে হচ্ছে যেন আকাশ এর চাঁদ এর একটা প্রতিচ্ছায়া পড়েছে মাটিতে, আকাশেরটা রূপালী আর মাটিরটা কালো।

তমাল আগের দিনের মতো একটা লাঠি দিয়ে ছায়াটার চারদিকে একটা  বৃত্ত একে দিলো।

তারপর কোদাল দিয়ে নুড়ি পাথর সরাতে শুরু করলো। এরপর সব কিছু যেন গত রাতের রিপীট টেলিকাস্ট হচ্ছে, বড় চৌকো পাথর বেরলো… তমাল জানে কী করতে হবে, চারজন মিলে পাথর সরিয়ে নীচে ছোট চারকোণা পাথর পেলো, সেটাকে সরিয়ে একটা গর্ত-মুখ পাওয়া গেলো… এখানেও ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে। তমাল জানে সে রহস্যের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছে… তাই কাল রাতের ভুল আজ আর করলো না।

মিনিট ৩০ অপেক্ষা করে কাগজ জ্বালিয়ে অক্সিজন লেভেল পরীক্ষা করে বাইরে গার্গী আর শালিনীকে রেখে কুহেলিকে নিয়ে নীচে নেমে গেলো। শালিনী আর গার্গীকে রাখার কারণ, শালিনীকে আনআর্মড কমব্যাটে হারানো সোজা নয়… আর গার্গী স্থানিয়ও কেউ হলে ঠিক চিনতে পারবে।

বেশ কিছুক্ষণ হলো তমাল আর কুহেলি নীচে নেমেছে… তাদের উঠে আসতে দেরি হচ্ছে দেখে ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠলো শালিনী আর গার্গী। কিছুক্ষণ পরে উঠে এলো তমাল… শালিনী বললো… কী হলো বস্? পেলেন কিছু?

তমাল বললো… না, এখনো পাইনি…তবে বুঝতে পেরেছি কোথায় আছে। কোদালটা দাও তো… কোদাল নিয়ে তমাল আবার নীচে নিয়ে গেলো… আবার অস্থির ভাবে অপেক্ষা করতে লাগলো গার্গী আর শালিনী। নীচে নেমে তমাল আর কুহেলি প্রথমে কিছুই দেখতে পেলো না। আগেরটার মতই একটা রূম এটাও… তবে একদম ফাঁকা।

কুহেলি বললো… যাহ্ ! কিছুই তো নেই তমালদা?

তমাল বললো… আছে, অবশ্যই আছে, খুঁজতে হবে।

কুহেলি বললো… যদি আমাদের আগেই কেউ বের করে নিয়ে থাকে চুপিসারে?

তমাল হেসে বললো… আগের ঘরটায় না ঢুকে এ ঘরে ঢোকা সম্ভব না। যদি আগেই কেউ নিয়েই থাকতো তাহলে আগের ঘরে ওই মোহরের থলিটা রেখে গেলো কেন? খুব নির্লোভ চোর বলছো? যুক্তিটা বুঝে মাথা নাড়লো কুহেলি।

তমাল আবার বললো… আর দেয়াল এর পাথরটার কথা ভাবো… যেটার নীচে হুইল ছিল… সেটা একবার ঠেলে সরিয়ে দিলে আর আগের জায়গায় আনা যাবেনা…ওয়ান টাইম ইউজ মেকানিজম। সেটা তো অক্ষতই ছিল। সুতরাং ভুল ভাল না ভেবে ভালো করে খোঁজো। টর্চ মেরে মেরে তমাল আর কুহেলি ঘরটা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেলো না। ভিতরে ভিতরে হতাশা গ্রাস করতে শুরু করেছে তমালকে… এমন সময় ছোট্ট একটা হোঁচট খেলো কুহেলি।

টর্চ মেরে ধুলোতে ঢাকা মেঝেতে তেমন কিছুই পেলো না যার সাথে হোঁচট লাগতে পরে। তমাল নিচু হয়ে ভালো করে দেখলো জায়গাটা… তারপর হাতের টর্চটা মাটিতে শুইয়ে দিলো। টর্চ এর আলো মেঝে বরাবর সোজা পড়তে তারা বুঝতে পারল… মেঝের মাঝখানটা উঁচু। তমালের মুখে হাসি ফুটে উঠলো… সে কুহেলি কে বললো… দাঁড়াও… আমি কোদালটা নিয়ে আসি… খুঁড়তে হবে…।

কুহেলি বিড়বিড় করলো… ” কোথায় মাথা খুঁড়তে হবে”……

কোদাল এনে মেঝের মাঝখানে খুঁড়তে শুরু করলো… এক ফুট মতো খোড়া হতেই ঘটাং করে ধাতুতে ধাতুর বাড়ি খাবার আওয়াজ উঠলো। ইয়াহুউউউউ…।!!! বলে এমন জোরে চেঁচিয়ে উঠলো কুহেলি যে উপর থেকে শালিনী আর গার্গীও শুনতে পেলো সেই চিৎকার। ওরাও বুঝতে পারল অবশেষে গুপ্তধন পাওয়া গেছে… দুজন দুজনকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো শালিনী আর গার্গী। খুব সাবধানে খুঁড়লো তমাল। একটা ছোট্ট বাঁধানো চৌবাচ্চার মতো জায়গা… মাটি দিয়ে বন্ধ করে রাখা ছিল।
আস্তে আস্তে মাটি সরিয়ে বেরলো দুটো পিতল এর কলসি… আর বড় একটা লোহার বাক্স। তমালের বুকের ভিতরটা এত কাঁপতে শুরু করেছিল যে ঠিক মতো কোদালও চালাতে পারছিল না। কলসি দুটো তবু দুজন মিলে উঁচু করতে পারল অনেক কষ্টে… কিন্তু বাক্সটা নাড়তে পারলো না তমাল আর কুহেলি।

একটা কলসি দুজনে ধরাধরি করে উপরে নিয়ে এলো। তাদের কলসি নিয়ে উঠতে দেখে গার্গী আর শালিনী আনন্দে লাফাতে লাগলো। তমাল ইশারায় তাদের চুপ করতে বললো… তারপর বললো… আরও আছে… চেঁচিও না… কেউ এসে পড়লে বিপদ হয়ে যাবে।

অনিচ্ছা সত্বেও গার্গী আর শালিনী নিজেদের সামলে নিলো। গর্তের মুখে ওদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে তমাল আর কুহেলি কলসিটা তমালের ঘরে রেখে আবার ফিরে এলো। দ্বিতীয় কলসিটাও একই ভাবে উপরে রেখে দরজায় তালা মেরে নেমে এলো কুহেলি আর তমাল।

এবার আর দুজনে হবে না…। গার্গী আর শালিনীকে নিয়ে চারজনে পাতাল ঘরে প্রবেশ করলো। এত বড় বাক্স দেখে শালিনী বললো… ওহ্ গড ! এততও বড়? তারপর অনেক কষ্টে চারজন মিলে বাক্সটা টানতে টানতে দোতলায় তমালের ঘরে এনে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

ধপাস্ করে বসে পড়লো তমাল… শালিনীকে বললো জানালা গুলো বন্ধ করে পর্দা টেনে দাও… আলো যেন বাইরে না যায়… বলে সে একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সবাই যখন কলসি আর বক্সের ভিতর কী আছে দেখার জন্য ছটফট করছে… তখন তমালকে আরাম করে শুয়ে নিশ্চিন্তে সিগারেট টানতে দেখে রেগে গেলো কুহেলি… বললো… এই তোমার বড্ড দোষ তমালদা… আমরা মরে যাচ্ছি কৌতুহলে… আর তুমি এখন শয়তানি শুরু করলে…ওঠো ওঠো… জলদি খোলো।

তমাল নিজের প্যান্ট এর বেল্ট খুলতে শুরু করতেই কুহেলি দৌঁড়ে এসে তার বুকে দমাদম কিল মারতে মারতে বলতে লাগলো… পাজি, শয়তার… বদমাশ ! অন্যরা হেসে লুটপুটি হচ্ছে ওদের কান্ড দেখে।

তমাল বললো… ” অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো ইন্দু-সম সহনশীল/ কেমনে সে জোৎস্না পেতে জমায় আলো তিল তিল”।

কুহেলি বললো… ইয়ার্কি রাখো… প্লীজ এবার কলসির মুখটা খোলো… আর অপেক্ষা করতে পারছি না।

তমাল উঠে এলো। কলসি দুটোর মুখ একটা ধাতুর ঢাকনা উপর গালা দিয়ে আটকানো। তমাল পকেট থেকে নাইফটা বের করে আস্তে আস্তে গালা সরিয়ে ফেললো। ঢাকনাটা তুলে ম্যাজিশিয়ান যেভাবে তার শেষ ট্রিক দেখায়… সেভাবে এক ঠেলায় কাত করে দিলো একটা কলসি।

জলতরঙ্গের মতো শব্দ করে ঝর্নার জলের মতো সোনালী ধারা তৈরী করে মেঝেতে গড়িয়ে নামতে লাগলো…। রাশি রাশি সোনার মোহর। পুরো কলসিটা উপুড় করে দিতে একটা ছোট খাটো স্তুপ তৈরী হলো মোহরের। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেনা… মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে ঝিকমিক করতে থাকা ১০০ বছরের পুরানো মোহর গুলোর দিকে।

দ্বিতীয় কলসিটাও ওই স্তুপ এর উপর উজাড় করে মোহরের পাহাড় বানিয়ে ফেললো তারা। এত সোনা এক সাথে দেখবে, জীবনে কল্পনাতেও ভাবেনি ওরা চারজন। তমাল বললো… গার্গী… নাও… ” কনক প্রভায় ভরাও জীবন… সঠিক শ্রম আর কাজ এ “… অনেক শ্রম করেছ… তোমার দুঃখের দিন আজ থেকে শেষ। তবে এই শেষ না… এখনো আলো ফোটা বাকি। বুঝতে না পেরে সবাই তমালের দিকে তাকলো।


তমাল বললো…” ভয় পেয়ো না অন্ধকারে…ফুটবে আলো চন্দ্রহারে”….  অমি চন্দ্রহারটা দেখার জনো উতলা হয়ে আছি।  আমার ধারণা সেটার মুল্য এই মোহর গুলোর চাইতে কম হবে না।  তমাল এগিয়ে গেলো বাক্সটার কাছে।বাক্সটায় একটা লোহার তালা ঝুলছে।  কিন্তু মাটির নীচে থাকতে থাকতে সে নিরাপত্তা  দেবার শক্তি হারিয়েছে। গার্গী একটা হাতুড়ি  নিয়ে এলে তমাল ছোট বাড়ি মারতেই তালা খুলে গেলো।খুব আস্তে অস্তে তমাল ডালাটা খুলে ফেললো… বাকিরা নিজেদের দম বন্ধ করে রেখেছে।একটা মখমলের কাপড় দিয়ে ঢাকা দেওয়া রয়েছে ভিতরের জিনিস। তমাল মখমলটা সরিয়ে দিতেই চারজনের চোখ ধাঁধিয়ে গেলো।  মনি-মুক্তা খচিত রাশি রাশি গয়না থরে থরে সাজানো রয়েছে বাক্সটার ভিতর।তমালের চোখ সে সব বাদ দিয়ে অন্য কিছু খুঁজতে লাগলো, কিন্তু দেখতে পেলো না।  সে একটা একটা করে গয়না বের করে মেঝেতে রাখতে লাগলো। বাক্স এক সময় ফাঁকা হয় গেলো… চন্দ্রহারের দেখা নেই।

গার্গী কুহেলি আর শালিনী নিজদের ভিতর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। তমাল চুপ করে তাকিয়ে রইলো বাক্সটার দিক। তরপর উঠে একটা ঝাঁটার কাঠি নিয়ে এলো। বাক্সটার বাইরে থেকে উচ্চতা আর ভিতরের গভীরতা মেপে তর মুখটা হাসিতে ভরে উঠলো। ছুরি দিয়ে বাক্সটার নীচের ধাতুর তলাটার সাইড খোঁচাতে শুরু করলো।একটু কষ্ট করতেই ধাতুর তলার পাতটা উঠে এসে নীচে একটা লুকানো কুঠুরি বেরলো….  আর যেটা বেরোলো… সেটা বর্ননা করার ভাষা খুঁজে পেলোনা চারজনের কেউ।  বাক্সের নীচে শুয়ে রয়েছে বিশাল এক চন্দ্রহার!!  নিজের চোখে দেখা তো বাদই দিলো, বড় দোকানের গয়নার বিজ্ঞাপনেও এরকম হার তারা কেউ আগে দেখেনি। বড় বললে রাজকীয় হারটাকে অপমান করা হবে,একমাত্র বিশাল শব্দটাই মানানসই হয়।মনে হলো এমন কোন রত্ন-পাথর ভূ-ভারতে নেই যা খচিত নেই হারটায়!

 এতই তার ঔজ্জ্বল্য যে একনাগাড়ে বেশীক্ষণ তাঁকিয়ে থাকা যায়না, … চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বিরাট একটা নেকলেস তার মাঝে আধুলি সাইজের একটা চুনি বসানো। তাকে ঘিরে আছে পাতার আকারের ছটা পোখরাজ।নেকলেসের নিচেই রয়েছে প্রকাণ্ড একটা লকেট।তার মাঝখানে এক টাকার কয়েনের সাইজের আরো একটা চুনি। তাকে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে মটরদানার সাইজের একসারি হীরে …! তার বাইরে ছ'টা সোনায় বাঁধানো পান্না!আর সব শেষে আরও একটা হীরের বৃত্ত!এই হিরে গুলোর যা সাইজ তার একেকটারই দাম এখনকার বাজারমূল্যে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা!তমাল গুনে দেখল মোট চল্লিশটা এরকম হীরে রয়েছে।নেকলেসটার দুই প্রান্ত থেকে মালার মতো ঝুলে আছে আর একটা হার।কিছু দূর পর্যন্ত নিরেট সোনার কারুকার্য করা অংশ.. আর তাতে আরও বড় বড় চুনি, হীরে, পান্না বসানো।

তারপর শুরু হয়েছে পরপর পাঁচটা চেন,বাইরে থেকে ভিতরে ক্রমশ ছোট হয়েছে। সোনার বল দিয়া তৈরি সেগুলো। সঙ্গে ম্যাচ করা দুটো কানের দুল রয়েছে দুপাশে। ঘরের ভিতর তখন একটা আলপিন পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে… এতোই নিরবতা!নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে সবাই, নির্বাক বিস্ময়ে শুধু দেখে চলেছে চন্দ্রহারটা।  প্রথমিক বিষ্ময় কাটিয়ে উঠে তমাল মনে মনে হিসাব করলো… শুধু চন্দ্রহারটার দামই হবে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।এইজন্য অনুচিত হওয়া সত্বেও সূত্র কবিতায় এটার উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারেননি চন্দ্রনাথ। এবারে তমালের গোয়েন্দা সত্তা জেগে উঠলো। বললো আর না… সব ঢুকিয়ে ফেলো যেখানে যা ছিলো।  তমাল জানে গুপ্তধন উদ্ধার করার চাইতে সেটা রক্ষা করা আরো কঠিন হতে পারে।  দেওয়ালের ও কান আছে।এই নির্জন জনবিরল গ্রামে নিরাপত্তার এতোই অভাব যে সে খুব ভীত হয়ে পড়লো এবার।ওরা আবার তিনজনে কলসি আর বাক্সে মোহর এবং গয়না ঢোকাতে যেতেই বাঁধা দিলো তমাল।বললো… না… ওখানে নয়।তমালের সঙ্গে একটা স্যুটকেস ছিলো....আর শালিনীর সঙ্গে একটা।সে স্যুটকেস দুটো খালি করতে বললো শালিনীকে। তারপর চেপেচুপে সেদুটোর ভিতর ঢোকানো হলো সব। তমাল নিজের হ্যান্ডব্যাগে চন্দ্রহারটা ঢুকিয়ে নিলো।তারপর তারা চুপিচুপি অনেক নুড়ি পাথর এনে কলসি আর বাক্সে ভর্তি করে মুখ বন্ধ করে দিলো।গার্গী, শালিনী আর কুহেলি যখন কলসিতে নুড়ি ঢোকাচ্ছে তখন তমাল একটা ফোন কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কাজ শেষ হলে তমাল গার্গীকে প্রশ্ন করলো, আমাকে তুমি কতোটা বিশ্বাস করো গার্গী? গার্গী বললো…নিজের চাইতে বেশি… কেনো এই প্রশ্ন তমাল দা? তমাল বোলো…তোমার নিরাপত্তার কারণে। আমার আন্দাজ মতে এখানে প্রায় আট থেকে নয় কোটি টাকার সম্পদ আছে।এই গ্রামে এই বিপুল সম্পত্তি আর তুমি নিজে নিরাপদ নও। কাল আমি এগুলো আমার বাড়িতে কলকাতা নিয়ে যাবো কেউ জানার আগে।

তারপর তোমার জন্যে যথেষ্ট নিরাপদ ভাবে এগুলো সুরক্ষিত করলে আমার ছুটি।গার্গী বললো… তমালদা… আজ যা কিছু পেয়েছি… সব তোমার জন্য… তুমি যা ভাল বুঝবে তাই করবে।  তমাল বললো... গুড!  কাল আমার এক পুলিশ ইন্সপেক্টর বন্ধু এসে পুলিশ জিপে আমাদের কলকাতা পৌঁছে দেবে। তোমরা সবাই যাবে আমার সাথে.. তোমার বাবাও।  আর হ্যাঁ… আর একটা ভাল খবর দেই… তৃষা আর সৃজন ধরা পড়েছে। কুহেলি বললো… এতো তাড়াতাড়ি?  কিভাবে তমাল দা? তমাল বললো… এম.এম.এস ডার্লিং… মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং সার্ভিস….আমি ওদের ছবি কায়দা করে আগেই তুলে রেখেছিলাম... অবশ্য সবার ছবিই আছে, তোমার, গার্গীর, শালিনীর... এমন কি তোমার বাবারও। গোয়েন্দা কাউকে বিশ্বাস করেনা সুইটহার্ট! সেই ছবি এম.এম.এস এ পৌঁছে গেছে পুলিশের কাছে, তারপর ক্যাচ কট কট! 

সে রাতে ওদের আর ঘুম হলো না… গুপ্তধন নিয়ে আলোচনা আর আড্ডা মেরেই রাত কেটে গেলো।পরদিন সকালে দুটো পুলিশ জিপ এলো গার্গীদের বাড়িতে। ইন্সপেক্টর মুখার্জি নেমেই জড়িয়ে ধরলো তমালকে।  তমাল তাকে আলদা করে ডেকে গুপ্তধনের কথা বললো…সে বললো…এটা পারিবারিক  সম্পত্তি, আইনগত কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়…তবুও একজন ভালো উকিলের সাথে আলোচনা করে ব্যপারটা পোক্ত করে নেবেন।

তমাল ইন্সপেক্টর মুখার্জিকে ধন্যবাদ জানালো পরামর্শের জন্য। তারপর ইন্সপেক্টর মুখার্জি বললো.. আপনার জন্য উপহার এনেছি গাড়িতে। তমাল বললো… তাই নাকি? দুটোকে এই পর্যন্ত বয়ে এনেছেন?হেসে ফেললো ইন্সপেক্টর… বললো… বুঝে গেছেন?  তবে দুটো নয়… তিনটেকেই এনেছি। তমাল সবাইকে নিয়ে পুলিশ জীপের কাছে চলে এলো। একটা গাড়িতে তৃষা, সৃজন আর অম্বরীশ বসে আছে। তিনজনের হাতেই হাতকড়া পরানো। তোমাল বললো… আরে?  অম্বরদা কে খুলে দিন… ও কোনো দোষ করেনি।সে ভয়ে পালিয়েছিলো।ওর একটা মারামারির কেস আছে… সেটার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল… অম্বরীশদা ক্রিমিনাল নয়। 

ইন্সপেক্টর বললো… কোন মারামারি?তমাল ঘটনাটা বলতেই ইন্সপেক্টর বললো…ধুস! সে ফাইল কবেই বন্ধ হয় গেছে। তারপর কনস্টেবলকে বললো অম্বরের হাতকড়া খুলে  দিতে। অম্বর জীপ থেকে নেমে হাত জোড় করলো তমালের দিকে। তমাল তার দিকে না তাকিয়ে ইন্সপেক্টরকে বললো, তবে এদের দুজনকে একটু আরামে রাখবেন।লাঠির বাড়িটা যদি মাথায় ঠিক মতো লাগতো,আমার ভবলীলা সেদিনই সাঙ্গ হয়ে যেতো। ইন্সপেক্টর মুখার্জি বললো… ভাববেন না… কমপক্ষে ৮/১০ বছর যাতে সরকারি অতিথিখানায় জামাই আদরে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করবো। সৃজন মাথা নীচু করে রইলো… আর তৃষা তমালের দিকে তাকিয়ে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।

একটু পরে মালপত্র সব জীপে তুলে গার্গী, কুহেলি, শালিনী আর নিখিলেশ বাবুকে নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দিলো তমাল। কলকাতায় পৌঁছে প্রথমেই তমাল গার্গীর গুপ্তধনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং আইনগতভাবে তার অধিকার সুরক্ষিত করলো। ট্যাক্স ফাইল খুলে দেওয়া হলো। তারপর ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিখিলেশ বাবুকে অনেকটা চনমনে করে তুললো তমাল।   কুহেলি আর গার্গীর আবদারে থিওরি জ্ঞানের প্রাকটিকাল ক্লাস ও নিয়েছিলো শালিনী আর তমাল একসাথে মিলে…কিন্তু সে প্রসঙ্গ এই গল্পে অবান্তর। যদি কোনো মেয়ে বা বৌদি সেটা জানতে খুব কৌতুহলী হয়,আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে,কোলে বসিয়ে মাই টিপতে টিপতে শোনাবো সেই গল্প… আমার ই-মেইল আইডি হলো kingsuk25; 

এরপরে অনেকদিন কেটে গেছে… কুহেলি এখনও যোগাযোগ রাখে। গার্গীর খবর অনেকদিন পায়নি তমাল।এই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পরে একদিন একটা পার্সেল এলো তমালের ঠিকানায়….! সেটা খুলতেই বক্সের উপরে একটা খাম পেলো তমাল। শালিনী তমালের পাশে এসে বসলো।খাম খুলতেই সুগন্ধ মাখানো দামী কাগজে একটা চিঠি পেলো সে........

তমালদা,
              প্রণাম নিও, তার থেকেও বেশি নিও ভালোবাসা। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে এতো দেরী করার জন্য ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার ওখান থেকে এসে স্টাডিতে জয়েন দিয়েছিলাম। পাশ করার পর খুব ভালো একটা অফার পাই হায়ার স্টাডিজ এর জন্য। তাড়াহুড়ো করে চলে এলাম জার্মানি। তোমাকে জানাতে পারিনি। আসার আগে গরলমুরির বাড়িটা সারিয়ে নিয়েছি। চেষ্টা করেছি পুরানো কাঠামো যতোটা সম্ভব অবিকৃত রাখতে। দাদাকে খানপুরে একটা দোকান কিনে দিয়েছি। সে এখন চুটিয়ে বিজনেস করছে। মাঝে মাঝে অবশ্য দামী মদ খায় এখন। বাবা এখন প্রায় সুস্থ।

তোমাকে ভীষন মিস করি তমালদা! শালিনীদি আর কুহু'কে ও। কোনো এক অজানা পূণ্যের জোরে তুমি এসেছিলে জীবনে। পাঁক থেকে তুলে সিংহাসনে বসিয়ে দিলে। কিন্তু আমার মনের সিংহাসনে বসে আছো শুধু তুমি, শুধুই তুমি তমালদা।

আর একটা কাজ করেছি আমি। সেই রাতটা মনে আছে তমালদা? সেই জঙ্গলে ঘেরা এক চিলতে ফাঁকা জায়গা? সেই জায়গাটা কিনে নিয়েছি আমি। আর স্পষ্ট ভাবে বলে এসেছি জায়গাটা যেন যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকে। আমি ফিরবো তমালদা। দেশে ফিরে আর অন্তত একটি বার যাবো সেখানে। এটা আমার জীবনের সব থেকে দামী ইচ্ছা! আসবে তো তমালদা? তুমি, আমি, কুহু, আর শালিনীদি মিলে আবার গরলমুরিতে কাটাতে চাই বেশ কিছুদিন। শুধু আনন্দ, আর কুহুর গান! ফিরবো আমি তমালদা... তোমার বুকে ফিরবো আমি।

তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার পাঠালাম। সেটা স্বীকার করে আমাকে ধন্য কোরো প্লিজ।অনেক অনেক অনেক ভালোবাসা জনিয়ে আজ শেষ করছি।
                  তোমার ভালোবাসা ধন্য 
                                                     গার্গী।

চিঠি শেষ করে উপহারের বাক্সটা খুললো তমাল। উপরে দেখলো সেই কবিতাটা লেখা। তার নীচে দামী মখমলে মোড়া একটা জুয়েলারি বক্স। ঢাকনা খুলতেই ভিতরে দেখলো একটা "চন্দ্রহার".... অবিকল সেই চন্দ্রহারটার মতো! তবে মিনি সাইজের। রত্ন পাথর গুলো পর্যন্ত আসল! তমালের হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখতে লাগলো শালিনী। তমাল কবিতাটা তুলে নিয়ে গলা ছেড়ে পড়তে আরম্ভ করলো...." জীবনটাও চাঁদের মতো/ সামনে আলো, পিছে ক্ষত/ যখন আলোয় ভাসতে থাকে, কেউ দেখেনা অন্ধকার/ হঠাৎ আঁধার ঘনায় যখন চতুর্দিকে বন্ধ দ্বার".............!

                                              (সমাপ্ত)
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চন্দ্র কথা - তমালের গোয়েন্দাগিরি - by kingsuk-tomal - 02-11-2022, 12:53 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)