01-11-2022, 06:59 AM
অধ্যায় ৬
কলেজে পৌঁছে সুবিমল হাজিরার খাতায় সই করে ক্লাস নিতে ঢুকলেন। লক্ষ্য করলেন আজও দোলনচাঁপা প্রথম সারিতেই বসেছে। সুবিমল এমনিতে খুব ভাল শিক্ষক। আজ যেন একটু বাড়তি উৎসাহ নিয়ে পড়ালেন। দোলন আজ একটা খুব সুন্দর আকাশি নীল রঙের সালোয়ার পড়ে এসেছে। সাথে কপালে ম্যাচিং ছোট্ট নীল টিপ। লম্বা চুল বাধা। সুবিমলের মন ভাল হয়ে গেল।
দুপুরে স্টাফরুমে আর কেউ ছিল না। সুবিমল বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করছিলেন। এমন সময় নীলাঞ্জনা এল। সুবিমল মুখ তুলে হেসে বললেন “কি ব্যাপার? ক্লাস নেই?” নীলাঞ্জনাকে কেমন একটু ম্রিয়মাণ দেখাল। রোজকার ওই প্রাণোচ্ছল চেহারাটা মিইয়ে গেছে। অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল “না”।
সুবিমল কাগজপত্র সরিয়ে বললেন “কি হয়েছে নীলাঞ্জনা? এনি প্রবলেম?” নীলাঞ্জনা ছলছলে চোখে সুবিমলের দিকে তাকিয়ে বলল “সময়টা ভাল যাচ্ছে না স্যার”। সুবিমল আশ্বাস দেওয়ার গলায় বললেন “আহা…কি হয়েছে…খুলে বল। তোমার মায়ের শরীর কেমন?”
নীলাঞ্জনাঃ “ভাল না। বোধহয় আর বেশিদিন বাঁচবে না”। বলতে বলতে নীলাঞ্জনার গলা ধরে এল।
সুবিমলঃ “ডাক্তার কি বলছে?”
নীলাঞ্জনাঃ “ডাক্তার আর কি বলবে? এই রুগির ভাল ওষুধ ভাল পথ্যি দরকার। আর শরীরটা একটু ভাল হলে অপারেশান করে নেওয়া উচিত। কিন্তু তার জন্য তো প্রচুর টাকা দরকার। অত টাকা আমি পাবো কোথায়?! আপনি তো আমাদের অবস্থা জানেন স্যার। তার ওপর আবার…”
সুবিমলঃ “কি?”
নীলাঞ্জনাঃ “এবার হয়ত বাড়িটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে”।
সুবিমলঃ “মানে??!”
নীলাঞ্জনাঃ “হ্যাঁ…বাবা মারা যাওয়ার আগে বন্ধক রেখেছিলেন। এখন সেই লোক আমাদের ওঠাতে চায়। প্রথম দিকে নিয়মিত সুদের টাকা দিয়েছি আমরা। গত কয়েক মাস বাকি পড়ে গেছে”।
সুবিমলঃ “তুমি চিন্তা কর না। নিশ্চই কোনো উপায় বেরিয়ে যাবে”।
নীলাঞ্জনা হতাশ সুরে বলল “আমি তো কোনো উপায়ই দেখছিনা। যাদের কাছে ধার নেওয়া যায় তাদের সবার কাছে এমনিতেই আগের টাকা বাকি পড়ে আছে। এই অবস্থায় কোথায় যাব…কিই বা করব!”
সুবিমল বুঝলেন নীলাঞ্জনা সত্যিই খুব বিপাকে পড়েছে। সুবিমল নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বললেন “তুমি এত চিন্তা কোরো না। কিছু একটা ভেবে বার করছি আমি”। নীলাঞ্জনা মুখে জোর করে একটু হাসি এনে বলল “আচ্ছা”। সুবিমল হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললেন “বেরবে নাকি? আর তো আমাদের ক্লাস নেই।“ নীলাঞ্জনা সঙ্গে সঙ্গে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেডি।
সুবিমল নীলাঞ্জনাকে নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিলেন। “পার্ক স্ট্রীট” শুনে ট্যাক্সি ড্রাইভার মিটার ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল।
নীলাঞ্জনা জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতে সুবিমল বললেন “খিদে পেয়েছে। চল কোথাও বসে আরাম করে কথাবার্তা বলি”।
পার্ক স্ট্রীটের একটা রেস্টুরেন্টের আলো আঁধারি রুমের কোনের টেবিলে বসলেন সুবিমল আর নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা অবাক চোখে দেখছিল। এরকম কোনো দামি রেস্তোঁরায় ওর ইতিপূর্বে পদার্পণ হয়নি। বেয়ারা এসে হাতে মেনু ধরিয়ে দিলে সুবিমল নীলাঞ্জনাকে জিজ্ঞাসা করলেন “কি খাবে?” নীলাঞ্জনা মৃদু আপত্তি তুলল “না না…আমার জন্য কিছু বলতে হবে না”। সুবিমল সে কথা কানে না তুলে অর্ডার দিলেন “দু কাপ চা…সাথে ফিশ ফিঙ্গার আর চিকেন পকোড়া”। নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বললেন “এখানকার ফিশ ফিঙ্গার খুব ভাল। খেয়ে দেখ”।
বেয়ারা বয় চলে যেতে সুবিমল নীলাঞ্জনাকে প্রশ্ন করলেন “বাড়িটা কত টাকায় বন্ধক রাখা হয়েছিল?”
নীলাঞ্জনাঃ “চল্লিশ হাজার…এত দিন টাকা শোধ দেয়ার পরেও সুদে আসলে প্রায় তিরিশ হাজার বাকি আছে দেনা”।
সুবিমলঃ “চল্লিশ হাজার…প্লাস তোমার মায়ের সার্জারির জন্য বলেছিলে আরো হাজার পঞ্চাশেক মত লাগবে। তাই না?”
নীলাঞ্জনাঃ “হ্যাঁ। তবে ওটা এখনি না। ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন অপেক্ষা করে সার্জারির চান্স নেওয়া উচিত। এত টাকা…কি যে করব? জানি না। মানে দিশেহারা লাগছে”।
সুবিমলঃ “সে তো স্বাভাবিক। তবে কি…জীবনে ঝামেলা অল্প বিস্তর সবারই লেগে আছে। কেউই হয়ত শান্তিতে নেই”।
বেয়ারা এসে চা জলখাবার এনে টেবিলে রাখল। দুজনেই চায়ে চুমুক দিলেন।
সুবিমলঃ “আচ্ছা…নীলাঞ্জনা, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব? কিছু মনে করবে না তো?”
নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে “না না…কি জানতে চান, বলুন”।
সুবিমল” “তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?”
নীলাঞ্জনা এত দুঃখের মধ্যেও মুখ টিপে হেসে উত্তর দিল “নাহ…আমার আবার বয়ফ্রেন্ড!”
সুবিমল ভুরু কুঁচকে শুধালেন “কেন? তোমার কি বয়ফ্রেন্ড থাকতে নেই?”
নীলাঞ্জনাঃ “আমার প্রেমে কে পড়বে বলুন স্যার? আমাকে দেখতে যা কুচ্ছিত। তার ওপর মাথায় এত ঝামেলা। তাছাড়া প্রেম করার সময় কোথায় বলুন? সারাদিন কলেজ করে, সন্ধ্যেবেলা ট্যুইশনি করে আর সময় কোথায়।”
সুবিমল আহত স্বরে বললেন “এভাবে বল না। তোমাকে দেখতে খারাপ কে বলল? কত প্রাণোচ্ছল হাসি তোমার! তাছাড়া কত বুদ্ধিমতি, শিক্ষিতা, দায়িত্বশীল তুমি”।
নীলাঞ্জনা ঠোঁট উলটে বলল “এসব কেউ দেখে না স্যার”।
সুবিমল গলাটা একটু গাঢ় করে বললেন “আমার চোখে তুমি সুন্দর”।
নীলাঞ্জনা লজ্জা পেয়ে বলল “ধ্যাত্!”
কলেজে পৌঁছে সুবিমল হাজিরার খাতায় সই করে ক্লাস নিতে ঢুকলেন। লক্ষ্য করলেন আজও দোলনচাঁপা প্রথম সারিতেই বসেছে। সুবিমল এমনিতে খুব ভাল শিক্ষক। আজ যেন একটু বাড়তি উৎসাহ নিয়ে পড়ালেন। দোলন আজ একটা খুব সুন্দর আকাশি নীল রঙের সালোয়ার পড়ে এসেছে। সাথে কপালে ম্যাচিং ছোট্ট নীল টিপ। লম্বা চুল বাধা। সুবিমলের মন ভাল হয়ে গেল।
দুপুরে স্টাফরুমে আর কেউ ছিল না। সুবিমল বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করছিলেন। এমন সময় নীলাঞ্জনা এল। সুবিমল মুখ তুলে হেসে বললেন “কি ব্যাপার? ক্লাস নেই?” নীলাঞ্জনাকে কেমন একটু ম্রিয়মাণ দেখাল। রোজকার ওই প্রাণোচ্ছল চেহারাটা মিইয়ে গেছে। অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল “না”।
সুবিমল কাগজপত্র সরিয়ে বললেন “কি হয়েছে নীলাঞ্জনা? এনি প্রবলেম?” নীলাঞ্জনা ছলছলে চোখে সুবিমলের দিকে তাকিয়ে বলল “সময়টা ভাল যাচ্ছে না স্যার”। সুবিমল আশ্বাস দেওয়ার গলায় বললেন “আহা…কি হয়েছে…খুলে বল। তোমার মায়ের শরীর কেমন?”
নীলাঞ্জনাঃ “ভাল না। বোধহয় আর বেশিদিন বাঁচবে না”। বলতে বলতে নীলাঞ্জনার গলা ধরে এল।
সুবিমলঃ “ডাক্তার কি বলছে?”
নীলাঞ্জনাঃ “ডাক্তার আর কি বলবে? এই রুগির ভাল ওষুধ ভাল পথ্যি দরকার। আর শরীরটা একটু ভাল হলে অপারেশান করে নেওয়া উচিত। কিন্তু তার জন্য তো প্রচুর টাকা দরকার। অত টাকা আমি পাবো কোথায়?! আপনি তো আমাদের অবস্থা জানেন স্যার। তার ওপর আবার…”
সুবিমলঃ “কি?”
নীলাঞ্জনাঃ “এবার হয়ত বাড়িটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে”।
সুবিমলঃ “মানে??!”
নীলাঞ্জনাঃ “হ্যাঁ…বাবা মারা যাওয়ার আগে বন্ধক রেখেছিলেন। এখন সেই লোক আমাদের ওঠাতে চায়। প্রথম দিকে নিয়মিত সুদের টাকা দিয়েছি আমরা। গত কয়েক মাস বাকি পড়ে গেছে”।
সুবিমলঃ “তুমি চিন্তা কর না। নিশ্চই কোনো উপায় বেরিয়ে যাবে”।
নীলাঞ্জনা হতাশ সুরে বলল “আমি তো কোনো উপায়ই দেখছিনা। যাদের কাছে ধার নেওয়া যায় তাদের সবার কাছে এমনিতেই আগের টাকা বাকি পড়ে আছে। এই অবস্থায় কোথায় যাব…কিই বা করব!”
সুবিমল বুঝলেন নীলাঞ্জনা সত্যিই খুব বিপাকে পড়েছে। সুবিমল নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বললেন “তুমি এত চিন্তা কোরো না। কিছু একটা ভেবে বার করছি আমি”। নীলাঞ্জনা মুখে জোর করে একটু হাসি এনে বলল “আচ্ছা”। সুবিমল হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললেন “বেরবে নাকি? আর তো আমাদের ক্লাস নেই।“ নীলাঞ্জনা সঙ্গে সঙ্গে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেডি।
সুবিমল নীলাঞ্জনাকে নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিলেন। “পার্ক স্ট্রীট” শুনে ট্যাক্সি ড্রাইভার মিটার ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল।
নীলাঞ্জনা জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতে সুবিমল বললেন “খিদে পেয়েছে। চল কোথাও বসে আরাম করে কথাবার্তা বলি”।
পার্ক স্ট্রীটের একটা রেস্টুরেন্টের আলো আঁধারি রুমের কোনের টেবিলে বসলেন সুবিমল আর নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা অবাক চোখে দেখছিল। এরকম কোনো দামি রেস্তোঁরায় ওর ইতিপূর্বে পদার্পণ হয়নি। বেয়ারা এসে হাতে মেনু ধরিয়ে দিলে সুবিমল নীলাঞ্জনাকে জিজ্ঞাসা করলেন “কি খাবে?” নীলাঞ্জনা মৃদু আপত্তি তুলল “না না…আমার জন্য কিছু বলতে হবে না”। সুবিমল সে কথা কানে না তুলে অর্ডার দিলেন “দু কাপ চা…সাথে ফিশ ফিঙ্গার আর চিকেন পকোড়া”। নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বললেন “এখানকার ফিশ ফিঙ্গার খুব ভাল। খেয়ে দেখ”।
বেয়ারা বয় চলে যেতে সুবিমল নীলাঞ্জনাকে প্রশ্ন করলেন “বাড়িটা কত টাকায় বন্ধক রাখা হয়েছিল?”
নীলাঞ্জনাঃ “চল্লিশ হাজার…এত দিন টাকা শোধ দেয়ার পরেও সুদে আসলে প্রায় তিরিশ হাজার বাকি আছে দেনা”।
সুবিমলঃ “চল্লিশ হাজার…প্লাস তোমার মায়ের সার্জারির জন্য বলেছিলে আরো হাজার পঞ্চাশেক মত লাগবে। তাই না?”
নীলাঞ্জনাঃ “হ্যাঁ। তবে ওটা এখনি না। ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন অপেক্ষা করে সার্জারির চান্স নেওয়া উচিত। এত টাকা…কি যে করব? জানি না। মানে দিশেহারা লাগছে”।
সুবিমলঃ “সে তো স্বাভাবিক। তবে কি…জীবনে ঝামেলা অল্প বিস্তর সবারই লেগে আছে। কেউই হয়ত শান্তিতে নেই”।
বেয়ারা এসে চা জলখাবার এনে টেবিলে রাখল। দুজনেই চায়ে চুমুক দিলেন।
সুবিমলঃ “আচ্ছা…নীলাঞ্জনা, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব? কিছু মনে করবে না তো?”
নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে “না না…কি জানতে চান, বলুন”।
সুবিমল” “তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?”
নীলাঞ্জনা এত দুঃখের মধ্যেও মুখ টিপে হেসে উত্তর দিল “নাহ…আমার আবার বয়ফ্রেন্ড!”
সুবিমল ভুরু কুঁচকে শুধালেন “কেন? তোমার কি বয়ফ্রেন্ড থাকতে নেই?”
নীলাঞ্জনাঃ “আমার প্রেমে কে পড়বে বলুন স্যার? আমাকে দেখতে যা কুচ্ছিত। তার ওপর মাথায় এত ঝামেলা। তাছাড়া প্রেম করার সময় কোথায় বলুন? সারাদিন কলেজ করে, সন্ধ্যেবেলা ট্যুইশনি করে আর সময় কোথায়।”
সুবিমল আহত স্বরে বললেন “এভাবে বল না। তোমাকে দেখতে খারাপ কে বলল? কত প্রাণোচ্ছল হাসি তোমার! তাছাড়া কত বুদ্ধিমতি, শিক্ষিতা, দায়িত্বশীল তুমি”।
নীলাঞ্জনা ঠোঁট উলটে বলল “এসব কেউ দেখে না স্যার”।
সুবিমল গলাটা একটু গাঢ় করে বললেন “আমার চোখে তুমি সুন্দর”।
নীলাঞ্জনা লজ্জা পেয়ে বলল “ধ্যাত্!”