29-10-2022, 02:58 PM
"আরে বেশি না। আসলে আমি কজন কুকুর বিড়ালকে খাওয়াই। না, আমার পোষা না, এমনিই রাস্তার। ওদের জন্যই একটু মাংস মাছ সব্জি এসব…"
"আচ্ছা, বাহ। এটা তো দারুণ ব্যাপার!"
"আসলে, বেশিরভাগ বেচারারাই একটু খাবারের জন্য ঘুরতে থাকে। কোনো বাড়ি থেকে সামান্য খেতে দেয় তো কোনো বাড়ি থেকে লাঠির আঘাত করে, ঢিল ছুঁড়ে মারে, জল, এমনকি গরম জলও ছিটিয়ে দেয়। তাই আমি একটু…"
"আপনি এতো ভাবেন?"
"না না, সেরকম কিছু না…"
"আপনি তো দারুণ মানুষ একজন! ওয়াও! জাস্ট ওয়াও!"
"ধ্যাত! এটা বাড়াবাড়ি করে ফেললেন।"
"ভাবুন, আপনি নিজেকে ব্যর্থ ভেবে মনখারাপ করছিলেন, এদিকে আমার মনে হচ্ছে আপনি অত্যন্ত সফল একজন মানুষ।"
"থামুন তো!" হাসি চেপে বলে তিস্তা। ও নাকি সফল! আচ্ছা পাগল তো এই অপিরিচিত!
"এই যে বললেন রাস্তার অসহায় কুকুর বিড়ালদের যত্ন করে খাওয়ান… ওরা নিশ্চয়ই আপনাকে খুব ভালবাসে?"
"তা বাসে…" ওদের কথা ভাবতেই মন ভাল হয়ে যায় তিস্তার।
"জানেন তো, ওদের ভালবাসা শর্তহীন। আপনি ওদের একদিন খেতে দিলেও ওরা আপনাকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিত। এমনকি না খেতে দিলেও… সামান্য একটু ভালবাসলেও ওরা কৃতজ্ঞ থাকে সারাজীবন? আর সেখানে তো আপনি ওদের অন্ন আর মাছ মাংস দাতা।"
"মাছ মাংস দাতা? হি হি!"
"আর কি বললেন, আপনার বয়স্কা মা কে আপনি নিজের কষ্টের কথা বুঝতে দেন না? আগলে রাখেন নিশ্চয়ই খুব?"
"মা বাবা তো আগলে রাখারই জিনিস! মানে, জিনিস ঠিক না… তবে বয়স হলে বাবা মা ও তো বাচ্চা হয়ে যান। একটু বেশি কেয়ার, একটু বেশি আদর তখন ওঁদের প্রাপ্য হয়।"
"আরে, আপনি কাঁদছেন নাকি? এই সামান্য কথাতে?"
"আসলে বাবা নেই তো… মা ই আমার সব…"
"কত ভাল মেয়ে আপনি! অ্যাজ আ ডটার, ইউ আর অ্যামেজিং।"
"থ্যাংকইউ। আমি মা কে একটু ভাল রাখতে চাই শুধু।"
"জানেন, এইমধ্যেই কবে যেন পড়ছিলাম, করোনা অতিমারি চলাকালীন গত দুবছরে প্রায় ৫৬ লক্ষ ভারতীয় কাজ হারিয়েছেন।"
"হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও পড়েছি।"
"তাও আপনার কাজ আছে। তারমানে নিশ্চয়ই আপনার ভাষায় 'বাটারিং' করতে না পারলেও আপনি একটা বিষয় ভাল পারেন, আপনার কাজটা। কখনও সখনও একটু আধটু ভুল তো আমাদের সবারই হয়…"
"এভাবে তো ভাবিনি কখনও।" আনমনা গলায় ভাবে তিস্তা।
"ভাবুন, ভাবুন। ভাবা প্র্যাক্টিশ করুন! আচ্ছা, আপনার পিসিওডি আছে, তাই না?"
"হ্যাঁ। তাই তো আমি মোটা, স্কিনটাও খুব একটা ভাল না। দেখছেন কত পিম্পল?"
"এই কম আলোতে তো ব্রণ দেখা যায় না। তবে আপনার চোখদুটি কিন্তু বড় সুন্দর। কাজল নয়না হরিণী আপনি। আগে কেউ বলেনি?"
"হুম, বলেছে। আগে।" লজ্জা পাচ্ছে তিস্তা এখন।
"তবেই বুঝুন। আর চোখ দেখেই কিন্তু মানুষ চেনা যায়। "
"হুম!"
"তাহলে বুঝলেন তো? আপনি ব্যর্থ না, একজন সফল মেয়ে। সফল মানুষ। এবং, আপনার ঝকঝকে মনটা ওই ত্বকের বাইরে থেকেও বোঝা যায়। যাওয়া উচিৎ। জানেন না, বিউটি ইজ স্কিন ডিপ?"
"হুম!"
"তবে? আজ আপনার দিন না। ইন ফ্যাক্ট, কারোরই দিন না। ফেইলিওর না থাকলে সাকসেস ভাল লাগত? মাধ্যমিকের টেস্টে ভাল রেজাল্ট না করার পরে লজ্জা আর জেদের চোটে আদা জল খেয়ে লেগে থেকে ওইরকম ভাল একটা রেজাল্ট যদি না করতেন… ভাল লাগত? ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাই তো সফল ও হয়েছিলেন? তাই না?"
চোখে জল আসছিল তিস্তার। তাও নিজেকে সামলে বলল "হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু… আপনি কি করে জানলেন আমার মাধ্যমিকের রেজাল্টের কথা?"
একটু হাসলেন বিবেক বাবু। চাঁদের আলো মাখা, মায়াময় সেই হাসি। তারপর বলে উঠলেন "আমি সব জানি। কারণ আমি যে বিবেক।"
এক মুহূর্ত পরেই উঠে পড়ল তিস্তা, বেঞ্চ থেকে।
অনেক কাজ পড়ে আছে।
বাড়ি গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে ঢুকতে হবে। বাচ্চাগুলোকে খেতে দিতে হবে। মায়ের সাথে খেতে খেতে গল্প করতে হবে। তারপর একটা শান্তির ঘুম।
কাল আবার একটা দরকারী মিটিং আছে অফিসে। কাল কোনো ভুল করবে না ও।
হাতের ব্যাগ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল ও। বড় তাড়া এখন…
পিছন দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি তিস্তা। তাকালে বুঝতে পারত পাশের বেঞ্চে বসা একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি বলছে, "আজব মহিলা… সাজগোজ সুন্দর, দেখে মনে হচ্ছে অফিস টফিস থেকে ফিরছে, অথচ আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিল। তুই দেখেছিস, টুসি?"
"দেখেছি রে। আহা, কষ্ট হচ্ছিল বড্ড।" উত্তর দিল মেয়েটি।
"কি কষ্ট কে জানে। না না, সব কষ্ট মুছে যাক ওনার। বল?" আবার বলে ছেলেটি।
"একদম, ভাল থাকুন উনি। জানিস দীপ্ত, আমি ওনাকে চিনি। রাস্তায় নিউজপেপার পেতে কুকুর দের খেতে দেন। সেই লকডাউন থেকেই। কী ভাল, তাই না?"
"বাহ! সত্যি কী ভাল রে উনি। আচ্ছা, এইসময়টা আড্ডা না মেরে আমরাও ওনাকে হেল্প করতে পারি না? তাহলে তোকেও বাড়িতে বাহানা করে আমার সাথে দেখা করতে আসতে হবে না?"
"ডান! কাল থেকেই তাহলে?" হাসে মেয়েটি।
আজ তিস্তা নিজেকে ব্যর্থ ভাবছিল, কিন্তু কাল দীপ্ত আর টুসিকে দেখে হাসি ফুটবেই ওর মুখে। তাই না?
সাফল্য আর ব্যর্থতা যে বড় আপেক্ষিক...
"আচ্ছা, বাহ। এটা তো দারুণ ব্যাপার!"
"আসলে, বেশিরভাগ বেচারারাই একটু খাবারের জন্য ঘুরতে থাকে। কোনো বাড়ি থেকে সামান্য খেতে দেয় তো কোনো বাড়ি থেকে লাঠির আঘাত করে, ঢিল ছুঁড়ে মারে, জল, এমনকি গরম জলও ছিটিয়ে দেয়। তাই আমি একটু…"
"আপনি এতো ভাবেন?"
"না না, সেরকম কিছু না…"
"আপনি তো দারুণ মানুষ একজন! ওয়াও! জাস্ট ওয়াও!"
"ধ্যাত! এটা বাড়াবাড়ি করে ফেললেন।"
"ভাবুন, আপনি নিজেকে ব্যর্থ ভেবে মনখারাপ করছিলেন, এদিকে আমার মনে হচ্ছে আপনি অত্যন্ত সফল একজন মানুষ।"
"থামুন তো!" হাসি চেপে বলে তিস্তা। ও নাকি সফল! আচ্ছা পাগল তো এই অপিরিচিত!
"এই যে বললেন রাস্তার অসহায় কুকুর বিড়ালদের যত্ন করে খাওয়ান… ওরা নিশ্চয়ই আপনাকে খুব ভালবাসে?"
"তা বাসে…" ওদের কথা ভাবতেই মন ভাল হয়ে যায় তিস্তার।
"জানেন তো, ওদের ভালবাসা শর্তহীন। আপনি ওদের একদিন খেতে দিলেও ওরা আপনাকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিত। এমনকি না খেতে দিলেও… সামান্য একটু ভালবাসলেও ওরা কৃতজ্ঞ থাকে সারাজীবন? আর সেখানে তো আপনি ওদের অন্ন আর মাছ মাংস দাতা।"
"মাছ মাংস দাতা? হি হি!"
"আর কি বললেন, আপনার বয়স্কা মা কে আপনি নিজের কষ্টের কথা বুঝতে দেন না? আগলে রাখেন নিশ্চয়ই খুব?"
"মা বাবা তো আগলে রাখারই জিনিস! মানে, জিনিস ঠিক না… তবে বয়স হলে বাবা মা ও তো বাচ্চা হয়ে যান। একটু বেশি কেয়ার, একটু বেশি আদর তখন ওঁদের প্রাপ্য হয়।"
"আরে, আপনি কাঁদছেন নাকি? এই সামান্য কথাতে?"
"আসলে বাবা নেই তো… মা ই আমার সব…"
"কত ভাল মেয়ে আপনি! অ্যাজ আ ডটার, ইউ আর অ্যামেজিং।"
"থ্যাংকইউ। আমি মা কে একটু ভাল রাখতে চাই শুধু।"
"জানেন, এইমধ্যেই কবে যেন পড়ছিলাম, করোনা অতিমারি চলাকালীন গত দুবছরে প্রায় ৫৬ লক্ষ ভারতীয় কাজ হারিয়েছেন।"
"হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও পড়েছি।"
"তাও আপনার কাজ আছে। তারমানে নিশ্চয়ই আপনার ভাষায় 'বাটারিং' করতে না পারলেও আপনি একটা বিষয় ভাল পারেন, আপনার কাজটা। কখনও সখনও একটু আধটু ভুল তো আমাদের সবারই হয়…"
"এভাবে তো ভাবিনি কখনও।" আনমনা গলায় ভাবে তিস্তা।
"ভাবুন, ভাবুন। ভাবা প্র্যাক্টিশ করুন! আচ্ছা, আপনার পিসিওডি আছে, তাই না?"
"হ্যাঁ। তাই তো আমি মোটা, স্কিনটাও খুব একটা ভাল না। দেখছেন কত পিম্পল?"
"এই কম আলোতে তো ব্রণ দেখা যায় না। তবে আপনার চোখদুটি কিন্তু বড় সুন্দর। কাজল নয়না হরিণী আপনি। আগে কেউ বলেনি?"
"হুম, বলেছে। আগে।" লজ্জা পাচ্ছে তিস্তা এখন।
"তবেই বুঝুন। আর চোখ দেখেই কিন্তু মানুষ চেনা যায়। "
"হুম!"
"তাহলে বুঝলেন তো? আপনি ব্যর্থ না, একজন সফল মেয়ে। সফল মানুষ। এবং, আপনার ঝকঝকে মনটা ওই ত্বকের বাইরে থেকেও বোঝা যায়। যাওয়া উচিৎ। জানেন না, বিউটি ইজ স্কিন ডিপ?"
"হুম!"
"তবে? আজ আপনার দিন না। ইন ফ্যাক্ট, কারোরই দিন না। ফেইলিওর না থাকলে সাকসেস ভাল লাগত? মাধ্যমিকের টেস্টে ভাল রেজাল্ট না করার পরে লজ্জা আর জেদের চোটে আদা জল খেয়ে লেগে থেকে ওইরকম ভাল একটা রেজাল্ট যদি না করতেন… ভাল লাগত? ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাই তো সফল ও হয়েছিলেন? তাই না?"
চোখে জল আসছিল তিস্তার। তাও নিজেকে সামলে বলল "হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু… আপনি কি করে জানলেন আমার মাধ্যমিকের রেজাল্টের কথা?"
একটু হাসলেন বিবেক বাবু। চাঁদের আলো মাখা, মায়াময় সেই হাসি। তারপর বলে উঠলেন "আমি সব জানি। কারণ আমি যে বিবেক।"
এক মুহূর্ত পরেই উঠে পড়ল তিস্তা, বেঞ্চ থেকে।
অনেক কাজ পড়ে আছে।
বাড়ি গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে ঢুকতে হবে। বাচ্চাগুলোকে খেতে দিতে হবে। মায়ের সাথে খেতে খেতে গল্প করতে হবে। তারপর একটা শান্তির ঘুম।
কাল আবার একটা দরকারী মিটিং আছে অফিসে। কাল কোনো ভুল করবে না ও।
হাতের ব্যাগ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল ও। বড় তাড়া এখন…
পিছন দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি তিস্তা। তাকালে বুঝতে পারত পাশের বেঞ্চে বসা একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি বলছে, "আজব মহিলা… সাজগোজ সুন্দর, দেখে মনে হচ্ছে অফিস টফিস থেকে ফিরছে, অথচ আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিল। তুই দেখেছিস, টুসি?"
"দেখেছি রে। আহা, কষ্ট হচ্ছিল বড্ড।" উত্তর দিল মেয়েটি।
"কি কষ্ট কে জানে। না না, সব কষ্ট মুছে যাক ওনার। বল?" আবার বলে ছেলেটি।
"একদম, ভাল থাকুন উনি। জানিস দীপ্ত, আমি ওনাকে চিনি। রাস্তায় নিউজপেপার পেতে কুকুর দের খেতে দেন। সেই লকডাউন থেকেই। কী ভাল, তাই না?"
"বাহ! সত্যি কী ভাল রে উনি। আচ্ছা, এইসময়টা আড্ডা না মেরে আমরাও ওনাকে হেল্প করতে পারি না? তাহলে তোকেও বাড়িতে বাহানা করে আমার সাথে দেখা করতে আসতে হবে না?"
"ডান! কাল থেকেই তাহলে?" হাসে মেয়েটি।
আজ তিস্তা নিজেকে ব্যর্থ ভাবছিল, কিন্তু কাল দীপ্ত আর টুসিকে দেখে হাসি ফুটবেই ওর মুখে। তাই না?
সাফল্য আর ব্যর্থতা যে বড় আপেক্ষিক...