Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
আপেক্ষিক

 
আজ খুব, খুব ক্লান্ত লাগছে তিস্তার। অবশ্য ক্লান্তির কি দোষ? বয়স তো বাড়ছে? তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওজন, পায়ে ব্যথা, ব্যাক পেইন! মাঝে মাঝে এত্ত বিরক্ত লাগে! আজ তো অত রোদের মধ্যে সকালে অফিসে পৌঁছে একটু জল খাচ্ছে, বোতলের ঢাকনাটা পড়ে গেল নীচে। চেয়ারে বসা অবস্থাতে নিচু হয়ে সেটা তুলতে গিয়ে কোমরে লাগল। ছোট্ট জিনিস, কিন্তু ব্যথা ছিল যথেষ্ট। তাই ব্যাগ থেকে ব্যথা কমার স্প্রে টা বের করে লাগাচ্ছিল, ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়ে অণিমেষদা ওর দিকে তাকালেন, আর কিছু না জেনে, না শুনেই বলে উঠলেন "আবার লাগল নাকি? উফ! পারো বটে! ওজন কমাও, এই বয়সেই এই অবস্থা, পরে যে কি হবে!"
হ্যাঁ, তিস্তা জানে ওর সেডেন্টারি জীবনযাত্রা, খাওয়ার অনিয়ম, পি সি ডি - সবমিলিয়ে ওর ওজন বেড়ে গেছে অনেকটাই। তাই বলে এই ভাবে লোকে বলবে? খুব রাগ হয়েছিল ওর।
সারাদিন ধরে চলতে চলতে সেই রাগটাই বিরক্তিতে পরিণত হয়ে গেল।
ওদের সি ফার্মে একটা মেইল পাঠানোর ছিল, পাঠিয়ে দেখে, ফাইলটা অ্যাটাচ করতে ভুলে গেছে! আবার 'প্লিজ ইগনোর দ্যা প্রিভিয়াস মেইল' পাঠালেও শর্মা ম্যামের কাছে ঝাড় খেতে হল। তারপর অফিস থেকে বেরিয়ে মনে পড়ল জলের মেশিনটা খারাপ হয়ে আছে, কেনা মিনারেল ওয়াটার খেতে হচ্ছে, তবু একবার হেল্পলাইনে ফোন করা হল না আজও। অথচ একটা ফোন করার মতোও কি সময় ছিল না? ইডিয়ট একটা !
তবু ভাল, আজ বাসে বসার সিট পাওয়া গেছিল কসবা থেকে। বাসে বসে জলের বোতল বের করে এক ঢোঁক জল খেল তিস্তা। উফ, শান্তি! বাড়ির স্টপেজ আসতে এখনও আধ ঘন্টা, একটু ফেসবুকটা খোলা যাক।
ফেসবুক খুলে একটু স্ক্রল করতে করতেই বুঝতে পারল আসলে কি! সেইজন্যই সবকিছু শুধু আজ নাএত দিন ধরে উল্টোপাল্টা!
বাড়ির স্টপেজে নেমে চোখের জল যেন বাঁধ মানছিল না। বাসে কোনোরকমে আটকেছে, এত লোকের সামনে চোখে জল এলে কী বিচ্ছিরি ব্যাপার হতো! কিন্তু এখন তো অনর্গল হতে পারে!
আজ যেন পা চলছিলই না তিস্তার। বাড়িতেই বা এত তাড়াতাড়ি যাবার কী আছে! তারচেয়ে বাড়ির কাছেই পুকুরপাড়ে একটা ছোট্ট পার্ক মতো হয়েছে। দু'চারটে লোহার বেঞ্চ, একটা করে স্লিপ আর দোলনা, বাচ্চাদের জন্য। ভালোই লাগে।
একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল তিস্তা। ব্যাগটা তো ভারী ছিলই, জলের বোতল থাকে। বৃষ্টির কোনো স্থিরতা নেই বলে ছাতা থাকে। টিফিনবাক্স থাকে। আজ আবার বাজারও করতে হয়েছে। অনেকগুলো মুখ অপেক্ষায় থাকে। তাই হাতের ব্যাগও ভারী হয়েছে বেশ। পাশে নামিয়ে রেখে আরাম লাগছিল তিস্তার।
কদিন আগেই কোজাগরী পূর্ণিমা গেছে। আকাশে বেশ বড় চাঁদ আজ। বেশ লাগছে দেখতে।
তন্ময় হয়ে চাঁদ দেখছিল তিস্তা, হঠাৎ কানে এলো "আজ আকাশটা কী সুন্দর তাই না?"
একটু চমকে গেল ও। তাকিয়ে দেখে একটি ছায়ামূর্তি। "হুম" বলে ও।
"আচ্ছা, আপনার কি মনখারাপ কোনো কারণে?"
"আমার? না তো?"
"আহা, বলুন না!"
"আশ্চর্য তো! আপনি কে? আর আপনার সাথে কথাই বা বলব কেন?"
"বলবেন না বা কেন? আচ্ছা, আমাকে চেনেন না বলে? আমার নাম বিবেক। বাবা স্বামীজির ভক্ত ছিলেন, তাই এই নাম। এবার বলুন দেখি ম্যাডাম, মন খারাপ, আপনার?"
ইচ্ছে ছিল না কথা বলার। তাও বাড়ি যেতেও ইচ্ছে করছে না। আরবিবেকবাবুর গা থেকে বেশ সুন্দর একটা গন্ধ ভেসে আসছে। ভিক্স, ধুনো আর সিন্থল সাবান মেশানো গন্ধ যেন!
"একটু মনখারাপ। কিন্তু সে ঠিক আছে।"
"কেন মনখারাপ, বলা যাবে? দেখুন, ওই সুন্দর চাঁদের দিব্যি, আমি আপনাকে 'জাজ' করব না। ভাবব না যে আপনি খারাপ, আপনি ঠিক না…"
" আপনিও বুঝে গেছেন, তাই না?" একেই অপরিচিত মানুষ,,তারপরে খারাপ টারাপ বলছে ঘুরিয়ে
"কি বুঝে গেছি বলুন তো?"
"যে আজ আমার দিন।"
"আপনার দিন মানে? জন্মদিন নাকি? আরে, হ্যাপ.."
"না না, জন্মদিন না। আজ তো ১৩ অক্টোবর, ফেসবুকে দেখলাম আজ নাকি 'ইন্টারন্যাশনাল ফেইলিওরস ডে' সব ব্যর্থ, হেরে যাওয়া মানুষদের দিন।"
"ওমা, তাই নাকি! নতুন তথ্য তো! তা, আপনার দিন কেন বলছেন বলুন তো? কমবেশি আমরা সবাই তো ফেইলিওর, তাই না?"
"অন্যের কথা জানি না। আমি তো বটেই।" ফাঁকা গলায় বলে ওঠে তিস্তা।
"কেন বলছেন বলুন তো? নিজেকে ফেইলিওর ভাবার কারণ কি?"
"অনেক কারণ আছে।"
"যেমন? একটু এক্সপ্লেইন করুন! দেখুন আমি আপনাকে চিনি না, তাই অসুবিধা নেই।"
"হুম! এত কথা কেন আপনাকে বলছি জানি না। আসলেআমার কথা শোনার মতো কেউ নেই, জানেন?"
"কেউ নেই?"
"না, ডিভোর্স হয়ে গেছে, শুধু মা আর আমি থাকি। কে আর আমার মনের কথাসব শুনবে। মায়ের বয়স হয়েছে, এমনিতেই আমার জন্য কষ্টে থাকেন, আর নতুন করে বোঝা বাড়াতে চাই না। তাই মায়ের কাছে এমন ভান করি যেন খুব ভাল আছি। আর অফিসে কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। তাহলে আর কাকে বলব?"
"হুম! ডিভোর্স হয়ে গেছে আপনার?"
"হ্যাঁ, ধরে রাখতে পারলাম না যে তাকে। তলে তলে সে অন্যান্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রেখেছিল। জানেন, বেশিরভাগ আত্মীয় আমার দোষ দিয়েছিল। আমি নাকি মোটা হয়ে গেছি বলে পরনারী আসক্ত হয়েছিল। আচ্ছা, ওর যে চুল উঠে উঠে মাথার সামনে টাক, গায়ে বনমানুষের মতো লোম ছিলকথা বলার কায়দা ভাল ছিল নাআমিও কি পারতাম না অন্যকিছু ভাবতে?"
"তাই তো।"
"তবু ভাল, চাকরি করতাম, নইলে যে কি হতো! ওই অ্যালিমনির জন্য টাকা নেওয়া - না না সে সম্ভব হতো না আমার।"
" আপনি চাকরি করেন? স্যরি, আপনার ব্যাগ গুলো দেখেই আমার বোঝা উচিত ছিল।"
"করি ঠিকই,,তবে তেমন ভাল কিছু না। একটা মনের মতো চাকরিও পাইনি। ছোট কোম্পানিতে কেরানিগিরি করেই কাটিয়ে দিলাম।এখানেও আমি ফেইলিওর, জানেন। বসদের 'বাটারিং' করতে পারি না, তাই মাইনেও সেভাবে বাড়ে না।"
"হুম, বুঝলাম। এইসব কারণেই আপনি ব্যর্থ, তাই তো? নাকি আরও কারণ আছে?"
"এতেও হব না? আরও চাই?" রাগ হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে তিস্তার। আরও চাই কারণ!
"না না, এই যথেষ্ট। তা, ম্যাডাম, এই ব্যাগটা তো বেশ ভারী মনে হচ্ছে। বাজার করে ফিরছেন নাকি?"
"হ্যাঁ, ওই একটু।"
"এটা একটু!"

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 29-10-2022, 02:57 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)