Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
বরাভয়

 
কদিন ধরেই মিমি যেন ঠিক নিজের মধ্যে নেই, লক্ষ্য করছেন সুমনা। ছটফটে মেয়ে, কিন্তু কথাই বলছে না তেমন করে। খুব চুপচাপ। বারবার জিজ্ঞেস করেছেন "কি হয়েছে?" কিন্তু প্রতিবারই উত্তর এসেছে "কিচ্ছু না, মা।" বা "কি আবার হবে!" কিন্তু কিছু একটা হয়েছে, এক্কেবারে সিওর! নইলে যে মেয়ে মোবাইল ছেড়ে থাকে না, সে মোবাইল হাতে নিচ্ছে না। বরং চুপচাপ বসে আছে পড়ার বই খুলে! তাও পুজো মিটতে না মিটতেই! আবার চোখের কোণে কালি পড়ে গেছে এই কদিনেই। মানে ঘুম ঠিক মতো হচ্ছে না।
ভোগ রান্না শেষ, এবার আলপনা দিতে হবে। অন্যান্যবার মিমি আলপনা দেয়। কিন্তু এবার সকালেই বলে দিয়েছে ওর নাকি খুব শরীর খারাপ, তাই শুয়ে থাকবে। উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন "পিরিয়ডস হয়েছে তোর? সেঁক দিবি গরম জলের?" কিন্তু মাথা নেড়ে "না" বলেছে। পিরিয়ডস হয়নি। যদিও জানে, রজঃস্বলা হলেও পুজোর কাজে বাধা দেন না উনি কোনোদিনই,কারণ মায়েরা নিজেরাও তো 'মা' তাই এসব নিছক কুসংস্কার ছাড়া আর কিচ্ছু না।
আজ কোমরে বেশ ব্যথা করছে। তাই আর সিঁড়িতে আলপনা দিলেন না সুমনা। এই ঘটের সামনের অংশটুকু, আর ঘরের সামনে, চালের ড্রামের ওপরএইইই যথেষ্ট। মিমি একটু সাহায্য করলে ভাল হতো
প্রতিবারের মতোই নিজেই পুজো করে নিলেন উনি। মায়ের হাসি হাসি মুখ দেখে মন ভুলে যায় এক্কেবারে। "মা গো, তুমি আমার ঘরে অচলা হও মা। আমার কর্মে আর বাক্যে তোমার অধিষ্ঠান হোন। ইহ গচ্ছ ইহ গচ্ছ, ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ। আমার পুজো গ্রহণ করো। আমার মেয়ে আর মেয়ের বাবা যেন সুস্থ থাকে।" পুজো শেষ করে একমনে বলে যাচ্ছিলেন সুমনা।
পুজোর সময় মিমি এসে বসেছিল পাশে। তারপর হাতে হাতে সাহায্য করেছে প্রসাদ এক জায়গায় করতে। কিন্তু কিছুতেই আশেপাশের ফ্ল্যাটে প্রসাদ দিতে যেতে চায়নি। অথচ অন্যান্যবার উনি বাকি কাজ গুলো সামলান আর মিমিই যায় প্রসাদ বিতরণ করতে। কী যে হয়েছে মেয়েটার! আর বয়সটাও ভাল না… 'আঠেরো বছর বয়স কী দুঃসহ স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলনার দাবী" দিনকাল ভাল না, মনে যে কি চলছে মেয়েটার কে জানে!
মেয়ের বাবাকে প্রসাদ দিয়ে কয়েকটা নাড়ু নিয়ে মিমির ঘরে এলেন সুমনা।।মেয়ে নাড়ু বড় ভালবাসে। বিশেষ করে চিনির নাড়ু। 'টা যদি খাওয়াতে পারা যায় এখন। দুপুরেও সেরকম কিছু খায়নি, ফ্রিজে পরশুদিনের পিৎজা রাখা ছিল সেটা খেয়েছে। বারণ শোনেনি।
"মিমি, নাড়ু খাবি? চিনির নাড়ু?" পুজোর দিনেও মেয়েটা ঘরের লাইট বন্ধ রেখেছে! তাড়াতাড়ি স্যুইচ টিপে লাইট জ্বালালেন উনি।
"না না এখন খাব না, পরে খাব।" বলে উঠল মিমি। শুয়ে আছে এই ভর সন্ধ্যেবেলায়!
আর, গালে যেন শুকিয়ে আসা জলের দাগ! কাঁদছে কেন মেয়ে? লক্ষ্মীপুজোর দিনে একি!
"কাঁদছিস কেন মা? কি হয়েছে? আমাকে বলবি না?" খুব নরম গলায় বলেন সুমনা।
"কিছু হয়নি মা। বললাম তো?"
"হ্যাঁ রে, তুই আমার মা না আমি তোর মা? আমি সব বুঝি। কি হয়েছে বল।"
"ওফ, তুমি যাও তো! বলছি কিছু হয়নি।" বিরক্ত, অধৈর্য্য গলা মিমির।
"তা বললে তো হবে না! নবমীর দিন বন্ধুদের সঙ্গে বেরোলি, আর ফেরার পর থেকেই দেখছি তুই একদম চুপ করে আছিস। এবার আমার সঙ্গে বরণের সময়েও যেতে চাইছিলি না, অথচ প্রত্যেকবার বায়না করিস। কি হয়েছে বল আগে, নইলে কিন্তুআমি এখনও উপোস ভঙ্গ করিনি মিমি। তুই বল আগে, তারপর জল খাব।"
"আমি খুব খারাপ মা। খুব খুব খারাপ। খুব বিপদে পড়েছি তাই।" চোখ থেকে অঝোরে জল পড়ছে মিমির।
বুকটা কেঁপে উঠল সুমনার।
কি বিপদ হলো মেয়ের? যার জন্য এতটা বিচলিত ?
"মাআমার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় রণ ছিল। টুকটাক চ্যাট হতো। তারপর আমাকে প্রপোজ করল।"
"রণ টা আবার কে?"
"আরে বি ব্লকের রণজয়।"
"আচ্ছা, বেশ। তারপর?"
"পুজোর আগে আগেই প্রপোজ করেছিল। বলেছিল আমাকে ওর ভাল লাগে, এইসব। আমারও ওকে ভাল লাগত। "
"সে তো হতেই পারে" একবুক ভয় নিয়েই বললেন সুমনা। দুজনেরই উঠতি বয়স। মিমি আঠেরো, রণ বোধহয় বাইশ তেইশ হবে। বখাটে ছেলে, সারাদিন বাইক নিয়ে ঘোরে।
"মা, নবমীতে ওর সাথেই দেখা করেছিলাম। বাগবাজারে গেলাম, ঠাকুর দেখলাম। রোল খেলাম। আমি বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিলাম, বলল এত তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে কি হবে লেটস হ্যাভ ফান।"
"ফান?" উফ, কী যে ভয় করছে সুমনার!
"মাহি ওয়ান্টেড মি টু টেক ইন হোটেলআমি যাই নি মা। ওকে না বলে চলে এসেছি বাড়িতে।"
"ভাল করেছিস মিমি। কিছু কিছু জিনিসপ্রাকৃতিক। কিন্তু তাও সঠিক সময়ে আর সঠিক মানুষের সঙ্গে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।" কী যে বলবেন সুমনা ভেবে পাচ্ছিলেন না।
"উফ মা! আমি জানি সেটা। কিন্তু মা, এখন রণ বলছে সবাইকে বলবে যেআমি ওকে ন্যুডস পাঠিয়েছি। কিছু ছবি ডাউনলোড করে রেখে বলছে ওগুলো নাকি আমার ছবি। নাকি সবাইকে দেখিয়ে দেবে।"
"সেকি? তুই ওকে কিছু পাঠাসনি তো?"
"না মা, কক্ষণও না। কিন্তু যদি সবাইকে পাঠিয়ে দেয়? সবাই তো ভাববে ওটা আমি। আর তারপর?" অঝোরে কাঁদছে মিমি।
"শোন, কাঁদিস না প্লিজ। তুই তো জানিস তুই কিছু করিস নি। কাউকে ভাললাগা অন্যায় নয়। তবে হ্যাঁ, খুব পারসোনাল হবার আগে অনেক ধাপ পেরোতে হয়।" হাতে হাত রাখলেন মেয়ের সুমনা।
"মা, তুমি বিশ্বাস করো, আমি কোনো ছবি পাঠাইনি। শুধু অষ্টমীর দিনে অঞ্জলি দিতে গিয়ে ওই সকালবেলার ছবিটা পাঠিয়েছিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে ভালবাসে। এরকম বলবে কিভাবে বুঝব?"
"শোন মামণি, রণ যেটা করছে সেটা অন্যায়। তোর কাছে ওর বলা এই কথাগুলোর কোনো চ্যাটের রেকর্ড আছে?"
"মানেহ্যাঁ, দু একটা কথার আছেযে আমার ছবি বলে ছড়িয়ে দেবে, পাড়ায় বদনাম করে দেবে, এইসব।" কাঁপতে কাঁপতে বলে মিমি।
"বেশ। তুই রেডি হ। আমিও হচ্ছি। থানায় যাই চল। সাইবার ক্রাইম অনুযায়ী এগুলো সব ঘৃন্য অপরাধ। আমরা অভিযোগ জানাব।"
"কিন্তু মাসবাই জেনে গেলে কি হবে?"
"তা বলে অন্যায়টা মেনে নেব? চুপ করে থাকব? কভি নেহি! আর সবাই যদি এরকম কোনো ছবিকে ভেবে নেয় সেটা তোর ছবিতাহলে সেই মানুষগুলো কি আদৌ আমাদের কাছে ম্যাটার করে? এভাবে কেউ ছবি দেখালে তো প্রথমেই সেই ছেলেটিকেই ভুল বোঝা উচিত। পারসোনাল স্পেস কে,,ব্যক্তিগত আধারকে পাবলিক করা কারা? ছিঃ!" রাগে গা জ্বলছ সুমনার।
মিমিও অবাক হয়ে দেখছে মা কে আজ।
তার শান্তশিষ্ট মায়ের মধ্যে যেন অন্য এক রূপ!
"মা, থানায় যাব? ভয় লাগছে।"
"ভয়ের কিচ্ছু নেই, ওঁরা সাহায্য করবেন নিশ্চয়ই। তুই যদি অন্যায় না করিস তবে দোষী সাজা পাবেই। আর হ্যাঁনাড়ু খেয়ে জল টা খা।"
"তুমি তো শান্ত মানুষ মাএত জেদ কিভাবে এলো?" মা কে নতুন রূপে দেখছে আজ মিমি।
একটু হাসলেন সুমনা। তারপর বললেন "দশভূজা মা যেমন মহিষাসুরকে বধ করেন, তেমনি বরাভয় প্রদান করেন। তিনি যেমন লক্ষ্মী, তেমনি কালের অধিকারিণী, কালী! আর আমি তো মা দুর্গার অংশ, সব মেয়েদের মতো! তাই আমিও পারবচল এখন…"
মা - মেয়ে বেরিয়ে গেল একটু পরেই থানার উদ্দেশ্যে।
নজর করে দেখলে বুঝতে পারত বরাভয়দাত্রী মা লক্ষ্মীর মুখে তখন অনাবিল হাসি। শক্তি আর সাহসের প্রতিচ্ছবি যে উনিও

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 28-10-2022, 03:09 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)