24-10-2022, 10:04 PM
সপ্তদশ পর্ব
নীচে নেমে নিজের কেবিনের দিকে যেতে যেতে বেশ কিছু লোককে দেখে অভয় যাদের আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য পেশেন্টদের বাড়ির লোক বা নার্সিং হোমের স্টাফ মনে হলেও অভয়ের ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে ওঠে। কেবিনে ঢুকে দেখে সেখানে ডাক্তার এবং হাতে স্ক্যালপেল, সিজার (সোজা ভাষায় কাঁচি) ইত্যাদি র ট্রে হাতে লেডি নার্স উপস্থিত সাথে আরো একজন লোক আছে যিনি স্টাফ ড্রেস পরে থাকলেও অভয়ের সন্দেহ হয় যে সে আদৌ স্টাফ কি না।
তো ডক্টর আমার ডিসচার্জের সমস্ত ফর্মালিটি কমপ্লিট?
আপনাকে এখন ছাড়া যাবে না।
মানে?
আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নন।
আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
সেটা আমি ঠিক করবো, ডাক্তার আমি।
অভয় দেখে ডাক্তার একটা ওষুধ সিরিঞ্জে ভরছেন, কিন্তু তার হাত কাঁপছে চোখেমুখে প্রচণ্ড টেনশন।
কি হয়েছে ডক্টর?
কিছু না এবার আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন।
এটা কিসের ইঞ্জেকশন?
ব্যাথার।
আমার দরকার নেই, আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন।
বললাম তো আপনাকে এখন ডিসচার্জ করা যাবে না।
কিন্তু আমি আর এখানে থাকতে পারবো না।
এবার তাথৈ কথা বলে: ডক্টর আপনি তো তখন রাজী হয়েই গেলেন ওর ডিসচার্জের জন্য তাহলে এখন..
ডক্টর আমি তাই আমি ঠিক করবো পেশেন্ট কখন ডিসচার্জ হবে, নিন এখন শুয়ে পড়ুন। শেষের কথাটা অভয়কে বলা।
আমি ইঞ্জেকশন নেবোনা ডক্টর। অভয় দাঁড়িয়েই কথাটা বললো।
ইঞ্জেকশনতো নিতেই হবে।
বললাম তো না।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে স্টাফ ড্রেস পরা লোকটা পিছন থেকে একটা দড়ি দিয়ে হটাৎ অভয়ের গলায় ফাঁস লাগালো যদিও অভয়ও মুহুর্তের মধ্যে একটা হাত ফাঁস আর গলার মাঝে দিয়ে ফাঁসটা গলায় বসে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে কিন্তু ডাক্তার ইঞ্জেকশনটা লাগাতে যেতেই অপরহাতে ডাক্তারের কবজি ধরে নেয়, অভয় তাথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে: পালাও তাথৈ, কিন্তু তাথৈ অভয়কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেই লেডি নার্স একটা স্ক্যালপেল তাথৈএর গলায় ধরে।
ডাক্তার গায়ের জোরে চেপে ইঞ্জেকশনটা অভয়ের শরীরে ঢোকাতে চেষ্টা করছেন, সুঁচের মুখ এখন অভয়ের বুকের অনেকটা কাছে চলে এসেছে, অপরদিকে অভয়ের গলায় ফাঁস আরো দৃঢ় হচ্ছে, এখন ফাঁস মুক্ত হতে গেলে দুটো হাত লাগবে অথচ ডাক্তারের হাত ধরে থাকায় সেটা পারছে না। এখানে মুশকিল আসান হলো তাথৈ হটাৎ একটা ধাতব আওয়াজের সাথে একটা মেয়েলি আর্তনাদ শুনে সবাই মুহুর্তের জন্য ওদিকে তাকায় দেখে তাথৈ কোনোভাবে নিজেকে মুক্ত করে সার্জারি ইনস্ট্রুমেন্টের ট্রে দিয়ে সজোরে লেডি নার্সের মাথায় আঘাত করেছে, এইটুকু অবসর পেয়ে অভয়ও একটা পা একটু ভাঁজ করে সজোরে চালায় ডাক্তারের তলপেটে ডাক্তার ছিটকে পিছনে গিয়ে পড়ে তারপর বা অনুইটা উপরে তুলে পিছনে চালায় আর সেটা লাগে পিছনের লোকটার মুখে সঙ্গে সঙ্গে গলায় ফাঁসটা খুলে যায় এবার অভয় লোকটার মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এবং লোকটা একটা আর্তনাদ করে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এবার বলোতো ডাক্তার ওটা কিসের ওষুধ ছিল সিরিঞ্জে ঘুমের নাকি বিষ?
জানিনা আমাকে ওরা দিতে বলেছিল তবে বিষ ছিল বোধহয়, আমি দিতে চাইনি বিশ্বাস করুন।
সেটা আপনার হাত কাঁপা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল।
ওরা হাসপাতালে ঢুকে আছে আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি না করি তাহলে ওরা এখানে সবাইকে... কথা শেষ হলো না হটাৎ আঃ করে ডাক্তার বেডে শুয়ে পড়লো, তাথৈ এবার ট্রে দিয়ে ডাক্তারের মাথায় আঘাত করেছে, অভয় তাকিয়ে দেখে সে রাগে ফুঁসছে।
এটা কি করলে? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেশ করেছি, উনি একজন ডাক্তার, পেশেন্টকে মারার কথা ভাবাও পাপ আর উনি আমার সামনে আমার অভয়কে বিষ দিতে চাইছিলেন।
অভয়ের মনে পরলো ছোটোবেলায় কলেজের একটা ঘটনা, তখন ক্লাসের প্রায় সবাই জানে অভয় আর তাথৈএর সম্পর্কের কথা যদিও সাম্য এবং ওর কাছের কয়েকজন বন্ধু মানতে পারেনি এটা একদিন সাম্যর এক বন্ধু অভয়কে অপমান করে অভয়রা আর্থিকভাবে গরীব ছিল সেটা নিয়েই কথা শোনায় এদিকে ছোটো থেকেই অভয়ের আত্মসম্মানবোধ প্রবল, তারপর সে তাথৈএর থেকে দূরে থাকতে শুরু করে এমনকি কথা বলাও বন্ধ করে দেয়, তাথৈ এসবের কিছু জানতো না আর অভয় বলেওনি, তাই তাথৈ বুঝতে পারছিল না হটাৎ কি হলো যাতে অভয় তার সাথে এমন করছে।
একদিন ছুটির পরে অভয় ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন সময় ক্লাসের একজন ছুটে ছুটে এসে অভয়কে বলে: অভয় তাড়াতাড়ি চল।
কোথায়?
তাথৈ দেখ কি শুরু করেছে।
কি করছে?
চল গিয়ে দেখবি।
অভয় গিয়ে দেখে তাথৈ রনংদেহী মূর্তি ধরে হুঙ্কার ছাড়ছে ওর হাতে লম্বা একটা ডান্ডা আর কিছুদিন আগে যে ছেলেটা অভয়কে অপমান করেছিল সে একটা বেঞ্চের নীচে লুকিয়ে আছে, সাম্য, বৃষ্টি, সুস্মিতা আরও কয়েকজন মিলেও তাথৈকে শান্ত করতে পারছে না। তাথৈ একটা কথাই বলছে "সরে যা সবাই ওর সাহস হয় কি করে অভয়কে অপমান করার আজ ওকে মারবোই"।
অভয় অবাক হয়ে দেখছিল পাশ থেকে একজন বললো: তাথৈকে কেউ বলেছে যে তোকে অপমান করেছে ওরা তাই.. তুই ওকে থামা অভয়।
ততক্ষণে তাথৈএর ওই রনংদেহী রূপের সামনে আর হাতে ডান্ডা দেখে কেউ ওর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না, যারা ওকে আটকাচ্ছিল তারাও ভয়ে সরে গেছে, তাথৈ ডান্ডাটা দিয়ে সজোরে ছেলেটাকে মারতে যাবে কিন্তু পিছন থেকে অভয় ডান্ডাটা ধরে একটানে ছিনিয়ে নেয়, তাথৈ ঘুরে অভয়কে দেখে
অভয়: কি করছো টা কি এটা?
তাথৈ কয়েকমিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে অভয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারপর পাশ কাটিয়ে চলে যায় অভয় ডান্ডাটা অন্য একজনকে দিয়ে তাথৈএর পিছনে ছুট লাগায়।
আজ তুমি কি করতে যাচ্ছিলে তাথৈ? ওরকম কেউ করে?
তাথৈ উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে দেখে অভয় আবার বলে: কথা বলবে না? আচ্ছা তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করাটা আমার ঠিক হয়নি, আমার ভুল হয়ে গেছে এবার তো কথা বলো।
তাথৈ তাও কথা বলছে না দেখে অভয় তার স্পেশাল ট্রিক ইউজ করে যদিও এটায় রিস্ক আছে কিন্তু তাথৈ এরপর কথা না বলে থাকতে পারবে না সে জানে
তুমি কথা বলবে না, বেশ তাহলে আমি আর থেকে কি করবো আমি যাই, ওহ্ ভালো কথা তুমি জানো আজ একজন মেয়ে আমাকে লাভলেটার পাঠিয়েছে, কলেজের পরে দেখা করতে বলেছে, ঠিক আছে আমি আসছি তুমি থাকো।
এরপর আর তাথৈ চুপ থাকতে পারে না যদিও তাথৈ জানে এসব অভয়ের চালাকি কেউ ওকে লাভলেটার দেয়নি কিন্তু তবুও সে চুপ থাকতে পারে না মুহূর্তে অভয়ের কলার চেপে ধরে: খুব শখ না অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার আজ তোমাকেই ডান্ডা পেটা করবো অসভ্য ছেলে।
অভয় হাসছে দেখে তাথৈ আরও রেগে যায় গজরাতে থাকে: কে লাভলেটার দিয়েছে দেখাও তারপর তোমার একদিন আর ওই মেয়েটার একদিন দেখাও।
অভয় হাসতে হাসতে বলে: যাক শেষে কথা বললে আরে কলার ছাড়ো ছিঁড়ে যাবে।
ছিঁড়ুক, আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলে কেন?
আচ্ছা বললাম তো ভুল হয়ে গেছে, এবার তো কলার ছাড়ো।
তুমি জানোনা তুমি আমার থেকে একটু দূরে গেলেই আমার কষ্ট হয়।
আচ্ছা বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে, এবার তো হাসো।
তাথৈ অভয়ের কলার ছেড়ে একটা বাহু জড়িয়ে ধরে, পরদিন থেকে আবার দুজনের মধ্যে সব নরমাল তবে এখন আর কেউ অভয়কে অপমান করতে সাহস পায় না, ওই ছেলেটার তরফ থেকেও তাথৈএর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাথৈ এমনিতে খুব শান্ত সবার সাথে ভদ্রভাবেই মেশে ওর যত রাগ অভিমান লড়াই সব অভয়ের সাথে কিন্তু কেউ যদি অভয়কে খারাপ কিছু বলে তাহলে তার আর নিস্তার নেই।
আজ তাথৈএর এই রাগী রূপ দেখে কলেজের সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, কিন্তু নষ্ট করার মতো সময় নেই "আমার ড্রেস কোথায় তাথৈ আর আমার মোবাইল ঘড়ি? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেডের পাশে যে টেবিল আছে ওটার নীচের ড্রয়ারে।
অভয় তাড়াতাড়ি সেগুলো বার করে তাথৈকে বলে: ওদিকে দেখো কেউ আসছে কি না, এদিকে দেখবে না।
কেন?
কেন আবার কি? আমি চেঞ্জ করবো এই পেশেন্ট ড্রেসে বেরোবো নাকি? তাড়াতাড়ি করো।
আমার সামনে পাল্টাও।
এসব কি বলছো তাড়াতাড়ি ওদিকে মুখ ঘোরাও তাকাবে না এদিকে।
তাথৈ যদিও মুখ ঘোরালো কিন্তু মুখ বন্ধ করলো না।
তোমাকে আর কিছু বলার নেই এমন করছো যেন?
যেন কি? অভয় দ্রুত হাতে পেশেন্ট ড্রেস ছেড়ে অন্য পোশাক পড়তে পড়তে বলে কথাটা।
কিছু না, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এখন আমি তোমাকে না তুমি আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে আমাদের বাচ্চা সহ।
ইসসস কি মেয়ে রে, একটুও লজ্জা করে না তোমার এগুলো বলতে?
লজ্জা কেন করবে, যা সত্যি সেটাই বলেছি, কি স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কি হচ্ছে?
কি স্বপ্ন দেখেছিলে?
আমার একটা ছোট্ট হাসিখুশি পরিবার হবে শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী আর অনেকগুলো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে।
নাঃ ডেঁপোমিটা একটুও কমেনি দেখছি, যাইহোক চলো।
পোষাক পাল্টে অভয় তাথৈএর হাত ধরে কেবিন থেকে বাইরে আসে আসার আগে ডাক্তারের গোঙানির আওয়াজ শুনে তাথৈ আবার ওনার চোয়ালে একটা ঘুষি মেরে আসে। বাইরে এসেই অভয় বোঝে তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় তাকে সঠিক সংকেত দিচ্ছিল, বাইরে যারা আছে তাদের মধ্যে অন্তত ছজন তাকে মারতে বা আবার ধরে নিয়ে যেতে এসেছে কিন্তু ওরা জানলো কিভাবে যে অভয় এখানে?
এখন এসব ভাবার সময় নেই, এখন ওদের মোকাবেলা করতে হবে। অভয়ের শরীরে ব্যাথা পুরো না কমলেও আগের থেকে অনেক কম আর দুর্বলতাও অনেক কমে গেছে, অভয় একবার তাথৈএর দিকে তাকালো ওর চোখেমুখে ভয়, অভয় তাথৈকে নিজের পিছনে সরিয়ে এগিয়ে গেল।
প্রথমে একজন এগিয়ে এল হাতে একটা ছুরি নিয়ে, ছুরিটা চালিয়েও দিল কিন্তু অভয়ের কাছে এসব এড়ানো জলভাত, সে আঘাতটা এড়িয়ে একহাতে লোকটার ছুরি ধরা হাতের কবজি ধরলো তারপর অপর হাত দিয়ে লোকটার কনুই চেপে হাতটা ছুরি সহ লোকটার পেটের দিকে ঘুরিয়ে দিল বলে ছুরিটা লোকটার নিজের পেটেই ঢুকে গেল, এবার দ্বিতীয় জন খালি হাতে এগিয়ে আসতেই অভয় লোকটার মাথাটা পাশ থেকে ঠেলে পাশের দেয়ালে ঠুকে দিলহ তারপর চোয়ালে সজোড়ে একটা ঘুষি মারলো। এবার একসাথে দুজন এগিয়ে এল, কিন্তু একজনের হাতে পিস্তল অপরজন একটু এগিয়ে এসেছিল তাতেই অভয় সুযোগটা কাজে লাগালো লোকটাকে নিজের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করলো, লোকটার হাত দুটো ধরে পিছনে ঠেলে দিল ফলে সে পিস্তলধারী লোকটার গায়ের উপর পরলো এবং দুজনেই টাল সামলাতে না পেরে নীচে পরে গেল, ওঠার আগেই অভয় একজনের হাঁটুতে সজোরে লাথি মারলো ,একটা শব্দ এবং আর্তনাদে বোঝা গেল লোকটার হাঁটু ভেঙে গেছে, এই দেখে বাকী দুজন সটান পিছনে দৌড় লাগালো, পিস্তলধারী লোকটা উপরের সঙ্গীকে ঠেলে সরিয়ে নিজে উঠে দাঁড়ালো তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে পরে গেছে সে খালি হাতেই এগিয়ে এল কিন্তু এবারও অভয় তার আঘাতটা এড়িয়ে তাকে দেয়ালে ঠেলে দিল এবং লোকটা এগিয়ে আসার আগেই একপা তুলে লোকটার তলপেটে লাথি কষালো, এদিকে দুজন আগেই পালিয়েছে কাজেই এই যুদ্ধে সে বিজয়ী, এদিকে যারা সত্যিই কোনো পেশেন্টের বাড়ির লোক ছিল তারাও পালিয়েছে।
এবার আর দেরী না করে তাথৈকে নিয়ে নীচে নামতে থাকে অভয় তবে লিফট বা সাধারনের জন্য ব্যবহৃত সিঁড়ি দিয়ে নয়, এমার্জেন্সী এক্সিট দিয়ে, দুজনে বাইরে এল যেখানে তাথৈ তার গাড়ি পার্ক করেছিল, গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় তাথৈ হটাৎ প্রায় অচেতন হয়ে পরে যাচ্ছিল কিন্তু অভয় ওকে ধরে নিল।
তাথৈ তাথৈ কি হলো তোমার? অভয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
তাথৈ প্রায় অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে ওর উপরে নিজেকে ছেড়ে দেয়, অভয় আরও ভয় পেয়ে যায়: এই তাথৈ কি হয়েছে? তাথৈ।
খানিকক্ষণ পরে অভয় কাছে একটা জলের কল থেকে জল এনে তাথৈএর চোখেমুখে দিতে তাথৈ চোখ খুলে তাকায়।
কি হয়েছিল?
জানিনা মাথাটা হটাৎ ঘুরে গেল? তাথৈ দুর্বল কণ্ঠে বলে।
তুমি না খেয়ে আছো?
তাথৈ উত্তর দেয় না, কিন্তু অভয় জানে এটাই সত্যি, খুব বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে তাথৈএর মাথা ঘোরে, এটা ওর ছোটোবেলার অভ্যাস সেইজন্য যখন অভয়ের জন্য উপোস রাখতো অভয় বারণ করতো কিন্তু তাথৈ শুনতো না আর এখন তো প্রায় দুদিন ও কিছু না খেয়ে আছে। অভয় তাড়াতাড়ি তাথৈকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
এ ঘন্টাখানেক পরে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পরে তাথৈ অনেকটা সুস্থ বোধ করলো। গাড়িতে ওঠার আগে অভয় তাথৈকে বললো: এবার কোথায় যাবে?
তুমি কোথায় যাবে?
আমাকে বস্তিতে ফিরতে হবে, জানিনা ওখানের অবস্থা কিরকম, মা কেমন আছেন কিছু জানিনা এদিকে আমার ফোনটাও বন্ধ, চার্জ নেই।
আমিতো আগেই বলেছি আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তাথৈ আরেকবার ভেবে দেখো
কি ভাববো?
তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো সেটার ব্যাপারে।
এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়ে গেছে অভয়।
তাথৈ তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার একটা লড়াই চলছে আমি এই লড়াই থেকে পিছিয়ে আসবো না তাই।
তাই কি? তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
তাথৈ আমি চাইনা এই লড়াইতে তোমাকে কষ্ট পেতে হোক বা তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
আমার জ্যেঠু আর বাবার সত্যিটা জানার পরেও আমি ওনাদের সাথে থাকবো এটা ভাবলে কিভাবে?
আমার সাথে থাকা এখন তোমার জন্য রিস্কের, দেখলে না ওখানে ওরা আমাকে মারতে এসেছিল, তোমার জ্যেঠু এতক্ষণে তার পুরো দলকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন, আর আমি ওনাকে যতদূর চিনেছি উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না।
তবুও তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
আমি শুধু তোমাকে খুশী আর সুরক্ষিত দেখতে চাই।
আমার খুশি তোমার সাথে, আমার জ্যেঠু যদি ভালো মানুষ হতেন তাহলে আমি কোনো অবস্থাতেই ওনাকে ছাড়তাম না কিন্তু উনি আর আমার বাপি যা করেছেন তার জন্য ওনাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত, তাই আমি তোমাকে এই লড়াইটা বন্ধ করতে বলবো না আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।
তুমি সত্যিই বড়ো হয়ে গেছো।
দুজনে গাড়িতে উঠে পড়লো কিন্তু বেশ কিছুদূর যাবার পরেই হটাৎ গাড়ি থেমে গেল।
কি হলো? তাথৈ জিজ্ঞেস করে।
তেল শেষ।
এবার কি হবে?
আমাদের গাড়িটা এখানেই ছাড়তে হবে, উপায় নেই।
দুজনে গাড়ি থেকে নামলো, আশেপাশে কয়েকটা দোকান আছে কিন্তু বন্ধ, রাত শহরের তুলনায় খুব বেশী নয় কিন্তু তবুও রাস্তায় লোক চলাচল কম, দুজনে যেদিক থেকে এসেছিল তার উল্টোদিকে হাঁটতে লাগলো, কিছু দূর যাবার পরে একটা হোটেলে কিছু লোক দেখে সেখানে যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানে এখান থেকে অনেকটা দূরে একটা রেলস্টেশন আছে, কিন্তু এখন গাড়ি পাবে না। রাতে কোথাও থাকা যাবে কি না জিজ্ঞেস করায় একজন বললো: না, ওরা এই হোটেলে কাজ করে, এখন বন্ধ করে চলে যাচ্ছে, তবি হোটেলের পাশ দিয়ে একটা পথ দেখিয়ে বলে ওদিকে কিছুদূর গেলে একটা মন্দির আছে, সেখানে আপনারা থাকতে পারেন।
ধন্যবাদ। বলে অভয় আর তাথৈ সেদিকে এগিয়ে গেল, রাতে মন্দিরের চাতালে একটা কোনায় দুজনে আশ্রয় নিল, খানিকক্ষণ পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো সাথে বজ্রপাত এবং সেরকম জোরে ঠান্ডা হাওয়া,যার ফলে বেশ শীত শীত করতে থাকে, দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে তাথৈএর বেশি কারণ সে এর আগে কখনো এরকমভাবে থাকেনি, সে অভয়ের গা ঘেঁষে প্রায় গুঁটিসুঁটি মেরে কোনোমতে সহ্য করতে থাকলো
আমি আগেই বলেছিলাম আমার সাথে থেকোনা, তুমি শুনলে না এখন দেখছো তো কত কষ্ট হচ্ছে, রীতিমতো ঠাণ্ডায় কাঁপছো তুমি। তাথৈকে প্রায় নিজের শরীরের সাথে জড়িয়ে কথাটা বলে অভয়।
কেন বারবার এক কথা বলছো, তুমি কেন বুঝতে চাইছো না এইটুকু কষ্টে আমার কিছু হবে না কারন তুমি আমার সাথে আছো কিন্তু তোমাকে ছেড়ে গেলে আমি বাঁচবো না।
অভয় নিজের গায়ের জামাটা খুলে তাথৈএর শরীরে জড়িয়ে দেয়, এতে তার নিজের কষ্ট আরো বেড়ে যায় কারণ সে সম্পূর্ণ খালি গা।
এটা কি করছো? জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
এটা জড়িয়ে নাও।
তোমার ঠান্ডা লাগবে।
আমার অভ্যাস আছে।
না অভয় তোমার শরীরে জামা ছাড়া কিছু নেই, জামাটা পরে নাও।
না, তোমার বেশি ঠান্ডা লাগছে, তুমি জড়িয়ে নাও।
দুজনে কোনোমতে সময় কাটাতে থাকে এবং গুটিসুটি মেরে কোনোমতে বৃষ্টির জলের ছাট থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দুজনে সকালের আলো ফোটবার অপেক্ষা করতে থাকে, মন্দিরের চাতালে থাকায় তবুও কিছুটা রক্ষে, একটু আগুন জ্বালানো গেলে আরও ভালো হতো কিন্তু প্রথমত দেশলাই আনতে মনে ছিল না ওদের তাছাড়া মন্দিরের চাতালে আগুন জ্বালাবেই বা কিভাবে? ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় দুজনের কষ্ট আরও বেড়ে যায় ওরা ভেবেছিল ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই আবার রওনা দেবে কিন্তু ঠাণ্ডায় এমন অবস্থা হয় যে তারা ভোরের আলো ফোটার অনেকক্ষণ পরেও অসাড় হয়ে থাকে, ধীরে ধীরে সূর্যের আলো আরো বাড়লে ঠাণ্ডা ভাবটা কিছুটা কমে, আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হওয়ার সাথে সাথেই দুজনে আবার বেরিয়ে পরে।
একটা ট্রেকারে করে দুজনে যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন বেলা আরও বেড়েছে, স্টেশন চত্ত্বরে লোক বেশি নেই টিকিট কেটে প্লাটফর্মে যায়, চোখে মুখে জল দেয়। অনেকগুলো ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে টাইম দেখে ওরা একটা কামরায় ওঠে ওঠার আগে অভয় লক্ষ্য করে কয়েকজন লোক পাশের কামরায় উঠলো, লোকগুলোকে দেখে অভয়ের ঠিক ভালো লাগলো না।
ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে অভয় তাথৈকে নিয়ে নেমে গেল এতে তাথৈ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি হলো এই ট্রেনে..
পরেরটায় যাবো আসো।
তাথৈএর হাত ধরে পাশের প্লাটফর্মে যাওয়ার জন্য ফুটব্রীজে উঠতে উঠতে হটাৎ অভয়ের চোখে পড়লো সেই লোকগুলো দ্রুতপায়ে তাদেরই দিকে হেঁটে আসছে এবার আর অভয়ের সন্দেহ রইলো না যে ওরা ওদেরই পিছনে আছে, কিন্তু কথা হলো ওরা অভয় আর তাথৈএর ব্যাপারে জানছে কিভাবে? কিভাবে জানছে ওরা কোথায়?।
অভয়ের মুখ গম্ভীর দেখে তাথৈ একটু অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছে তোমার?
কিছুনা।
কিছু তো একটা হয়েছে।
আমাদের পিছনে লোক লেগেছে।
কি? তাথৈ চারপাশে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায়।
ওইভাবে দেখতে পাবে না, কিন্তু কথা হচ্ছে ওরা জানছে কিভাবে আমরা কোথায়?
তোমার কি মনে হয়?
আমাদের দুজনের কারো কাছে ট্র্যাকার আছে?
ট্র্যাকার?
লোকেশন ট্র্যাকার, যেটা দিয়ে কারো লোকেশন ট্র্যাক করা হয়, এবং খুব সম্ভবত সেটা তোমার কাছে।
এটা কি বলছো?
দেখো তোমার জ্যেঠুর স্থির বিশ্বাস ছিল আমি ওনার কবল থেকে পালাতে পারবো না এবং উনি যখন খুশি আমাকে মেরে ফেলতে পারবেন তাই আমার আশেপাশে ট্র্যাকার লাগানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই।
কিন্তু আমার কাছে কেন?
কারণ তুমি ওই পরিবারের মেয়ে,যদি খুব ভুল না করি তাহলে তোমার এবং তোমার দিদির লোকেশন সবসময় নজরে রাখার জন্যই উনি তোমাদের দুজনের সাথেই ট্র্যাকার ফিট করেছেন।
কিন্তু তাহলে গতরাতে ওরা আমাদের কাছে পৌঁছালো না কেন?
এটা খুব ভালো প্রশ্ন করেছো তুমি। তারপর কিছু একটা ভেবে অভয় বলে: গতকাল রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল তাও বজ্রপাত সহ।
তাতে কি?
বজ্রপাতে হয়তো ট্র্যাকিং ডিভাইসটা নেটওয়ার্কের সাথে কানেকশন হারিয়ে ফেলেছিল, সকালে আকাশ পরিষ্কার হতেই আবার সব ঠিক হয়ে গেছে, এছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা মাথায় আসছে না, কিন্তু আমাদের সাথে ট্র্যাকিং ডিভাইস আছে এটা শিওর।
বিশ্বাস করো আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা।
আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না তাথৈ, আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
কেন?
তোমার জ্যেঠুকে তুমি কতটা চেনো জানিনা কিন্তু যেটা আমি বলেছিলাম উনি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কারো ক্ষতি করতে পারেন।
তাথৈ চুপ করে থাকে কিন্তু অভয় বলে চলে: জানি কথাগুলো তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি উনি এমন একজন মানুষ যিনি নিজের ছেলেকেও প্রাণে মারবার ভয় দেখান শুধুমাত্র ছেলের মাকে নিজের নিয়ণ্ত্রনে রাখবেন বলে।
মানে,এটা কি বলছো তুমি জ্যেঠুমণির ছেলে?
হ্যাঁ, ওনার আরও একজন ছেলে আছেন এবং তার মাকে তুমি হয়তো চেনো?
কে?
তুমি তোমার দিদি বৃষ্টির মাসিকে চেনো?
শিউলী মাসি?
হ্যাঁ, উনি এবং ওনার ছেলে রোহিত।
শিউলী মাসি তো নিরুদ্দেশ।
না,তাকে এতবছর এই শহরেই রেখেছিলেন বীরেন বাবু, একটা বিশেষ কারনে তাকে মারেননি।
তুমি শিউলী মাসির কথা কিভাবে জানলে?
জেনেছি, তোমার জ্যেঠু নিজের ওই ছেলের প্রতি কোনো দায়িত্বই পালন করেননি এমনকি নিজের স্বীকৃতিটুকুও দেননি, শুধু শিউলী দেবীকে কিছু টাকা দিতেন মাসে মাসে।
একজন মানুষ এতটা নীচে কিভাবে নামতে পারে? তাথৈএর গলায় রাগ, ঘেন্না, চাপা কষ্ট মেশানো।
ক্ষমতার লোভ এবং ক্ষমতা অর্জনের পরে তাকে নিয়ণ্ত্রন না করতে পারা এই দুইতেই তিনি এতটা নীচে নেমেছেন।
আর আমার বাপি? তার তরফ থেকেও কি আমার কোনো ভাই বোন আছে?
বোধহয় না, তবে উনি অসম্ভব দাদাভক্ত, বীরেন ভট্টাচার্যের প্রায় সব খারাপ কাজের সঙ্গী উনি।
জানো ছোটোবেলায় না আমি বাপিকে মাকে মারতে দেখেছি, কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না খুব ভয় পেতাম, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওনাদের মতো খারাপ নই।
আমি জানি, একবার তোমাকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম দ্বিতীয় বার করবো না।
আমিরকে দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় বিদিশার, এক নতুন অনুভূতি যেটা আগে কখনো অনুভব করেনি, সে বুঝতে পারে না এটাই কি ভালোবাসা? সে কি আমিরকে ভালোবেসে ফেলেছে? আমিরের সাথে আলাপ বেশী দিনের নয়,রয়ের সাথে পরিচয়ের পরে প্রায়ই ও রয়ের বাড়িতে আসতো অবশ্যই রয়কে বলে, মাঝে মাঝেই রয় থাকতো না কিন্তু নিজে না থাকলেও আমিরকে রেখে যেত, বিদিশারও খারাপ লাগতো না আমিরের সঙ্গ দুজনে গল্প করতো, ধীরে ধীরে আমিরের সঙ্গ আরও ভালো লাগতে থাকে, তার সাথে ভালো লাগতে থাকে এই আমিরকে এমন নয় যে রয়কে সে অপছন্দ করে কিন্তু রয় স্রেফ বন্ধু, অথচ আমির.. সে তার থেকে বেশী কিছু কিন্তু ঠিক কি সেটা বিদিশা বুঝতে পারতো না, কিন্তু এইকদিন রয়ের অনুপস্থিতিতে আমিরকে ভেঙে পরতে দেখে বিদিশার খুব কষ্ট হয়, আমিরকে সে এইভাবে কল্পনাও করতে পারে না, সে অনেক চেষ্টা করেছে আমিরকে বোঝানোর অনেকবার বলেছে কিন্তু লাভ হয়নি আজ আবার ওকে ভেঙে পরতে দেখে আর থাকতে পারলো না বিদিশা বললো "আমির, এইভাবে ভেঙে পরতে নেই, রয় তোমাকে ভরসা করতো তোমার বিপদের কথা শুনে কিছু না ভেবে ছুটে গিয়েছিল এখন তোমার উচিত ওকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা"।
কিন্তু ওকে পাবো কোথায়? ওর ফোনটাও বন্ধ।
আমির ওর গাড়িতে ও ছিল না, হয়তো বীরেন ভট্টাচার্য ওকে কোথাও আটকে রেখেছে, টর্চার করছে, আমাদের উচিত যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বার করা।
যদি এটা সত্যি হয় তাহলে আমি ওকে খুঁজে বার করবোই কিন্তু..
কিন্তু কি আমির?
আম্মিকে আর কতদিন মিথ্যা বলবো? আমার আম্মি যাওয়ার পরে উনিই আমাকে নিজের ছেলের মতো কাছে টেনে নিয়েছিলেন কোনোদিন রয়ের সাথে আমার তফাৎ করেননি আর আমি.. আমির কাঁদতে থাকে।
বিদিশা ওর কাছে বসে আমিরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে: আমির তুমি ওনাকে আম্মি বলেছো আর রয় তোমাকে ভরসা করতো তাই ওনার দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছে এখন তুমি ওনার খেয়াল রাখবে না তো কে রাখবে?
কিন্তু আমি আর পারছি না ওনাকে মিথ্যা বলতে।
এটুকু আমাদের করতেই হবে আমির, নাহলে রয় ফিরে এলে কি উত্তর দেবো?
আমির আবার ভেঙে পরে বিদিশার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে বিদিশা আমিরের মাথায় পিঠে হাত বোলাতে থাকে।
বীরেন ভট্টাচার্যের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়, একে তো এআরসি তার লোকদের মেরে পালিয়েছে তার সাথে টাকা আর শিউলীর হদিশ ও নিয়ে গেছে ,রকি আর ধীরেন ঠিকই বলেছিল ওকে শেষ করে দেওয়াই উচিত ছিল, জগা অবশ্য খবর দিয়েছিল যে এক হাসপাতালে ও আছে সেখানেও লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেখান থেকেও বেঁচে গেছে, তিনি ভালো করেই জানেন এআরসি এখন একা, ওকে শেষ করার এটাই উপযুক্ত সময় এআরসি একবার যদি নিজের দলের কাছে পৌঁছাতে পারে তাহলে আবার পুরো শক্তি দিয়ে তার উপরে আঘাত হানবে আর সেটা কত ভয়াবহ কত নির্মম, কত নৃশংস হতে পারে তার একটা ছোট নমুনা তো বাণিজ্যনগরীতে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন, সেদিনের ঘটনা মনে পরতেই বীরেন ভট্টাচার্যের সারা শরীরে আতঙ্কের চোরাস্রোত বয়ে যায়, কিন্তু এআরসি এখনো তার দলের কাছে পৌঁছাতে পারেনি এটাই ভরসা সে এখনো একা... না একা নয় তার সাথে আরও একজন আছে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, যে এখন তার সাথে আছে তার ভাইজি তাথৈ।
তিনি তার ভাইকে বলেন: ধীরেন ওকে খুঁজে বার কর, এআরসিকে বাঁচতে দেওয়া যাবে না ওকে শেষ করতেই হবে।
তুমি চিন্তা কোরো না দাদা ওর পিছনে আমার লোক ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে একটু সুযোগ এলেই শেষ করবে।
কিন্তু ওর সাথে তাথৈ আছে।
তাথৈএর জন্যই তো ওর খোঁজ পেলাম, আগে ওই এআরসিকে শেষ করি তারপর তাথৈএর ব্যবস্থা করবো। ধীরেন ভট্টাচার্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বীরেন ভট্টাচার্য জগাকে বললেন: কি রে খুব তো বলেছিলি ওই এআরসিকে তুই শেষ করবি কি হলো?
দাদা ছোটদাদার মতো আমার লোকেরাও ওদের পিছনে লেগে আছে কিন্তু তাথৈ দিদিমণির জন্য কিছু করতে পারছে না।
তাহলে দুটোকেই শেষ কর।
এটা কি বলছেন দাদা? জগা যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা ওর গলার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে।
ঠিকই বলছি, ও ওই ছেলেটার সাথে গেছে আমাদের ছেড়ে তাই আমিই বা কেন ওর কথা ভাববো?
কিন্তু ছোটদাদা?
তোকে যা বলেছি সেটা কর, ধীরেন যদি ওর মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারে তো ভালো নাহলে তুই ওকেও ওই এআরসির সাথে শেষ করে দিবি, বুঝেছিস?
হ্যাঁ দাদা, বুঝেছি।
আর এটা যেন কেউ না জানে,মনে থাকবে?
হ্যাঁ দাদা।
ট্রেন নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে একের পর এক স্টেশন আসছে আবার পিছনে চলে যাচ্ছে লোক উঠছে আবার নেমেও যাচ্ছে অভয়দের কামরায় খুব ভিড় নেই, মোটামুটি খালিই বলা চলে, তাথৈ আর অভয় একটা বেঞ্চে বসে আছে তাথৈ জানালার ধারে আর পাশে বসে অভয় ওর মাথায় এখন অনেক চিন্তা ঘুরছে, তার মধ্যে মায়ের চিন্তা, বস্তির লোকেদের চিন্তা আর এইমুহূর্তে যেটা সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে সেটা হলো ওদের পিছনে ধাওয়া করা লোকগুলো, এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে ওরা ট্র্যাকারের সাহায্যেই ওদের লোকেশন ট্র্যাক করছে কিন্তু কোথায় ট্র্যাকিং ডিভাইসটা?
একসময় অভয় দেখে তাথৈ ঘুমে ঢুলছে যেটা স্বাভাবিক এই কদিনে মেয়েটার উপর থেকে কম ধকল যায়নি অভয়কে হাসপাতালে আনা সেখানে রাত জেগে থাকা তার আগে বাড়ি থেকে না জানি কখন বেরিয়েছে তার উপরে গত রাতেও ঘুম হয়নি। অভয় তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের কাঁধে টেনে নেয়, তাথৈ একবার অভয়ের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অভয়ের কাঁধে মাথা রাখে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
অভয় একদৃষ্টিতে তাথৈএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, এই মেয়েটাকে সে ভুল বুঝেছিল মেয়েটা শুধু তার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করে আছে আর সে... ভুল বুঝে তাকে রীতিমতো কষ্ট দিয়ে গেছে। তাথৈএর মুখের উপর চুল আসছিল অভয় সেটা সরিয়ে দেয়, নিজের মনেই বলে "তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার লড়াই শেষ হবার পরে যদি তুমি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে কথা দিচ্ছি কখনো তোমার চোখে জল আসতে দেবো না , তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবো, কিন্তু জানিনা আমার হাতে তোমার বাবা আর জ্যেঠুকে মরতে দেখার পরেও তুমি আমার সাথে থাকতে রাজী হবে কি না, যদি নাও হও তাহলেও আমি সারাজীবন তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।"
ঘুমন্ত অবস্থায় তাথৈএর মুখ আরও সুন্দর আরও নিষ্পাপ লাগে অভয়ের সে একদৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে হটাৎ তার নজর পরে তাথৈএর গলায় একটা চেন আর লকেটের উপর, সোনার চেন এবং লকেটটাও সোনার। লকেটটা দেখে একটা সম্ভাবনা মাথায় আসে অভয়ের সে একবার কামরায় আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়, যদিও লোক বেশি নেই এবং তাদের দিকে কারোরই নজর নেই তবুও সে সোয়াস্তি পায় না।
অভয় ভাবতে থাকে যে কি করা যায়?, যে লোকগুলো তাদের পিছনে ধাওয়া করছে তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বীরেন ভট্টাচার্যকে বলে দিয়েছে তার কথা অতএব তাদের ঝেড়ে ফেলতেই হবে কিন্তু কিভাবে? ট্রেনের কামরায় কাজটা একটু মুশকিল, আবার প্ল্যাটফর্মে নেমে ওদের মোকাবেলা করাও যাবে না সেখানেও লোক থাকবে তাছাড়া তাথৈকে একা ছাড়তে মন চাইছে না, শেষপর্যন্ত অভয় ঠিক করলো সে কিছুক্ষণের জন্য প্ল্যাটফর্মে নেমে যাবে এছাড়া উপায় নেই।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils