Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
নষ্টা

 
ঘুম থেকে উঠেই অভ্র দেখল দয়িতার স্নান সারা হয়ে গেছে। একটা নীল রঙা কুর্তি আর ঢোলা পালাজো পরেছে। ভেজা চুল। চোখে ওর ট্রেড মার্ক, গাঢ় কাজল ড্রয়িংরুমের মেঝেতে বসে জামা-কাপড় ভাঁজ করছে।
ওর জামা-কাপড়!
দয়িতা চলেই যাবে, তাহলে?
কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে গেল অভ্র। দাঁত মাজতে মাজতে সামনের ছোট্ট আয়নায় চোখ গেল। আর নিজেকে নয়, অবিকল যেন একটা 'গাধা' প্রতিবিম্ব দেখছে বলে মনে হল। এমন একটা গাধা, যে এতদিন এক ছাদের নিচে থেকেও বুঝতে পারেনি তার বিয়ে করা বৌ আসলে কি! "নষ্ট মেয়েছেলে, শা লী!" দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল অভ্র। "আউচ" - অসাবধানে ব্রাশের খোঁচা লেগে গেছে মুখের ভেতর দিকে!
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে দুটো বড় বড় ট্রলি রাখা আছে একচিলতে রান্নাঘরের সামনে। শা লী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য তৈরি তবে! যাক, বাঁচা যাবে! নষ্ট মেয়েছেলে কোথাকার!
সেদিনের কথাটা ভাবতেই ঘেন্নায় গা টা যেন গুলিয়ে উঠল অভ্রর। দয়িতা স্নানে গেছিল। ফোনটা রাখা ছিল ডাইনিং টেবিলের ওপর। হঠাৎ করেই চোখে পড়েছিল ফেসবুকের মেসেঞ্জারে আসা একটা মেসেজের নোটিফিকেশন - "গুড মর্নিং! ঘুমিয়েছিলে রাতে? আমার তো একটুও ঘুম হয়নি! খালি মনে হচ্ছিল, আমাদের 'আমরা' হতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? আর যে পারছি না আমি!"
অবাক হয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিয়েছিল অভ্র। দয়িতার ফোনের পাসওয়ার্ড জানে না ও। তাই ফোন খুলে পুরো মেসেজটা, বা তার আগের কোনো মেসেজ দেখতে পায়নি। শুধু সেন্ডারের নামটাই চোখে পড়েছিল। সোমনাথ সেনগুপ্ত
কিন্তু কে এই সোমনাথ সেনগুপ্ত? আর দয়িতাকে এরকম "ঘুমোতে পারছি না" মার্কা গদগদ মেসেজ কেন পাঠিয়েছে? স্নানঘরের দিকে একনজর দেখে নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিয়েছিল অভ্র। দয়িতার ফেসবুক প্রোফাইল খুলেছিল। গত জুনে পুরী গেছিল দয়িতা, সেইসময় সমুদ্র সৈকতে তোলা একটা ছবি আছে প্রোফাইলে। কভার ফটোতে সমুদ্রের সূর্যাস্ত। আগে নজরে পড়েনি, হলুদ লম্বা জামায় বেশ ভাল লাগছে দয়িতাকে! মানে, এমনি যা লাগে, তার চেয়ে অনেক ভাল! নইলে প্রায় নব্বই কেজি ওজন, হাতির মতোই লাগে তো ওকে! চুল স্ট্রেট করিয়েছিল একবার, এখন ঝাঁটার কাঠির মতো লাগে। চোখের কোণে ফাইন লাইনস এসে গেছে। বুকও আর আগের মতো নেই! ঝুলে টুলে একশা! আর সেই মেয়েকে নিয়ে নাকি কেউ 'আমরা' হবার স্বপ্ন দেখে! হুহ্! ভেবেই হাসি পাচ্ছিল অভ্রর।
তবে সারাদিন ধরে ভাবার পরে কিন্তু আর হাসি পায়নি একটুও। খালি মনে হচ্ছিল, এটাই তো একমাত্র মেসেজ না! এর আগেও কত কথা হয়েছে দুজনের মধ্যে। আরও কত কি হয়েছে কে জানে! ইআর মেসেজটা দেখে তো মনেই হচ্ছে দুজন অনেক কিছু প্ল্যান সেরে ফেলেছে! বা ! অত যেন সোজা! দয়িতা মিত্র অভ্রাংশু মিত্রের ওয়াইফ! রীতিমতো আইনি বিয়ে। অত সোজা! আর মেসেঞ্জারে ন্যাকামি করে চ্যাট করা যায়, কিন্তু বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে গেলেই বোঝা যায় কত ধানে কত চাল!
দিন গড়াতে গড়াতেই সকালের পরিহাস যেন একটা অক্ষম রাগে পালটে গেল অভ্রর। এই মুহূর্তে অভ্র অফিসে, দয়িতাও কলেজে। কিন্তু হয়ত এখনও চ্যাট করছে দুজনে। 'আমরা' হবে! কত সখ!
আরেকবার ফেসবুক খুলে দয়িতার প্রোফাইল খুলল অভ্র। সেখান থেকে সোমনাথ সেনগুপ্তর প্রোফাইল। "দেখি বদনখানা একবার!" একটাই সোমনাথ আছে দয়িতার প্রোফাইলে। এইই সে! কিন্তু মা তো প্রোফাইল লক করে রেখেছে। কিছুই দেখা গেল না। না ছবি, না ফ্রেন্ডলিস্ট। এই হয়েছে এক নতুন ন্যাকামি! প্রোফাইল লক করে রাখা! শা লা জুকের বার্গ!
রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিল অভ্রর। অফিস থেকে বেরিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়েই চলে এসেছিল বাড়িতে। দয়িতা তখন বই পড়ছিল টেবিলে বসে। নেকি! নাগ রের সাথে লটরপটর করে আবার বই পড়া! এই নাকি টিচার! আবার সে নাকি স্পিরিচুয়াল! ঘটা করে পুজো করে! সোমবার করে নিরামিষ খায়!
কোনোরকম ভনিতা না করে চেঁচিয়ে উঠেছিল অভ্র। "সোমনাথ কে?"
"কে সোমনাথ?" চমকে তাকিয়েছিল দয়িতা। একটু যেন ভয় পেয়েছিল প্রশ্নটা শুনে।
"ন্যাকামি করো না তো। আমি সব জানি। কে এই সোমনাথ?" সারাদিন পরে ফেটে পড়েছিল অভ্র।
বেশি কিছু বলে নি দয়িতা। চুপ করেই ছিল। তারপর বলে উঠেছিল "শোনো, স্যরি... আসলে... তুমি আমাকে একদম সময় দাও না... একা লাগত খুব... এইভাবেই... একদিন ওঁর মেসেজ এলো..."
"আর অমনি ভুলে গেলে তুমি একটা বাড়ির বৌ? লদকা লদকি চালু করে দিলে? আবার ঘটা করে পুজো করে! উপোস করে! নষ্ট মেয়েছেলে কোথাকার!" অভ্রর মাথায় আগুন জ্বলছিল যেন।
"আমি স্যরি। তোমাকে এভাবে... কিন্তু তুমি তো জানোই মাঝেমাঝে আমাদের নিজেদের ওপর কন্ট্রোল থাকে না!"
"শা লী মা গী! এত কথা তোর বেরোয় কি করে?" চিৎকার করছিল অভ্র।
"বললাম তো, স্যরি!"
"কু ত্তী! বাবা মায়ের এই তো শিক্ষা.."
"তুমি আমাদের মধ্যে বাবা মা কে কেন টানছ? "
"কেন টানব না? শিক্ষা দিতে পেরেছে নাকি তোকে ওরা? বিবাহিতা মহিলা হয়ে পিরীত মা রাচ্ছে!" রাগলে অভ্র 'বাপের কুপুত্তুর'!
"প্লিজ, বাবা মা কে নিয়ে কিছু বলো না। যা হয়েছে তার দায় আমার একার।" দয়িতা তখনও বলে যাচ্ছিল।
আর সহ্য হয়নি অভ্রর। চুলের মুঠি ধরেছিল দয়িতার। "শা লী!"
"গালাগাল দিও না এভাবে প্লিজ। তুমি তো সবসময় আজেবাজে কথা বলো আমাকে। আমি নাকি হাতি! আলুর বস্তা! আমাকে নিয়ে বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া যায় না! শেষ কবে একটু আদর করেছ, ভাল করে কথা বলেছ মনে আছে তোমার?" কঁকিয়ে উঠেছিল দয়িতা।
"ভাল করে কথা! আদর! তুই তার যোগ্য! তুই কাছে এলেই আমার গা বমি করে। সত্যিই তো তুই আলুর বস্তা!"
আর কথা বাড়ায় নি দয়িতা। শুধু বলেছিল "আমার গায়ে হাত দিও না। আইন তো জানোই। ফেঁসে যাবে কিন্তু।"
চুপ করে গেছিল অভ্র। ওর বন্ধু চঞ্চল মাস কয়েক খুব ভুগেছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কেসে। প্রায় জেল হয় হয় অবস্থা ছিল। জলের মতো টাকা খরচ হয়েছিল। সবই শুনেছে অভ্র। তাই বাধ্য হয়েই চুপ করে গেছিল।
তবে, 'চুপ' করেনি। দয়িতার বাবা নেই, মা আছেন। সেই মানুষটিকে জানিয়েছে সব। দয়িতার বেশ কয়েকজন 'নেকি' বন্ধু আছে। তাদের সাথে বিশাল হা হা হি হি চলে দয়িতার। তাদেরকেও জানিয়েছে সবটা। নিজের দিকের সব আত্মীয় স্বজনদেরকেও জানাতে ছাড়েনি। আর এরমধ্যেই আরও একবার একটা মেসেজ চোখে পড়েছিল "বেবি, আর ইউ ওকে? প্লিজ লেট মি নো হোয়েন ক্যান উই টক টুডে। কান্ট ওয়েট টু স্পিক। লাভ!" লেখা একটা মেসেজ।
তার মানে এতকিছুর মধ্যেও সব চলছে!
আরেকপ্রস্থ ঝামেলা লেগেছিল ওদের মাঝে। দয়িতার মাকে ফোন করেছিল। বলে উঠেছিল "আপনার নষ্ট, ক্যারেকটার লেস মেয়েকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলুন। আমাদের বাড়িতে থেকে এমনি করা যাবে না। কী কী সব করেছে ভগবান জানে! নোংরা মেয়েছেলে"
কেঁদে উঠেছিল মুটকিটা! ফোন ছাড়ার পর বলে উঠেছিল "তুমি নিজে কোন মুখে কথা বলো? মৌসুমীর কথা ভুলে গেলে? কিসব মেসেজ করতে তুমি ওকে... সব তো ছিল আমার কাছে। আমিও তো তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।"
"চোপ! মৌসুমীর সঙ্গে তোর তুলনা? ৩৬-৩২-৩৬! আর তুই? ৪০-৪০-৪০ - সব সমান, শুয়োয়ের মতো!"
সেই শেষ! সেইদিনই দয়িতা বলে দিয়েছিল আর এই বাড়িতে থাকবে না। সামনের রবিবার চলে যাবে। পরে ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়ে দেবে।
আজ সেই রবিবার। আর সত্যিই দয়িতা চলে যাচ্ছে!
ওই সোমনাথ সেনগুপ্তের ভরসায়! ফেসবুক থেকে এত কিছু!
ওকে দেখে উঠে দাঁড়ায় দয়িতা। পা মুড়ে বসতে পারে না, উঠতে বেশ কষ্টই হল। উঠে বলল, "আমার বাড়ি থেকে দেওয়া গয়না গুলোই শুধু নিলাম, যদিও সব গয়নাই আইনত আমার প্রাপ্য, তাও তোমাদের দিকের গুলো রেখে যাচ্ছি। দেখে নাও আর এই কাগজটায় সই করে দাও।" একটা ফোর কাগজ ওর হাতে।
"চলেই যাচ্ছ তুমি? এত পিরীত? সে দুদিন পরেই ছেড়ে দেবে তোমাকে। তখন বুঝবে। কাছে গেলেই বুঝবে কোন মা লের পেছনে পড়েছে!" হাত দিয়ে অশ্লীল একটা ইঙ্গিত করল অভ্র।
আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দয়িতার হাতের ফোনটা বেজে উঠল।
"হ্যালো? হ্যাঁ দাদা, আমি লোকেশানেই আছি, দু মিনিটে আসছি।" বলে ফোনটা কাটল ও। দু এক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল "আসছি। ভাল থেকো, অভ্রাংশু!"
নাহ্, একবারও পিছনে ফিরে তাকায় নি মেয়েটা।
চোখের জলটুকু দেখাতে চায় নি!
অনেক স্বপ্ন নিয়েই তো সংসার করতে এসেছিল আর পাঁচটা মেয়ের মতো। কী যে হয়ে গেল!
সব কষ্ট একদিকে... আর একজন চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যাবার শূন্যতা... অন্যদিকে। তার গভীরতা আরও অসহনীয়!
গাড়িতে বসে ফোনটা ব্যাগে ঢোকায় দয়িতা।
এখন আর ফোনটার দরকার নেই। আগে তো ইচ্ছে করেই এদিক সেদিক ফেলে রাখত... যাতে 'সোমনাথে' মেসেজ গুলো অভ্রর চোখে পড়ে। ভেবেছিল যদি... যদি কিছু পালটায়! যদি ওকে এখনও ভালবাসে অভ্র! যদি বলে "এসো আবার শুরু করি!" কিন্তু না... সে পাল্টাবার না!
বড্ড একা লাগছে ওর। বড্ড খালি।
শুধু অভ্রই না, সোমনাথের যে আর প্রয়োজন নেই! এবার অ্যাকাউন্টটা ডিঅ্যাকটিভেট করে দিতে হবে...
বেচারা অভ্র! ভাবতেও পারল না - সোমনাথ আর কেউ না... স্বয়ং ওর আরাধ্য, মহাদেবের আরেক নাম!
গাড়ি চলছে হু হু করে।
দয়িতা কাঁদছে।
তা কাঁদুক। সব জল না হয় শেষ হয়ে মরুভূমি হয়ে যাক...
তারপরেই তো মরুদ্যান আসবে....
 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 24-10-2022, 11:06 AM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)