23-10-2022, 08:30 PM
উপরের অংশের পর
মামা তো অবাক। এ মেয়ে যে সত্যিই সরাসরি ওনার সাথে ইশারায় কথা বলছে! বারবার হাতের ইশারায় ওই বাড়ির ছাদে যেতে বলছে! কেমন করে হেসে উঠছে মাগো! এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল কিন্তু এরপরে ইশারায় মহিলাটি যা দেখালো তাতে মামা আরও দু পা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হলো। ওনার হাতের ইশারায় মামা কোনো উত্তর দিচ্ছেনা দেখে ওই মহিলাটি নাকি নতুন এক ইশারা করে বোঝাতে চায় যে তাহলে কি সে ওখানে যাবে? মামার পাশে!! এর উত্তরে মামা দু পা পিছিয়ে যেতেই ওই মহিলা নাকি আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে। মানুষটাকে ভয় পেতে দেখে সে যেন খুব খুশি হয়েছে। মামা একবার ভাবলো একবার রণজয়কে ডেকে এনে দেখাবে এই মহিলাকে, আবার ভাবলো এতো কিছুর দরকার কি? সে চলে গিয়ে শুয়ে পড়লেই তো হয়। এখনো কেন সে দাঁড়িয়ে পাগলের কান্ড কারখানা দেখছে? যদিও মনে মনে বারবার পাগল পাগল বলছিলো মামা কিন্তু ভেতরের থেকে কেউ যেন বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিলো ওটা পাগল নয়। পাগল নয়! ওটা অন্য কিছু! তুই পালা! নইলে এখুনি ওটা তোর বারান্দার বাইরে এসে দাঁড়াবে...কিংবা হয়তো তোর পাশে!
ভয় যেসব অদ্ভুত অবাস্তব ব্যাপার গুলো মনে আসে সেসবই অনুভব করছিলেন মামা। কিন্তু সত্যিই কি পুরোটাই অবাস্তব? মামা একবার ভাবলেন ধুর ওটা..... ওটা একটা মেন্টাল পেশেন্টই। ওটাকে নিয়ে ভয় পাবার কোনোরকম দরকার নেই। সে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। দেখবে কি করতে পারে ওই পাগলী। মামা বলেছিল পরে নিজেই অবাক হয়ে গেছিলো নিজের সাহস দেখে। এমন একটা মুহূর্তে হটাৎ এতটা সাহস এলো কোথা থেকে? ভূত হোক নাহোক তার তো উচিত ছিল ফিরে গিয়ে বন্ধুদের পাশে শুয়ে পড়ার। কিন্তু কেন যেন তখন মনে হচ্ছিলো না! সে দাঁড়িয়ে আরও দেখবে ওই মহিলার পাগলামি। এটা কি কোনো প্রকার অস্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল নাকি আরও ভয়াবহ কিছু সেটা জানেনা মামা। কিন্তু তিনি আরও কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলেন। মামা আবারো জানলার কাছে এগিয়ে গিয়ে চুপ করে দাঁড়ান। এইবার মামা লক্ষ করেন এতক্ষন যে মানুষটার মুখে হাসির রেখা ছিল সে মুখে হকঠাৎ করেই কেমন রাগ ফুটে উঠছে। তবে সেটা মামাকে দেখে নয়। এবাড়ির পাশের যে গা ঘেঁষে বাড়িটা রয়েছে সেদিকে তাকিয়ে। মামাও একবার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেন কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। এদিকে আবারো ওই বাড়ির ছাদে তাকাতে তিনি দেখেন সে মহিলা এখনো ভুরু কুঁচকে রাগী কিন্তু ভয় ভয় কাকে যেন দেখছে। চোখ সোজা পাশের বাড়ির ছাদের দিকে কিংবা হয়তো কোনো জানলার দিকে। সে একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় মামা শুনলো পাশের বাড়িটা থেকে কেউ যেন হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলো - এই! তুই আবার এতো রাতে বেরিয়েছিস! ফিরে যা! কি করছিস তুই এখানে এতো রাতে? যা বলছি! আমি কিন্তু যেতে বলেছি! যা! যাআহ্হ্হ!! এই ওকে যেতে দে! যেতে দে ওকে বলছি! যা মা ফিরে যা!
মামা দেখলো ওই আদেশ শুনে ওই বাড়ির মেয়েটি কেমন মুখ বিকৃত করে আবোল তাবোল নিজে কিসব বলতে বলতে ওই বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে কোথায় যেন অন্ধকারে মিশে গেলো। আর কোনো আওয়াজ নেই। আবার সব শান্ত। মামাও যেন এবার হাপ ছেড়ে বাঁচলেন। একটা ভয়ের ভার যেন চেপে ছিল এতক্ষন তার ওপর তা সে যতই নিজেকে সাহসী হিসাবে প্রমান করার চেষ্টা করুক। তারমানে ওটা সত্যি একজন মানুসিক ভারসাম্যহীন মহিলা। মামার মতো ও বাড়ির কেউ একজনও তাকে ছাদে এতরাতে ঘোরাফেরা করতে দেখে ওই কথা বললেন। তারা তো একে ওপরের প্রতিবেশি তাই নিশ্চই সে জানে যে এ মেয়ে রাতে এরকম ছাদে হাঁটাহাঁটি করে। কিন্তু ওই দ্বিতীয় বার ওটা কাকে বললেন "এই ওকে যেতে দে?" কাকে যেতে দেবার কথা বললেন লোকটা? ওই মহিলা তো একাই ছিল। সাথে তো আর কাউকে দেখা যায়নি। নাকি ছিল? উহু না কেউ থাকলে ওই মেয়ে ছাদের বাইরে পা বাড়িয়ে দিচ্ছে দেখেও কি সে চুপ করে থাকতো নাকি? মামা এসব ভাবছিলেন এমন সময় ওনার মনে হলো ঝপাং করে কিছু একটা আওয়াজ পেলেন তিনি। যেন কিছু একটা লাফ দিলো কোথাও থেকে। আর সেটা বেশ জোরে গিয়ে মাটিতে গিয়ে পড়েছে। এতো রাতে কেউ কি কিছু ওই পুকুরে ফেললো নাকি? এইরে! ওই মেয়েটা আবার জলে টলে?!! এই সেরেছে! যাইহোক বাবা। আর দাঁড়িয়ে থাকা নয়। মামা আবার ফিরে এসে বন্ধুর পাশে শুয়ে পড়েন।
পরের দিন সবাই একসাথে বসে লুচি তরকারি খাচ্ছে। রণজয় মামার মামাবাবুকে সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হয় তাই তিনি বেরিয়ে গেছেন। বাড়িতে খালি মামিমা আর সন্দীপ এছাড়া আমার মামারা। খাবার টেবিলেই আমার ছোট মামা আগের রাতের ঘটনাটা বলেন। কিন্তু তখন শেষের অংশটা বলতে ভুলে গেছিলেন। শুধুই ওই মহিলাটিকে দেখার কথা বলেন। বাকিরা অবাক হয়ে পুরোটা শোনে। মামিমা তো আকাশ থেকে পড়লেন এমন কথা শুনে। বললেন ওই বাড়িতে তো তুলিকা বলে এক মেয়ে থাকে আর তার বাবা থাকে। মা নাকি অনেক আগেই মারা গেছেন। তুলিকা যখন খুব ছোট তখনই। আর সেই মেয়ে তো মোটেও মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, একেবারে স্বাভাবিক একটি মেয়ে। মামীর সাথে না জানে কতবার দেখা হয়েছে কথা হয়েছে। কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখেননি তিনি। আর ওই বাড়িতে তো বাবা মেয়ে ছাড়া কেউ থাকেও না। আর পাশের একতলা বাড়িতেও দুইজন বয়স্ক মানুষ থাকেন। স্বামী স্ত্রী। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
কিন্তু মামার কোনোরকম ভুল হয়নি। ওই একতলা বাড়ি মোটেই নয়, উনি ওই উল্টোদিকের দোতলা বাড়িটাতেই দেখেছিলেন ওই মেয়েটিকে। আর সে যে মানসিক ভাবে দুর্বল সেটা ভালো করেই বুঝে ছিলেন। কিন্তু এবাড়ির সবাই বলছে সে স্বাভাবিক? ব্যাপারটা কেমন হলো? সকালে ছাদে গিয়ে মামা ওই বাড়িটা অন্য বন্ধুদের দেখায়ও। যাইহোক সকালে সবাই মিলে আবারো ঘুরতে বেরোয়। পুকুরের পাশ দিয়ে ওই গলি ধরে যাবার সময় যখন মামা ওই বাড়িটা ক্রস করে যাচ্ছিলেন তখনও রাতের কথা মনে পড়তে কেমন যেন একবার ভয় মতো লাগে। অথচ সে বাড়ি কিন্তু একেবারে সাধারণ একটি বাড়ি। বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে, ঘুরে ফিরে কয়েকটা জায়গার ছবি তুলে তারা ফিরে আসে আবার বাড়িতে। দুপুরে আবার শুয়ে রেস্ট নিয়ে বিকালে এক কাপ করে চা পান করে সবাই ছাদে যায়। সন্দীপও আসে ওদের সাথে ছাদে। এইবার আবার দেখা পায় মামা ওই মেয়েটির। রান্না ঘরের জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তাকে। নিজের বন্ধুদের ডেকে দেখায় মামা। রান্না ঘরের ছোট জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাকে। কোনো কাজ করতে করতে পেছন ফিরে কারো সাথে কথা বলছে আর হাসছে। বোধহয় বাবা। কিন্তু আজকের এই হাসি একেবারে স্বভাবিক। সত্যিই আগের রাতের সাথে এর কোনো মিল নেই। কিন্তু মেয়েটা যে সেই সেটা বোঝা যাচ্ছে ভালোই। রাতে দিনের মতো পরিষ্কার সব কিছু বোঝা না গেলেও চাঁদের আলোয় যে এই মেয়েটিকেই মামা দেখেছিলো তাতে কোনো সন্দেহ ছিলোনা। মুখটা চিনতে ভুল হয়নি ওনার।
ব্যাপারটা কি? কালকে একরকম দেখলো আর আজ একরকম। যমজ বোন টোন কেউ আছে নাকি? যে একটু এবনর্মাল? কিন্তু মামী তো বললো খালি বাবা আর মেয়ে থাকে। সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সন্দীপকে জিজ্ঞেস করাতে সেও বললো ওই দিদিটা তো থার্ড ইয়ারে পড়ে। খুবই ভালো পড়াশুনায়। এই বাড়িতে প্রতি বছর লক্ষী পুজোর প্রসাদ দিতে আসে। এ বাড়ি থেকেও যায় প্রসাদ। কই কোনোদিন তো কিচ্ছুটি টের পায়নি কেউ। আরও মাথাটা গোলমাল হয়ে যায় মামার। আশ্চর্য! কাল নিজে দাঁড়িয়ে দেখলো ওই মেয়ে অদ্ভুত সব কান্ড কারখানা করছিলো। আর তাকে দেখে কি বিকৃত ভাবে ঘাড় বেঁকিয়ে হাসছিলো..... সেসব কি চোখের ভুল নাকি?
সন্ধে নাগাদ মামাবাবু যখন বাড়ি ফিরলেন তখন সবাই মিলে ওনাকে ঘটনাটা জানালে উনি প্রথমে অবাক হলেন। তারপরে কি একটা ভেবে মুচকি হেসে নিজ মনেই বললেন - এখনো যায়নি তারমানে। আসে এখনো দেখতে। ছোট মামা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কে যায়নি? কে আসে মামাবাবু? উত্তরে নিজের বৌকে সবার জন্য চা বানাতে বলে তিনি বলেন - মামা যা দেখেছে তা মোটেই ভুল কিছু দেখেনি। ওটি ওই মেয়েটিই ছিল, তুলিকা। এর আগেও দুবার নাকি এমন হয়েছিল তুলি মানে তুলিকার সাথে। কিন্তু সেটা ওর আরও কম বয়সে হয়েছিল। ঠিক কাল যা মামা দেখেছিলো এক্সাক্ট তাই হয়েছিল। একেবারে পাল্টে যায় নাকি ও। মেয়েটার বাপের বাড়ি, মামার বাড়ির সবাই এসে ডাক্তার দেখায় কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আর এমনও নয় যে মায়ের চলে যাবার আঘাত পেয়ে হটাৎ করেই এমন হয়ে গেছে। এসব শুরু হয় মা চলে যাবার তিন চার বছর পর। ততদিন সে মেয়ে একেবারে নরমাল ছিল। পরে কাকে যেন ওরা ডেকেও এনেছিল সে বলে ওটা ওর মাই। মেয়ের সাথে নাকি দেখা করতে আসে। প্রথবার যখন হয় দুদিন পর নাকি নিজেই নরমাল হয়ে গেছিলো। দ্বিতীয় বারেরটায় বাড়াবাড়ি হতে এসব জানা যায়। একটা সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে পুরোপুরি পাল্টে গেছিলো। ঠিক মায়ের মতনই হয়ে গেছিলো। হ্যা ওর মায়ের মেন্টাল প্রব্লেম ছিল। সুইসাইড করার এক অদ্ভুত টেন্ডেন্সি ছিল নাকি ওনার মধ্যে। পারিবারিক কোনো সমস্যা ছিলোনা। সুখী পরিবার কিন্তু.....ওই একটা অদ্ভুত মানসিক প্রব্লেম ছিল ওনার মধ্যে। ডাক্তার ওনার বাড়ির লোক পরে স্বামীও দেখিয়েছিলেন, আর তাছাড়া বাচ্চাটা হবার পর নাকি বেশ কয়েক বছর আর ঐসব ওনার মধ্যে দেখা যায়নি তাই সবাই ভেবেছিলো একদম নরমাল হয়ে গেছেন উনি কিন্তু একদিন তুলিকার বাবা ফিরে দেখেন স্ত্রী দরজা খুলছেনা। অনেক ডাকাডাকিতেও কাজ হয়না। তখন সন্দেহ হওয়াতে অনেক জন মিলে দরজা ভেঙে দেখে মেয়ে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে আর মা অন্য ঘরে....... ঝুলছে!
তারপরে সে যে কি ঝড় গেছে ওদের ওপর দিয়ে। আমি গেছিলাম তখন ওদের পাশে দাঁড়াতে, সাথে আরও প্রতিবেশীরাও কয়েকজন ছিল। সেই মা-ই নাকি দুবার এসেছিলো মেয়ের সাথে দেখা করতে। এতো কিছু রণজয় মামার যিনি মামী তিনি জানেন না তাই সকালে ওনাকে জিজ্ঞেস করাতে সে কিছুই বলতে পারেনি। তার কাছে তুলিকা সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক এক মেয়ে। আর সত্যিই তো..... তুলিকা সত্যিই সুস্থ স্বাভাবিক একজন মেয়ে। কিন্তু মামাবাবু জানতেন যে ওই প্রব্লেমটা পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছিলো। কিন্তু আমার ছোট মামার মুখে কালকে রাতের বর্ণনা শুনে বুঝেছিলেন যে মেয়ে পুরোপুরি বিপদ মুক্ত নয়। এখনো তার মা আসে। মেয়ের সাথে সময় কাটিয়ে যায়। কিংবা হয়তো আরও বেশি কিছু!
সব শুনে অসীম বললো - বাব্বা! এতো সাংঘাতিক ব্যাপার! মানে মা আসে মেয়ের সাথে সময় কাটাতে আর মেয়ের মধ্যে ঢুকে তারপরে......... বাবারে! উফফফফফ!
অতনু বিজ্ঞের মতো মুচকি হেসে অসীমকে থামিয়ে বললো - আরে দাঁড়া দাঁড়া...... গল্প শেষ কে বললো?
আমরা সবাই - এখনো বাকি আছে?
অতনু - অবশ্যই! তোরা একটা ব্যাপার ভুলে গেলি? রাতে তো আরও একটা ব্যাপার হয়েছিল। যেটা ছোট মামাও সকালে নিজেই মামীকে জানাতে ভুলে গেছিলো। সন্ধে বেলা মামাবাবুর মুখে পুরোটা শুনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে করতে মামা হটাৎ করে বলেই ফেলে - সত্যিই! সে যে কি বীভৎস রূপ তোরা ভাবতে পারবিনা। ঘাড় বেঁকিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। একবারও ভাবলাম তোদের ডাকবো কিন্তু আমি যেন শালা নড়তেও পারছিনা। ভাগ্গিস এই পাশের বাড়ির থেকে কোনো একজন আমার মতোই ওকে অমন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফেলে। সেই তো চেঁচিয়ে বলে " এই কে ওখানে? তুই কি করছিস? যা ভেতরে যা " তখন দেখি সেই মেয়ে আস্তে আস্তে সরে যায়। উফফফফ ভাগ্গিস ওনার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম....তাইতো আমার সাহসটাও ফিরে পাই। আমার মতোই আরেকজন তাহলে তাকে দেখেছে.......
মামা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু ওই মামাবাবু ওকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে সে কার কথা বলছে? তখন ছোটমামা বলে যে সে পাশের বাড়িটা থেকে একটা মানুষের কণ্ঠ শুনেছিলেন। যেন ছাদে দাঁড়িয়ে কেউ ওই বাড়ির মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলে চলে যেতে, তবেই তো মেয়েটা যায় নইলে তো কিছু একটা বিপদ ঘটিয়ে ফেলতে পারতো সে। একজন বয়স্ক লোক কেউ। গলার স্বর পাতলা। যদিও মামা কাউকে দেখতে পায়নি তবে সে যে বয়স্ক কেউ তাতে সন্দেহ ছিলোনা। পুরোটা শুনে মামাবাবু হা করে অবাক চোখে আমার ছোট মামার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারপরে নিজেই বলেন যে ঐবাড়িতে বয়স্ক লোক কেউ থাকেনা! দুই মহিলা মানে শাশুড়ি আর তার বৌমা থাকে। আর তার চার বছরের বাচ্চা আছে। স্বামী কর্ম সূত্রে কলকাতায় থাকে। আর কোনো বয়স্ক কেউ তো নেই।
- আচ্ছা তুমি ভুল শোনোনি তো? কোনো বয়স্ক মহিলার কণ্ঠ শোনোনি তো তুমি ?
মামাবাবুর প্রশ্নে ছোট মামা মাথা নেড়ে জানান যে তার কোনো ভুল হয়নি। গলার স্বর পাতলা হলেও ওটা যে পুরুষমানুষের কণ্ঠ ছিলো এই ব্যাপারে তিনি শিওর। আর হ্যা একটু কাঁপুনি ছিল গলায়। সে প্রায় ধমক দিয়ে ওই বাড়ির মেয়েটাকে বলছিলো ফিরে যেতে ঘরে। এতে কোনো ভুল হয়নি মামার। কিন্তু এই ভুল ঠিক এর প্রশ্ন উঠলো কেন? জানতে চেয়েছিলেন ছোট মামা ওনার থেকে। তাতে ওই মামাবাবু বলেন কোনো বয়স্ক পুরুষ নেই ওই বাড়িতে। শুধুই দুই মহিলা আর বাড়ির কাজের বৌ আছে। এছাড়া বাড়ির বাচ্চাটা। শুনে বেশ অবাক হয় ছোট মামা। মামাকে তিনি আরও জানান যে এক সময় অবশ্যই একজন বয়স্ক মানুষ ছিলেন। ওই বাড়ির কর্তা। হারাধন জ্যাঠা। কিন্তু তিনিও তো দু বছর হলো ইহলোক ত্যাগ করেছেন। আর হ্যা.... ওনার গলার। স্বর সত্যিই পাতলা ছিল। তুলিকাদের সাথে বেশ ভালোই সম্পর্ক ছিল জ্যাঠার। দেখা হলেই কথা বলতো। আর শেষের দিকে বয়সের কারণে কথা বলায় কম্পনও এসেছিলো। একদিন হটাৎ ঘুমের মধ্যেই তিনি.........।
সব শুনে ছোট মামা আর সবাই অবাক হয়ে গেছিলো। ওই মামাবাবুও। তাহলে রাত্রে কার গলা শুনলো মামা? কে ধমক দিচ্ছল ওই মেয়েটাকে? তাহলে কি......!!?
এর পর আরও দুই দিন মামারা ওবাড়িতে ছিল। রাতের দিকে মামা ও বন্ধুরা বারান্দায় গিয়ে চোখ রেখে বেশ অনেক্ষন অপেক্ষাও করেছিল পরের রাতে। কিন্তু আর কিস্সু দেখা যায়নি। ফাঁকা ছাদ আর নারকেল গাছের দুলুনি ছাড়া। এমনকি রণজয় মামারা শুয়ে পড়ার পর ছোট মামা সাহস করে একাই আরেকবার বারান্দায় গেছিলেন। কেন যে এমন ইচ্ছে হয়েছিল মামা নিজেও জানেনা। কিন্তু যেন কিছু একটা আবারো দেখার নেশা পেয়ে বসেছিল মামার ওপর। কিন্তু আর কিছু দেখতে পায়নি সে। যদিও এক আধবার মনে হচ্ছিলো কেউ হয়তো ও বাড়ির ট্যাংকের আড়াল থেকে লক্ষ করছে ওনার দিকে কিন্তু ভালো করে দেখতে বোঝা যায় সেটা গাছের দুলতে থাকা পাতার ছায়া মাত্র। ভয় পেলে যেন ছোটোখাটো এমন বিষয় গুলোই ভুতের রূপ নেয়। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়েও মামা আর কিচ্ছু দেখতে পাননি। ফিরে আসেন। তারপরের দিন বিকালে নিজের অন্য বন্ধুটির সাথে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরে জান নিজের বাড়ি। রণজয় মামা খালি থেকে জান। উনি আরও দুদিন কাটিয়ে ফিরে ছিলেন। এই ছিল আমার ছোট মামার ভূত দেখার ঘটনা।
সবটা শুনে অসীম ভয় ভয় বলে উঠলো - আ.... আমার কিন্তু মনে হচ্ছে ওটা ওর মা নয়, অন্য কিছু পসেস করে মেয়েটাকে। নইলে কোন মা ঐভাবে মেয়েকে দিয়ে ওসব করাতে পারে বাবাগো! গেলো আজ রাতের ঘুম!
অতনু আবারো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে শয়তানি হাসি হেসে অসীমকে বললো - সেসব তো আর জানা যায়নি। পরে আর মামা খোঁজও নেয়নি। কিন্তু ভাই! তুই কিন্তু সাবধানে বাড়ি ফিরিস।
অসীম - কে.... কেন?
অতনু - না মানে এমন একটা ঘটনা শুনলি আবার তোদের ওই গলির দিকের জায়গাটা তো অন্ধকারই থাকে। আর দুটো বাড়ি আগেই কি হয়েছিল মনে আছে তো? এখনো কিন্তু ও বাড়িতে কেউ থাকে টাকে না। তাই বললাম.... সাবধানে ফিরিস। এদিক ওদিক বেশি তাকাস না যেন। কি দেখতে কি দেখে ফেলবি।
শুনে আমরা সবাই আবারো হেসে উঠলেও অসীম দেখি আবারো ঢোক গিললো।
সমাপ্ত
কেমন লাগলো জানাবেন পাঠক বন্ধুরা।